বিশ্ব
প্লাস্টিক দূষণে বছরে দেড় লাখ কোটি ডলারের স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্ব এখন প্লাস্টিক দূষণের সংকটে রয়েছে, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনার বরাতে রোববার (৩ আগস্ট) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সংকটের কারণে জন্ম থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর ফলে প্রতি বছর অন্তত ১.৫ ট্রিলিয়ন (দেড় লাখ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫০ সাল থেকে প্লাস্টিক উৎপাদন ২০০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৬০ সালের মধ্যে এটি তিনগুণ বেড়ে বছরে এক বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে। সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান-টাইম ইউস) প্লাস্টিকের ব্যবহার—যেমন পানির বোতল ও ফাস্টফুডের প্যাকেট।
বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্রে পর্যন্ত ৮০০ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পুনর্ব্যবহার হয় মাত্র ১০ শতাংশেরও কম।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্লাস্টিক শুধু ব্যবহারের সময়ই নয়, বরং এর কাঁচামাল (তেল, গ্যাস ও কয়লা) উত্তোলন, উৎপাদন, ব্যবহার ও বর্জনের প্রতিটি ধাপে মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে বায়ুদূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ এবং মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হয়। এমনকি প্লাস্টিকে জমে থাকা পানি মশার প্রজননস্থল হওয়ায় রোগবাহী মশার সংখ্যাও বাড়ছে।
পড়ুন: দেশীয় প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশক উদ্ভাবনের দাবি বাকৃবি গবেষকদের
এই পর্যালোচনার প্রধান লেখক ও বস্টন কলেজের শিশু ও মহামারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ডরিগান বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর। এর বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক খরচ রয়েছে। তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
প্লাস্টিকশিল্প ও পেট্রোস্টেট (জ্বালানিনির্ভর দেশ) গোষ্ঠীগুলোর দাবি, প্লাস্টিকের উৎপাদন নয় বরং পুনর্ব্যবহারই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাগজ, কাচ বা ধাতুর তুলনায় প্লাস্টিক সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। তাই কেবল রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৯৮ শতাংশ প্লাস্টিক জীবাশ্ম জ্বালানি—তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে উৎপাদিত হয়। এতে বছরে ২ বিলিয়ন টনের সমপরিমাণ কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ হয়। পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে পুড়িয়ে ফেলা প্লাস্টিক থেকেও মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটে।
বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যে ১৬ হাজারেরও বেশি রাসায়নিক উপাদান থাকে—যার মধ্যে আছে রং, ফিলার, ফ্লেম রিটারডেন্ট ও স্ট্যাবিলাইজার।
দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত পর্যালোচনায় বলা হয়, এসব রাসায়নিকের অনেকগুলোই মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় এসব উপাদানের সংস্পর্শে গর্ভপাত, অপরিণত বা মৃত সন্তানের জন্ম, জন্মগত ত্রুটি, ফুসফুসের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া, শৈশবের ক্যানসার এবং পরবর্তী জীবনে প্রজনন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
পড়ুন: টেকসই বিনিয়োগে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা
প্লাস্টিক বর্জ্য ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা পানি, খাবার ও বাতাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব কণা মানুষের রক্ত, মস্তিষ্ক, বুকের দুধ, গর্ভনালির প্লাসেন্টা, শুক্রাণু ও অস্থিমজ্জায় পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
গবেষকদের মতে, এসব ক্ষুদ্র কণা স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি।
অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই ‘সস্তা’ উপাদান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিককে সাধারণত সস্তা উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এর স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বিশ্লেষণ করলে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু তিনটি রাসায়নিক—পিবিডিই, বিপিএ ও ডিইএইচপি—ব্যবহারজনিত কারণে ৩৮টি দেশে স্বাস্থ্যক্ষতির বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
চুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক সংকট মোকাবেলায় একটি বাধ্যতামূলক বৈশ্বিক চুক্তি নিয়ে শেষ ধাপের আলোচনা চলছে। যদিও ১০০টির বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার পক্ষে, তবে সৌদি আরবসহ কিছু তেলনির্ভর দেশ এতে বাধা দিচ্ছে।
পড়ুন: আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ
এই বিষয়ে পর্যালোচনার সহলেখক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মার্গারেট স্প্রিং বলেন, ‘এই প্রতিবেদনগুলো বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের জন্য নিরপেক্ষ ও তথ্যনির্ভর উৎস হয়ে উঠবে, যা কার্যকর নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করবে।’
১৩৩ দিন আগে
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবে না হামাস
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ ঘোষণার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইসরায়েলের একটি প্রধান দাবি প্রত্যাখ্যান করল সংগঠনটি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২ আগস্ট) এ ঘোষণা দেয় হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে উইটকফ বলেছিলেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে তা সত্য নয় বলে দাবি হামাসের।
এদিকে, ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান ওই আলোচনায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা ছিল।
বিবিসি বলেছে, হামাস অস্ত্রত্যাগ না করলে কোনো চুক্তিতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস বলছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন, পুরোপুরি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার ত্যাগ করা হবে না।
গত কয়েকদিনে বেশ কিছু আরব সরকারও হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়াল জামির সতর্ক করে বলেন, দ্রুত জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় যুদ্ধের কোনো বিরতি থাকবে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দেওয়ার দাবি হামাসের
এদিকে, ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ইসরায়েল সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করে, তবে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
বর্তমানে গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৯৩টি শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিব সফরে রয়েছেন উইটকফ। হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
উইটকফ বলেন, সংঘাতের অবসান ও সব জিম্মিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনাকে কেন্দ্র করেই শান্তি প্রচেষ্টা হওয়া উচিত।
সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শুক্রবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বহুল সমালোচিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের থেকে এ পর্যন্ত খাবার নিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের অধিকাংশই ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তবে ইসরায়েলে দাবি, এসব বিতরণকেন্দ্রের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে হামাস। ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় না।
১৩৪ দিন আগে
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত ভারতের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত’। তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সম্পর্ককে দেখা উচিত নয়।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে দেশটির সামগ্রিক অবস্থান নির্ভর করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাজারে তেলের প্রাপ্যতার ওপর। তাছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও পরীক্ষিত। এই সম্পর্ককে তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়।
এমন এক সময়ে ভারত এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ভারত, যখন ইতোমধ্যেই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত আমদানি কর বসানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া থেকে দৈনিক ৬৮ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ভারত। পরে ওই বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ১১ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে। ২০২৩ সালের মে মাসে এ হার সর্বোচ্চ ২১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছায় এবং এরপর থেকে আমদানির এই সংখ্যা ওঠানামা করছে।
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেলের দামে অনিশ্চয়তা, হুমকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, একসময় ভারতের আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশের যোগানদাতা হয়ে ওঠে রাশিয়া।
অবশ্য এর আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অধিকাংশ তেল আমদানি করত ভারত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মস্কোর ওপর চাপ তৈরি করতে পশ্চিমা দেশগুলো রুশ তেল বর্জন করলে সে সময় কম দামে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। সে সময় থেকেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়াতে শুরু করে ভারত।
১৩৪ দিন আগে
আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প।
এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবা-মায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।
‘আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনও মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।
দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।
আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’
১৩৫ দিন আগে
গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
গাজায় সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র আমদানি, রপ্তানি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশ স্লোভেনিয়া।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে দেওয়া এক সরকারি ঘোষণায় স্লোভেনিয়া সরকার জানায়, এটি ইউভুক্ত কোনো সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা এসটিএ’র খবরে বলা হয়, এর আগে স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোব বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, ইইউ যদি সম্মিলিতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দেশ এককভাবে পদক্ষেপ নেবে।
দেশটির সরকারি বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘ইইউ অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে এই মুহূর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অক্ষম। এমন ব্যর্থতার কারণে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পদ্ধতিগতভাবে মানবিক সহয়াতায় ইসরায়েলি বাধার কারণে (গাজায়) অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা পানীয় জল, খাদ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা পড়ছে।’
যদিও স্লোভেনিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের অস্ত্র বাণিজ্য প্রায় নেই বললেই চলে, তবু এ নিষেধাজ্ঞাটি কূটনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অস্ত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক জাইন হুসেইন বলেন, ‘স্লোভেনিয়ার এই নিষেধাজ্ঞা প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ।’
এর আগে স্লোভেনিয়া সরকার জুলাই মাসে চরম সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দুইজন কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীর দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সম্প্রতি, ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা বন্ধের তদবির করা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবাল বলেন, ‘স্লোভেনিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবতার মৌলিক মূল্যবোধকে সম্মান দেখানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
২০২৪ সালের জুনে স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্ট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এর আগে ইউরোপের আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ইতোপূর্বে স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য আংশিক অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করলেও স্লোভেনিয়ার মতো পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। স্লোভেনিয়ার এই পদক্ষেপ ইউরোপে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়ারই একটি বহির্প্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৩৫ দিন আগে
পাকিস্তানে ডাকাত দলের হামলায় ৫ পুলিশ সদস্য নিহত
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে পুলিশের একটি তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র ডাকাতদের হামলায় অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দিবাগত রাতে পাঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান জেলায় ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বেশ কয়েকজনের একটি ডাকাত দল পুলিশের এলিট ফোর্সের একটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালায়।জেলা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশের মুখপাত্র ইরফান আলী সামো বলেন, ‘ডাকাতরা রাতের আঁধারে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের সাহসী সদস্যদের হত্যা করেছে।’
ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ও সাঁজোয়া যান পাঠানো হয় এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করা হয়।
সামো বলেন, ‘ডাকাতদের গোপন আস্তানাগুলোর দিকে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনও ব্যাপক অভিযান চলছে।’
আসামিদের ধরতে আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যানের সহায়তা নিয়ে অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
১৩৬ দিন আগে
অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: জো বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং দেশ অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) শিকাগোতে অনুষ্ঠিত দেশটির ন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের ১০০তম বার্ষিক পুরস্কার গালায় দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন এই মন্তব্য করেন।
আফ্রো-আমেরিকান বিচারক, আইনজীবী ও আইন পেশাজীবীদের সবচেয়ে বড় সংগঠনটির অনুষ্ঠানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করেন এবং বর্তমান প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।
বাইডেন বলেন, ‘১৯৬০’র দশকের উত্তাল দিনগুলোর পরও আমেরিকার জনগণকে এমন গভীর অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে যেতে হয়নি।’
তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে রাজনীতিবিদরা আইনি অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাড়িয়ে দিতে দেখে খুশি হন।
বাইডেন অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান প্রশাসন ‘ইতিহাস মুছে দিয়ে সমতা ও ন্যায়বিচার বিলুপ্ত করতে চায়।’বক্তৃতায় তিনি বলেন, আইনবিরোধী পদক্ষেপে যেসব আইন সংস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতা করেছে, সেগুলোকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই চাপের কারণে বাধ্য হয়ে কিছু আইনি প্রতিষ্ঠান নতজানু হয়েছে, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেছে।’
বাইডেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং অনেকে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের কথা ভাবছেন।
পড়ুন: আরও ৬৯ দেশের ওপর নতুন হারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ
স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বক্তব্য
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি তার প্রেসিডেন্সি নিয়ে একটি স্মৃতিকথা লিখছেন এবং প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন।
তবে বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে তিনি তার পুনঃনির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় সহকারীদের ভূমিকা নিয়ে চলমান কংগ্রেস তদন্ত নিয়ে কিছু বলেননি।
যদিও তিনি পূর্বে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রতিটি ক্ষমা মুক্তির সিদ্ধান্ত তিনি মৌখিকভাবে অনুমোদন করেছিলেন এবং এসব বিষয়ে রিপাবলিকানদের ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দেন।
এই বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তার সাবেক উপদেষ্টা মাইক ডনিলন এবং স্টিভ রিচেত্তি মার্কিন কংগ্রেসের ওভারসাইট কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেন।
সবশেষে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। এখনই সময় সঠিক ইতিহাসের পাশে দাঁড়ানোর।’
সূত্র: ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান
১৩৬ দিন আগে
নির্বাচনের আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর
আগামী ডিসেম্বরে পরিকল্পিত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নিজেই।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীকে যে ফরমানের (ডিক্রির) মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। সেইসঙ্গে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য একটি বিশেষ কমিশনও গঠন করা হয়েছে।
অবশ্য এ পদক্ষেপে মিয়ানমারের বাস্তব পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন। কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অভ্যুত্থানের নেতা মিন অং হ্লাইং এখনো কার্যত রাষ্ট্রপতি ও সামরিক প্রধান হিসেবে সব ক্ষমতার দখলেই রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প নতুন বিপর্যয় নিয়ে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মিয়ানমারে
সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, অভ্যুত্থানের পর দেশে যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, গতকাল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির পর তা সাত দফা নবায়ন করার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার তা বাতিল করা হয়।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে এই মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান বলেছেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির সময়।
২০২১ সালে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের পর থেকেই চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ওই সময় থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। এই বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী ৬ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষকে যথেচ্ছভাবে আটক করেছে। এ ছাড়া, দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে, যদিও জান্তা সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই নির্বাচনকে পশ্চিমা দেশগুলো একপ্রকার প্রহসন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জেনারেলরা কেবল নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছেন।
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট দলগুলোই প্রভাব বিস্তার করবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বিরোধী দলগুলোকে হয় নির্বাচনে অংশ নিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, নয়তো তারা নিজেরাই অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মিয়ানমার-বিষয়ক স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, ক্ষমতায় যে রদবদল করা হয়েছে, তা লোক দেখানো। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা আগের মতোই অত্যাচারী ও দমনমূলক আচরণ চালিয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা কেবল পুরনো মোড়কে নতুন নাম দিচ্ছেন। এটি এমন এক নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ, যেটি সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানি না।’
এদিকে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআর টিভিতে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মিন অং হ্লাইং।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের জান্তা সরকাররে সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে চীন।
১৩৬ দিন আগে
আরও ৬৯ দেশের ওপর নতুন হারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ
আবারও প্রায় ৬৯টি বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী সপ্তাহে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এই শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সে সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগও দেয় ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার ‘সংশোধিত পাল্টা শুল্ক হার’ (Further Modifying the Reciprocal Tariff Rates) শিরোনামে প্রায় ৬৯টি বাণিজ্য অংশীদার দেশের নাম ও তাদের জন্য নির্ধারিত সংশোধিত শুল্কহারের তালিকা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। বাকি দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে শুল্কারোপ করা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক ঘাটতি মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাহী আদেশ ১৪২৫৭-এ ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট কিছু বাণিজ্য অংশীদার দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত অ্যাড ভ্যালোরেম (মূল্যভিত্তিক) শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন ও যৌক্তিক।’
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যে পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ব্রাজিলের
এদিকে, কানাডার সঙ্গে ২৫ শতাংশ শুল্ক সমঝোতা হওয়ার পরও নতুন করে তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কানাডা থেকে ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে কানাডার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে নতুন করে এই শুল্কহার ঘোষণা করা হয়েছে বলে নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কানাডার ওপর আরোপিত এই শুল্ক আজ (১ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে এবং বাকি দেশগুলোর ওপর ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রত্যাশা বনাম ফলাফল
গত এপ্রিলে শুল্ক ধার্যের পর অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে শুল্কের পরিমাণ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অনেকের।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক প্রধান ডেবোরা এলমস আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে সর্বশেষ সময়সীমার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।’
তবে নতুন এই শুল্কহার ‘অস্বাভাবিক হিসাবের’ ওপর ভিত্তি করে করার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তার ভাষ্যে, আগের শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতিটা হয়তো বাজে ছিল, কিন্তু অন্তত একটা যুক্তি ছিল। নতুন শুল্কহার বাস্তবতার সঙ্গে একদম খাপ খায় না। কিছু দেশ কঠিন দরকষাকষি করেও ভালো ফল পেয়েছে, কেউ কেউ পায়নি। আবার কেউ আলোচনার সুযোগ না পেয়েও কম শুল্ক পেয়েছে, আবার কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কানাডায় ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, অনিশ্চয়তায় ইউএসএমসিএ চুক্তি
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ট্রেড পলিসি ফেলো ইনু মানাক বলেন, নতুন হারে শুল্ক কার্যকর হতে সাত দিন সময় লাগবে। এই সময়ে যেসব দেশ আগেই আলোচনা শুরু করেছিল, তারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বাড়তি সময় পেয়েছে।
কীভাবে নির্ধারিত হলো এই শুল্কহার
নতুন করে ঘোষিত এই শুল্কে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, এমন বেশিরভাগ দেশের ওপরই সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তবে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের ওপরই আরোপিত এই শুল্কহারে মূলত পরিবর্তন এসেছে। ওই দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া সাপেক্ষে এবং ওই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় শুল্কহারে দেশভেদে তারতম্য দেখা গেছে।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। তাছাড়া সেমিকন্ডাক্টর, মোটরযান, গাড়ির যন্ত্রাংশ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও রপ্তানি পণ্যের জন্য পৃথক শুল্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে।
যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের বেশিরভাগের জন্যই শুল্কহার কিছুটা কমানো হয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সিদ্ধান্তও দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: শুল্ক আলোচনা: বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও অগ্রগতির দেখা নেই
তাইওয়ানের প্রাথমিক শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চুক্তির তুলনায় এই হার এখনো বেশি।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, সুইজারল্যান্ডের শুল্কহার ৩১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে। আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য ৪১ শতাংশ এবং মিয়ানমারের জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শুল্কহারগুলোর মধ্যে রয়েছে— লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, ইরাক ও সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ এবং আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৩০ শতাংশ।
এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মনে করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক এপ্যাক অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টিভ ওকুন।
তার মতে, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্কহারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামগ্রিক বা নির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। বাণিজ্য-সংক্রান্ত হোক বা অন্য যেকোনো কারণে, দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করেই আলাদা শুল্ক নির্ধারিত হয়।
১৩৬ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে ৮২৯ কিমি দীর্ঘ বজ্রপাত, বিশ্বে রেকর্ড
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঘটে যাওয়া একটি বজ্রপাত বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ৫১৫ মাইল বা ৮২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বজ্রপাতকে ইতিহাসের দীর্ঘতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব টেক্সাস অঙ্গরাজ্য থেকে মিসৌরির কানসাস সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত। যা ইউরোপের প্যারিস থেকে ভেনিস পর্যন্ত দূরত্বের সমান।
এই বজ্রপাতটি পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের বজ্রপাত। এর আগের রেকর্ডটিও গ্রেট প্লেইন্স নামের একই অঞ্চলে ঘটেছিল। ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিলের ওই বজ্রপাতটি ছিল ৭৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ।
২০১৬ সাল থেকে স্যাটেলাইটভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন বিস্তৃত বজ্রপাত পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সর্বশেষ ভূ-স্থির কক্ষপথে থাকা আবহাওয়া স্যাটেলাইটের সহায়তায় ২০১৭ সালের বজ্রপাতটি শনাক্ত করা হয়।
স্যাটেলাইট চিত্র দিয়ে বজ্রপাতের বিভিন্ন অংশে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শাখাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে স্থলভিত্তিক সেন্সরের মাধ্যমে বজ্রপাতের সময় ও দূরত্ব পরিমাপ করা হতো, তবে এতে সীমাবদ্ধতা থাকত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পড়ুন: বাল্যবিবাহ ঠেকাতে প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলছাত্রীর দরখাস্ত
এ ছাড়া সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বজ্রপাতের রেকর্ডও প্রযুক্তির সহায়তায় শনাক্ত করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ জুন উরুগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনার আকাশে একটি বজ্রপাত টানা ১৭ দশমিক ১ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়া ও জলবায়ুর চরম অবস্থা বিষয়ক প্রতিবেদক অধ্যাপক র্যান্ডাল সারভেনি বলেন, ‘এমন দীর্ঘতম বজ্রপাতের ঘটনার দৈনন্দিন প্রভাব রয়েছে। বজ্রপাত মূল উৎস থেকে অনেক দূরেও আঘাত হানতে পারে। তাই বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি চলাকালে মানুষকে বাইরে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানির লাইন আছে এমন মজবুত ভবন অথবা সম্পূর্ণ বদ্ধ ধাতব ছাদবিশিষ্ট গাড়ির মধ্যে আশ্রয় নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
১৩৭ দিন আগে