বিশেষ সংবাদ
বিশ্ব সঙ্গীতশিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গানের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ।
গত রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এ গানের মিছিল শুরু করে। গানের মিছিলটি সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা ভবনের সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় উদীচীর শিল্পীরা বলেন, তারা গানের মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার গেট পর্যন্ত যাবেন। প্রধান উপদেষ্টাকে গান শোনাবেন। কিছুক্ষণ তর্কবিতর্কের পর পুলিশ গানের মিছিল ছেড়ে দেয়, ২ মিনিট পর মিছিলটি পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় অতিক্রম করার পর আবার সেটিকে থামিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর আর মিছিলটিকে সামনে যেতে দেয়নি পুলিশ। এ সময় সড়কে অবস্থান করে গান পরিবেশন করে উদীচীর শিল্পীরা।
এর আগে গত ২ নভেম্বর, সরকার প্রকাশিত সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে।
সচিব কমিটির সুপারিশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরে এসেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস উইং বলছে, সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ক্লাস্টার ভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলে একই শিক্ষককে ২০টির অধিক বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে তার পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।
এর আগে, এ বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে সরকার। এতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। এর দুই মাসের মাথায় এসে সেই প্রজ্ঞাপন পরিবর্তন করা হলো।
সংশোধিত বিধিমালা প্রকাশের পরই নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। সংস্থাটি মনে করে করে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং একটি গোষ্ঠীর চাপে নতজানু হয়ে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো থেকে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমাজের এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নিজেদের চিন্তার সংকীর্ণতা থেকে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে এর বিপরীতে অবস্থান ঘোষণা করলে সরকার সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে।’ এদিকে, শনিবার বিকালে সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের পদ পুনর্বহালের দাবিতে ৫ নভেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রিয়াংকা গোপে একটি স্মারকলিপি পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে নৃত্যকলা বিভাগের লাবনী বান্যা, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং বিভিন্ন হলের সাংস্কৃতিক সম্পাদকরা উপস্থিত থেকে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান।
প্রাথমিকের ‘সংগীত’ ও ‘শারীরিক শিক্ষা’ শিক্ষক পদ বাতিল
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ শিল্পচর্চা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য বড় হুমকি।
গানে গানে প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
ভিন্ন বৈশ্বিক বাস্তবতা
বৈশ্বিক বাস্তবতায় দেখা যায় বিশ্বের প্রায় সব দেশে, এমনকি বিশ্বের মুসলমানদের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরব থেকে শুরু করে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়াতে সঙ্গীত শিক্ষা দেওয়া হয়। । ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরব, সম্প্রতি ভিশন ২০৩০’র অংশ হিসেবে সরকারি স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষা চালু করতে ৯,০০০-এর বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এই সংস্কার শিল্প, বিনোদন ও শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশটি হাজারো কিন্ডারগার্টেন শিক্ষককে সঙ্গীত দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ২০২২ সালের শেষদিকে সরকারি ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ১২,০০০-এর বেশি নারী শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নতুন পর্যায়ে প্রায় ১৭,০০০ নারী শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলো—মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও মিশরেও জাতীয় পাঠ্যক্রমে সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ১৯৮৩ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক সঙ্গীত শিক্ষা চালু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক এবং ২০২২ সালের নতুন পাঠ্যক্রমেও তা বহাল আছে। তুরস্কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সপ্তাহে এক ঘণ্টা সঙ্গীত শিক্ষা পায়, এবং ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টার ঐচ্ছিক পাঠ থাকে। মিশরে ১৯৩১ সাল থেকে সরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমে আরবি ও পাশ্চাত্য সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত।
প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী পদক্ষেপ নেবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা
যুক্তরাজ্যের (ইংল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস) বিদ্যালয়গুলোতেও বয়সভেদে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক। ইউরোপের ২০ দেশের ওপর পরিচালিত এমইনেট গবেষণা দেখিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক; মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি সাধারণত ঐচ্ছিক। এদিকে জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
যুক্তরাষ্ট্রের এনসিইএস (জানুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী, সরকারি বিদ্যালয়ের ৭৩% শিক্ষার্থী অন্তত একটি আর্টস কোর্স করতে বাধ্য, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্গীত (৮৪%) ও চিত্রকলা (৮২%)।
চীনে বাধ্যতামূলক নয় বছরের শিক্ষার সময় সঙ্গীত বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং সাম্প্রতিক শিক্ষামূলক মানদণ্ডে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে, বিশ্বজনীন প্রবণতার বিপরীতে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন ও রাজনৈতিক দল——সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। তারা এর বিপরীতে ধর্মীয় শিক্ষকের দাবি তুলেছে।
গত সেপ্টেম্বরে ইন্সটিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হলে সড়ক আন্দোলনেরও হুমকি দেন তারা।
গবেষণা যা বলছে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে— সঙ্গীত শেখা মস্তিষ্কের স্মৃতি, মনোযোগ, বিশ্লেষণ, ভাষা ও সমস্যা সমাধান–সংক্রান্ত অংশগুলোকে একইসঙ্গে সক্রিয় করে। মস্তিষ্কের দুই গোলার্ধ একযোগে কাজ করায় শিশুদের একাডেমিক সক্ষমতা, শৃঙ্খলা, মনোযোগ এবং আবেগ–নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গবেষকেরা বলছেন, দলগত সঙ্গীতচর্চা নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সহযোগিতার দক্ষতা গড়ে তোলে, যা পরবর্তী জীবনে প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩০ দিন আগে
জেলা প্রশাসক নিয়োগ ঘিরে ফের বিতর্ক, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ২৯ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদলি ও নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই নিয়োগ ঘিরে আবারও উঠেছে বিতর্ক।
অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ পদায়নই হয়েছে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে। এতে প্রশাসনের ভেতরে ক্ষোভের পাশাপাশি নিরপেক্ষতা ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। মাঠ প্রশাসনে ঝুঁকি ও আস্থাহীনতার আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক পদে এই পদায়নকে অনেকেই দেখছেন ‘নির্বাচনী মাঠ দখলের কৌশল’ হিসেবে। আর এ কারণে জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসনের বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না—বরং নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা, বর্তমানে অন্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, সামনে নির্বাচন, এই সময়ে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী অন্তত ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তা।
পাশাপাশি, মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনজন ইকনোমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা নাই বললে চলে—এমন অযোগ্যদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ হয়েছে। এতে একদিকে যেমন নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনে বড় ঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে, তেমনই যোগ্য ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনার ভার আরও বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
সামাজিক মাধ্যমে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়া ভিডিও ভাইরাল হওয়া আজাদ জাহানকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করেছে সরকার।
এর আগে তিনি ভোলার জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ এলাকায় শত একর জমিতে মৎস্য ঘের তৈরির অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাকে নির্বাচনকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা গাজীপুরের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশাসনের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
একইভাবে, সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ছবি ও বার্তা শেয়ার করা উপসচিব আফসানা বিলকিসকে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে তিনি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, এমনকি টিউলিপ রেজওয়ানার ছবিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এমন দলীয় সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ্যে আনায় প্রশাসনের ভেতর সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, নড়াইলের সাবেক ডিসি শারমিন আক্তার জাহানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি করা হয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতির পরই তিনি ও কিছু আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শপথ’ নেন। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের ডিসি থাকাকালীন আর্থিক অনিয়ম ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ইস্যুর অভিযোগও রয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে।
সাইফুল ইসলাম আওয়ামী শাসনামলে অর্থ বিভাগ, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, একই জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে কাজ করেছেন। আওয়ামী সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা ফেনীর জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেই এক আওয়ামী লীগ নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হন। তার এই পদায়ন নিয়েও উঠেছে নানা বিতর্ক।
এ ছাড়া ইকোনমিক ক্যাডারের অন্তত তিন কর্মকর্তা—যাদের মাঠ প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা সীমিত—তাদেরও জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহের নতুন ডিসি সাইফুর রহমান ও মানিকগঞ্জের ডিসি নাজমুন আরা সুলতানা। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পদায়ন প্রশ্ন তুলছে দক্ষ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে।
একইভাবে, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাগেরহাটের সাবেক ডিসি আহমেদ কামরুল হাসানকে নোয়াখালীর ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তারও মাঠ প্রশাসনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুই জেলার ডিসি পদে পরপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বিতর্কিত ২০১৪ সালের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার (এআরও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ ও লুত্ফুন নাহারকেও যথাক্রমে বরগুনা ও মেহেরপুরের ডিসি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা ও নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমানের সময় থেকেই ডিসি নিয়োগ নিয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ চলে আসছে।
তখন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদে নেমেছিলেন। সেই বিতর্ক এখন নতুন আঙ্গিকে আবারও ফিরে এসেছে, বিশেষ করে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে।
সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দিলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়—এটাই সবচেয়ে বড় বিপদ। নির্বাচনকালীন সময়ে ডিসিরা মাঠ প্রশাসনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তাদের নিরপেক্ষ আচরণের ওপরই নির্ভর করে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও শান্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এখনই এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা উচিত। অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দিলে প্রশাসনের ভেতর বিভাজন আরও গভীর হবে, যা রাষ্ট্রীয় সেবার মানকেও ক্ষুণ্ণ করবে।’
৩২ দিন আগে
চোখে অন্ধকার, তবে আলমডাঙ্গার মিস্ত্রি জহুরুলের হাতে আলো
চোখে আলো নেই, তবু তার হাতে যেন জাদু। যন্ত্রের ক্ষুদ্রতম ত্রুটিও চোখ ছাড়াই বুঝে ফেলেন তিনি—কোন স্ক্রু ঢিলা, কোন নাট খুলতে হবে, কোন রেঞ্চ ব্যবহার করতে হবে—সবকিছু হাতের স্পর্শেই যেন অনুভব করেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের বুড়োপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জহুরুল ইসলাম মঙ্গল দৃষ্টি হারালেও দক্ষতায় হার মানান যেকোনো অভিজ্ঞ মিস্ত্রিকে।
জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই মানুষটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাইকেল, ভ্যান, শ্যালো ইঞ্জিন, পাওয়ারট্রলি থেকে শুরু করে টিউবওয়েল বসানো পর্যন্ত সব কাজই একাই করেন।
জহুরুল মঙ্গল বলেন, ‘চোখে না দেখেও কাজ করতে পারি—এটা আল্লাহর রহমত। আমার বাহিরের চোখ নেই, কিন্তু অন্তরের চোখ দিয়েই দেখি। কোন স্ক্রু কোথায় লাগবে, কোন রেঞ্চ ধরতে হবে, হাতই আমাকে বলে দেয়।’
মাত্র সাত বছর বয়সে সাইকেলের প্রতি আগ্রহ থেকে এক দোকানে মিস্ত্রির কাজ শেখেন তিনি। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গেটসংলগ্ন স্থানে নিজের দোকান খোলেন। পরে গ্রামে ফিরে শ্যালো ইঞ্জিন ও পাওয়ারট্রলির কাজেও দক্ষতা অর্জন করেন। ২০০৪ সাল থেকে বুড়োপাড়াতেই চলছে তার স্থায়ী দোকান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক কৃষকের শ্যালো ইঞ্জিন নষ্ট হলে জহুরুল মঙ্গল সাইকেলে চড়ে মাঠে যান। শুধু হ্যান্ডেল ঘোরাতেই সমস্যাটি বুঝে ফেলেন। কয়েক মিনিটেই ইঞ্জিন সচল হয়ে যায়। এরপর আবার টিউবওয়েল মেরামতে ছুটে যান অন্য এক বাড়িতে— কোনোরকম সহযোগিতা ছাড়াই।
গ্রামের কৃষক তাইজাল শেখ বলেন, ‘৪০ বছর ধরে মেশিন চালাই, কিন্তু একটা নাটও খুলতে পারি না। মঙ্গল ভাই না দেখেই মেশিন ঠিক করেন—এটা আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা।’
৩৪ দিন আগে
রংপুর অঞ্চলে বেড়েছে খড়ের কদর, আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসি
রংপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াই। ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে খড়ের চাহিদা। খড়েরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই আগাম ধানের ভালো ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে খড়ের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধানের ফলন হ্রাস এবং চারণভূমির অভাব।
রংপুর সদরের মমিনপুর গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ানো যেতো, কিন্তু এখন পতিত জমি বা নীচু জমি আর ফাঁকা থাকে না। ফলে চাষ করা ঘাস ও খড়ের ওপর গরুর খাদ্যের নির্ভরশীলতা বেড়েছে।’
খামারি সিরাজ জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের বন্যার কারণে এ অঞ্চলের সব উন্মুক্ত এবং চাষ করা তৃণভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ঘাসের সংকটও দেখা দিয়েছে। এ কারণে যারা আগাম ধান চাষ করেছেন তাদের খড়ের চাহিদাটা অনেক বেশি এবং তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
চলতি মৌসুমে আগাম ধান ও খড় বিক্রি করে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আগাম আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। একই ধানের খড় বিক্রি করে কৃষকদের বাড়তি আয় হবে আরও ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ২০ আটির বোঝা ২২০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন ২০টি আটি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা।
বিক্রেতা আল আমিন জানান, নতুন ধানের সঙ্গে সঙ্গে খড়ের দাম ভাল পাওয়ায় তিনি খুশি।
ক্রেতা রানা মিয়া বলেন, গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এই অবস্থায় খড়ই গরুর জন্য উত্তম খাদ্য। তবে দাম একটু বেশি হওয়া গবাদিপশুর খাদ্য যোগান দিতে খরচ বাড়ছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দোন জমিতে (২৪ শতক) খড় পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ আটি। সেই হিসেবে এক একর জমিতে পাওয়া যায় ২ হাজার আটি। এক হেক্টরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার খড়ের আটি পাওয়া যাবে।
আটি প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে আটি বিক্রি করে কৃষকদের আয় হবে ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এই হিসেবে এক লাখ হেক্টরে ধানের আটি বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
অন্যদিকে, চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় বিনা-৭ ব্রি -৩৩, ৩৯, ৫৬, ৫৭ ও ৬২, ৭১.৭৫, ৮৭, ১০৩ সহ হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বিনা-৭ ও ১৭ ধানও হচ্ছে এই সময়ে। ১২০ দিনের মধ্যে এসব ধান ঘরে তোলা যায়।
৩৫ দিন আগে
জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল কচুরিপানার দখলে, প্রশাসনের সুরক্ষা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম লাল শাপলা বিল বর্তমানে প্রকৃতিগতভাবে কচুরিপানার বিস্তার নিয়ে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অচিরেই কচুরিপানা বিল বলে পরিচিতি লাভ করবে লাল শাপলা বিলটি।
প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিল রক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসনের গঠিত লাল শাপলা সুরক্ষা কমিটি কি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে?
সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন পেশার স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিরহাওর (ইয়াম-হরফকাটা-ডিবি-কেন্দ্রী) এলাকায় ৯শত একর জায়গাজুড়ে চারটি প্রকৃতিগত লাল শাপলা বিল অবস্থিত। ২০১৬ সালে এই বিলগুলো সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সারাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পায়। দেশি-বিদেশী পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য্য দেখে প্রশংসা করেছেন।
তবে চলতি বছরে একটি বিলের (ইয়ামবিল) অর্ধেকের বেশি এলাকা কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। দ্রুত বিস্তারমান কচুরিপানার কারণে লাল শাপলা বিলের ধ্বংস হচ্ছে। পর্যটকরা শীঘ্রই লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার বিল দেখতে আসতে পারে, যা জৈন্তাপুরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ বিনষ্ট করবে।
স্থানীয়রা জানান, লাল শাপলা সুরক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন করেছে। কমিটির মূল কাজ হলো বিলের শাপলা রক্ষা, ধ্বংসকারী জলজ উদ্ভিদ চিহ্নিত করা এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা। পর্যটকদের নৌকা থেকে ১০০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করে বিলের বাঁধ ও পরিচর্যা কাজে ব্যয় করা হয়।
তবে ইয়ামবিলের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অর্ধেক এলাকা কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার ফুল ফোটার কারণে বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত পরিবেশ সমীক্ষা করে লাল শাপলা রক্ষার দাবি তুলেছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জমিত্র চাকমা বলেন, লাল শাপলা বিলে জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার কারণে শাপলা ধ্বংস হচ্ছে; বিষয়টি ইতোপূর্বে কেউ আমাকে অবহিত করেনি। তিনি আশ্বাস দেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লাল শাপলা সুরক্ষায় কচুরিপানা সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
৩৬ দিন আগে
নির্মাণের ৪০ বছর পার হলেও রাখা হয়নি কোনো কয়েদি, কারাগার এখন ‘পরিত্যক্ত’ বাড়ি
উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় চার দশক আগে তৎকালীন সরকার মাগুরা জেলার মহম্মদপুরে তৈরি করেছিল একটি কারাগার। কিন্তু নির্মাণের পর চালু না হওয়ায় কারাগারটিতে কখনোই রাখা হয়নি কয়েদি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থাপনাটি বর্তমানে ‘পরিত্যক্ত’ বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা সদরের বাওইজানি গ্রামে এই উপ-কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রকল্পটির কাজ থমকে গেলে কারাগারটি আর চালু হয়নি।
মাগুরা জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর পর্যন্ত আসামি আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমিয়ে স্থানীয় বিচারিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার উপ-কারাগারটি নির্মাণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটির পরবর্তী কার্যক্রম আর আলোর মুখ দেখেনি। উদ্বোধনের আগেই তালা পড়ে যায় ফটকে।
২ দশমিক ৭১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত উপকারাগার কমপ্লেক্সে পুরুষ কয়েদিখানা, নারী কয়েদিখানা, রান্নাঘর, কার্যালয় ভবন, নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা, পাম্প হাউস ও কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক কোয়ার্টার আছে। ২০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী কয়েদির থাকার উপযোগী করে উপ-কারাগারটি নির্মান করা হয়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় চার দশক আগে নির্মিত স্থাপনার বেশির ভাগেরই এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। ভবনগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে, দরজা-জানালার কাঠামো নেই।
ভবনটি দেখভালের জন্য প্রশান্ত কুমার নামে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মচারী আছেন। তিনি বলেন, ‘উপ-কারাগারে কর্মকর্তাদের জন্য বানানো কোয়ার্টারে আমি পরিবার নিয়ে থাকছি। ভবনগুলো পরিত্যক্ত হলেও ঝুঁকি নিয়েই থাকছি এবং দেখভাল করছি।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, স্থাপনাটি কোনো কাজে আসছে না। শুধু শুধু জায়গা দখল করে আছে। সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুর রব বলেন, স্থানটি অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হলেও সংস্কার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল তাদের নেই। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে অসহায় দুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ অভিভাবকহীন ছিন্নমূল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যদিও স্থাপনার বেশিরভাগই এখন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এমন ২৩টি উপ-কারাগার রয়েছে, যেগুলোর একটিও এখন কার্যকর নেই। পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী অচলাবস্থা এবং অবহেলার কারণে এসব সরকারি স্থাপনা ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘মহম্মাদপুর উপ-কারাগারটি বর্তমান সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন আছে, সেখানে আমাদের একজন কেয়ারটেকার আছেন। তিনি সেখানটা দেখভাল করেন। তবে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’
৩৭ দিন আগে
চুক্তিভিত্তিক সচিবদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন, পদোন্নতিতে স্থবিরতায় নিয়মিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ অন্তত ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে আছেন চুক্তিভিত্তিক সচিবরা। এমনকি পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সাত সদস্যের মধ্যে চারজনই চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তা। এতে প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক আমলাদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়েছে, ক্ষোভ বেড়েছে নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে শুরু করে মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব— প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখন পরিচালিত হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক সচিবদের হাতে।
প্রশাসনের পদোন্নতি, পদায়ন ও নিয়োগে প্রভাব পড়ছে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত। তবে তাদের অনেকেই প্রায় এক যুগ প্রশাসনের বাইরে থাকার পর ফের দায়িত্ব পেয়েছেন। ফলে প্রশাসনে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা, স্থবিরতা ও নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন। তাদের কেউ কেউ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও অনেকে কাঙ্ক্ষিতভাবে কাজ করতে পারছেন না। সরকারের উচিত, যারা ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের চুক্তি বাতিল করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তির কারণে নিয়মিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ব্যাহত হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যোগ্য দেখে নতুনদের সুযোগ তৈরি করা। নিয়মিত পদোন্নতি সহ নিয়মিতদের মাধ্যমে প্রশাসনে গতি বৃদ্ধি করতে হবে।’
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক ২০জন কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব ও ৭১ জন কর্মকর্তা সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহসানুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মোখলেস উর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদস, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) সিদ্দিক জোবায়ের, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদা) এ জে এম সালাহউদ্দিন নাগরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) ড. কাইয়ুম আরা বেগম, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব পদমর্যাদা) এস এম মঈন উদ্দিন এবং মকসুমুল হাকিম চৌধুরীকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদা) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফকে বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত পদে। ড. মো. মাহফুজুল হককে পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব পদমর্যাদা) এবং বেগম শরিফা খানকে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ সময় প্রশাসনের বাইরে থাকায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এসব সিনিয়র সচিব ও সচিব স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন প্রশাসনের বাইরে থাকা চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা এখনো পুরোনো ধাঁচে কাজ চালাচ্ছেন। তারা এখনো সেই ১৫ বছর আগে তাদের রেখে যাওয়া প্রচলিত নিয়মে প্রশাসন পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তারা নিজেদের ব্যাচ (বিসিএস ১৯৮২) ঘিরে বলয় তৈরি করেছেন, যাতে অন্য ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে না পারেন।
প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, আওয়ামী স্বৈরশাসনের পতনের পরও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। এখনো দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার যেন স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে।
জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর ডিসি নিয়োগে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ওয়াশরুমে আটকে রাখার ঘটনাও প্রশাসনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
সর্বশেষ শিক্ষাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে একটি দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা অতীতের সব রেওয়াজ ভেঙে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা এখন আমলাপাড়ায় ‘ওপেন-সিক্রেট’।
এর মধ্যে ডিসি নিয়োগে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে খোদ জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে। পরে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকে গত ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করে পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এর ২১ দিন পর এই পদে বদলি করা হয় চুক্তিতে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহছানুল হককে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত দুই দশকে এক দিনের জন্যও সচিব ছাড়া থাকার নজির নেই। এর আগে প্রায় এক মাস খালি থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়।
এতে প্রশাসনে আস্থাহীনতা ও মনোবলহীনতা বেড়ে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে দক্ষ কর্মকর্তা সংকট প্রকট হচ্ছে— বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৩৭ দিন আগে
ঝিনাইদহে উন্নয়ন স্থবিরতায় জনভোগান্তি চরমে
ঝিনাইদহে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। আগের মতো সরকারি অফিসগুলোতে কোলাহলমুখর পরিবেশ নেই। চলমান এই স্থবিরতায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জেলার বিভিন্ন দপ্তরে অতিরিক্ত বা বিশেষ বরাদ্দ না থাকায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতার প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নে।
এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও জেলা পরিষদসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে অপ্রতুল বরাদ্দ এলেও মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে রাস্তাঘাট মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে কোথাও রাস্তায় বড় বড় গর্ত, কোথাও কালভার্ট ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। শহর ও গ্রামীণ সড়কে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ।
পৌরসভাগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা সংস্কার—সব ক্ষেত্রেই অবহেলা ও স্থবিরতা স্পষ্ট। স্থানীয়ভাবে কর আদায়ও কমে গেছে, ফলে পৌর সেবা কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প না থাকায় বাজারে টাকার রোলিং কমে গেছে। স্থানীয় ঠিকাদার, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ না থাকায় নির্মাণসামগ্রীর দোকানগুলোতেও মন্দা বিরাজ করছে।
ঠিকাদারদের ভাষ্য, বছরের পর বছর ধরে কোনো নতুন কাজ নেই। শ্রমিকেরা বেকার হয়ে যাচ্ছে, ব্যবসাও ধসে পড়ছে।
এদিকে, অর্থ সংকটের প্রভাব পড়েছে ঝিনাইদহের স্বাস্থ্য খাতেও। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধের সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় পড়েছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি ও দ্বিধা দেখা দিয়েছে। নতুন সরকার আসলে এসব সমস্যা মিটে যেতে পারে।’
সাবেক সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি সাইয়েদুল আলম জানান, উন্নয়ন বন্ধ মানে জীবন থেমে যাওয়া। রাস্তা খারাপ, হাসপাতালে ওষুধ নেই, পৌর এলাকার রাস্তা ও ড্রেন-কালভার্ট নষ্ট—সব মিলিয়ে যেন এক অবহেলিত জেলা।
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন জানান, রাজনৈতিক সরকারের আমলের মতো বেশি প্রকল্প নেই। তবে এডিপি বরাদ্দ আগের চেয়ে বেশি এসেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এবার এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এনসিপি নেতা তারেক রেজা মন্ত্রণালয়ে তদবির করে এক কোটি ৭০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেছেন। এ ছাড়া কোভিড-১৯ ও আরইউটিডিপি নামে দুটি প্রকল্প চলছে।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, গত তিন বছর ধরে কোনো নতুন প্রকল্প নেই। তবে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন নতুন প্রকল্প না থাকায় জেলার প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার রাস্তা ভালো রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহবাসীর জন্য সুখবর হলো, শহরের মধ্যে টার্মিনাল থেকে হামদহ ভায়া আরাপপুর রাস্তা উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ঢালাই রাস্তা এবং ২৪ কোটি টাকা রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৪১ দিন আগে
কুয়াশার উত্তরীয় জড়িয়ে লালমনিরহাটে শীতের আগমনবার্তা
এ বছর নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের পরই উত্তরবঙ্গের আকাশে-বাতাসে পাওয়া যাচ্ছে শীতের আভাস। কার্তিক মাসেই দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে ক্রমেই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে শীতের আগমনবার্তা।
গত কয়েকদিন ধরে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার গ্রামীণ জনপদগুলো। ভোরের হালকা শীত আর ঠান্ডা হাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে—শীত আসতে দেরি নেই।
কুয়াশায় মোড়ানো পথঘাট, মাঠে সোনালী ধানের আভা, আর বিলে শাপলার হাসি—সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নিল ছবি আঁকছে প্রকৃতি। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিউলী আর বেলী ফুলের সুবাস আরও নির্মলতা, আরও পবিত্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৩ শতাংশ।
৪২ দিন আগে
বিএনপি বনাম জামায়াত: কুড়িগ্রামে ভাই-ভাই লড়াই
সাধারণত পারিবারিক ক্ষেত্রে ভাই-ভাই লড়াই চোখে পড়লেও এবার রাজনীতির ময়দানে এমন দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছেন কুড়িগ্রামবাসী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে সৃষ্টি হয়েছে এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—দুই দল থেকেই প্রার্থী হয়েছেন দুই ভাই। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও আগ্রহের ঝড়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-চিলমারী) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আজিজুর রহমান। অন্যদিকে, একই আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে, যিনি আজিজুর রহমানের আপন ছোট ভাই।
দুই ভাইয়ের এই রাজনৈতিক মুখোমুখি অবস্থান এখন স্থানীয় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৯ জন।
বৃহৎ এই ভোটারগোষ্ঠীর মন জয় করতেই এখন দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াত—উভয় দলই এই আসনে ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। ফলে ভাই-ভাই লড়াই এই আসনকে জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় এক প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, ‘রৌমারী-চিলমারীর ইতিহাসে এমন দৃশ্য প্রথম। ভাইয়ের বিপরীতে ভাই—এটা নির্বাচনী মাঠে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন প্রশ্ন, কে এগিয়ে থাকবেন?’
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল এখন তুঙ্গে। কেউ বলছেন, এটা পরিবারের ভেতরেও রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিচ্ছবি। আবার কেউ মনে করছেন, দুই ভাই-ই জনপ্রিয়; শেষ হাসি কে হাসবে তা বলা কঠিন।
জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ‘আমার বড় ভাই বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি চূড়ান্ত মনোনয়নও পান, তবুও আমাকে পরাজিত করতে পারবেন না। জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দুই ভাই প্রার্থী হলেও নির্বাচনে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’
অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, আমার ছোট ভাই একসময় বিএনপিতেই ছিল। আমার কারণে সে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরে জামায়াতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছে। আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমার পরিচয় ও পারিবারিক ইমেজের কারণে সে এককভাবে সুবিধা নিতে পারত। কিন্তু আমি প্রার্থী হওয়ায় সেই সুযোগ হারিয়েছে। জনগণ আমাকেই চায়, তাই আমি আশা করছি দল আমাকে চূড়ান্ত প্রার্থী করবে।’
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ফল নির্ভর করবে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর—দলের সাংগঠনিক শক্তি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা এবং প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। ভাই-ভাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনে রোমাঞ্চ যোগ করলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কে জয়ী হবেন, তা সময়ই বলে দেবে।
৪২ দিন আগে