নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইসি আগামী পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৪০ দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম দিকে এ পরিষেবা ৫-৬টি দেশ যেমন মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও যুক্তরাজ্যে চালু করা হবে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অধিক প্রবাসী অধ্যুষিত ৪০ দেশে কাজ শুরু করব। প্রাথমিকভাবে আমরা ৫-৬টি দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করব।’
এনআইডি কার্ডের আবেদনের জন্য প্রবাসীদের ফর্মের সাথে ছয়টি নথি সংযুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে পাসপোর্টের ফটোকপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম, মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হননি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হবে।
সিইসি কেএম নুরুল হুদা এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ করোনা শুরুর আগে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন নিবন্ধন শুরু করেছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার হওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির আগেই চার দেশ থেকে মোট ৭৩৮ প্রবাসী জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫৩০, যুক্তরাজ্য থেকে ১২১, মালয়েশিয়া থেকে ৪৮ এবং সৌদি আরব থেকে ৩৯টি আবেদন অনলাইনে এসেছে।
কমিশন প্রবাসীদের যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসগুলাতে আবেদন পাঠিয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারিজনিত কারণে আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসি এ চারটি দেশে কারিগরি দল পাঠাতে পারেনি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন শাখার প্রধান জানান, এখন ইসি সেই চারটি দেশসহ কুয়েত থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের প্রযুক্তিগত টিমকে সেখানে পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবার জন্য ফি নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে কমিশন শিগগরই সিদ্ধান্ত নেবে। যদি ফি নেয়, কমিশন তার হারও নির্ধারণ করবে।’
সাইদুল ইসলাম বলেন, ইসি যখন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দিতে অনলাইন পোর্টাল খোলার জন্য চারটি দেশে গিয়েছিল, তখন প্রবাসীরা সেবার মান বাড়াতে ফি আরোপের কথা বলেছিল।
ইসি সূত্র জানায়, চলমান আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাচ্ছে। এ জন্য ৪০ দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দিতে সময় বাড়ানোর জন্য আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) দ্বিতীয় মেয়াদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। যার ভিত্তিতেই পরে ২০১৬ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ইসি ভোটারদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করে। এখন ১৩৭টি সংস্থা এনআইডি ডাটাবেস থেকে পরিচয় শনাক্তকরণের পরিষেবা গ্রহণ করছে।