বিশেষ-সংবাদ
বিমানের ফ্লাইটে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। কোনো উড়োজাহাজ মেরামতের পর উড্ডয়ন করছে, আবার কোনোটা গ্রাউন্ডেড করা হচ্ছে। নিয়মিত শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। এর খেসারত দিতে হচ্ছে যাত্রী ও বিমান কর্তৃপক্ষকে।
গত এক মাসে দেশি-বিদেশি রুটে অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে। যদিও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে, তবে এসব ঘটনায় যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ দিনে আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরসহ একাধিক রুটে মাঝ আকাশে বা উড্ডয়নের আগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেট বিকল, কোথাও ইঞ্জিন ত্রুটি, আবার কোথাও রানওয়েতে আটকে পড়েছে উড়োজাহাজ। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, সংযোগ ফ্লাইট মিস এবং গন্তব্যে যেতে না পারার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: পাঁচ খাতে সেরা বিমান বাংলাদেশ
রোববার (১০ আগস্ট) রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ডানার ফ্ল্যাপ ত্রুটির কারণে ‘গ্রাউন্ডেড’ হয়। লন্ডন থেকে যন্ত্রাংশ এনে মেরামতের আগে ২৬২ যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়। পরদিন সোমবার (১১ আগস্ট) ড্যাশ-৮ মডেলের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে।
আগস্টের শুরুর দিকেও তিনটি উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দেয়। এরমধ্যে ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিন কম্পনের কারণে ফিরে আসে, ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী বোয়িং টয়লেট বিকল হয়ে ঢাকায় ফেরে এবং ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পথে বোয়িংয়ে সমস্যা হয়।
গতকাল ১২ আগস্ট ঢাকা থেকে কুয়েত ও দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটই পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে। উড়োজাহাজ সংকটে উভয় ফ্লাইটই বাতিল হয়েছে । এর মধ্যে ঢাকা-কুয়েত রুটের বিজি ৩৪৩ ফ্লাইটটি ছিল বিকেল ৩ টা ৪৫ মিনিটে । আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী ফ্লাইটটি ছিল বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর ইউএনবিকে জানান, গতকাল ১২ আগস্ট বাতিল হওয়া কুয়েত ও দুবাইয়ের ফ্লাইটটি আগামীকাল যাবে । ঢাকা-কুয়েত রুটের বিজি ৩৪৩ ফ্লাইটটি আগামীকাল (১৩ আগস্ট )সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় যাবে। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী ফ্লাইটটি আগামীকাল (১৩ আগস্ট) একই সময়ে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যাবে। নতুন সময়সূচি যাত্রীদের জানানো হচ্ছে ।
কেন ২ টি ফ্লাইট বাতিল করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, উড়োজাহাজ সংকট। কারণ রোমে যে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি গ্রাউন্ডেড আছে সেটি উড্ডয়ন উপযোগী করতে ১২ আগস্ট বিমানের নিজস্ব ৫ জন প্রকৌশলী গেছেন । আশা করা যাচ্ছে, ঐদিন সন্ধ্যা নাগাদ উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন উপযোগী হবে।
বিমানের ফ্লাইটে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় এবং ত্রুটি সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উড়োজাহাজ আকাশে ওঠে না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা আকস্মিক নয়; বরং না হওয়ায় ছোট ত্রুটি বড় ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকক যাত্রার এক ঘণ্টা পর ঢাকায় ফিরল বিমানের ফ্লাইট
বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও আরেক এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটনা ঘটছে এটি সত্যি। বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ অনেক পুরনো হওয়ায় সমস্যা নিয়মিত দেখা দিচ্ছে। এসব ত্রুটি বিমান শনাক্ত করে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আরও তদারকি বাড়াতে হবে। তবে এসব ত্রুটি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু উড়োজাহাজ গুলো পুরনো, তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা করতে হবে। ইন্জিনিয়ার ও পাইলট নিয়োগে সজনপ্রীতি করা যারে না। যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।
জুলাইয়েও কয়েকটি বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে, যার মধ্যে দুবাই ও শারজায় ড্রিমলাইনার ও বোয়িং উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনা রয়েছে।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে রয়েছে ১৯টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ১৪টি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে: ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০,৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার,২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।
বিমান সুত্রে জানা যায়, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে, পাশাপাশি নতুন ক্রয় পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
১২৪ দিন আগে
ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম নেই, মরছে মানুষ
প্রতি বছর বর্ষার সময় সাপের উপদ্রব বাড়ে। বৃষ্টির পানিতে সাপের বাসস্থান প্লাবিত হলে আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ের দিকে ছোটে বিষধর এই প্রাণীটি। অনেক সময় মানুষের ঘরের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয় তারা। আর মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে অতর্কিত সাক্ষাত হলে সাপগুলো ভয়ে দংশন করে বসে।
প্রতি বছরের মতো এবারের বর্ষায়ও ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, জেলার কোনো হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশন নেই। গত দুই সপ্তাহে সাপে কাটা অন্তত ৫ জন রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা ইসরাইল উদ্দিন। তার ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলামকে গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে দংশন করে বিষধর সাপ। ছেলের চিকিৎসার জন্য দুই জেলার চারটি হাসপাতাল ঘুরেও সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করার অ্যান্টিভেনম পাননি ইসরাইল। অসহায় বাবার চোখের সামনে মারা যায় তার আদরের সন্তান সাকিবুল।
হাসপাতালগুলোতে সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করার ইঞ্জেকশন (অ্যান্টিভেনম) মজুদ না থাকায় আদরের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ বাবার দুঃখের শেষ নেই। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। ছেলের মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা। গত তিন দিন ধরে চিকিৎসা চলছে তার।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে বাড়ির পাশে একটি দোকানের ছাউনি থেকে বেরিয়ে এক বিষধর সাপ কামড় দেয় সাকিবুলকে। তবে ওই সময়ে ছেলেটি সাপের কামড়ের বিষয়টি বুঝতে পারেনি। পরে ব্যথা শুরু হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসক ক্ষত দেখে বুঝতে পারেন যে সাপে কামড়েছে। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অ্যান্টিভেনম না থাকায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলা হয়। সেখানেও অ্যান্টিভেনম না থাকায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলে পথিমধ্যে ১০ মাইল নামক স্থানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাকিবুল।
আরও পড়ুন: মাগুরায় সাপের কামড়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
আক্ষেপ করে ইসরাইল উদ্দিন বলেন, ‘চারটা হাসপাতালে নিয়ে গেছি। বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতাল থেকে হরিপুর, এরপরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল। সেখানেও ভ্যাকসিন (অ্যান্টিভেনম) না পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ হাসপাতাল নিয়ে গেলাম; রাত তখন ১০টা বাজে। সেখানেও ভ্যাকসিন নেই। পরে দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে আমার ছেলে আমার কোলে ওপর মারা গেল। বাবা হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি।’
আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়, এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলছাত্র সাকিবুলের মতো ঠাকুরগাঁও জেলায় গত দুই সপ্তাহে পীরগঞ্জের সপ্তম শ্রেণির স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী, হরিপুরে গৃহবধু সম্পা রাণীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষধর সাপের দংশনে।
নিহতদের স্বজনরা বলছেন, জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে এসব রোগীদের।
সম্পা রাণীর স্বামী জিতেন বলেন, ‘সকালে সাপে কামড়ানোর পর হরিপুর, রাণীশংকৈল এবং সবশেষ ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গেছি, কিন্তু ভ্যাকসিন পাইনি। নিরুপায় হয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যাই। এরপরেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আজমুল হক বলেন, ‘বর্ষার সময়ে প্রতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি সাপের কামড়ে মারা যায়। এজন্য হাসপাতালগুলো অ্যান্টিভেনমের চাহিদা পাঠায়। কিন্তু ভ্যাকসিন যখন হাসপাতালে এসে পৌঁছায়, তখন বর্ষা শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বর্ষার আগেই অ্যান্টিভেনম মজুদ রাখা।’
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিছুর রহমান অ্যান্টিভেনম না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘চাহিদাপত্র পাঠানোর পরও ঢাকা থেকে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়নি। ঢাকা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে অ্যান্টিভেনমের সংকট রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এর মধ্যেও আমরা কিছু অ্যান্টিভেনম সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’
১২৫ দিন আগে
ড্যাপ সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত, যাবে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য
ঢাকা মহানগরের জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। রবিবার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
পরবর্তী ধাপে এটি ড্যাপ-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে পাঠানো হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। সব ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যেই গেজেট প্রকাশ করা হবে।
রবিবারের বৈঠকে ঢাকা ইমারত বিধিমালা–২০২৫ এবং ড্যাপ (২০২২–২০৩৫)–এর কিছু সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)–এর চেয়ারম্যান, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স ও আর্কিটেক্টসের সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ড্যাপ: আবাসন ব্যবসা বাঁচাতে ঢাকা কী আরও বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠবে?
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধনের জন্য উপদেষ্টা পর্যায়ে ৩টি, সচিব পর্যায়ে ৪টি, মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির ১০টি এবং রাজউকে অংশীজনদের সঙ্গে ২০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে নানা প্রস্তাব ও মতামতের ভিত্তিতে খসড়ায় ঐক্যমত্যে পৌঁছানো হয়।
আজকের বৈঠকে বিদ্যমান রাস্তার ভিত্তিতে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), এলাকা ভিত্তিক এফএআর ও জনঘনত্ব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রামীণ এলাকার (যেমন দাসেরকান্দি, কাচপুর, ময়নারটেক, আলীপুর, রুহিতপুর, বিরুলিয়া, বনগ্রাম ইত্যাদি) মোট ১৬টি জনঘনত্ব ব্লকের এফএআর সামান্য সমন্বয় করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ও নগর এলাকার এফএআর পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে। এছাড়া ২০১১ সালের বিবিএস হাউজহোল্ড সাইজ বিবেচনায় আবাসন ইউনিট নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
ড্যাপ (২০২২–২০৩৫)–এর নীতিমালায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর আপডেটের বিধান থাকায় আগামী এক বছরের মধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে পরিকল্পনার উন্নয়ন ও আপগ্রেডেশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে রাজউককে নীতি ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেবে।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, আজকের বৈঠকে ড্যাপ সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এখন ড্যাপ-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে পাঠানো হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, ড্যাপ-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করা হবে। সংশোধিত ড্যাপে কী সুবিধা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট-বড় জায়গায় কিছু না কিছু হলেও এফএআর বাড়বে, তাতে সবারই সুবিধা হবে।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কত সময় লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু আজকের বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট সবাই অনুমোদন দিয়েছে, তাই আশা করছি ড্যাপ-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যেই গেজেট প্রকাশ করা যাবে।
আরও পড়ুন: ড্যাপ সংশোধন চূড়ান্ত হবে আগামী ১০ আগস্ট
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট নতুন ড্যাপের গেজেট প্রকাশের পর থেকেই আবাসন খাতের উদ্যোক্তা ও ভূমি মালিকদের পক্ষ থেকে সংশোধনের দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলেও ডেভেলপাররা এই দাবি অব্যাহত রাখে।
সর্বশেষ ২০ মে ঢাকা সিটি ল্যান্ড অনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজউক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে এবং দাবি পূরণ না হলে রাজউকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকার সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করে।
১২৬ দিন আগে
উচ্চশব্দের হর্ন আমদানি-বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আসছে
রাজধানীতে শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকার রাস্তায় এখন সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। এ কারণে নতুন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শব্দদূষণ বিধিমালা নতুন করে করা হচ্ছে।
শব্দদূষণের শাস্তি বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত করে ২০০৬ সালের বিধিমালা সংশোধন করে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী এ শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।
খসড়া বিধিমালায় যানবাহনের হর্ন আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞার বিধিও যুক্ত হচ্ছে নতুন বিধিমালায়। বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন কত জোরে বাজাতে পারবে, সেই গ্রহণযোগ্য মাত্রা (মানমাত্রা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি-পটকা ফোটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। কেউ আতশবাজি ফোটাতে পারবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ফোটাতে হলে অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে মাইক, লাউড স্পিকার, মিউজিক সিস্টেম ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিধিমালায়। রাত ৯টার পর উচ্চ শব্দে গান বাজানো কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
নতুন শব্দদূষণ বিধিমালার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ২০০৬ সালের বিধিমালায় কিছু বিষয় স্পষ্ট করা নেই। নতুন বিধিমালায় সেগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া আতশবাজি, হর্নসহ কিছু বিষয় বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাস্তিও বাড়ছে।
সচিব বলেন, নতুন শব্দদূষণ বিধিমালা খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। খসড়াটি চূড়ান্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। খসড়ার ওপর মতামত নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ২১টি মন্ত্রণালয় থেকে খসড়ার বিষয়ে মতামত পেয়েছি। খসড়াটি আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সবার মতামত পেলে আবার একটা মিটিং হবে।
তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাসের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে ফেরত আসলে তা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠানো হবে।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়; ঈদের জামাত, ওয়াজ মাহফিল, জানাজা, নাম কীর্তন এবং শবযাত্রাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান; অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস, ইফতার ও সেহরীর সময় প্রচার, সরকারি কয়েকটি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিধিমালা কার্যকর হবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আলেম-উলামাদের সহায়তা চায় সরকার
উচ্চ শব্দের হর্নে নিষেধাজ্ঞা
প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন আমদানি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন ব্যবহার করতে পারবেন না।
নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না জানিয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন, পুনঃস্থাপন বা ব্যবহার করতে পারবে না বা করার অনুমতি দিতে পারবে না।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, মাইক বা হর্ন আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না বলে খসড়ায় জানানো হয়েছে।
শব্দ ও হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ
বিধিমালা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল। এছাড়া আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবেল। এর বেশি মাত্রায় শব্দ করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিন এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন সময় হিসেবে চিহ্নিত বলেও খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান বিধিমালাতেও এটি রয়েছে। মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের শব্দের মানমাত্রাও আগের মতো রয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
তবে নতুন করে মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। খসড়ার অনুযায়ী, মোটরযানের মধ্যে দুই বা তিন চাকার হালকা যান ও অন্যান্য হালকা যানের (কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ইত্যাদি) শব্দের মানমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। মাঝারি যানের (মিনিবাস, মাঝারি ট্রাক, মাঝারি কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি) ৯০ ডেসিবেল। ভারী যানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ইত্যাদি) ১০০ ডেসিবেল এবং যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা ১০০ ডেসিবেল। এর বেশি শব্দে হর্ন বাজালে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দের নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করলে; ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেল লাইন পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন না করলে কর্তৃপক্ষ শাস্তির মুখে পড়বে।
এছাড়া অনুমতি নেওয়ার পর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দে গান-বাজনা করলে এবং রাত ৯টার পর তা অব্যাহত রাখলে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ব্যবহার করলে, অনুমতি নিয়েও নির্ধারিত সময়ের পর আতশবাজি ব্যবহার করলে, বনভোজনে শব্দের মানমাত্রার অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বিধি-নিষেধ অনুসরণ না করলে, কারখানার ভেতরে যন্ত্রপাতির কাছে ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখলে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন না করলে শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।
যানবাহনের হর্ন সংক্রান্ত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিয়ম ভেঙে হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। অতিরিক্ত শব্দের হর্ন বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন করলে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।
পেশাদার বা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও ব্যাপ্তি নির্ধারণ করবে।
নতুন বিধিমালায়ও পিকনিক বা বনভোজনের উদ্দেশ্যে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচন উপলক্ষে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও আবদ্ধ স্থানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কারখানার ভেতরে বা যন্ত্রপাতির কাছে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়গুলো রয়েছে।
আতশবাজি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ও সমজাতীয় অন্যান্য যন্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে উৎসব, অনুষ্ঠান ও সমাবেশ ইত্যাদির প্রয়োজনে আতশবাজি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোভাবেই রাত ৯টা পার হবে না। দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টার বেশি ও বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া ক্রমাগত সর্বমোট ২ দিনের বেশি দেওয়া যাবে না এবং শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি পার হতে পারবে না।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই: ডিএনসিসি প্রশাসক
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো নিজ নিজ এলাকার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র, শিল্প ও নিরব এলাকা চিহ্নিত করে স্ট্যান্ডার্ড সংকেত বা সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, অনুমতি না নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শব্দযন্ত্র ব্যবহারের অনুমোদিত মানমাত্রা পার হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিজ এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঘোষিত নীরব এলাকার ভেতর কোনো প্রতিষ্ঠান ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেললাইন স্থাপন করলে যানবাহন ও রেলগাড়ি চলাচলের সময় অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রার বেশি শব্দ উৎপন্নের সম্ভাবনা থাকলে রেল বা সড়ক অ্যালাইনমেন্ট বরাবর উভয় পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ নীরব এলাকা ছাড়া শর্ত সাপেক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে রাত্রিকালীন সময়ে পাবলিক অ্যাড্রেসিং সিস্টেম, মাইক, লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোক্রমেই রাত ৯টার বেশি সময়ের জন্য দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেল এর বেশি পার করা যাবে না।
১২৬ দিন আগে
কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’
কুড়িগ্রামের বন্যাপ্রবণ নদ-নদীবিধৌত চরাঞ্চলে টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’। বন্যা মোকাবিলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী চরবাসীর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠছে এসব উঁচু বসতভিটা। প্রতিটি বসতভিটায় ৫ থেকে ১০টি পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে যা বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সমতল থেকে ৮-১০ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বসতভিটা। ১৫ থেকে ২৫ শতক জমিজুড়ে নির্মিত একেককটি গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রামে বর্তমানে চরের সংখ্যা প্রায় ৪৬৯টি। এসব চরের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে গুচ্ছ বসতভিটার এই অভিনব মডেল।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রাম–চিলমারী রেলপথ আধুনিকায়ন প্রকল্পে অগ্রগতি নেই
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলার চর মনতলার মিজানুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘গত বছর আমরা দশটি পরিবার মিলে ২৫ শতক জমিতে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করি। এতে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। বন্যার সময় যখন চারপাশ ডুবে যায়, তখন আমাদের ভিটা নিরাপদ থাকে। আশেপাশের অনেক পরিবারও এসে তখন আশ্রয় নেয়।’
১২৭ দিন আগে
ড্যাপ: আবাসন ব্যবসা বাঁচাতে ঢাকা কী আরও বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠবে?
ঢাকার শান্তিনগর এলাকার একটি কনডোমিনিয়াম অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। বিস্তৃত এই বহুতল ভবনে মেলে দৈনন্দিন সব সেবা; ব্যবসায়ী আফজালের ইচ্ছা ছেলে-মেয়েদের জন্য আগামীতে এমনই আরেকটি কনডোমিনিয়ামে কিনবেন আরেকটি ফ্ল্যাট।
এক বা একাধিক ফ্ল্যাট মালিক হওয়ার স্বপ্ন আফজালের একার নয়; ঢাকার বেশিরভাগ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান স্বপ্ন রাজধানীতে নিজের একটি ফ্ল্যাট। মধ্যবিত্তের এ স্বপ্ন পূরণে নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে গড়ে উঠেছে শত শত আবাসন কোম্পানি, যাদের মূল লক্ষ্য বেশি বেশি সুউচ্চ ভবন তুলে ফ্ল্যাট তৈরি করে সামর্থ্যবান মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা এবং নিজেদের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জমির মালিকেরা; নিজেদের ভবন তোলার সামর্থ্য না থাকলেও ভবনের অর্ধেক মালিকানা পাওয়ার স্বপ্ন তাদের।
জাতীয় তথ্য বাতায়নের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৬ সালে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ঢাকার আয়তন ২৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট আয়তনের তুলনায় ঢাকার আয়তন ১ শতাংশের নিচে। অথচ এই আয়তনে মোট মানুষের বাস প্রায় ২ কোটি। এতে করে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
এই বিশাল সংখ্যক মানুষের আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে গত তিন দশক ধরে ঢাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা। রাজউকের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ভবন সংখ্যা ২ লাখের মতো। কিন্তু পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দুই সিটি করপোরেশনে মোট ভবন ৬ লাখের বেশি এবং প্রতি বছরই বাড়ছে এ সংখ্যা।
যদিও পরিকল্পনা থেকে অনেক দূরে ঢাকা, তবু একেবারে বসবাস অযোগ্য অবস্থা থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজউকের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি নতুন এ পরিকল্পনা — চলছে বাকবিতণ্ডা ও নানা ধরনের সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব।
ড্যাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাস্তার আকার ও জমির আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ, সে অনুযায়ী যে-সব এলাকায় রাস্তা ছোট সেখানে ভবনের আকারও ছোট হবে। তবে ড্যাপের এই ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) মানেনি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। সর্বশেষ ড্যাপ সংশোধন করে এরিয়া রেশিও বাড়ানোর দাবিতে মে মাসে রাজউক ঘেরাও করেছেন তারা। অনেকটাই তাদের চাপেই ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক — এমনটাই দাবি পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারী ও পরিকল্পনাবিদদের।
পড়ুন: মূল ভূখণ্ডের ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে বনভূমি: পরিবেশ উপদেষ্টা
১২৮ দিন আগে
ড্রেনেজ ও সড়ক অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বাসিন্দারা
বর্ষা মৌসুম মানেই চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বাসিন্দাদের ভোগান্তি। দীর্ঘ জলাবদ্ধতাসহ জমে যায় পানি, ড্রেন উপচে পড়ে ময়লা পানি। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে রোগ-জীবাণুর ঝুঁকিও। আর এমন সব নাগরিক দুর্ভোগের প্রধান কারণই হলো চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ড্রেনেজ ও সড়ক ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা।
পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিলেও বিশেষভাবে বুজরুকগড়গড়ী বনানীপাড়া, শান্তিপাড়া, সবুজপাড়া, সাদেক আলী মল্লিকপাড়া, পলাশপাড়া, গুলশানপাড়া, মুক্তিপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া ও মসজিদপাড়ার অবস্থা সবচেয়ে করুণ। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, কোথাও ড্রেন ভেঙে পানি ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। অনেক স্থানে ড্রেনের মুখে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তা বসতবাড়ির ভেতরেও ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
পলাশপাড়ার বাসিন্দা পিয়াল খান বলেন, ‘বর্ষা এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। রাতে শিশুদের নিয়ে চলাচল করাটা একপ্রকার দুঃসাহসিক অভিযানে পরিণত হয়।’
গুলশানপাড়ার মুস্তাফিজুর রহমান কনক অভিযোগ করে বলেন, ‘তিন বছরেও ড্রেন পরিষ্কার হয়নি। মুখ বন্ধ হয়ে আছে, পানি বের হতে পারে না। বর্ষায় পুরো এলাকা ডুবে থাকে।’
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ, জনভোগান্তি
বনানীপাড়ার আক্তার হোসেন বলেন, ‘অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছি। কাউন্সিলর এসে ছবি তোলে, আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে।’
১২৮ দিন আগে
ফরিদপুরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ
ফরিদপুরে গত ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দর মণপ্রতি হাজার টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। এদিকে, পাইকারি বাজারে দর বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহেদুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তর জেলা ফরিদপুর। মৌসুমে এ জেলার ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল যা থেকে ৬ লাখ ৭৭ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। মৌসুমের সময় এক থেকে দেড় হাজার টাকা মনপ্রতি দর পেয়েছিলেন চাষিরা। তখন তাদের দাবি ছিল, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দর পেলে তারা লাভবান হতে পারেন।
তবে, হঠাৎ করেই গত দশ দিনের ব্যবধানে দেড় হাজার টাকার পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে, খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
পেঁয়াজের এই দরবৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ করে কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। পাইকাররা বলছেন, চলতি মৌসুমে জেলা চাষিরা পাট নিয়ে ব্যস্ত সময়ে পার করায় বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ করছে কম। এতেই এই পণ্যটির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সরকারি গুদামে রেকর্ড মজুত, বোরোতে সর্বোচ্চ ধান-চাল সংগ্রহের আশা
ফরিদপুরের কানাইপুরের ব্যবসায়ী তপন কুমার বলেন, ‘বর্তমানের বাইরের (বিদেশি) পেঁয়াজের আমদানি নেই। এ ছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামুলক কম থাকায় চাহিদার সঙ্গে মিলছে না। এ কারণেই দর বেড়েছে।’
১২৯ দিন আগে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাদান না কি ব্যবসা?
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর সর্বসাকুল্যে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় যা জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারকে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ‘অলাভজনক হওয়ার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য শিক্ষাদান না কি মুনাফা অর্জন?’
দেশের নামজাদা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার প্রথম সারির কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়াতে পরিবারের শুধু কোর্স আর ক্রেডিট ফি বাবদই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। অধ্যয়নরত বিষয় বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ খরচ ঠেকে ১৫ লাখে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রথম সারির একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোনো শিক্ষার্থী প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক করতে চাইলে তার খরচ পড়বে ৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। প্রকৌশল বাদে বিজ্ঞান বিভাগের অন্য কোনো বিষয়ে পড়তে চাইলে এ খরচ ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আরেকটি প্রথম সারির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে গ্রাজুয়েশন খরচ এর চেয়েও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রেডিটে খরচ পড়ে ৮ হাজার টাকার ওপরে। এর সঙ্গে আছে ভর্তি ফি, কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি ও লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার মতো খরচ। এতে করে সব ক্রেডিট শেষ করে একজন শিক্ষার্থীর গ্রাজুয়েশনে খরচ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
একই অবস্থা আফতাবনগরের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজার বিবেচনায় মানসম্পন্ন কোনো বিষয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ৭ লাখ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট বিবিএ সম্পন্ন করতে প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ লাগে ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এসব খরচের বাইরেও রয়েছে বাড়তি অনেক আনুষঙ্গিক খরচ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বিশাল চাপ
যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের খরচ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ ১৬ গুণ বেশি। খরচের এই বিশাল বড় বৈষম্যের শিকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি
ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সানোয়ার আহমেদ, দুই ছেলেকেই ভর্তি করিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে সানোয়ার আহমেদ বলেন, ‘দুই ছেলেকে পড়াতে খরচ হবে ৩০ লাখের মতো টাকা। চাকরি করে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানের আরেক বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা এখনো কলেজে পড়ে। মেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়েছি। পড়াশোনার পেছনে প্রতি সেমিস্টারে লাখ টাকা ঢালতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে ছেলেকে বলেছি, পাবলিকে চান্স না পেলে তাকে আর অনার্স করাব না; কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দেব। মাসের বেতন, জীবনের সঞ্চয় সব চলে যাচ্ছে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে।’
ইসরাত জাহানের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পড়ছেন প্রথম সারির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি দুজনই চাকরিজীবী। এরপরও প্রতি সেমিস্টারে মেয়েকে টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এর বাইরে বাড়তি খরচ কম না। সব মিলিয়ে দুইজন দুই লাখ টাকা আয় করলেও সন্তানকে পড়াশোনা করাতে কোনো কোনো সময়ে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয় ।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ
বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্লাসের পাশাপাশি টিউশনি করেন। অনেকে ব্যস্ত থাকেন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। টাকা জোগাড়ে কেউ কেউ নাইট শিফটে পার্ট টাইম চাকরি পর্যন্ত করেন।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘আমি ফার্মাসিতে পড়ি। পুরো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে আমার ১৫ লাখের মতো টাকা লাগবে। শুরুর দুই বছর বাবা টাকা দিতে পারলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন আর টাকা দিতে পারছেন না সেভাবে। এজন্যই নিজেই টাকা আয়ের চেষ্টা করছি। আপাতত ক্লাসের পরে তিনটি টিউশনি করছি। এতে করে যে টাকা আসে তা সেমিস্টার ফি বা ক্রেডিট ফির জন্য যথেষ্ট না হলেও কিছুটা সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা আর কি।’
আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সাদি বলেন, ‘একে তো ক্রেডিট খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে চাইলেই পার্ট টাইম কাজ করা যায় না। তাই আমিসহ আমার অনেক বন্ধু বাধ্য হয়ে রাতের বেলা কল সেন্টারে কাজ করি খরচ যোগাতে।’
শিক্ষার মান নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বেশিরভাগই পড়াশোনা করছেন কিছু শেখা বা দক্ষতা অর্জনের জন্য নয়, কেবল একটি সনদের আশায়। মূলত মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাজুয়েশনের সনদ কিনছেন— এমনটাই মনে করেন তারা।
পাবলিকে আসন নেই, প্রাইভেটে ব্যবসা
প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাস করে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৫৫ হাজারের মতো। এর সঙ্গে মেডিকেল, প্রকৌশল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন যোগ করলে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ সিটের মতো দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার। অর্থাৎ, যারা সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল করেছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে ভর্তি হতে হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অডিট ফার্ম দিয়ে প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করাতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউজিসি তালিকাভুক্ত ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা বছরের পর বছর কোনো বার্ষিক প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। এ ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সিন্ডিকেট সভা হলেও আর্থিক সভা হয় না বললেই চলে। এতে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকার টিউশন ফি কোথায় কোন খাতে খরচ হয়, তা নিয়ে আদৌ কোনো স্বচ্ছতা থাকে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা ৪-৫ লাখ টাকা করে পান। ছাত্রদের টাকায় বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা আয়েশি জীবনযাপন করছেন, দামি গাড়িতে চড়ছেন, কিনেছেন দামি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তদন্তের কোনো জোর নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি থেকে সাবধান করা হলেও ক্ষমতার জোরে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
কিসের ভিত্তিতে এমন আকাশচুম্বী টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আসে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কাছে জিম্মি। কোষাধক্ষ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ হয় ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশে। এই বোর্ড যতটা না শিক্ষাকেন্দ্রিক, তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসাকেন্দ্রিক।
করপোরেট শিক্ষা বাণিজ্য
দেশে নব্বইয়ের দশকে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা হয় এবং সে অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধরনের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার বড় একটি সংযোগ ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বিডিরেনের সেবা গ্রহণের আহ্বান ইউজিসির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, ‘যে সময় দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নিও লিবারেলিজমের ঢেউ চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করেছে। তখন থেকেই শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের পরিণত করার প্রয়াস হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রকমের আত্মপ্রকাশ।’
মানস বলেন, ‘দেশের বাইরে হার্ভাড বা কলম্বিয়ার মতো নামকরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে টাকা আয় করে তাদের আয়ের ধরন মোটেও এমন নয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ব্যাপারটি অনেকটা গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও স্বরূপ বুঝতে কষ্ট হয় না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মানহীন প্রমাণ করে নিজেদের ব্যবসার কৌশল অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের সারিতে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘এটা মূলত ব্যবসায়িক কৌশল। আগে যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সুযোগ পেত না, তাদের শিক্ষার জন্য বড় মাধ্যম ছিল জেলাভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে পড়াকে নিজেদের স্ট্যাটাস রক্ষার অংশ হিসেবে দেখেন। শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের বড় কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পলিসি।’
অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষানুরাগী প্রমাণ দিয়ে ব্যবসায়িক নানা সুবিধা নিচ্ছে উল্লেখ করে মানস বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টারশিয়ারি শিক্ষা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছেন তারা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে রেখে পরোক্ষ সুবিধা নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসায়িক ভ্রমণ কিংবা অনুদানের সুবিধা নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক লাভ আদায় করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’
দায় আছে ইউজিসির
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন লাগামহীন খরচ এবং সর্বাত্মক ব্যবসায়ী মনোভাব রুখতে ইউজিসিকে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষক ও অধিকারকর্মীরা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যার সিংহভাগই রাজধানীতে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে যা হয় তাকে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।’
তিনি বলেন, ‘দিন দিন এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক রকমের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয় কী শেখাচ্ছে, তাদের কারিকুলাম কেমন, সেসব নিয়ে আলোচনা হয় না বললেই চলে। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে এদের সঠিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইউজিসির।’
বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসি বদ্ধ পরিকর জানিয়ে কমিশন সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করা ইউজিসির বড় লক্ষ্য। এর পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানেও ইউজিসি সোচ্চার বলে জানান তিনি।
১৩০ দিন আগে
কুড়িগ্রাম–চিলমারী রেলপথ আধুনিকায়ন প্রকল্পে অগ্রগতি নেই
মাত্র ২৯ কিলোমিটার রেলপথ। কিন্তু এই পথ পাড়ি দিতেই সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রাম পর্যন্ত চলাচলকারী একমাত্র লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন মাত্র একবার চলাচল করে, তাও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে। ভাঙাচোরা লাইনে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০–১৫ কিলোমিটার, যেখানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলে ৪০–৪৫ কিলোমিটার বেগে।
কুড়িগ্রাম–রমনা রেলরুটে কুড়িগ্রাম, পাঁচপীর, উলিপুর, বালাবাড়ী ও রমনা—এই পাঁচটি স্টেশন থাকলেও কার্যত রেলসেবার মান এখন নাজুক। চিলমারীর রমনা স্টেশনে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
৬৫ বছর বয়সী ট্রেনযাত্রী মফির উদ্দিন বলেন, ‘একসময় রমনা স্টেশন ছিল ব্যস্ততম। প্রতিদিন তিন জোড়া ট্রেন চলত। এখন কখনো চলে, কখনো চলে না। তবুও অপেক্ষা করি, কারণ ট্রেনেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত হয়।’
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘চিলমারী নদীভাঙন ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা। এখানকার অনেক মানুষ কুড়িগ্রাম বা অন্য শহরে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করেন। স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য ট্রেনই তাঁদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু রেললাইন এত খারাপ যে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন: রেলপথ হবে পরিকল্পিত ও লাভজনক, রেশনালাইজেশন হবে গবেষণার ভিত্তিতে: শেখ মইনউদ্দিন
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথ পুনর্বাসনের একটি প্রকল্প শুরু হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। দুদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ হয়নি। চিলমারীকে বরাবরই অবহেলিত রাখা হচ্ছে। আমরা আর বৈষম্য চাই না।’
চিলমারী নৌবন্দরকেন্দ্রিক যাত্রীচাপের কথাও তুলে ধরেন সালাম। ‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বন্দরে আসা–যাওয়া করেন। রেলসুবিধা উন্নত করা গেলে তাঁদের বড় উপকার হতো,’ বলেন তিনি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিলমারী–কুড়িগ্রাম রেলপথ পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২৩ সালে দুটি পৃথক প্যাকেজে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম–উলিপুর ১৯ কিলোমিটার অংশের ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি টাকা এবং রমনা–উলিপুর ১০ কিলোমিটার অংশে ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট, প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ, নতুন রেললাইন ও স্লিপার বসানো এবং ১২টি সেতু–কালভার্ট সংস্কারের কথা ছিল। কাজ শুরুর সময় ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারি। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ম্যানেজার রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক সংকটে ভুগছি। রেলওয়ের কাছ থেকে আমাদের কাজের অর্ধেক বিল এখনো বকেয়া। ফলে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনতে পারছি না, কাজও এগোচ্ছে না।’
তিনি জানান, ‘কুড়িগ্রাম–উলিপুর অংশে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও রমনা–উলিপুর অংশে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আমরা যদি সম্পূর্ণ বিল পেতাম, তাহলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হতো।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী শিপন ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার আর্থিক সংকটে থাকায় প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি। তাঁদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আমরা উপরের দপ্তরে জানিয়েছি, যাতে বিল অনুমোদন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথটির পুনর্বাসন শেষ হলে চিলমারী–কুড়িগ্রাম রুটে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানো যাবে এবং নতুন ট্রেনও যুক্ত করা সম্ভব হবে। চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
১৩২ দিন আগে