বিশেষ সংবাদ
শিকদারবাড়ি দুর্গোৎসব: পূজামণ্ডপে ৫০১ দেব-দেবীর প্রতিমা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ির দুর্গাপূজা করোনা সংক্রমণের কারণে কর্তৃপক্ষ গেল ৩ বছর উৎসব বন্ধ রাখার পর এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে ফিরছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: মৌলভীবাজারে মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মহামারির সময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে সমুন্নত রাখার জন্য ছোট পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এই বছর আগের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদযাপন করতে চলেছে শিকদারবাড়ি।
শিকদারবাড়ী পূজামণ্ডপে মোট ৫০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
একাদশ প্রহরে পূজা মণ্ডপে প্রতিমা সাজানোর কাজ চলছে। দর্শনার্থীদের মুগ্ধতে প্রতিমাগুলোতে নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহামায়া দেবী দুর্গার সঙ্গী হিসেবে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের দেব-দেবীরা পূজামণ্ডপ জুড়ে বিস্তৃত।
সরকার পতনের আন্দোলন নভেম্বরেই চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি
ক্ষমতাসীন দলের ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারির মধ্যে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের জন্য কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। ফলে আগামী মাসের শুরুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে।
বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ইউএনবিকে বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর তাদের দল ঢাকায় জনসভা করতে পারে। সেই জনসভা থেকেই তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস অভিমুখে পদযাত্রা অথবা অফিস ঘেরাও, সচিবালয় বা নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং ঢাকার প্রবেশপথ অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।
তবে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির নেতারা বলেন, তাদের কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা রোধ করা এবং অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সরকারকে বাধ্য করা।
এদিকে, সরকারের পদত্যাগ এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে বুধবার রাজধানীতে জনসভা করবে বিএনপি।
সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেবেন। কঠোর কর্মসূচি এড়ানোর জন্য তাদের এক দফা আন্দোলন মেনে নিতে সরকারকে শেষ সতর্কবার্তা দেওয়ার কথাও রয়েছে তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ইউএনবিকে বলেন,নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তাই তফসিল ঘোষণার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে আমরা কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চাই। ‘আমরা মনে করি, আমাদের আন্দোলন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।’
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন, পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই: ফখরুল
যেসব রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে মতামত নিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বেশিরভাগ দলই সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাও বা গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রার মতো কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়া রাজধানীসংলগ্ন জেলা গুলো থেকে ঢাকা অভিমুখে রোড মার্চ, ইসি ও সুপ্রিম কোর্ট অভিমুখে পদযাত্রা এবং শেষ পর্যায়ে হরতাল-অবরোধসহ আরও কিছু কঠোর কর্মসূচির সুপারিশও করা হয়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপি যদি রাজধানী অবরোধের মতো কর্মসূচি নেয়, তাহলে তাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক যুব সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন,‘আমরাও প্রস্তুত। বিএনপি ঢাকা অবরোধের চেষ্টা করলে তাদের অবরুদ্ধ করা হবে। বিএনপিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে এবং পালানোর কোন পথ থাকবে না। তারা (হেফাজত কর্মীরা) কি রাতের অন্ধকারে শাপলা চত্বর থেকে পালিয়ে যায়নি? বিএনপিকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত বছরের ডিসেম্বরের মতো এবারও সারাদেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় জড়ো হতে শুরু করেছে। ‘হোটেলের সব কক্ষ বুক করা হয়েছে। তারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছেন। তারা আবারও সরকারকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখছে।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ দেশও হারিয়েছে, বিদেশও হারিয়েছে: আমীর খসরু
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্গাপূজার পর ঢাকাকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে একটি অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মাধ্যমে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা নতুন উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে অংশ নেবেন এবং যেকোনো মূল্যে তা সফল করবেন।
বিএনপি নেতা বলেন, 'ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়ানক ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হব।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দুর্গাপূজার পর কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু করতে প্রস্তুত তারা।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার যে কোনো পদক্ষেপ প্রতিহত করতে আমরা বিভিন্ন কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব'।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ' কিভাবে আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করা যায় এবং সম্ভাব্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়, তা নিয়ে আমরা বিরোধী দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আমাদের আন্দোলন জোরদার করার মাধ্যমে সরকারকে আমাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে সক্ষম হব।
সমমনা দলগুলোর পাশাপাশি তারা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে এবং তা সফল করতে আলোচনা করছে।
আরও পড়ুন: পর্দার আড়ালে আসলে কিছুই হয়নি: ফখরুল
বেসরকারি খাতের উৎপাদকদের ক্রমবর্ধমান অর্থ বকেয়া বিদ্যুৎখাতের অন্যতম বাধা
সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের উৎপাদকদের ক্রমবর্ধমান অর্থ বকেয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। যা এই খাতের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে (পিপিএ) অর্থপ্রদানের পদ্ধতি মূলত বৈদেশিক মুদ্রা; বিশেষত মার্কিন ডলারে নির্ধারিত হয়েছে।
বিদ্যমান ব্যবস্থা অনুযায়ী, একক পরিশোধকারী হিসেবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) তার বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করে।
পিপিএ এর অধীনে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা তাদের বিভিন্ন ধরনের অর্থপ্রদানের বাধ্যবাধকতা যেমন- ব্যাংক ঋণ, জ্বালানি এবং যন্ত্রপাতি আমদানি ও বিদেশি কর্মীদের বেতন প্রভৃতির ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করে।
বিনিয়োগকারীরা বিদেশি কোম্পানি হলে, তারা তাদের মুনাফা মার্কিন ডলারে ফেরত দিতে পারে বলে জানান বিপিডিবির কর্মকর্তারা।
তারা আরও উল্লেখ করেছে, বিপিডিবি সবসময় বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসন মসৃণ করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, তাদের ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখে।
সরকারি সূত্র জানায়, কিন্তু দেশে ডলার সংকটের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিপিডিবি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী উভয়ই তাদের ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার পেতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সরকারি সূত্র আরও জানায়, বিপিডিবি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবি-র কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) মোট পাওনা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (৩৫ হাজার কোটি টাকার সমতুল্য)।
আরও পড়ুন: শীতকালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে
সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আইপিপিরা তাদের বিল নিয়ে দুই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রথমত, তারা সময়মতো বিল পাচ্ছেন না এবং দ্বিতীয়ত, তারা আংশিক বিল পাচ্ছেন, কিন্তু ডলার সংকটের কারণে প্রাপ্তঅর্থকে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারছেন না।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবি-তে সমস্যাটি স্বীকার করে বলেছেন, তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিডিবিকে প্রতিদিন গড়ে ২০ মিলিয়ন ডলার দিবে তার খরচ মেটাতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবি'র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘তবে আমরা প্রতিদিন ১০-১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ক্রমবর্ধমান বকেয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা আরও বাড়বে।
অর্থ বকেয়ার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সাবেক সভাপতি ইমরান করিম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘অন্যথায় এতে বকেয়া জমে থাকবে এবং এই খাতে একটি বড় সংকট তৈরি করবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাত সংকটের দিকে এগোচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়াতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলবে এটি।
বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভুল পরিকল্পনার কারণে এত বড় সমস্যায় পড়েছে।
তিনি বলেন, ভুল পরিকল্পনার ফলে দেশে গ্রীষ্মকালে ৫০ শতাংশ এবং শীতকালে ৭০ শতাংশ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ থাকছে, যার জন্য দেশ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে একটি বড় বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। কারণ বেসরকারি খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকবে এবং প্রাথমিক জ্বালানির আমদানি বাড়বে। সবমিলিয়ে, এটি জ্বালানির নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে।’
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
জ্বালানির দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম কমানো যাবে না: তৌফিক ইলাহী
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’: দর্শকের মনে আরও গেঁথে গেছেন বঙ্গবন্ধু
সারাদেশে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) মুক্তি পেল বহুল প্রতিক্ষীত সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় সাধারণত মধ্যাহ্নভোজের পরেই থাকে। এবারের চিত্রটাও তেমন।
স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় আজ দুপুর ৩টা ও সন্ধ্যা ৭টার শোতে দেখানো হয় ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। প্রথম শো শেষ হয় প্রায় সন্ধ্যা ৬টায়। ততক্ষণে সাংবাদিকদের ভির জমে হল থেকে বাহির হওয়ার দরজায়।কারণ ভেতরে দর্শকদের সঙ্গে সিনেমাটি দেখছেন আরিফিন শুভ। এরইমধ্যে সবার জানা এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই চিত্রনায়ক।
শো শেষ হতেই হলভর্তি দর্শক বের হওয়া শুরু করল, সঙ্গে ছিলেন আরিফিন শুভ।এমন সময় মুজিব কোর্ট পরা একজন তরুণ দর্শককে দেখে এগিয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম কেমন লাগলো সিনেমাটি?
তার ভাষ্য, ‘জাতির জনককে আমরা এতদিন পরে জেনেছি, এবার সিনেমার পর্দায় তাকে দেখে ভিন্ন এক বঙ্গবন্ধুকে মনে হয় চিনলাম। যা পড়েছি সেই ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনে দেখছি। আরিফিন শুভকে ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে চরিত্রটিকে এতটা বাস্তব রূপে তুলে ধরার জন্য। এছাড়া অন্য চরিত্রেগুলো যারা আছেন সবাই দারুণ করেছেন।’
শিউলি আক্তার নামে একজন দর্শক এসেছেন তার সন্তানকে নিয়ে। সিনেমাটি দেখার পর অনুভূতি জানাতে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রত্যাশার চেয়েও বেশিকিছু পেলাম। মনে হলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি সিনেমা তো এমনই হবে। আমার সন্তানকে নিয়ে এসেছি আমাদের জাতির জনককে পর্দায় দেখাতে। আমাদের নতুন প্রজন্মের উচিত সিনেমাটি দেখা। যেহেতু বই পরার চর্চা এখন কমে গেছে, সেই জায়গা থেকে এই সিনেমায় যেহেতু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক তথ্যই উঠে এসেছে তাই অনেক বিষয় জানা যাবে।’
আরও পড়ুন: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ দেখে কাঁদলেন তারকারা
স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় ৭টার শো দেখার জন্য দর্শক এরইমধ্যে প্রবেশ করছে তখন। মূল ফটকের সামনে বেশ ভিড়। তার সঙ্গে আরিফিন শুভ যেহেতু সেখানে তাকে ঘিরে ভক্তদের বাড়তি একটি ভিড় রয়েছেই। সিনেমা দেখার পর নায়ক যখন চোখের সামনে, তখন এমনটা যেন চিরচেনা চিত্র।
এদিক-সেদিক দেখতে দেখতে কথা হলো কলেজপড়ুয়া একজনের সঙ্গে। সিনেমার পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে দেখে তার অনুভূতি জানতে চাইলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশি অনেক সিনেমা দেখি যেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ককে দেখানো হয়। আমাদের দেশের সিনেমায় এই চর্চা খুব একটা নেই। গুটিকয়েক সিনেমায় দেখা গেলেও ঠিক যেন হয়ে উঠছিল মনে হয়নি। তবে এবারের অভিজ্ঞতাটা ভিন্ন। এই সিনেমা অনেক কথা বললো। শুধু গল্পের গাঁথুনি নয়, সিনেমাটির নির্মাণ ছিল আন্তর্জাতিক মানের। আর সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পর্দায় এতো ডিটেইলস দেখতে পেলাম। আরিফিন শুভকে বেশ মানিয়েছে। আর বেশ আবেগঘন অবস্থায় হল থেকে বের হয়েছি।’
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ট্রেলার প্রকাশে পর এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। কিন্তু মুক্তির পর চিত্রটা ভিন্ন। ছোট-বড় সকল দর্শকের মুখে প্রশংসা সিনেমাটি নিয়ে। কেউ বলছেন কেঁদেছেন আবার কারও মনে আরও গভীরভাবে গেঁথে গেছেন বঙ্গবন্ধু। এটিই হয়তো একটি সিনেমার স্বার্থকতা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ পরিচালনা করেছেন বলিউড পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।এতে বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন- নুসরাত ইমরোজ তিশা, নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ আহমেদ, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী।
আরও পড়ুন: সবাই দেখার অপেক্ষায় 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার’
প্রকাশ্যে এলো 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমার গান
দেশের উত্তরাঞ্চলে চাহিদা বাড়ছে নোনা ইলিশের
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষেরই নাগালের বাইরে ইলিশ। তবে সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় তারা শুকনো, নোনা (লবণ দেওয়া) ইলিশের স্বাদ নিতে পারে।
প্রতি বছর চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য ঘাটের শ্রমিকরা অবিক্রীত ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করেন। তারা এখন মাছ কেটে তাতে লবণ দিতে ব্যস্ত।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, শেরপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় শুকনো লবণাক্ত ইলিশ বা ‘নোনা ইলিশ’পাওয়া যাচ্ছে এবং এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ভোলার ইলিশায় নদী তীরের সিসি ব্লক ধ্বসে বাকপ্রতিবন্ধী নারীর মৃত্যু
মৎস্য ঘাটে মৌসুমে নরম হয়ে যাওয়ায় অনেক ইলিশ অবিক্রীত থেকে যায়। কিছু ব্যবসায়ী এগুলো অল্পদামে কিনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে। শুকনো লবণযুক্ত মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১২০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া শ্রমিকরা মাছ থেকে আলাদা করা ডিম বিক্রি করছেন আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে। গত বছর প্রতি কেজি ইলিশের ডিম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
রমজান বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন এবং প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে ময়মনসিংহ থেকে এসে এই এলাকায় থাকেন।
পাইকারি বাজার থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে ৭০০-১০০০ গ্রাম ওজনের অবিক্রিত ইলিশ কিনেছেন তিনি।
এ বছর ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি। এই শুকনো নোনা ইলিশ আগামী ৬ মাস খাওয়ার উপযোগী থাকবে বলে দাবি করেন তিনি।
রমজানের মতো আনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন, চারি গাজীসহ অনেক ব্যবসায়ী একই উদ্দেশ্যে চাঁদপুরে এসেছেন।
প্রায় ১০০ জন নারী ও ১৫০ জন পুরুষ ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত। তারা যে দৈনিক মজুরি পান তাতেই খুশি।
চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুর রহমান বলেন, লবণ দিয়ে ইলিশ ছয় মাস সংরক্ষণ করা যায়।
রেফ্রিজারেটরে সঠিক তাপমাত্রা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ইলিশের ডিমও একইভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ এখন ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত এবং তারা মুনাফা করছে।
আরও পড়ুন: মুনাফালোভীদের কারণে ইলিশের দাম বেশি: মৎস্যমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার থেকে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনে পাড়ি দিতে উদগ্রীব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসী
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ফরিদপুরের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পযন্ত রেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন রেল সংযোগকে নিয়ে ফরিদপুরবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। এ অঞ্চলের মানুষ ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
ঢাকা ভাঙ্গা পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানিয়েছেন , ইতোমধ্যে আমরা এই রেল সড়কে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেনের গতি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার পথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। রেলপথের এই অংশটি উদ্বোধনের দ্বার প্রান্তে রয়েছে। এরপর এই পথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বাণিজ্যিক ট্রেন চালানো হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে বৃহস্পতিবার
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই রেল সড়ক দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকার সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে গণপরিবহনের একচেটিয়া প্রভাব ও যাতায়াতে বেশি ভাড়া থেকে বাঁচবে এ অঞ্চলের মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশ স্বাধীন যেমন স্বপ্নের ছিলো, ঠিক তেমনি পদ্মা নদীর উপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য ট্রেন চলাচল করবে এটাও একটা স্বপ্নের মতো ছিলো। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বলেন, ঈদসহ প্রতিটা উৎসবে ঢাকা থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে মানুষের প্রচুর কষ্ট হতো। এসময় যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহনগুলো তাদের ই্চছামতো ভাড়া আদায় করতো। ট্রেন চালু হওয়ায় যে আমরা খুশি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ট্রেনে অন্য সময় তো বটেই বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়িতে ফিরতে পারবে এ অঞ্চলের মানুষ। তিনি দাবি করে বলেন, রেল এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক দিলীপ রায় বলেন, কয়েক দিন ধরে রেললাইন পরিষ্কার করছে ও দফায় দফায় ট্রায়াল ট্রেন চলছে। ট্রেনের শব্দে যেন আর তর সইছে না আমাদের। যে পদ্মা নদীতে আগে ফেরি-লঞ্চে পার হতাম সেই পদ্মা সেতুতে এখন ট্রেন চলবে ভাবতেই স্বপ্ন মনে হয়।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথে চলল পরীক্ষামূলক পণ্যবাহী ট্রেন
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান বলেন, এ উপজেলার অনেকেই ব্যবসার কাজে ঢাকায় যায়। এখান থেকে ভেঙে ভেঙে গেলে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকার বেশি খরচ হতো। ট্রেন চালু হলে নিশ্চয়ই এতো খরচ হবে না। পাশাপাশি মালামালও ট্রেনে করে নিয়ে আসতে পারবে।
ফরিদপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মো. নজরুল ইসলাম ট্রেন যোগাযোগের নতুন মাত্রা প্রসঙ্গে বলেন, ফরিদপুরের পাট কলগুলো নয় শুধু, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যটি স্বল্প সময়ে অল্প খরচে রাজধানীতে নিতে পারবে। এটা বিরাট ব্যাপার। সরকারের আন্তরিকতা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না।
এ প্রসেঙ্গ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, দীঘদিনের অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বার উন্মোচন হবে রেল সংযোগের মধ্যে দিয়ে। তিনি বলেন, মানুষের জীবমানের যেমন পরিবর্তন হবে, তেমনি এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে। এতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবকয়টি সংসদীয় আসন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ট্রেনে চড়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দুপুর ২টার দিকে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটিয়েছে
সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ঢাকায় জলাবদ্ধতার ভয়ংকর রূপ
প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। মাত্র ১/২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট।
এমন চিত্র দেখা যায় গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ও শুক্রবার (৬ অক্টোবর)। এই দুদিনে রাজধানীতে কখনো মুষলধারে, কখনো মাঝারি, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
একটানা এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে বিশেষ করে মতিঝিল, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, শান্তিনগর, মৌচাক, বেইলি রোড, কাকরাইল, গুলিস্তান, শাহবাগ, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ভাটারা, বসুন্ধরা, খিলক্ষেতসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
পানিতে তলিয়ে থাকা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে মধ্যরাতেও আটকে ছিল শত শত গাড়ি। এ ছাড়া এর আগে মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের পথগুলো আবর্জনায় ভরে থাকায় দ্রুত পানি নামতে পারেনি। যার ফলে ভয়াবহ ওই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
কারণ হিসেবে রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, ঢাকার খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও সেবা সংস্থাগুলোর মনোযোগ কম।
জানা যায়, বৃষ্টি হলে রাজধানীর পানি তিনটি মাধ্যমে চারপাশের নদ-নদীতে চলে যায়। এর একটি পাম্পস্টেশন, বাকি দুটি স্লুইসগেট ও খাল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থনীতি সংস্কারে ভূমিকা রাখবে আইএমএফের ঋণ
ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন স্লুইসগেটগুলোরও বেশির ভাগ অকেজো। আর খালগুলো পানিপ্রবাহের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। এসব কারণেই নগরবাসীকে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পাম্পস্টেশন দিয়ে মিনিটে ৮ লাখ ৫৫ হাজার লিটার পানি নিষ্কাশন করা যায়। কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার পরও স্টেশনটি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
কারণ, স্টেশনটিতে পানি যাওয়ার জন্য যেসব নালা-নর্দমা ও বক্স কালভার্ট রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি সচল নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত প্রায় ২২৫ কোটি টাকাখরচ করেছে। খালসংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে এখনও নগরবাসীকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেনি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সক্ষমতার অভাব। আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেনের মুখগুলো। এ ছাড়া প্রধান প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন ও নালা থাকলেও, তা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে গেছে। তাই ভারী বৃষ্টিপাতে সড়কের পানি দ্রুত নামতে পারে না, ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে আরও বলেন, ঢাকার মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা পরিকল্পিত। বাকি ৭০ ভাগ এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সরকারের রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার মধ্যেও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এতে জনক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব নালা-নর্দমা হয়ে পানি পাম্পস্টেশনে যাবে, সেগুলোর যথেষ্ট পানিপ্রবাহ নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তাই পরিকল্পিতভাবে স্থায়ী সমাধানে দুই সিটিকে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে যথাযথভাবে হয়নি ড্রেনেজ, খাল ও বক্সকালভার্ট পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। সিটি করপোরেশন ও সরকারের অন্য সংস্থার মধ্যে নেই কোনো সমন্বয়। ফলে জলাবদ্ধতার জন্য একে অন্যকে দায়ী করেই বছর পার করছে সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রতিটি কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু অর্থ খরচ করলেই হবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পতি কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সড়কে আবর্জনা পড়ে পানি নিষ্কাশনে ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এসব আবর্জনার মধ্যে পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, গ্লাস ভাঙা, ময়লা কাপড় ও কাগজের ছেঁড়া অংশ ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: দেশের এভিয়েশন সেক্টরে রূপান্তরের অঙ্গীকার নিয়ে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন শনিবার
এ বিষয়ে ঢাকার বাসিন্দা আসিফ ইউএনবিকে বলেন, এসব ড্রেনের মুখগুলো সিটি করপোরেশনের কর্মীদের নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা থাকলেও, ৬ মাসেও তা পরিষ্কার হচ্ছে না। শুধু লোক দেখানো রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া হলেই চলবে না, সময়মতো প্রতিটি ড্রেনেজ পরিষ্কার রাখতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির নয়াপল্টন, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, মতিঝিল ও কমলাপুরের পানি এসব এলাকার নালা–নর্দমা ও কালভার্ট হয়ে টিটিপাড়া পাম্পস্টেশনে গিয়ে জমা হয়। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি সচল নয়।
আর ধোলাইখালের পাম্পস্টেশন হয়ে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, ওয়ারীসহ কয়েকটি এলাকার পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। এই স্টেশনে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি পাম্প দিয়ে ঘণ্টায় ৮ কোটি ১০ লাখ লিটার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। এ স্টেশনেও ঠিকমতো পানি জমা হয় না।
দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যে জানা যায়, রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ৩৮৫ কিলোমিটার গভীর ড্রেন ও ৪টি পাম্প স্টেশন এবং ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ করে ৫২টি স্লুইস গেট এবং একটি পাম্প স্টেশন, রাজউক রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৫ কিলোমিটার লেক ও ৩০০ কিলোমিটার জলাশয়।
ডিএনসিসির ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেনেজলাইন রয়েছে এবং ডিএসসিসির রয়েছে ৯৬১ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় দেওয়া হয়েছে ২৬টি খাল।
তবে সব খাল ও ড্রেনেজ রক্ষাণবেক্ষণের অভাবে ভরাট হয়ে যায়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ইউএনবকে বলেন, সেদিন একটানা কয়েক ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, তাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। খালগুলোকে আমরা ভরাট করে ফেলছি, দখল করছি। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে পলিথিন, বোতল ও আবর্জনা ফেলছি। সেগুলো গিয়ে ড্রেনে পরে পানি নামায় বাধা দিচ্ছে। ফলে পানিপ্রবাহ নষ্ট হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং পানি নেমে যেতেও সময় লাগছে। পরে পানি নামছে, তবে সময় লাগছে।
মেয়র বলেন, এক সময় শেওড়াপাড়া, মধুবাগ, খেজুরবাগান, সংসদ ভবনের পাশের রাস্তা, নেভির সামনের রাস্তা ডুবে যেত। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। জলাবদ্ধতা হয়, আবার পানি নেমেও যায়। ঢাকা শহরের অলিগলি ২০ ফুটের কম হলে আমরা রাস্তার জন্য বরাদ্দ দেব না। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ ২০ ফুটের কম রাস্তা হলে সেখানে ড্রেন করার জায়গা থাকে না। এখনও অনেক রাস্তা আছে যেগুলো ২০ ফুটের কম রাস্তা। সেগুলোতেই মূলত জলাবদ্ধতার সমস্যা বেশি দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বোতল, পলিথিন, নানা আবর্জনা আমরা ইচ্ছেমতো যেখানে সেখানে ফেলছি। সেগুলো গিয়ে ড্রেনের মধ্যে ঢুকছে, সেগুলোই পানি নামতে সমস্যা করছে। তাই জলবদ্ধতা কমে যেতে বা পানি সরে যেতে কিছুটা সময় লাগছে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১০টি র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এবং এই জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আমরা কিন্তু বসে নেই। আমরা কাউন্সিলররাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, খালগুলোকে আমরা ভরাট করে ফেলছি, দখল করছি। ড্রেনে বিভিন্ন জিনিস ফেলে, পানি নামতে বাধা সৃষ্টি করছি। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ হল রাস্তাগুলো ২০ ফুট করতে হবে। আর অলিগলিতে যেসব যেসব ড্রেন আছে, সেগুলোকে আমরা বড় করার কাজ শুরু করেছি। যাতে করে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে। দক্ষিণখান ও আজমপুরে আমরা এই কাজগুলো ইতোমধ্যে শুরু করেছি।
তিনি বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়ার দিকে যে রাস্তা এটাতে আগে জলাবদ্ধতা হলে দুই তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকত। আমরা কিছু কাজ করার ফলে এখন কিন্তু সেখানে ওইরকম জলাবদ্ধ থাকে না। সব ড্রেনের ডায়মিটার কিন্তু এক না, অলিগলিতে একটু ছোট লাইন, সেখান থেকে পানি আসবে বড় লাইনে, এরপর সেখান থেকে পানি খালে নামবে। সেহেতু পানি সরে যেতে কিছুটা সময় দিতে হবে।
জলাবদ্ধতা বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে কাজ হয়েছে। আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে।
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার আশাবাদ জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এটি অত্যন্ত দুরূহ ও বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প প্রণয়ন করা, প্রকল্প থেকে অর্থসংস্থান পাওয়া, তারপরে দরপত্র করে কাজ শুরু করা, এগুলো অনেক দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ে যায় এবং দীর্ঘসময় লাগে। এ জন্য আমাদের যেসব কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে সেসব কাজ এগিয়ে নিতে আমরা তা নিজস্ব অর্থায়নেই করে চলেছি। হাতিরঝিলের মতো দীর্ঘ দশ বছর সময় যেন না লাগে সেজন্যই আমাদের এই কর্মকৌশল।
শেখ তাপস বলেন, গত বছর আমরা যখন (বর্জ্য অপসারণ, দখলদার উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণ) শুরু করি তখন কিন্তু এটার নদীর অববাহিকা ছিল না। আমরা সেই কাজটি করতে পেরেছি। এখন পানি প্রবাহ হচ্ছে। পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। সুতরাং প্রাথমিক কাজটা আমরা সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যদি প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করতাম তাহলে এই কাজটায় এতদিনে কিছুই হতো না। আমরা আশা করছি, প্রকল্প পাশ করে কাজ সম্পন্ন করতে হয়তোবা তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। এর মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগের আমরা কাজগুলো চালিয়ে যাব।
আরও পড়ুন: ঘুর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড ফরিদপুরের কয়েকটি গ্রাম
দেশের এভিয়েশন সেক্টরে রূপান্তরের অঙ্গীকার নিয়ে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন শনিবার
দেশের এভিয়েশন সেক্টরে রূপান্তরের অঙ্গীকার নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনাল শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে উদ্বোধন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত সমস্ত ‘মেগা প্রজেক্টের’ মধ্যে অন্যতম আলোচিত।
উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে বিমানবন্দরে চলছে মহড়া।
উদ্বোধনের দিন রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনিশ মায়ের্স্ক গ্রুপের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহযোগিতায় উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি৩৭১ ফ্লাইটটি ইতোমধ্যে টার্মিনাল থেকে দু'বার উড্ডয়ন করেছে। যদিও সেখানে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য কাগজপত্রের কাজ সম্পন্ন হয়নি।
উদ্বোধনের আগে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় টার্মিনাল-৩ এর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
মূল টার্মিনাল ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি সুবিধা সম্বলিত কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, কার্গো কমপ্লেক্সটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবারের সফট ওপেনিং- এর জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি চালু করা।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ এগিয়ে চলছে এবং আমরা নিশ্চিত যে নির্ধারিত সময়সীমার আগে টার্মিনালটি চালু হবে।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম ইউএনবিকে বলেন, টার্মিনাল-৩ সফট ওপেনিংয়ের জন্য জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর জন্য নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কর্তব্যরত কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন মহড়া চালিয়েছে এয়ারলাইন্সটি।
টার্মিনাল ৩ একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং পছন্দের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি ৩৭টি বিমান পার্কিং স্পেস দিয়ে শুরু হয়, যেখানে ইতোমধ্যে কিছু এয়ারলাইন্স দেখা গেছে। এর আগে সেগুলোকে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করতে দেখা যায়নি।
২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (যার মধ্যে ১২টি অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা) এবং ১৫টি সেলফ-সার্ভিসসহ ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বা উড়ে যাওয়া যে কোনো ব্যক্তির জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
নিচতলায় ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, দ্বিতীয় তলায় ডিপারচার লাউঞ্জ ও বোর্ডিং ব্রিজ এবং বিস্তৃত শুল্কমুক্ত দোকান ও এক্সিট লাউঞ্জ থাকবে।
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল
টার্মিনাল ৩ সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে বার্ষিক ১ দশমিক ২০ কোটি (১২ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। বর্তমানে বিমানবন্দরটি বছরে ৮০ লাখ (৮ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দিতে সক্ষম।
একটি বহুতল গাড়ি পার্কিং সুবিধা, কাস্টমস হল, ভিআইপি এবং ভিভিআইপি যাত্রী এলাকা এবং একটি ট্রানজিট যাত্রী লাউঞ্জও টার্মিনালের অংশ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড সিঙ্গাপুরের রোহানি বাহারিনের নকশায় নির্মিত তিনতলা টার্মিনালের ফ্লোর স্পেস হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বাহারিনের সিভিতে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের প্রশংসিত তৃতীয় টার্মিনাল এবং আহমেদাবাদের নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি করিডোর এবং ১ হাজার ৩৫০ টি পার্কিং স্পেস সহ মাল্টি লেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন টার্মিনালে অটোমেটেড পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেট চালু করা হবে।
যাত্রীরা ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই ইমিগ্রেশন করতে পারেন বা ৫৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন কাউন্টারের মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
একটি আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং উন্নত নিরাপত্তা স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করবে।
টার্মিনালে মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, এয়ারলাইন লাউঞ্জ এবং বিশ্বমানের শুল্কমুক্ত দোকানও থাকবে।
ওয়াই-ফাই, মোবাইল চার্জিং, প্রার্থনার জায়গা এবং একটি মিটার্স এবং গ্রিটার প্লাজার মতো সুবিধাগুলো ভালো পরিমাপের জন্য স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং বুথ, ডায়াপার চেঞ্জিং এলাকা, পারিবারিক বাথরুমসহ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাচ্চাদের একটি ডেডিকেটেড খেলার জায়গা থাকবে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল: ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ
লালমনিরহাটে সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৬৯ লাখ টাকার সেতু আছে, কিন্তু নেই সংযোগ সড়ক। সেতুতে উঠতে হয় বাঁশের সাঁকো বেয়ে।
সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচলের ভোগান্তিতে পড়েছেন ৫ গ্রামের হাজারও মানুষ। সেতুর নির্মাণ মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি সড়ক।
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা ছড়ার উপর নির্মিত ওই সেতুটি যেন এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের বছর পার হয়ে গেলেও দু’পাশে মাটি ভরাটসহ সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে নির্মাণাধীন সেতুর মাটি ধসে ৩ জনের মৃত্যু, আহত ৪
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৩ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা ছড়ার (বিল) উপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থ একটি ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেয়।
সেতুটির নির্মাণকাজ ২০২২ সালের মে মাসে শেষ হয়। ওই মাসেই সেতুটি হস্তান্তর করার চুক্তি ছিল ঠিকাদারের সঙ্গে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সেতুটি এখনো হস্তান্তর করেননি ঠিকাদার লিটন ইসলাম। কিন্তু ঠিকাদারকে ৮০ শতাংশ বিল দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩ মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেল কালুরঘাট সেতু
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে অর্থনীতিকে কোভিড পূর্ব অবস্থায় ফেরানোর আশা সরকারের
অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শেষ নাগাদ অর্থনীতিকে কোভিড-১৯-পূর্ব প্রবৃদ্ধির গতিতে ফিরিয়ে আনার আশা করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ বিভাগের ম্যাক্রোইকোনমি উইং প্রণীত 'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬'-এ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গত তিন বছরের বড় অংশের জন্য অর্থনীতি তার দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির গতিপথ থেকে ছিটকে পড়েছিল। উহানে প্রাদুর্ভাবের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছিল।
সম্প্রতি প্রকাশিত ত্রৈমাসিক জিডিপি ডেটা (আইএমএফ নির্ধারিত শর্ত অনুসারে) এটি প্রমাণ করে। এতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন ২০২০) অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, কারণ ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণমান নেতিবাচকে নামাল ফিচ
গত মাসে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত আংশিক ত্রৈমাসিক তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ থেকে ৮ শতাংশ। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির (সংকোচন) কারণে অর্থনীতি কতটা ছিটকে পড়েছিল তা এটিতে প্রতিফলিত হয়েছে।
কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট মন্দা আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম ৬ মাসের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতাকে হতাশাজনক করে তুলে। এটি তৃতীয় তিন মাসেও (জানুয়ারি থেকে মার্চ,২০২১) পুনরুদ্ধারের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
২০২১-২২ অর্থবছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ একটি সফল টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং লকডাউন বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ, ২০২২) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে।
তবুও যখন পুনরুদ্ধারের কাজ চলছিল, তখন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে হোঁচট খাওয়া শুরু হয়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার ফলে কোভিড পরবর্তী দেশের পুনরুদ্ধারের গতি আবারও হ্রাস পায়।
যদিও কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সংকোচনের মতো কিছুই ছিল না, তবুও ২০২২ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি মারাত্মক মন্দার সম্মুখীন হয়েছিল, যা আগের ত্রৈমাসিকের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ থেকে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশও তার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে প্রস্তুত। তবে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময়ও বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯-পূর্ব প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বাংলদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার, যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা
সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে থাকলে এবং তা ধরে রাখতে পারলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আবারও ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধি থেকে প্রকৃত বিচ্যুতি সামান্য রয়ে গেছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে।
ম্যাক্রোইকোনমিক পলিসি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলধন সংগ্রহ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি এবং তাই সরকার তার লক্ষ্য পূরণের জন্য সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৩২ শতাংশ, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগের মাত্রা আরও বাড়াতে হবে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি বিনিয়োগের বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারলে প্রয়োজনীয় মাত্রায় বিনিয়োগ অর্জন করা সম্ভব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিষয়টি চিহ্নিত করে প্রকল্পের নকশা ও বাস্তবায়ন উভয় স্তরেই কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।’
অর্থ বিভাগের নথিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। রাশিয়া বিশ্বব্যাপী জ্বালানির একটি প্রধান সরবরাহকারী দেশ। তাই যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন পণ্যের দাম দ্রুত বেড়েছিল।
প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশও এ সমস্যায় ভুগতে পড়ে যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম ইতোমধ্যেই কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতিগত হার বাড়িয়েছে এবং এর কারণে আশা করা হচ্ছে যে আগামী মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিকে করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরাতে চায় সরকার
আইএমএফ অনুমান করেছে, গৃহীত পদক্ষেপগুলো মাঝারি মেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করতে সরকারগুলোকে সহায়তা করবে। অর্থ বিভাগ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে গড় মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশে নেমে আসবে। যদিও প্রথম তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) এর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ও দরিদ্রদের আয় সুরক্ষায় সরকার ধীরে ধীরে মুদ্রানীতি কঠোর করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। এটি মাথায় রেখে সরকার ভর্তুকি ও প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করেছে।
কৃষি খাতকে সহায়তা করতে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানো হয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে গত অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে কৃষিঋণ ও অকৃষি পল্লি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।
সরকারের সহায়ক নীতির সহায়তায় শিল্প উৎপাদনের সাধারণ সূচক (মাঝারি এবং বৃহৎ আকারের উৎপাদন) বাড়ছে, যা সম্প্রসারিত শিল্প উৎপাদনকে প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই এসক্রো বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পাবলিক পলিসি বিশ্লেষক ড. মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, বেশ কয়েকটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় চলতি অর্থবছরের মধ্যে কোভিড পূর্ব প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং হবে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে, তিনি সরকারকে প্রথমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে আরও টেকসই করে তুলবে।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা/ডলারের তীব্র সংকট প্রতিরোধ, এলসি খোলা ও দেশীয় মুদ্রা টাকার ওঠানামার বিষয়টি আগে সমাধান করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন ড. রিয়াজ।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে কোভিড-পূর্ব প্রবৃদ্ধির হারে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা উচিত, যা স্বল্প সময়ের মধ্যে খুব চ্যালেঞ্জিং ও কঠিন হবে।
ড. রিয়াজ আরও বলেন, 'প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার সময় এসেছে। দীর্ঘমেয়াদে নন-পারফর্মিং লোনের উচ্চ হার কমানো, মুদ্রাস্ফীতি যৌক্তিক সীমার মধ্যে রাখা এবং বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক