বিশেষ-সংবাদ
তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু জানুয়ারিতে, ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা
উত্তরের দুই কোটি মানুষের দুঃখ তিস্তা। এই তিস্তাকে ঘিরেই এই অঞ্চলে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ হয়। কৃষি থেকে শুরু করে জেলে সবাই এই নদীর উপর নির্ভরশীল। বছরের পর বছর এই নদীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বাস্তুহারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উত্তরের অবহেলিত এসব মানুষের একটাই স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।
সব দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। ১০ বছর মেয়াদে ১২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। যেখানে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ইতোমধ্যে চীন দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল তিস্তার মাঠ পর্যায়ের জরিপ করছে।
ডিরেক্টর অব দ্য পলিটিক্যাল সেকশন জং জিং -এর নেতৃত্বে চীনা প্রতিনিধি দলটি মতবিনিময় করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনসহ নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে। মতবিনিময় শেষে তারা আশ্বস্ত করেছেন চীন সরকার দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে চায়। সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারিতেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চীনের এই কর্মকর্তা।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাফিয়ার রহমান বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তিস্তার সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আর বর্ষাকালে তিস্তায় প্রবাহিত হয় তিন থেকে চার লাখ ঘনফুট পানি। গজলডোবার সব কপাট খুলে দেয় ভারত। দ্রুত বেগে নেমে আসা তিস্তার পানিতে উত্তরের পাঁচ জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। ভাঙনের পাশাপাশি ব্যাপক ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তোলে তিস্তা অববাহিকার মানুষ।’
রিভারাইন পিপলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন উত্তরের ৫ জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও বাস্তুভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অববাহিকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। বিগত আওয়ামী সরকার তিস্তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছিল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে তিস্তা পাড়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে।’
আরও পড়ুন: তিস্তা নদী পরিদর্শনে চীনা প্রতিনিধিদল, দ্রুতই বাস্তবায়ন মহাপরিকল্পনা
চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছিল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে, তিস্তার দুই পারে পুনরুদ্ধারকৃত ১৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে ইকোপার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, আধুনিক কৃষি, মৎস্য খামার, কৃষিভিত্তিক কলকারখানা, জনবসতি ও স্যাটেলাইট টাউন।’
তিনি আরও বলেন, তিস্তা খননের ফলে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে যমুনা সঙ্গে সারা বছর একটি নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হবে। তিস্তার শাখা প্রশাখা ও উপনদী গুলো হবে এক একটি জলাধার। মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল হবে একটি স্বপ্নের ঠিকানা। হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঘটবে এক নীরব বিপ্লব। অবহেলিত এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আশা করছি আমাদের আন্দোলন সফল হবে।
নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এই অঞ্চলের মানুষের একটি ন্যায্য দাবি। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার চীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করবে। এই কাজটি হলে উত্তরাঞ্চল বদলে যাবে।
১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎ দিবস ও জুলাই শহীদ দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ। যেখানে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ১০ বছর মেয়াদে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ৫ বছরে সেচ, ভাঙন রোধ, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ গুরুত্ব পাবে।’
তিনি বলেন, ইআরডি থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার খসরা এখন চীন সরকারের কাছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।
১৩৮ দিন আগে
চালের মূল্যবৃদ্ধি: ধানের স্বল্পতা নাকি মিল মালিকদের কারসাজি?
সর্বোচ্চ ধান উৎপাদনের সময় বোরো মৌসুম শেষ হতে চললেও চালের দাম কমেনি আশানুরূপভাবে। চালের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকে দুষছেন ধানের ফলন ব্যয়কে অনেকে আবার বলছেন মিলারদের কারসাজিতেই বাজারেই এই দশা।
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, আগের তুলনায় চালের দাম কমলেও তা একেবারেই নগণ্য। বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। আটাশের দাম কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা।
মধ্যম মানের নাজিরশাইল-মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে। ভালো মানের কাটারি নাজিরশাইল এবং মিনিকেটের কেজি ক্ষেত্র বিশেষে ৮৫-৯০ টাকা। বেশিরভাগ ৫০ কেজির চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৩৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।
উত্তর বাড্ডার চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, উচ্চ দরে বিক্রি হচ্ছে ডায়মন্ড, মোজাম্মেল, পালকি, রয়েল এবং রসিদ কোম্পানির চাল। বিক্রেতারা বলছেন মিলারদের থেকে চাহিদা অনুযায়ী চাল পাচ্ছেন না তারা, কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে।
একই দৃশ্য কাওরানবাজারে। চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিযোগিতা করে চাল কিনেছে রাইস মিল এজেন্সি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান। ফলশ্রুতিতে দাম বেড়েছে বাজারে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) জুলাই মাসের ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অন্যান্য পণ্যের দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমে আসলেও চালের দাম কমেনি, বাড়তি চাপ যোগ করছে মূল্যস্ফীতিতে।
আরও পড়ুন: দুই সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কমবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
এপ্রিলের শেষদিক থেকে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হলেও এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। জুন মাসে চালের দামে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। আগস্ট পর্যন্ত লাগাতার বোরো ধান সংগ্রহ চলবে, ইতোমধ্যে অনেক জেলার বোরো ধান সংগ্রহ শেষ। কিন্তু চালের বাজারের দৃশ্য আশাব্যঞ্জক না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৬ লাখ টন বেশি। সে হিসাবে প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.৪৬ টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি।
তবে জেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর সার, সেচ এবং ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় বেড়েছে ধানের উৎপাদন খরচ। গত বছর যেখানে কেজিপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ পড়তো ২৫ টাকা সেখানে এবার এ খরচ ২৮-৩০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুর জেলার কৃষকরা বলছেন, এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান উৎপাদনে যতটা না প্রভাব পড়েছে তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সার ও সেচের খরচ বাড়ায়।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি গ্রামের কৃষক খোকন হাওলাদার বলেন, "লিটারে ডিজেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিলাররা সার বিক্রি করছেন না। বাড়তি দামে রসিদ ছাড়া বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার কিনতে হয়েছে। তবে বাড়তি দামে সার কিনলেও মিলারদের কাছে ন্যায্য দাম মিলছে না।"
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জের বাদলপাড়া এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, "মিলাররা নিজেদের মতো দর বেধে দিয়েছেন আর সেই দরেই ধান বিক্রি করতে হয়েছে। কোরবানির আগ পর্যন্ত কৃষকদের গোলায় ধান ছিল। তখন ধানের দাম স্বাভাবিক ছিল। কোরবানির পরে মিলারদের হাতে যখন ধান যাওয়া শুরু হলো তখনই দাম চড়া।"
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেগুনে রঙের ধান চাষে সাড়া ফেলেন কৃষক রবিউল
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার গৌরিপুরের কৃষক নেয়ামত আলি বলেন, "অনেকেই ভাবেন চালের দাম বাড়লে কৃষক দাম ভালো পায়। কিন্তু এটা হয় না। আমরা কম দামে ধান বিক্রি করে বেশি দাম দিয়ে চাল কিনি। সারের ডিলার, সেচের খরচ, মিলারদের মজুতদারি- কোথাও কোনো নজরদারি নেই।"
২৪ এপ্রিল থেকে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ বছর সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে ৩ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান এবং ৪৯ টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমন ধানের ফলন খারাপ হতে পারে এমন শঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চার লাখ টন চাল কিনবে সরকার।
এর বাইরে বেসরকারিভাবে আরও পাঁচ লাখ টন চাল কেনার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কম হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল করতে চাল আমদানি করা হবে। সরকারি-বেসরকারি দুই উদ্যোগে চাল আমদানি করা হলে দাম এমনিতেই কমে আসবে।
তবে চালের দাম কমাতে আমদানি কোনো সমাধান হতে পারে না বলে মনে করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী চাল আমদানি করেন না। গত বছরেও দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাল আমদানির কোনো আগ্রহ নেই। এর প্রধান কারণ ব্যবসায়ীদের হাতে চাল আছে, সেটিই তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে চান। কেন ব্যবসায়ীরা অনুমতি পাওয়ার পরেও ঋণপত্র (এলসি) খুলে চাল আমদানি করছেন না সেটি কোনোবারেই নজরদারির আওতায় আসে না।
অনেক কৃষি গবেষকের মতে প্রতি বছর আবাদি জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। আদৌ পর্যাপ্ত ধান সংগ্রহ হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাজের বলেন, "চালের দাম বাড়লেই এ ধরনের আলাপ শুরু হয়। এটি মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে সর্ব সাধারণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা।"
ধান উৎপাদন থেকে শুরু করে চাল বিক্রির প্রতিটি পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে পারলে, মজুতদার অসাধু মিল মালিকদের সাজা নিশ্চিত হলে এবং নানা অপকর্মের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পাঁয়তারা নস্যাৎ করে দেয়া গেলে দেশে প্রতি মৌসুমে যে ধান উৎপাদন করা হয় তা দিয়েই চালের বাজার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সংগঠনটির এ সদস্য।
১৩৯ দিন আগে
আগামী হজ কার্যক্রম আগেভাগে শেষ করতে হবে: কোটাসহ সময়সীমা দিল সৌদি সরকার
আগামী ২০২৬ সালের হজ কার্যক্রম সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী অনেক আগেভাগেই সম্পন্ন করতে হবে। এ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য কঠোর সময়সূচি নির্ধারণ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন, অর্থ স্থানান্তর ও সেবা চুক্তি সম্পন্ন না হলে হজে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যদিও গত দুই বছর এই কোটা পূরণ হয়নি। হজ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। তবে এবার ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজ নিবন্ধন সম্পন্ন করে পূর্ণ অর্থ জমা দিতে হবে। এরপর ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সৌদি প্রান্তে সেবা প্যাকেজের অর্থ পাঠাতে হবে।
২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি ও ২০ জানুয়ারি হজযাত্রীদের আবাসন ও পরিবহনের অর্থ স্থানান্তর শুরু করতে হবে। বাংলাদেশ-সৌদি দ্বিপাক্ষিক হজচুক্তি সই হবে ৯ নভেম্বর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এত আগেভাগে জটিল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
চলতি বছরের হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন রোববার (২৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে। চলতি বছর হজ হয়েছিল ৫ জুন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার।
আগামী হজকে সামনে রেখে এখন প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে সরকারের বড় কাজ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখন সৌদি প্রান্তের খরচ ও দেশে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণের অপেক্ষা করছেন। আগস্টের মধ্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ মাধ্যমে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ-২ এ হজ পালনে খরচ হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এর ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিগুলো।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী হজেও দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা নিয়ে কাজ হচ্ছে। সাধারণ প্যাকেজ হিসেবে প্যাকেজ-১ এর খরচ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। চলতি বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। আগামী বছর তা দেড় লাখের নিচে নামিয়ে আনতে চায় মন্ত্রণালয়।
এ প্যাকেজের ভিত্তিতেই এজেন্সিগুলো তাদের প্যাকেজ নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে সরকারি প্যাকেজ-২ হবে বিশেষ প্যাকেজ। এ প্যাকেজে হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। খরচও হবে বেশি। এ প্যাকেজের খরচ হবে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এ প্যাকেজের বাড়ি বা হোটেল থাকবে হারাম শরীফের ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে।
চার লাখ টাকা দিয়ে রোববার থেকে প্রাথমিক নিবন্ধন করা যাচ্ছে। তবে হজ এজেন্সি মালিকরা এর বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, প্রাথমিক নিবন্ধনে ৪ লাখ টাকা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে সাড়া কম পাওয়া যাবে। কারণ, হজের এত আগে একসঙ্গে এত টাকা দেওয়ার অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। এ ছাড়া প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজে গমনেচ্ছুরা জানতে পারাছেন না যে এবার হজ পালন তার সাধ্যের মধ্যে থাকছে নাকি থাকছে না।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক ইউএনবিকে বলেন, ‘সৌদি সরকার হজ নিয়ে রোডম্যাপ দিয়েছে। কারণ হজ হচ্ছে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বিষয়। এবার হজ নিয়ে একটু আগেই কাজ শুরু করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা হাবের সঙ্গে বসেছি। হজ প্যাকেজ ঘোষণাসহ যে সব কাজ রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘সৌদি প্রান্তের খরচের হিসাব না পাওয়া ও বিমান ভাড়া নির্ধারিত না হওয়ায় আমরা প্যাকেজটা করতে পারছি না। সৌদি প্রান্তে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কাছে চুক্তি, মিনা-আরাফায় তাবু ভাড়া, বাড়ি ভাড়া আগে আগেই করতে হবে।’
হজ প্যাকেজ কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘হজ প্যাকেজ আগস্টের মধ্যেই করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তবে সৌদি প্রান্তের খরচের হিসাব পাওয়ার পর প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি প্রান্তের খরচের হিসাব পাওয়ার বিষয়ে সৌদি আরবে আমাদের হজ মিশন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমাদের এদিকেও কিছু কাজ রয়েছে। বিমান ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি রয়েছে। বিমান ভাড়া নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। খরচগুলো পেলে আমরা যত দ্রুত পারি নির্বাহী কমিটি সভায় বসে প্যাকেজ ঘোষণা করে দেব।’
আরেক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমরা চাই হজের খরচ কমুক। যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পায়। ওই প্রান্তের ও আমাদের প্রান্তের খরচ যদি কমাতে পারি, তাহলে খরচ কমবে।’
‘অনেকে একটা বিশেষ প্যাকেজ নেওয়ার কথা বলেছে। তারা বলেছেন, আরও কাছাকাছি থাকতে চান। ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে করা যায় কিনা, আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা এটা নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব। কিছু কিছু মানুষ আছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হারাম শরীফে পড়তে চান, এজন্য তারা বেশি খরচ করতেও রাজি।’
ইতোমধ্যে সৌদি সরকার আমাদের কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আগামী বছরের হজে বাংলাদেশের কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। নুসুক মাসার প্লাটফর্মে সৌদি সরকার কোটা জানিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের কোটা এটাই ছিল।’
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘আগামী হজ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে এবার সৌদি সরকারের যে টাইমলাইন, সেটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারন গত বছর থেকে এবার সময় এগিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হজযাত্রীদের তো মাথায় থাকে যে হজের দু-তিন মাস আগে সব করবেন। কিন্তু সৌদি সরকার এবার ছয় মাস আগেই সব কাজ শেষ করতে চাইছে। এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার হাজিরা বলছেন, আরও কাছে থাকতে চাইছেন। বেশি সুযোগ-সুবিধা চান তারা। তাই প্যাকেজ-২ বিশেষ প্যাকেজ হিসেবে রাখার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। প্যাকেজ-১ এ তিন কিলোমিটারের মধ্যে হোটেলের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা হাজিদের দেড় থেকে দুই মিলোমিটারের মধ্যে রাখতে পেরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য হাজিকে দূরে রাখা যাবে না। এবারও এটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে। আমরা হাজিদের সেবাটা নিশ্চিত করতে চাই।’
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (হাব) এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী এবার হজ প্যাকেজ আগে বাদে ঘোষণা করতে হবে। সৌদি রোডম্যাপের পরিপ্রেক্ষিতে এবার কিছুটা তো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের সময় যে চার লাখ টাকা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে, এটা একটু বেশি। মানুষের তো প্রাথমিকভাবে এত টাকার প্রস্তুতি থাকে না। আমাদের দাবি ছিল, এই টাকাটা দুইভাগে নেওয়ার জন্য। প্রাথমিক টাকা যাতে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে থাকে। এটা হজযাত্রীদের দাবি, আমাদেরও দাবি।’
মহাসচিব বলেন, এবার কোরবানি ও খাবার সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে নিচ্ছে। এটা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দেশের হাজিরা কেউ ৫০০ রিয়াল দিয়ে কোরবানি দেয়, কেউ পনের শ’ রিয়াল দিয়েও দেয়। কোরবানিটা তো যার যার সামর্থ্যের বিষয়। একই ফরমেটে রাখলে তো সমস্যা দেখা দেবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার খাবার দিলে হাজীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে, কারণ তাদের খাবারটা মানে ভালো নয়। তারা যদি এক মাস ধরে খাবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে হাজিদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি হজে মিনা ও আরাফায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ৩/৪ দিনের খাবার দিত, এটা নিয়েই হজযাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টা মন্ত্রণালয়ও জানে। আশা করি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকার এ বিষয়গুলো সুরাহা করবে।’
হজ ২০২৬: শুরু হয়েছে প্রাথমিক নিবন্ধন, জমা দিতে হবে ৪ লাখ টাকা
২০২৬ সালের হজে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়ায় চার লাখ টাকা জমা দিয়ে হজে যেতে ইচ্ছুকরা প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি সরকারের নির্ধারিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এ বছরের ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রাথমিক নিবন্ধনের পাশাপাশি হজ প্যাকেজের বাকি অর্থ জমা দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে চূড়ান্ত নিবন্ধন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে আগ্রহীরা ই-হজ সিস্টেমের ওয়েবসাইট (www.hajj.gov.bd), ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বায়তুল মোকাররম অফিস এবং আশকোনা হজ অফিস থেকে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে আগ্রহীদের জন্য অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমেই নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তাই সময়মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হজে আগ্রহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: আগামী হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেল ১৫৫ এজেন্সি
১৩৯ দিন আগে
পুঁজিবাজারে আগ্রহ বড় বিনিয়োগকারীদের, বেড়েছে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা
টানা উত্থান ও লেনদেনে চাঙ্গাভাবের কারণে পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ফিরে আসছে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের (বিও) সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিএসইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নানা মহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমছে বলা হলেও আসল তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। এক বছরে বাজারে কমেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা, বেড়েছে বৃহৎ বিনিয়োগ।
গত বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছর একই সময়ে বাজারে ৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকার পোর্টফোলিওর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার ওপরেও যেসব পোর্টফোলিও আছে তার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
বছর ব্যবধানে যাদের বিনিয়োগ ১ লাখ টাকার নিচে কেবল এমন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ টাকার নিচের পোর্টফোলিওর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭, যা এ বছর একই সময়ে কমে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮ তে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: লেনদেনের প্রথমার্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামে সূচকের উত্থান
কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাবৃদ্ধি
যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওর ভ্যালু ১ কোটি টাকার ওপরে গত বছর জুন মাসে তাদের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯৯৩, যা চলতি বছর বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৩১৬। ১০ কোটি টাকার ওপরে পোর্টফোলিওর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় তিনটি কমলেও বেড়েছে ৫০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা।
৫০ কোটি টাকার ওপরে গত বছর জুনে বিনিয়োগকারী ছিলেন ৬৯৬ জন, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ৭৩৩ জন। একইভাবে ১০০ কোটি টাকার ওপরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২২ জন এবং ৫০০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে দুজন।
সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জগুলো বলছে, বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে টাকা ধরে রাখছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
মতিঝিলের গ্লোবাল সিকিউরিটিজের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ মিয়া বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা টানা পতনের ধাক্কা সামলাতে না পারলেও বড় বিনিয়োগকারীরা টাকা ধরে রেখেছেন। কারণ দীর্ঘমেয়াদে বাজারে অর্থলগ্নি করলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বাজার এখন বড় বিনিয়োগকারী-বান্ধব উল্লেখ করে প্রায় এক দশক ধরে পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত এক বিনিয়োগকারী তারেক হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তারা ট্রেডিং করি, আর যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা ইনভেস্ট করেন। ট্রেডিংয়ে উদ্দেশ্য থাকে মাসের লাভ মাসে তুলে নেওয়া। অনেকে আবার প্রতি সপ্তাহেও লাভ তুলতে চান। কিন্তু বড় বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানির শেয়ারে বছরের পর বছর অর্থলগ্নি করে। এতে বাজারে সাময়িক পতন হলেও পরবর্তীতে আবার বাজার ঘুরে দাঁড়ালে তারা লাভবান হন।’
ভালো আইপিওর প্রত্যাশা
বছর পেরিয়ে গেলেও ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলমান রয়েছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বিএসইসির শক্তিমত্তা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী জানান, বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি ভালো সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিটি।
ভালো কোম্পানির আনার পাশাপাশি বাজারে নজরদারি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাজার নজরদারি বাড়াতে হবে। এতে বাজারে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। পাশাপাশি বাজার উন্নয়নে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুন: সূচকের উত্থানে লেনদেন চলছে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে
ভালো আইপিও আনার ওপর জোর দিয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, ‘একটি ভালো কোম্পানি পুরো বাজারের চিত্র বদলে দিতে পারে। দেশীয় সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিকেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে ভাবতে হবে।’
ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়নে কমিটির নির্দেশনা ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ মেনে টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।
১৩৯ দিন আগে
নগরজুড়ে অচল হয়ে ঝুলছে কুসিকের দুই কোটি টাকার ক্যামেরা
নগরবাসীর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয় ৯০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে স্থাপিত এসব ক্যামেরায় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নম্বর শনাক্তকরণ, মানুষের মুখাবয়ব চেনার সক্ষমতা, নাইট ভিশন এবং ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণন সুবিধাসহ ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মতো নানা আধুনিক প্রযুক্তি।
এই ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ভিডিওর মাধ্যমে অপরাধ দমন, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল নগর কর্তৃপক্ষ। নানা প্রত্যাশা ছিল নগরবাসীরও।
তবে বাস্তবে নগরীর বিভিন্ন মোড়, সড়ক ও জনবহুল স্থানে লাগানো অধিকাংশ ক্যামেরাই বছরখানেক ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও ক্যামেরার লেন্সে ধুলোবালি জমে রয়েছে, কোথাও তারের অবস্থা নাজুক, অনেক ক্যামেরার দিক পরিবর্তিত হয়েছে, ফলে নির্ধারিত এলাকায় সঠিক ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ফৌজদারি মোড়, ঈদগাহ চার রাস্তা, চকবাজার, মদিনা বাসস্ট্যান্ড, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ সড়ক, ইপিজেড ফটক, টমছম ব্রিজ, নবাববাড়ি চৌমুহনী, কান্দিরপাড়সহ অন্তত ৯০টি জায়গায় এসব ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এগুলোর মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন ও জরুরি পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব ক্যামেরা নিরাপত্তার কাজে দিকনির্দেশনা দেওয়ার বদলে নিজেই যেন বেকায়দায় পড়েছে।
আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি
সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছিল কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মালিকানাধীন নাইস পাওয়ার আইটি সলিউশন লিমিটেড।
২০১৮ সালে সরকারি ক্রয়নীতি অমান্য করে কোটেশন পদ্ধতিতে কাজ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে। কাজ শেষ হয় ২০২০ সালে। তবে শুরু থেকেই রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। সিটি করপোরেশন থেকে নিয়মিত মাসিক বিল তুললেও প্রকৃতপক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে ক্যামেরাগুলো অকেজো হতে থাকে। এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের ক্যামেরাও অচল হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্যামেরা লাগানো হলেও সেগুলো চালু নেই, কেউ দেখাশোনা করে না। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিল তুলছে। টাকা নিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করছে না।
১৪১ দিন আগে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলেও প্রশাসনে, মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনের বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুখলেস উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করে দেশ পুনর্গঠনে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিনা কারণে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন আর আন্দোলন বা অকারণ কর্মবিরতি সহ্য করা হবে না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এটি সরকারের সবচেয়ে কঠোরতম প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আন্দোলন, অনিয়মে প্রশাসনে অস্থিরতা
গত এক বছরে এনবিআর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মাঠ প্রশাসন ও সচিবালয়ের বেশ কিছু স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি-দাওয়ার নামে ধর্মঘট, সমাবেশ, মানববন্ধন, কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন সরাসরি দেশের অর্থনীতি, রাজস্ব আদায় ও আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহব্যবস্থা ও কাস্টমস প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সচিবালয়ে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ৭০ শিক্ষার্থী
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ দাবির মধ্যে জারি করা সবশেষ দুটি বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। তাদের মধ্যে প্রথমে আটজন, পরে আরও ছয়জনকে বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কতা জারি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, সতর্ক না হলে প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিঠিতে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের শামিল। অনেক ক্ষেত্রে তা জাতীয় নিরাপত্তা হানিকারক এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।
চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়ে এ ধরনের প্রতিটি ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন সংশোধনে নমনীয়তা: তদন্ত ছাড়া শাস্তি নয়
প্রশাসনিক অস্থিরতা ও সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ায় কিছু নমনীয় সংশোধনী এনেছে। আগের নোটিশভিত্তিক শাস্তির বিধান বাতিল করে এখন থেকে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। অভিযোগ গঠনের ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং জবাবের পর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন
আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশে যা আছে
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। গত ২৩ জুলাই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে গেলে, অর্থাৎ নিজে নিয়ম লঙ্ঘন করে একজন সরকারি কর্মচারী আরেকজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিলে বা তাকে তার কাজ থেকে বিরত রাখলে, তাকে বাধ্যতামূলক অবসরসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
শৃঙ্খলা ফেরাতে পদোন্নতি ও পুনর্বিন্যাস
প্রশাসনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের পদোন্নতি ও পদায়নের বৈষম্য দূর করতেও কাজ শুরু করেছে সরকার। গত ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আন্তঃবৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।
সচিবালয়ের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ক্যাডার-নন ক্যাডার মিলিয়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিধিমালা জারি করেছে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
তবে সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনে কখনোই নরম থাকা চলে না। যাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও জনগণের ভাগ্য, তাদের ওপর জবাবদিহিমূলক কঠোর নজরদারি ছাড়া দুর্নীতি ও গাফিলতি রোধ অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানটি অনেক কঠোর, কেউ কেউ কালো আইন বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালাতে গেলে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সরকার চাইলে চাকরিতে অনুপস্থিত কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এর জন্য পিএসসির মতামত বা তদন্তের প্রয়োজন হবে না।’
সাবেক এই সচিব বলেন, ‘সরকার যেসব কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তা প্রশংসনীয় হলেও তা যেন কাগুজে নির্দেশনা হয়েই না থাকে। আগেও এমন অনেক আইন, নির্দেশনা, কমিটি হয়েছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং চূড়ান্ত সফলতা নির্ভর করবে আইনের প্রকৃত অনুসরণ ও স্বচ্ছতামূলক প্রয়োগের ওপর।’
১৪২ দিন আগে
মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগ, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন এবং নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন পদ্ধতি— এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে একমত হতে পারছে না জাতীয় ঐক্য কমিশন।
এই তিনটি বিষয়ে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন।
৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৯টি মূল সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলে একটি জাতীয় সনদ (রিফর্ম চার্টার) চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংলাপ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। ওই তিনটি বিষয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যই এর বড় কারণ।
অচলাবস্থা কাটাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও সংসদের উচ্চকক্ষের কাঠামো নিয়ে একাধিক সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
এর আগে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠা এবং এর মেয়াদসহ অন্যান্য বিষয়ে একমত হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত দেখা দেয়।
বিএনপি প্রথমে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। জামায়াত দিয়েছিল তিনটি। তবে সম্প্রতি তারা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে যাতে মূল পার্থক্য খুব একটা নেই।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় ঐকমত্য কমিশনের শোক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে ৩০টি রাজনৈতিক দল
গত সোমবার কমিশনে জমা দেওয়া সংশোধিত প্রস্তাবে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলেছে, যার সদস্য হবেন— প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলীয়)। এই কমিটি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল থেকে পাঁচজন করে মোট ১০ জনের মধ্য থেকে আলোচনার মাধ্যমে একজনকে বাছাই করবে। মতৈক্য না হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার ধারাটি বাদ রাখা হবে।
অন্যদিকে, জামায়াত তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি চেয়েছে, যেখানে বিএনপি প্রস্তাবিত চারজনের সঙ্গে জাতীয় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
তাদের প্রস্তাব, ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল থেকে তিনজন করে, তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে দুইজন এবং অন্যান্য দল বা স্বতন্ত্ররা একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। মতৈক্য না হলে তারাও রাষ্ট্রপতি ব্যতীত ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব দিয়েছে।
উভয় দলই মনে করে, অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের সম্মতির ওপর ভিত্তি করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন করা উচিত।
জামায়াতের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাবের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি থাকলে সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় পঞ্চদশ দিনের আলোচনা শুরু
তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বিকল্প উপায় রাখার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগে র্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া যায়।
এনসিপির প্রস্তাব ছিল— তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন পদ্ধতিতে র্যাংকড চয়েস ভোটিং চালু করা হোক।
জামায়াতের নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের মঙ্গলবার বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন হবে সম্মতির ভিত্তিতে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন অবিশ্বাস তৈরি না হয়, সে জন্য আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব
জামায়াতের কাঠামোর অনুরূপ পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের একজন করে উপযুক্ত প্রার্থীর নাম দিতে বলা হবে। এরপর যদি সম্মতিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল তিনজন করে, আর তৃতীয় বৃহত্তম দল দুইজনকে মনোনয়ন দেবে।
এই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের তালিকা থেকে একজন এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের তালিকা থেকে একজনকে বেছে নেবে। বিরোধী দলও তাই করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ের তালিকা থেকে একজন করে বেছে নেবে। যদি এসব প্রার্থীর মধ্যে কারো ওপর ঐকমত্য হয়, তবে তাকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে; অন্যথায় র্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় দ্বাদশ দিনের আলোচনা শুরু
র্যাংকড চয়েস ভোটিং এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে ভোটাররা একাধিক প্রার্থীকে তাদের পছন্দের ক্রমানুসারে (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি) ভোট দেন।
গত মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এনসিসির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক দলই বিচার বিভাগের সদস্যদের (বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের) অন্তর্ভুক্তির বিপক্ষে। এর পরিবর্তে আবার অনেকে র্যাংকড চয়েস ভোটিংও চায়। সেই সঙ্গে ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার বিরোধিতাও আছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা কিছুটা অচলাবস্থায় আছি— অনুসন্ধান কমিটি সিদ্ধান্ত কীভাবে নেবে, অচলাবস্থা কীভাবে কাটাবে তা নিয়ে। আমরা দলগুলোকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি।’
উচ্চকক্ষ গঠন ও সংরক্ষিত নারী আসন
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে, যেখানে উচ্চকক্ষে ১০০টি এবং নিম্নকক্ষে ৪০০টি আসন থাকবে। পাশাপাশি, সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাবও প্রায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
জামায়াত প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষ এবং সংরক্ষিত নারী আসন উভয় ক্ষেত্রেই ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। অন্যদিকে বিএনপি চায়, এই নির্বাচন নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হোক।
১৪৩ দিন আগে
কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলতে হলো সেতু
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাজ না করায় পিরোজপুরের নেছারাবাদে একটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেটিকে ভেঙে ফেলতে হয়েছে।
নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে হঠাৎ করেই ধসে পড়ে। এরপর গতকাল (বুধবার) সেটিকে ভেঙে ফেলছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
জানা যায়, উপজেলার পূর্ব জলাবাড়ি খ্রিষ্টানপাড়া থেকে মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর একটি প্যাকেজে ২২ ও ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় পিরোজপুর এলজিইডি। এই কাজের চূক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজে কাজ না করে একজন সাব-কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিল। কাজের নিম্নমান এবং সময়সূচি না মেনে কাজ করার কারণে স্থানীয়রা কাজে বাধা দেন।
আরও পড়ুন: সিলেটের ওসমানীনগরে সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার উধাও
পরবর্তীতে আরেক সাব-কন্ট্রাক্টর গত বছরের শেষ দিকে গার্ডার ছাড়াই সেতুটির ছাদ ঢালাই দেয়। তবে এর কিছুদিন পরে ঢালাই দেওয়া অংশে ফাটল দেখা দেয়। তখন স্থানীয়দের আপত্তির মুখে এলজিইডি তদন্ত করে সেতুটির ঢালাই দেওয়া অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী গেল সোমবার সেতুটির ত্রুটিপূর্ণ অংশের অপসারণ শুরু করে।
ব্রিজে ফাটল ধরার বিষয় জানতে চাইলে সাব-কন্ট্রাক্টর পিরোজপুরের খোকন মিয়া জানান, ঢালাই দিয়ে তারা চলে যাওয়ার পরে কে বা কারা সেন্টারিং খুলে ফেলায় ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ বিষয় উপজেলা প্রকৌশলী মো. রায়সুল ইসলাম জানান, পুরো স্লাব (ছাদ) ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণ করতে হবে। তবে মূল ঠিকাদারকে পাওয়া না যাওয়ায় কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
১৪৪ দিন আগে
প্রভোস্টবিহীন জাবির কাজী নজরুল হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে প্রভোস্ট না থাকায় সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে বিলম্ব এবং অভ্যন্তরীণ নানা অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মামুন হোসেন কাজী নজরুল হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি হলে আসেন না বলে অভিযোগ করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রভোস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। নিয়মিত হলে থাকার শর্তে প্রভোস্ট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু অধ্যাপক মামুন নিয়মিত ঢাকা থেকে যাতায়াত করার পরেও তিনি প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পান।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলে প্রভোস্ট না থাকায় হলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোও প্রকট আকার ধারণ করছে। হলের লিফট মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকা, লোকবল সংকট, নিয়মিত বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করা, রিডিং রুমে অব্যবস্থাপনা, রিডিং রুম, গেস্টরুমের টেবিল চেয়ার শিক্ষার্থীদের রুমে নিয়ে যাওয়াসহ আরও নানান সমস্যার কথা জানান তারা।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হলে প্রভোস্ট স্যার নেই। সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ অন্যান্য যেকোনো কাজে স্যারকে পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। স্যার হলে আসেন না।’
আরও পড়ুন: বাসের ধাক্কায় জাবি শিক্ষার্থীর বাবা নিহত, ক্ষতিপূরণ দাবিতে ১০ বাস আটক
তিনি আরও বলেন, আমাদের হলে অনেক সমস্যা। মাঝে মধ্যেই লিফট বন্ধ হয়ে যায়, প্রয়োজনের সময়ে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি, খাবারের মানও অতোটা ভালো নয়। হলের ওয়াশরুমগুলো সময়মতো পরিচ্ছন্ন করা হয় না। টেবিল ল্যাম্প দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো পায়নি।’
আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী নীরব মিয়া বলেন, ‘আমাদের হলে গ্যাস সংযোগ না থাকায় এখানে ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি। খাবারের মানও তেমন ভালো নয়। তাই আমাদের খাওয়ার জন্য ভাসানী বা কামাল উদ্দিন হলে যেতে হয়, যা অনেকটাই কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনিটরিং না করায় অনেকেই লিফটে সিগারেট খায় এবং অবশিষ্টাংশ লিফটেই ফেলে রাখে, এটা আমাদের জন্য অনেক বিপদজনক। হলে প্রভোস্ট না থাকায় এই সমস্যাগুলো হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
হল কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা যায়, সম্প্রতি হলের একটি কক্ষে ছাত্রীর প্রবেশ এবং সেখানে কয়েকজন ছাত্রের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা থাকলেও প্রভোস্ট না থাকায় আজও সেই কমিটি গঠন হয়নি।
এছাড়াও কিছুদিন আগে হলে একজন ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করার ঘটনা ঘটেছে, যিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
এই ঘটনাগুলো থেকে কাজী নজরুল ইসলাম হলের অব্যবস্থাপনার চিত্র স্পষ্ট হয়। হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির সুযোগ তৈরি করে বলে আশঙ্কা করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: জাবিতে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক কার্ট, ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের
এ বিষয়ে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডেন সহযোগী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমাদের হলে প্রভোস্ট স্যার না থাকায় এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। আমরা কতৃপক্ষকে জানিয়েছি বিষয়টি। কিন্তু কতৃপক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হলের রুমগুলোতে টেবিল ল্যাম্প বসানোসহ আরও কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের। হলে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ হলে সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রভোস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা হয়, নিয়মিত হলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই নীতিটা অনুসরণ হচ্ছে না। কেউ যদি হলে অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে তার প্রভোস্ট হওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উপাচার্য স্যারকে সমন্বয় করতে হয়। সিন্ডিকেটে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নতুন করে প্রভোস্ট নিয়োগের বিষয়টি উপাচার্য স্যার ভালো বলতে পারবেন। প্রভোস্ট নিয়োগের বিষয়টি উপাচার্য দেখেন বলে জানান তিনি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান ইউএনবিকে জানান, ‘এই হলে সমস্যা চলতেছে বিষয়টি আমরা অবগত আছি। ভিসি স্যার যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় আমি রুটিন দায়িত্ব পালন করছি। আমার এখানে কিছু করার সুযোগ নেই। সামনে ফিস্টসহ আরও কিছু প্রোগ্রাম আছে সেজন্য হলে প্রভোস্ট থাকা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রভোস্ট নিয়োগের বিষয়ে কথা চলছে। উপাচার্য স্যার দেশে আসলে নিয়োগটা নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।’
১৪৪ দিন আগে
যেখানে নায়কেরা শুয়ে আছেন, সেই তিন নেতার মাজার মাদকসেবীদের দখলে
অবহেলায় জীর্ণ দশায় পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরসংলগ্ন ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার। মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের দখলে থাকা এই স্থাপনা এখন নিরাপত্তাহীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারাতে বসেছে ঐতিহাসিক মর্যাদা।
স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সাবেক তিন প্রধানমন্ত্রী—হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ.কে. ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দিনকে স্মরণে ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় তিন নেতার মাজার। এক সময় প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত থাকলেও বর্তমানে স্থাপনাটি খোলা ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
পূর্বে রক্ষিত থাকলেও বর্তমানে নাজেহাল অবস্থা
সংশ্লিষ্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, তিন নেতার মাজার আগে প্রাচীর দিয়ে রক্ষিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি, বিশেষ করে ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বন্ধ করে দেওয়ার পর এই স্থাপনার নিরাপত্তা নাজেহাল হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, নিরাপত্তা বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কেউকে পাওয়া যায়নি। মাজারের একেবারে সম্মুখ দিকে বড় একটি অংশের সীমানা প্রাচীর নেই। এ ছাড়াও, প্রাচীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় লোহার বেড়ি নেই। এসব জায়গা দিয়ে মানুষ অবাধে মাজারে প্রবেশ করছে। এদিকে, ঢাকা গেট সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর পুরোটাই উধাও হয়ে গেছে।
মাজারের সামনে ফুটপাতের একজন দোকানদার বলেন, ‘ভবঘুরে ও পথশিশুরা দেওয়ালের এমন অবস্থা করেছে। তারা অর্থের বিনিময়ে দেওয়ালের রড বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই, ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এই দেওয়াল।’ নিরাপত্তার স্বার্থে ওই দোকানি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা পোষণ করেছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে স্থানান্তরিত ভবঘুরেদের আবাসস্থল
গত ১৩ মে, দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য। এরপর থেকে, প্রশাসনের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ভবঘুরে ও মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়।
আরও পড়ুন: উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এইসব ছিন্নমূল মানুষ বর্তমানে তিন নেতার মাজারে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাজারের মূল বেদীতে বেশ কয়েকজন মানুষ শুয়ে অথবা বসে আছেন। এমনকি কবরের আশেপাশের জায়গায়, অসংখ্য ব্যক্তি বসে আছেন। কেউ কেউ ঘুমিয়েও আছেন। আবার অনেকে ঘুমিয়ে আছেন। এ সময়, অনেককে মাদক গ্রহণ করতেও দেখা যায়।
কবরের উপরে বসে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে একজন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি বলেন, ‘কই যাবো বলেন? আমাদের তো যায়গা নাই। আমরা এখন মাজারেই থাকি।’এসব ব্যক্তির বেশিরভাগই মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদক সংশ্লিষ্ট বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মাদক বিক্রি ও মাদকের আখড়া
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বন্ধ হওয়ার পর থেকে তিন নেতার মাজার মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ঢাকা গেট সংলগ্ন দুই পাশের সরু জায়গা, মেট্রোরেলের পিলারের নিচে এমনকি অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার ওপরেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মাদক ক্রয়ের পর ক্রেতারা মাজার প্রাঙ্গণেই সেবনে নিয়োজিত হচ্ছে।
নিয়মিত অভিযান চললেও থামছে না মাদক
তিন নেতার মাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন হলেও এলাকায় কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা প্রহরী নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহবাগ থানার একটি টহল দল এসে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক ও মাদকগ্রহিতাদের মাজার থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু অভিযানের মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই অবস্থা পুরোপুরি একই। আবারও পুরোদমে মাদক বিক্রি হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সেবনকারীরা মাদকের ভয়াল থাবায় ঢুকে পড়ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্য হত্যার পর থেকে নিয়মিতই এমন অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। কিন্তু মাদকের বেচাকেনা কমানো যাচ্ছে না। এ সময় ১৪-১৫ বছরের এক মাদক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘আগে উদ্যানে বেচতাম, উদ্যান থেকে বের করে দেওয়ার পর এইখানে গাঁজা বেচি।’
আরও পড়ুন: ‘অর্থাভাবে’ সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, দুর্ভোগে কাউনিয়ার পাঁচ গ্রামের মানুষ
কোথায় বসবাস জিজ্ঞেস করলে সে মাজারের মূল বেদী আঙুল দিয়ে লক্ষ্য করে দেখায়। মাদকগুলো কে দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে ওই শিশু ‘নবী’ নামের এক ব্যক্তির নাম বলেন।‘নবী’র বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ জুন বিকালে রাজধানীর শাহবাগে শিশুপার্কের সামনে ছুরিকাঘাতে মোবারক (১৮) নামে এক যুবক খুন হয়েছিল।
এ সময়, নিহতের চাচাতো ভাই রবিউল ইউএনবিকে জানিয়েছিলেন, নবী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মাদকের টাকা আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই খুন হয়।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ‘প্রতিদিনই আমাদের অভিযান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতেও আমরা তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক ও ১ কেজির বেশি গাঁজা জব্দ করেছি। এর মধ্যে একজনকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই মাদকের কারবার থামানো সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই আমরা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাবের সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনার কথা ভাবছি।’ওসি বলেন, ‘আমরা উদ্যানের সীমানা প্রাচীর ঠিক করার ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। আমরা আমাদের মতন কাজ করে যাচ্ছি। তারাও যেন এগিয়ে আসে— সে ব্যাপারে আমরা বারবার বলছি।’
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার কেবল একটি কবরস্থান নয়, এটি ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়ের স্মারক। তবে, বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, ভবঘুরে ও মাদকসেবীদের দখল, এবং নিরাপত্তাহীনতা—সব মিলিয়ে স্থাপনাটির ভবিষ্যৎ এখন শঙ্কার মুখে পড়ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ও সচেতন নাগরিকেরা।
১৪৬ দিন আগে