বিশেষ-সংবাদ
অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে জমেছে পানি, দুশ্চিন্তায় ধান-আলু ও সবজিচাষীরা
গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেছেন নওগাঁর কৃষকরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। এতে আলুসহ রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যেসব জমিতে আগাম আলু বপণ করা হয়েছে, সেখানে পানি জমায় রোপণ করা আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও জমি প্রস্তুত করা হয়েছিল, কোথাও সদ্য বীজ রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমেছে। ফসল বাঁচাতে কৃষকরা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন।
শুধু আলু খেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব খেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় কৃষকরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া মাঠের আধা-পাকা ধানও হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর ভালো লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেছেন তারা। তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে রোপণ করা বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
অন্যদিকে, অনাবাদী জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি দ্রুত না সরলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক জয়নাল বলেন, ‘গত বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছিল। ভাবলাম একটু আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছি। এক সপ্তাহ হয়নি, এদিকে বৃষ্টি। এখন জমিতে পানি জমে আছে, গাছ ঠিক মতো উঠতে নাও পারে। কি করব ভাবতেই পারছি না।’
মান্দা উপজেলার ভারশো এলাকার কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাচ্ছে দেখে আমিও এক বিঘা জমিতে কিছু দিন আগে লাগালাম। কয়েকদিনের থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আলুর জমিতে পানি জমেছে। এতে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
হাপানিয়া এলাকার সুশীল মিস্ত্রি বলেন, ‘ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের গাছ মাটিতে হেলে গেছে। এখনো ফসলের অনেক খেতে পানি জমে রয়েছে। দ্রুত পানি সরাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।’
কীর্ত্তিপুর এলাকার সবজি চাষি ইন্দ্রি মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফুলকপি সহ বিভিন্ন সবজির গাছের গোড়ায় পচন দেখা দিয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা খরচের টাকাও তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। যেসব জমিতে আলু লাগানো হয়েছে ৮-১০ দিন হয়ে গেছে, সেগুলোতে ক্ষতি হবে না। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ধানের জন্য বৃষ্টি কিছুটা আর্শীবাদ। খেত থেকে পানি সরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
৪২ দিন আগে
উত্তরাঞ্চলে নন-ইউরিয়া সারের ‘কৃত্রিম’ সংকট, বিপাকে কৃষক
দেশের উত্তরের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে নন-ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। এ সংকটকে কৃত্রিম বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি-র মতো নন-ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় আবাদ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় এই অঞ্চলগুলোর চাষিরা। ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন পাঁচ জেলার লাখো কৃষক। সময়মতো জমিতে সার দিতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, কোনো জেলাতেই সারের ঘাটতি নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকলেও কিছু অসাধু ডিলার বেশি মুনাফার লোভে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছেন।
এ সময় জমিতে আলু ও ভুট্টা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু সার না পাওয়ায় জমি প্রস্তুতের কাজ আটকে আছে।
লালমনিরহাটের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন বলেন, ‘ডিলারদের কাছে সারের জন্য গেলে তারা বলেন সার শেষ। কিন্তু সেই সারই খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে আমাদের প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে।’
একই অভিযোগ করেন পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক আবু তালেব। তিনি বলেন, ‘নন-ইউরিয়া সার ছাড়া জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এখন সারের সবচেয়ে বেশি দরকার। নভেম্বরে সারের চাহিদা আরও বাড়বে। সময়মতো সার না পেলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা দিয়েও সার পাচ্ছি না, চরে কিভাবে ভুট্টা আবাদ করব তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’
বিএডিসি লালমনিরহাট গুদামের সহকারী পরিচালক একরামুল হক জানান, জেলায় ১৪৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে সার বিক্রি হয়। সরকার ডিলারদের কাছে প্রতি কেজি টিএসপি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে। ডিলাররা কেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সব সার আমাদের গুদামে রয়েছে। ডিলাররা নিয়মমাফিক সার উত্তোলন ও বিক্রি করছেন।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ সার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিএডিসির রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, কোনো জেলাতেই সারের কোনো সংকট নেই, কিছু অসাধু ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। তারা বাজার মনিটরিং করছেন, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের কোনো সংকট নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’
এদিকে, কৃষি বিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলাররা। লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের সার ডিলার আবু তাহের বলেন, ‘সরকার যে পরিমাণ সার বরাদ্দ দেয়, আমরা নির্ধারিত দরে সেটি কৃষকের কাছে বিক্রি করি। কেউ বেশি দরে বিক্রি করে না।’
ডিলারের সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কীভাবে যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা কোথা থেকে সার পান, সেটা তাদের জানা নেই।
লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম সংকটের জন্য বরাদ্দের স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় এ সংকট তৈরি হয়। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এখন প্রচুর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, ফলে সারের চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের সার নীতি ঠিক রেখে চাহিদামতো সার সরবরাহ করলে সংকট থাকবে না। তবে কোনো ডিলার যদি সত্যিই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন, তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রংপুর জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বরাদ্দ কম হওয়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে, আমরা আশা করছি দ্রুতই সংকট দূর হবে।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো ডিলার যাতে অবৈধভাবে সার বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে ডিলারদের। কোথাও সারের কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
৪৩ দিন আগে
আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কা
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই হিসেবে আর মাত্র তিন মাস পরই অনুষ্ঠিত হতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
আসছে ফ্রেবুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন এখনো অগোছালো ও মনোবলহীন—এমন মত দিচ্ছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিলে এখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার জানিয়ে আসছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন ভোট আয়োজনের দায়িত্বে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে এর সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—বর্তমান প্রশাসন কি আদৌ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।
গত ১৫ মাসে প্রশাসন এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নানা বদলি, পদোন্নতি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও আস্থার সংকট। নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে ভবিষ্যতে শাস্তি পেতে হতে পারে এই আশঙ্কায় কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও ভয়।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে এখনো প্রশাসন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এজন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে যোগ্য, সাহসী ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল বাড়াতে হবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, অগোছালো ও বিভক্ত প্রশাসনের মাঝেও এখনো সম্ভাবনা আছে। সাহসী পদক্ষেপ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রশাসন ঘুরে দাঁড়ালে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রশাসনের দুর্বলতা থাকলেও এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সাহসী পদক্ষেপ নিলে ভালো নির্বাচন সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের সেই ক্রেডিবিলিটি নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করবে ডিসি-ইউএনওর মতো মাঠ প্রশাসনের ওপর—তাদের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও ঈমানের জোরের ওপর।’
সরকার যদি সত্যিই নিরপেক্ষতার বার্তা দেয় এবং মাঠ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দেয়, তাহলে এখনো ভালো নির্বাচন সম্ভব বলে মত দেন সাবেক এই সচিব।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ইউএনবিকে বলেন, ‘২০০৮ সালের মানের নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাও বর্তমান প্রশাসনের নেই। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনা জরুরি। কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয় কাটাতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
রাজনীতিবিদরা না চাইলে প্রশাসন একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী টাউটদের নিয়ন্ত্রণ করাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ
বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপির অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত অনুগত কর্মকর্তাদের বসানো হচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াত দাবি করেছে, প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ দলের প্রভাবাধীন।
বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দেশজুড়ে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই বিশাল কাঠামো সরকারের প্রশাসনের সহায়তায় আসে। প্রশ্ন হলো—তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে কি না?’
সরকারের অবস্থান ও সাম্প্রতিক পদক্ষেপ
সরকার বলছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই তাদের অঙ্গীকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসনের সকল বদলি ও পদায়ন আমার তত্ত্বাবধানে হবে। যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করেই জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সিনিয়র সচিব এহছানুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ হলো—এটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিচ্ছি যাতে মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে।’
৪৪ দিন আগে
ছেলেটার লাশ একটু ছুঁয়েও দেখতে পারি নাই: জুলাই শহীদ পারভেজের মা
গেল বছর ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় নাকে ও কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মো. পারভেজ বেপারী (২৩) নামের এক যুবক। তার মা শামছুন্নাহার দুঃখ ও আক্ষেপ করে বলেন, ‘ছেলে আমার শহীদ হলেও একবার নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। জন্মস্থানের মাটিও কপালে জুটেনি আমার ছেলের।’
পরিবারের পরিচয় জানতে না পেরে পারভেজের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হয় ঢাকায় গণকবরস্থানে। পরে জানা যায়, পারভেজ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের বারহাতিয়া গ্রামের বেপারী বাড়ির সবুজ বেপারীর ছেলে।
সম্প্রতি সরেজমিনে শহীদ পারভেজদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা ও বোনদের সঙ্গে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় পারভেজের। পিতা সবুজ বেপারী ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী এমভি সোনারতরী-১ লঞ্চের খাবার ক্যান্টিনে কাজ করতেন। মা শামছুন্নাহার গৃহিনী। একমাত্র ছেলে পারভেজ ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। তার তিন বোনের মধ্যে বড় বোন নুপুর ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। দ্বিতীয় বোন ঝুমুর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ছোট বোন খাদিজা পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে।
পারভেজের ছোট বোন খাদিজা বলে, ভাই সব সময় আমাদের খোঁ নিত। মারা যাওয়ার আগেও আমার খোঁ নিয়েছে। ফোন করলেই পড়ালেখা ঠিক করে করছি কিনা এবং ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করি কিনা, জানতে চাইত। কাজের কারণে বাড়িতে কম আসলেও আমাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করত। আমি সবার ছোট হওয়ার কারণে ভাই আমাকে খুবই আদর করত।
শহীদ পারভেজের বোনদের মধ্যে বড় নুপুর আক্তার। তিনি বলেন, ভাইয়ের সাথে আমার সর্বশেষ কথা হয় ১৬ জুলাই। এরপর ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। যে কারণে সবশেষ তিন দিন কথা হয়নি। সব সময় পড়ালেখার খোঁ খবর নিত। ভাইয়ের কাছে কোনোকিছুর আবদার করলে তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেন। আমার ভাইকে যারা গুলি করে মেরেছে, তাদের বিচার চাই। ভাইয়ের অবর্তমানে আমাদের সংসার চালানোর মতো কেউ নেই।
পারভেজের মা শামছুন্নাহার ছেলের কথা বলতে গিয়ে শুধুই কাঁদেন। তিনি ইউএনবিকে বলেন, সংসারের অভাব অনটনের কারণে ছেলে আমার পড়ালেখা বেশি করতে পারেনি। স্থানীয় রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। এরপর এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ শেখে। তারপর একদম ছোট বয়সেই চলে যায় ঢাকায়। ঢাকায় গিয়ে গত প্রায় ৮ বছর কাজ করছিল। সবশেষ বাড্ডা-পূর্বাচল রোডে এ+এন ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আলী আহম্মদ তাকে অনেক আদর করত। ছেলের আয় দিয়ে আমাদের সংসারের অধিকাংশ খরচ মিটত। মেয়েদের পড়ার খরচও দিয়েছে আমার ছেলে।
তিনি বলেন, পারভেজ ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলেও আমরা জানতে পেরেছি দুইদিন পরে। তার সাথে যারা কাজ করত, তারাই আমাদের ফোন করে জানায়। তারা বলেছিল, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দোকান থেকে উত্তর বাড্ডা ছাত্র-জনতার মিছিলে যায় পারভেজ। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে লোকজন তাকে প্রথমে বাড্ডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার স্বামী লোকজন নিয়ে তাকে খুঁজতে যায়। কিন্তু প্রথমে খোঁ করে না পেলেও সবশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকা লাশের সাথে ছবি মিলিয়ে খোঁ পায় আমার ছেলের। কিন্তু পুলিশি হয়রানির ভয়ে ওর বাবা বাড়ি চলে আসে।
শামছুন্নাহার বলেন, ‘আমি একজন হতভাগা মা। ছেলেকে দেখা তো দূরে থাক, একবার তার লাশটা ছুঁয়েও দেখতে পারি নাই। ছেলের আমার জন্মস্থানের মাটিতে দাফন হওয়ার ভাগ্যও হয়নি।’
‘ছেলেকে হারিয়ে আমাদের সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ। ওদিকে ছেলেকে খোঁ করতে গিয়ে স্বামীর চাকরিটাও চলে গেছে।’
শহীদ পারভেজের চাচাতো ভাই মমিন জানান, পারভেজ উত্তর বাড্ডা-পূর্বাচল রোডে ফার্নিচারের দোকানের মিস্ত্রি ছিলেন। সেখান থেকে ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় তার সহকর্মী রাকিবসহ কয়েকজন উত্তর বাড্ডা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যান। সেখানে গুলিবিদ্ধ হলে উত্তর বাড্ডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। সেখান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি জানান, তবে প্রথমে পারভেজের সন্ধান না পাওয়া গেলেও ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে ২৮ জুলাই। সেখানে পারভেজের নাম ছিল। ওই তালিকার সূত্র ধরেই পরিবারের লোকজন তার মরদেহের ছবি শনাক্ত করেন। কিন্তু পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারা বাড়ি চলে আসেন।
পারভেজের বাবা সবুজ বেপারী বলেন, ‘আমার ছেলের সাথের লোকজন বাড়িতে খবর দেয়, পারভেজ নিখোঁ। এই খবর পাই ২১ জুলাই। পরে লোকজন নিয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকায় চলে যাই। ওই দিন রাত ১০টায় ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে খোঁ নিই। সেখানে তার সন্ধান পাইনি। সেখানে মৃতদের তালিকায়ও তার নাম পাইনি। এরপর চিন্তা করলাম, যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তাহলে থানাগুলোতে নাম থাকবে। তাই ভেবে বাড্ডা, রামপুরা ও হাতিরঝিল থানায়ও যাই, কিন্তু সেখানেও তার কোনো খোঁ পাইনি। অনেকটা ছেলের খোঁ পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসার পর ৮ আগস্ট আমাদের এলাকার বাসিন্দা মাসুদ সরকার ফোন দেন। তিনি একটি তালিকায় পারভেজের নাম দেখেছেন বলে জানান। এই নাম পারভেজের কিনা এসে দেখার জন্য বলেন তিনি। ওই দিনই আবার ঢাকায় চলে যাই এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে কথা হয় একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সাথে কথা হয়। সেখানে সে আমাকে দুইজনের ছবি দেখায়। প্রথম ছবিই আমার ছেলের পাওয়া যায়।’
‘ওই সময় আমার সাথে মর্গে থাকা লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। কারণ এর আগেও আমি তাদের কাছে এসে সন্ধান করি। তখন তারা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে মর্গের লোকজন জানায়, আমার ছেলের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সাথে নাকি অজ্ঞাতনামা ৮ জনের মরদেহ ছিল।’
তিনি জানান, পরে কোথায় দাফন করা হয়েছে— জানার জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাকরাইল ও মুগদা অফিসে যান। কিন্তু কোথায় পারভেজের লাশ দাফন করা হয়েছে, তা তারা সঠিকভাবে বলতে পারেনি তারা। তবে জুরাইন গণকবরস্থানে তাকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে বলে ধারণা করেন তারা।
কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সবুজ বেপারী।
পারভেজের বাবা বলেন, ছেলে শহীদ হওয়ার পর স্থানীয় রাজনৈতিক দলের লোকজন আমাদের বাড়িতে এসে খোঁখবর নিয়েছে। আর সরকারিভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকজন পাঠিয়ে ১০ হাজার টাকা এবং কিছু ফল পাঠিয়েছেন। এরপর জামায়াতের পক্ষ থেকে ২ লাখ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লাখ, জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার চেক এবং সর্বশেষ জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জীবনের চাইতে টাকাটা বড় না। টাকা দিয়ে কি মানুষের অভাব পূরণ হয়?’
৪৫ দিন আগে
কুমিল্লায় শতবর্ষব্যাপী পানের চাষে চার গ্রামে এসেছে রঙিন সমৃদ্ধি
বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই উৎসব, আড্ডা, চায়ের দোকান আর গৃহস্থের বাড়িতে পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই পান চাষেই কুমিল্লার চারটি গ্রামে এসেছে রঙিন সমৃদ্ধি।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরুড়া সীমান্তবর্তী কাদুটি, পাইকের করতলা, চাঁদসার ও লনাই গ্রামে প্রায় শত বছর ধরে পানের চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয় কাদুটি গ্রামে। এই গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ পান চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। এখানে মহালনী, চালতাগোটা ও সাচি জাতের পানের চাষ হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের টুকরোতে খুব যত্নে বেড়ে উঠেছে পানের চারা। সবুজ পান চারায় যেন হাসছে পুরো জমি। ওপরে দেওয়া হয়েছে খড়ের হালকা ছাউনি, যার ফাঁক দিয়ে হালকা সোনালি আলো পানের পাতায় পড়ে লুকোচুরি খেলছে।
কাদুটি গ্রামের পানচাষি ইউনুছ মিয়া বলেন, এক একরের বেশি জমিতে পান চাষ করেছেন তিনি। খরচ হয়েছে সাড়ে আট লাখ টাকা, বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। একটি জমিতে একবার পান চাষ করলে তা ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ফলন দেয় বলেও জানান তিনি।
আরেক কৃষক আবুল বাশার বলেন, “আমাদের কাদুটি গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ পান চাষে জড়িত। এই পান ১৫ দিন পর পর উঠানো হয়। পান চাষের কারণে এলাকায় মানুষ সচ্ছল হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, এই গ্রামের পান কাদুটি, নবাবপুর, গৌরীপুর, সাচার, বদরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। আগে পানের ভিড়া ২০০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করতে তার চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ভালো লাভ পেয়েছেন। তবে বর্তমানে পানের দাম কমায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন।
ব্যবসায়ী রমিজ মিয়া বলেন, যে পান ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবার ও অন্যান্য খরচ বাড়ায় কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী মিন্টু চন্দ্র দত্ত বলেন, কাদুটি, ঝলম, মাধাইয়া ও বদরপুরসহ বিভিন্ন হাট থেকে তিনি পান কেনেন। এখানের পান বিভিন্ন উপজেলায় যায়। এই পানের স্বাদ চমৎকার।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, এই পানের রোগ কম, ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক দাম কম পাচ্ছেন। কিছুদিন পর সে সমস্যা কেটে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, চান্দিনা উপজেলায় ৪২ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। কাদুটিতে হয় ১২ হেক্টর জমিতে। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৩ লাখ টাকা আর বিক্রি হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এটি ছায়া জাতীয় ফসল। সরাসরি আলো পড়লে ফলন ভালো হয় না। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এজন্য এখন একটু দাম কম। তবে সামনের শীতে দাম আরও বাড়বে। চান্দিনায় পান চাষের আরও সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
৪৬ দিন আগে
যশোরে ইজিবাইক ও অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে সড়কে তীব্র যানযট, দুর্ভোগে শহরবাসী
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অনেক জায়গায় চলাচলই প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু যানবাহন নয়, পথচারীরাও রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন না।
শহরবাসীর অভিযোগ, ইজিবাইক ও রিকশার দৌরাত্ম্য এখন চরমে পৌঁছেছে, অথচ ট্রাফিক পুলিশ কার্যত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৌরসভার ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু হলেও শ্রমিক আন্দোলনের মুখে তা অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে।
শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদিত ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যার তুলনায় বাস্তবে চলছে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন। এসবের বড় একটি অংশ আসে আশপাশের উপজেলা থেকে। অনটেস্ট মোটরসাইকেলও চলছে অবাধে।
ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম মূলত মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। শহরের রাস্তায় কিশোর চালকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো এখন নিত্যদিনের দৃশ্য।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, যশোর শহরে বৈধ ও অবৈধ মিলে সাত হাজার ৭৬৮টি যানবাহন রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে এই সংখ্যা তার চেয়েও বহুগুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি দৌরাত্ম্য ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশার।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের দড়াটানা মোড়, জেলরোড, মুজিব সড়ক, গাড়িখানা রোড ও মাইকপট্টি এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুপুরের দিকে দড়াটানা মোড়ে প্রায়ই যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশকে সেখানে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। পাশাপাশি শহরের চৌরাস্তা, মণিহার, আরএন রোড, বড়বাজার, কাঠেরপুল ও চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও একই পরিস্থিতি দেখা যায়।
রানা হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, ‘শহরে এখন নিয়ম-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। রিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। যে যেমন খুশি রাস্তায় চলছে, ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কার্যত শূন্য’।
মিতা রহমান নামে এক নারী জানান, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে কুইন্স হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে প্রায় আধাঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গরীবশাহ রোডে যেতে হয়েছে। কিন্তু ফুটপাত দখল থাকায় সেটিও কষ্টকর ছিল।
শফিকুল ইসলাম নামে আরেক পথচারীর মতে, দড়াটানা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দড়ি টেনে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বটে, কিন্তু এতে উল্টো আরও জট তৈরি হয়েছে। নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে, এতে চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, শহরে চলাচলকারী অনেক ইজিবাইক ও রিকশা চালক স্বীকার করেছেন, তারা শহরের বাইরের এলাকা থেকে প্রতিদিন ভোরে আসেন এবং রাতে ফিরে যান। জীবিকার তাগিদেই তারা নিয়ম না মেনে শহরে প্রবেশ করেন।
হারুণ নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘যানজট হলে শুধু যাত্রী নয়, আমাদেরও কষ্ট হয়। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় যাত্রী কমে যায়, আয়ও কমে যায়। গাড়ির চার্জও শেষ হয়ে যায়।’
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, শহরে যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন। তারপরও ট্রাফিক পুলিশ শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে, এমন অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আবার অভিযান শুরু হবে। তিনি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পৌরসভা লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা বন্ধে অভিযান শুরু করলে শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে। প্রধান রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সংহতি ঘোষণার পর জেলা প্রশাসন আপাতত অভিযান স্থগিত রাখে। ফলে শহরে যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
৪৭ দিন আগে
শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার বুকে লাখো মানুষের হাহাকার
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনরেখা তিস্তা নদী। এই নদীকে ঘিরেই এই অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। অথচ উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী আজ মৃতপ্রায়।
একসময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন বছরের অধিকাংশ সময় শুকনো থাকে। বর্ষায় ভাসে, আবার শীতে পরিণত হয় মরুভূমির মতো ফেটে যাওয়া বালুচরে। নদীভাঙন, চর গঠন ও তীব্র পানিসঙ্কটে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ।
অক্টোবরের শেষ ভাগেই পানি শুন্য হয়ে পড়েছে খরস্রোতা তিস্তা। বুক থেকে নেমে গেছে পানি, ফলে মরে গেছে তিস্তা। শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই নদীর এ বেহাল দশায় সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই যৌবন হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নদীটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত ১০ দিনে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গড়ে রয়েছে ১৭ হাজার কিউসেক। প্রতিদিনই কমছে পানি। ধীরে ধীরে পানি শুন্য হয়ে মরে যাওয়া এই তিস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনসংগ্রাম বাড়ছে তিস্তাপাড়ের কৃষক ও জেলেদের।
ভারতের গজলডোবা নামক স্থানের প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারেজ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতিকে সভ্য সমাজের মানুষরা রোধ করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি নামের জীবন।
এই নদীর পারে দাঁড়ালে এখন বাতাসে শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায় তিস্তার দীর্ঘশ্বাস আর গুমরে ওঠা কান্নার শব্দ। দীর্ঘ এ তিস্তাজুড়ে শুধুই ধু ধু বালুচর। প্রতিদিন একটু একটু করে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আশা-নিরাশা ও লুকোচুরির কবলে পড়েছে এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা।
তিস্তা নদীর নাব্যতা এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে আসন্ন রবি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনই পানি কমছে। নদীর বুকভরা বালুচর। কোথাও সামান্য পানি, আবার কোথাও চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া বালুচর।
হিমালয়ের গ্লেশিয়ার থেকে উৎপন্ন তিস্তা নদী ভারতের সিকিম পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি অতিক্রম করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করেছে।
এরপর নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা হয়ে নদীটি ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে। তিস্তা নদীকে ঘিরেই উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল। একসময় এই নদীর চরাঞ্চলে ধান, পাট, ভুট্টা, তিল ও সবজি চাষে ছিল সমৃদ্ধি।
১৯৮৩ সালে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকেই তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানিসঙ্কট আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা এখন নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নদীর তীরঘেঁষে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি লালমনিরহাটের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৩৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজারহাটে ৪টি গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি, গঙ্গাচড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার ঘর হারিয়েছে এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।
তিস্তা বাঁচাতে গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। ‘তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও’ স্লোগানে রংপুর বিভাগজুড়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল হয়েছে।
সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নদীর ১১৫ কিলোমিটাজুড়ে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা।
তিস্তার দুই তীরে একযোগে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচিতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারীদের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যানে নদী পুনর্খনন, চরবাসীর পুনর্বাসন ও বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক বাজেট অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে।
১০ বছরের মেয়াদে দুই ধাপে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (৫ বছর) ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ কোটি আসবে চীন থেকে ঋণ হিসেবে এবং ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের জন্য ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে কথা নয়, কাজ শুরুর।
পাউবোর রংপুর অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই পানি কমতে শুরু করেছে। যদিও আসন্ন সেচ মৌসুমে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন তা ব্যারেজে রয়েছে। তবে দ্রুত তিস্তা খনন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যদি এই নদী খনন করা না হয় তাহলে গোটা উত্তর অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। তিস্তার প্রভাব ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতিতে পড়েছে। এই নদীর কারণেই ঋতুর সাথে কোনো কিছুরই মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নদীটি আজ মরে গেছে। এই নদী বাঁচাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
৪৮ দিন আগে
সীমান্ত বাণিজ্যে স্থবিরতায় নীরব দর্শনা রেলপথ, অর্ধেকে নেমেছে রাজস্ব আয়
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন বন্দরে এখন আর নেই আগের কোলাহল ও কর্মব্যস্ততা। এক সময়ের কর্মচাঞ্চল্যে ভরা দর্শনা রেলইয়ার্ড এখন প্রায় নিস্তব্ধ।
একসময় ট্রেনভর্তি পণ্য এসে খালাস হতো ইয়ার্ডে, এখন অল্প পরিসরে কিছু পণ্য এলেও তা খালাস হচ্ছে অন্যত্র। বর্তমানে শুধু ফ্লাই অ্যাশ আসছে, সেটাও স্বল্প পরিসরে। গত তিন মাসে মাত্র ৬-৭ রেক মাল এসেছে ভারত থেকে।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি সহজ ও খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা একসময় খুবই আগ্রহী ছিলেন এ বন্দরে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এখন স্থবির হয়ে পড়েছে দর্শনা রেলইয়ার্ড। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। যার ফলে রাজস্ব আহরণ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
কাজ না থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। কেউ কেউ পেশা বদল করে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন, অনেকে আবার কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় চলে গেছেন। তা সত্ত্বেও তাদের আশা, ব্যবসায়ীরা আবার ভারত থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানি করবেন। আর দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলইয়ার্ডে কাজের গতি ফিরবে।
একসময় ইয়ার্ডে শতাধিক ট্রাক থাকত পণ্য পরিবহনের জন্য, এখন হাতে গোনা ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক দেখা যায়। ট্রাক ভাড়া না হওয়ায় মালিকরা বাধ্য হয়ে ট্রাক পাঠাচ্ছেন অন্যত্র। ট্রাক মালিকরা প্রতিমাসে লোকসান গুনছেন। চালক ও হেলপাররাও অলস সময় পার করছেন; কাজ না থাকায় তারাও ভোগান্তিতে রয়েছেন।
স্থানীয় শ্রমিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার সময়ের মতো এখনো কাজ নেই। সারাদিন বসে থাকি, গাড়ি আসে না। ঘরে চুলা জ্বলে না ঠিকমতো।’
ট্রাকচালক টিটু মিয়া বলেন, ‘আগে দিনে দুই–তিন ট্রিপ দিতাম, এখন তিন দিনে একটা ট্রিপও হয় না।’
সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি ও শ্রমিকরা আরও বলছেন, কার্যক্রম সচল থাকলেও কাজের পরিমাণ কমে গেছে। পণ্য ওঠানামা কমে যাওয়ায় আয়ও কমেছে। অনেক শ্রমিক কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
ভারত থেকে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে মালবাহী ওয়াগনে করে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতেন। দ্রুত সময়ে পণ্য খালাসের পর তা চাহিদামতো নির্দিষ্ট স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।
কিন্তু সরকার পরিবর্তন ও ডলার সংকটের কারণে এখন ব্যবসায়ীরা এলসির মাধ্যমে চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। কিছু ব্যবসায়ী সামান্য পণ্য আমদানি করলেও তা খালাস হচ্ছে অন্যত্র।
রেলইয়ার্ডে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী ও চালকরা অলস সময় পার করছেন। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক ইয়ার্ড ছেড়েছেন। আমদানি না হওয়ায় কাজ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ সময় অফিসগুলো বন্ধ থাকে। ব্যবহার না হওয়ায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলসি খুলতে এখন অনেক সময় ও খরচ লাগে। আগে অগ্রিম কিছু টাকা দিলেই এলসি হতো, এখন পুরো টাকা জমা না দিলে অনুমোদন মেলে না। আমাদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও কমে যাচ্ছে। আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করলে পরিস্থিতি দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’
আরেক ব্যবসায়ী রানা খান জানান, ‘আমদানির পরিমাণ প্রায় শূন্যে নেমে গেছে। ট্রেড লাইসেন্স আছে, শ্রমিক আছে, ট্রাক আছে কিন্তু কাজ নেই। মূলধন পড়ে আছে অচল অবস্থায়।’
রেলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে মালবাহী ওয়াগনে করে ভুট্টা, পাথর, পেঁয়াজ, চায়না ক্লে, ফ্লাই অ্যাশ, জিপসামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। এখন আসছে কেবল ফ্লাই অ্যাশ। সয়াবিন ভূষি আসছিল, আপাতত সেটাও বন্ধ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯,৭৪৯ ওয়াগনে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৮৬ ওয়াগনে ২ লাখ ৫২ হাজার ১০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
নাম না প্রকাশের শর্তে রেলইয়ার্ডে থাকা কয়েকজন বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলইয়ার্ড। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা আবার পণ্য আমদানি শুরু করেন। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছিল, কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সবকিছুই থমকে যায়। কাজ না থাকায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি, বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হতে হচ্ছে। আমরা চাই পরিস্থিতি আবার আগের মতো স্বাভাবিক হোক।
দর্শনা রেলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হাবু বলেন, ‘আমাদের এখানে আপাতত রেলপথে পণ্য পরিবহন নামমাত্র। কোনো গতিশীলতা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন।’
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শাহারিন হক মালিক বলেন, ভারত থেকে সহজে পণ্য আনতে দর্শনা রেলপথ ব্যবহার করতেন ব্যবসায়ীরা। নানা জটিলতার কারণে এখন তা বন্ধপ্রায়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও এলসি জটিলতা এর অন্যতম কারণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইয়ার্ডে প্রাণ ফিরবে না, ব্যবসায়ীদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। রাজস্ব কম হওয়ার কারণ ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছেন অল্প পরিসরে। আমদানি স্বাভাবিক হলে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ভারত থেকে ফ্লাই অ্যাশ আসছে। গত বছরের তুলনায় এ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আয় হয়েছে।
৪৯ দিন আগে
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চরমে, অচল অপারেশন থিয়েটার
৫০ শয্যার জনবল ও ১০০ শয্যার খাবার ও ওষুধ বরাদ্দ নিয়ে চলছে ২৫০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। এমনকি প্রায় ১০ মাস ধরে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে অপারেশন থিয়েটার। এতে করে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা পড়েছে চরম সংকটে।
অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় সাময়িকভাবে একজন সহকারী সার্জনের মাধ্যমে ব্যবস্থা চালানো হলেও রোগীরা বলছেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। এরপর ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও কেবল খাবার ও ওষুধ বরাদ্দই বাড়ানো হয়, জনবল নয়। ফলে এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালটি।
২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চুয়াডাঙ্গায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছয়তলা ভবনের উদ্বোধন করেন, ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা। উদ্বোধনের সাত বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের সব বিভাগ।
এর মধ্যে ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে সংকট। সিনিয়র চক্ষু কনসালট্যান্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট, সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট, জুনিয়র ইএনটি কনসালট্যান্ট, জুনিয়র রেডিওলজিস্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনের পদসহ নয়জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। এছাড়া ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২০টি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. আ. স. ম. মোস্তফা কামাল ডেপুটেশনে (সংযুক্তির মাধ্যমে) সদর হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। অ্যানেসথেসিয়া কোর্স সম্পন্ন থাকায় আপাতত তার মাধ্যমেই অপারেশন থিয়েটার চালানো হচ্ছে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় ছোট অপারেশনও বিলম্ব হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই সাধারণ ও গুরুতর রোগীদের অন্যত্র রেফার (স্থানান্তর) করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে খরচ, ভোগান্তি এবং মানসিক চাপ।
রোগীদের অভিজ্ঞতাও একই রকম হতাশার। পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী উজির আলী বলেন, ‘এক মাস হলো ভর্তি আছি। ডাক্তার বলেছেন সোমবার অপারেশন হবে, কিন্তু এখনো হয়নি। গরিব মানুষের মৃত্যুতেও শান্তি নেই।’
মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি কাঞ্চন বেগমের মেয়ে পারভিনা খাতুন বলেন, ‘গত সপ্তাহে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, এখন বলা হচ্ছে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
আরেক রোগী সেলিনা খাতুন জানান, ১৫ দিন হলো ভর্তি আছেন। প্রথমে তারিখ দিয়েছিল, পরে পরিবর্তন করেছে। এখন আর বিশ্বাস করতে পারছেন না, কবে হবে অপারেশন।
৫০ দিন আগে
মানবপাচার, অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা কমছে
গত এক বছরে বাংলাদেশের বিশ্বব্যাপী গতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, প্রত্যাবাসন ও ক্রমাগত বাড়তে থাকা অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন বিশ্বের অন্যতম দুর্বল অবস্থানে নেমে এসেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশ ১০৬ দেশের মধ্যে ১০০তম অবস্থানে রয়েছে, অর্থাৎ বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, এমনকি যুদ্ধপীড়িত ফিলিস্তিন রয়েছে আরও এক ধাপ ওপরে, ৯৯তম স্থানে।
বর্তমানে বাংলাদেশিরা মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করেন। তবে অনেক ভ্রমণকারী দাবি করছেন, তথাকথিত ভিসামুক্ত দেশগুলোতেও প্রবেশে বাড়ছে জিজ্ঞাসাবাদ, সন্দেহ ও বাধা।
ভিসা সংকট ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মানবপাচার ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ অবনতি ঘটেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই নিকটতম প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
এরপরই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশজুড়ে ভিসাকেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় ভারত, যদিও পরে সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ও শিক্ষার্থী ভিসা চালু করা হয়।
শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণে যেতে পর্যটকদের জন্য আগাম ‘ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন’ বা ইটিএ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির সরকার। এদিকে ২০২৫ সালের মে থেকে সৌদি আরব বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওয়ার্ক ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।ডেনমার্ক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামও ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে।
ভ্রমণকারীরা জানাচ্ছেন, এখন ভিসা পেতে সময় লাগছে বেশি, বাতিলের হার বেড়েছে এবং বৈধ ভিসা নিয়েও ইমিগ্রেশনে ‘অফলোড’ হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
প্রত্যাবাসনে গভীর সংকট
সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনাও পাসপোর্ট সংকট আরও বাড়িয়েছে।
২০২৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান ১৮০ অনিবন্ধিত বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায়, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠায় ৩০ জনকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৮৭ জনকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠিয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ইতালি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও সাইপ্রাস থেকেও ৫২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। আগস্টে যুক্তরাজ্য ১৫ জন এবং মালয়েশিয়া ৯৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে।
মানবপাচার ও বিশ্বাস সংকট
বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবণতা বাংলাদেশের পাসপোর্টের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) রিপোর্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, বৈশ্বিক মানবপাচারে বাংলাদেশ সার্বিক বিবেচনায় দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-২) রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে গত এক বছরে ৩,৪১০ জন মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে যৌন পাচারের শিকার ৭৬৫ জন, জোরপূর্বক শ্রমের শিকার ২,৫৭২ জন এবং অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার ৭৩ জন।তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে, গত এক বছরে ১,৪৬২ পাচারের শিকার ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা
২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত অন্তত ১৭৯ জন মব হামলায় নিহত হয়েছেন।
গত জুলাই মাসে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি সম্প্রতি কয়েকটি দেশ সফর করেছি। বর্তমানে লাল পাসপোর্ট থাকার কারণে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি। তারপরও বাংলাদেশি হওয়ায় বারবার বাঁকা চোখে দেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করি, তখন বাংলাদেশি দেখে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।’
একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি, বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। তবে পাসপোর্টের এ অবমূল্যায়নের জন্য শুধু বিদেশিরা নয়, বাংলাদেশিরাও তথা আমরাও দায়ী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক ডেটাবেসের সঙ্গে পুরোপুরি সংযুক্ত নয়। এ ছাড়া, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, পাশাপাশি জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য ব্যবহারের ঘটনাও বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এসব কারণে বহু দেশ এখন বাংলাদেশিদের প্রবেশে সতর্কতা অবলম্বন করছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনের কারণে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। ফলে ঢাকাস্থ অনেক দূতাবাস বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে। এই আঞ্চলিক প্রবণতাই পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ের পতনের অন্যতম কারণ।’
৫১ দিন আগে