বিজ্ঞান-ও-প্রযুক্তি
গুগলের নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন, ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কা
ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি, (ইউএনবি)— এ বছরের জানুয়ারিতে গুগলের ঘোষিত নিরাপত্তা নীতি পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে আজ (রবিবার)। তবে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টিং’ নামের ওই নিরাপত্তা নীতিতে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও গুগল বলছে, বিজ্ঞাপনদাতাদের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারকারীর রুচি অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুবিধার্থেই এই নীতি কার্যকর করা হচ্ছে, তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মহলের দাবি, এর ফলে ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাবে এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের মাধ্যমে এসব তথ্য অপব্যবহার করার ঝুঁকি বাড়বে।
গুগলের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, গুগলের সেবা ব্যবহারকারীদের ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেসসহ ডিভাইস-সংক্রান্ত আরও তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতারা।
অবশ্য এ বিষয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিভিন্ন কোম্পানি আগে থেকেই ব্যাপকভাবে এসব তথ্য ব্যবহার করে আসছে। এখন তারা তথ্য ব্যবহারে ওইসব কোম্পানিকে দায়িত্বশীলতার মধ্যে আনতে চায়।
আরও পড়ুন: অ্যাপল ও গুগল মানচিত্র: মেক্সিকো বাদ দিয়ে আমেরিকা উপসাগর নামকরণ
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে প্রথম যখন বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ ধরনের নীতি প্রণয়নের আলোচনা হয়, তখন খোদ গুগলই এই নীতি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করেছিল। ফিঙ্গারপ্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াকে তখন তারা অসাধু কাজ বলে আখ্যায়িত করে। তবে তার ৬ বছর পরই সেই পথেই হাঁটতে শুরু করল প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে বিবিসিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, নিরাপত্তা নীতিমালা-সংক্রান্ত নতুন এই নীতি বাস্তবায়নের ফলে অংশীদারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না বলেও নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গুগল নিশ্চয়তা দিলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল। প্রতিষ্ঠানটির এহেন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। এই নীতিমালাকে ‘ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অনেকে।
গুগল ক্রোমের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাউজার মজিলার প্রকৌশলী মার্টিন থমসন বলেছেন, ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ও আইপি অ্যাড্রেস সংগ্রহ করা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হলে একটি পর্যায়ে গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কিনছেন, জেনে নিন সেটি আসলেই নতুন কিনা!
তিনি বলেন, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টিং চালু করে গুগল নিজেদের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানিগুলোর হাতে এমন এক ট্র্যাকিং পদ্ধতি তুলে দিয়েছে যা ব্যবহারকারীর পক্ষে আটকানো প্রায় অসম্ভব।’
যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশন অফিস (আইসিও) বলছে, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের একটি অসাধু পন্থা। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকা সংকুচিত হয়ে যাবে। এমনকি তথ্য সংগ্রহে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও সীমিত হয়ে পড়বে।’
৩০২ দিন আগে
পৃথিবীতে ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া সেই দুই নভোচারী
দীর্ঘ আট মাস পর পৃথিবীতে ফিরতে চলেছেন মহাকাশে আটকেপড়া নাসার আলোচিত দুই নভোচারী । আগামী মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের শুরুতে তাদের ফিরে আসার কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের তৎপরতায় মার্চের মাঝামাঝিতেই তাদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইলন মাস্কের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। আটকেপড়া দুই নভোচারীর নাম বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এতে মহাকাশ স্টেশনে আটকে থাকার সময় কয়েক সপ্তাহ কমে আসবে ওই দুই নভোচারীর। গত সপ্তাহে মহাকাশে অবস্থানের আট মাস পূর্ণ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: নাসার স্পেসএক্স মিশনের নভোচারীরা পৃথিবীতে ফিরছেন
গত বছরের জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনারের তৈরি একটি ক্যাপসুলে মহাকাশে যান নাসার দুই নভোচারী। ওই বছরেরে ২২ জুন তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা থাকলেও মহাকাশযানটির হিলিয়াম গ্যাস লিক হওয়ার কারণে তাদের ফিরতি যাত্রা স্থগিত হয়ে যায়।
নাসা সেই সময় জানায়, তাদের ফিরতে আট মাস সময় লাগতে পারে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। মহাকাশ স্টেশনে তাদের জীবন কেমন কাটছে তা নিয়ে জানতে আগ্রহী ছিল সারা বিশ্বের মানুষ।
নাসার বাণিজ্যিক ক্রুর প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মানুষের মহাকাশযাত্রা অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ।’
এদিকে, ক্ষমতা গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নাসার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন করে নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানোর আগেই আটকে থাকা দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন তারা। নাসা জানায়, উইলমোর এবং উইলিয়ামসকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করছে তারা।
নাসার তথ্যমতে, মহাকাশে যাত্রার শুরু থেকেই বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে তারা ওই নভোযানটি ফিরিয়ে এনে স্পেসএক্সের একটি নতুন ক্যাপসুল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী জুন মাসে তাদের ফিরে আসার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: মহাকাশ স্টেশনে ৬ মাস অবস্থানের পর ফিরলেন ৩ চীনা নভোচারী
তবে স্পেসএক্স জানিয়েছে নতুন কোনো ক্যাপসুল তারা এখনি উৎক্ষেপন করবেন না। তাদের ধারণা সফলভাবে যাত্রা পরিচালনা করতে আরো কারিগরী প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।
ফলে স্পেসএক্সের পুরাতন ক্যাপসুলেই এবার নভোচারীদের পাঠানোর কথা জানিয়েছে নাসা। আগামী ১২ মার্চ উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ক্রুতে দুজন নাসা নভোচারী, একজন জাপানি এবং একজন রাশিয়ান নভোচারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
৩০৬ দিন আগে
অ্যাপল ও গুগল মানচিত্র: মেক্সিকো বাদ দিয়ে আমেরিকা উপসাগর নামকরণ
নিজেদের মানচিত্রে মেক্সিকো উপসাগরকে আমেরিকা উপসাগর হিসেবে নামকরণ করেছে অ্যাপল। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরআগে সার্চ জায়ান্ট গুগলও একই কাজ করেছে। তবে তারা একটু ব্যতিক্রমীভাবে এই নাম পরিবর্তন করেছে। মার্কিন ব্যবহারকারীরা গুগল ম্যাপে আমেরিকা উপসাগর দেখতে পাবেন, আর মেক্সিকানরা দেখবেন মেক্সিকো উপসাগর।
এক ব্লগ পোস্টে তারা বলেছে, সরকারি নামকরণ তালিকা হালনাগাদ করা হলে আমাদের মানচিত্রে পরিবর্তন আনা হবে। মার্কিন নাগরিকরা দেখবেন আমেরিকা উপসাগর, আর মেক্সিকানরা দেখবেন মেক্সিকো উপসাগর। এর বাইরে যারা থাকবেন, তারা দুটো নামই দেখতে পাবেন।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে
এরআগে মেক্সিকো উপসাগরণের নাম পরিবর্তনে মার্কিন জিওগ্রাফিক নেমস ইনফরমেশন সিস্টেমের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প। তবে এই নামবদলের সমালোচনা করে মেক্সিকো জানিয়েছে, উপসাগরটির নাম পরিবর্তনের কোনো অধিকার নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মেক্সিকো ও কিউবার সাথে এই জলসীমার নতুন নামকরণের আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। গেল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণ হালনাগাদ করেছে মার্কিন জিওগ্রাফিক নেমস ইনফরমেশন সিস্টেম। এছাড়া বিংগস ম্যাপেও নাম পরিবর্তন এনেছে মাইক্রোসফট।
পাঁচ হাজার ৩০০ ফুট গভীরতার মেক্সিকো উপসাগরের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কেউবার সীমান্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তিকে কাজে লাগান, কার্যকর পদক্ষেপ নিন: ডি-৮ সদস্যদের অধ্যাপক ইউনূস
তবে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আমেরিকান উপসাগর নামটির স্বীকৃতি দিলেও সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে মূল নাম মেক্সিকো উপসাগরই উল্লেখ করবে। গেল ৪০০ বছর ধরে উপসাগরটি এই নাম বহন করে আসছে।
৩০৬ দিন আগে
ওপেনএআই কিনতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার প্রস্তাব মাস্কের
টুইটারের (বর্তমান এক্স) পর এবার চ্যাপজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম সারির এই প্রতিষ্ঠানটি কিনতে বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছেন মাস্কের নেতৃত্বাধীন একটি বিনিয়োগকারী দল।
ওপেনএআইয়ের সমস্ত সম্পত্তি কিনে নিতে ৯ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন মাস্কের আইনজীবী মার্ক টোবেরফ।
তবে লোভনীয় এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম আল্টম্যান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ও আল্টম্যানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উৎকর্ষের এই যুগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান পারস্পরিক টানাপোড়েনের মধ্যে মাস্কের এই প্রস্তাব নতুন উত্তেজনার জন্ম দিল।
আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো
এদিকে, মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তারই মালিকানাধীন এক্স (সাবেক টুইটার) কিনে নেওয়ার পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন আল্টম্যান। এক্স কিনতে ৯৭৪ কোটি ডলার দাম হাঁকিয়েছেন তিনি।
এক এক্স পোস্টে মাস্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে তার উদ্দেশে এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘ধন্যবাদ! আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করব না। তবে আপনি চাইলে আমরা টুইটার কিনে নিতে পারি।’
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রারম্ভিক এই যুগে এআইভিত্তিক বিভিন্ন টুলসের একটি বড় বাজার ইতোমধ্যে গড়ে ফেলেছে ওপেনএআই। ফলে সারা বিশ্ব থেকেই ব্যাপক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তি খাতে, বিশেষ করে এআইতে ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানটি যে আধিপত্য করবে, তা সবারই জানা।
ইলন ও আল্টম্যান উভয়েই ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৫ সালে প্রাথমিকভাবে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে ওপেনএআই। এরপর ২০১৮ সালে কোম্পানিটি থেকে বের হয়ে যান মাস্ক। তবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালিয়ে যান আল্টম্যান। পরে ওপেনএআইকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার হাত ধরে আসে চ্যাটজিপিটি।
ওপেনএআইকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে আল্টম্যানের এই সিদ্ধান্তের প্রতি অসম্মতি জানান মাস্ক। সে সময় তিনি বলেন, ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল মানবতার উপকারে এআই তৈরি করা, কিন্তু সেই নীতি থেকে সরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নতুন বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্যই এই নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপ উন্নত এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জগতে মাস্ক পুনরায় প্রবেশ করেন ২০২৩ সালে। এক্সএআই নামে একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসেন তিনি।
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের স্বত্ব কিনে নিতে মাস্কের কোম্পানি এক্সএআই ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যারন ক্যাপিটাল গ্রুপ ও ভ্যালর ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠান।
আল্টম্যানকে প্রস্তাব দিয়ে এক বিবৃতিতে মাস্ক বলেছেন, ওপেনএআইকে তার পুরনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটিকে আবারও একটি ওপেন-সোর্স ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
অবশ্য মাস্কে যে দাম হাঁকিয়েছেন তা ওপেনএআইয়ের সর্বশেষ বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ তহবিল সংগ্রহ করেছিল ওপেনএআই। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ছিল ১৫৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানে এর মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামো তৈরির জন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওপেনএআই। এই প্রকল্পে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল। এছাড়া প্রকল্পটির অপর দুই অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে জাপানের একটি বিনিয়োগকারী সংস্থা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সার্বভৌম তহবিল।
‘দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই প্রকল্পকে ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এআই অবকাঠামো প্রকল্প’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টাদের একজন হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পে ঘোষিত বিনিয়োগের অর্থ বাস্তবে এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে দাবি করেন মাস্ক। তবে তার এই দাবির পক্ষে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অক্টোবরে টুইটার কিনে নেন ইলন মাস্ক। পরবর্তীতে মাইক্রোব্লগিং এই প্ল্যাটফর্মের নাম পরিবর্তন করে তিনি এর নতুন নাম দেন ‘এক্স’।
৩০৭ দিন আগে
অভ্র কি-বোর্ড: বাংলা ভাষার ডিজিটাল রূপান্তরে মেহেদী হাসান ও নেপথ্য কুশলীরা
নিরঙ্কুশ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ভাষা কণ্ঠে ধারনের সময় নিউরনের প্রতিটি অনুরণন মিলিত হয় ঐকতানে। ইন্টারনেটে প্রথম বাংলা অক্ষরটি টাইপ করার সময় ঠিক এই অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল প্রত্যেক বাংলা ভাষাভাষি মানুষের হৃদয়ে। সেখানে অভ্র শব্দটি যেন ইন্টারনেটের নিঃসীম জগতে এক টুকরো বাংলাদেশের অবিরাম প্রতিধ্বনি। ডিজিটাল বাংলা লেখনীর সেই অভ্র কি-বোর্ড এবং তার নেপথ্যের কুশলীদের নিয়েই আজকের প্রযুক্তি কড়চা। চলুন, ঘুরে আসা যাক অভ্র সফ্টওয়্যারের ক্রমবিকাশের মঞ্চ থেকে, জেনে নেওয়া যাক কারিগরদের স্বপ্নগাঁথা।
সাবলীল বাংলা টাইপ ও একটি স্বপ্নের অঙ্কুরিদ্গম
২০০৩ সালের একুশে বইমেলায় বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স বায়োস নামক স্টলে প্রদর্শনী করা হয়েছিল ‘বাংলা লিনাক্স’-এর। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম (ওএস)টির মেনু ও ফাইলের নামসহ সবকিছুই ছিল বাংলাতে। কতক তরুণদের এমন অভাবনীয় উদ্যোগের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি ছিল পুরোপুরি বাংলায় বানানো ওয়েবসাইট।
এসব দেখে আর সব প্রযুক্তিপ্রেমিদের মতো যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন মেহেদী হাসান খানও। স্কুল জীবন থেকেই কম্পিউটার নিয়ে তার অগাধ আগ্রহ। বিশেষ করে প্রোগ্রামিংয়ের বিষয়গুলো তার মধ্যে ভীষণ উদ্দীপনা তৈরি করে। এগুলোর উপর তার বেশ দখলও ছিল। তাই বাংলা লিনাক্সের ইউনিবাংলা নামের ফন্টটি যে ইউনিকোড সমর্থিত, তা বুঝতে তার একদমি সময় লাগেনি।
বাসায় ফিরে মেহেদী ফন্টটি তার কম্পিউটারে ইন্সটল করে দেখলেন যে, এতে কঠিন যুক্তাক্ষরও লেখা যাচ্ছে। কিন্তু অক্ষরের তালিকা থেকে মাউস দিয়ে ক্লিক করে অক্ষর বসাতে হচ্ছে, যেটি বেশ ঝামেলার। তখনি সহসা মাথায় আসে একটা কি-বোর্ড লে-আউট থাকলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যেতো। ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ইন্টারনেটে লে-আউটের অনুসন্ধান। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া গেলো না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই লে-আউট বানানোর কাজটা তিনিই করবেন।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
অভ্র কি-বোর্ডের পথচলা
ঢাকার আইডিয়াল স্কুল এবং নটরডেম কলেজ পাশের পর মেহেদী পড়াশোনা করছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এরপরেও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল তদানিন্তন বহুল প্রচলিত প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট-এ। মেহেদীর উদ্দেশ্য ছিল লিনাক্সের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উইন্ডোজ ও এস-এও কি-বোর্ড ইন্টারফেসটি কাজ করবে। সে অনুযায়ী পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো কোড লেখার কাজ।
অতঃপর ২০০৩ সালের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ-এ প্রকাশিত হলো ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার অভ্রের প্রথম সংস্করণ। এখানে প্রথম লে-আউট হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছিল জনপ্রিয় বিজয় বাংলা কি-বোর্ড। কিন্তু এতে টাইপ করার সময় কোন ‘কী’তে কোন বর্ণ রয়েছে তা মনে রাখতে হতো। বিশেষ করে একদম নতুনদের জন্য এটি ছিলো বেশ বিড়ম্বনার। এই সমস্যা দূর করতে মেহেদী নিজেই বানিয়ে ফেললেন অভ্র ইজি।
সফ্টওয়্যার সহজে এবং বিনামূল্যে ডাউনলোড করার জন্য তৈরি করা হলো পরিপূর্ণ একটি ওয়েবসাইট; নাম ওমিক্রনল্যাব। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল অনলাইন ফোরাম, যেখানে অভ্র নিয়ে চলতো ব্যাপক আলোচনা। ব্যবহারকারীরা অভ্র সম্পর্কে বিভিন্ন কারিগরি প্রশ্ন করতেন এবং বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি পেশ করে প্রয়োজনীয় উন্নয়নের জন্য মতামত দিতেন।
পরবর্তীতে এই অভ্র উন্নয়নের কাজে আরও কিছু প্রোগ্রামার যুক্ত হন। এদের মধ্যে ছিলেন রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, রায়ান কামাল, শাবাব মুস্তাফা, নিপন হক, ওমর ওসমান, ও সারিম খান।
আরো পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কিনছেন, জেনে নিন সেটি আসলেই নতুন কিনা!
সফ্টওয়্যার বিকাশের ধারাবাহিকতায় অভ্রতে যুক্ত হয় ন্যাশনাল, প্রভা, ও মুনীর অপটিমার মতো নতুন নতুন লে-আউট। ফোনেটিক লে-আউট আসার পর আরও সহজ হয়ে ওঠে বাংলা টাইপিং। ইংরেজিতে ‘ami banglay gan gai’ লিখলেই বাংলা বর্ণমালায় রূপান্তরিত হয়ে স্ক্রিনে প্রদর্শিত হতো ‘আমি বাংলায় গান গাই’।
বিনামূল্যের পরিষেবার অমূল্য হয়ে ওঠা
পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রিলিজ অতঃপর উত্তরোত্তর বিকাশে অভ্রকে কখনোই বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখা হয়নি। অথচ মেহেদী নিয়মিত সফ্টওয়্যারের রিলিজ লগ লিখতেন, প্রতিবার জুড়ে দিতেন ক্রমিক ভার্সন নম্বর। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য লেখা হতো বিশাল বিশাল ইউজার ম্যানুয়াল। সফ্টওয়্যারটি বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও সেবাটিকে পেশাদার রূপ দিতে তিনি এতটুকু কার্পণ্য করেননি। ওমিক্রনল্যাবের ফোরামের দৌলতে ব্যবহারকারীদের অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন যে, এর পেছনে হয়ত কোনো বিদেশি সফ্টওয়্যার কোম্পানি রয়েছে।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ায় অভ্রের নামের সঙ্গে কোনো ধরনের পাইরেসি জড়িয়ে পড়ার অবকাশ ছিল না। পরবর্তীতে ওপেনসোর্স করে দেওয়াতে এটি কপিরাইটের জটিলতা থেকেও মুক্ত ছিল। সুতরাং সর্বাঙ্গীনভাবে একটি আইনসিদ্ধ পেশাদার সফ্টওয়্যারে পরিণত হয়েছিল অভ্র। এর ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’ স্লোগানের মতো এটি আক্ষরিক অর্থেই জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা তৈরি করেছিল। পরে পরবর্তীতে মেহেদী তার এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অথচ ডাক্তারি পড়াশোনার চাপে কখনোই থেমে থাকেনি অভ্রর উন্নয়ন।
আরো পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
বর্তমানে বিশ্বের যে প্রান্তেই বাংলা ভাষাভাষি জনগোষ্ঠির উপস্থিতি বিদ্যমান, সেখানেই রয়েছে অভ্রের পদচারণা। ২ দশকেরও বেশি সময় অতিক্রমের পরে এখনও এটি প্রথম দিনের মতোই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
৩০৭ দিন আগে
নতুন স্মার্টফোন কিনছেন, জেনে নিন সেটি আসলেই নতুন কিনা!
সুক্ষ্ম কিছু বিষয়ে উদাসীনতার জন্য অনেকেই সদ্য ক্রয় করা স্মার্টফোনটি আসলেই নতুন কিনা, তা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। প্রায় দেখা যায়, পূর্বে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো ভালোভাবে মেরামত করে বিক্রির জন্য তুলে রাখা হয়। তখন আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে দেখে একদম নতুন মনে হয়। সঙ্গত কারণে, নতুন ফোন কেনার অনেক পরে ক্রেতা আবিষ্কার করেন যে, তার ফোনটি আসলেই নতুন নয়। এজন্য ফোন কেনার সময় কিছু কৌশল অনুসরণ করা জরুরি। চলুন, স্মার্টফোনের নতুনত্বের সত্যতা নিরূপণ করার কিছু ব্যবহারিক পদ্ধতি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নতুন কেনা মোবাইল ফোনটি সত্যিই নতুন কিনা তা যাচাইয়ের ১০টি উপায়
.
ফোনের প্যাকেজিং এবং সীল পরীক্ষা
যেকোনো নতুন পণ্যের মতো নতুন ফোনের ক্ষেত্রেও সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো অক্ষত এবং ভাল-সিল করা প্যাকেজিং। মডেল, রঙ ও আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) সহ ফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদির লেবেলসহ প্যাকেজিংটি বেশ মজবুত থাকে। প্রস্তুতের পর একদম সদ্য মার্কেটে আসা পণ্যগুলোতে প্রায়ই সুরক্ষা সিল থাকে। একবার খুলে ফেললে পুনরায় সিল করার পরেও আগের ভাঙা সিলের চিহ্ন থেকে যায়। তাই ফোনের বাক্সটি সিল বিহীন কিংবা একদম খোলা কিনা তা খুটিয়ে দেখা জরুরি।
যেমন আইফোনের বাক্সগুলো সাধারণত সিম্লেস প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভিভোর ডিভাইসগুলোতে ব্র্যান্ডের স্টিকার ব্যবহার করা হয়, যা একবার খুলে ফেলার পর নষ্ট সিল বেশ ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
আরো পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
ফোনের বাহ্যিক অংশ পর্যবেক্ষণ
কেনার সময় ফোনের নতুনত্ব যাচাইয়ের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হলো ফোনের বডি চেকআপ। ডিভাইসটির বডি বিশেষত স্ক্রিনে কোনো স্ক্র্যাচ, ডেন্ট বা দাগ আছে কিনা তা সাবধানে পরীক্ষা করতে হবে। চার্জিং পোর্ট ও স্পিকার ছিদ্রের মতো জায়গাগুলোতে নজর রাখতে হবে। আগে ব্যবহৃত হলে এই অংশগুলোতে সুক্ষ্ম অসঙ্গতি চোখে পড়বে। ক্যামেরার লেন্সে আঙ্গুলের ছাপ বা হালকা ধুলো জমা থাকা মানেই ফোনটি ইতোমধ্যে একবার খোলা হয়েছে।
ওয়ানপ্লাস এবং অপ্পোর মডেলগুলোর ধাতব ফ্রেম এতটাই মসৃণ থাকে যে পূর্ববর্তী ব্যবহারে সৃষ্ট ছোট ছোট বিচ্যুতিগুলো নিমেষেই ধরা পড়ে।
সিরিয়াল নম্বর এবং আইএমইআই যাচাই
প্রত্যেকটি ফোনের জন্য থাকে একটি একক ও অনন্য সিরিয়াল নম্বর এবং আইএমইআই। ফোনের বক্সে দুটো কোডই পাওয়া যায়। তাছাড়া ফোনের সেটিংসে বা (অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ক্ষেত্রে) *#০৬# ডায়াল করেও এই কোডগুলো পাওয়া যায়। এই নম্বরগুলো ফোন বক্সের প্রদত্ত নম্বরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
যেমন অ্যাপলের ওয়েবসাইটে একটি ভেরিফিকেশন টুল থাকে যার মাধ্যমে আইফোনের সিরিয়াল নম্বর দিয়ে তার অ্যাক্টিভেশন স্ট্যাটাস যাচাই করা যায়। একইভাবে, ভিভো এবং রিয়েলমিরও ওয়ারেন্টি ও অ্যাক্টিভেশনের তারিখ যাচাইয়ের জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। তথ্যগুলো যথাযথভাবে মিলে না গেলে বুঝতে হবে যে ফোনটি ন্যূনতম একবার হলেও হাত-বদল হয়েছে।
আরো পড়ুন: লেখকদের সৃজনশীলতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা
১০০ ভাগ চার্জযুক্ত ব্যাটারি
নতুন ক্রয় করা ফোনের ব্যাটারি স্বাভাবিকভাবেই শতভাগ চার্জ থাকা উচিত। ম্যানুয়ালি চার্জ দেওয়া ছাড়াও ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাটারির অবস্থা চেক করা যেতে পারে। ফোন চালু করে দেখার সময় ব্রাইটনেস কম থাকলে তা চার্জ ২০ শতাংশের নিচে থাকার ইঙ্গিত দেয়। তবে এর ওপরে থাকলে ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) গড়পড়তায় মোটামুটি কার্যক্ষমতা নিয়ে চলতে পারে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টে বোঝাটা কঠিন। তাই পুরোপুরি ১০০ শতাংশ আছে কিনা তা ভালোভাবে জেনে সন্দেহ দূর করে নেওয়া উত্তম।
অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়ক ডায়াগনস্টিক অ্যাপ বা বিল্ট-ইন ব্যাটারি টুল থাকে।
আভ্যন্তরীণ সফ্টওয়্যার পরীক্ষা
সদ্য বাজারে প্রকাশিত ফোনে ফ্যাক্টরি ইন্সটল করা অ্যাপ এবং ওএস-এর সর্বশেষ সংস্করণ থাকে। থার্ড-পার্টি অ্যাপ, অসংলগ্ন সেটিংস বা পুরানো সফ্টওয়্যার মানেই ফোনটি এর আগে একবার ব্যবহার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কি কি অ্যাপ থাকে তা দেখার সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হলো ফ্যাক্টরি রিসেট করা।
কোনো কোনো ফোন রিসেট করার পর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সিস্টেম অ্যাপ দেখা যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্স থাকাটা ইতোপূর্বে ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও অব্যবহৃত ফোনে কখনোই পুরানো সংস্করণের কোনো সফ্টওয়্যার থাকবে না। পুরনো অ্যাপের অর্থ হলো ফোনটি আগে সক্রিয় ছিল এবং মাঝের সময়টিতে অ্যাপটির আপডেট করা হয়নি।
আরো পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
ওয়ারেন্টি এবং অ্যাক্টিভেশনের তারিখ নিরীক্ষা
অ্যাক্টিভেশনের তারিখ ও ওয়ারেন্টি অনুসরণ করে একটি ফোন কবে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল তা বের করা যায়। এই তথ্যাবলি যাচাইয়ের জন্য অধিকাংশ ফোন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অনলাইন পরিষেবা রয়েছে। ফোনের সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে সেই সাইটগুলোতে সংশ্লিষ্ট ফোনের অ্যাক্টিভেশনের তারিখ এবং ওয়ারেন্টি কভারেজ জানা যায়। সাধারণত নতুন বাজারে আসা ফোনের ওয়ারেন্টি কেনার তারিখ থেকে শুরু করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত থাকবে। শেষ সীমাটি যদি খুব কাছাকাছি হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিভাইসটি অনেক আগে থেকেই চালু ছিলো।
মেরামতের কোনো চিহ্ন আছে কিনা তা দেখা
কেসিংসহ পুরো বডির যেকোনো অংশে কোন ধরণের মেরামত করা হলে তা ফোনে ছাপ রেখে যায়। স্ক্রুগুলোতে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সেগুলোর আশেপাশে ক্ষুদ্র দাগ রয়েছে। কখনও কখনও মেরামতের পর স্ক্রুগুলো ভালোভাবে লাগানো হয় না। অন্যদিকে, নতুন ডিভাইসে কোনরকম স্ক্র্যাচ ছাড়াই যুতসইভাবে স্ক্রু লাগানো থাকে। কোনো কোনো ফোনে স্ক্রুর উপর ক্ষুদ্রাক্ষুদ্র বুশ ব্যবহার করা হয় যা ছিদ্রের সঙ্গে মাপ মতো যুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু পুরাতন ফোনে দেখা যাবে এগুলোর একটি নেই অথবা থাকলেও তার মাপ সমান নয়।
এছাড়া প্রায় সময় ফোনের আভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশগুলো আনঅফিসিয়াল বা মানহীন যন্ত্রাংশ দিয়ে বদলে দেওয়া হয়। এর ফলে ফোনের দীর্ঘায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আরো পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
ফোনের সাথে সরবরাহকৃত সামগ্রী যাচাই
বক্সের ভেতর ফোনের সঙ্গে দেওয়া থাকা অন্যান্য সামগ্রী সুক্ষ্মভাবে যাচাই করা অত্যাবশ্যক। আইফোন, ওয়ানপ্লাস এবং রিয়েলমি-এর মতো শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো ফোন মডেলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আনুষঙ্গিক সামগ্রী সরবরাহ করে। চার্জার, কেবল, অ্যাডাপ্টার, কিংবা ইয়ারফোনের গায়ে ব্র্যান্ডের লোগো দেখা যেতে পারে।
ভিভো এবং অনার ডিভাইসগুলোতে থাকা সুনির্দিষ্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টারগুলোর প্রতিলিপি করা বেশ কঠিন। তাই নকল দেওয়া হলে তা অচিরেই ধরা পড়ে।
ডায়াগনস্টিক টেস্ট
ফোনের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক টেস্টের গুরুত্ব অপরিসীম। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরনের ফোনে স্ক্রিন, সেন্সর এবং ব্যাটারি পরীক্ষা করার জন্য নিজস্ব ডায়াগনস্টিক মেনু এবং টুল রয়েছে। ডিসপ্লে, স্পিকার এবং ক্যামেরা পরীক্ষার দিকেও সতর্ক নজর রাখা প্রয়োজন।
আইফোনের ক্ষেত্রে প্রথমে পাওয়ার-অফ করতে হবে। তারপর এ অবস্থায় ভলিউম আপ ও ডাউন বোতাম দুটি একসঙ্গে চেপে রেখে ফোনকে চার্জে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ পর অ্যাপল লোগো প্রদর্শিত হলে বোতামগুলো ছেড়ে দিতে হবে। তারপর প্রদর্শিত বার্তার নিচে ‘স্টার্ট সেশন’-এ ট্যাপ করলেই ডায়াগনস্টিক মুড সক্রিয় হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ‘*#*#৪৬৩৬#*#*’-এ ডায়াল করে ব্যাটারিসহ সমগ্র ফোনের পারফর্মেন্সের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়া ‘টেস্টএম’ বা ‘ফোন ডক্টর প্লাস’-এর মতো বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে ডায়াগনস্টিক মুড সক্রিয় করে।
ক্রয়ের রশিদসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যবেক্ষণ
একটি পণ্যের পাশাপাশি তার খুচরা বিক্রেতার বৈধতা নিরুপণের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো পণ্য ক্রয়ের রশিদসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র। প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোতে বিস্তারিত ইনভয়েসের সঙ্গে ক্যাটালগ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিপণনের কাগজপত্র দেওয়া হয়। এগুলোর মাধ্যমে ডিভাইস অ্যাক্টিভেশন স্ট্যাটাস এবং পণ্য সংক্রান্ত অন্যান্য ইতিহাস জানা যায়। অনুমোদনবিহীন বিক্রেতারা আনঅফিসিয়াল ফোন বিক্রি করে থাকেন। ফলে এগুলোর সঙ্গে সহায়ক কোনো নথি দেখা যায় না।
এখানে উল্লেখ্য যে, এককভাবে শুধু নথিপত্রের উপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর সঙ্গে নথিপত্রের তথ্য মিলিয়ে দেখা বাঞ্ছনীয়।
পরিশিষ্ট
সব মিলিয়ে আপনার সদ্য কেনা নতুন ফোন সত্যিই নতুন বা অব্যবহৃত কিনা তা বোঝার জন্য ফোনের সার্বিক দিকগুলোতে সতর্ক মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। প্যাকেজিং, সিরিয়াল নম্বর ও আইএমইআই, ফোনের বডি এবং ওয়ারেন্টি ও অ্যাক্টিভেশনের তারিখ পর্যালোচনার মাধ্যমে ফোনের ব্যাপারে সঠিক তথ্য বের করা সম্ভব। ফোনের সঙ্গে প্রদত্ত সামগ্রী এবং ডায়াগনস্টিক চেক-আপের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় যে, ফোনটি ইতিপূর্বে ব্যবহার হয়েছে কিনা। উপরন্তু, ক্রয়ের রশিদসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র ডিভাইসের ব্র্যান্ডসংক্রান্ত গুণমান নিশ্চিত করে।
আরো পড়ুন: এয়ার পিউরিফায়ার: প্রয়োজনীয়তা, দাম, জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও নতুন মডেল
৩০৮ দিন আগে
চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো
মার্কিন স্টার্টআপ ওপেন এআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যমগুলো। তাদের লেখা ও কন্টেন্ট (আধেয়) বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে চ্যাটজিপিটির এই মূল উদ্যোক্তা কোম্পানির বিরুদ্ধে।-খবর বিবিসির
গেল নভেম্বরে ভারতের সবচেয়ে বড় সংবাদ সংস্থা এসিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) প্রথম ওপেন এআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। ভারতে এরকম প্রথম ঘটনা ছিল এটি। এখন অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোও এএনআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
এএনআইয়ের অভিযোগ, ‘ওপেন এআই তাদের কপিরাইটযুক্ত লেখা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটির কাছে দুই কোটি রুপি দাবি করা হয়েছে।’
আরো পড়ুন:ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
বিবিসির খবর বলছে, চ্যাটজিপিটি যখন ভারতে নিজেদের ব্যবসা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, তখনই তাদের বিরুদ্ধে এই মামলার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। জরিপ অনুসারে, ভারতেই চ্যাটজিপিটির সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারী।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কন্টেন্ট চুরির দায়ে ওপেন এআইকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাচ্ছে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু, দ্য ইন্ডিয়ান টুডে গ্রুপ, ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন এনডিটিভিসহ আরও এক ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওপেন এআই দাবি করছে, সর্বত্র গ্রহণযোগ্য আইনগত দৃষ্টান্ত মেনে ইন্টারনেটে সচরাচর পাওয়া যায় এমন উপাত্তই কেবল তারা ব্যবহার করছেন।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ছিলেন ওপেন এআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অ্যাল্টম্যান। সেখানে তিনি স্বল্প-খরচের এআই বাস্তুসংস্থান তৈরিতে ভারতীয় পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন দেশটির আইটিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে।
স্যাম অ্যাল্টম্যান বলেন, ভারতের উচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া দেশের একটি হওয়া। কারণ দেশটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার একটি বড় বাজার।
ইন্টারনেট চষে উপত্ত সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটকে। সেক্ষেত্রে ভারতের সাড়ে ৪০০ সংবাদভিত্তিক চ্যানেল ও খবরের কাগজ যেসব লেখা ও কন্টেন্ট প্রকাশ করে, সেগুলো চ্যাটজিপিটির উপাত্ত সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বলতে গেলে, চ্যাটবটের জন্য একটি উর্বর ভূমি হচ্ছে ভারত।
কিন্তু কী কী তথ্য চ্যাটজিপি সংগ্রহ করে বৈধভাবে ব্যবহার করতে পারবে, সে সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত এক ডজন মামলা রয়েছে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রকাশক, শিল্পী ও সংবাদসংস্থা এসব মামলা করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মতো তাদের অভিযোগও একই।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস। ওপেন এআই ও মাইক্রোসফটের কাছে তারা কোটি কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
৩১২ দিন আগে
শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
ডিজিটাল বিনোদনের জগতে এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে টিকটক। অতি স্বল্প সময়ের এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি এখন কোটি মানুষের বিস্তর সময় কাটানোর জায়গা। বিশ্ব জুড়ে এই বিপুল গ্রাহকের একটা বড় শ্রেণী হচ্ছে শিশুরা। খুব কম সময়ের মধ্যে শত শত ভিডিও কন্টেন্ট দেখার সুবিধা দীর্ঘক্ষণ যাবত শিশুদের আকর্ষণ ধরে রাখে। এই আসক্তি তাদের মানসিক ও শারীরিক উভয় ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা বর্তমানে বাবা-মায়েদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। চলুন, শিশুদের এই টিকটক আসক্তির কারণ, এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করা যাক।
টিকটকের প্রতি শিশুদের আকৃষ্ট হওয়ার কারণ
কারিগরি দিক থেকে টিকটক এমন ভাবে তৈরি যে, এর ছোট ছোট প্রত্যেকটি ভিডিও ট্যাপ করে না থামানো পর্যন্ত চলতেই থাকে। এক আঙ্গুলে মোবাইল স্ক্রিনে নিচ থেকে ওপরে স্লাইড করে এক ভিডিও থেকে আরেক ভিডিওতে যাওয়া যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি। সেই সাথে কন্টেন্টগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ ধরে মনোযোগ ধরে রাখে। প্ল্যাটফর্মের শক্তিশালী অ্যাল্গরিদম ইউজারের বিগত দেখা কন্টেন্টগুলো যাচাই করে তার পছন্দ মতো বিষয়গুলো তার সামনে মেলে ধরে। তাছাড়া অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের মতো লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া ভাইরাল কন্টেন্টের সয়লাব তো আছেই।
এই অবিরাম প্রবাহের মাঝে পড়ে যায় শিশুরাও। সৃজনশীল স্বাধীনতায় মোহাবিষ্ট হয়ে কোনও রকম বিবেচনার তোয়াক্কা না করেই নাচ, গান আর গল্প বলাতে উদ্যত হয়। তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তির দৌলতে স্মার্টফোনের ছোট্ট স্ক্রিন জুড়ে শিশুদের জন্য তৈরি হয় রীতিমত এক দূর্ভেদ্য বন্দিশালা।
আরো পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
টিকটক আসক্তি কেন শিশুদের জন্য ক্ষতিকর
.
মানসিক সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়
বিভিন্ন বয়সের কন্টেন্ট নির্মাতাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতি উঠে আসে ভিডিওগুলোতে। একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে লাইক ও ফলোয়ার বাড়ানো। সঙ্গত কারণেই কন্টেন্টগুলোতে অগ্রাধিকার পায় জনসাধারণের মাঝে বহুল সমালোচিত বিষয়গুলো। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো অনুকরণপ্রিয় বাচ্চারা এগুলোকে অনুসরণীয় হিসেবে দেখতে শুরু করে।
এই বিপথগামীতা শিশুদের মূল্যবোধকে নষ্ট করে। জীবনের শুরুতেই তারা অভিজ্ঞতা নিতে শুরু করে হতাশা, অপ্রতুলতা, ও আত্মম্ভরীতার মতো অনুভূতিগুলোর। সময়ের সাথে সাথে এগুলো তাদের মন-মেজাজ এবং আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।
উপরন্তু, সারাক্ষণ স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকার কারণে এই শিশুরা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়। মোট কথা তাদের সমগ্র জগতটাই বিকশিত হতে থাকে এই প্ল্যাটফর্মকে ঘিরেই।
আরো পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
স্বাস্থ্যকর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা
টিকটক স্ক্রলিং চলতে থাকে গভীর রাত অবধি। এতে করে শিশুদের রাতের স্বাস্থ্যকর ঘুম নষ্ট হয়। ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মস্তিষ্কে মেলাটোনিন উৎপাদনকে দমন করে। ফলে শিশুদের ঘুমিয়ে পড়াটা ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এটি শিশুর সার্কেডিয়ান চক্রকে ব্যাহত করে। এর প্রভাবে শিশুর একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি এবং সংবেদনশীল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হুমকির মুখে পড়ে। শিশু খিটখিটে মেজাজ এবং অবসাদগ্রস্ততার দিকে ধাবিত হতে শুরু করে।
অপর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়। কোনও ধরণের রোগের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দেহের স্বাভাবিক ক্রমবিকাশের জন্য এই ক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি।
শিক্ষাগত মানোন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা
অন্যান্য আকর্ষণীয় খেলার মতো এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিও রীতিমত নেশা সৃষ্টি করে শিশুদের মধ্যে। ভিডিও স্ক্রলিং-এর কাছে যাবতীয় কাছ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিক হলো পড়াশোনা বিমুখ হয়ে পড়া।
আরো পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
নতুন নোটিফিকিশেন আসা মাত্র তা চেক করতে গেলেই চলে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে করে পড়াশোনার প্রতি মনোন্নিবেশ ক্ষুণ্ন তো হয়ই, সেই সাথে পরবর্তীতে আবার পড়তে বসাতে নিরুৎসাহ কাজ করে। পরিণতিতে দেখা দেয় হোমওয়ার্ক ফেলে রাখা, ক্লাসে অমনোযোগ, এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট।
অনুপযুক্ত বিনোদন
টিকটকে ভিডিও প্রদর্শনে বয়সের কোনও সীমারেখা থাকে না। তাই অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে এগুলোর সম্মুখীন হওয়াতে বিভ্রান্তি ও ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি থাকে। এমনকি অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও এমন কন্টেন্ট বানাতে দেখা যায়, যা তাদের জন্যই অনুচিত। তাছাড়া টিকটক-এর অ্যাল্গরিদম উপযুক্ত ও অনুপযুক্ত বিষয়ের সাথে বয়সের সীমারেখার সামঞ্জস্য বিধান করতে সক্ষম নয়।
মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতিমান ব্যবসায়ী বিল গেট্স সম্প্রতি ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে টিকটক থেকে দূরে রাখার প্রতি জোর দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি সামনে এনেছেন এই অনুপযুক্ত কন্টেন্টের ঝুঁকিকে।
আরো পড়ুন: এয়ার পিউরিফায়ার: প্রয়োজনীয়তা, দাম, জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও নতুন মডেল
টিকটকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখার উপায়
.
অফলাইন কার্যকলাপ চর্চা
যে কাজগুলোতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর্যুপরি নাড়াচাড়া হয়, সে কাজগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। অনলাইন নির্ভর জীবন ব্যবস্থার প্রসারের ফলে কাজগুলো শুধুমাত্র মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের সর্বাঙ্গীন ক্রমবিকাশের জন্য ন্যূনতম কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা দরকার।
বাইরে খোলা আকাশের নিচে ক্রিকেট, ফুটবল বা র্যাকেটের মত খেলাধুলায় যথেষ্ট শ্রম প্রয়োজন হয়। নিদেনপক্ষে প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে সবুজ উদ্যানে হাটাহাটি করাটাও শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে। মাঝে মধ্যে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। সপ্তাহান্তে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে রান্না করা যায়, যেখানে ছোট ছোট কাজে অংশ নেবে শিশুরাও। এছাড়া কবিতা আবৃতি, ছবি আঁকা, বা গান গাওয়ার মতো শখগুলোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা সুস্থ মনস্তত্ত্ব চর্চারই নামান্তর।
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সবার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে যাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে থাকাটা বেজায় কঠিন। তাই নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য শিশুদেরকে ইন্টারনেটের ক্ষতিকর বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। এই মুক্ত আলোচনা শিশুদের মুক্ত বিবেচনার মাপকাঠি নির্ধারণের জন্যও জরুরি।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে
মূলত কৌতূহল ও উদ্দীপনার বিষয়গুলোতে শাসন বা ভয় প্রদর্শন অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে জেদ সৃষ্টি করে। যারা ভয় পেয়ে শান্ত হয়ে যায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবে যে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর কোনও কোনও শিশু ভয় নিয়ে বেড়ে উঠার কারণে নতুন কোনও কিছুকে আলিঙ্গন করার সাহস হারিয়ে ফেলে।
তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের এক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। শুরু থেকেই শিশুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাটা একটি কার্যকরি উপায়। এতে করে তারা নির্বিঘ্নে যে কোনও কিছু শেয়ার করতে পারে। হঠাৎ করে অনুপযুক্ত কোনও প্রশ্নে বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত না করে স্বাভাবিক থেকে সেটা বুঝিয়ে দিলে তা অতিরিক্ত কৌতূহলের দিকে ধাবিত হয় না।
স্ক্রিন টাইম লিমিট সেট করা
উপরোক্ত দুটি পদক্ষেপ গ্রহণের পর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে এই প্রযুক্তিগত সুবিধাটি ব্যবহার করা যায়। এখন অ্যাপেল ও অ্যান্ড্রয়েড সহ যে কোনও স্মার্টফোনেই নির্দিষ্ট অ্যাপগুলোতে দৈনিক স্ক্রিন টাইম লিমিট করার ফিচার রয়েছে। এতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেই অ্যাপটি আর ব্যবহার করা যায় না। টিকটকের মতো অ্যাপগুলোতে এই ফিচার নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদেরকে দীর্ঘ সময়ের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা যাবে। শরীর ও মনের সঠিক ক্রমবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুর স্মার্টফোন ব্যবহারে বাবা-মায়ের এই নিয়ন্ত্রণটুকু অতীব জরুরি।
আরো পড়ুন: শীতে ঘরের শুষ্কতা দূর করতে হিউমিডিফায়ার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল ও দাম
স্মার্টফোনের ইন্টারনেট ব্রাউজারের প্রাইভেসি ফিচার ব্যবহার
ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের পাশাপাশি এখন স্মার্টফোনেও ইন্টারনেট ব্রাউজারে প্রাইভেসি ফিচার সক্রিয় করা যায়। এখানে অভিভাবকরা অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট ও কন্টেন্টগুলো ফিল্টারের মাধ্যমে প্রাইভেসি সেট করে রাখতে পারে। এই ফিল্টার এমনকি একটি-দুটো শব্দের জন্যও সেট করে রাখা যায়।
ফ্যামিলি পেয়ারিং-এর ফিচারটিতে অভিভাবক তার সন্তানের সাথে টিকটক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে পারেন। ফলে সন্তান কি ধরণের কন্টেন্ট দেখছে তা অভিভাবকও জানতে পারেন। এ সময় অনুপযুক্ত কিছু ধরা পড়লে তারা সেই ভিডিওর জন্য প্রাইভেসি সেট করে দিতে পারেন।
এই পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত নয়। বরং উন্মুক্ত কথোপকথনের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হলে শিশুর সুস্থ অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: আইফোন চুরি প্রতিরোধে অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শেষাংশ
টিকটকের চিত্তাকর্ষক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও কন্টেন্ট শিশুদের নিমেষেই এর প্রতি আসক্ত করে তোলে। এতে করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়, ঘুমের ব্যাঘাত, শিক্ষাগত অবনতি এবং অনুপযুক্ত বিনোদনের সরণাপন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই সমস্যা দূরীকরণে গঠনমূলক কৌশর হতে পারে অফলাইন কার্যকলাপ চর্চা করা এবং ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিকগুলো বুঝিয়ে বলা। পাশাপাশি স্ক্রীন টাইম লিমিট সেট করা এবং ইন্টারনেট ব্রাউজারের প্রাইভেসি ফিচারগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এই পদক্ষেপগুলো শিশুদের সুস্থ ক্রমবিকাশ অব্যাহত রেখে প্রযুক্তির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
আরো পড়ুন: লেখকদের সৃজনশীলতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা
৩১২ দিন আগে
লেখকদের সৃজনশীলতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা
বর্তমান বিশ্বের সব থেকে আলোচিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই মানুষেরই তৈরি। অথচ ক্রমবিকাশের চরম মহূর্তে সৃষ্টি নিজেই যেন তার স্রষ্টাকে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে। মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাকে লেখ্য রূপ দেয়ার শৈলী বিগত শতাব্দীর শেষ লগ্নেও ব্যক্তির বিশেষত্বকে অনন্য করে তুলতো। কিন্তু বর্তমানে চোখের পলকে অবলীলায় লিখতে পারা এআই সেই বিশেষত্বের নেপথ্যে যেন কতক শর্ত জুড়ে দিয়েছে। লিখিত সৃষ্টিকর্মে এআইয়ের ব্যবহার বিচিত্রভাবে প্রভাবিত করছে সাংবাদিক ও লেখক সমাজকে। যার ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে তথ্যবহুল প্রতিবেদন বা অনবদ্য রচনার জন্য নতুন মাপকাঠি নিরুপণের। চলুন, লেখকদের সৃজনশীল কাজে এআইয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যাক।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি লেখকদের সৃজনশীলতার পরিপন্থী
একটি লেখার পটভূমি থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এআইয়ের যুগে এখন সেই পরিসরটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বের নামকরা এআই টুলগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি, গ্রামার্লি, জেমিনি, জ্যাস্পার, এবং ক্লড। সম্প্রতি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রথম সারিতে থেকে অন্য সব এআইকে টেক্কা দিচ্ছে চীনের ডিপসিক। এগুলোর মাধ্যমে সময়সাপেক্ষ কাজগুলো খুব কম সময়েই করে ফেলা যায়। ফলশ্রুতিতে, পেশাদার লেখকরা মনোনিবেশ করতে পারেন লেখার আবহ ও মৌলিকতার দিকে। চলুন, লেখালেখিতে এআই টুলগুলোর প্রধান সুবিধাগুলো জেনে নিই।
লেখকদের সৃজনশীলতায় এআইয়ের ইতিবাচক দিক
.
কন্টেন্টের বিচিত্রতা
এআইয়ের পারদর্শিতার ব্যাপ্তি তথ্যবহুল প্রতিবেদন থেকে পৌঁছে গেছে সৃজনশীল গল্প পর্যন্ত। ধরণ ও আকার নির্বিশেষে মার্কেটিং-এর জন্য যেকোনো কপিরাইটিং-এর জন্য এখন আর দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, লেখাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দিষ্ট পাঠকদের জন্য তৈরি হয়, যা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দৈনিক তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা এই টুলগুলোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা
শুধু তাই নয়, ওয়েব অ্যাপগুলো লেখার ভাষাশৈলীতেও ভিন্নতা আনতে সক্ষম। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক রিপোর্ট, কথোপকথন ধাচের ব্লগ পোস্ট, নাটকের সংলাপ নির্ভর স্ক্রিপ্ট, এবং ই-মেইল রাইটিং; প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রতা বজায় থাকে।
রাইটার্স ব্লক থেকে পরিত্রাণ
লেখকদের জন্য এআইয়ের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে রাইটার্স ব্লক থেকে মুক্তি। প্রত্যেক সৃষ্টিশীল লেখকের এমন কিছু সময় আসে যখন তার চিন্তা লেখার প্রয়োজনীয় রসদ যোগাতে পারে না। এতে করে যেকোনো লেখা শুরু করতেই তার মধ্যে একরকম স্থবিরতা কাজ করে। এই রাইটার্স ব্লকের জড়তা কাটতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বন্দিদশা থেকে নিমেষেই উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে এআই সফটওয়্যারগুলো। অবশ্য ইন্টারনেটের আগমনের পর থেকেই লেখকরা এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মোকাবিলার হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছিলেন। আর এখন সেই হাতিয়ার আরও মোক্ষম হয়ে উঠেছে।
এআই প্ল্যাটফর্মগুলো যেকোনো বিষয়ের উপর নতুন নতুন ধারণা দেখাতে পারে। এছাড়া এখানে পুরোনো কোনো রচনার ভেতর থেকে অভিনব দৃষ্টিকোণও খুঁজে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
চতুর্মাত্রিক গবেষণা
ইন্টারনেটের যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো গবেষণা প্রক্রিয়ায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু এগুলো সার্চ করা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কন্টেন্টগুলোকে সামনে হাজির করেই ক্ষান্ত হতো। ব্যবহারকারী সেগুলোর উপর গবেষণা করে তার কাঙ্ক্ষিত ঊত্তরটি খুঁজে নিতেন। কিন্তু এখন এআই ব্যবহারকারীর হয়ে এই ঊত্তরটি সরাসরি বের করে দেয়। বিশেষ করে গুগলের জেমিনি এক ক্লিকেই দীর্ঘ কন্টেন্টের সারবস্তু বের করে দেয়।
সামগ্রিকভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ গবেষণার সময় কমিয়ে এনেছে। ফলে লেখক ও সাংবাদিকরা আরও সুক্ষ্ম গবেষণার দিকে যেতে পারেন।
ব্যাকরণগত দিক থেকে নির্ভুল লেখনীর নিশ্চয়তা
প্রকাশনা জগতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় প্রুফরিডিং বা লেখার খসড়া সম্পাদনার ঝামেলাকে অনেকটা কমিয়ে এনেছে এআই। তথ্য ভুল না শুদ্ধ এবং লেখার ধরণ যেমনি হোক না কেন; প্রতিটি লেখাই ব্যাকরণগত নির্ভুলতা নিয়েই তৈরি হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ধরণ অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হলে ভাষাশৈলীর সমস্যাও দূর হয়। বাকি থাকে তথ্যের যথার্থতা, যা সম্পূর্ণভাবেই গবেষণার উপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
লেখার নির্দিষ্ট ধরণ বা নিজস্বতা সংরক্ষণ
চ্যাটজিপিটিসহ প্রথম সারির সবগুলো এআইয়েই রয়েছে লেখকদের নিজস্ব শৈলী সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে একজন লেখকের বাক্য বিন্যাস, শব্দ চয়ন, এবং পাঠকদের সম্বোধনের ধারা, যা লেখকের স্বকীয়তার পরিচায়ক। সেটিং থেকে একবার নির্ধারণ করে রাখা হলে প্রতি কন্টেন্ট জেনারেশনের ক্ষেত্রেই সেই স্বকীয়তা বজায় থাকে।
লেখকদের সৃষ্টিশীল কাজে এআইয়ের নেতিবাচক ভূমিকা
.
গতানুগতিক রচনার প্রসার
বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে প্রতিটি সূক্ষ্ম স্থানগুলোর জন্য সঠিক প্রম্প্ট বা নির্দেশনা না দেওয়া হলে এআই মোটা দাগে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে। তাতে বাক্য বিন্যাস হয় গতানুগতিক এবং সার্বজনীন শব্দগুচ্ছে পরিপূর্ণ হওয়ায়, তা ইন্টারনেটে থাকা অন্যান্য লেখার সঙ্গে মিলে যায়। এ ধরণের রচনার সবচেয়ে মানহীন দিক হচ্ছে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি।
এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্দেশনার পদ্ধতি নিয়ে যথার্থ ধারণা ব্যতীত মানসম্পন্ন লেখা পাওয়া অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাধারণ নির্দেশনা দেওয়ার চর্চাটি বিপুল পরিসরে ঘটছে। এতে করে গোটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে গতানুগতিক রচনা। এটি সাহিত্যসহ সামগ্রিক প্রেস মিডিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
স্বকীয়তার অবক্ষয়
এআই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাজ ও তথ্যের ভিত্তিতে লেখা তৈরি করে। শিরোনাম ও পর্যালোচনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সেগুলো দিনশেষে সমজাতীয় লেখারই পৃষ্ঠপোষক। কিংবদন্তির কোনো গল্পে অ্যাডাপ্টেশনও একটি সৃজনশীলতা যখন সেখানে লেখকের স্বকীয়তা থাকে। কিন্তু বর্তমানে কম সময়ে এআইয়ের লেখাগুলো লেখকদের সেই স্বকীয়তা আরোপের প্রতি নিরুৎসাহিত করছে। এআই প্রস্তাবিত আবহ এবং কাঠামোর উপরেই তারা নিজেদের কাজগুলো প্রস্তুত করছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কিংবদন্তিতুল্য লেখক তৈরির সম্ভাবনা ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে।
৩১৫ দিন আগে
ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে আছে চ্যাটজিপিটি। এছাড়া গুগলের জেমিনি ও অ্যানথ্রপিক ক্লডের মত কয়েকটি নামও বেশ পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই ওপেন এআইয়ের এই সেবাটির সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। তবে এবার এআই যুদ্ধে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের। কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও বাজারে যুগান্তকারী প্রভাবের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন করেছে এই পরিষেবাটি। চলুন, চ্যাটজিপিটিসহ সমসাময়িক প্রতিযোগীদের মাঝে ডিপসিকের অবস্থানটি পর্যালোচনা করে দেখা যাক।
ডিপসিক কি
এই উন্নত এআই মডেলটির নামকরণ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নামেই। চীনের জেজিয়াং প্রদেশের রাজধানী শহর হ্যাংজোর একটি গবেষণাগারে চলে এর উন্নয়নের কাজ। ২০২৩ সালের মে থেকে কাজটি শুরু করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং। গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য বিশ্বব্যাপি সুপরিচিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া থেকে বিপুল সংখ্যক চিপ জমা করছিলেন ওয়েনফেং। বিশ্লেষকদের দাবি, সংগ্রহে থাকা এই চিপগুলো কাজে লাগিয়েই তিনি ডিপসিক বানিয়েছেন। চিপগুলো যথেষ্ট কম দামি হওয়ায় অনেক কম খরচেই মডেলটি চূড়ান্তভাবে ব্যবহারযোগ্য একটি সেবায় রূপ লাভ করে।
ডিপসিকের মডেলটি ওপেন-সোর্সভিত্তিক। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ হিসেবে ছাড়া হয় ডিপসিকের প্রথম সংস্করণ আর ১। ২৭ জানুয়ারি নাগাদ এটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে বিনামূল্যে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপ হিসেবে চ্যাটজিপিটিকে ছাড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়, চীনসহ যুক্তরাজ্যের কয়েকটি দেশেও এই চ্যাটবট অ্যাপটি চ্যাটজিপিটির তুলনায় বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: স্মার্টফোনে ভূমিকম্প সতর্কতা চালু করবেন যেভাবে
তাই সিলিকন ভ্যালিসহ গোটা এআই দুনিয়াকে এটি নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে বলে দাবি করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত এআই পরিষেবাগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ডিপসিককে এখন উদীয়মান এআই হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এতদিন ধরে চ্যাটজিপিটির একচেটিয়া কর্তৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলে ডিপসিক এআই প্রতিদ্বন্দিতার এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছে।
সমসাময়িক এআই মডেলগুলোর সঙ্গে ডিপসিকের তুলনা
.
উন্নয়ন খরচ
ডিপসিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রধান কৃতিত্ব হচ্ছে এর বাজেট-বান্ধব প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া। ১০ হাজার এনভিডিআ জিপিইউয়ের ওপর আর ১ মডেলটির বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজন হয়েছিলো মাত্র ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
এটি ওপেনএআই, মেটা (সাবেক ফেসবুক) ও গুগলের উন্নয়ন খরচ থেকে অনেক কম। সঙ্গত কারণেই এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক ব্যবহৃত এআই অ্যাপে পরিণত হয়। এতে করে রাতারাতি মোড় ঘুরে যায় এআই নির্ভর ইন্ডাস্ট্রির। এই ধাক্কার শিকার হয়েছে মেটা ও মাইক্রোসফ্টসহ অনেকগুলো এআই প্রতিষ্ঠানের। এই তালিকায় রয়েছে- স্বয়ং এনভিডিআও, যেখানে স্টকের দাম পড়ে গেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
পারফর্মেন্সের দিক থেকে বিশ্বখ্যাতি থাকলেও চ্যাটজিপিটি ও জেমিনি প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যথেষ্ট বেশি। অন্যদিকে ডিপসিক কম খরচে প্রায় সমপরিমাণ সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এটি বদলে দিচ্ছে যে পদ্ধতিতে এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তার ন্যায্যতার হিসাব।
পারদর্শিতা
কোনও প্রশ্ন করা হলে ডিপসিক আর ১ প্রথমে তার উত্তর তৈরি করার প্রক্রিয়াটি ব্যবহারকারির সঙ্গে শেয়ার করে। এখানে থাকে উত্তর প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তি ও সামঞ্জস্যপূর্ণতা। এখানে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হলে ব্যবহারকারি তার নির্দেশনা দিয়ে দেন। তারপর চূড়ান্ত নিদের্শনার ওপর নির্ভর উত্তরটি সরবরাহ করা হয়। এতে করে উত্তরের নির্ভুলতা ও প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকে। সহজ ভাষায় ডিপসিক কাজ দেখানোর পূর্বে সে কিভাবে কাজটি করবে তার একটা খসড়া নিয়োগকর্তাকে দেখিয়ে নেয়। অন্যদিকে, চ্যাটজিপিটি নিজে থেকেই পুরো কাজটি সম্পন্ন করে। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত সংস্করণে এটি আরও পরিণত হয়েছে। তাছাড়া প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিগুলো আরও ভালো পারফর্মেন্স দেয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে শুরুর দিকে চ্যাটজিপিটির অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে ডিপসিক অনেকটা এগিয়ে থাকবে।
আরো পড়ুন: নারীর নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মোবাইল অ্যাপ
গ্রহণযোগ্যতা
প্রতি মুহুর্তে ডিপসিকের ক্রমবর্ধমান ডাউনলোড সংখ্যার ক্রমাগত গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রকাশ করছে। মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই এর মোবাইল অ্যাপটির ২৬ লাখ ডাউনলোড হয়। এখন পর্যন্ত এটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপের তালিকার শীর্ষে ও বিশ্ব জুড়ে ১১১টি দেশে শীর্ষ ১০ অ্যাপে মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপি একটি বিশ্বস্ত নাম হয়ে ওঠায় প্রতি মাসেই চ্যাটজিপিটির ডাউনলোড সংখ্যা থাকে কয়েক মিলিয়ন
এর পেছনে অবশ্য মুক্তির সময় অভূতপূর্ব সেবা হওয়া ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পরিষেবাগুলোর সঙ্গে এর সমন্বয়ও দায়ী।
বিচার-বিবেচনা
তৈরিকৃত লিখিত কন্টেন্টের ধরণ কেমন হবে তা নিয়ে প্রতিটি এআই মডেলেরই কিছু স্বতন্ত্র বিবেচনা পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পক্ষপাতিত্বের কোনো অভিযোগ মেলেনি।
শুরু থেকেই এগুলো স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণতা বজায় রেখেছে। এই নৈতিক অবস্থান বিশ্ব বাজারে তাদের বস্তুনিষ্ঠ কন্টেন্ট ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
আরো পড়ুন: আইফোন চুরি প্রতিরোধে অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কিন্তু ডিপসিককে নিয়ে এই সূচনালগ্নেই একটি সমালোচনার অবতারণা ঘটেছে। আর তা হচ্ছে- চীনের ঐতিহাসিক তিয়েনানমেন স্কয়ার বিক্ষোভ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে আর ১ তা এড়িয়ে যায়। এমন পক্ষপাতমূলক বৈশিষ্ট্য নিয়েই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ডিপসিক।
এরই রেশ ধরে নিকট ভবিষ্যতে এআই সেবা প্রদানে সীমিত অনুশীলনের আশঙ্কা থাকছে, যা উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহের অন্তরায়।
প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা
মুক্তির পরপরই ডিপসিকে বড় আকারের কিছু সাইবার আক্রমণ চীনের বাইরের ব্যবহারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি অ্যাপটির ব্যবসার ক্ষেত্রে সমূহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও নিয়মিত হালনাগাদকরণ এই বাধা অতিক্রমে কার্যকর হতে পারে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির পাশাপাশি অন্য এআই মডেলগুলোও নিজেদের আপগ্রেড করবে।
আরো পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সাশ্রয়ী খরচে এআইয়ের উন্নয়ন সাধনের জন্য চীনের সঙ্গে সমন্বয় করতে সহমত পোষণ করেছে।
সর্বপরি, উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক উভয়ের জন্যই ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে এমন প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হওয়ার এক সুদূরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে।
ইতিবাচক ও গঠনমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌলতে তৈরি হয় সমস্যা সমাধানের প্রেক্ষাপট। এতে করে একদিকে যেমন ব্যবসাগুলোর প্রান্তিক লাভ বাড়ে, অপরদিকে তেমন সাধারণ মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতিও উন্নত হয়।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে
সারবস্তু
চ্যাটজিপিটির একচেটিয়া রাজত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবার এআই কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মঞ্চ তৈরি করলো ডিপসিক। উন্নয়ন খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যারটি নিয়ে গবেষণার বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডাউনলোড করে নিজস্ব ডিভাইসে সংরক্ষণের সুবিধা। ফলে সহজলভ্যতা নন-টেক শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় বিরাট এক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি বাজার।
আরো পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা
৩১৮ দিন আগে