বিশ্ব
ড্রাগন ক্যাপসুল বন্ধে মাস্কের হুমকি, সংকটের শঙ্কায় নাসা
যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরায় মার্কিনিদের তো বটেই বিশ্ববাসীরও নজর কেড়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বন্ধুত্ব। তবে সম্প্রতি এ সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছুদিনের আগেরও ঘনিষ্ঠ এই দুই মিত্র এবার সামাজিক মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েছেন বাক-বিতণ্ডায়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পর্যন্ত নভোচারী ও রসদ পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত ড্রাগন ক্যাপসুল বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন মাস্ক। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই হুমকি দেন রকেট কোম্পানি স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক।এর আগে, স্পেসএক্স ও স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন ট্রাম্প। এর জবাবে মাস্ক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,‘ স্পেসএক্স তার ড্রাগন ক্যাপসুল অবিলম্বে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।’অবশ্য মাস্কের হুমকি কতটা বাস্তবসম্মত, তা স্পষ্ট নয়। তবে সরকারি অর্থায়নে তৈরি এই ক্যাপসুলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সচল রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এ ছাড়া, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অভিযান ও এই দশকের শেষ দিকে চাঁদের পৃষ্ঠে নভোচারী পাঠানোর মতো বড় প্রকল্পের জন্যও স্পেসএক্সের ওপর নির্ভরশীল ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)।
ড্রাগন ক্যাপসুল আসলে কী
এই মুহূর্তে স্পেসএক্সই একমাত্র মার্কিন কোম্পানি, যারা চারজনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াতের সুযোগ দিয়ে আসছে।
বোয়িং-এর স্টারলাইনার ক্যাপসুল এখন পর্যন্ত একবারই নভোচারী নিয়ে উড়েছে। গত বছরের সেই পরীক্ষামূলক মিশন ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। ওই মিশনে গিয়ে মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারীকে দীর্ঘ নয়মাস পর এ বছরের মার্চ মাসে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে স্টারলাইনার এখনও স্থগিত রয়েছে।
স্পেসএক্স তাদের নিজস্ব বেসরকারি মিশনের জন্যও ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে। পরবর্তী মিশনটি হবে আগামী সপ্তাহে। অ্যাক্সিওম স্পেস নামের হিউস্টনভিত্তিক একটি কোম্পানি এটি ভাড়া করেছে। তাছাড়া, খাদ্য ও অন্যান্য রসদ পরিবহনের জন্যও ড্রাগনের কার্গো সংস্করণ ব্যবহার করে স্পেসএক্স।
নাসার অন্য বিকল্প রাশিয়ার সোয়ুজ
এই মুহূর্তে রাশিয়ার সোয়ুজ ক্যাপসুলই একমাত্র বিকল্প, যা দিয়ে মহাকাশ স্টেশনে ক্রুদের নিয়ে যাওয়া যায়।
অন্যদিকে, প্রতিটি স্পেসএক্স মিশনে একজন রাশিয়ান থাকেন। এই বিনিময় ব্যবস্থার ফলে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রতিটি ক্যাপসুলে একজন করে আমেরিকান ও রাশিয়ান থাকা নিশ্চিত করা হয়।
২০২০ সালে স্পেসএক্স নাসার জন্য প্রথম নভোচারী পাঠায়। এর ফলে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমাতে পারে নাসা। এর আগে রুশ ফ্লাইটে প্রতি আসনে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হতো কয়েক কোটি ডলার। রসদের জন্যও রুশ মহাকাশযান ও মার্কিন কোম্পানি নর্থরপ গ্রুম্যানের ওপর নির্ভরশীল ছিল নাসা।
স্পেসএক্সের অন্যান্য সরকারি মিশন
নাসার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মিশন এবং সামরিক সরঞ্জাম উৎক্ষেপণের কাজেও ব্যবহৃত হয় এই কোম্পানিটি।
গত বছর মহাকাশ স্টেশন ব্যবহারের অযোগ্য হলে সেটিকে কক্ষপথ থেকে নামিয়ে আনার দায়িত্বও পায় স্পেসএক্স।এ ছাড়াও, নাসা চাঁদের কক্ষপথ থেকে নভোচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে নামানোর জন্য স্পেসএক্সের স্টারশিপ মেগা রকেট বেছে নিয়েছে। অন্তত প্রথম দুটি ল্যান্ডিং মিশনের জন্য এটি ব্যবহার করবে নাসা। এদিকে, স্টারশিপ গত সপ্তাহে টেক্সাস থেকে নবমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে।
১৯২ দিন আগে
সৌদি আরবে হজ পালনে পৌঁছেছেন ১৫ লাখের বেশি হাজী
এ বছর হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ১৫ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক হাজী। বুধবার (৪ জুন) দেশটির এক সরকারি মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো হজ, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা ফরজ। এটি কিছু নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা ও ইবাদতের সমন্বয়ে সম্পন্ন করতে হয়, যা জীবনে অন্তত একবার পালন করা আবশ্যক।
দেশটির হজ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঘাসসান আল-নুওয়াইমি জানান, এই সংখ্যাটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক হাজীদের জন্য প্রযোজ্য। দেশের ভেতরের হাজীদের সংখ্যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। উল্লেখ্য, গত বছর সৌদি আরবের বাইরে থেকে মোট ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন হাজী এসেছিলেন।
বুধবার হাজীরা পায়ে হেঁটে আরাফাতে পৌঁছাতে শুরু করেন। কেউ কেউ নিজের মালপত্র নিজের কাঁধে বয়ে নিচ্ছেন, কেউবা বৃদ্ধ আত্মীয়কে সহায়তা করছেন প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও। এ সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যায়। অনেকে মাঝপথে বিশ্রাম ও খাবার গ্রহণের জন্য থেমে যান।
আরাফাত মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে একটি পাথুরে পাহাড়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই নবী মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের সময় তাঁর শেষ খুতবা দিয়েছেন। কোরআনেও এই স্থানের উল্লেখ রয়েছে।
ইসলামী ঐতিহ্যে ‘আরাফাত দিবস’কে বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদিন আল্লাহ বান্দার খুব কাছাকাছি আসেন এবং পাপ ক্ষমা করে দেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
হাজীরা আরাফাতে থাকেন মধ্যরাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ সময় তারা ইবাদত ও বন্দেগিতে মনোনিবেশ করেন। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর হাজীরা পাশের ময়দানে—মুজদালিফায় যান, যেখানে তারা পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) অংশগ্রহণের জন্য।
প্রচণ্ড গরম ও বিপুল জনসমাগমে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হজ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যদিও সৌদি সরকার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে নিরাপত্তা ও জনসমাগম ব্যবস্থাপনায়, তবুও প্রতি বছরই এটি কঠিন হয়ে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ বিন আব্দুর রহমান আল-জালাজেল বলেন, ‘গরম মোকাবিলায় ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে, হাসপাতালের বিছানা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং প্যারামেডিকের সংখ্যা তিনগুণ করা হয়েছে।’
সৌদি কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপ এবারের হজকে আরও নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৯৩ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন ট্রাম্প
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া ৭টি দেশের ভ্রমণকারীদের ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৪ জুন) এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আগামী সোমবার (৯ জুন) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এসব নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম বিতর্কিত নীতির পুনরাবৃত্তি। তবে ২০১৭ সালের নিষেধাজ্ঞার সময় বিমানবন্দরে দেখা দেওয়া বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবার আগাম নোটিশের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘোষণায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কিছু দেশ আবারও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ১২টি দেশ হলো- আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।
অন্যদিকে, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা থেকে আগত ভ্রমণকারীদের জন্য অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার আরোপের কারণ হিসেবে কলোরাডোর বোল্ডারে রোববারের সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টানেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যেসব ভ্রমণকারী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান, তারা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো কলোরাডো হামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তি মিশরের নাগরিক হলেও দেশটি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি পর্যটক ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় দায়িত্ব নিয়েই ট্রাম্প এ নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আগের এক সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমর্থন থাকায় এবার তার আইনি ভিত্তি আরও শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বছর ২০ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশের তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালককে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বৈরী মনোভাব’ ও নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা তা নথিভুক্ত করতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল’ হয়ে গেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
এর আগে, প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক নির্বাহী আদেশে ৭ টি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন- এই ৭টি দেশ ছিল সে তালিকায়। এগুলো মূলত প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
এই আদেশটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুর দিককার সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও বিভ্রান্তিকর মুহূর্তগুলোর একটি ছিল।
নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশের যাত্রীদের কেউ কেউ বিমানেই উঠতে পারেননি, আবার কেউ যুক্তরাষ্ট্রে নেমে বিমানবন্দরেই আটক হন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পর্যটক এবং বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের দেখতে আসা মানুষরাও ছিলেন।
এই আদেশটিকে সাধারণত ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’ নামে ডাকা হতো, যা পরে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পুনর্গঠিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পায়।যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন ট্রাম্প
১৯৩ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগে চীনা বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে মামলা
এক চীনা বিজ্ঞানী তার ব্যাকপ্যাকে এক বিষাক্ত ছত্রাক লুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। গত বছর ওই বিজ্ঞানী এই কাজ করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ জুন) এ ঘটনায় ওই বিজ্ঞানী ও ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে কর্মরত তার এক প্রেমিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এফবিআই।
৩৩ বছর বয়সী বিজ্ঞানী জুনইয়ং লিউ ও তার প্রেমিকা ইউনকিং জিয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চোরাচালান, মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এফবিআইয়ের তথ্যমতে, ওই জীবাণুর নাম ফুসারিয়াম গ্রামিনেরিয়াম। এটি গম, যব, ভুট্টা ও ধানে আক্রমণ করতে পারে। এ ছাড়া গবাদি পশু ও মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে।
একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীর বরাত দিয়ে এফবিআই কর্তৃফক্ষ একে ‘সম্ভাব্য কৃষি-সন্ত্রাসবাদের অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেরোম গরগন জুনিয়র বলেন, ‘চীনের নাগরিকদের আলোচিত এসব কর্মকাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
ওই দুই চীনা নাগরিকদের মধ্যে একজন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ সমর্থক রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, প্রাথমিক শুনানির জন্য মঙ্গলবার আদালতে হাজির হলে জিয়ানকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দিন ধার্য করা হয়।
তবে আদালতে তার প্রাথমিক শুনানির জন্য নিযুক্ত এক আইনজীবী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এফবিআই জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে ডেট্রয়েট বিমানবন্দর থেকে লিউকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়। কারণ সে সময় তার ব্যাকপ্যাকে লাল উদ্ভিদজাত বস্তু পাওয়া যায় এবং এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি তার বক্তব্য পরিবর্তন করেন।
এফবিআইয়ের ভাষ্যে, শুরুতে লিউ নমুনাগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতার ভান করেন। পরে সেটি ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের একটি ল্যাবে গবেষণার কাজে ব্যবহার করবেন বলে জানান। ওই ল্যাবে লিউ আগে কাজ করতেন এবং ঘটনার সময় জিয়ান সেখানে কর্মরত ছিলেন।
লিউর মোবাইল ফোনে ‘প্ল্যান্ট-প্যাথোজেন ওয়ারফেয়ার আন্ডার চেইঞ্জিং ক্লাইমেট কন্ডিশনস’ (পরিবর্তনশীল জলবায়ু পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ-রোগজীবাণু যুদ্ধ) নামে একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধও পাওয়া যায় বলেও জানায় তারা।
তদন্তকারী আরও জানান, ওই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে লিউ ও জিয়ান ক্ষুদেবার্তা দিয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। সেখানে জিয়ান লেখেন, ‘দুঃখের বিষয় যে এখনও আপনাদের হয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বানরেরাও অপহরণ করে! বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত আবিষ্কার
জবাবে লিউ বলেন, ‘একবার এটা হয়ে গেলে, বাকি সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।’
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এফবিআই কর্মকর্তারা। ল্যাবে লিউকে জীবাণু সংক্রান্ত কোনো সহায়তা করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন জিয়ান। তবে তার মোবাইল ফোনে তারই সই করা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি সমর্থনসূচক এক বিবৃতি পাওয়ার কথা জানায় এফবিআই।
ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে লিউ ধরা পড়ার আগে থেকেই জিয়ান ইউনিভার্সিটির ল্যাবে ফুসারিয়াম গ্রামিনেরিয়াম নিয়ে কাজ করছিলেন বলে তাদের মধ্যে হওয়া ক্ষুদেবার্তা আদান-প্রদান থেকে ধারণা করে মার্কিন এই গোয়েন্দা সংস্থাটি। আর এই জীবানু গবেষণায় ব্যবহারের ফেডারেল অনুমতি নেই।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় লিউ যদি নিজে ফিরে না আসেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা অসম্ভব বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৩ দিন আগে
আইপিএল উদযাপন অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত ৭, আহত ২৫
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেঙ্গালুরু শহরে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে পদদলিত হয়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন।
বুধবার (৪ জুন) আইপিএল উদযাপনের সময় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে খবরে জানিয়েছে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএলের বিজয় উদযাপন করতে হাজার হাজার ক্রিকেটভক্ত জড়ো হয়েছিল। এতেই এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আহত এবং অচেতন হয়ে পড়া ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনা ও হতাহতের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৯৪ দিন আগে
গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ
ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে গণতন্ত্র সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষ আজও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যদিও অধিকাংশ দেশ গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়, তবে বাস্তবতা তার ঠিক উল্টো—আজ বিশ্বের মাত্র ৪০টি দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার সত্যিকার অর্থেই সম্মানিত হয়, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
জার্মান দাতব্য সংস্থা ব্রট ফুর ডি ভেল্ট-এর ‘আটলাস অব সিভিল সোসাইটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকের তুলনায় এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রণয়নে ‘সিভিকাস’ নামের বৈশ্বিক সিভিল সোসাইটি নেটওয়ার্কের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ২৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ‘মুক্ত’ দেশে বসবাস করেন, যেখানে ব্যক্তি সীমাহীন নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা পান। এই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা এবং স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের দেশগুলো।
ব্রট ফুর ডি ভেল্ট বলছে, যে দেশগুলোতে আইনি বা অন্যান্য বাধা ছাড়াই সংগঠন গঠন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং তা প্রচার করার স্বাধীনতা থাকে, সেগুলোই ‘মুক্ত’ দেশের মর্যাদা পায়।
আরও পড়ুন: ইউরোপে টিকে থাকার লড়াইয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংকটে বহুত্ববাদ
অন্যদিকে, ৪২টি দেশে নাগরিক অধিকারকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব দেশে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বাস করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে জার্মানি, স্লোভাকিয়া, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ।
এসব দেশে মতপ্রকাশ ও সভা-সমাবেশের অধিকার কিছুটা সম্মান পেলেও অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া, বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে তাদের অধিকার নিয়ন্ত্রণ ও দমনের চেষ্টা করা হয়। এসব দেশে বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষ বসবাস করে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
অ্যাটলাস অব সিভিল সোসাইটির তথ্য অনুসারে, এই দেশগুলোর সরকার নাগরিক স্বাধীনতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারের সমালোচনা করলে এসব দেশে জনগণকে হয়রানি, গ্রেপ্তার, এমনকি হত্যার শিকারও হতে হয়।
১৯৭টি দেশের মধ্যে ১১৫টি দেশেই এই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজমান। ‘নিয়ন্ত্রিত’ (Restricted) এসব দেশের তালিকায় গ্রিস, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেনসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারও মুক্তগণমাধ্যম চর্চায় বাধা সৃষ্টি করছে; গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে তুলছে।
এ বিষয়ে ইউরোপের মানবাধিকার সংস্থা সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (লিবার্টিজ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালিকানায় স্বচ্ছতার অভাব, সরকারের সৃষ্ট চাপ ও সাংবাদিকের প্রতি নানারকম হুমকির কারণে প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনতা হারাচ্ছে। এসব কারণে ইইউভুক্ত দেশগুলোর গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার হুমকির মুখে: আইটিইউসি
তবে তালিকা এখনও শেষ হয়নি। মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়া দেশগুলোকে ‘দমনকৃত’ (Suppressed) শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এমন দেশ রয়েছে ৫১টি, যার মধ্যে আলজেরিয়া, মেক্সিকো ও তুরস্ক অন্যতম।
এসব দেশে সমালোচকদের ওপর নজরদারি চালানো হয়, তাদের কারাবন্দি বা হত্যা করা হয়, এমনকি নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে রাশিয়াসহ ২৮টি দেশ, যেগুলোকে প্রতিবেদনে ‘অবরুদ্ধ’ (Closed) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব দেশে নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পরিবেশ বিরাজ করছে। শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা করলে সেখানে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
তবে জ্যামাইকা, জাপান, স্লোভেনিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, বতসোয়ানা, ফিজি, লাইবেরিয়া, পোল্যান্ড ও বাংলাদেশ—এই নয়টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে।
অপরদিকে, জর্জিয়া, বুরকিনা ফাসো, কেনিয়া, পেরু, ইথিওপিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, মঙ্গোলিয়া ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব দেশে আইনের শাসন, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারিতা থেকে সুরক্ষা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন ব্রট ফুর ডি ভেল্টের সভাপতি ডাগমার প্রুইন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২৪ সালের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ এক বছরে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে দেশে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। চাকরির পরীক্ষায় কোটা সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তখন কঠোর দমনপীড়ন চালায়। তবে আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন।
এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। তার আমলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন শুল্ক হ্রাসে বাজারে স্বস্তি এলেও কাটছে না অনিশ্চয়তা
এ সময় ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে’ উত্তরণের সফলতা এবং বাংলাদেশকে সমমনা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অংশীদার হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, ভোটারদের একাংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা বা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো পদক্ষেপ পরিহার করা উচিত।
১৯৫ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার হুমকির মুখে: আইটিইউসি
বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স–২০২৫ অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর সব মহাদেশেই শ্রমিক অধিকার চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী রাজনীতিবিদ ও তাদের ধনকুবের মিত্ররা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করছেন। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক এবং আর্জেন্টিনায় হাভিয়ের মিলেই ও এদুয়ার্দো ইউরনেকিয়ানের মতো ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণে লিপ্ত।
প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের সম্মিলিত অধিকার ধ্বংসে ট্রাম্প প্রশাসন বুলডোজার চালাচ্ছে এবং শ্রমবিরোধী ধনকুবেরদের সরকার পরিচালনায় প্রভাবশালী অবস্থানে বসিয়েছে।
সূচক অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন শ্রমিক অধিকারের পরিপন্থী বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের ৪৭ হাজার কর্মীর ইউনিয়ন সুরক্ষা বাতিল, ফেডারেল কর্মীদের একটি বড় অংশের নাগরিক সেবা সুরক্ষা প্রত্যাহারের চেষ্টা এবং জাতীয় শ্রমিক সম্পর্ক বোর্ডের একজন সদস্যকে বরখাস্ত করা, যাতে বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সদস্য না থাকে।
আইটিইউসির মহাসচিব লুস ট্রায়াঙ্গেল বলেন, প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। তার মতে, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল মধ্যস্থতা ও সমঝোতা সেবা সংস্থার কর্মীসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে এবং ফেডারেল লেবার রিলেশনস অথরিটির একজন সদস্যকেও বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অধিকাংশ ফেডারেল কর্মীর সম্মিলিত দর-কষাকষির অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ট্রায়াঙ্গেল বলেন, ‘অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতারা ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ করছেন। তাদের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার দমন। কারণ শ্রমিকরাই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক শক্তি এবং এ কারণে আমরাই তাদের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা।’
তিন মহাদেশে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনটি মহাদেশে শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের পরিস্থিতি ২০১৪ সালে সূচক চালুর পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
১৫১টি দেশের মধ্যে মাত্র ৭টি দেশ শ্রমিক অধিকার সূচকে শীর্ষ রেটিং পেয়েছে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৮টি।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ৭২ শতাংশ দেশে শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ সীমিত, যা সূচক চালুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ রেকর্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৭ শতাংশ দেশে ধর্মঘটের অধিকার এবং ৮০ শতাংশ দেশে সম্মিলিত দর-কষাকষির অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
শ্রমিক অধিকারের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে—বাংলাদেশ, বেলারুশ, ইকুয়েডর, মিসর, সোয়াজিল্যান্ড, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, তিউনিসিয়া ও তুরস্ক।
শুধু অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ও ওমান—এই তিনটি দেশে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক অধিকার সূচকে উন্নতি হয়েছে।
লুস ট্রায়াঙ্গেল সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই রাজনীতিবিদদের পেছনে থাকা ধনকুবেররা এখন আর ছায়ায় নেই, তারা সামনে এসে বিশ্বের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নিচ্ছে। শ্রমিক অধিকার ধ্বংসের এটিই মূল চালিকাশক্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৪–৫ বছরে কোভিড-১৯ ও মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়েই চরমপন্থী দলগুলো ভোট টানছে, যদিও তারা শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো বাস্তব সমাধান দিচ্ছে না।’
ট্রায়াঙ্গেল বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনকুবেরের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে, অথচ এই সময়েই বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লাখ কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে অস্ত্রের পেছনে; অথচ অধিকাংশ দেশেই একটি ন্যায্য করব্যবস্থা নেই।’
তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে শ্রমজীবী মানুষদের আরও বেশি মজুরি, ভালো চাকরি, অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: মে দিবসের ১৩৫ বছর পরও আট শ্রমঘণ্টা কতটা যৌক্তিক?
১৯৬ দিন আগে
খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ গেল ৩১ গাজাবাসীর
গাজায় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন, আহত হয়েছেন ১৭০ জনেরও বেশি। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (১ জুন) ইসরায়েল-সমর্থিত ফাউন্ডেশনের পরিচালিত একটি সহায়তা কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া জনতার ওপর ওই হামলা চালানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রবিবার ভোরের কিছু আগে ওই সহায়তা কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। সহায়তা কেন্দ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্যে, সহায়তা কেন্দ্রে বা তার আশেপাশে বেসামরিক নাগরিকদের দিকে গুলি চালায়নি তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসা বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের দিকে সতর্কীকরণ গুলি চালানো হয়।
এ ঘটনার পর আরও একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ফুটেজে দেখা যায়, মুখোশধারী ও সশস্ত্র কয়েকজন ব্যক্তি খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাচ্ছেন। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এদিকে, হামাস গাজায় খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে বলে এক বিবৃতিতে দাবি করে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন: গাজায় চিকিৎসক দম্পতির ১০ সন্তানের ৯ জনই নিহত
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের আওতায় গাজায় নতুন করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সংস্থাটি সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে বিশৃঙ্খলা ও গোলাগুলির ঘটনা অস্বীকার করেছে।
তবে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফার একটি ফিল্ড হাসপাতালে নারী ও শিশুসহ ১৭৯ আহতকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর আহতের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়, যাদের বেশিরভাগেরই শরীরে গুলি বা বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত ছিল। তবে নিহতদের মধ্যে কেউ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়।
রেড ক্রসের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, আহতরা সবাই একটি সহায়তা কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
এ হামলার ঘটনারকে একটি ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য পরিচালিত সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘ত্রাণ কেন্দ্রগুলোও এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।’
এদিকে, পৃথক এক বিবৃতিতে গাজায় আর ত্রাণ কেন্দ্র স্থাপন এবং উত্তর ও দক্ষিণ গাজার অনির্দিষ্ট অংশে স্থল অভিযান সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
আরও পড়ুন: ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়েছে গাজা, উপচে পড়ছে হাসপাতাল
বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ নতুন সহায়তা ব্যবস্থা
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইসরায়েল সমর্থিত ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর কাছে ইসরায়েলি সেনারা জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড বিভাগের প্রধান জাহের আল-ওহাইদি জানিয়েছেন, রবিবারের আগেই এসব কেন্দ্রে পৌঁছাতে গিয়ে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
তবে ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই তারা রবিবার ১৬ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করেছে। মৃত্যুর ঘটনা, ব্যাপক আহত ও বিশৃঙ্খলার ভুল প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সংস্থাটি।
নতুন ত্রাণ ব্যবস্থা মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে
ইসরায়েলের পরিচালিত নতুন এই ত্রাণ ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে সহায়তা না দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর এই বিষয়টিকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।
হামাসকে ত্রাণ চুরি থেকে বিরত রাখতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যদিও নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যদিও এই চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ।
এই নতুন ব্যবস্থা ইসরায়েলকে নির্ধারণ করতে দিচ্ছে কে সহায়তা পাবে, পাশাপাশি মানুষকে সহায়তা কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করছে — যার ফলে উপকূলীয় এই এলাকার মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘসহ অনান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
প্রায় তিন মাসের অবরোধের পর গত ২০ মে থেকে গাজায় প্রবেশ করে মানবিক সহায়তা। তবে যে পরিমাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে তা প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসীর জন্য অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন অনেকে। আরও সহায়তা না এলে এই অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: টানা তিনমাস পর গাজায় প্রবেশ করল মানবিক সহায়তা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৫৪ হাজরের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে, মার্কিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস সংশোধনী চাওয়ায় শনিবার (৩১ মে) আবারও বাধার মুখে পড়েছে যুদ্ধবিরতির আলোচনা। তবে ৬০ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর।
১৯৬ দিন আগে
রঙে আঁকা ভবিষ্যদ্বাণী: কল্পনার ভূকম্পে বাস্তবিক আতঙ্ক
কাল্পনিক হলেও জাপানের একটি জনপ্রিয় মাঙ্গায় (জাপানি ভাষায় তৈরি গ্রাফিক উপন্যাস বা কমিক বই) ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। দেশটির পর্যটন শিল্পেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে এশীয় কয়েকটি দেশ– দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও হংকং থেকে জাপান ভ্রমণের ফ্লাইট বুকিংয়ের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
লেখিকা রয় তাতসুকির ‘দ্য ফিউচার আই স্য’ নামের মাঙ্গাটি তার নিজের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করে লিখেছিলেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মাঙ্গাটির প্রচ্ছদে ২০১১ সালের মার্চে একটি ভয়াবহ দুর্যোগ সংঘটনের ইঙ্গিত ছিল। এ সময়ে দেশটিতে স্মরণকালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানে।
এতে জাপানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন এবং এর ফলে ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।
পরবর্তীতে, মাঙ্গাটির ২০২১ সালে প্রকাশিত নতুন সংস্করণে নির্মাতা তাতসুকি পূর্বাভাস দেন–পরবর্তী ভয়াবহ দুর্যোগটি ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ঘটবে।
আরও পড়ুন: গাজায় চিকিৎসক দম্পতির ১০ সন্তানের ৯ জনই নিহত
এই দাবির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। তবে ২০১১ সালের দুর্যোগ নিয়ে লেখিকার পূর্বাভাস মিলে গিয়েছিল। যে কারণে তার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস সামাজিকমাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি অনেকেই গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন। পূর্বাভাসের কারণে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের মধ্যে।
এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে জাপানের পর্যটন খাতে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও হংকং থেকে জাপানগামী পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।
বিমান বুকিং বিশ্লেষণকারী সংস্থা ফরোয়ার্ডকিইসের তথ্য ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা ও বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, হংকং থেকে জাপানগামী ফ্লাইট বুকিং গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত সময়কালের বুকিং ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
হংকংয়ের একটি পর্যটন সংস্থা (ট্রাভেল এজেন্সি) জানিয়েছে, ওই মাঙ্গার প্রভাবেই অনেকেই জাপান সফরের পরিকল্পনা বাতিল করছেন। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বসন্তকালীন ছুটির সময়ে জাপানগামী পর্যটক সংখ্যা এরমধ্যেই গত বছরের অর্ধেকে নেমে গেছে।
হংকংভিত্তিক বিমান সংস্থা গ্রেটার বে এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, চেরি ফুলের মৌসুম ও ইস্টার ছুটিকে কেন্দ্র করে সাধারণত জাপানে ভ্রমণের চাহিদা বেশি থাকলেও এবার তা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।
জাপানে সংস্থাটির কান্ট্রি ম্যানেজার হিরোকি ইতো স্থানীয় গণমাধ্যম আসাহি শিম্বুনকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করেছিলাম এবারের মৌসুমে বিমানের আসনের প্রায় ৮০ শতাংশ বুক হয়ে যাবে। অথচ বাস্তবে হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।’
এ অবস্থায় গ্রেটার বে এয়ারলাইন্স ও হংকং এয়ারলাইন্স জাপানের ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বানরেরাও অপহরণ করে! বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত আবিষ্কার
এদিকে, জাপান সরকার এই গুজব এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির মিয়াগি প্রদেশের গভর্নর ইয়োশিহিরো মুরাই বলেছেন, ২০১১ সালের ভূমিকম্পে যে তিনটি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল, তার মধ্যে মিয়াগি অন্যতম।
গভর্নর মুরাই এ ধরনের গুজবের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন দাবি পর্যটনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি—গুজবে কান না দিয়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিন।’
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে জাপানে পর্যটকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল মাসে রেকর্ড ৩৯ লাখ পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করেছেন। সরকার আশা করছিল, চলতি দশকের শেষে দেশটির বার্ষিক পর্যটক সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে, দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, ২০২১ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মাঙ্গাটির নতুন সংস্করণের প্রায় ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। এটার ওপর ভিত্তি করে ইউটিউবে ১,৪০০টিরও বেশি ভিডিও ছাড়া (আপলোড) হয়েছে, সেগুলো এরমধ্যেই ১০০ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
কিছু ভিডিওতে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এমনকি উল্কাপাতের মতো আতঙ্কজনক পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’ এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে জাপান পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ দেশ।
রিং অফ ফায়ার’ হলো প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে বিস্তৃত ভূকম্পন ও আগ্নেয়গিরিপ্রবণ একটি অঞ্চল, যেখানে পৃথিবীর অধিকাংশ শক্তিশালী ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে।তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় ও স্থান সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।
গেল আগস্টে, ভূকম্পবিদদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে মেগা ভূমিকম্পের সতর্কবাণীতে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা একটি বিদেশ সফর বাতিল করেছিলেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশটির একটি সরকারি টাস্কফোর্স আশঙ্কা করেছে, নানকাই ট্রাফ এলাকায় ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
এতে, প্রায় ২ লাখ ৯৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ২০ লাখেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের মতে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এমন দুর্যোগ ঘটার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ সুদানে এশীয় অভিবাসীদের নির্বাসন-চেষ্টার অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
অন্যদিকে, মাঙ্গার নির্মাতা তাতসুকি তার পূর্বাভাসগুলি বিশ্বাস না করার জন্য পাঠকদের সতর্ক করেছেন। দেশটির গণমাধ্যমে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার লিখা মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে সচেতন করেছে, এটা আনন্দের বিষয়। তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রভাবিত না হয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০০ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসার সাক্ষাৎকারের নতুন সময়সূচি স্থগিত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইতোমধ্যে যাদের সাক্ষাৎকারের সময়সূচি দেওয়া হয়েছে তারা এই সিদ্ধান্তের আওতায় থাকবেন না।
মঙ্গলবার (২৭ মে) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, এই স্থগিতাদেশ অস্থায়ী এবং যাদের সাক্ষাৎকারের সময়সূচি এরইমধ্যে নির্ধারিত রয়েছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওয়ের সই করা এক তারবার্তার বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাবেন, তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম যাচাই ও তদারকি করার জন্য নতুন নির্দেশিকা দেওয়া হবে। নতুন নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত দূতাবাসগুলোকে নতুন শিক্ষার্থী বা পর্যটক বিনিময় কর্মসূচির ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘শিক্ষার্থী হোক বা অন্য কেউ, আমরা ভিসা আবেদনকারীদের যাচাই করার জন্য সব ধরনের কৌশল ব্যবহার করি। আমরা প্রতিটি কৌশল অবলম্বন করে দেখার চেষ্টা করব যে এখানে কে আসছেন।’
আরও পড়ুন: হার্ভাডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেও সব ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়েও এই নীতি বহাল ছিল।
এ পদক্ষেপকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নজরদারির সাম্প্রতিক উদাহরণ বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
এর আগে, গত ২২ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সুযোগ বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করলে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দেশটির আদালত ।
এ ছাড়াও, দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর আইনগত অবস্থাও বাতিল করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় ভয়ের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তীতে এই প্রচেষ্টা আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং এতে অনেক শিক্ষার্থীর বৈধতা পুনর্স্থাপিত হয়। এ ছাড়া, প্রশাসন যেন আর এভাবে বৈধতা বাতিল করতে না পারে সেজন্য সারা দেশের জন্য একটি নিষেধাজ্ঞাও জারি করে আদালত।
আরও পড়ুন: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই সাক্ষাৎকার সময়সূচির স্থগিতাদেশ দীর্ঘমেয়াদি হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্ম ও শরৎকালীন কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে তহবিল কাঁটছাট করেছেন। এ কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করে টিউশন ফি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল।
২০১ দিন আগে