বিশ্ব
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যেই শুরু জি-৭ সম্মেলন
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ও চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য বিরোধের মধ্যেই জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডার রকি পর্বতমালায় একত্রিত হয়েছেন গোষ্ঠীটির বিভিন্ন নেতারা।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই এই সম্মেলন শুর হয়।
এদিকে, এক মার্কিন কর্মকর্তাই বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেটোয় সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তবে নিঃসন্দেহে এ তথ্যটি ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা নির্দেশ করে।
চলমান এই সংঘাত নিয়ে সম্মেলনে তীব্র আলোচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তাছাড়া সম্মেলনের আগেও তিনি ট্রাম্প ও ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বকলে জানান।
এবারের সম্মেলনের আয়োজক ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকায় কোনো সম্মেলন নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবেনা। যদিও এই বিবৃতি জি-৭-এর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য।
এ ছাড়া,সম্মেলনের আগে গ্রিনল্যান্ড সফর করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। এ সময় ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন তিনি। ম্যাঁখো বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যও নয়।’
রবিবার সন্ধ্যায় আলবার্টায় পৌঁছান ট্রাম্প। আজ (সোমবার) কার্নির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক সেশন।
ব্যাপক অংশগ্রহণ, পুরনো উত্তেজনা
ভারত, ইউক্রেন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারাও সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন। এবার বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী শুল্ক কৌশল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে ট্রাম্প বলেন, সম্মেলনে নতুন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।
তবে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কিছু নেতার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। এর আগে ইউক্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে তার ওপর।
ট্রাম্প সম্পর্কে সাবেক কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রেতিয়ান নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি ট্রাম্প মনোযোগ আকর্ষণে কোনো দৃশ্য তৈরি করতে চান, করতে দিন। শান্ত থাকুন ও নিজের কাজ চালিয়ে যান।’
গত মাসে যানবাহন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক কমাতে প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, তবে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত— ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া নার জানানোয় কানাডিয়ানদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছেন স্টারমার।
এর জবাবে স্টারমার বলেন, ‘কানাডা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ এবং কমনওয়েলথের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’ এ ছাড়া, সম্মেলনের আগে ওটোয়ায় কার্নির সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন স্টারমার।
অন্যদিকে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ওভাল অফিসের বিতর্কিত বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের আবার বৈঠকের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর বিশ্ববাজার ও ওয়াল স্ট্রিটে পতন হয়েছে ও তেলের দাম বেড়েছে।
জার্মান কর্মকর্তারা জানান, সম্মেলনটি ‘জি-৬ বনাম ট্রাম্প’ হয়ে উঠবে এমন জল্পনা ভিত্তিহীন, কারণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য বিদ্যমান।
তবে ক্রেতিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কী করবেন, তা তার মেজাজ বা সংবাদ শিরোনামে থাকার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে—এটাই সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দিক।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখান ইরানের
১৮২ দিন আগে
ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখান ইরানের
ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে কোনো যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনা করবে না বলে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে স্পষ্ট জানিয়েছে ইরান। চলামান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের এ অবস্থানে বড় সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যস্থতার আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘কাতার ও ওমানকে ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ‘তারা কেবল তখনই বাস্তবিক অর্থে আলোচনায় বসবে, যখন ইসরায়েলের চালানো হামলার জবাব সম্পূর্ণ হবে।’
সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ইরান বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে, শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েল একটি আকস্মিক হামলা শুরু করে। ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় এবং দেশটির পারমাণবিক অবকাঠামোরও কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে অভিযান আরও কঠিন হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও কঠোর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তেহরান বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা ‘নরকের দরজা খুলে দেবে’। এই পরিস্থিতিতে চলমান সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে, কিছু গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য কাতার ও ওমানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করতে বলেছে ইরান। এই সংবাদ সঠিক নয় বলে জানান নাম প্রকাশ না করা ওই কর্মকর্তা।
তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান, কাতার ও ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে ওমান। যদিও ইসরায়েলের সর্বশেষ বিমান হামলার পর সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনা বাতিল হয়েছে। তাছাড়া, কাতারও উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ সহজ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে, এর মধ্যে ২০২৩ সালে একটি বন্দি বিনিময়ের মধ্যস্থতাও ছিল।
কাতার ও ওমান উভয়ই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এরপর ইসরায়েলের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগে যুক্ত হয় এই দেশ দুটি।
১৮২ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধানসহ আরও দুই জ্যেষ্ঠ জেনারেল নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তেহরান সরকার। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলি-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
তেহরানসহ অন্যান্য ইরানের অন্যান্য শহরে টানা তৃতীয় দিনের ইসরায়েলি হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নতুন করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ইসরায়েল যদি তাদের আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে তেহরানও প্রতিক্রিয়া বন্ধ করবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানী তেহরানসহ দেশটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলা শুরু পর থেকে এ পর্যন্ত ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এক ডজনের বেশি নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানেরও পাল্টা জবাব
১৮২ দিন আগে
খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল ইসরায়েলের, আটকে দেন ট্রাম্প
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেটোয় সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। খোদ এক মার্কিন কর্মকর্তাই বার্তা সংস্থা এপিকে এই বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল যে তারা খামেনিকে হত্যার একটি ‘সুগঠিত পরিকল্পনা’ তৈরি করেছে। কিন্তু পরিকল্পনাটি (যুক্তরাষ্ট্রের কাছে) উপস্থাপনের পর হোয়াইট হাউস ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, ট্রাম্প এই পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী।
এমন সময়ে এই খবর সামনে এলো, যখন ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং গত তিন দিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে।
ইসরায়েলের পরিকল্পনায় ট্রাম্প কেন সায় দেননি, সে বিষয়ে তিনি জানান, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামাতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান যাতে বড় ধরনের যুদ্ধের রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করতেই কাজ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারত, যার ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল।
আরও পড়ুন: ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
মার্কিন কর্মকর্তার ওই মন্তব্যের পর ফক্স নিউজের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। তবে এ নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের যা করা প্রয়োজন মনে করি, তা করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব। আর আমার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রও জানে তাদের কী করা উচিত।’
পরে অবশ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র ওমের দোস্ত্রি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার খবর ‘ভুয়া’ বল দাবি করেন।
ফক্স নিউজের ওই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু ইরানের শাসনব্যবস্থাকে ‘খুব দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, চলমান সংঘাতের ফলে দেশটির সরকারে পরিবর্তন আসতে পারে।
খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা ট্রাম্প নাকচ করে দেওয়ার খবর প্রথম প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রবিবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইরানে ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই।’ অন্যদিকে, ইরানের দাবি, ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এই হামলার দায় তারা এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইরান যদি আমাদের ওপর কোনো ধরনের হামলা করে, তাহলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী এমন শক্তি প্রয়োগ করবে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব: ট্রাম্প
এর কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য সুর পাল্টে ফেলেন ট্রাম্প। তখন তিনি বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল চুক্তিতে পৌঁছাবে এবং যেকোনো সময় তা হতে পারে।’
স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডার রকি পর্বতমালার উদ্দেশে রওনা হন ট্রাম্প। সে সময় হোয়াইট হাউসের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি কিছুটা সংযতভাবে বলেন, ‘আমি আশা করি একটি চুক্তি হবে। তবে দেখা যাক কী হয়! অনেক সময় লড়াই করেই সমাধানে পৌঁছাতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, সংঘাত নিরসনে তার রেকর্ড আছে। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে থামিয়েছিলেন তিনি, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনাও সেভাবে কমাতে পারবেন।
১৮২ দিন আগে
ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
ইরানের ভেতরে একটি গোপন ড্রোন তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র থেকে এমন দাবি করা হয়েছে। সেখান থেকে পরিচালিত বিস্ফোরক ড্রোন হামলাতেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ইরানে তখন গভীর রাত। মুহূর্তের মধ্যেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে আগুনের ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ। এরপরই শুরু হয় ধারাবাহিক হামলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় হামলার মুখোমুখি হয়েছে ইরান। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের জন্য এ অভিযান চালানো হয়। গোয়েন্দা সূত্র মতে, শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যখন তাদের অপারেশন রাইজিং লায়ন বা জেগে ওঠা সিংহ শুরু করে, তখনই ড্রোনগুলো সক্রিয় করে মোসাদ।
এরপর তারা ইসরায়েলের দিকে তাক করে রাখা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণস্থলগুলোতে হামলা চালিয়ে অকোজো করে দেয়। এতে, ইসরায়েল বিনা প্রতিরোধেই হামলা চালাতে থাকে।
হামলায় ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজ, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, শীর্ষ তিন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইরানের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখার কৌশলের অংশ।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
ব্রিটিশ-ইসরায়েল কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (বিআইকম) জানিয়েছে, মোসাদের ইউনিটগুলো ইরানের ভেতরে থেকেই ভূমি থেকে আকাশে ও ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা লক্ষ্য করে নির্ভুলভাবে হামলা পরিচালনা করেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ মোসাদের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজের বরাতে জানায়, ফুটেজে কিছু মুখোশ পরা ব্যক্তিকে রকেট লঞ্চার বসাতে দেখা যায়, যা পরে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই অপারেটররা তেহরানের আশেপাশে লক্ষ্যস্থলগুলোতে ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী ট্রাকও ছিল। সাদাকালো ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা, একটি এলাকায় খোলা মাঠে বসে আইডিএফের হামলা শুরুর অপেক্ষা করছেন।
ইসরাইলের কৌশলগত সক্ষমতা
ইসরায়েলের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রকাশিত তথ্যগুলোকে ইসরায়েলের গোপন অভিযানগুলোর বিস্তৃতি ও গভীরতা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশটির সক্ষমতা নিয়ে এক ধরনের কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি সঠিক হলে এটি নজিরবিহীন একটি কৌশলগত সক্ষমতা হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ অভিযানে নজরদারি, গোয়েন্দাগিরি এবং অস্ত্রশক্তি মিলিয়ে সমন্বিত আক্রমণ চালানো হয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েল কতদূর যেতে পারে তার ইঙ্গিত এটি।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথু সাভিল বলেছেন, ‘মোসাদের অপ্রচলিত কার্যক্রমের সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো ইসরায়েলের গুপ্তচরবৃত্তি দক্ষতার প্রমাণ, যার মাধ্যমে তারা ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছে। এরপর স্বল্প সময়ে অপারেশন চালানোর ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।’
ইরানের ভূখণ্ডে এমন গোপন অবকাঠামো স্থাপন করতে ইসরায়েলের বহুবার গোপন মিশন পরিচালনা করতে হয়েছে। সঠিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত করার জন্য ইরানের সামরিক ও অস্ত্রব্যবস্থার অবস্থান সম্পর্কেও নির্ধারিত গোয়েন্দা তথ্যের প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুন: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেন এত বিতর্কিত?
এই হামলায় ইরানের তিনজন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিসহ সিনিয়র সামরিক নেতৃত্ব নিহত হয়েছেন, যা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সামরিক সক্ষমতাকে আরও দুর্বল করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় আঘাতের পাশাপাশি তারা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাকারীদেরও হারিয়েছে।
সাভিল বলেন, ‘এই হামলার ব্যাপ্তি ও পরিসর ইঙ্গিত দেয় যে, এই অভিযান শুধু ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অনুসরণ থেকে বিরত রাখার জন্য নয়, বরং সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া অক্ষম করা এবং শাসনব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার জন্যও পরিকল্পিত।’
শত্রু ভূখণ্ডে মোসাদের অভিযান নতুন নয়
শত্রু ভূখণ্ডে বিশেষ করে ইরানে মোসাদের সাহসী অভিযান চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কাসিম সুলেইমানিকে হত্যা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করে মোসাদ।
২০২২ সালে দুটি মোটরসাইকেলে আসা হত্যাকারী আইআরজিসি কর্মকর্তা কর্নেল সাইয়্যাদ খাদায়িকে গুলি করে হত্যা করে। ২০২৪ সালে ইসরায়েল তেহরানে আইআরজিসির অতিথিগৃহে বোমা স্থাপন করে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে।
সাম্প্রতিক হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ইঙ্গিত দিয়েছে আরও অনেক কিছু আসছে। ইসরায়েলের অপারেশন বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল ওডেড বাসিউক বলেন, ‘আমরা অপারেশনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা ভিতরে ছিলাম... ছয় মাস আগে এটি কল্পনার মতো মনে হত।’
তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য পরিকল্পনা, মহড়া এবং এখানে বসে যারা কাজ করেছে, তাদের পাশাপাশি যারা এখানে নেই তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব: ট্রাম্প
এ রাতের হামলাটিকে ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়কার মোসাদের অপারেশন ফোকাসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। ওই সময় ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল মিসরের বিমানবাহিনীর প্রায় সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছিল।
১৮৩ দিন আগে
এবার ভারতে যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত ৭
ভারতে এবার উড়াল দেওয়ার পরই বিধ্বস্ত হয়েছে যাত্রীবাহী একটি হেলিকপ্টার। এতে, পাইলটসহ সাত আরোহী নিহত হয়েছেন।রবিবার (১৫ জুন) সকালে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে এ ঘটনা ঘটে। রাজ্যের কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশী তীর্থস্থানের উদ্দেশে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় হেলিকপ্টারটি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড্ডয়নের মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নন্দন সিং রাজওয়ার জানিয়েছেন, ‘দুর্ঘটনার পর উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান চলছে।’অ্যারিয়ান অ্যাভিয়েশন নামের একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার সংস্থার পরিচালিত হেলিকপ্টারটি কেদারনাথ তীর্থপথের নিকটবর্তী একটি বনাঞ্চলে স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিধ্বস্ত হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাইলট ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকে আসা তীর্থযাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার পর আগুন ধরে যাওয়ায় মরদেহগুলো মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।
ভারতের অন্যতম চারটি তীর্থস্থানের একটি কেদারনাথ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী সেখানে ভ্রমণ করেন। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলটিতে পৌঁছাতে অনেকেই হেলিকপ্টার সেবার ওপর নির্ভর করেন।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনার শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাটি ঘটলো। মাত্র তিন দিন আগে গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দেশটির আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই যাত্রীবাহী এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল।
এ ঘটনায় বিমানে থাকা ২৩২ যাত্রী ও ১০ ক্রুর মধ্যে ২৪১জনই নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ২৭০ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিমানটি আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ছাত্ররা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় মেডিকেল হোস্টেলের ৫ শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।
১৮৩ দিন আগে
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে তেহরান হামলা না চালালে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হলে ইরানের ওপর সেনাবাহিনীর ‘পূর্ণশক্তি’ প্রয়োগ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এসব বলেন ট্রাম্প।তিনি বলেন, ‘ইরান যদি আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) ওপর কোনোভাবে আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণশক্তি ও ক্ষমতা তোমাদের (ইরান) ওপর এমনভাবে নেমে আসবে, যা পৃথিবী আগে কখনও দেখেনি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তবে আমরা সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারি এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি।’
যদিও চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি। এর আগে, রবিবার রাতে ইরানের বোমা হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে পৌঁছেছে বলে জনিয়েছে ইসরায়েলি উদ্ধারকারী দল। এছাড়া ১৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোসাদের দুই গোয়েন্দাকে গ্রেপ্তারের দাবি ইরানের
একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রবিবার ভোরে দুই দফায় ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভিযানে ইরানে প্রথম দিন ৭৮ জন নিহত হয়েছেন ও দ্বিতীয় দিনে আরও বহু মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানায় তেহরান। এর মধ্যে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৯টি শিশুসহ ৬০ জন মারা যাওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইরানের অস্ত্র স্থাপনার আশপাশে বসবাসকারী নাগরিকদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ আগামী দিনে ইরান যা দেখবে, ইসরায়েলের এ যাবতকালের হামলা তার কাছে কিছুই না।’
শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানী তেহরানসহ দেশটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল। আজ (রবিবার) ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের নির্ধারিত পারমাণবিক আলোচনাকে বানচাল করতেই ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং ইরান কেবল আত্মরক্ষার্থে জবাব দিচ্ছে বলেই মত দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানেরও পাল্টা জবাব এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার মধ্যে ওমানের আলোচনা সম্ভব নয়।’
তাছাড়া, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কেউ সহায়তা করলে, ওই দেশের সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে সতর্ক করেছে তেহরান।
ইসরায়েলের দাবি, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা এবং এর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে অকার্যকর করার জন্য এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।
এই অভিযান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি থামাতে না পারলেও একটি পূর্ণাঙ্গ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তির পথ খুলে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
এদিকে, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা রবিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় এলাকা জাফায় একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইরানের কোনো মিত্রের এটিই ছিল প্রথম সরাসরি হামলা।
তবে গাজায় ২০ মাসের যুদ্ধ এবং গত বছর লেবাননের সংঘর্ষে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক মিত্র হিজবুল্লাহকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার ফলে ইরানের পাল্টা জবাবের ক্ষমতা কমে এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের হামলার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্সের’ উৎপাদন আংশিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। এতে তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাউথ পার্স ক্ষেত্রটি ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশে অবস্থিত এবং এটি ইরানে উৎপাদিত গ্যাসের প্রধান উৎস।
আরও পড়ুন: ইরানে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০
তাছাড়া, ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের অভিযান কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। এমনকি ইরানের জনগণকে তাদের ইসলামি ধর্মীয় শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর ফলে এই সংঘাত আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং বাইরের শক্তিগুলোকেও জড়িয়ে ফেলবে—এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে ইসরায়েল। ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপ পর্যন্ত না পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
তবে এ অভিযানকে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। এ ছাড়া, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না বলে দাবি করেছে তারা। অবশ্য জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্যমতে, ইরান বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির আওতায় থাকা বাধ্যবাধকতাগুলো লঙ্ঘন করেছে।
১৮৩ দিন আগে
মোসাদের দুই গোয়েন্দাকে গ্রেপ্তারের দাবি ইরানের
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করা দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। রবিবার (১৫ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, আলবুর্জ প্রদেশে মোসাদের দুই গোয়েন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিস্ফোরক ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুত করছিল।
এদিকে ইরানের হয়ে কাজ করায় দুজনকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে ইসরায়েল। শনিবার টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে দাবি করা হয়, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রমের দায়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের ভেতরে একটি গোপন ড্রোন তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিল বলে দাবি করেছে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র। সেখান থেকে পরিচালিত বিস্ফোরক ড্রোন হামলাতেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ইরানে তখন গভীর রাত। মুহূর্তেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে আগুনের ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ। এরপরই শুরু হয় ধারাবাহিক হামলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় হামলার মুখোমুখি হয়েছে ইরান। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের জন্য এ অভিযান চালানো হয়।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) যখন তাদের অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করে, তখনই ড্রোনগুলো সক্রিয় করে মোসাদ। এরপর তারা ইসরায়েলের দিকে তাক করে রাখা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণস্থলগুলোতে হামলা চালিয়ে অকোজো করে দেয়। এতে, ইসরায়েল বিনা প্রতিরোধেই হামলা চালাতে থাকে।
১৮৩ দিন আগে
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানেরও পাল্টা জবাব
দুদিন ধরে পাল্টাপাল্টি সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) ভোরে ইরানে ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তার কিছু সময় পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলকে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরান।
আজ (রবিবার) সকাল না হতেই ইরানের জ্বালানি খাত এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েল। এর পরপরই, তেহরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, যাতে উত্তর ইসরায়েলের অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলের জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে।
তবে একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভোরে দুই দফায় ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে অন্তত ছয় ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
প্রথম হামলায় উত্তর ইসরায়েলের হাইফার কাছে একটি আবাসিক এলাকায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
অন্যদিকে, রাজধানী তেল আবিবে চালানো আরেক দফা হামলায় ৬০ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)। ওই এলাকায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া জুদিয়ান ফুৎহিলস অঞ্চলে আরও কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এমডিএর এক মুখপাত্র। তবে এই দাবিগুলোর কোনোটি এখন পর্যন্ত যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
ইরানের আধাসামরিক বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি) দাবি করেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোর জ্বালানি উৎপাদনকেন্দ্র। তবে ইসরায়েল এই দাবি স্বীকার করেনি।
অপরদিকে, ইরানে ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা তেহরানে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
রবিবার শেষ রাতের দিকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন উভয়েই ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নিশ্চিত করে। সেই সময়ই জরুরি বৈঠকে বসে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।
আরও পড়ুন: ইরানে ইসরায়েলের হামলা আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও
চলমান সংঘাতের মধ্যেই তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পূর্বনির্ধারিত আলোচনা বাতিল হয়েছে। ফলে এই লড়াইয়ের শেষ কোথায় এবং কীভাবে তা ঘটবে—এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘তেহরান জ্বলছে।’
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে ইরানের নেতৃত্বের সামনে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত—তারা কি আরও গভীর সংঘাতে জড়াবে, নাকি কূটনৈতিক পথ খুঁজবে।
১৮৩ দিন আগে
ইরানে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০
ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে ২০টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। শনিবার (১৪ জুন) এ হামলা চালানো হয়।
এছাড়াও আরও ইরানি সামরিক বাহিনীর দুজন জেনারেল নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। নিহতরা হলেন—জেনারেল গোলামরেজা মেহরাবি ও জেনারেল মেহদি রাব্বানি।
তবে, তারা কবে নিহত হন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এছাড়া পৃথক আরেকটি হামলায় ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হামদান প্রদেশে দুজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। প্রদেশের গভর্নরের নিরাপত্তা সহকারী জানান, আহতদের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরাও রয়েছেন।
এর আগে, ইরানে জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত শুক্রবার বলেন, ইসরায়েলের চালানো প্রথম ধাপের হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছেন।
এই হামলার পর দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় প্রতিরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিল তেহরান। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি জনগণকে নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
১৮৪ দিন আগে