বিশ্ব
নির্বাচনে জিতে সিঙ্গাপুরের ক্ষমতায় আবারও পিএপি
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে আবারও জয় পেয়েছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি)। এর মধ্য দিয়ে টানা ৬৬ বছরের মতো দেশটির ক্ষমতায় টিকে থাকল দলটি। এই জয়কে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
শনিবার (৩ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের ৯৭টি আসনের মধ্যে ৮৭টি পেয়েছে পিএপি। এছাড়া ৩৩টি নির্বাচনি এলাকার বেশিরভাগেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে দলটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে পিএপি। এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ফলাফল ঘোষণার পরপরই পতাকা নেড়ে ও আনন্দ করে বিজয় উদযাপন করেন পিএপির সমর্থকরা।
১৯৫৯ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের শাসনক্ষমতায় রয়েছে এই দলটি।
নির্বাচনে জয় পেয়ে সিঙ্গাপুরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন অর্থনীতিবিদ।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে একের পর এক শুল্কারোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ওই তালিকা থেকে বাদ যায়নি সিঙ্গাপুরও। এ কারণে নির্বাচনি প্রচারের সময় এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাণিজ্যনির্ভর দেশটি পরিচালনার জন্য জনগণের সমর্থন চেয়েছিলেন লরেন্স।
এবার নির্বাচন জিতে তিনি বলেন, ‘এই ফলাফল সিঙ্গাপুরকে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে আরও ভালো অবস্থানে রাখবে।’
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক ইউজিন তান বলেন, ২০২০ সালের পর বিরোধীদের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়াটা বিস্ময়কর। তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা সেবা দিয়ে আসছে, জনগণ তাদের প্রতিই আস্থা রেখেছেন বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছর সিঙ্গাপুরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লরেন্স ওয়াং। এর আগে দুই দশক ধরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলে লি হসিং লুং। তিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইয়েওয়ের ছেলে। লিয়ের পদত্যাগের মাধ্যমে লি কুয়ান ইউয়ের শুরু করা পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটে।
গতকালের ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে মূল বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি আসনে জয় পেয়েছে। গত নির্বাচনেও তারা ১০টি আসন পেয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কোনো বিরোধী দলের এটি সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার ঘটনা।
আরও পড়ুন: কানাডার নির্বাচনে জয় পেল প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি
বিশ্লেষকদের ধারণা, কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ, জীবিকার উচ্চ ব্যয়, আয় বৈষম্য, নাগালের বাইরে চলে যাওয়া আবাসন ব্যবস্থা ও মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা—এসব বিষয় বিশেষত তরুণদের মধ্যে পিএপির জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলেছে।
বিরোধীদলগুলো জানিয়েছে, পার্লামেন্টে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে অনেক সময় সম্পদের অভাব, বিভক্ত সমর্থন ও দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ঘাটতির কারণে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন তারা। তাছাড়া, নির্বাচনি এলাকার সীমার পুনর্বিন্যাস পিএপিকে বাড়তি সুবিধা দেয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রীতম সিং জানান, তারা আরও ভারসাম্যপূর্ণ পার্লামেন্টের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, ‘ফলাফল যা হয়েছে তা ভুলে আমরা আগামীকাল থেকেই আবার কাজ শুরু করব।’
ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের সংসদীয় উপস্থিতি বাড়াতে না পারলেও কিছু এলাকায় শেয়ার ভোট বাড়িয়ে নিজেদের সমর্থন আরও সুসংহত করেছে বলে করেন মন্তব্য করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাজনীতি বিশ্লেষক ব্রিজেট ওয়েলশ। তবে অন্য ছোট বিরোধী দলগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েলশের মতে, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের ভোটাররা স্থিতিশীলতাকে বেছে নিয়েছেন। তরুণদের সঙ্গে ওয়াংয়ের সহজ-সরল বোঝাপড়া এবং পিএপিতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নতুন মুখ নিয়ে আসাও ভোটে প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই ফলাফলকে বলি, লরেন্স ও ট্রাম্পের প্রভাব। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ লরেন্সের ম্যান্ডেটকে আরও শক্তিশালী করেছে।’
এদিকে, সিঙ্গাপুর ও লরেন্স ওয়াংকে এই বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর প্রায় ৬০ বছর ধরে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হুমকি: গ্রিনল্যান্ডে অবিশ্বাস্য জয় পেল ডেমোক্র্যাটিট পার্টি
নবনির্বাচিত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
২২৫ দিন আগে
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলেন আলবানিজ
নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ের মধ্যদিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা অ্যান্থনি আলবানিজ।
আনুষ্ঠানিক ভোট গণনা কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে না। তবে সারা দেশে লিবারেল ন্যাশনাল জোটের শোচনীয় পরাজয়ের পর আলবানিজের বামপন্থী সরকার নাটকীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
আরও পড়ুন: গোয়েন্দাদের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকে যুদ্ধ হয়: অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শনিবার (৩ মে) আলবানিজ বলেছেন, ‘আজ অস্ট্রেলিয়ার জনগণ মূল্যবোধের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, ন্যায্যতা, আকাঙ্ক্ষা ও সুযোগ সৃষ্টির জন্য। এটি প্রতিকূলতায় সাহস দেখানোর শক্তি এবং যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি দয়া দেখানো।’
জোট নেতা পিটার ডাটন নিজের ২৪ বছর ধরে জয় পাওয়া নিজের আসনে হেরেছেন। তিনি দলের পরাজয়ের জন্য নিজের সম্পূর্ণ দায় স্বীকার করে দলীয় এমপিদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
২২৬ দিন আগে
কাশ্মীর ইস্যুতে চলমান উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এ পরিস্থিতিকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ।
শুক্রবার (২ মে) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
আসিম ইফতিখার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও দেশটি তাদের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছে।
উত্তেজনা এড়াতে পাকিস্তানের সদিচ্ছার কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।’
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করে আসিম বলেন, ‘নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
এ সময় পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও সুসম্পর্কপূর্ণ প্রতিবেশী নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার আভাস, উদ্বেগ
আসিম বলেন, ‘পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায় পাকিস্তান। এমনকি ভারতের সঙ্গেও একই নীতি অনুসরণ করতে চায় দেশটি।’
তিনি বলেন, ‘২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।’
চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে উত্তেজনা নিরসন প্রয়োজন বলে মনে করেন আসিম। এ লক্ষ্যে একতরফা যেকোনো পদক্ষেপ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে আলোচনা ও উত্তেজনা কমানের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান আসিম। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকেনো সংঘাত এড়াতে এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের এই রাষ্ট্রদূত।
২২৬ দিন আগে
কাশ্মীর ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার আভাস, উদ্বেগ
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশই সীমিত পরিসরে সামরিক হামলার আভাস দিচ্ছে। এতে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে এশিয়াতেও একই পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে, কোনোমতেই আরেকটি যুদ্ধ চাইছে না আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) বরাবর সপ্তম দিনের মতো দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাবিনিময় হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী এই দুটি দেশই সীমিত পরিসরে হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও মার্কিন সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়াও পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে উভয় পক্ষ। তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
২০১৯ সালে কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে এবারই দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সব থেকে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে দেশ দুটি যে যুদ্ধাংদেহী অবস্থানে রয়েছে; তার ভবিষ্যৎ আসলে কি এই নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা চরমে
রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র, তবে প্রতিরোধের স্বার্থে
ভারত ও পাকিস্তান বহু বছর ধরেই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। তবে দুই দেশেরই দাবি তাদের অস্ত্রগুলোর উদ্দেশ্য যুদ্ধ শুরু করা নয়; বরং প্রতিরোধ করা।
এক্ষেত্রে ভারতের নীতি হলো— ‘প্রথমে ব্যবহার না করা’। তার মানে, ভারত কেবল তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যখন তাদের সেনাদের ওপর বা ভারতের ভূখণ্ডের ওপর পারমাণবিক হামলা হবে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের নীতি হলো— ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ বা সম্পূর্ণ পরিসরে প্রতিরোধ কৌশল। ভারতের মতো বড়, শক্তিশালী ও ধনী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর পারমাণবিক বা গতানুগতিক সামরিক হামলার মোকাবিলায় পাকিস্তানের এই প্রস্তুতি।
তবে প্রথমে ব্যবহার না করার নীতিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে পাকিস্তানে। দেশটি মনে করে যে তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে, সেক্ষেত্রে তারা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়নি।
এপির প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের তুলনায় কম সামরিক শক্তির কারণে পাকিস্তান বাস্তবিক অর্থে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা রাখে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এর আগে ভারতের সঙ্গে গতানুগতিক তিনটি যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে। এ কারণে প্রথমে হামলা না চালিয়ে বরং ভারতকে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ-জেএসএস গোলাগুলিতে নিহত ১
তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ভারত কিংবা পাকিস্তান কোনো দেশই কিন্তু নিশ্চিতভাবে জানে না অপর দেশের কাছে ঠিক কি পরিমাণ বা কী ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত। এদিকে, পাকিস্তান প্রথম পরীক্ষা করে ১৯৮৮ সালে।
বিভিন্ন থিংকট্যাংকের মতে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র আছে, আর ভারতের প্রায় ১৭২টি। অবশ্য কিছু বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অস্ত্রসংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, প্রায় ২০০টি হতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী এই দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা থাকা স্বত্ত্বেও দুই দেশের পারমাণবিক স্থাপনা ও অবকাঠামোগুলোতে হামলা পরিচালনা না করার জন্য তারা ১৯৮৮ সালে একটি চুক্তি করে। ১৯৯১ সালে এ চুক্তি কার্যকর হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পরস্পরকে তাদের পারমাণবিক স্থাপনার তথ্য সরবরাহ করবে। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়। এরপর থেকে তারা টানা ৩৪ বছর ধরে এই তালিকা বিনিময় করেছে।
তবে, ভারত-পাকিস্তান কেউই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র সম্প্রসারণ প্রতিরোধ চুক্তিতে সই করেনি। এই চুক্তিটি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে গঠিত।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সীমিত হামলাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে দুই দেশ
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়শই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে দুই দেশের সেনারাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালায়। আরেক পক্ষ আবার পাল্টা হামলা করে। এ ধরনের হামলাগুলোর উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষ যেন পিছুহটার সুযোগ পায়, পাশাপাশি উত্তেজনা কমানোর জন্য সময় পাওয়া যায়।
তবে ২২ এপ্রিলের পেহেলগামের ঘটনা ছিল ভিন্ন। নিহত ২৬ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় হওয়ায় এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ভারত সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলার পর পাকিস্তানের একটি ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। ভারতের দাবি সেটি ছিল একটি সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবির।
এরপরে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এক পাইলটকে আটক করার দাবি করে পাকিস্তান। পরবর্তীতে সেই পাইলটকে মুক্তি দেওয়া মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
তবে বিশ্লেষকরা জানান, ওই ঘটনা একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে, সেটি হলো —পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে হামলা চালাতে সক্ষম ভারত।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের তাড়া খেয়ে পালাল ভারতীয় রাফায়েল
বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত দুই দেশই তেমন কোনো নাটকীয় পদক্ষেপ নেয়নি। তবে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এলওসি বরাবর আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ভারতীয় একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এরপর গতকাল (বুধবার) ভারতীয় রাফায়েলকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট বিমানের তাড়া করার কথা জানায় দেশটির সামরিক বাহিনী।
বিশ্লেষকের ধারণা, উভয় পক্ষের প্রতিশোধমূলক হামলাগুলো এই এলওসি বরাবরই পরিচালিত হতে পারে। সেখানের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটি বা জঙ্গি ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। তবে এই কৌশলেও ঝুঁকি রয়েছে, কারণ যেকোনো প্রাণহানিই দুইদেশের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ আরও উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চিন্তা
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি যুদ্ধ চাইছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করবেন। একই সঙ্গে অন্যান্য বিদেশি শক্তিগুলোকেও হস্তক্ষেপ করে চলমান পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মিত্র দেশ সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। দুই দেশের আরেক শক্তিশালী প্রতিবেশী চীনও তাদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
এছাড়া দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বলতে গেলে, কেউই আরকেটি যুদ্ধই চাইছে না।
২২৭ দিন আগে
শত বছরের পুরনো লাইব্রেরিতে ‘লক্ষণরেখা’ টানলেন ট্রাম্প
পৃথিবীর নানা দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব অতি পরিচিত দৃশ্য। দেশগুলো যখন ভাগাভাগি আর নিজ ভূখণ্ড বুঝে নিতে মরিয়া, সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভিন্ন বার্তা দিত হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সীমান্তে অবস্থিত এই লাইব্রেরিতে বসে যেকোনো সময় যেকোনো দেশে বসে বই পড়া যায়—এমনকি দেখা যায় থিয়েটারও।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এরই ধারাবাহিকতায় অনন্য এই লাইব্রেরিটিও হারাতে বসেছে গৌরব। এতদিন অবাধে লাইব্রেরির এক অংশ থেকে আরেক অংশ চলাফেরা করা গেলেও এবার কানাডার নাগরিকদের জন্য ‘লক্ষণরেখা’ টানলেন ট্রাম্প। শতবছরের পুরোনো হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরিতে কানাডার নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রীতি এক যৌথ বিবৃতিতে কিউবেক প্রদেশের সীমান্তবর্তী স্ট্যানস্টেড শহর কর্তৃপক্ষ ও হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ভবনটিতে কানাডীয়দের প্রবেশ বন্ধের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারমেন্টের ডার্বিলাইন গ্রাম ও কানাডার কুইবেকের স্ট্যানস্টেড শহরের সীমান্তে অবস্থিত এই হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি অ্যান্ড অপেরা হাউস। ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের এই ভবনটি বিশ শতকের শুরুর দিকে তৈরি করা হয়েছিল। এই ভবনের রয়েছে দুটি পৃথক ঠিকানা। একটি কানাডার, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ঢোকার পথ কেবল যুক্তরাষ্ট্রে।
এতদিন অনানুষ্ঠানিক একটি চু্ক্তির মাধ্যমে পাসপোর্ট ছাড়াই লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতেন কানাডীয় নাগরিকরা। কানাডীয়রা হেঁটে সীমান্ত পার করে প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ভবনটিতে প্রবেশ করতেন। দুই দেশের সীমান্তকে আলাদা করতে লাইব্রেরির ভিতর একটি রেখা টানা আছে। তবে স্বাধীনভাবেই এই লাইন পার করে এখানে বই পড়তেন অনেকে।
তবে গত মঙ্গলবার থেকে কেবল কার্ডধারী ও লাইব্রেরির কর্মীরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। অন্যদের কানাডা অংশের বের হওয়ার জরুরি পথ ব্যবহার করতে হবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কানাডার সব নাগরিককেই কানাডার অংশ দিয়েই প্রবেশ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দেশদুটির আন্তঃসীমান্ত সহায়তা ও সম্প্রীতি নষ্ট করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সীমান্তবর্তী ডার্বি লাইন অঞ্চলটির বাসিন্দা আলিসন হওয়েল বলেন, ‘এই লাইব্রেরিটি তার কাছে কেবল বই দেওয়া নেওয়ার জায়গা নয়, শত বছর ধরে এখানে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটেছে। তবে আলিসনের মতো অনেকেরই আশঙ্কা, ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে এই সম্প্রীতি নষ্ট হতে চলেছে।’
আলিসন বলেছেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কে গভীর বিভেদ সৃষ্টির পথ আরও সহজ করে তুলবে।’
ডারবি লাইন গ্রামে মাত্র ৭০০ মানুষ বসবাস করেন, অন্যদিকে স্ট্যানস্টেডে ৩ হাজার লোকের বাস। অন্যান্য দেশের সীমান্তগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অর্থনীতি ও সংস্কৃতি পরস্পর সংযুক্ত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নানা নীতির ফলে এই সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার ইচ্ছে পোষণ করেন ট্রাম্প। পরে কানাডার পণ্যে অতিরিক্ত কর আরোপ করেন, জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্কারোপ করে।
এরপরেই সীমান্তে থাকা লাইব্রেরিতে কানাডীয়দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিল ট্রাম্প প্রশাসন, কঠোর করেছেন সীমান্ত সুরক্ষাও। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা, যাদের জীবন প্রণালী নানাভাবে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।
ভারমাউন্টের নিউপোর্টের মেয়র রিক উফোর্ড চেজ বলেন, ‘আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের জন্য এই লাইব্রেরিটি একটি শক্তিশালী প্রতীক। রাজনৈকিতভাবে খাতা-কলমে সীমান্তের অস্তিত্ব থাকলেও এখানকার বাসিন্দাদের জন্য বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।’
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংহতি প্রদর্শনের জন্যই দুই দেশের সীমান্তে এই লাইব্রেরিটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির ফলে সেই লক্ষ্য লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে করছেন লাইব্রেরির পাশের দুই এলাকার বাসিন্দারা।
কুইবেকের বাসিন্দা বুদ্রো বলেন, ‘দুই দেশ, দুই সম্প্রদায়কে এক করার জায়গা এটি। এখানে আমরা সবাই বন্ধু, পরিবার। আমরা একসঙ্গে বাস করি এখানে।’
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে কানাডা অংশে নতুন একটি প্রবেশদ্বার নির্মাণে প্রায় ১ লাখ ডলার খরচ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটির কোনো প্রয়োজন ছিল না। বরাবরই যু্ক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দুই দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বারটিই সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা গেলে বেশ ভালো হতো।’
২২৮ দিন আগে
অতীতের ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ভিয়েতনামের
আজ ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানের সুবর্ণজয়ন্তী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ৫০ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিনটি পালন করে ভিয়েতনাম সরকার। এ সময় অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির নেতারা।
১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান হয়। ওই দিন তখনকার মার্কিন মদতপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন দখল করে উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী। রাজধানী দখলের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। পরের বছর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামকে একীভূত করা হয়।
যুদ্ধ অবসানের ৫০ বছর পূর্তিতে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তো লাম বলেন, ‘এদেশের প্রতিটি মানুষ ভিয়েতনামের সন্তান। তাদের সবার এখানে বাস করার, কাজ করার, সুখ ও ভালোবাসা লাভের অধিকার রয়েছে।’
দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ঐক্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে অতীতকে পেছনে ফেলে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের শান্তি, ঐক্য, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো, সাধারণ জনগণ ও সেনাবাহিনী শপথ নিয়েছে এক হয়ে কাজ করার।’
আরও পড়ুন: কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প
এ সময় কুচকাওয়াজ দেখতে আসা এক ভিয়েতনামিজ জানান, ‘এখন আমাদের শান্তির সময়, আসলে সারা বিশ্বেরই চাওয়া এটি।’
কুচকাওয়াজে ভিয়েতনামের সেনাদের সাথে অংশ নেয় চীন, লাওস ও কম্বোডিয়ার সেনারা। ভিয়েতনামের কিছু সৈনিক আবার যুদ্ধ চলাকালীন সাবেক উত্তর ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরেছেন।
এবারই প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানে অংশ নিলে চীনা সেনারা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভিয়েতনাম সফরের পর এই পদক্ষেপকে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, কুচকাওয়াজের সময় দেশটির পতাকাবাহী একটি হেলিকপ্টার ইন্ডিপেনডেন্স প্যালেসের সামনে দিয়ে উড়ে যায়, এ জায়গাটিতে যুদ্ধের দেশ দিকে একটি ট্যাংক নিয়ে গেট ভেঙে প্রবেশ করেছিলেন উত্তর ভিয়েতনামের সেনারা।
লাম বলেন, স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ ৩০ বছরের যুদ্ধ শেষে সাইগনের পতন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জয়লাভ ছিলো একটি ‘গৌরবময় মাইলফলক’।
রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েতি ইউনিয়ন), চীন, লাওস ও কম্বোডিয়ার আন্তরিক সহায়তা ও সমর্থনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রগতিশীল কিছু দেশের কারণেই বর্তমান ভিয়েতনাম গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের ইউসোফ ইসহাক ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক নগুয়ান খাক গিয়াং বলেন, ‘সামরিক বিজয়ের বিজয়ের পরিবর্তে বর্তমানে সম্প্রীতির দিকে জোর দিচ্ছে ভিয়েতনাম।’ তবে দেশটিতে এখনো সম্প্রীতি পুরোপুরি তৈরি হয়নি বলেন মনে করেন তিনি।
যুদ্ধ-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট-ভিয়েতনাম সম্পর্ক
এ বছর যুদ্ধ অবসানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৩০ বছর পূর্তি পালন করছে দেশটি। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেমন কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক; এই ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে ভিয়েতনাম।
দেশটির কর্মকর্তারা জানান, ‘এজেন্ট ওরেঞ্জ দূষণ ও গ্রামাঞ্চলে এখনও বিস্ফোরণযোগ্য যুদ্ধসামগ্রী রয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যাগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী ভয়াবহ রাসায়নিক এজেন্ট অরেঞ্জ ছড়িয়ে দিয়েছিল। ‘অপারেশন র্যাঞ্চ হ্যান্ড’ নামের ওই অভিযানে ভিয়েতনামের ৪৫ লাখ একর জমিতে এই বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপকে কেন্দ্র করে দেশদুটির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা ইউএসএইডের তহবিল কাটছাঁট করায় এজেন্ট অরেঞ্জ দূষণ মোকাবিলা করায় প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
অতীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্কের ভারসাম্য টিকিয়ে রেখে চলছিল দেশটি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে সফর করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এতে আবার কিছুটা চটেছেন ট্রাম্প। দেশটির প্রশাসন কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে যাবে সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২২৯ দিন আগে
পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের তাড়া খেয়ে পালাল ভারতীয় রাফায়েল
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট বিমানের তাড়া খেয়ে কাশ্মীরে টহলরত ভারতীয় রাফায়েল পিছু হটেছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বরাতে দেশটির সংবাদ মাধ্যম ডন এই খবর দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
সম্প্রতি পাহেলগ্রামে হামলার ঘটনায় কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলে ভারত। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকার ভারতের এই অভিযোগকে প্রত্যাখান করে আসছে। একই সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সামরিক বাহিনীকে ভারতীয় যেকোনা আক্রমণের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাহেলগ্রামের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে যেকোন ধরনের অভিযানের স্বাধীনতা দিয়েছেন।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে পিটিভি ও রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) অতিক্রম না করে চারটি ভারতীয় রাফায়েল রাতভর আকাশে টহল দিয়েছে।
রেডিও পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিমান বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় রাফায়েলের উপস্থিতি টের পায়।
পিটিভি জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নিলে ভারতীয় বিমানগুলো আতঙ্কিত হয়ে পিছু হটে।’ নিরাপত্তা সূত্র আরও বলেছে, সামরিক বাহিনী ভারতীয় যেকোনো ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে।’ তবে সরকার ও সামরিক বাহিনী ওই ঘটনার বিস্তারিত জানায়নি।
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার আজ সকালে বলেছিলেন, “ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা’ সূত্রে জানা গেছে।”
গত রাত ২টায় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারার বলেন, ‘পাহেলগ্রামের ঘটনায় ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা’ সূত্রে জানা গেছে।”
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান চাইলে মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের হিমালয় অঞ্চলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। হামলাটি ২০০০ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল।
কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স, যা দ্য কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে পরিচিত সংগঠনটি এক বার্তায় হামলার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা জোড়ালোভাবে অস্বীকার করেছে।
তারার বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলে ভারতের স্ব-ঘোষিত বিচারক হয়ে ওঠা ও শাস্তিদাতা এবং ‘বেপরোয়া’ ও আত্মঅহংকারী ভূমিকাকে তীব্রভাবে প্রত্যাখান করে।
২২৯ দিন আগে
কলকাতার হোটেলে আগুনে পুড়ে নিহত ১৪
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি হোটেলে আগুন লেগে কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন দগ্ধ হয়েছেন।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আরজি কর হাসপাতাল এবং নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এমন খবর দিয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কলকাতার ঋতুরাজ হোটেলে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ১৪ জনের লাশ মিলেছে। বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের জন্য রাজ্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । ভবিষ্যতে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রোধ করতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজরদারি কঠোর করার আহ্বান জানান তিনি।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কলকাতা করপোরেশনের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আগুন লেগেছে, অনেক মানুষ এখনও ভবনে আটকে আছেন। কোনো নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। আমি জানি না করপোরেশন কী করছে!’
২২৯ দিন আগে
ইউরোপে টিকে থাকার লড়াইয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংকটে বহুত্ববাদ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বেশিরভাগ দেশের সরকার মুক্তগণমাধ্যম চর্চায় বাধা সৃষ্টি করছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে তুলছে। এতে ইউরোপে গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ ও স্বাধীনতা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এমনকি কিছুক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে। সম্প্রতি ইউরোপের মানবাধিকার সংস্থা সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (লিবার্টিজ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
লিবার্টিজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমগুলোর মালিকানা পুঞ্জিভূত হয়ে অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে চলে যাওয়ার কারণে এ সংকট শুরু হয়েছে। এতে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে—এমনকি যেসব দেশের গণমাধ্যম বাক-স্বাধীনতার চর্চার জন্য ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত ছিল, সেখানেও গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ২১টি দেশ থেকে ৪৩টি মানবাধিকার সংস্থার সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ইইউয়ের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মালিকানায় স্বচ্ছতার অভাব, সরকারের সৃষ্ট চাপ ও সাংবাদিকের প্রতি নানারকম হুমকির কারণে প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনতা হারাচ্ছে। এসব কারণে ইইউয়ের দেশগুলোর গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনটির প্রধান সম্পাদক জনাথান ডে বলেছেন,‘গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে সরকার দেশে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে। তাই এ পরিস্থিতি মোটেই বিস্ময়কর নয়।’
ইউরোপের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য প্রণীত ‘ইউরোপীয়ান গণমাধ্যম স্বাধীনতা আইন (ইএমএফএ)’ কার্যকর হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন জনাথান। তিনি বলেন, ‘এই আইনের সফল বাস্তবায়নের ওপর অনেক দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষায় সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করবে।’
গণমাধ্যম বহুত্ববাদ আসলে কি?
গণমাধ্যম বহুত্ববাদ বলতে আসলে এই ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য থাকা বোঝায়। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, কোনো দেশে গণমাধ্যম বহুত্ববাদ আছে বলতে বুঝতে হবে, সেখানকার জনগণের কাছে অনেকগুলো বিকল্প মাধ্যম আছে।
আরও পড়ুন: জুলাই অভ্যুত্থানে আক্রান্তদের সহায়তায় ২০ লাখ ইউরো দেবে ইইউ
সংস্থাটির ভাষ্যে, গণমাধ্যম বহুত্ববাদ বলতে এমন একটি অবস্থা বোঝায় যেখানে সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত মালিকানার গণমাধ্যম থাকবে, পাশাপাশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম থাকবে, রেডিও থাকবে, ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমসহ অনেক ধরনের বিকল্প থাকবে। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন কণ্ঠস্বর তৈরি হবে। সবমিলিয়ে একটি বৈচিত্রপূর্ণ গণমাধ্যম ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকবে।
এদিকে, ইউরোপের বেশকিছু দেশের গণমাধ্যমগুলোর মালিকানা অল্পসংখ্যক ধনীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশেষত ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেনের গণমাধ্যমগুলোর মালিকানা গুটিকয়েক ধনকুবেরের হাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দেশেগুলোর গণমাধ্যমের মালিকানা নিয়ে স্বচ্ছতা না থাকায় এই সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করেন জনাথান। যেকারণে চলতি বছরের আগস্টের আগেই ইএমএফএর অধীনে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রকাশযোগ্য তথ্যসমূহ প্রকাশ করতে বলা হলেও বেশিরভাগ দেশই তা করতে পারেনি।
সাংবাদিক ও সংবাদ উৎসের নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা ও মালিকানার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক ইএমএফএ আইন প্রণয়ণ করা হয়েছে। তবে এই আইনটির পুরোপুরি বাস্তবায়নে বেশিরভাগ দেশ অনিচ্ছুক না হলে বলতে হবে তারা অপ্রস্তুত— মন্তব্য করেন জনাথান ডে।
কোন দেশের কি অবস্থা?
ফ্রান্সের ধনকুবের ভিনসেন্ট বোলোরের হাশেত গ্রুপসহ বেশকিছু প্রকাশনা সংস্থাকে অধিগ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ উল্লেখযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
ইতালিতেও অনেকটা একইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দেখা গেছে। দেশটির কট্টর ডানপন্থি লেগা পার্টির এমপি অ্যান্তোনিও আঙ্গেলুচির ‘আঙ্গেলুচি গ্রুপ’ সম্প্রতি দেশটির প্রথমসারির সংবাদসংস্থা এজিআইকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। যদিও ইতোমধ্যে ৩টি ইতালিয়ান পত্রিকার মালিকানা রয়েছে তার।
এদিকে সুইডেনের গণমাধ্যমগুলোর ৪৩ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বোনিয়ার ব্যবসায়ী গ্রুপের অধীনে। এছাড়া নেদারল্যান্ডের আরটিএল নেদারল্যান্ড ও টালফা নেটওয়াকের হাতেই দেশটির ৭৫ শতাংশের বেশি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিকানা কুক্ষিগত রয়েছে।
জার্মানিতেও গণমাধ্যমের বহুত্ববাদ হুমকির মুখে পড়েছে। দেশটিতে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। দেশটিতে পত্রিকার কাটতি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অনেক সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে।
হাঙ্গেরিতে গণমাধ্যমের মালিকানা পুঞ্জিভূতকরণ ও রাষ্ট্রীয় মাধ্যমগুলার আধিপত্য বিস্তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের ঘনিষ্ঠ সেন্ট্রাল ইউরোপীয়ান প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া ফাউন্ডেশনের (কেসমা) মালিকানায় কয়েকশত গণমাধ্যম রয়েছে।
দেশটিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অলিগার্করা ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমগুলো ক্রয় করে কেসমাতে দান করা শুরু করে। ফলে ২০১৮ সালের মধ্যেই দেশটির মিডিয়া ব্যবস্থা সরকার নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।
হাঙ্গেরির ছাড়াও বুলগেরিয়া, গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া ও ইতালির সরকারও বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে থাকে। রাষ্ট্র সমর্থিত মাধ্যমগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাওয়া বিজ্ঞাপনের বরাদ্দের বণ্টনে বৈষম্যসহ নানাভাবে দেশগুলোর সরকার গণমাধ্যম স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা চালায় বলে লিবার্টিজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সংস্কারে সমর্থন ইইউ'র
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাঙ্গেরির গণমাধ্যম পুরোপুরিভাবে সরকাররে মুখপাত্র হয়ে উঠেছে। একই পথে এগোচ্ছে স্লোভাকিয়ায়ও। দেশটির নতুন আইনে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়াও গত বছরে ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি এবং স্পেনে সাংবাদিকরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, শারীরিক হামলাসহ পুলিশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কিছু দেশে নারী সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
পাশাপাশি স্ট্র্যাটেজিক লিটিগেশন অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন আইনটির অপব্যবহার করে ইউরোপের কমপক্ষে এক ডজন দেশে সাংবাদিকদের জন্য অস্তিত্বহীনতার ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
বুলগেরিয়া, জার্মানি, গ্রিস, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি কর্মকর্তারা তথ্যপ্রাপ্তি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান বা বাধা দিয়ে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে জানা গেছে।
২২৯ দিন আগে
ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
কাশ্মীর ইস্যুতে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা(এলওসি) বরাবর আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ভারতীয় একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভিম্বর জেলার মানাওয়ারে মনুষ্যবিহীন যানটি ভূপাতিত করা হয়। মূলত, ড্রোনটি ভারতীয় বাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারির কাজে নিয়োজিত ছিল।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা চরমে
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে মনুষ্যবিহীন ড্রোনটিকে ভূপাতিত করে।
এতে পাকিস্তানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরীক্ষার জন্য যানটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি পারমানবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা চরমে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটে ও আকাশপথে নজরদারি বাড়িয়েছে দুই দেশ।
২৩০ দিন আগে