বিশ্ব
চীনে সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন কিম জং উন
ছয় বছর পর প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে তিনি অংশ নেবেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ আগস্ট) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ মোট ২৬ জন বিদেশি নেতা উপস্থিত থাকবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা প্রধান দেশগুলোর কোনো শীর্ষ নেতা এতে যোগ দিচ্ছেন না।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এটিই হবে বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক কোনো অনুষ্ঠানে কিমের প্রথম অংশগ্রহণ। তাছাড়া কিমের এ সফর ২০১৯ সালের পর চীনে তার প্রথম সফর হতে যাচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে কিম এ সফর যাচ্ছেন। তবে তিনি কতদিন চীনে অবস্থান করবেন কিংবা শি জিনপিং, পুতিন বা অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কি না—সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
চীন-জাপান যুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে আগামী বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত এই কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন ইরান, বেলারুশ, সার্বিয়া, কিউবা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার নেতারাও। কুচকাওয়াজে চীনের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন করা হবে এবং প্রেসিডেন্ট শি ভাষণ দেবেন।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশ নেতা পুতিনের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে বেশিরভাগ পশ্চিমা নেতার এ কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি
চীন দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ও প্রধান সহায়তাকারী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর কোরিয়া বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধে সৈন্য ও গোলাবারুদ সরবরাহের বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাচ্ছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ালেও উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে চীনের সহায়তা অপরিহার্য। তাই বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতেই কিমের এ সফর।
কিমের চীন সফরের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে কূটনীতি শুরুর প্রচেষ্টারও ইঙ্গিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার কিমের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন এবং আলোচনায় ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পের প্রস্তাব এখনো প্রত্যাখ্যান করে চলেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ছাড় দিলে পিয়ংইয়ং আলোচনায় ফিরতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প সম্প্রতি ওয়াশিংটনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লিয়ের সঙ্গে বৈঠককালে অতীতের কিমের সঙ্গে নিজের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা ভীষণ উপভোগ করেছিলাম। মনে আছে, আমি যখন সীমান্ত রেখা পার হয়েছিলাম, সবাই তখন উত্তেজনায় ফেটে পড়েছিল।’
প্রথম মেয়াদে কিমের সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মতানৈক্যের কারণে তাদের ঐতিহাসিক বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে কিম তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে একাধিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছেন।
১০৯ দিন আগে
ভারতে বানান, ভারত থেকেই কিনুন: মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে মোদির আহ্বান
আজ থেকে ভারতের ওপর কার্যকর হচ্ছে নতুন মার্কিন শুল্ক। ভারত থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করবে, সেসব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কশাস্তি। দিল্লির ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এই চোখ রাঙানির বিপরীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ভারতে বানান, ভারত থেকেই কিনুন’। অর্থাৎ মার্কিন শুল্ক মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরেই পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি করে রপ্তানি নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বিশাল কর ছাড়ের’ ঘোষণা দেন মোদি।
দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় দিল্লির লাল কেল্লা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকদের সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সে সময় ছোট দোকান মালিক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দোকানের বাইরে ‘স্বদেশি’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বোর্ড লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেছিলেন, ‘হতাশা থেকে নয়, বরং গর্ব থেকে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের অসুবিধাগুলো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, অবশ্যই সামনে এগোতে হবে। কেউ যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’
আরও পড়ুন: ভারতকে ট্রাম্পের শাস্তি, শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ
এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন মোদি।
মোদির এই অবস্থানকে অনেকেই ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবেই দেখছেন। মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ আমেরিকান গ্রাহকদের পোশাক থেকে শুরু করে হীরা ও চিংড়ি পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহ করে ভারত।
তবে মোদির বার্তাও স্পষ্ট, দেশে পণ্য বানিয়ে দেশেই বিক্রি করতে হবে।
ভারতে বানিয়ে ভারতেই বিক্রি কতটুকু সম্ভব
মোদি নির্দেশ দিলেও এই বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। যদি উৎপাদনের কথা আলোচনা করা হয়, সেক্ষেত্রে ভারতের ব্যর্থতার ছাপ ইতোমধ্যে স্পষ্ট। কারণ ভারতে বছরের পর বছর সরকারি ভর্তুকি এবং উৎপাদন প্রণোদনা চালু করার পরও দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৫ শতাংশের আশপাশেই স্থবির হয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী কর সংস্কারকে উৎসাহিত করে এবং অবিলম্বে জনগণের হাতে আরও বেশি অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে।
এ কারণে চলতি বছরের শুরুতে বাজেটে ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড়ের ঘোষণার পর এখন পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) হ্রাস এবং সরলীকরণের মাধ্যমে ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করছে মোদি সরকার।
মূলত কর ছাড়ের ফলে ভোক্তানির্ভর খাতগুলোর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুটার, ছোট গাড়ি, পোশাক এবং সিমেন্টের মতো পণ্য।
সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, কম জিএসটির কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে, তা বাড়তি শুল্ক আদায় এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজেটের তুলনায় বেশি লভ্যাংশের মাধ্যমে পূরণ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গান স্ট্যানলির মতে, মোদির এই রাজস্ব প্রণোদনা বা কর ছাড় ভোগব্যয়ের পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এতে দেশটির জিডিপি বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমবে।
সুইস বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস বিবিসিকে বলেছে, জিএসটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত মোদির আগের নেওয়া করপোরেট ও আয়কর কমানোর তুলনায় বড় প্রভাব ফেলবে, কারণ এগুলো ক্রয়ের সময় সরাসরি ভোগব্যয়কে প্রভাবিত করবে।
আরও পড়ুন: ভারতকে কি চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?
মোদির এই করছাড়ের ঘোষণা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। গত কয়েক মাসে এই হার এক শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। তাছাড়া ঋণ দেওয়াকেও উৎসাহিত করা হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
এর ফলে আগামী বছরের শুরুতে প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে সহায়ক বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের শেয়ার বাজারগুলো এই ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। তাছাড়া, বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে সৃষ্ট আতঙ্ক থাকা সত্ত্বেও, এই মাসের শুরুতে আঠারো বছর পর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল থেকে একটি বিরল সার্বভৌম রেটিং আপগ্রেড পেয়েছে ভারত।
কোনো সরকারকে ঋণ দেওয়া বা কোন দেশে বিনিয়োগ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ— তা পরিমাপ করে এই সার্বভৌম রেটিং। এতে সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচ কমতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে।
অবশ্য অনেকদিন ধরে আটকে থাকা সংস্কারগুলো নিয়ে তাড়াহুড়া করলেও ভারতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কয়েক বছর আগে দেখা ৮ শতাংশ স্তর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এমনকি এ সংশ্লিষ্ট বহিরাগত সংকট কমার কোনো লক্ষণও নেই।
এদিকে, রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন বাকযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর জেরে এই সপ্তাহের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য আলোচনাও বাতিল করা হয়েছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনাও করা যেত না বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
১১০ দিন আগে
অষ্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষী হামলায় ইরানের সম্পৃক্ততা দাবি, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার
গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় সংঘটিত দুটি ইহুদিবিদ্বেষী হামলার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য-প্রমাণ মেলার দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। এর জেরে তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক সংবেদ সম্মেলনে এ কথা জানান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে এবং তেহরানে অবস্থিত অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করে সব কূটনীতিককে তৃতীয় দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইন প্রণয়ন করে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কথাও ভাবছে সরকার।
আলবানিজ বলেন, দেশটির নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এএসআইও) তথ্যমতে, গত অক্টোবরে সিডনিতে লুইস কন্টিনেন্টাল কিচেনে এবং ডিসেম্বরে মেলবোর্নের একটি সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিল ইরান সরকার।
এ বিষয়ে ইরান সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইরানের সম্পৃক্ততার দাবি গোয়েন্দাদের
২০২৩ সালে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু পর থেকেই সিডনি ও মেলবোর্নে ইহুদিবিদ্বেষী কার্যকলাপের প্রবণতা বেড়েছে। স্থানীয় অপরাধীদের ভাড়া করে বিদেশি কোনো শক্তি এসব হামলা পেছনে থাকতে পারে বলে তখন থেকেই ধারণা করেছিল অষ্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলেন আলবানিজ
ইতোমধ্যে সিডনির ক্যাফেতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একজনকে এবং মেলবোর্নের সিনাগগে আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
এসব হামলার পেছনে ইরানের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে এএসআইও যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ।
ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানান অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তেহরানে অবস্থিত অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করে সব কূটনীতিককে তৃতীয় দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া যত দ্রুত সম্ভব ইরান ছেড়ে সম্ভব হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য দেশটিতে অবস্থানরত অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে।
১১১ দিন আগে
সাড়ে ৫ কোটি ভিসাধারীর রেকর্ড খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্র দপ্তর
যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ ভিসাধারী প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বিদেশির তথ্য নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশিদের ওপর মার্কিন প্রশাসনের চলমান কঠোর অভিযানের অংশ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, সব ভিসাধারীই সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় থাকেন। যদি দেখা যায় যে কেউ ভিসার নিয়ম ভেঙেছে কিংবা ভিসার যোগ্য নন, তাহলে তার ভিসা বাতিল করা হবে। আর তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তবে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ অভিবাসন দমনে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু অবৈধ নয়, অনেক ক্ষেত্রে বৈধভাবে থাকা অভিবাসীরাও মার্কিন প্রশাসনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তারা আরও বলেছে, তারা আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর রেকর্ড, অভিবাসন নথিপত্র এবং অন্য যেকোনো তথ্যও বিবেচনায় নিয়ে থাকে। এমনকি ভিসা দেওয়ার পর নতুন কোনো তথ্য সামনে এলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হয়।
ট্রাকচালকদের আর ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন, আপাতত বিদেশি ট্রাকচালকদের জন্য কোনো কর্মভিসা দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, বিদেশি চালকেরা মার্কিন নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছেন এবং স্থানীয় চালকদের কাজ নষ্ট করছেন।
আরও পড়ুন: ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
এর আগে, ট্রাকচালকদের জন্য ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও পড়তে পারার শর্ত কঠোরভাবে কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ইংরেজি পড়তে বা বলতে না পারার কারণে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে জানায় ওয়াশিংটন।
রুবিওর ওই ঘোষণার পরই মূলত সব ভিসাধারীর তথ্য খতিয়ে দেখার বিষয়টি সামনে আসে।
সব ভিসাধারীর ওপর নজরদারি
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনকারীদের ওপর অব্যাহতভাবে নতুন নতুন বিধিনিষেধ ও শর্ত আরোপ করে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি এসব নিয়মের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
এই নজরদারি মূলত ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে চালু করা হয়েছিল। পরে সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের আওতায় ভিসাধারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট, নিজ দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অভিবাসন-সংক্রান্ত রেকর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে মার্কিন আইন ভঙ্গের যেকোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
এ ছাড়া অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি ভিসা সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হওয়ার সময় আবেদনকারীদের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা অ্যাপের গোপনীয়তা (প্রাইভেসি) সেটিংস বন্ধ রাখতে হবে।
ট্রাম্পের একের পর এক কঠোর পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দিন দিন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যমতে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ওই ৬ হাজার ভিসার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ভিসা বাতিল হয়েছে সরাসরি আইন ভঙ্গের কারণে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে বাতিল হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ ভিসা।
১১৫ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলের ডস হাই স্কুলে শেষ বর্ষের ক্লাস শুরু করেছেন জামেল বিশপ। তার ক্লাসে পাঠদানের সময় এখন মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। যে কারণে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশে নাকি বড় পরিবর্তন চোখে পড়েছে তার।
জামেল বলেন, আগের বছরের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা তেমন মনোযোগ দিতেন না, একই প্রশ্ন বারবার করে সময় নষ্ট করতেন। তবে এখন যেসব শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের এক এক করে আরও বেশি সময় দিতে পারছেন শিক্ষকরা।
নতুন শিক্ষাবর্ষে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া মার্কিন ১৭টি অঙ্গরাজ্যে ও ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার একটি হলো কেন্টাকি। এতে স্কুলে মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপকারী অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে। ২০২৩ সালে প্রথম এই নিয়ম চালু করেছিল ফ্লোরিডা।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষা থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই এই উদ্যোগের সমর্থন করেছে। যদিও প্রভাবগুলো অতটা স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেক গবেষক।
গত সপ্তাহে আটলান্টায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর আয়োজিত এক আলোচনায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি স্কট হিলটন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্লোরিডায় যদি কোনো বিল পাস হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি বেশ জনপ্রিয় উদ্যোগ।
নতুন নীতিমালার আওতায় ১৮টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় পুরো স্কুলেই সারা দিন মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। তবে জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় এই নিষেধাজ্ঞা কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় শুরু থেকে ছুটির ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত প্রযোজ্য। আরও সাতটি অঙ্গরাজ্যে কেবল ক্লাস চলাকালে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, তবে ক্লাসের ফাঁকে বা দুপুরের খাবারের সময় তা ব্যবহার করা যাবে।
অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে স্কুল পরিচালনার ঐতিহ্য রয়েছে— এমন কিছু অঙ্গরাজ্যে কেবল একটি মোবাইল ফোন নীতিমালা বাধ্যতামূলক করেছে। অন্যরাও ইঙ্গিতটি বুঝে নিয়ে ফোন ব্যবহারে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।
অভিভাবকদের আপত্তি
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত জর্জিয়ার ১২৫টি স্কুলে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আপত্তিই সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অড্রিয়ান্নার মা অড্রেনা জনসন বলেন, তার সন্তানরা স্কুলে সহিংসতা থেকে নিরাপদ আছে কি না এই নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন।
তিনি জানান, বিভিন্ন হুমকির বিষয়ে স্কুল কতৃপক্ষ যেসব সতর্কবার্তা পাঠায় বেশিরভাগ সময়ই তা দেরিতে কিংবা অসম্পূর্ণভাবে আসে।
একটা উদাহরণ দিয়ে অড্রেনা বলেন, একবার ম্যাকনেয়ারের শিক্ষার্থী নন, এমন একজন স্কুল প্রাঙ্গণে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ক্লাস চলাকালীন তার মেয়ের পাঠানো মেসেজের মাধ্যমেই তিনি সে বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের কাছে ফোন থাকাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাহলে কখন কী হচ্ছে, আমি সঙ্গে সঙ্গেই তা জানতে পারি।’
ন্যাশনাল পেরেন্টস ইউনিয়নের জাতীয় পার্টনারশিপস পরিচালক জেসন অ্যালেন বলেন, অনেক বাবা-মা অড্রেনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তারা নীতিনির্ধারণে নিজেদের মত দিতে চান। সন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আরও কার্যকর যোগাযোগ চেয়েছেন।
অভিভাবকদের ভাষ্য, বাচ্চাদের সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তাছাড়া সন্তানরা কোনো সমস্যায় পড়লে তা দ্রুত জানতে পারাটাও তাদের জন্য জরুরি।
অ্যালেন বলেন, ‘আমরা কেবল মোবাইল ফোন নীতির পরিবর্তন করেছি। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের যে চাহিদা, তা পূরণ করছি না। এমনকি শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি না।’
১১৬ দিন আগে
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চার কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
আমেরিকান ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চার কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পদক্ষেপ একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ওপর ‘সুস্পষ্ট আক্রমণ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে আইসিসি।
স্থানীয় সময় বুধবার (২০ আগস্ট) আইসিসির ওই চার কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
তিনি জানান, আমেরিকান ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে আইসিসির দুই বিচারক ও আইনজীবীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওই চার ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে।
দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে এসব কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও আইসিসি। তবে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল।
নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত এই আদালত বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে আইসিসির সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানসহ আরও চার বিচারকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। গত মে মাসে যৌন অসদাচরণের অভিযোগে তদন্তের মুখে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান করিম খান।
নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন আইসিসির বিচারক কানাডার কিম্বারলি প্রোস্ট ও ফ্রান্সের নিকোলা গিলু, এবং ফিজির আইনজীবী নাজহাত শামিম খান ও সেনেগালের মামে মানদিয়ায়ে নিয়াং।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়: ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক বা বিচারপ্রক্রিয়ায় এই চারজন সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন রুবিও।
আলাদা এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুমোদনের রায়ে অংশ নেওয়ার কারণে প্রোস্টকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যদিও পরে সে তদন্ত বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুমোদনের জন্য নিকোলা গিলুর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া এবং নেতানিয়াহু ও গালান্তের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখার কারণে শামিম খান ও নিয়াংকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার ওপর সুস্পষ্ট আক্রমণ। তাছাড়া এই আদালতের সদস্য রাষ্ট্রগুলো, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ও বিশ্বের লাখ লাখ নিরাপরাধ ভুক্তভোগীর প্রতি এই পদক্ষেপ চরম অবমাননা বলেও মন্তব্য করেছে হেগের এই আদালত।
আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জাতিসংঘ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে জাানিয়েছে সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ। তাছাড়া, আইসিসি তাদের কাজের জন্য জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
১১৬ দিন আগে
ভাইরাল বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন
মানবিকতা দিয়ে বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা সেই বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ৮৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত এই মিউনিসিপ্যাল বিচারক।
স্থানীয় সময় বুধবার (২০ আগস্ট) তার অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাপ্রিওর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
টেলিভিশন অনুষ্ঠান কট ইন প্রভিডেন্স (Caught in Providence) সঞ্চালনার মাধ্যমে আদালতে তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা ফুটিয়ে তুলেছিলেন এই বিচারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বব্যাপী তুমূল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ধীরে ধীরে। তার বিচারকাজের ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোটি মানুষের শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন তিনি।
ক্যাপ্রিওর আদালতকে বলা হতো এমন একটি স্থান, যেখানে মানুষের বিচার হয় দয়া ও সহানুভূতির সঙ্গে। জরিমানার টিকিট বাতিল করা থেকে শুরু করে রায় দেওয়ার সময়ও তিনি মানবিক আচরণের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তার প্রতি মানুষের আস্থা এতটাই মজবুত হয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষ তার কাছে অর্থাভাবী মানুষকে সহযোগিতার জন্য টাকা পাঠাত।
গত সপ্তাহেই তিনি ফেসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বার্তায় সবাইকে তার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এই বৃদ্ধ।
কট ইন প্রভিডেন্স অনুষ্ঠানটি তার আদালতেই ধারণ করা হতো, যেখানে তার হাস্যরস আর সহমর্মিতা দর্শকদের মুগ্ধ করত। অনুষ্ঠানটির ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১০০ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে।
টেলিভিশনের অনেক বিচারকের তুলনায় ক্যাপ্রিও সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র গড়ে তুলেছিলেন। সংঘর্ষমুখী ও কঠোর হওয়ার বদলে তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল ও উদার। আদালতের অনেক ছোটখাটো মামলায়, যেমন সিগন্যাল না দেওয়া বা উচ্চ শব্দে পার্টির অভিযোগে, তিনি অভিযুক্তদের অবস্থার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতেন।
শিশুদের ডেকে এনে তাদের বাবা-মায়ের মামলার বিচার করার ভিডিওগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। একবার তিনি এক মায়ের ছেলে মারা যাওয়ার কথা শুনে তার সব জরিমানা মওকুফ করে দেন। আরেকটি ঘটনায় ঘণ্টায় ৩ ডলারের সামান্য আয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এক বারটেন্ডারের জরিমানা মওকুফ করে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘কেউ যেন রেস্তোরাঁয় খেয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে না যান, কারণ এতে খেটে খাওয়া মানুষকেই তার মূল্য দিতে হয়।’
বিচারের সময় বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে আনতে তিনি। এক ভিডিওতে ক্যাপ্রিও বলেন, ‘উইথ লিবার্টি অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল, যার মানে— সবার জন্য ন্যায়বিচার। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০ শতাংশ নিম্নআয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, অন্যায্য উচ্ছেদ, এমনকি ট্রাফিক মামলার মতো নাগরিক ইস্যুগুলোতে লড়াই করতে বাধ্য হয়।’
ক্যাপ্রিওর পরিবার তাকে বর্ণনা করেছে ‘একজন নিবেদিত স্বামী, পিতা, দাদা-নানা ও বন্ধু’ হিসেবে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সহমর্মিতা, বিনয় আর মানুষের প্রতি অটল বিশ্বাসের জন্য তিনি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব রেখেছেন। তার উষ্ণতা, রসবোধ আর দয়া তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।’
ক্যাপ্রিও প্রায় চার দশক ধরে প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল কোর্টে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে অবসর নেন।
তার জীবনী থেকে জানা যায়, প্রভিডেন্সের ফেডারেল হিল এলাকার একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ক্যাপ্রিওর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে সৌজন্য, ন্যায়পরায়ণতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে, আমি চাই সবাই তা দেখুক। আমরা বিভাজনমুখী সমাজে বাস করি। আমি চাই মানুষ উপলব্ধি করুক যে, নিপীড়ন ছাড়াও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’
১১৬ দিন আগে
কেন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ পুতিন?
সম্প্রতি আলাস্কা সম্মেলনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।
তবে এ বিষয়ে ত্রেমলিনের জবাবের প্রতীক্ষায় ছিল সবাই। এরপর সোমবারের (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে মস্কো এবং তা ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে মিলছে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি পর্যায় উন্নতকরণের সুযোগের ধারণাটি আলোচনায় এসেছে। তবে কোন নেতা বা প্রতিনিধিকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে— এমন কোনো নাম তিনি উল্লেখ করেননি এবং সুস্পষ্ট করেও কিছু বলেননি।
এরপর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আরেকটু সমঝোতার সুরে বলেন, দ্বিপক্ষীয় কিংবা ত্রিপক্ষীয় কোনো কাজই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না। তবে যেকোনো আলোচনায় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পুতিনের আপত্তির কারণ কী হতে পারে?
এসব বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছায়নি ক্রেমলিন।
অবশ্য এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। কারণ এই যুদ্ধ একতরফাভাবে পুতিনই শুরু করেছিলেন। পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেশটিতে হামলা শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
পুতিন এ-ও মনে করেন, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মিক জায়গা থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ইউক্রেনকে আলাদা করা ছিল ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, যদি এই বৈঠক হয়, তাহলে পুতিনকে এই ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে যে তিনি এমন এক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন, যাকে তিনি হাসির পাত্র বলে পরিহাস করেন এবং যে দেশের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না।
তাছাড়া রাশিয়ার মানুষদেরও বোঝানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। ওরিসিয়া বলেন, দিনের পর দিন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে রুশ নাগরিকদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে যে, জেলেনস্কি একজন নাৎসি, ইউক্রেন হলো পশ্চিমাদের হাতের পুতুল রাষ্ট্র… জেলেনস্কির সরকার অবৈধ। তাহলে হঠাৎ তিনি কেন তার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন? ক্রেমলিন এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে— বৈঠক হলে সেটিই হয়ে উঠবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মস্কো যে শুধু জেলেনস্কি সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে চলেছে, তা-ই নয়। তারা দেশটির নির্বাচনের স্থগিতাবস্থা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সামরিক আইনের আওতায়ই ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
সর্বশেষ শান্তি আলোচনার প্রস্তাবে যেকোনো চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনে নির্বাচনের দাবি করেছে মস্কো। এমনকি তারা জেলেনস্কির নামও মুখে নেন না, বলে কিয়েভ প্রশাসন।
একটু পেছনে ঘুরে তাকালে দেখা যাবে, এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রথম সরাসরি আলোচনায় জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে এক ইতিহাসের বই লেখকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন পুতিন।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং রাশিয়া বিষয়ক খবর ও বিশ্লেষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্তানোভায়ার ভাষ্যে, আসলে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না পুতিন। তার কাছে এই যুদ্ধ মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, বরং পশ্চিমাদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। তবে পুতিন যদি মনে করেন যে বৈঠক সফল হতে পারে, তাহলে আবার এতে রাজি হতেও পারেন।
তাতিয়ানা আরও মনে করেন, বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অবশ্যই মূল বিষয়গুলো আলোচনার জন্য থাকতে হবে। এর মধ্যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার মতো বিষয় রয়েছে। কিন্তু জেলেনস্কি শুরু থেকেই মস্কোর এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। আর এক্ষেত্রে ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারেন বলে ধারণা পুতিনের।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
তিনি বলেন, রাশিয়া যা চাইছে তা অর্জনে ট্রাম্প সহায়ক হতে পারে বলে মনে করে মস্কো। এ কারণে রুশ দাবিগুলো নিয়ে কিয়েভকে আরও নমনীয় ও খোলামেলা হতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তাতিয়ানা।
তার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে এবার হয়তো উশাকভের প্রস্তাব অনুযায়ী ইস্তানবুলে বৈঠকে বসতে রাজি হতে পারেন পুতিন। সেখানে প্রতিনিধি দলে উশাকভ ও ল্যাভরভকেও পাঠাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে এমন কোনো বৈঠকে বসবে না ত্রেমলিন, যেখানে তাদের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এদিকে, সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে এক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ওই পোস্ট দিয়ে তিনি ঘুমাতে গেলেন, আর উঠে বুঝতে পারলেন যে বিষয়টি এখনো চূড়ান্তই হয়নি। পরে সুর বদলে ফক্স নিউজে বলেন, আমি একভাবে পুতিন আর জেলেনস্কির মধ্যে সেট-আপটা করেছিলাম। তবে জানেনই তো, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তো তাদের! আমরা তো ৭ হাজার মাইল দূরে।’
কিন্তু কোনো ছাড় না দিয়েই পুতিন যখন আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সম্মানিত হয়েছেন, তখন বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এই বৈঠকে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি আগস্টের শুরুর দিকে ইউক্রেনে ড্রোন হামলার মাত্রা সামান্য কমালেও সোমবার রাত থেকে আবার তা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে সোমবার রাতভর মোট ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মস্কো।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্পের চাপে যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না পায় রাশিয়া, তাহলে তাদের সামরিক শক্তি তো আছেই।
তবে যে প্রশ্নের উত্তর আসলে কেউই জানে না, সেটি হলো— এই আলোচনা ব্যর্থ হলে এর দায় কার ঘাড়ে চাপাবেন ট্রাম্প?
১১৬ দিন আগে
শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই শীর্ষ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের নেতারা বৈঠকে বসেন, যেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর উপায়।
নিরাপত্তা নিয়ে কী ধরনের নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হবে। প্রায় ৩০টি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, যাদের বলা হচ্ছে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু সহায়তা করবে, তবে কীভাবে সেটি করবে তা পরিষ্কার নয়।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার জেলেনস্কি বলেন, এই সহায়তা নানা রূপে আসতে পারে, যা হতে পারে সরাসরি সৈন্য পাঠানো, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ, আকাশসীমা ও কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা দেওয়া, এমনকি শুধু আর্থিক সহায়তাও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ইউরোপের কোন কোন দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত?
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আশ্বাস রক্ষার অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠাতে রাজি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ‘আমাদের ইউক্রেনকে স্থলে সহযোগিতা করতে হবে।’ তবে জার্মানি এ বিষয়ে আরও সন্দিহান।
বিষয়টি নিয়ে এখনো অনেক কিছু নির্ধারণ করা বাকি। তার মধ্যে পশ্চিমা সেনারা কি যুদ্ধবিরতি লাইনে অবস্থান করবে? নাকি শুধু কিয়েভ ও লভিভের মতো বড় শহরে প্রশিক্ষণ দেবে? কিংবা রুশ হামলার মুখে পড়লে তাদের কার্যপদ্ধতি কী হবে? ইত্যাদি অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইউরোপের নেতৃত্বাধীন একটি শান্তিরক্ষা অভিযান সমন্বয় করবেন।
সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির পাশে বসে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক সহায়তা আসবে।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মূল দায়িত্ব ইউরোপের দেশগুলোকেই নিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারাই সামনের সারির নিরাপত্তা রক্ষক, কারণ তারা সেখানেই রয়েছে। তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে চায় ইউক্রেন। কিয়েভ মনে করে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হতে পারে এই চুক্তি। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের সম্ভাবনাকে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন তিনি, অথচ এটিই ইউক্রেনে ভবিষ্যত রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ হতে পারত বলে মনে করে কিয়েভ।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
আবার ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা অভিযানে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সেনা পাঠাবে— এমন সম্ভাবনাও নেই। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বাস্তবসম্মত একটি বিকল্প হতে পারে, পেন্টাগন প্রস্তাবিত আকাশ প্রতিরক্ষা বা ‘স্কাই শিল্ড’ উদ্যোগে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেন, বিশেষ করে কিয়েভ শহরের ওপর আকাশ প্রতিরক্ষা জোন থাকবে, যা ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
রাশিয়া কী বলছে?
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, আলাস্কার বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন সম্মত হয়েছেন যে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, বিষয়টি ন্যাটোর আওতার বাইরে থাকলেও তা কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর সমতুল্য হবে, যেখানে একটি দেশের ওপর আক্রমণকে সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে ধরা হবে।
তবে উইটকফের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে রাশিয়ার বক্তব্য মেলে না। ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা সৈন্যদের ইউক্রেনে উপস্থিতির ঘোর বিরোধী রাশিয়া। যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে (ইউক্রেনে) শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, রাশিয়ার অস্তিত্বগত নিরাপত্তা সংকটের দোহাই দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পুরোটাই দাবি করছেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও ইউক্রেনের কাঙ্ক্ষিত যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, সেগুলোরও দখল চান রুশ পেসিডেন্ট।
এর পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ ও নাৎসিকরণ’ প্রক্রিয়ার স্থগিত চান। অর্থাৎ, পুতিন চান, জেলেনস্কিকে অপসারণ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার কঠোরভাবে সীমিত করা হোক।
আপাতদৃষ্টিতে ইউক্রেনে শান্তি পুনর্স্থাপনে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় অগ্রগতি দেখা গেলেও মৌলিক অবস্থান থেকে সরেনি রাশিয়া। পুতিন এখনও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন না, এমনকি যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিতও দেননি তিনি। এত কিছুর মধ্যেও রুশ বোমাবর্ষণ থামেনি, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইতিহাস কী বলে?
এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ছেড়ে দিয়েছিল। বুদাপেস্ট স্মারকলিপির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ইউক্রেনের ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা’ ও ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ রক্ষা করবে এবং ‘বল প্রয়োগ ও হুমকি’ থেকে বিরত থাকবে।
সেই সময় অনেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিক মনে করেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়লে দেশটি রুশ হামলার ঝুঁকিতে পড়বে, কিন্তু ক্লিনটন প্রশাসনের এ বিষয়ে জোরাজুরিতে তা বাস্তবায়িত হয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের মে মাসে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা এক বন্ধুত্ব চুক্তি সই করেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী সীমান্তের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। চুক্তির অংশ হিসেবে কিয়েভ তার নৌবাহিনীর বেশিরভাগ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং ২০ বছরের জন্য সেভাস্তোপোল নৌঘাঁটি মস্কোকে ইজারা দেয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এত কিছুর পরও রুশ আগ্রাসন থামানো যায়নি। ২০১৪ সালে সেনা মোতায়েন করে ক্রিমিয়া দখল ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় ক্রেমলিন। এখন পুতিন বলছেন, পুরো ইউক্রেনই ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ।
তাই অতীতের ভঙ্গ প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন এবার আরও স্পষ্ট নিশ্চয়তা চাইবে, তা বলাই বাহুল্য।
১১৭ দিন আগে
‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
গত শুক্রবারের আলাস্কা সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রধান শর্ত হিসেবে পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। এটি পূব ইউক্রেনে অবস্থিত। এর মধ্যে লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরসহ দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এখনো ধরে রেখেছে ইউক্রেন। তাই ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অঞ্চল পুরোপুরি দাবি করেছেন পুতিন।
তবে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব বরাবরই প্রত্যাখান করে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের বিরোধিতা করছেন দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ নাগরিক। ফলে দনবাস অঞ্চলটি ঘিরেই শান্তি আলোচনায় একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা করছেন বিষেশজ্ঞরা।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে মস্কোর প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী। পরে ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু পর অঞ্চলটির বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রাশিয়া।
বর্তমানে দনবাসের ৪৬ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বা ৮৮ শতাংশই রাশিয়ার দখলে। এর মধ্যে লুহানস্কের পুরোটাই এবং দোনেৎস্কের এক তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো। তবে দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর বেশিরভাগই এখনও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন। এর জন্য অবশ্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে কিয়েভের। এই অঞ্চলের দখল ধরে রাখতে হাজার হাজার মানুষের জীবন গিয়েছে।
দনবাসের অবস্থান এবং কেন এটি চান পুতিন?
দনবাস আসলে দোনেৎস বেসিনের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দনবাস মূলত কয়লা ও ভারী শিল্পে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের অনেক মানুষই রুশ ভাষায় কথা বলেন। সোভিয়েত ইউনিয়েনের সময়ে সেখানকার কয়লা খনি ও ইস্পাত কারখানাগুলো সোভিয়েতে শিল্পায়নের মূল চালিকাশক্তি ছিল।
সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়ার প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক আনুগত্য বজায় ছিল। তবে ২০১৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত ক্রেমলিনপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর দনবাসে সংঘাত শুরু হয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এর পরপরই ক্রিমিয়া দখল করে মস্কো এবং পূর্ব ইউক্রেনজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। রুশ অস্ত্র ও যোদ্ধাদের সহায়তায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
এই বিচ্ছন্নতাবাদীদের তৎপরতা দোনেৎস্কতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে। এরপর ২০১৯ সালে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে সংঘাতের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার নিয়ে প্রচার চালান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি নিজেও রুশভাষী। এই নির্বাচনে দোনেৎস্কের মানুষই জেলেনস্কিকে নির্বাচিত করেন।
এরপর ২০২২ সালে দনবাসের অধিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেন পুতিন। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি দাবি করেছিলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ তার কাছে সাহায্য চেয়েছে, কারণ কিয়েভ সেখানকার রুশভাষী অধিবাসীদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে।
তবে এটি নিছক একটি অজুহাত বলেই মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কারণ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই এই অঞ্চল ছাড়িয়ে কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী। জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করে পুরো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই মস্কোর উদ্দেশ্য ছিল।
১১৭ দিন আগে