বিশেষ-সংবাদ
চাকরির পেছনে না ছুটে কমলা চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে কুড়িগ্রামের যুবক
কুড়িগ্রামে চায়না ঝুড়ি জাতের কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন মো. আবু রায়হান ফারুক।
ফারুক কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কাজী মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে।
বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে রয়েছে শতাধিক কমলা গাছ। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। চারা লাগানোর মাত্র দেড় বছরে গাছে কমলা আসতে শুরু করে। বর্তমান তার বাগানের বয়স আড়াই বছর।
এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করছেন। আর মাত্র ২০দিন পর বাগান থেকে প্রায় ১৫-২০ মণ কমলা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। যা বর্তমান কমলার বাজার মূল্যে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে জানা যায়, আবু রায়হান ফারুক পড়াশোনা শেষ করে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কৃষিখাত বেছে নেন। বাবার জমিতে শুরু করেন সমন্বিত ফলের চাষ। প্রায় ৬ একর জমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের গাছ। আম, মাল্টা, আঙুর চাষের পাশাপাশি কমলা চাষের উদ্যোগ নেন।
প্রথমে বগুড়া শহর থেকে একটি চায়না ঝুড়ি কমলা জাতের গাছ সংগ্রহ করেন তিনি। একটি গাছ থেকে কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে দুই বিঘা জমিতে ১০০ কমলা গাছ রোপণ করেন। কলম করা গাছের চারা থেকে দেড় বছরের মধ্যে কমলা পেতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষের স্বপ্ন বুনছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ১৪০ একর জমিতে হচ্ছে কৃষিবান্ধব বাণিজ্যিক সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
নির্বাচনের আগে অবরোধ ও হরতালের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: ড. আতিউর
বর্তমান অবরোধ ও যানবাহন পোড়ানো কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে তা ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসবের ব্যাখ্যা দেন। একই সঙ্গে সমাধানে পৌঁছানোর উপায় ও পরামর্শও দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, যানবাহনে আগুন দেওয়ার আশঙ্কা বাস্তব।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপি, জামায়াত ও কয়েকটি ছোট জোট এসব বিক্ষোভ করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। সরকার এই দাবিকে অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বাড়াতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূর করতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
অর্থনীতিবিদ বলেন, বিক্ষোভের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি- উভয়ের জন্য পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে।
এছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল না করায় অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। এগুলো মূলত অস্থায়ী কর্ম এবং এই ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হাজার হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান অস্থিরতা কেবল অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করছে না, আন্তঃজেলা ট্রাক ও কনটেইনার যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে না পারায় আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করছে।
পরিবহন ব্যাহত হওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদকরা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, এদিকে শহুরে ভোক্তারা বেশি দাম দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও হামলার হুমকিসহ অস্থিরতা ইতোমধ্যে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে ব্যবসায়িক আস্থা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এটি বিনিয়োগের মাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন ড. আতিউর।
ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ায় ব্যাংকগুলো তাদের ঋণখেলাপির সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে, আমদানি মন্দার পাশাপাশি এই রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
এটি আবার বাজেট ঘাটতি ও উচ্চতর সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তার উপর প্রভাব ফেলে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দেশ ২০১৪ সালে একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের পক্ষে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত: এটিএম তারিকুজ্জামান
ড. আতিউর বলেন, 'আমরা এই পোড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি... পরবর্তীকালে দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এঘিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর সম্পদ পুড়িয়ে ফেলার নেতিবাচক সংস্কৃতির মুখে পড়েছে দেশ। আমি আশা করি, আরেক দফা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা এড়ানোর জন্য সব অংশীজনদের মধ্যে সদিচ্ছা বিরাজ করবে, যার ফলে অর্থনীতির অপ্রত্যাশিত ক্ষতি এড়ানো যাবে।’
এভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিলের কারণে আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও, এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্ত পেমেন্টের ভারসাম্যের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রভাব রয়েছে, যা ইতোমধ্যে মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে।’
প্রথম সর্বোত্তম সমাধানটি হবে যেকোনো মূল্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী ট্রেনে তোলা। প্রয়োজনে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি দলকে আকৃষ্ট করতে তফসিল আরও নমনীয় করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য নতুন ডাটা সেন্টার চালু ডিএসইর
এমনকি যদি কিছু দল এই ধরনের সমন্বয়ের পরেও নির্বাচনী ট্রেন এড়িয়ে যায় তবে এটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল এবং স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সামনে এগিয়ে যেতে দিন।
এরই মধ্যে, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিনিময় হার ও সুদের হার উভয়কেই নমনীয় করার জন্য আমাদের অবশ্যই বাজার-নির্ধারিত সমাধানের দিকে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে(বাংলাদেশ ব্যাংক) এ অঞ্চলের বন্ধুপ্রতীম কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আরও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ বা আমানতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা উচিত।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে আরও রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ক্ষুদ্র রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য আরও কিছু প্রণোদনা দিতে হবে। বড় রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য আধিপত্যপূর্ণ এনআরবি বন্ড ঠিক করতে উচ্চতর মুনাফা প্রদানেরও পরামর্শ দেন ড. আতিউর রহমান।
আরও পড়ুন: অবৈধ লেনদেনের দায়ে ওয়ালেটমিক্সের লাইসেন্স বাতিল
বুড়িমারী স্থলবন্দর সম্প্রসারণ: উন্নত বাণিজ্য ও পরিষেবার দিকে যাত্রা
পাসপোর্টধারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের উন্নত সেবা দিতে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে আরো ৬০ একর ৮৯ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
‘স্থলবন্দর সম্প্রসারণ ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি করা মালামাল সংরক্ষণ ও পার্কিং নির্মাণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বাংলাদেশের অন্যতম স্থলবন্দর বুড়িমারী স্থলবন্দর।
প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে এই স্থলবন্দরটির। ফলে বাংলাদেশ, ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশিরা বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ১৪০ একর জমিতে হচ্ছে কৃষিবান্ধব বাণিজ্যিক সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে আরো ৬০ একর ৮৯ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কমবে পাসপোর্টধারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি।
বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ১১ একর ১৫ শতক জমির উপর বুড়িমারী স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রী ও আমদানি-রপ্তানিকারকদের সেবা দিয়ে আসছে। বন্দরে একটি প্রশাসনিক ভবন, ৩টি ডিজিটাল ওয়েব্রিজ স্কেল, একটি ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ভবন, একটি শ্রমিক বিশ্রামাগার, দু’টি ৪০০ টন ধারণ ক্ষমতার শেড, একটি এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতার শেড, দু’টি ট্রান্সশিপমেন্ট শেড ও দু’টি ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে।
আরও পড়ুন: নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে বুড়িমারী স্থলবন্দর, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
বুড়িমারী কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আব্দুল আলীম বলেন, ‘পাসপোর্টধারী যাত্রী এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলা সেবার মান নিম্নমুখী। এজন্য সরকার ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেবার মান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে সব পক্ষেরই সুবিধা হবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রী মো. খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর আধুনিকায়নের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে বিশ্বমানের একটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। এতে যেমন সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সব ধরনের চোরাচালান ও অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।’
আরও পড়ুন: বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি ৮দিন বন্ধ থাকবে
নির্বাচনের আগে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত
আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে বঙ্গোপসাগরে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে কোনো দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা না করতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও এক্সনমোবিলস ইন্টারেস্ট অব এক্সপ্রেশন (ইওআই) নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের দুটি বিষয়েই বিলম্ব করতে বলা হয়েছে।’
এর আগে ২৬ জুলাই অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের জন্য 'বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩'- খসড়া অনুমোদন করে।
ডিসেম্বরের মধ্যে বিডিং রাউন্ডকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনার অধীনে খসড়া মডেল পিএসসি ২০২৩-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
অনুমোদনের পর ৯ আগস্ট তৎকালীন জ্বালানি সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকার এক মাসের মধ্যে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করেছে।
সম্প্রতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এলএনজি আমদানির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সেলরেট এনার্জির সঙ্গে একটি চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে নতুন সরকার গঠিত হলে সরকার হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করবে।
আরও পড়ুন: ‘নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংকট শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই’
অন্যদিকে, সরকার এলএনজি আমদানির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই করেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে এই চুক্তি দেশকে আরও বেশি আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভরশীল করে তুলবে।
সরকারি সূত্রের তথ্যমতে, নতুন মডেল পিএসসি বর্তমান বছরের মধ্যে অফশোর গভীর ও অগভীর পানির গ্যাস ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। যাতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক তেল সংস্থাগুলোর কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং বঙ্গোপসাগরে হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যায়।
এই উদ্যোগের আওতায় নমনীয়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দামের সঙ্গে গ্যাসের দাম ট্যাগ করা হয়েছিল।
পেট্রোবাংলার এই কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘পরিকল্পনার আওতায় আমরা ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ গ্যাসের দাম দিতে যাচ্ছি।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, যদি ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৫ মার্কিন ডলারে লেনদেন করা হয়, তাহলে প্রতি হাজার ঘনফুট (এমসিএফ) গ্যাসের দাম হবে ৭ দশমিক ৫ ডলার।
মডেল পিএসসি ২০২৩-এর নতুন বিধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম সবসময় আন্তর্জাতিক তেলের দামের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকবে।
মডেল পিএসসি অনুমোদনের পাশাপাশি, সরকার এক্সনমোবিলের সঙ্গেও আলোচনা করছিল; তারা ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অফারটি ছিল একটি ইওআই; যেখানে এক্সনমোবিল ২৬টি অফশোর ব্লকের পরিবর্তে, একটি একক ব্লক বিবেচনা করে সমগ্র সামুদ্রিক এলাকার বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, মার্কিন কোম্পানি অবশ্য প্রস্তাবে তেল বা গ্যাসের কোনো দাম উল্লেখ করেনি।
সরকারি সূত্র জানায়, দেশে মোট ৪৮টি ব্লক রয়েছে, যার মধ্যে ২৬টি সমুদ্রতীরে অবস্থিত। ২৬টি অফশোর ব্লকের মধ্যে ১১টি অগভীর সমুদ্রের (এসএস) পানিতে অবস্থিত এবং ১৫টি গভীর সমুদ্রের (ডিএস) পানি এলাকায় অবস্থিত।
অফশোর ব্লকগুলোর মধ্যে ২৪টি আইওসির জন্য খোলা রয়েছে, এসএস-০৪ ও এসএস-০৯ এই দুটি ব্লক ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তির অধীনে রয়েছে। সেখানে সম্প্রতি ড্রিলিং কাজ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
প্রায় ৯ বছর আগে সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অফশোর এলাকাটি অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ২৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। যেখানে প্রায় ১০০০ এমএমসিএফডি ঘাটতি রেখে প্রায় ৪০০০ এমএমসিএফডি চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রায় ৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।
সরকার সর্বশেষ ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মডেল পিএসসি সংশোধন করেছিল। যার ফলে যেকোনো অংশগ্রহণকারী আইওসি’র জন্য গ্যাসের দাম অর্থাৎ, তারা যে দামে সরকারকে গ্যাস বিক্রি করবে তা অগভীর পানির ব্লকগুলোর জন্য প্রতি এমসিএফ ৫ দশমিক ৫ ডলার এবং গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলো থেকে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য প্রতি এমসিএফ ৭ দশমিক ২৫ ডলার করা হয়েছিল।
২০২০ সালের মার্চ মাসে অফশোর এলাকায় অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক বিডিং আমন্ত্রণ জানানোর কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘তেল ও গ্যাসের দামের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নীতিনির্ধারকদের পিএসসিতে রপ্তানির বিকল্প উন্মুক্ত রাখাসহ আরও নমনীয়তা ও প্রণোদনা প্রবর্তন করে গ্যাসের দাম আরও বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেছেন, সরকারকে প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৬ মার্কিন ডলারে এলএনজি আমদানি করতে হয়েছিল। অথচ গত বছরের শুরুতে এটি ১০ মার্কিন ডলারের নিচে ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব বাজারের অস্থিরতাকে আরও গভীর করেছে, পেট্রোলিয়ামের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের উপরে উঠেছে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এখন আবার তেল ও গ্যাসের দাম নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে এবং ব্রেন্ট ক্রুড ব্যারেল প্রতি ৭৫ ডলারে লেনদেন হচ্ছে। যেখানে এলএনজির দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪ ডলারের নিচে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
‘নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংকট শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই’
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের হতাশা ভুলে ভালো সময়ে ফেরার অপেক্ষা করছে।
কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেয়ারবাজারের অবস্থা পুনরুদ্ধার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কার তত্ত্বাবধান করা উচিত তা নিয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম বিক্রয় হার) এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পতনের উপর আটকে আছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারের অনেক হতভাগ্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য এটি বেদনাদায়ক।
নীতিনির্ধারকরা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা জানিয়ে বলেছে, নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে স্টক মার্কেট পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবস্থা আশাহীন বলেই মনে হচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগে আটকে রয়েছেন।
আব্দুল লতিফ নামে এক মুদি দোকানের মালিক এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ইউএনবিকে বলেন, ‘কেউ, এমনকি নিয়ন্ত্রক বা স্টক মার্কেট কর্তৃপক্ষও তাদের ডাকে সাড়া দেয় না।’
তিনি জানান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে ২০১১ সালে তিনি ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করার পর লতিফ কোনো উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পান না। তারপর ২০০২ সালে তার শ্বশুরের সহায়তায় মতঝিল এলাকায় একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় ভালো লাভ করেন এবং শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
২০১০ সালে লতিফ প্রায় ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, যার মধ্যে ৫ লাখ তার নিজের এবং ৮ লাখ আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করেছিলেন।
২০১১ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির কারণে তার সব বিনিয়োগ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে আটকে যায়।
২০১১ সালে লতিফের মতো হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের কষ্টার্জিত মূলধন হারিয়েছিল এবং এরপরে কেউ কেউ মূলধন ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রায় সব বিনিয়োগ হারিয়ে পুঁজিবাজার ছেড়ে যান।
এরকম আরও অনেক বিনিয়োগকারী এখনও ডিএসইতে ফেরার আশায় রয়েছেন, কিন্তু কোনো আশা পাচ্ছেন না তারা।
আগামী নির্বাচনের আগে ফ্লোর প্রাইস উঠার কোনো লক্ষণ নেই।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের ওপর মানুষের আস্থা নেই। আগামী জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু।’
ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিতে হবে যে কেউ যদি কারসাজির মাধ্যমে তাদের টাকা চুরি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই কাজের মাধ্যমে বাজার সমস্যা দূর করা সম্ভব।
তবে এটা মোটেও সহজ নয় বলে জানান ড. আজিজুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, বাজারে দুটি সংকট রয়েছে: একটি চাহিদার ক্ষেত্রে এবং অন্যটি বিনিয়োগকারীদের আস্থায়।
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
তিনি বলেন, সরবরাহের দিক থেকে সমস্যা হলো ভালো কোম্পানি কম আছে। ফলে এটা কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতি।
সব মিলিয়ে শেয়ারবাজার বর্তমানে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এখান থেকে অবস্থা পরিবর্তন খুবই কঠিন বলে জানান তিনি।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের অবস্থা ভয়াবহ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
সরকারের কাছেও বাজার তার গুরুত্ব হারিয়েছে। যারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাদের জন্য শেয়ারবাজার বিরক্তির কারণ।
তাদের ভাবনাটা এরকম, শেয়ারবাজার না থাকলে দেশে কোনো সমস্যা থাকবে না। এসব কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বাজার ধরে রাখতে চায় সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের ভেতরের লোকজন জানিয়েছেন,এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করার একটি সুযোগ করে দেয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইউএনবিকে বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই। বিনিয়োগকারীদের গুজবের উপর নির্ভর করে যেকোনো কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক জ্ঞানের অভাবে মানুষ অনেক সময় বড় লাভের আশায় দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করছে, যা বিনিয়োগের সঠিক উপায় নয়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি খাতের উৎপাদকদের ক্রমবর্ধমান অর্থ বকেয়া বিদ্যুৎখাতের অন্যতম বাধা
বাগেরহাটে লোকালয়ে বাঘের পায়ের ছাপে আতঙ্ক
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় বাঘের উপস্থিতির ঘটনা বিরল হলেও মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে গ্রামে ঢুকে পড়ে।
তারা উপজেলার আধা কিলোমিটার এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমকে (ভিটিআরটি) খবর দেয়।
বন কর্মকর্তাদের অনুসারে, রবিবার সুন্দরবন থেকে ভোলা নদী পার হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সোমবার সকালে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: তিস্তায় ধরা পড়ল ৭২ কেজি ওজনের বাঘাইড়, ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি
ভিটিআরটি টিম, বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং কমিউনিটি টহল দল সোমবার সকাল থেকে স্থানীয়দের নিয়ে বাঘটিকে খুঁজছে, তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঘটিকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।
গত ১৬ বছরে প্রায় ৫০টি বাঘ খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
সম্প্রতি সোনাতলা গ্রামে গিয়ে ইউএনবির এই প্রতিবেদক দেখতে পান, ওই গ্রামে বাঘের বেশ কিছু পায়ের ছাপ দেখা গেছে।
শরণখোলা ওয়াইল্ড টিমের ফ্যাসিলিটেটর আলম হাওলাদার জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা- বাঘটি ওই এলাকায় প্রবেশ করে সুন্দরবনে ফিরে এসেছে।
এরই মধ্যে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা শুরু করেছেন বন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে গত ৫ নভেম্বর সুন্দরবন পূর্ব জোনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন অংশে বেশ কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
বাঘ গণনার প্রতিবেদন জানা যাবে আগামী বছরের ২৯ জুলাইয়ের পর।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৪।
শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মাহামুদ হাসান জানান, ভিটিআরটির একটি দল এবং বন বিভাগের কর্মীরা এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব জোনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, ভিটিআরটি টিম ও বন কর্মকর্তারা গ্রামে অবস্থান করবেন।
চোরাশিকার তৎপরতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার কারণে এখানে এখন বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে।
বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব জোনে বিভিন্নভাবে ২৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে ১৪টি, গণপিটুনিতে ৫টি, স্বাভাবিকভাবে ৮টি এবং সাইক্লোন সিডরে ১টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ধরা পড়েছে ৭৯ কেজির বাঘাইড়
নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
পঞ্জিকার পাতায় চলছে হেমন্তকাল। তবে প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। আর শীতকাল এলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মেলে অতিথি পাখির। দেশের যে কয়েকটি স্থানে বৃহৎ পরিসরে অতিথি পাখির উপস্থিতি দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে ৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই রিসোর্টটি যেন পাখিদের এক আপন রাজ্য। বছরের ১২ মাস এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির। আর ৯ মাস থাকে বিদেশি পাখিরা। শীতের হাওয়া বইতেই তাই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসছে অরুণিমায়।
দিন যত যাচ্ছে শীতের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করছেন অরুণিমায়।
বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে সরকার।
সর্বশেষ গত ৮ নভেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রিসিশন এনার্জি লিমিটেডের ৫৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হবে।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় বিপিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায় ৫ দশমিক ৭ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ টাকার সমতুল্য) হারে বিদ্যুত কিনবে এবং বেস লোড প্ল্যান্ট থেকে প্রায় অর্ধেক দামে বিদ্যুত কিনবে।
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
উদাহরণস্বরূপ, সরকার সামিট-জিই'র বিবিয়ানা ৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২২ বছরের জন্য প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টায় ৩ দশমিক ৩২ টাকায় বিদ্যুৎ কিনছে।
সরকার ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি পিপিএ অনুমোদন করে। এর অধীনে (১) এড্রা পাওয়ার হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া এবং (২) উইনিভিশন পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশ ৬৬০ মেগাওয়াট বেস-লোড কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করবে এবং বিপিডিবি ২২ বছরের চুক্তিকালীন সময়ে স্থানীয় গ্যাস চালিত প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায় ৩ দশমিক ৬৭৯ মার্কিন ডলার (২ দশমিক ৯৪ টাকা সমতুল্য) মূল্যে বিদ্যুৎ কিনবে।
ভাড়া এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপটির বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অবাক হয়েছেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং বিদ্যুৎ শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা মনে করেন ব্যয়বহুল রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো উপভোগ করা অব্যাহত রাখার এই পদক্ষেপটি সরকারের উপর আরও ভর্তুকি দেওয়ার বোঝা বাড়াবে। এটি এমন একটি সময়ে যখন এই খাতটি ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত ক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছানোর সঙ্গে বিশাল ক্ষমতা প্রদানের বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হয়েছে।
গত বছর সরকার 'নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট' -এর নতুন বিধান দিয়ে কমপক্ষে ১০টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও ভাড়া বিদ্যুতে কেন্দ্রের মালিকদের পরিশোধের জন্য ৬ হাজার ৫৬৪ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।
আরও পড়ুন: নতুন রেকর্ড গড়ে বিদ্যুত উৎপাদন ১৫,৩০৪ মেগাওয়াটে
আশুগঞ্জ গ্যাসভিত্তিক প্রিসিশন এনার্জির ৫৫ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সর্বশেষ সম্প্রসারণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময় এবারও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগামী ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও ক্যাপটিভ বিদ্যুত মিলিয়ে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট এবং একদিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশে ১৪ হাজার ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে এবং অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ১১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে এবং ৮ নভেম্বর দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ১০ হাজার ৯৫৪ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়েছিল এবং অন-গ্রিড ইনস্টলড ক্ষমতা ২৫ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট দেখানো হয়েছিল যার অর্থ উদ্বৃত্ত ক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি ছিল ১৪ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গত বছর ১০টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সময় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় 'জরুরি প্রয়োজনে' চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘গ্যাসের ঘাটতি থাকায় চাহিদা মেটাতে আমাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে তরল জ্বালানিভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাঁশখালী-মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন চালু
তিনি আরও বলেন, এই প্ল্যান্টগুলো সরকারকে 'ক্যাপাসিটি পেমেন্ট' করতে বাধ্য করে না - অর্থাৎ অব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য অর্থ প্রদান, এটি পূর্ববর্তী কিছু চুক্তির ক্ষেত্রে ছিল। নসরুল হামিদ বলেন, ‘ফলে এসব বর্ধিত রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম মূল খরচের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।’
সরকারি নথিতে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে অনুমোদিত ৫টি প্লান্টের মধ্যে তিনটি সামিট গ্রুপের, একটি ডাচ-বাংলা গ্রুপের এবং একটি ওরিয়ন গ্রুপের।
'প্রথমে ভুল স্বীকার করুন'
দেশের ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ এবং রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ক্যাপাসিটি পেমেন্টের চাপ বাড়তে থাকবে এবং প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি বাড়বে। পরিশেষে, এটি জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার দিকে পরিচালিত করবে।’
তিনি বলেন, এ অবস্থায় একমাত্র উপায় হচ্ছে, সরকারকে প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, চাহিদা বিবেচনা না করেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতকে অনুমতি দিয়ে তারা ভুল করেছে এবং তারপর বর্তমান নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
তা না হলে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আসায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। যদি তাই হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করেন আলম।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানির প্রস্তাব আদানি গ্রুপের: সূত্র
‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারের পরিকল্পনা বিএনপির’
২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা দৃশ্যত আত্মগোপনে চলে গেলেও, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান আন্দোলন জোরদার করতে ফের রাজপথে নামতে পারেন বিএনপি নেতারা।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে তারা ইতোমধ্যে হরতাল, অবরোধ ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বিভিন্ন সরকারি অফিস ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে বিরতিহীন আন্দোলন করার কৌশল তৈরি করেছেন।
তারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে তাদের দল সমমনা দলগুলোরও মতামত নিয়েছে এবং অধিকাংশ দল কোনো বিরতি ছাড়াই অবরোধ বা হরতাল কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছে।
তাদের কৌশল অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা এবং তফসিল বাতিল করার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
ইসি যদি তাদের আল্টিমেটামে কর্ণপাত করে, তাহলে তারা তাদের কর্মসূচি নিয়ে সারাদেশে রাজপথে তাদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে।
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসি কীভাবে সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।
বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রেপ্তার দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে ইসির ভূমিকাও তারা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন: তৈরি পোশাক শিল্পকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে চায় সরকার: রিজভী
বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১০ হাজার ৭৭০ বিরোধী নেতা ও অনুসারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান খোকন প্রমুখকে দলের মহাসমাবেশ ও সহিংসতার পর গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এখন রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা এখন গোপনে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য বিদেশে অবস্থান করছেন।
অন্য দলের নীতিনির্ধারকরা হয় মারা যান বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয় থেকে যান।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্যান্য সক্রিয় সদস্যরাও পলাতক রয়েছেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের গোপন আস্তানা থেকে পথ দেখান।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলন জোরদার করতে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই তারা তাদের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে মহাসড়ক ও সড়কে পিকেটিং বাড়ানোর মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে আমাদের দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই তফসিল ঘোষণার পর আমাদের নেতা-কর্মীরা রাজপথে নেমে আন্দোলনে নামবেন।’
আরও পড়ুন: একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যেই বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ: রিজভী
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্র কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকার মনে করতে পারে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটা হবে না। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন বাতিলের উদাহরণ আমরা দেখেছি। বিএনপি রাজপথে থেকে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। জনগণ এবার সরকারকে নির্বাচনের নামে নাটক করতে দেবে না।’
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির আন্দোলন এবার ব্যর্থ হবে না। ‘তফসিল ঘোষণা হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না। আমরা তুমুল গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে আমাদের দাবি পূরণে বাধ্য করব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, তাদের দল কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না।
তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হলে তা প্রমাণ করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই: বিএনপি
দীর্ঘ অবরোধে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা
দেশব্যাপী গত কয়েকদিনের টানা অবরোধে দেশের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাইকারি বাজারগুলো ক্রমে জনশূন্য হয়ে গেছে এবং সপ্তাহব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে ঢাকার নিউমার্কেট, চাঁদনী মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, গুলিস্তান মার্কেট, শান্তিনগর, কাকরাইল, মৌচাক মার্কেট, রামপুরা-বাড্ডা, মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান-বনানী ও উত্তরার মতো এলাকায়।
নবাবপুর, চকবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, শাঁখারিবাজার, মৌলভীবাজার ও বঙ্গবাজারেও বাণিজ্য কার্যক্রম কমেছে।
ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, অবরোধের সময় বেচাকেনা খুবই কম ছিল।
তিনি বলেন, ‘কোনো ক্রেতা নেই, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অবরোধ চলতে থাকলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
বায়তুল মোকাররম এলাকার অলিম্পিয়া বেকারিশপের কর্মচারীরাও একইভাবে বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ কারণে তারা পরিচিত নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে বিকল্প বিক্রয় কৌশল অবলম্বন করেছেন।
পল্টন মোড়ের চা বিক্রেতা সবুজ জানান, গত সপ্তাহে তার দোকানে বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকার কেনাবেচা করি। এখন এটা ২-৩ হাজার টাকায় নেমে গেছে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে আগে থেকেই ক্রেতা সংকটে ভুগছিল খাতটি। এখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর ফলে শুধু রপ্তানি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। এটি রিজার্ভের উপরও প্রভাব ফেলবে।’
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি: বিশ্লেষকরা
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান লোকসান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পণ্যের অভ্যন্তরীণ পরিবহন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। রপ্তানি খাত চলমান অবরোধের কারণে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ইউএনবিকে বলেন, অবরোধের কারণে পরিবহন সংকটে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বন্দরে আটকে থাকা কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
চলমান ধর্মঘট অবরোধ সম্মিলিতভাবে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, এই ধরনের কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যেতে পারে।
গত ২৯ অক্টোবর বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়।
৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধের পর ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধ চলে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ফের ৮ ও ৯ নভেম্বর অবরোধ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: চলমান রাজনৈতিক সংকটে উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের