১৯৫৬ সালের এই দিনে বাবার কর্মস্থল বরিশালের আমানতগঞ্জ রেড ক্রস হাসপাতালে জন্ম নেন প্রতিভাবান এ কবি।
দিনটি স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মোংলায় কবির পৈতৃক গ্রামের বাড়িতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোংলা ইউনিট এদিন বিকালে মোংলা প্রেসক্লাবে একটি স্মৃতি সেবার আয়োজন করে। মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হয়।
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন দ্রোহ ও প্রেমের কবি। গত শতাব্দীর আশির দশকে পাঠক ও শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠা কবিদের মধ্যে একজন তিনি।
ডা. শেখ ওয়ালিউল্লাহ এবং শিরিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেয়া রুদ্রের পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেব মেঠ গ্রামে। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রুদ্রর শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নানা বাড়ি মিটেখালী গ্রামে (বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার অন্তর্গত)।
ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি, ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও ১৯৭৩ সালে এমএ পাস করেন।
সম্মিলিত সংস্থার জোট এবং জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের পেছনে অন্যতম উদ্যোগী রুদ্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ এর পর, তিনি সরকারবিরোধী এবং স্বৈরাচারবিরোধী সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার কবিতায় একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দেশপ্রেম, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অসাম্প্রদায়িকতা সবসময় বলিষ্ঠভাবে ফুটে উঠেছে।
মাত্র ৩৫ বছরের জীবনকালে তিনি সাতটি কবিতা বই, গল্প, নাটক লিখেছেন এবং অর্ধশতাধিক গান রচনা করেছেন। তার জনপ্রিয় একটি কবিতা হলো ‘বাতাশে লাশের গন্ধ’।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০) এবং এক গ্লাস অন্ধকার (১৯৯২)।
তার লেখা কবিতা থেকে ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ' গানটির জন্য ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি তাকে মরণোত্তর সেরা গীতিকারের পুরষ্কার প্রদান করে।
তিনি তার দুটি কবিতা গ্রন্থ উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) ও ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১) এর জন্য টানা দুবছর সংস্কৃতি সংসদ থেকে মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
তার স্বল্পকালীন জীবনে ১৯৮১ সালে নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন রুদ্র। ১৯৮৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। হতাশার দীর্ঘ লড়াই শেষে ১৯৯১ সালের ২১ জুন মারা যান দ্রোহ ও প্রেমের এ কবি।