বিশ্ব
পাপুয়া নিউগিনিতে উপজাতিদের সহিংসতায় ৫৩ জন নিহত
পাপুয়া নিউগিনিতে উপজাতিদের সহিংসতায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সংঘর্ষে এই হতাহত হয় বলে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ।
রয়্যাল পাপুয়া নিউ গিনির কনস্টাবুলারির ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট জর্জ কাকাস অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেন, একটি উপজাতি, তাদের মিত্র ও ভাড়াটে সৈন্যরা রবিবার দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটির প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের এনগা প্রদেশে প্রতিবেশী একটি উপজাতির ওপর হামলা চালায়।
জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়া আহতদের মধ্যে আরও লাশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
এবিসিকে কাকাস বলেন, 'এই উপজাতিদের হত্যা করা হয়েছে সারা গ্রামাঞ্চলে এমনকি ঝোপঝাড় জুড়েও।’
যুদ্ধক্ষেত্র, রাস্তা ও নদীর পাড় থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ট্রাকে বোঝাই করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কাকাস বলেন, কর্তৃপক্ষ এখনও 'গুলিবিদ্ধ, আহত এবং ঝোপের মধ্যে পালিয়ে যাওয়াদের' গণনা করছে।
তিনি বলেন, 'আমরা ধারণা করছি এ সংখ্যা ৬০ বা ৬৫ পর্যন্ত হতে পারে।’
কাকাস বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে এ ধরনের সহিংসতায় এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা হতে পারে। কারণ এই এলাকায় খুব কম রাস্তা রয়েছে এবং বেশিরভাগ বাসিন্দাই জীবীকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
গণহত্যার বিষয়ে রাজধানী পোর্ট মোর্সবির পুলিশের কাছে অ্যাসোসিয়েটস প্রেস (এপি) জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
পাপুয়া নিউ গিনি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশে ৮০০ ভাষাসহ ১ কোটি মানুষের একটি বৈচিত্র্যময়, উন্নয়নশীল দেশ।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক চাইছে বলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তার সরকারের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, তার সরকার পাপুয়া নিউ গিনিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। দেশটি অস্ট্রেলিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী এবং অস্ট্রেলিয়ার একক বৃহত্তম বৈদেশিক সহায়তা গ্রহীতা।
আলবানিজ বলেন, 'পাপুয়া নিউগিনি থেকে যে খবর এসেছে তা খুবই বিরক্তিকর।’
আরও পড়ুন: সুপার টুয়েলভে খেলার আশায় পাপুয়া নিউগিনির মুখোমুখি বাংলাদেশ
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পিএনজিতে আমাদের বন্ধুদের সহায়তা করার জন্য বাস্তবিক অর্থে যে কোনও সহায়তা সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে পাপুয়া নিউ গিনির জন্য ‘যথেষ্ট সমর্থন’ দিয়েছে এবং দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করছে।
প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপের প্রশাসন টিকিয়ে রাখায় ২০২২ সালের নির্বাচনের পর থেকে এনগা অঞ্চলে উপজাতি সহিংসতা তীব্র হয়েছে। নির্বাচন এবং তার সাথে জালিয়াতি এবং প্রক্রিয়াগত অসঙ্গতির অভিযোগ সর্বদা সারা দেশে সহিংসতার সূত্রপাত করেছে।
এনগার গভর্নর পিটার ইপাটাস বলেছেন, উপজাতিদের লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
ইপাটাস এবিসিকে বলেন, ‘প্রাদেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা জানতাম যে এই লড়াই হতে চলেছে এবং আমরা গত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম যাতে এটি না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।’
ইপাতাস এই সহিংসতাকে ‘প্রদেশে আমাদের জন্য খুব, খুব দুঃখজনক এবং এটি দেশের জন্য একটি খারাপ জিনিস’হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আরও পড়ুন: পাপুয়ার স্বাধীনতাকামীদের সাথে ইন্দোনেশিয়ার আর্মিদের সংঘর্ষে নিহত ৪
ক্রেমলিনের শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু পশ্চিমা ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে, তবে পুতিনকে থামানো যায়নি
ক্রেমলিনের প্রধান শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা ক্ষোভের প্রতি কান দিচ্ছেন না। কারণ তিনি আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার ২৪ বছরের শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং রাশিয়াজুড়ে পুলিশ যেকোনো প্রতিবাদ প্রচেষ্টা দমন করছে।
নাভালনির মৃত্যু ও ইউক্রেনে ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা কংগ্রেসে আটকে রয়েছে এবং ইউরোপে ন্যাটো মিত্ররা শূন্যস্থান পূরণের জন্য লড়াই করছে। তাই অনেকে ভাবছেন যে পশ্চিমারা ক্রেমলিনের নির্মম নেতাকে থামাতে আসলে কী করতে পারবে? কারণ এর আগে একাধিক বার তাকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
লন্ডনভিত্তিক মায়াক ইন্টেলিজেন্স কনসালটেন্সি ফার্মের প্রধান মার্ক গালিওটি ইউটিউব মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো বড় মূল্য নেই।’ কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোর একটি দেশ হলো রাশিয়া।
গালিওত্তি বলেন, এর পরিবর্তে পশ্চিমাদের উচিত নাভালনির মিত্রদের সঙ্গে কাজ করা এবং ক্রেমলিনের প্রচারণা মোকাবিলায় সাধারণ রুশদের তথ্য চ্যানেলে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করা।
নাভালনির মৃত্যুকে পুতিনের 'হাইব্রিড কর্তৃত্ববাদ' থেকে 'নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক স্বৈরতন্ত্র'তে রূপান্তরের আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গালিওত্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোরদার করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী চার মাসের ভয়াবহ লড়াইয়ের পরে ইউক্রেনীয় সেনাদের মূল পূর্বাঞ্চলীয় শক্ত ঘাঁটি আভদিভকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। মিত্ররা রাশিয়ার কাছে যুদ্ধের ব্যয় বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে যাতে পুতিনকে পিছু হটতে বাধ্য করা যায়।
তবে ৭১ বছর বয়সী নেতা তার কোনো অর্জন ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গত সপ্তাহে ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক টাকার কার্লসনের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পশ্চিমারা তার শর্তে 'আজ হোক বা কাল হোক' কোনো না কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হবে।
বেলারুশে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু পুতিনের 'সম্পূর্ণ নির্মমতা ও অবজ্ঞা... পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক উভয় পরিপ্রেক্ষিতে।’
শুক্রবার মিউনিখে এক নিরাপত্তা সম্মেলনে পশ্চিমা নেতারা জড়ো হওয়ার পর নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, পুতিন ‘পশ্চিমাদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আমরা যখন (ইউক্রেন) যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আছি, তিনি আবারও পশ্চিমা সংকল্পের পরীক্ষা নিচ্ছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিরোধিতা করা মার্কিন রিপাবলিকানদের জন্য "জেগে ওঠার আহ্বান" হিসেবে কাজ করা উচিত। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ন্যাটো মিত্রদের ইউক্রেনকে তাদের সহায়তা জোরদার করতে উৎসাহিত করা উচিত।
তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে পশ্চিমারা কী শিক্ষা নেয় তার ওপর।’
কিন্তু নাভালনির মৃত্যু শুক্রবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিতে উদ্বুদ্ধ করেনি, যা ইউক্রেনের বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্ট্যালিনের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রুশ নেতা পুতিন ক্রেমলিনবান্ধব দলগুলোর মনোনীত তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় আসছেন তিনি। উদারপন্থী রাজনীতিবিদ বরিস নাদেজদিন, যিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে তার প্রধান নির্বাচনি স্লোগান বানিয়েছিলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তারা তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন।
‘নির্বাচনে পুতিনের জয় নিয়ে সংশয় না থাকলেও নাভালনির মৃত্যু প্রমাণ করে 'তিনি নাভালনিকে কতটা হুমকি হিসেবে দেখছেন', বলেন গোল্ড-ডেভিস।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছে তাতে বোঝা যায় যে তারা আত্মবিশ্বাসী নয়। এমনকি কারাগার থেকেও নাভালনি তার কণ্ঠস্বর বের করতে সক্ষম হয়েছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ১৫-১৭ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নাভালনির মৃত্যু সম্ভবত ভোটের আগে 'রাশিয়ার বিরোধীদের যেকোনো চিহ্নকে মুছে ফেলা ও চূর্ণ করার চূড়ান্ত কাজ' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, আগামী মাসে নিশ্চিত বিজয় সত্ত্বেও পুতিন এখনও নির্বাচনে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছেন এবং নাভালনিকে 'জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার জন্য পশ্চিমাদের দ্বারা চালিত প্রতিপক্ষ' হিসেবে দেখেন।
একটি মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন যে পশ্চিমারা স্থিতিশীলতা হ্রাস করতে এবং তার প্রচারের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে এই মুহূর্তটি ব্যবহার করবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এটি তাকে যেকোনো প্রতিকূল প্রকাশের বিরুদ্ধে আরও কঠোর, আরও দমনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে বাধ্য করবে, যা তিনি এসব হস্তক্ষেপের বহিরাগত প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এটি বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে।’
৪৭ বছর বয়সি নাভালনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুতিনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২০১১-২০১২ সালে মস্কোতে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সরকারের দুর্নীতি উন্মোচন করার জন্য সফল প্রচার চালিয়েছিলেন।
গালেওত্তি বলেন, অনেক রুশ নাগরিকের কাছে নাভালনি ছিলেন আশার প্রতীক। এমনকি প্রত্যন্ত আর্কটিক কারাগার থেকেও “ভবিষ্যতের সুন্দর রাশিয়ার” একটি দর্শন পৌঁছে দিয়েছিলেন। রাশিয়ানদের প্রতি ক্রেমলিনের বার্তা "কেবল বেঁচে থাকুন, কেবল আপনার মাথা নিচু রাখুন” অগ্রাহ্য করে এটি একটি স্লোগান ছিল।
২০২০ সালে নাভালনি সাইবেরিয়ায় নার্ভ এজেন্টের বিষক্রিয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন, যার জন্য তিনি ক্রেমলিনকে দায়ী করেছিলেন। তিনি জার্মানিতে সুস্থ হয়ে উঠলেও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন, চরমপন্থার অভিযোগে তিনবার দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওেয়া হয় তাকে।
নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে পুতিন কোনো মন্তব্য করেননি এবং ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ক্রেমলিনকে দায়ী করে পশ্চিমা নেতাদের বিবৃতিকে 'জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কিন্তু পশ্চিমা নেতারা ক্রেমলিনের এ ধরনের যেকোনো মন্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। যেমন সন্দেহের চোখে দেখছেন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সৈন্যদের সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের দুই মাস পর ভাড়াটে সেনাপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার বিষয়টি। গত আগস্টের এই দুর্ঘটনাকে ব্যাপকভাবে বিদ্রোহের জন্য ক্রেমলিনের প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হয়েছিল। ২০০০ সালে তার প্রথম নির্বাচনের পর থেকে পুতিনের শাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এটি।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যুর মতোই নাভালনির মৃত্যুও প্রমাণ করে পুতিন কত নির্মম।’
উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোনো উপহার বা অনুগ্রহ নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও বৈধ আন্তর্জাতিক রেজুলেশনের অধিকার।
যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর একটি ছোট গ্রুপের 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্ধারিত সময়সূচি' নিয়ে চলমান আলোচনার বিষয়ে বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করার প্রতিক্রিয়ায় এটি বলেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে নেতানিয়াহু বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতার আন্তর্জাতিক নির্দেশনা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
আরও পড়ুন: রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত
শুক্রবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, 'আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে নেতানিয়াহু আবারও দখলদারিত্বের অবসান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও আমেরিকান ঐকমত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব ও ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যেকোনো প্রচেষ্টা বা ধারণা ব্যর্থ করে দিতে নেতানিয়াহু তার ঐতিহ্যগত শর্ত ফিলিস্তিনি জনগণ ও বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রত্যাখান করেন।
নেতানিয়াহুর এই অবস্থানকে 'শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনীয় এবং জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন ও সংযুক্তির প্রকৃত লক্ষ্যগুলোর একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল
সবার উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে বিজ্ঞানে লিঙ্গ সমতা জরুরি: গুতেরেস
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সবার জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে বিজ্ঞানে লিঙ্গ সমতা অপরিহার্য।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ‘বিজ্ঞানে নারী ও মেয়ে’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'দুঃখজনকভাবে, নারী ও মেয়েরা পদ্ধতিগত বাধা ও পক্ষপাতিত্বের মুখোমুখি হচ্ছে যা তাদের বিজ্ঞানে ক্যারিয়ার গড়তে বাধার সম্মুখীন করছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে নারী ও মেয়েদের সমানভাবে অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান যাতে সবার উপকারে আসে তা নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র উপায়।’
বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মাত্র এক তৃতীয়াংশ নারী এবং পুরুষদের তুলনায় তারা কম তহবিল পান, প্রকাশনাগুলোতে কম প্রতিনিধিত্ব করেন এবং প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিনিয়র পদে সংখ্যায় কম অধিষ্ঠিত।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুকে জাতিসংঘের আলোচ্যসূচির শীর্ষে রাখতে মহাসচিবের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ
কিছু কিছু জায়গায়, নারী ও মেয়েদের শিক্ষার সীমিত বা কোন সুযোগ নেই। গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে কেবল সংশ্লিষ্ট সমাজের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন,‘লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলার জন্য লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং রোল মডেলদের প্রচার করা দরকার যা মেয়েদের বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করে। বিজ্ঞানে নারীদের অগ্রগতিকে উৎসাহিত করে এমন প্রোগ্রামগুলো বিকাশ করা এবং নারীদের প্রতিভা লালন করে এমন কাজের পরিবেশ তৈরি করা- বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের জন্য।’
জাতিসংঘ প্রধান বলেন, ‘নারী ও মেয়েরা বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন সময় এসেছে স্বীকৃতি দেওয়ার, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। প্রতিটি নারী ও মেয়েকে তার সত্যিকারের সম্ভাবনা পূরণ করতে দিন।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সময়টা ভালো নয়: জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সোমবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ ও গাজা উপত্যকার আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যাপক হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এতে নারী ও শিশু সহ আহত হয়েছেন আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ভোরে রাফাহ এলাকায় প্রায় ৪০টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এছাড়া স্থল বাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণও করেছে ওই এলাকায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে 'সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলা’ চালিয়েছে। তবে এর বেশিকিছু বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৩ জনের মৃত্যু; রাফাহ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৭৬ জনে এবং আহত হয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৮৪ জন।
গাজায় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা নিরাপত্তার সন্ধানে মিশর সংলগ্ন রাফাহ এলাকায় পালিয়ে গেছে।
সীমান্তবর্তী শহরটি রাফাহ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর কাছ থেকে খাদ্য ও ওষুধ সহায়তা পেয়ে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। বর্তমানে ওই এলাকার খালি কৃষিজমিতে, স্কুলে এবং রাস্তার পাশে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন ফিলিস্তিনের বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা।
আরও পড়ুন: রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত
পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচন: সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী ইমরানের মিত্ররা
প্রায় দুই বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মিত্ররা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে জাতীয় নির্বাচনে বেশি আসনে জিতেছে।
রবিবার(১১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে এই চিত্র দেখা গেছে।
ভোট কারচুপি, নজিরবিহীন মোবাইল ফোন বন্ধ এবং ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টিকে (পিটিআই) ভোট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়।
নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে তাদের দলের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপের কারণে পিটিআইয়ের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এর একটি পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে দলটির নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেওয়া, যা নিরক্ষর ভোটারদের ব্যালটে প্রার্থী খুঁজে পেতে সহায়তা করে। আরেকটি ছিল দলীয় সমাবেশ নিষিদ্ধ করা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া ইমরানকে। এরপর গত আগস্ট থেকেই কারাগারে রয়েছেন তিনি। ফৌজদারি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে ইমরান খানকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষিদ্ধ করা হয়। এখনও তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন।
চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ২৬৬টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন পেয়েছেন।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক দণ্ডপ্রাপ্ত নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন (পিএমএল-এন) ৭৫ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি) ৫৪টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনের ফলাফ স্থগিত করা হয়েছে এবং প্রার্থী নিহতের ঘটনায় আরেকটি আসনের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচারণার নেতৃত্বে ছিল পিএমএল-এন এবং পি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ১৪
কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে সরকার গঠন করতে পারেনি, তাই পাকিস্তানের সরকার গঠনে এবার জোট বাঁধতে হবে। নতুন পার্লামেন্ট দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে।
নির্বাচনের ফলাফল নওয়াজ শরিফের জন্য বিব্রতকর। গত অক্টোবরে মসৃণভাবে দেশে ফিরে আসার কারণে শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের পছন্দের প্রার্থী হিসাবে তিনি বিবেচিত হয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বরাবরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চূড়ান্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরেছে।
কারাদণ্ড এড়াতে নওয়াজ শরিফ চার বছর বিদেশে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকলেও পাকিস্তানে আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাতিল হয়ে যায় তার সাজা।
এমনকি ভোটের দিনও নওয়াজ শরিফ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি জোট চান না এবং একটি দলকে পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ দেওয়ার দাবি করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পেছনে তার দল পিছিয়ে থাকতে দেখে তিনি জোটগঠন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার কথা বলেন।
নওয়াজ শরিফ কখনোই পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকেননি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা করেছে ইসিপি
পাকিস্তানের নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা করেছে ইসিপি
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দেশের সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ এর সম্পূর্ণ ফল ঘোষণা করেছে।
দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ঘোষিত নির্বাচনের ফলাফলে জানানো হয়- স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১০১টি আসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পেয়েছে ৭৫টি আসন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছে ৫৪টি আসন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ১৪
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত
রাফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে আরও ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
তবে স্থলভাগে আক্রমণের আগে দক্ষিণ গাজার শহর থেকে কয়েক হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করার জন্য সামরিক বাহিনীকে বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে ঘোষণা দেওয়ায় গাজাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গাজার ২৩ লাখ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি এখন রাফায় গাদাগাদি করে অবস্থান নিয়েছে। ইসরায়েলি উচ্ছেদের নির্দেশে বারবার উচ্ছেদ করায় গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা এখন এই অবস্থায় রয়েছে। এরপর তারা কোথায় যেতে পারবে তা স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৩ যুবককে গুলি
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, বেসামরিক জনগণের জন্য কোনো পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহতে হামলা হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই রাফাহতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খান ইউনিস শহরে উত্তর দিকের স্থলভাগের যুদ্ধ থেকে বাঁচতে বেসামরিক নাগরিকদের সেখানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল।
শনিবার রাতভর রাফাহ এলাকার বাড়িঘরে তিনটি বিমান হামলায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন বলে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। প্রতিটি হামলায় অন্তত তিনটি পরিবারের একাধিক সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মোট ১০টি শিশু ছিল। সবচেয়ে কনিষ্ঠতম শিশুটির বয়স ছিল মাত্র তিন মাস।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের ওই এলাকার সবচেয়ে বড় নাসের হাসপাতালে গুলি চালালে অন্তত একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
আরও পড়ুন: ন্যাম সম্মেলন: ফিলিস্তিনিদের সমর্থন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তিনি বলেন, তীব্র আগুনের কারণে হাসপাতালের ভবনগুলোর মধ্যে চিকিৎসা কর্মীরা আর চলাচল করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ৩০০ চিকিৎসাকর্মী, ৪৫০ জন রোগী এবং ১০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর মিশরের সীমান্তবর্তী রাফাহ গাজায় হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক হাজার হামাস সদস্যের সশস্ত্র হামলায় নিহত হয় ১ হাজার ২০০ মানুষ। এসময় আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। এরপরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল।
হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল অভিযানে প্রায় ২৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অঞ্চলটি খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার ঘাটতিসহ মানবিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞ: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৩ জনের মৃত্যু; রাফাহ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
গাজা উপত্যকার দক্ষিণ সীমান্তের রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন নারী ও ৫ জন শিশু বলে জানিয়েছে গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কয়েক ঘণ্টা পরেই রাতভর বিমান হামলা শুরু হয় এবং রাফাহতে এই হামলা আরও বাড়বে বলেও জানান নেতানিয়াহু।
অন্যদিকে দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ত্যাগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
অব্যাহত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মিশর সীমান্তের দিকে স্থানান্তর করেছে। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে না পেরে অনেকে অস্থায়ী তাবু গেড়ে বা জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে গাজায় যুদ্ধবিরতি চান অ্যানি লেনক্স
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৪০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও গাজার অধিবাসীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারে জীবনযাপন করছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই হামলায় ১২০০ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক ছিল। আর ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। হামাস এখনও ১৩০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে জিম্মি করে রেখেছে যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইয়েমেনে মার্কিন-ব্রিটিশ বিমান হামলার নিন্দা হামাসের
পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ১৪
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগের দিন এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১৪ জন নিহত ও দুই ডজনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
বুধবার(৭ ফেব্রুয়ারি) দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র জান আচাকজাই জানান, বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশিন জেলায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ পুলিশ সদস্য নিহত, আহত ৩২
তিনি বলেন, আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে চালানো এই হামলার দায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি।
পাকিস্তানে বিশেষ করে বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক সশস্ত্র হামলা বেড়ে যাওয়ার পর শান্তি নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে কয়েক হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা সত্ত্বেও এই বোমা হামলা চালানো হলো।
আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী গ্যাস সমৃদ্ধ বেলুচিস্তান প্রদেশটি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বেলুচ জাতীয়তাবাদীদের নিম্ন স্তরের বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেলুচ জাতীয়তাবাদীরা প্রাথমিকভাবে প্রাদেশিক সম্পদের একটি অংশ চেয়েছিল, কিন্তু পরে তারা স্বাধীনতার জন্যও বিদ্রোহ শুরু করে।
প্রদেশটিতে পাকিস্তানি তালেবান ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীরও শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড