বিশ্ব
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক
ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের চিফ অফ আর্মি স্টাফ (সিওএএস) ফিল্ড মার্শাল সাইয়েদ অসিম মুনির। এ সময়ে সন্ত্রাসীবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন এমন খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে জেনারেল মুনিরের বৈঠক হয়েছে।
ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো চিফ অফ আর্মি স্টাফের এটিই ছিল প্রথম কোনো মুখোমুখি বৈঠক। এছাড়া সামরিক শাসন কিংবা রাজনৈতিক কোনো পদ না থাকলেও মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে এর আগে কখনো এমন আমন্ত্রণ পায়নি কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে বৈঠক শেষে ক্যাবিনেট কক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন অসিম মুনির।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিফ উইটকফও অংশ নেন। এ সময়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিকও উপস্থিত ছিলেন।
দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাকিস্তানের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, দুই দেশের সন্ত্রাসবিরোধী জোরালো অভিযানেরও প্রশংসা করেন তিনি।
এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে দুই পক্ষ থেকে। এ সময়ে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনি ও খনিজসম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও নতুন নতুন প্রযুক্তির বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাকিস্তানের আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি সমন্বয়ের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাথে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য অংশীদারত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘আঞ্চলিক জটিল সময়ে আসিফ মুনিরের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারও প্রশংসা করেছেন তিনি। পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অসিম মুনির।’
পরবর্তীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ তার সঙ্গে বৈঠক করে আমি সম্মানিতবোধ করছি। তিনি আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন, যে কারণে আজ আমাদের এই বৈঠক হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়ানোয় আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম।’
‘আমি অবশ্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ দিতে চাই, যিনি কিছুদিন আগে এখানে এসেছিলেন,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
১৭৯ দিন আগে
ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা
ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিতকতায় এবার ইরানের আরাকে অবস্থিত ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে সক্ষম একটি হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের চারপাশের এলাকা খালি করতে জনগণকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসেরায়েলি সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল।
ওই পোস্টে নির্ধারিত এলাকাকে উপগ্রহের চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। আগের হামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবেই সতর্কবার্তা দিয়েছে তেল আবিব।
হেভি ওয়াটারের (Heavy Water) রাসায়নিক নাম ডিউটেরিয়াম অক্সাইড (D₂O)। সাধারণ পানিতে (H₂O) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রোটিয়াম নামে পরিচিত, যা হাইড্রোজেনের সবচেয়ে হালকা আইসোটোপ। অন্যদিকে, ভারী পানিতে এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর বদলে থাকে ডিউটেরিয়াম, যা হাইড্রোজেনের একটি ভারী আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের পরমাণু ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের চেয়ে দ্বিগুণ। এজন্য D₂O দেখতে পানির মতো হলেও এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ইত্যাদি আলাদা। ভারী পানি পরমাণু চুল্লিতে নিউট্রন মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে সপ্তম দিনে গড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। চলমান এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
এদিকে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি কিছুটা হ্রাস পাওয়ার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের জনগণের ওপর দেওয়া কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে তেল আবিব। এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার তেহরানসহ ইরানের অন্যান্য এলাকায় বিমান হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
তবে এরই মধ্যে ইসরায়েলের হামলা ইরানের নাতানজে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, তেহরান ঘিরে সেন্ট্রিফিউজ কারখানা ও ইসফাহানের একটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এক ইরানি মানবাধিকার গোষ্ঠীর তথ্যমতে, ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।
জবাবে ইরান প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে। যার ফলে সেখানে অন্তত ২৪ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলের আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের।
ভারী পানির চুল্লিতে হামলার প্রস্তুতি কেন?
আরাক ভারী পানির চুল্লিটি তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। ভারী পানি পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা করতে সহায়তা করে, তবে এটি একটি উপজাত হিসেবে প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করে, যা পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
এর অর্থ, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হয়, তাহলে এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বাইরে আরেকটি বোমা তৈরির পথ হতে পারে। এর আগে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ইরান এই স্থাপনাটির নকশা পরিবর্তনে সম্মত হয়, যাতে এটি পারমাণবিক বিস্তার সংক্রান্ত উদ্বেগ হ্রাস করে।
তবে ২০১৯ সালে সেই চুক্তি লঙ্ঘন নার করেই ইরান এই হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের সেকেন্ডারি সার্কিট চালু করে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বের করে নেন ট্রাম্প। ব্রিটেন তখন রিঅ্যাক্টরটির নকশা পরিবর্তনে ইরানকে সহায়তা করে।
এদিকে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। সংস্থাটির পরিদর্শকরা সর্বশেষ গত ১৪ মে আরাক পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।
তবে ইরানের ওপর নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় ভারী পানি উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি আইএইএ। ২০১৫ সালের চুক্তির আলোচনার অংশ হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে ভারী পানি বিক্রির শর্তে রাজি হয়েছিল ইরান।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও একপর্যায়ে প্রায় ৮০ লাখ ডলারে ৩২ টন হেভি ওয়াটার কিনেছিল। সে সময় এ বিষয়টি চুক্তির সমালোচকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
১৭৯ দিন আগে
ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইরানের আকামসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত পাঁচদিন ধরেই ইরানের সামরিক ও ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে জায়নবাদী ইসরায়েল।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের আকাশসীমার উপর ‘সম্পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ দাবি করেছেন। তবে পাল্টা দাবিও করেছে ইরান। বলেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত পাঁচদিনে ইরানের ১ হাজার ১০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ‘ইরানের আকাশসীমার উপর এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ ‘ইরানের কাছে ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম প্রচুর পরিমাণে ছিল। কিন্তু আমেরিকার তৈরি সরঞ্জামের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ব্যাপক অভিজ্ঞ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো আর কেউ এটি করতে পারে না।’
পড়ুন: ইরানের নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নিশ্চিত করার একদিন পর এই মন্তব্য করা হলো যে, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। এই পদক্ষেপটিকে তিনি ও ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘প্রতিরক্ষামূলক’ বলে দাবি করেছেন। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে আমেরিকান বাহিনী যোগ দিতে পারে বলে জল্পনা-কল্পনাও রয়েছে।
সোমবার (১৫ জুন) একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা আনাদোলুকে বলেন, হেগসেথ ‘আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রাখার এবং আমেরিকান কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার’ জন্য নেমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে সেন্টকম এলাকার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন।
শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েল বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। যার ফলে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়।
পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনী তা অস্বীকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি পেতে হবে।
সবশেষ বুধবার ইরানের পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েল।
১৮০ দিন আগে
ইরানের নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান
ইরানের নাগরিকদের তাদের স্মার্টফোন থেকে মেসেজিং ও ফোন অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। তেহরানের অভিযোগ, এই অ্যাপ ইসরায়েলে তথ্য পাঠানোর জন্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। তবে নিজেদের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থান করেনি তেহরান কর্তৃপক্ষ।
তবে ইরানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ওই বার্তা সম্প্রচার হওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, যে সময়ে মানুষের এই ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়ে এ ধরনের ভুয়া প্রতিবেদনের তথ্যকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আমাদের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তাদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো কোনো মধ্যবর্তী সেবা প্রদানকারী বার্তাগুলো পড়তে পারে না।
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার কী ক্ষয়ক্ষতি হল
বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানায়, তারা ব্যবহারকারীদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান অনুসরণ করে না; কাদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান চলছে, তার তথ্যও রাখে না এবং ব্যক্তিগত বার্তাগুলোও অনুসরণ করে না। কোনো সরকারের কাছে গণহারে তথ্য সরবরাহ করে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হোয়াটস্যাপ।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অর্থ হচ্ছে, বার্তাগুলো এমনভাবে গোপন করা হয় যে কেবল প্রেরক ও প্রাপকই তা পড়তে পারে। কেউ যদি বার্তাটি মাঝপথে ধরে ফেলে, তবে তারা কেবল একটি অসংগঠিত অক্ষরের ঝাঁক দেখতে পাবে যা সঠিক নিরাপত্তা চাবি (Security Key) ছাড়া উদ্ধার (Decode) করা সম্ভব নয়।
তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে এমন কিছু মেটাডেটা বোঝা সম্ভব যা এনক্রিপ্ট করা হয় না, এটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। এতে বোঝা যায়, মানুষ কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করছে। এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এ কারণে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে আগ্রহী হন না।’
গ্রেগরি আরও বলেন, “আরেকটি সমস্যা হলো ‘ডেটা সার্বভৌমত্ব’, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য হোস্ট করা ডেটা সেন্টারগুলো প্রায়ই সেই দেশে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, এটি পুরোপুরি সম্ভব যে ইরানের হোয়াটসঅ্যাপ তথ্য ইরানে হোস্ট করা হচ্ছে না।”
প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তাদের তথ্য দেশেই সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি। বৈশ্বিক তথ্য অবকাঠামোর ওপর বিশ্বাস রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
হোয়াটসঅ্যাপের মালিক মেটা, যেটি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি। ইরানে ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ছিল।
আরও পড়ুন: মোসাদের দুই গোয়েন্দাকে গ্রেপ্তারের দাবি ইরানের
এর আগেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইরান। তবে দেশটির অনেকেই এখনো প্রক্সি ও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন।
২০২২ সালে দেশটিতে নীতি পুলিশের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলাকালে হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগল প্লে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এই নিষেধাজ্ঞা গত বছরের শেষ দিকে তুলে নেওয়া হয়।
১৮০ দিন আগে
ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ আহ্বানের পর ইরানে তীব্র হামলা ইসরায়েলের
তেহরানকে লক্ষ্য করে আবারও বড় পরিসরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানকে ‘নিঃশর্তে আত্মসমর্পণের’ দাবি জানানোর পরই এ হামলা চালানো হয়। এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ জুন) ভোরে তেহরানে তীব্র হামলা চালায় ইসরায়েল। ভোর ৫টার দিকে তেহরানের পূর্বাঞ্চলীয় হাকিমিয়েহ এলাকার প্যারামিলিটারি রেভল্যুশনারি গার্ডের একটি অ্যাকাডেমিতে হামলার কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
হামলায় প্যারামিলিটারি রেভল্যুশনারি গার্ডের খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের প্রধান জেনারেল আলী শাদমানিকে হত্যারে দাবি করেছে ইসরায়েল। জেনারেল আলী শাদমানিকে ইরানের সর্বোচ্চ জীবিত সামরিক কমান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তেল আবিব।
হামলার আগেই অবশ্য মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণের একটি এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল। ওই এলাকায় আবাসিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে, এ হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান সরকার।
ট্রাম্পের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও ইরানের আত্মসমর্পণের দাবি
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমান পাঠানোর পরই সংঘাত নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেন ট্রাম্প। একদিকে তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন তা যুক্তরাষ্ট্র জানে। আবার তিনিই বলেন ‘অন্তত এই মুহূর্তে’ তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেই।
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার কী ক্ষয়ক্ষতি হল
ট্রাম্পের এমন বক্তব্য চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতের কারণে এক দিন আগেই কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন ট্রাম্প।
সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে নেই। আমরা যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছুর দিকে চেয়ে আছি।’
ঠিক কীসের দিকে চেয়ে আছেন—তা স্পষ্ট করতে তিনি জানান, ইরানের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এই সংঘাতের একটি প্রকৃত সমাপ্তি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া তিনি খুব একটা আলোচনার মেজাজে নেই বলেও জানান সাংবাদিকদের।
অবশ্য কূটনৈতিক আলোচনা এখনও একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনায় আছে বলেও আবার মন্তব্য করেন ট্রাম্প। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পাঠাতে পারেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে, ইরানের হামলা প্রতিরোধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে ইরানের হুমকির জবাব দিতে মধ্যপ্রাচ্য ও এর আশপাশে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের
বুধবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বিশ্লেষণ করা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহরের সদর দপ্তরের আশপাশে কোনো জাহাজ নোঙর করে রাখা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজ ছড়িয়ে দেওয়া একটি প্রচলিত নৌ-কৌশল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়, ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার ফোনে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও করেছেন।
এর আগে, সোমবার (১৬ জুন) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়ানোর আগেই তেহরানবাসীদের শহর খালি করার আহ্বান জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে।
তেহরান খালি করার কথা কেন বলেছেন জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুধু চাই, মানুষ নিরাপদ থাকুক।’
প্রতিশোধের হুমকি ইরানের
তেহরান খালি করা নিয়ে ট্রাম্পের পোস্টের বিষয়ে ইরান তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দেশটির সামরিক নেতারা জানিয়েছেন, শিগগিরই আরও হামলার মুখোমুখি হবে ইসরায়েল।
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদুল রহিম মৌসাভি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানগুলো শুধুই সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ছিল। তবে খুব শিগগিরই ইসরায়েলকে শাস্তি দিতে হামলা চালানো হবে।’
এদিকে, ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর সেখানের জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার আহ্বান জানায় ইরান।
যদিও তেহরানের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোর কাছে তাৎক্ষণিক কোনো হতাহতের খবর নেই বলে জানিয়েছে তেল আবিব।
তবে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে মরুভূমির শহর ডিমোনায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। ওই এলাকাটি ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। অবশ্য তেল আবিব কখনো এই স্বীকৃতি দেয়নি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
অন্যদিকে, পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস শুক্রবার (২০ জুন) পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে ইরান
এপির খবরে বলা হয়েছে, ইরানি জনগণকে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ সীমিত করতে দেশটির কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। হামলার মধ্যে ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, ল্যান্ডলাইন ফোনে আন্তর্জাতিক কল করা বা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস (NetBlocks) জানিয়েছে, তারা দেশটি থেকে ইন্টারনেট ট্রাফিকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস শনাক্ত করেছে।
ইরানের সাইবার নিরাপত্তা কমান্ড রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে ইন্টারনেট সীমিত করার বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, এই পদক্ষেপ শত্রুদের ‘সাইবার ও সামরিক অভিযান চালাতে অবকাঠামো ব্যবহারের পথ বন্ধ’ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
অতীতেও জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলন ও ১৯৮০-র দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল ইরান।
বর্তমানেও আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ বলে মনে হচ্ছে, তবে স্থানীয় ওয়েবসাইটগুলো চালু আছে। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ইরান তার ‘হালাল নেট’ চালু করেছে। এটি স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা, যা জনসাধারণের দেখার পরিধি সীমিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি।
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জনগণকে তাদের মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে। তেহরানের অভিযোগ, এই অ্যাপ ইসরায়েলে তথ্য পাঠানোর জন্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে নিজেদের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থান করেনি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, নিহত ৫
এই অভিযোগের পর এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, যে সময়ে মানুষের এই ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়ে এ ধরনের ভুয়া প্রতিবেদনের তথ্যকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আমাদের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।
পারমাণবিক স্থাপনায় আরও ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাল আন্তর্জাতিক সংস্থা
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে যে ইসরায়েলের প্রথম দফার বিমান হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রটিতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।
শুক্রবারের হামলার পর সংগ্রহ করা স্যাটেলাইট চিত্রে ‘ভূগর্ভস্থ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কক্ষে সরাসরি আঘাতের ইঙ্গিতকারী অতিরিক্ত উপাদান’ দেখা গেছে বলে জানায় সংস্থাটি।
আইএইএ এর আগে জানিয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় নাতাঞ্জের একটি ভূপৃষ্ঠস্থ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং সেই স্থাপনার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়েছে। এই স্থাপনাটি তেহরান থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
ইরান তাদের অধিকাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কাজ ভূগর্ভে করে থাকে যাতে বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ইসরায়েল বহুবার নাতাঞ্জে হামলা চালিয়েছে এবং দাবি করেছে যে তারা এর ভূগর্ভস্থ কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ১০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এগুলো ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে।
ইরান দাবি করে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও মূল্যায়ন করেছে যে, ২০০৩ সালের পর থেকে তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো সংগঠিত প্রচেষ্টা নেই।
তবে আইএইএ বারবার সতর্ক করেছে যে, ইরানের কাছে এতটাই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ আছে যে চাইলে তারা কয়েকটি পরমাণু বোমা বানাতে পারে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখান ইরানের
নেতানিয়াহু সোমবার দাবি করেন, ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘অনেক, অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য’ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ইরানের ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটিতে পৌঁছাতে পারেনি ইসরায়েল, যেটি একটি পাহাড়ের গভীরে নির্মিত।
ফোরদোয় হামলা চালাতে হলে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বি-২ স্টেলথ বোমার প্রয়োজন হবে, যেগুলো ‘বানকার-বাস্টার’ বোমা ফেলতে পারে। ৩০ হাজার পাউন্ড (১৪ হাজার কেজি) ওজনের জিবিইউ-৫৭ (GBU-57) ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর তার ওজন ও গতির জোরে গভীর ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
ইসরায়েল বলছে, এই ব্যাপক হামলা চালানো জরুরি, যেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কাছাকাছি আর পৌঁছাতে না পারে।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছে তেহরান। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৮০ দিন আগে
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার কী ক্ষয়ক্ষতি হল
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। দুই দেশের অনড় অবস্থানের কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার (১৩ জুন) প্রথমবারের মতো ইরানের শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশ নিজেদের প্রতিশোধের নেশায় যুদ্ধে নেমেছে। শক্তির প্রদর্শন করে লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া দুপক্ষই।
ইরানের ক্ষয়ক্ষতি
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে তুলনামূলক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশিই হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। চলমান এই সংঘাতে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ইরানের ৫ জন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে আছেন দেশটির অভিজাত বাহিনী আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালেমি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ইনচার্জ ঘোমালি রশিদ, আইআরজিসির বিমান বাহিনীর কমান্ডার আলী হাজিদাদেহ, আইআরজিসির গোয়েন্দা শাখার প্রধান মো. কাজেমী।
এছাড়াও ইসরায়েলের হামলায় দেশটির ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পরমাণু জ্বালানি সংস্থার (এইওআই) সাবেক প্রধান ফিরেদুন আব্বাসি ও তেহরানের ইসলামি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মেহদি তেরাঞ্চি এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি একজন ইরানি তরুণ কবি ও তার পুরো পরিবার।
পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেহরানে বাংলাদেশিদের নিরাপদে স্থানান্তরের উদ্যোগ
অপরদিকে, ইসরাইলে ইরানের হামলায় ২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, গতকাল পর্যন্ত, গত কয়েক দিনে ইরান প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের প্রতিটি হামলায় ৩০ থেকে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। তবে ইরানের দাবি, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা।
ইসরাইলের শহরগুলোতে জরুরি মুহূর্তের জন্য বাংকার ব্যবস্থা থাকায় তুলনামূলক ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। এছাড়া আয়রন ডোমের মতো তিন ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করছে। কারণ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অনেকাংশ আয়রন ডোমের বাধার মুখে পড়ে ইসরায়েলে প্রবেশের আগেই ধ্বংস হয়ে যায়।
১৮১ দিন আগে
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেহরানে বাংলাদেশিদের নিরাপদে স্থানান্তরের উদ্যোগ
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরানের রাজধানীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশিদের তেহরানের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে, ইরান ছেড়ে (বিমানপথে) যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা তাদের (বাংলাদেশিদের) নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়েছি।’
মিশনের কাছে থাকা তহবিল দিয়ে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, কারণ তারা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তবে সিদ্দিক বলেন, প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই কারণেই প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তরে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
সিদ্দিক বলেন, নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনা করে ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যেই তার বাসস্থান ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ১০০ জন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
সিদ্দিক বলেন, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং আবাসনের খরচ তাদের সরকার বহন করবে। এছাড়া যদি কেউ স্থলপথে ইরান ছাড়তে চায় সেক্ষেত্রে তাদের পাকিস্তান বা তুরস্ক হয়ে বাইরে পাঠানো যাবে কিনা তা তারা খতিয়ে দেখবে।
তেহরানে বাংলাদেশ মিশনে ৪০ জন কর্মী রয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা সকল উপায় অনুসন্ধান করছি।’ তারা ইরানসহ বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সহায়তা চাইছেন।
এই বিষয়ে মিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
চ্যান্সেরিটি নিরাপদ নয় এবং এর এক কিলোমিটারের মধ্যে সংবেদনশীল অবকাঠামো (তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র) অবস্থিত। গত কয়েকদিনে এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তেহরানের দুটি যোগাযোগ (ইন্টারনেট) কেন্দ্রের মধ্যে একটি চ্যান্সারির খুব কাছে অবস্থিত।
দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই অবকাঠামোগুলোতে যেকোনো আক্রমণের ফলে ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে, ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজনদের জানানো হয়েছে যে, তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য একটি হটলাইন চালু করেছে।
ইরানে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজন জরুরি পরিস্থিতিতে দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিম্নলিখিত মোবাইল ফোন নম্বরগুলিতে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন-
বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান হটলাইন:
১. +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮২. +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা হটলাইন:
+৮৮০১৭১২০১২৮৪৭
ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা ২০০০ এরও কম এবং তাদের অনেকেই সেখানে বিয়ে করেছেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
১৮১ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েল হামলা চালানোর পর থেকেই ইমাম খোমেনি হাসপাতালে আহতদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় হামলার পর হাসপাতালটিতে হতাহতদের ঢল নামে। জরুরি বিভাগের বিভীষিকাময় এই পরিস্থিতিকে এক চিকিৎসক বর্ণনা করেছেন ‘রক্তস্নান’ হিসেবে।
দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি হামলার ভয়বহতার কথা এভাবেই বর্ণনা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ‘যেন এক রক্তস্নান শুরু হয়েছে আমাদের হাসপাতালে। চারদিকে শোকাতুর আত্মীয়-স্বজনের চিৎকার আর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। অসংখ্য জীবন-সঙ্কটাপন্ন। আহত, ছোটখাটো আঘাত পাওয়া, এমনকি লাশ পর্যন্ত আনা হয়েছিল।’
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘর্ষ চতুর্থ দিনে গড়ালে ইরানের হাসপাতালগুলোতে একের পর এক হতাহতদের নিয়ে আসা শুরু হয়। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ছে। রোগীর চাপ সামলাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আহতদের সংখ্যা বেড়ে চলায় নাজেহাল হয়ে পড়ছে তেহরানের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা।
সাক্ষাৎকারে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক, এমনকি বৃদ্ধদেরও আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসতে দেখেছি। রক্তে ভিজে সন্তানকে নিয়ে ছুটে আসছেন মা। অনেক বাবা-মা তো বুঝতেই পারছেন না যে তারাও আহত। সন্তানকে কোল থেকে নামিয়ে রাখার পর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বসে পড়ছেন তারা।’
আহতদের মধ্যে উরুর হাড় ও কোমরের নরম টিস্যুতে ধাতব টুকরো প্রবেশ, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং মারাত্মক আকারে দগ্ধ হওয়ার মতো আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানান তিনি। ইসরায়েলের বোমার আঘাতে আহত হয়ে এবং বস্তুর ধারালো টুকরোর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মানুষজন হাসপাতালে ছুটে আসেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েল ওই অপারেশনের নাম দেয় রাইজিং লায়ন। এর পরপরই পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান। তারপর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত হাসপাতালগুলোতে অন্তত ১ হাজার ২৭৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানান ইমাম খোমেনি হাসপাতালের ওই চিকিৎসক। তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে আরও শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ছোটখাটো আঘাতপ্রাপ্তদের অন্য ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আহত বা নিহতের সংখ্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট না করার জন্য আইসিইউ-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ডিউটির তালিকা বিভাগীয় প্রধানদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নিহত ও আহতদের সংখ্যা জানতে চাইলে তেহরানের কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তেহরানভিত্তিক এক সাংবাদিকও।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন কেরমানপূর বলেন, আহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কেবল ইরান সরকারের মালিকানাধীন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
গতকাল একটি বিমানঘাঁটিতে সফরকালে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যখন তেহরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে রাখি, তখন আমরা শুধু শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করি। ইরানের অপরাধী সরকার যেমন আমাদের নাগরিকদের, শিশু ও নারীদের হত্যা করতে আসে, আমরা তেমনটি করি না।’
অন্যদিকে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায় আঘাত হানার ফলে ইসরায়েলে অন্তত শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। আর ইরানের কেরমানশাহর একটি হাসপাতালে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেহরানের পশ্চিমে অবস্থিত কারাজ শহরের একটি হাসপাতালের এক কর্মী জানান, ‘হাসপাতালে অনেক লাশ আছে, তবে তারা কারা সেটি আমি বলতে পারছি না। আমি শুধু যতটা সম্ভব জীবন বাঁচাতে চাই।’
আবাসিক এলাকায় হামলা চালানোর জন্য তিনিও ইসরায়েলের ওপর দোষারোপ করেন। এমনকি ইরান সরকারও বেসামরিকদের জীবনের প্রতি খুব একটা যত্নবান নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খাওয়া-দাওয়ার সময় পর্যন্ত পাইনি। সকাল পার হলে আরও লাশ আসবে বলে ভয় হচ্ছে আমার।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, সোমবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান করতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে অনুরোধ করেছে ইরান। তবে সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি।
এদিকে, দুঃস্বপ্নের মতো এই যুদ্ধে আহতদের সেবা দিতে গিয়ে ভয়াবহ এক সময় পার করছেন ইরানের স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ইমাম খোমেনি হাসপাতালের ওই চিকিৎসক বলেন, ‘গত তিন দিনের পরিস্থিতি আমাকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের ভয়ঙ্কর সব স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। আঘাতগুলো ভয়ানক; আমার মনে হচ্ছে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের পাশে কোনো অস্থায়ী হাসপাতালে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন: অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের
১৮১ দিন আগে
অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়ানোর আগেই তেহরানবাসীদের শহর খালি করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (১৬ জুন) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে।
ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ইরান আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটি দুঃখজনক ও অনর্থক প্রাণহানি। পরিষ্কার করে বলছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করতে পারে না। আমি বারবার এটি বলেছি!’
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা
গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইরানে একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল; জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
টেলিভিশনটির প্রচারিত সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যেই শুরু জি-৭ সম্মেলন
বার্তা সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে টেলিভিশন ভবন কেঁপে ওঠে এবং বিস্ফোরণের শব্দে দৌড়ে স্টুডিও ছাড়তে বাধ্য হন এক নারী প্রতিবেদক।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনের ওপর হামলার আগে তেহরানের মধ্যাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে শহর ছাড়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই স্টেশনটি ইরানি সামরিক তৎপরতার জন্য একটি ঢাল হিসেবে কাজ করছিল।
এ ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘অনেক, অনেক বছর’ পিছিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ইরান সরকারের উৎখাত ইসরায়েলের লক্ষ্য নয়, তবে এই হামলার ফলেই যদি তা ঘটে যায়, তাতে তার অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রতিদিন যোগাযোগ হচ্ছে।
এদিকে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দোতে হামলা চালাতে যে ধরনের বোমার প্রয়োজন, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লাইটার।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, নিহত ৫
সোমবার মেরিট টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাইটার বলেন, ‘আকাশ থেকে ফোর্দোকে ধ্বংস করতে হলে যে বোমা দরকার, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নেবে যে তারা এই পথে এগোবে কি না।’
হামলায় সম্প্রচারকর্মী নিহত
সোমবার ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার এক কর্মী নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত কর্মীর নাম মাসুমে আজিমি। তবে তিনি ঠিক কোন হামলায় মারা গেছেন—সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
ইসরায়েলের দুটি টিভি চ্যানেলের কার্যালয় খালি করার হুমকি
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলার পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম ফার্স ও মেহরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান জানায়, ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ ও চ্যানেল ১৪-এর প্রধান কার্যালয় দ্রুত খালি করা উচিত। কারণ সেগুলোতে হামলা চালানো হতে পারে।
পঞ্চম দিনে ফের পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু
এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে এই সংঘাত এবং ভোর থেকেই পাল্টাপাল্টি হামলায় মেতে উঠেছে দুই দেশ।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইসরায়েলের দিকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলার কথা জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৩৯ মিনিটে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক করত সাইরেন বাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখান ইরানের
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করুন।’
১৮১ দিন আগে
ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, নিহত ৫
ইসরায়েলে আরও এক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-ইরানের চলমান উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৬ জুন) ভোরে এই হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি সেবার কর্মকর্তা মাগেন দাভিদ আদোম এই হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া, এই হামলায় তেল আবিবের মার্কিন দূতাবাসের অবকাঠামোগত সামান্য ক্ষতি হলেও সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে সামাজিকমাধ্যম এক্সে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন দূত মাইক হাকাবি।
এদিকে, ইসরায়েলে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার দাবি করেছে তেহরান। ইসরায়েলের চালানো হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত ২২৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর জবাবেই ইসরায়েলে হামলার কথা জানিয়েছে তেহরান।
এদিকে, সোমবারের হতাহতের পর ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এই হামলার জবাবে ইরানের কুদস বাহিনীর ১০টি কমান্ড সেন্টার জীবাণুমুক্ত করার জন্য আক্রমণ চালানোর দাবি করেছে তেল আবিব।
কুদস বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট, যা বিদেশি অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
এদিকে, ইরানের হামলায় তেল আবিবের নিকটবর্তী পেতাহ তিকভা শহরে স্থানীয়রা জানান, সেখানে একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি আঘাতে কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ও জানালা ভেঙে গেছে।
মাগেন দাভিদ জানান, নিহতদের মধ্যে দুইজন পুরুষ এবং দুইজন বুদ্ধ নারী, সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি। এছাড়া আরও ৮৭ জন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একজন নারী গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে কোনো যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনা করবে না বলে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে স্পষ্ট জানিয়েছে ইরান। তবে অভিযান আরও কঠিন হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও কঠোর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তেহরান বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা ‘নরকের দরজা খুলে দেবে’।
এদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে দেশটিতে ইসরায়েলের হামলায় দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ২০০ মানুষ।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে রানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রাইজিং লায়ন। এর পর পরই পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে ইসরায়েল। ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপ পর্যন্ত না পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
তবে এ অভিযানকে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। এ ছাড়া, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না বলে দাবি করেছে তারা।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখান ইরানের
১৮২ দিন আগে