বিশেষ-সংবাদ
উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারে এককালীন আর্থিক সহায়তা ও মাসিক ভাতা বিতরণে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। ফলে সহায়তা বিতরণ নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। একদিকে শহীদদের মা–বাবা, অন্যদিকে স্ত্রী—উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে। এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন সহায়তা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে, ভোগান্তিতে ফেলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদিকে শহীদের স্ত্রী, অন্যদিকে মা–বাবা, উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সরকারের কাছে দাবি তুলছেন। এতে করে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) ইউএনবিকে বলেন, ‘কে কত টাকা পাবে, তা নিয়ে এখন দ্বন্দ্বের শেষ নেই। কেউ বলছেন, বউ বেশি পাচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন, মা–বাবা বেশি পাচ্ছেন। শহীদের মা–বাবা বলছেন, বউ তো আবার বিয়ে করে চলে যাবে, কিন্তু আমরা সন্তান হারিয়েছি। অন্যদিকে স্ত্রীদের দাবি, তারাও স্বামী হারিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।’
জানা গেছে, সহায়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র যে, শহীদের মা–বাবা ও স্ত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ওই গ্রুপ থেকে সংগঠিত হয়ে তারা দল বেঁধে মন্ত্রণালয়ে আসছেন, একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুসলিম পরিবারগুলোতে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬’-এর ভিত্তিতে সহায়তা বণ্টন করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এই আইনি কাঠামো মানতে চাইছেন না। বিশেষ করে স্ত্রীদের পক্ষ থেকে বেশি আপত্তি আসছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ফারুক ই আজম বলেন, ধর্মীয় আইন মেনে হিসাব করে টাকা দিলেও তা নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট নন। ফলে আমাদের ওয়ান-টু-ওয়ান সমাধান করতে হচ্ছে। এতে সময় ও কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, টাকা–পয়সা আর স্বার্থ যখন সামনে আসে, তখন কেউ শহীদের মহিমা বা আত্মত্যাগের গৌরব নিয়ে ভাবেন না। অথচ সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে—এই আত্মত্যাগের মহিমা ও চেতনা ধরে রাখা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার জুলাই শহীদদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে মোট ৩০ লাখ টাকা এককালীন সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ও চলতি (২০২৫–২৬) অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারগুলো মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবে।
এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ৭৭৪ পরিবারকে। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাকি ৭০টি পরিবার এখনো প্রথম কিস্তির অর্থ পায়নি। এ কারণে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বিতরণও শুরু করা যাচ্ছে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী অর্থ বণ্টন করছি। কিন্তু পরিবারগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় আমাদের প্রতিদিন দেন–দরবার করতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ৫৯ জন স্ত্রী মন্ত্রণালয়ে এসে সমবেতভাবে দাবি জানিয়েছেন। এর আগেও মা–বাবাদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছেন।
তিনি জানান, একজন শহীদের একাধিক উত্তরাধিকার থাকায় কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা যাবে, তা নির্ধারণ করতে সময় লাগছে। এ জন্য সহায়তা কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে আহতদের ক্ষেত্রেও সহায়তা কার্যক্রম চলছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—ক-শ্রেণির (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে, বাকি ৩ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে।
খ-শ্রেণির (গুরুতর আহত) ৯০৮ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এদের মধ্যে ১ লাখ টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে। গ-শ্রেণির (সাধারণ আহত) ১০ হাজার ৬৪২ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ১ লাখ টাকা এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
তিন শ্রেণির আহতরা আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকবে এবং পুনর্বাসন সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সরকারি/আধা-সরকারি চাকরিতে শহীদ পরিবারের উপযুক্ত সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘সহায়তার কাজ শেষ হলেই আমরা পুনর্বাসন কার্যক্রমে যাব। আমরা চাই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি টাকা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অন্তত একটি বিভাগে আগামী সপ্তাহে ভাতার অর্থ বিতরণ শুরু করতে। পরিবারগুলো যত দ্রুত তথ্য পাঠাবে, আমরা তত দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।
সচিব বলেন, কেউ যদি গ-শ্রেণি থেকে ক-শ্রেণিতে যেতে চান, তবে তা নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৪৭ দিন আগে
উজানের ঢল নামছে, চোখ রাঙাচ্ছে তিস্তা
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে তিস্তা অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার মাত্র ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি যে গতিতে বেড়ে চলেছে, তাতে যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় তিস্তা অববাহিকায় দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা, আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী শতাধিক চরের মানুষের মধ্যে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা: সব হারিয়ে নিঃস্ব ৪৯ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ৯১৫ ঘরবাড়ি
তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রবিবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।’
তিনি জানান, সোমবার সকালে পানি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটারে। যা বিপদসীমার মাত্র ৭ সেন্টিমিটার নিচে। বিপদসীমা অতিক্রম করলে নীলফামারীসহ ভাটির অঞ্চল—রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া, উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পানি যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি অনেক বেড়েছে। অনেক চরের ফসল ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে।’
তিস্তা অববাহিকার বাসিন্দা কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘আমরা নদী পাড়ের মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকি। বন্যা, খরা, নদীভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের জীবন চলে। ভারতের উজানে যে গেটটা আছে, তার নাম গজলডোবা। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। খরার সময় গেট বন্ধ রাখে, আর বর্ষায় থেমে থেমে পানি ছেড়ে আমাদের ভাসিয়ে দেয়।’
তিনি জানান, বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয় না, বন্যা হয় ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বাড়ছে, দেখা দিতে পারে বন্যার আশঙ্কা
তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘পানি বাড়ছে ঠিকই, তবে এখনও বিপদসীমার নিচে আছে। আমরা সতর্ক রয়েছি এবং চরের মানুষকেও সতর্ক থাকতে বলেছি।’
১৪৭ দিন আগে
ফেনীতে বন্যা: সব হারিয়ে নিঃস্ব ৪৯ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ৯১৫ ঘরবাড়ি
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর তিন উপজেলা—ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩২টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি। এখনও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন বন্যাদুর্গতরা। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯টি পরিবার এখন অন্যের ঘরে (আত্মীয় বা পাশের প্রতিবেশীর বাড়িতে) আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে বাঁশের খুঁটির ওপর পলিথিন বা প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে মাথার ওপরে ছাউনি করে অবস্থান করছেন। গত শনিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বন্যার আবাসন খাতের ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ফুলগাজীতে ২০টি এবং পরশুরামে ২৮টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি ঘর দুই লাখ টাকা ধরে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—ফুলগাজীতে ৪৯৫টি, ছাগলনাইয়ায় ৩০৪টি এবং পরশুরামে ৬৯টি ঘরবাড়ি। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকা।
গত রবিবার সরেজমিনে ফুলগাজীতে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় বিধ্বস্ত বসতভিটায় বসে আছেন উত্তর দৌলতপুর গ্রামের হোসনে আরা বেগম। পাশের একটি ছোট্ট স্কিম ঘরে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এক বন্যা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়েছে। কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর ফিরে এসেছি। কী করে ঘর তুলব—মাথায় আসছে না। এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।’
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে বইছে। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৬৭টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর পশ্চিমমাথা এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মো. রাজুসহ চার বন্ধু বেড়িবাঁধের ভাঙনকবলিত স্থানে জাল দিয়ে মাছ ধরতে যান। একপর্যায়ে রাজু প্রবল স্রোতে ভেসে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৪টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়নেরও ১৫টির বেশি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় বারবার ভেসে যায় স্বপ্ন, টেকসই বাঁধ চায় ফেনীবাসী
ফেনী সদরে ৯টি এবং দাগনভূঞা উপজেলার ২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু জায়গায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালে পর্যন্ত উঠেছে বন্যার পানি।
পানি নামার পর এসব এলাকার মানুষ আশ্রয় খুঁজছেন। দুর্গতদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে কাজ করছে। চলতি মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পরশুরাম অংশে ২২টি ও ফুলগাজী অংশে ১৯টি—মোট ৪১টি স্থানে নদীভাঙন দেখা দেয়।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় আবাসনসহ আরও কয়েকটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এনজিও ও সংগঠন আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। তবে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।’
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এবারের বন্যায় ফেনীতে প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারের নির্দেশনা পেলে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
আবাসন খাত ছাড়াও এবারের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৩৮ কোটি ৭ লাখ, মৎস্য খাতে ৮ কোটি ৭১ লাখ, প্রাণিসম্পদ খাতে ৬৫ লাখ, সড়ক খাতে ৯০ কোটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি ৯ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ স্থানে ভাঙন, ৩৫ গ্রাম প্লাবিত
গত বছরের (২০২৪) ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ৭০ হাজার ৪১৫টি আধাপাকা ও কাঁচা ঘর, আসবাবপত্র এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পানিতে তলিয়ে যায়। এতে আনুমানিক ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ওই বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫৬ হাজার ৬৫টি ঘর।
১৪৭ দিন আগে
বৃষ্টিপাতে সেচ খরচে সাশ্রয়, আমন আবাদে ব্যস্ত চাঁপাইয়ের চাষিরা
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে আবাদ করা হয় আমন ধান। এবার কিছুটা আগামই দেশে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা শুরু করেছেন আমন ধানের আবাদ। পরিমাণমতো বৃষ্টিপাত হলে এবার সেচ খরচ সাশ্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবাদি জমিগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, আমন চাষে এখন মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ জমিতে আমনের চারা রোপণ করছেন, কেউ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন তো কেউ জমির আইল ঠিক করতে ব্যস্ত।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাঠ এলাকায় ইউএনবির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন কৃষক শাহলাল আলী। তিনি ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করছেন। আরও ৬ বিঘা জমিতে আবাদ করবেন বলে জানান।
শাহলাল আলী বলেন, ‘এবার কিছুটা আগাম বর্ষা শুরু হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এটা আবাদের জন্য ভালো হয়েছে। জমি প্রস্তুতে যে সেচ খরচ হয় সেটা লাগেনি চাষিদের। এভাবে যদি থেমে থেমে বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে সেচ খরচটা কমে যাবে।’
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেগুনে রঙের ধান চাষে সাড়া ফেলেন কৃষক রবিউল
এলাকার চাষি আকবর আলী বলেন, ‘আমন ধান বর্ষাকালেই লাগাতে হয়। সে কারণে বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি আকাশের পানির উপর নির্ভর করেই এ ধান লাগিয়েছেন তারা।’
তিনি জানান, বৃষ্টি না হলে গভীর নলকূপের পানি সেচ দিতে হয়। তবে এবার সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা সবাই আবাদ শুরু করেছেন। তিনিও ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। আরও ২ বিঘা জমি আবাদ করবেন তিনি।
১৪৭ দিন আগে
দেশে বেড়েই চলেছে নারীর প্রতি সহিংসতা
সামাজিক প্রেক্ষাপট, বিচারহীনতাসহ নানা কারণে নারীরা নিপীড়িত বহুকাল ধরেই। তবে ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৫ এর মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা বিশ্লেষণ করে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার নতুন পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। সেইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
সায়মা ছদ্মনাম (৩৬) নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছেন স্বামীর হাতে। তিনি বলেন, আমার স্বামী প্রতিদিন বাসায় এসে কারণে-অকারণে আমার গায়ে হাত তোলেন। আমি জানি, তার বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে। তিনি মাসে দু-তিনবার বাসায় আসেন। কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। আমার একটি ছোট চার বছরের মেয়ে আছে, তার দায়িত্বও পালন করেন না। সেগুলো নিয়ে কথা বললেই আমাকে অমানুষিকভাবে মারে।
পুলিশে অভিযোগ দেননি কেন—প্রশ্নে তিনি বলেন, এসবে মান-সম্মান থাকবে না। আমার পরিবারের কেউ জানে না; জানলে তারাও কষ্ট পাবে। তাছাড়া আমি চাকরি করি না। তাকে ছেড়ে কোথায় যাব, কী করব? এ সময় নিজের শরীরের ক্ষতগুলো দেখান এই নারী।
ডালিয়া (ছদ্মনাম) নামের ৩৮ বছর বয়সী আরেক নারী জানান, তিনি তার স্বামীর কাছে নিয়মিত নির্যাতিত হতেন। নির্যাতন মানে তো শুধু গায়ে হাত তোলা নয়, তিনি তাকে অকথ্য ভাষায় প্রয়োগও করতেন।
এই নারী বলেন, ‘আমি চাকরি করতাম না তবুও এসব অসম্মান সহ্য করতে না পেরে ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে আসি। পরে অবশ্যই একটি চাকরি পাই। এখন একা থাকা ছাড়া তেমন কোনো কষ্ট নেই। সঙ্গে ছেলে আছে, তাকে নিয়ে ভালো আছি।’
বিগত কয়েক মাসে নারীর প্রতি এমন একাধিক সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এ সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্য ঘটনাও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় বিআরডিবি অফিসে তালাবদ্ধ নারী
পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ৫ হাজার ৭৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। সেখানে ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৩টিতে।
২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ২৬৫টি, ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ১ হাজার ২৯৫, মার্চে ১ হাজার ৬৫২টি, এপ্রিলে ১ হাজার ৪৪৮টি, মে মাসে ১ হাজার ৮৬৭টি, জুন মাসে ১ হাজার ৮৩৩টি, জুলাই মাসে ১ হাজার ৭৯৪টি, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৮৫১টি, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৬৯৯টি, অক্টোবরে ১ হাজার ৬২১টি, নভেম্বরে ১ হাজার ৪২৬টি এবং ডিসেম্বরে ১ হাজার ১৯৩টি।
২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৩৭১, মার্চ মাসে ১ হাজার ৫০৯, এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৬২৩, জুন মাসে ১ হাজার ৬৮৯টি, জুলাই মাসে ১ হাজার ৭০২ আগস্ট মাসে ১ হাজার ৭২, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫৭৮, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ৫৬০, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ৪৫২ এবং ডিসেম্বর মাসে ১ হাজার ২০৫টি।
২০২৫ সালের, অর্থাৎ চলতি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৩০টি এবং মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৪টি। অর্থাৎ, মার্চ মাসে উল্লিখিত যেকোনো মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৫৮ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৩০৫ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অ্যাসিড নিক্ষেপ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৩
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা মোট ঘটনার ৫৫ শতাংশেরও বেশি।
এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯ জন নারী ও কন্যাশিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০৭ জনকে যৌন সহিংসতার পর হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘হ্যারাসমেন্টের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা মিডিয়াতে আসে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে সাজা পাচ্ছেন কয়জন? আবার ভুক্তভোগীও যে সুরক্ষা পাচ্ছেন, সেই তথ্যও নেই।’
তিনি বলেন, নারী নির্যাতনকে রোধ করতে হলে আমাদের নারীর অধিকার সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া নারী নির্যাতনকারী, বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডকে সামাজিকভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নানা ধরনে, নানা আকারে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এগুলো যে আগেও ছিল না তা নয়। বছরের প্রথম তিন মাসে একরকম হলে শেষের তিন মাসে হয়তো কমত। তবে এখন সেটি বেড়েই চলেছে। এটি আতঙ্কিত হওয়ার মত বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘যে উপায়ে সহিংসতাগুলো হচ্ছে, তাতে নারী ও শিশুর সুরক্ষার প্রশ্নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার না হওয়ার একটা সংস্কৃতি, নারী ও শিশুর প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে পুরুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে নারীর প্রতি একটা বিরুদ্ধ মনোভাব আছে যে নারীকে দমিয়ে রাখতে হবে।’
‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের নারী ও শিশুর প্রতি যে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। আবার আইনে যে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও তো আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতা-পরবর্তী যে ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন একজন নারীকে সেই সুরক্ষা দেওয়া, সামাজিকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং ভুক্তভোগীর ক্ষমতায়ন—এগুলো থাকা দরকার। সেগুলো আমাদের দেশে নেই। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।’
এই অধ্যাপকের মতে, যে নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তিনি যদি প্রান্তিক পর্যয়ের হন, তাহলে তাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু সমাজে প্রতিষ্ঠিত কেউ সহিংসতার শিকার হলে তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এসব বিষয়ে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, সমাজকে বদলাতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
১৪৮ দিন আগে
তথ্য গোপন করলে পাঁচগুণ জরিমানা: সংশোধন হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন
‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি তথ্য গোপন (withhold) করলে বা তথ্যপ্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করলে আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি জরিমানার বিধান থাকছে। পাশাপাশি, আইনটির চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত আইনে কেউ সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ২৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, যেখানে আগে এটি ছিল প্রতিদিন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে পাঁচ গুণ।
প্রস্তাবিত খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করে, তাহলে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক হবে।
চারটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আইনটির ৫, ৬, ৭ ও ২৭ ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এতে বলা হয়, নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামতো সরকারি সেবা-সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে, সে লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে।
ধারা ৫: তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক ও ডিজিটাল রূপান্তর
সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে তাদের সব তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস ও সূচি প্রস্তুত করতে হবে এবং তা কম্পিউটার বা অন্যান্য উপযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব তথ্য একটি জাতীয় ই-নেটওয়ার্কের (e-network) মাধ্যমে যুক্ত করে নাগরিকদের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য করে তুলতে হবে।
‘রেকর্ড’ বলতে বোঝাবে ফাইল, পাণ্ডুলিপি, মাইক্রো ফিল্ম, চিত্র, অডিও বা ডিজিটাল তথ্যের যেকোনো রূপ।
ধারা ৬: তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বাধ্যতামূলক
প্রত্যেক সরকারি কর্তৃপক্ষকে গৃহীত, চলমান ও প্রস্তাবিত কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে—প্রস্তাবিত বাজেট, প্রকৃত আয় ও ব্যয়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, দরপত্রের ফলাফল, চুক্তি, নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদন, প্রকল্প ব্যয় এবং সরকারি অর্থ ব্যবহারের বিবরণ।
এসব তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যাতে নাগরিকরা সহজেই তা জানতে পারেন।
ধারা ৭: জনস্বার্থে তথ্য গোপনের ব্যতিক্রম
বর্তমানে এই ধারায় কিছু তথ্য গোপনের সুযোগ থাকলেও, সংশোধনীতে জনস্বার্থ বিবেচনায় এই সীমা আরও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুটি উপধারা যোগ করে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে এবং কীভাবে তথ্য গোপন করা যাবে, তা স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
ধারা ২৭: জরিমানা বাড়ছে পাঁচগুণ
বর্তমানে কেউ সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশোধিত আইনে তা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
তাছাড়া, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে তথ্য গোপনের মাধ্যমে দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাহলে জরিমানা বাধ্যতামূলক হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহেরা ববি ইউএনবিকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এখন সংশোধিত খসড়া নিয়ে মতামত গ্রহণ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত জনমত গ্রহণ চলবে। এরপর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশোধিত আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
১৪৯ দিন আগে
‘অর্থাভাবে’ সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, দুর্ভোগে কাউনিয়ার পাঁচ গ্রামের মানুষ
রংপুরের কাউনিয়ায় মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পাঁচ গ্রামের মানুষের। সেতুর খুঁটি নির্মাণের চার বছর পার হয়ে গেলেও অর্থাভাবে বাকি কাজ শুরু করা যায়নি বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এতে উপজেলা সদর ও হারাগাছ পৌর এলাকায় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।
যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন জনপদ চর চতুরা, মায়ার চর, চর উত্তর ঠাকুরদাস, চর পল্লীমারী ও চর নাজিরদহের বাসিন্দারা এই রাস্তা দিয়ে বাংলাবাজার হয়ে পৌরসভাসহ উপজেলা সদরে চলাচল করে থাকেন।
হারাগাছ পৌরসভা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার দক্ষিণ ঠাকুরদাস গ্রামের মস্তেরপাড় নামক স্থানে মরা তিস্তায় ৭৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে পৌর কর্তৃপক্ষ। উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে কয়েক ধাপে সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে প্রথম দরপত্রে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির একাংশ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পায় মেসার্স মামুন কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৮০ ভাগ কাজ করে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে।
এরপর ওই বছরের নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় দরপত্রে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর স্ল্যাব, বিম ও রেলিং নির্মাণের কাজ পায় নুর ইসলাম এন্টারপ্রাইজ। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিও ২০২১ সালে ৫০ ভাগ নির্মাণকাজ শেষ করে, কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ দিতে না পারায় চার বছরেও দরপত্রের বাকি নির্মাণকাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
নুর ইসলাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুর আলম লাভলু বলেন, নির্মাণাধীন সেতুটির নির্মাণকাজের কোনো নকশা নেই এবং কাজের প্রাক্কলন (এস্টিমেট) অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অর্থের মিলও ছিল না। এ ছাড়া ওই সময় পৌর কর্তৃপক্ষ অর্থ পরিশোধে খুবই ঝামেলা করত। এ কারণে আমরা দরপত্রের অর্ধেক কাজ করে বাকি কাজ বন্ধ রেখেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মরা তিস্তা নদীতে সেতুর খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, গত চার বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ওপারের লোকজন বর্ষা মৌসুমে কলার ভেলা ও নৌকায় করে নদী পারাপার হয় এবং শুকনো মৌসুমে নদীতে হাঁটুপানি ও কাঁদা মাড়িয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে।
ঠাকুরদাস এলাকার বাসিন্দা কাজল আহমেদ বলেন, মরা তিস্তার ওপর সেতু নির্মাণ ছিল চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরুর পর কিছু কাজ করে দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা বর্ষাকালে কলার ভেলা ও ডিঙি নৌকায় করে পারাপার হয়। তখন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়।
এ ছাড়া কৃষিপণ্য পরিবহনেও এ সময় কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পোহাতে হয় বলে জানান তিনি।
নদীর অপর প্রান্তের শাঁখারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। কেউ অসুস্থ হলে সেই রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
শাঁখারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার জানায়, ডিঙি নৌকায় বা কখনো কখনো কলার ভেলায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে স্কুলে যেতে হয়। কখনো কখনো কলার ভেলা থেকে পড়ে বই-খাতা, পোশাক ভিজে যায়, সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না।
হারাগাছ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. হামিদুর রহমান বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদকে সম্পৃক্ত করতে জনস্বার্থে ঠাকুরদাস মস্তেরপাড় এলাকায় সরকারি উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে কয়েকটি ধাপে মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণকাজ হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে দরপত্র অনুযায়ী সেতুর পিলার, পায়ারক্যাপ ও অ্যাবাটমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে পৌর অর্থায়নে সেতুটির বাকি নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব নয়। সেতুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে ১০টি স্ল্যাব, রেলিং ও দুই পাড়ে প্রায় ১২০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় যোগাযোগ চলছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দরপত্রের মাধ্যমে বাকি কাজ শেষ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হারাগাছ পৌর প্রশাসক মো. মহিদুল হক বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে সেতু নির্মাণ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।
১৪৯ দিন আগে
আমলাতন্ত্র চাঙ্গা করতে বড় ধরনের পদোন্নতির পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকার
উপসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মকর্তাদের বহুল প্রতীক্ষিত পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার, যা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে এবং এরপর যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার এই পদোন্নতিগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সার্বিক নথিপত্র, শৃঙ্খলা, দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতা, নৈতিকতা ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসএসবি ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে এবং আরও দু-একটি বৈঠকের পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
সুত্র জানায়, পদোন্নতিযোগ্য প্রায় ৭ শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শুরু করেছে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ এসএসবি। কয়েকটি বৈঠকের পর এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে পদোন্নতির ঘোষণা আসতে পারে। পরের মাসে আসতে পারে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ঘোষণা।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি: বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়
এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় নতুন গতি এসেছে। জনপ্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, এরই মধ্যে এসএসবির কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই বসেছিল বৈঠক। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে এবং পরবর্তী মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এসএসবির বৈঠক প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।
৩০তম বিসিএস
২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগদানকারী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৩ জুন থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু নানা কারণে পদোন্নতি দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল।
২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদোন্নতির তথ্য আহ্বান করে। তবে এরপর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ফলে প্রক্রিয়াটি আরও বিলম্বিত হয়।
আরও পড়ুন: পৃথক সচিবালয় গঠনের দাবিতে ঝিনাইদহে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের স্মারকলিপি পেশ
৩০তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৭ জনসহ মোট ৩১৯ জন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ডিএস পুলে আবেদন করা ২২৩ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। সব তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ২৫০ থেকে ২৮০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০তম বিসিএস
অপরদিকে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় রয়েছেন ২০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও, তারা পদোন্নতি পান ২০২১ সালে। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন তারা। এবার সেই পদোন্নতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ জন কর্মকর্তা ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডার মিলিয়ে মোট ৩০০ জনের বেশি কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে বিবেচনায় আছেন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ডিসি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ২০তম ব্যাচের ৪৩ জন কর্মকর্তাকে এই তালিকায় রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা আছেন ৩৭০ জন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন ১ হাজার ৩৪ জন।
সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১ হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট পদের চেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।
পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০২২ সালের ৩ জুন। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলছে, কিন্তু তাদের এখনো পদোন্নতি হয়নি।
১৫০ দিন আগে
সিলেটের ওসমানীনগরে সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার উধাও
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই লাপাত্তা হয়ে গেছেন প্রকল্পের ঠিকাদার। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের।
উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে বুড়ি নদীর ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল ওই নদীর ওপর একটি সেতুর। গ্রামবাসীর এই প্রত্যাশিত প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে উধাও হয়ে যান ঠিকাদার।
এদিকে মেয়াদ শেষে প্রকল্পের কাজ কত দূর হলো এবং সেটি বুঝে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরও ঠিকাদারের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। ঠিকাদারের একাধিক মোবাইল নাম্বারের সবকটি চালু থাকলেও কোনোটিই রিসিভ করছেন না তিনি। এমন অবস্থায় সেতুর কাজ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে সে নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের অধীনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বুড়ি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় আয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছর সেতুর পাইলিংয়ের কাজ করা হয়। চলতি বছর সেতুর মূল অংশ নির্মাণের লক্ষ্যে এর দুই পাশে কাঠামো তৈরির পর কাজ বন্ধ করে মালপত্র নিয়ে চলে যান ঠিকাদার। এর আগে কাজ শুরু করার পর মোট বরাদ্দের ৪০ শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এর পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী রাজিবের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ। পরে বাধ্য হয়ে তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, একে তো কাজ শেষ হয়নি, তার মধ্যে ঠিকাদার যতটুকু কাজ করেছেন তাও নিম্নমানের।
বুড়ি নদীর ওপর প্রকল্পের সাইটে গিয়ে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ব্রিজটি দুই পাশের ধারক (অ্যাবাটামেন্ট) ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।
আরও পড়ুন: বন্যায় বারবার ভেসে যায় স্বপ্ন, টেকসই বাঁধ চায় ফেনীবাসী
দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিলাল দত্ত জানান, সেতুটি তাদের দীর্ঘদিনের দাবির ফসল। ঠিকাদার কাজ পাওয়ার পর গত বছর সেতুর নকশা ও প্রকল্প সম্পৃক্ত নথিপত্রের কাজ সম্পন্ন করেন। চলতি বছর গার্ডার ওয়ালসহ দুই পাশের প্রাথমিক কাঠামো তৈরির পর মালপত্র নিয়ে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে ঠিকাদারের আর কোনো খোঁজ নেই।
স্থানীয়রা জানান, দুই পাশে দেওয়াল থাকায় বাঁশের সাঁকোও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে নদী পারাপারে অস্থায়ী ব্যবস্থা করারও উপায় নেই। তার মধ্যে যে কাজ করা হয়েছে তা আবার নিম্নমানের। এ সময় কাজটি দ্রুত নিষ্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।
পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরী সুমন বলেন, দৌলতপুরে বুড়ি নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার কথা বলেছেন। সেতুটির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সেই সঙ্গে চোখের সামনে এত দিনের দাবির বাস্তবায়ন এভাবে থমকে যেতে দেখে হতাশ তারা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী রাজিবের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ওসমানীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৫০ দিন আগে
গাজায় গণহত্যা: প্রতিবাদকারীদের ওপর যেভাবে নীরবতা ছড়িয়ে চলেছে হলিউড
শিল্প হলো প্রতিবাদের সবচেয়ে নান্দনিক ভাষা। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড চলচ্চিত্র শিল্প মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। অথচ, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে হলিউড পাড়ায় চরম নীরবতা। কেন ও কিভাবে হলিউড পাড়ায় এই ঐতিহাসিক নীরবতা তৈরি হলো—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিশ্লেষকরা।
এই শিল্পের শিল্পী, অভিনেতা ও প্রযোজনা কর্মীদের অভিযোগ, ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদন জগৎ এখন আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং এই খাত ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি দমন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় চাকরি খুঁইয়েছেন অনেকে, এমনকি এসব ব্যক্তির ভবিষ্যতে কখনোই কাজ না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বিনোদন জগতের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক ডজনকর্মী জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করায় তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে বা কালোতালিকায় পড়তে হয়েছে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে আছেন—অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, কাঠমিস্ত্রি, সেট ডিজাইনার, অ্যানিমেটর, সুরকার ও স্ক্রিপ্ট লেখক। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে চলচ্চিত্রখাতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদক ‘অস্কার’ জয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা হামদান বল্লাল ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অধিকৃত পশ্চিমতীরে মারধরের শিকার ও আটক হন। সে সময় অস্কার কমিটি ‘অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’ এই ঘটনার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি হলিউডের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৃত্যুর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত
হামদান ও বেসেল আদরার পরিচালিত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী আন্দোলনবিষয়ক ডকুমেন্টারি ‘নো আদার ল্যান্ড’ ২০২৪ সালে অস্কার লাভ করে। এই চলচ্চিত্র বানানোর প্রতিশোধ নিতেই হামদানের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন সহপরিচালক আদরার।
এর কয়েক সপ্তাহ পর ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমার তারকা র্যাচেল জেগলারের একটি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের টুইট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘এবং মনে রাখবেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন।’
চলচ্চিত্র প্রযোজকরা এই অভিনেত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য প্রচণ্ড চাপ দেন। এমনকি এই টুইটকে সিনেমাটির বক্স অফিসে ভরাডুবির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বিনোদন জগতে ক্ষমতাধর মহলের আগ্রাসনবিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার অন্যায় প্রচেষ্টা ও ইসরায়েলকে সমর্থনের বিষয়টি বল্লাল ও জেগলারের সাম্প্রতিক উদাহরণ দুটির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
শিল্প ও সৃজনশীলতার মুক্ত পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত একটি ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সহজে ভয় ও দমন-পীড়নের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ সুপারহিরো ও হরর চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কেউ কেউ আবার এইচবিও, প্রাইম ও ফক্সের মতো জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সিরিজেও কাজ করেছেন।
তবে তাদের কেউই শীর্ষ পর্যায়ের অভিনেতা নন। তাই, তাদের বরখাস্ত বা কালোতালিকাভুক্ত করার ঘটনা বিনোদন জগতে প্রধান শিরোনামও হয়নি, হয়নি কোনো ধরনের আলোচনা। এই স্বীকৃতির অভাবই তাদেরকে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
১৫৪ দিন আগে