জীবনধারা
পবিত্র ওমরাতে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি ও কিছু সাবধানতা
ওমরা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই ইবাদতের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মুসলমানরা কিবলা কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। হজ্জ পালনের জন্য মূলত একটি নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে। সেখানে সামষ্টিক কার্যক্রম একই হলেও ওমরার জন্য তেমন কোনো মৌসুমের বাধ্যবাধকতা নেই। তাই মুসলিমরা বছরের যেকোনো সময়েই ওমরা করতে পবিত্র শহর মক্কার পথে যাত্রা করতে পারেন। পদ্ধতিগত দিক থেকে এই ইবাদত যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ, যেখানে দরকার পড়ে দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার। চলুন, সৌদিআরবে পবিত্র ওমরা পালনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের জন্য করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ওমরায় যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যগত পূর্বপ্রস্তুতি কেন জরুরি
মক্কা শহরের সাফা ও মারওয়া নামক দুটি পাহাড়ে পায়ে হেঁটে সাতবার উঠা-নামা করা সাঈ নামে পরিচিত। এটি ওমরার সবচেয়ে শ্রমসাধ্য কাজ। এরপর ওমরার কঠিন কাজটি হচ্ছে কাবা শরীফকে ঘিরে সাতবার প্রদক্ষিণ করা, যাকে তাওয়াফ বলা হয়। এই দুই ক্রিয়াকলাপের জন্য শরীর ও মন উভয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহনশীলতার প্রয়োজন হয়। যারা কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত নন এবং বার্ধক্যপীড়িতদের জন্য এই কাজগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তাই যৌবন বা বার্ধক্যে জীবনের যে সময়েই ওমরার পরিকল্পনা করা হোক না কেন, তার জন্য যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে আগে থেকে শরীর গঠনের প্রয়াস পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যগত কোনো জটিলতা থাকলে তার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। এছাড়া ওমরার পূর্বপ্রস্তুতি ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা এবং মনোনিবেশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমুন্নত করে।
আরো পড়ুন: রমজানে রোজা রাখার প্রস্তুতি: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে করণীয়
ওমরাতে যাওয়ার আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি
.
স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন
প্রথমেই নজর দিতে হবে শরীরের দিকে। কেননা অদম্য স্পৃহা থাকার পরেও অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য জটিলতা তীর্থযাত্রার প্রধান অন্তরায় হতে পারে। তাওয়াফ এবং সাঈর মতো কঠোর পরিশ্রমের কাজগুলোর জন্য রোগহীন সুগঠিত দেহের কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি এবং হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। এতে পায়ের পেশী শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। একই সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হবে নিয়মিত খাদ্যভ্যাসে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাকে পরিপূর্ণ রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে। দিনে পানি পান করতে হবে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস। চিনি, ক্যাফেইন, স্যাকারিন যুক্ত জুস, অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি ঘুমের ব্যাপারেও যত্নবান হওয়া উচিত। প্রতিদিন রাতে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া ও ফজর নামাজের সময় ঘুম থেকে ওঠার রুটিন দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা জরুরি। রাতের ঘুম দুপুর, সন্ধ্যা বা দিনের অন্যান্য সময়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের আবহাওয়ায় যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির পাশাপাশি এই বিষয়টিও শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। সেই আবহাওয়া সহ্য করার মতো শরীরের ন্যূনতম সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য শারীরিক অবস্থা সহনীয় মাত্রায় রয়েছে কিনা—তা যাচাই করতে হবে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রায়ই মেনিনজাইটিস কিংবা মৌসুমী ফ্লুসহ নানা ভ্যাকসিনেশনের প্রয়োজন হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রতিটি প্রক্রিয়া সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি
ওমরা যেহেতু একটি সমষ্টিগত কার্যক্রম তাই প্রচুর জনসমাগম এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষার বিষয়গুলো খুবই স্বাভাবিক। এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য দরকার হয় ধৈর্য্য, মানসিক সহনশীলতা এবং দুশ্চিন্তাহীনতা। এর জন্য ফ্লাইটের অনেক আগে থেকেই মন নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু অনুশীলন পদ্ধতির শরণাপন্ন হতে হবে।
দৈনন্দিন যেকোনো কাজে অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে সংযম বজায় রাখা সবথেকে অপরিহার্য বিষয়। অপেক্ষার সময়গুলো অপ্রয়োজনীয়, হতাশাজনক এবং বিভ্রান্তিকর কাজ করে বিনষ্ট করা যাবে না। পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো মনকে পরম প্রশান্তি দেবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম দেহের পাশাপাশি মননশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়ক।
ওমরার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় দোয়া শিক্ষা
সহসা এই ইবাদতের সুযোগ হয়ে ওঠে না। সঙ্গত কারণেই ওমরার নিয়মগুলোতে প্রতিদিনের আদায় করা নামাজের মতো অভ্যস্ত থাকা যায় না। তাই পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার সময় অবধারিতভাবে ওমরার সঠিক প্রক্রিয়া জেনে নিতে হবে।
শুরু থেকে শেষ ওমরার প্রতিটি কার্যকলাপের ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সময় আত্মিক উন্নয়ন ঘটে। এর ফলে ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা ও মনোনিবেশ আরও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক দোয়াগুলো শিখে তা প্রতিনিয়ত আওড়ানো যেতে পারে। অনুশীলনের সুবিধার্তে মোবাইলে রাখা যেতে পারে দোয়া শিখনের বিভিন্ন অ্যাপ। এগুলোর মধ্যে ‘দোয়া অ্যান্ড যিকির (হিসনুল মুসলিম)’ এবং ‘মুসলিম বাংলা কুরআন হাদীস দুআ’ বেশ সহায়ক দুটি অ্যাপ।
আরো পড়ুন: পবিত্র রমজান মাসে প্রয়োজনীয় ১০টি মোবাইল অ্যাপস
পবিত্র ওমরার জন্য সৌদিআরবে রওনা হওয়ার পূর্বে করণীয়
.
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া
চূড়ান্তভাবে রওনা হওয়ার আগে ব্যাগ গোছানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর তালিকা করে নেওয়া জরুরি। বেশ সময় নিয়ে এই তালিকা করা হলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নজর এড়িয়ে যাবে না। পাসপোর্ট, ভিসা ও হোটেল বুকিংয়ের মতো ভ্রমণ নথিগুলো সবার আগে রাখতে হবে। এরপরেই অগ্রাধিকার পাবে ইহরাম পোশাক, নামাজের ম্যাট, আরামদায়ক জুতা এবং ঔষধপত্র। ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এগুলোর সঙ্গে স্থান পাবে বিশুদ্ধ পানির বোতল, টিস্যু এবং ব্যান্ড-এইডস। জরুরি অবস্থায় দ্রুত ব্যবহারের জন্য পুরো ভ্রমণে ছোট্ট একটি ব্যাগ সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ডিজিটাল কপি রাখা
হজযাত্রীদের ভিসা, পাসপোর্ট, ফ্লাইট টিকিট ও হোটেল রিজার্ভেশনসহ যাবতীয় নথিপত্র স্ক্যান করে অনলাইনে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এতে করে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা যাবে। অনলাইনে সংরক্ষণের জন্য গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সের মতো বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা রয়েছে। এটি আকস্মিক কোনো কাগজপত্র হারানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকর বিকল্প।
জরুরি যোগাযোগ নাম্বারগুলো সংগ্রহে রাখা
দীর্ঘ যাত্রায় নানা ধরণের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় কিছু ফোন নাম্বার অনেক উপকারে আসে। বিশেষ করে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা এবং দূতাবাস বা কন্স্যুলেটের নাম্বারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও কাছের হাসপাতালের ফোন নাম্বারও সংগ্রহে রাখা উচিত। স্মার্টফোনে রাখার পাশাপাশি অফলাইনেও ব্যবহারের জন্য নাম্বারগুলো একটি ছোট নোটবুকে লিখে রাখতে হবে।
লাগেজে লেবেল দেওয়া
প্রতি বছর ওমরার অনেকগুলো গ্রুপ সৌদি আরব অভিমুখী হওয়ায় কাস্টমসসহ বিভিন্ন জায়গায় লাগেজ অদল-বদলের ঘটনা ঘটে। তাই রওনা হওয়ার পূর্বে লাগেজে ভালোভাবে লেবেল সংযুক্ত করা অপরিহার্য। একটি টেকসই ট্যাগের মধ্যে তীর্থযাত্রীদের পুরো নাম, হোটেলের ঠিকানা এবং বর্তমানে সঙ্গে বহনকৃত একটি যোগাযোগ নাম্বার থাকবে।
রঙিন ফিতা বা স্টিকারের মতো টোটেমগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ভিড়ের মধ্যে অনেকগুলো একই রকম ব্যাগের মধ্যে নিজের ব্যাগটিকে আলাদা করে চেনা যাবে। এছাড়া স্যুটকেসের ভিতরে প্রয়োজনীয় নথিগুলোর এক সেট অনুলিপি রাখলে সেগুলো পরবর্তীতে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হয়।
আরো পড়ুন: সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
সৌদিআরবে পবিত্র ওমরাকালীন সতর্কতা
.
পরিশ্রমের ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা
আগে থেকে ইবাদতের জন্য মনস্থির করা থাকলে ওমরাকালীন পরিশ্রম অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরেও ওমরার সময় নিজের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রতিটি প্রক্রিয়ায় নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী ছোট ছোট বিশ্রাম নেওয়া উচিত। একটানা না হেঁটে মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য জটিলতায় থাকা ব্যক্তিদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।
মূল্যবান জিনিসপত্রের ব্যাপারে সাবধানতা
হজযাত্রীদের টাকা, পাসপোর্ট এবং মোবাইল ফোন রাখার জন্য নিরাপদ মানিবেল্ট বা লুকানো পাউচ ব্যবহার করা উচিত। নগদ টাকা এবং ব্যয়বহুল সামগ্রী যথাসম্ভব চোখের আড়ালে রাখা উচিত। হোটেলের ভেতরে ও আশেপাশে, স্থানীয় মার্কেট থেকে কেনাকাটার সময়েও এই সতর্কতা আবশ্যক।
অনেক সময় নিজের অসাবধানতার কারণেও সঙ্গে বহন করে চলা জিনিসপত্র পড়ে যায়। তাই শুধুমাত্র নিতান্তই দরকারি জিনিস ছাড়া সবকিছু হোটেলে নিরাপদে রাখা উচিত।
যতটা সম্ভব মাত্রাতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলা
অপ্রয়োজনীয় যানজট এড়াতে হজযাত্রীদের নির্ধারিত নামাজ ও তাওয়াফ এলাকার মধ্যে থাকা উচিত। চলাফেরার সময় হুট করে কোথাও কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেই সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত জটলার সৃষ্টি হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রায় ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ধাক্কার ঝুঁকি থাকে। তাই এই জায়গাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা বজায় রাখতে হবে। এর জন্য আশেপাশের গতিবিধি সম্পর্কেও সর্বদা সতর্ক থাকা জরুরি।
গ্রুপের সান্নিধ্যে থাকা ও নির্দেশনা অনুসরণ
যেকোনো অপরিচিত পরিবেশে যে গ্রুপ বা সঙ্গীর সঙ্গে ভ্রমণ করা হয়েছে তাদের সান্নিধ্যে থাকাটা অত্যাবশ্যক। বিষয়টি ওমরার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রীদের সমাগম হওয়ায় আকস্মিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি থাকে। এই সমস্যা সমাধানে গ্রুপের প্রধান একটি সাধারণ মিটিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। এই নির্দেশনা অনুসরণ করা ঝামেলাবিহীন ওমরার অভিজ্ঞতারই নামান্তর। এর মধ্যেও যেকোনো সন্দেহ তৈরি হলে মোবাইল কলের মাধ্যমে সংযোগ রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
শেষাংশ
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ওমরা পালনের জন্য দেহ ও মনকে প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য। কেননা এখানে একই সঙ্গে দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহনশীলতার পরীক্ষা দিতে হয়। শরীর ঠিক রাখার জন্য মনোযোগ দিতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঘুম ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার দিকে। অপরদিকে ওমরার আচার-অনুষ্ঠান ও দোয়া শেখা প্রাথমিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি দেবে। উপরন্তু, যাত্রার পূর্বে প্রয়োজনীয় নথি, ওষুধপত্র, ও যোগাযোগ নাম্বার সংগ্রহ, এবং লাগেজ লেবেলিংয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিশেষে, সফলভাবে ওমরা পালনের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভিড় এড়িয়ে চলা, হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং গ্রুপের সান্নিধ্যে থাকাকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
৩০০ দিন আগে
রমজানে রোজা রাখার প্রস্তুতি: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে করণীয়
পবিত্র রমজান মাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংযম ও শৃঙ্খলা অনুশীলনের এক পরম সুযোগ। ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি এই আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি দৈহিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্র তৈরি করে। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটানা পানাহার থেকে বিরত থাকা স্বাভাবিক জীবন ধারণে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য শরীর ও মন দুটোকেই আগে থেকে প্রস্তুত করা উচিত। চলুন, রমজানে রোজা রাখার প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা কী এবং এর বাস্তবায়নের জন্য কী ধরণের কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে- তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রমজানে মাসব্যাপী রোজা রাখতে স্বাস্থ্যগত পূর্বপ্রস্তুতি কেন জরুরি
পুরো এক মাস টানা রোজা রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো স্বাস্থ্যগত জটিলতা। সব রকম পানাহার থেকে বিরত থাকার পরেও পর্যাপ্ত শক্তির মাত্রা বজায় রাখার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা দরকার। খাওয়া এবং ঘুমের ধরণে আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে ক্লান্তি, পানিশূন্যতা এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে মাসের প্রথম রোজাগুলোতে এরকম অবস্থা সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।
তাই রমজানের আগেই খাদ্যাভ্যাসে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হলে এই ধাক্কা সামলানো সহজ হয়ে ওঠে। এই প্রস্তুতি শরীরে শক্তির ভারসাম্য এবং মনোনিবেশে সহায়তা করে, যা রমজানের ধর্মীয় মাহাত্ম্য বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীর দীর্ঘ সময় আহার থেকে বিরত থাকার সময়কে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সহনশীলতা অর্জন করে। এই সঙ্গতিপূর্ণতা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত রমজান পরবর্তী তিন বেলা আহারের জীবনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক।
পবিত্র রমজানে এক মাস রোজা রাখার পূর্বে শারীরিক প্রস্তুতি
.
প্রতি বেলার আহারে সময়ানুবর্তিতা
প্রস্তুতিপর্বটা শুরু করতে হবে রমজানের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে ধীরে ধীরে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে। আসন্ন রোজার সময়সূচির সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে নিয়মিত বিরতিতে হাল্কা খাবার গ্রহণ করা যায়। সারা দিনের জন্য ডিনারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো উচিত। কেননা এই অভ্যাস হজমকে ব্যাহত করে এবং রোজার সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: ভিমরুলের কামড় কতটা ভয়ংকর? সাবধানতা ও করণীয়
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। বীজ জাতীয় খাবার, ফল এবং চর্বিহীন প্রোটিন দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে চিনি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের দুর্বলতার কারণ হয়। এই নতুন খাদ্যাভ্যাস ভোর রাতে খেয়ে সারা দিন রোজা রাখার জন্য শরীরকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে তৈরি করে।
সব সময় হাইড্রেটেড থাকা
সমগ্র মাসব্যাপী রোজা মানে প্রতিদিন এক বিপুল পরিসরের সময় শরীরের অভ্যন্তর ভাগ শুষ্ক থাকা। এ অবস্থায় শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগানের জন্য আগে থেকেই নিয়মিত পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। শরীরের পর্যাপ্ত হাইড্রেশনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজন। নারকেলের পানি, তাজা ফলের রস এবং তরমুজের মতো পানিসমৃদ্ধ ফলগুলো হাইড্রেশনের জন্য সহায়ক। এভাবে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করলে রোজার সময় ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং অন্যান্য ডিহাইড্রেশন-সংক্রান্ত লক্ষণগুলো থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস
দীর্ঘ মেয়াদে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে স্বাস্থ্যকর ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। সেহরি ও ইফতারের সময়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য আগে থেকেই ঘুমের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে। যারা রাতে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন, তাদের জন্য এই পরিবর্তন আনা অনেকটাই সহজ ব্যাপার।
ঘুমের অনিয়ম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এতে করে দেহের সামগ্রিক শক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলশ্রুতিতে রোজা রাখার মুহূর্তগুলো ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, রাতে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং ভোরের কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা হলে রমজানের রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। ঘুমের এই অনুশীলন কেবল শরীরের জন্যই নয়, মনের স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী।
আহারে ধীরে ধীরে ক্যাফেইন এবং চিনির পরিমাণ কমানো
রোজার প্রথম দিনগুলোতে আকস্মিকভাবে ক্যাফেইন ও চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা মাথাব্যথা, বিরক্তি এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে। এই উপসর্গগুলো এড়াতে রমজান মাসের আগে থেকে ধীরে ধীরে এ ধরণের খাদ্য উপাদানগুলো পরিহার করা উচিত।
কফি, এনার্জি ড্রিংক্স এবং চিনিযুক্ত স্ন্যাকসের বদলে ভেষজ চা এবং তাজা ফল খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। চিনি ও ক্যাফেইনের এই ক্রমান্বয়ে হ্রাস শরীরকে আকস্মিক ধাক্কা থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া পরিশোধিত চিনি গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল করে ও ক্ষুধা হ্রাস করে। এটি সারা দিন ধরে শক্তি ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট কার্যকর।
এক মাস রোজা পালনের পূর্বে মানসিক প্রস্তুতি
.
প্রাত্যহিক জীবনকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা
পুরো রমজান মাস জুড়ে রোজা রাখা সম্পূর্ণ একটি নতুন জীবন ধারণের সমতূল্য। তাই নতুন নিয়মের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি অপরিহার্য। রমজানের প্রথম দিন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সবকিছু বদলে ফেলার পরিবর্তে আগে থেকে ধীরে ধীরে পবির্তন আনা উচিত।
আরও পড়ুন: ক্যান্সারের নতুন অ্যান্টিবডি চিকিৎসা টিউমার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: গবেষণা
ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া প্রতিটি কাজের জন্য নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করতে হবে। ধৈর্য্য ধারণের উপর অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি। এর সঙ্গে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করা হলে তা মানসিক চাপ কমানোর জন্য সহায়ক হবে।
অপ্রয়োজনীয় কাজ এবং বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। এর পরিবর্তে ইবাদতের পাশাপাশি সৃজনশীল কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।
সহনশীলতার অনুশীলন
রোজার দিনগুলোতে মানসিক উন্নতির পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা হলো সহনশীলতা বা ধৈর্য্য। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও রোজা পালনে ধৈর্য্যের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এর সঙ্গে মানসিক নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হাল্কা ধ্যান দিয়ে এই অনুশীলন শুরু করা যেতে পারে। এই ক্রিয়াকলাপ কঠিন মুহূর্তগুলো অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। একজন সহনশীল ব্যক্তি তার চিন্তাগুলোকে সুসংগঠিত করতে পারেন, যা তার উদ্বেগ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে কাজে লাগে।
একই সঙ্গে নিজের সময়টাও কাটাতে হবে সমমনা লোকদের সঙ্গে। ধর্মীয় বিষয়ে সৃজনশীল আলোচনা পরস্পরের মধ্যে রোজা রাখার উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। মসজিদে গিয়ে সবার সঙ্গে একত্রে নামাজ পড়া এবং গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করা মানসিক জীর্ণতা দূর করার মোক্ষম উপায়। এতে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটে, যা ক্ষুধা বা ক্লান্তির মতো কঠিন মুহূর্তগুলো মোকাবিলা করার উৎকৃষ্ট হাতিয়ার।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু: প্রাণে বাঁচলেও নীরবে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন নারীরা
কুরআন তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয় অ্যাপস ব্যবহার
বর্তমান সময়ের সমগ্র জীবন যখন প্রযুক্তিতে নিমজ্জিত, তখন সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে ইবাদতের কাজে। এখন কুরআন পড়া ও শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মোবাইল অ্যাপ্স রয়েছে। এগুলো ঘরে ও বাইরে যেকোনো স্থানে চলতে ফিরতে কুরআন পাঠ বা দোয়ার মধ্যে থাকার জন্য যথেষ্ট উপযোগী।
‘তার্তিল’, ‘দ্বীন’, ‘মুসলিম বাংলা’, এবং আল কুরআন (তাফসির অ্যান্ড বাই ওয়ার্ড)-এর মতো অ্যাপগুলোতে সাবলীলভাবে কুরআন পড়া এবং শোনা যায়। এগুলোতে রয়েছে ভয়েস-কমান্ড, বুকমার্ক, এবং সঠিক উচ্চারণ যাচাইয়ের ফিচার। এছাড়াও এগুলোর শাব্দিক অনুবাদ ও তাফসিরের সুবিধাগুলো কুরআন গভীরভাবে বোঝার জন্যও উপযোগী।
স্মার্টফোনে অতিক্রান্ত সময় নিয়ন্ত্রণ
ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ এবং সহনশীলতা বিনষ্টকরণের একটি প্রধান কারণ হচ্ছে স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সময় দেওয়া। প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিনোদনমূলক অ্যাপগুলোতে দিনের একটা বিরাট অংশ অতিবাহিত হয়। এতে উৎপাদন ও সৃজনশীল কাজের প্রতি নিরুৎসাহ সৃষ্টি হয়। সেখানে রমজান মাসে এই কার্যকলাপ ধর্মীয় কার্যক্রমের প্রতি উদাসিন করে তোলে। ফলশ্রুতিতে নষ্ট হয় রোজা পালনের ভাবমূর্তি। তাই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করে গরীব-মিসকিনদের সাহায্য, কুরআন পড়া ও তাফসির আলোচনা এবং নামাজ পড়ার প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। উপরন্তু, স্মার্টফোনের নীল আলো ঘুমের জন্যও ক্ষতিকর, যা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার দিকে ধাবিত করে। ফলে সেহরি ও ফজরের নামাজ বাদ পড়ে যায় এবং পরবর্তীতে সারাদিন পানাহার থেকে বিরতি থাকার অভিজ্ঞতা অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।
পরিশিষ্ট
কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া সঠিক ভাবগাম্ভীর্য মেনে রমজানের রোজা পালনের জন্য শারীরিক ও মানসিক পূর্বপ্রস্তুতি অপরিহার্য। নিত্যদিনের আহার ও ঘুমে রুটিন মেনে চলা এবং সার্বক্ষণিক হাইড্রেটেড থাকা শরীরকে যেকোনো দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। অপরদিকে, নিয়মতান্ত্রিক জীবনধারণ এবং সহনশীলতার চর্চা মননশীলতা বিকাশে সহায়ক হবে। এই পদ্ধতিতে ত্বরান্বিত করতে পারে কুরআন তেলাওয়াতের অ্যাপ ব্যবহার এবং স্মার্টফোন ব্যবহারে পরিমিতিবোধ। সার্বিকভাবে এই পদক্ষেপগুলোর যথাযথ অনুসরণের সম্ভব সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে পুরো রোজার মাসটি অতিবাহিত করা।
আরও পড়ুন: শীতে ওজন বেড়ে যাচ্ছে? জেনে নিন কারণ ও সমাধান
৩০২ দিন আগে
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ
অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধল-আশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান।
দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধে ভাবে। বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন— কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে। কিংবদন্তিতুল্য এই বাউল স্বশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি কোটি তরুণসহ সকল স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর পর সর্বস্তরের বিশেষ করে সাধারণের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বাউল শাহ আব্দুল করিম
শাহ আবদুল করিম বাংলার লোকজ সঙ্গীতের ধারাকে অশ্বস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখদুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষিকাজ করে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন।
গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশী সময় লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের নানা লাঞ্চনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যোগায় শাহ আবদুল করিমের গান।
শাহ আবদুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শর বেশি গান। যেগুলো সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজীতে অনূদিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে ঢাবিতে বসন্ত বরণ
কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক।
শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ভাটির পুরুষ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনও সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের প্রদর্শনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও ২০১৭ শাহ আবদুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লিখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম কূলহারা কলঙ্কিনী।
বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। তার গান গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা আর গানের মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই সবার মাঝে তার গান ছড়িয়ে দিতে চান ভক্ত আশেকানরা। একইসঙ্গে তার সুরধারাকে বিকৃতভাবে না গাওয়ার দাবিও তুলেছেন বাউলরা।
বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে/আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না/আমি কূলহারা কলঙ্কিনী/কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া কোন মেস্তরি নাও বানাইছে/কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/বসন্ত বাতাসে সইগো/আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু/মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও/আমি বাংলা মায়ের ছেলেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিম না থাকলেও গানে আর সুরে তিনি আমাদের মাঝে রয়েছেন, অনন্তকাল থাকবেন।
একটি সাক্ষাৎকারে শাহ আবদুল করিম গাড়ি চলে না গানটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বন্ধুর বাড়ি এ আত্মায়। গাড়িতে চড়ে আত্মশুদ্ধির সন্ধানে ছুটি। কিন্তু পাই না। রিপু থামিয়ে দেয়। একদিন হয়তো এই গাড়ি পুরোদমে থেমে যাবে। প্রকৃত মালিকের কাছে ধরা দেবে। এই করিমকে তখন মানুষ খুঁজে পাবে শুধুই গানে আর সুরে।
৩০৩ দিন আগে
বর্ণিল আয়োজনে ঢাবিতে বসন্ত বরণ
অন্যান্য দিনের মতো সকাল হলেও আজকের সকালটি অনন্য। শীতের জড়তা শেষে আজ বসন্তের প্রথম দিন। তার ওপর পয়লা ফাল্গুনে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় দিনটি নানাভাবে উদযাপন করছে দেশের মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘বসন্ত উৎসব ১৪৩১’। ফাগুনের প্রথম দিন সকালে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলে এই আয়োজন।
জুলাই অভ্যুত্থান আমার দ্রোহ-ভালোবাসার গানের ব্যানারে ঢাবির কলাভবনে সমগীত আয়োজিত ‘সমগীত বসন্ত উৎসব ১৪৩১’ দিয়ে শুরু হয় বসন্তের গান ও নৃত্য পরিবেশন। এ সময় লোকগীতির পাশাপাশি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংগীতও পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
শুরুতে পাঠশালার নৃত্যশিল্পীরা নাচ পরিবেশন করেন। একই সঙ্গে পাহাড়ি ও চা বাগানের থিমের সুর থেকে নেওয়া গানে অংশ নেন সমগীতের শিল্পীরা।
উপস্থিত দর্শনার্থীরা ইউএনবিকে বলেন, সকালে উঠেই এখানে চলে এসেছি বসন্ত উৎসব দেখতে। এরপর বইমেলায় যাব। বসন্তের প্রথম দিনটি সারা দিন উপভোগ করব।
উৎসবে আসা একজন বলেন, ‘বসন্ত আমাদের প্রাণের উৎসব। একই দিনে ফাগুনের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস হওয়ায় দিনটি আরও বেশি উপভোগ করছি।’
৩০৪ দিন আগে
শবে বরাত: মুখরোচক ৫ হালুয়ার রেসিপি
শবে বরাতের জন্য বিশেষ কিছু মুখরোচক মিষ্টান্ন তৈরি করতে চান? হালুয়া একটি সুস্বাদু ও ভিন্নধর্মী মিষ্টান্ন, যা বাসায় সহজেই তৈরি করা যায়। এটি খেতে নরম, মুচমুচে ও সুগন্ধযুক্ত হয়। নিচে ৫টি সুস্বাদু হালুয়ার রেসিপি দেওয়া হলো, যা এই পবিত্র রাতে মিষ্টিমুখ করার জন্য অতুলনীয়!
ডিমের হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
ডিম – ৪টি
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম-বেশি করা যাবে)
দুধ – ১/২ কাপ
ঘি – ২ টেবিল চামচ
গুঁড়া দুধ – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু বাদাম – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
পেস্তা বাদাম – ১ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি পাত্রে ডিমগুলো ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে চিনি, দুধ ও গুঁড়া দুধ দিয়ে আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এখন একটি প্যানে ঘি গরম করে দিন। এতে ফেটানো ডিমের মিশ্রণ ঢেলে দিন এবং হালকা আঁচে রান্না করুন। কিছুক্ষণ পর ডিম শক্ত হয়ে গেলে কাঠের চামচ দিয়ে ভেঙে নেড়ে নিন, যাতে ছোট ছোট দানা তৈরি হয়।
মিশ্রণটি যখন শুকিয়ে আসবে, তখন এতে এলাচ গুঁড়া, কিশমিশ, কাজু বাদাম দিন। ভালোভাবে নেড়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না হালুয়া মসৃণ ও মাখনের মতো হয়ে আসে।
চাইলে এক চিমটি জাফরান বা কেওড়া জল যোগ করলে সুন্দর সুগন্ধ আসবে। মিষ্টি বেশি পছন্দ হলে চিনি পরিমাণমতো বাড়িয়ে নিতে পারেন। এটি গরম বা ঠান্ডা, দুইভাবেই দারুণ লাগে!
অতঃপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন অথবা ঠান্ডা করে পেস্তা বাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন: বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমাবেন যেভাবে
গাজরের হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
গাজর (কুঁচি করা) – ১ কেজি
তরল দুধ – ১ লিটার
চিনি – ১ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম-বেশি করা যাবে)
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, স্বাদ বাড়ানোর জন্য)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাঠবাদাম ও কাজু – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
গাজর তৈরি করার পদ্ধতি:
গাজর ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে নিন।
এখন একটি ভারী তলার প্যানে দুধ দিয়ে গাজর সিদ্ধ করুন। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন এবং মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন, যাতে নিচে লেগে না যায়।
গাজর যখন নরম হয়ে যাবে এবং দুধ প্রায় শুকিয়ে আসবে, তখন চিনি ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন। এই পর্যায়ে হালুয়ার রঙ গাঢ় লালচে হয়ে আসবে।
এবার ঘি ঢেলে দিন এবং ভালো করে নাড়তে থাকুন। এলাচ গুঁড়া, কিশমিশ, কাঠবাদাম ও কাজু মিশিয়ে দিন। ৫-৭ মিনিট ভালোভাবে নাড়ুন, যতক্ষণ না হালুয়া ঘন হয়ে আসে এবং ঘি ছাড়তে শুরু করে।
যদি বেশি ক্রিমি স্বাদ চান, তাহলে কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে একটু জাফরান বা কেওড়া জল দিতে পারেন, এতে সুগন্ধ আরও বাড়বে। নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন, অথবা ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে পরে উপভোগ করুন!
বুটের হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
বুটের ডাল – ১ কাপ (৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নেওয়া)
চিনি – ১ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম-বেশি করা যাবে)
ঘি – ১/২ কাপ
দুধ – ১/২ কাপ
কনডেন্সড মিল্ক – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিসমিস – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও কাঠবাদাম – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
বুটের হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা বুটের ডাল ভালো করে ধুয়ে নরম করে সেদ্ধ করুন। পানি ঝরিয়ে সেদ্ধ ডাল ব্লেন্ড করে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
অতঃপর কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে বুটের ডালের পেস্ট ঢেলে দিন। মাঝারি আঁচে ক্রমাগত নেড়ে নেড়ে ডাল ভালোভাবে ভাজতে থাকুন। ডালের রঙ হালকা সোনালি হয়ে আসলে এতে দুধ ও চিনি দিন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নেড়েচেড়ে দিন।
মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসলে কনডেন্সড মিল্ক ও এলাচ গুঁড়া দিন। তারপর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ভালোভাবে নাড়িয়ে আরও ৫-৭ মিনিট রান্না করুন। যখন ঘি ছাড়তে শুরু করবে এবং হালুয়া নরম ও মসৃণ হবে, তখন নামিয়ে নিন।
হালুয়ার স্বাদ বাড়াতে চাইলে ১ টেবিল চামচ কেওড়া জল যোগ করতে পারেন। বাদাম ও কিশমিশ ছাড়াও পেস্তা বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়। মিষ্টি বেশি বা কম করতে চাইলে চিনি স্বাদ অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিন।
এখন গরম গরম অথবা ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন সুস্বাদু বুটের হালুয়া!
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
পেঁপের হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
কাঁচা পেঁপে – ১টি (মাঝারি সাইজের, খোসা ছাড়িয়ে কুঁচি করা)
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম-বেশি করা যাবে)
দুধ – ১/২ কাপ
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
গুঁড়া দুধ – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও বাদাম কুচি – ২ টেবিল চামচ
কেওড়া জল – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
পেঁপের হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
কাঁচা পেঁপে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট কুচি করুন। কড়াইতে পানি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন, যাতে পেঁপে নরম হয়ে যায়। পানি ঝরিয়ে সেদ্ধ পেঁপে ভালোভাবে চটকে নিন।
অতঃপর কড়াইতে ঘি গরম করে এতে চটকে রাখা পেঁপে ঢেলে দিন। মাঝারি আঁচে ক্রমাগত নেড়ে নেড়ে ভাজতে থাকুন। ৮-১০ মিনিট পর দুধ ও গুঁড়া দুধ দিন এবং ভালোভাবে মেশান।
যখন পেঁপে ভালোভাবে মিশে যাবে, তখন চিনি ও এলাচ গুঁড়া যোগ করুন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে কিশমিশ ও বাদাম দিন। চাইলে এই সময় ১ চা চামচ কেওড়া জল যোগ করতে পারেন সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য।
মিষ্টি বেশি চাইলে চিনি পরিমাণমতো বাড়িয়ে নিন। ঘন ও মজাদার স্বাদের জন্য কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে শুকনো নারকেল কুচি দিয়েও সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়ানো যায়।
যখন হালুয়া ঘন হয়ে ঘি ছাড়তে শুরু করবে, তখন নামিয়ে পরিবেশন করুন। চাইলে ওপর থেকে কিছু বাদাম কুচি ও কিশমিশ ছড়িয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন: স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার উপকারী
সুজির হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
সুজি – ১ কাপ
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম-বেশি করা যাবে)
পানি – ২ কাপ (দুধ ব্যবহার করলে স্বাদ আরও ভালো হবে)
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও বাদাম কুচি – ২ টেবিল চামচ
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
সুজির হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ ঘি গরম করুন। এতে সুজি দিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ না এটি হালকা বাদামি হয়ে যায় এবং সুন্দর ঘ্রাণ আসে।
এখন অন্য একটি পাত্রে পানি ও চিনি একসঙ্গে গরম করে নিন। চাইলে এতে ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়া দিয়ে সুগন্ধ বাড়াতে পারেন। সিরা ফুটে উঠলে নামিয়ে রাখুন।
অতঃপর ভাজা সুজির মধ্যে ধীরে ধীরে গরম সিরা ঢেলে নেড়ে দিন। অল্প আঁচে রান্না করুন এবং ক্রমাগত নেড়ে দিন, যাতে কোনো দানা না থাকে।
যখন হালুয়া ঘন হয়ে আসবে, তখন এতে বাদাম, কিসমিস ও বাকি ঘি দিয়ে দিন। আরও কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন যতক্ষণ না হালুয়া মসৃণ ও মাখনের মতো হয়ে আসে।
দুধ দিয়ে বানালে হালুয়ার স্বাদ আরও মজাদার হবে। বেশি ঘন ও মজাদার স্বাদের জন্য এক চা চামচ কেওড়া জল যোগ করা যায়। চিনি কম বা বেশি করতে পারেন স্বাদ অনুযায়ী।
গরম গরম সুজির হালুয়া পরিবেশন করুন, অথবা ঠান্ডা করে খেতে পারেন! চাইলে ওপর থেকে কিছু বাদাম ও কিসমিস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
উপসংহার
পবিত্র শবেবরাতে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি মুখরোচক এই পাঁচটি হালুয়া আপনার ও পরিবারের সদস্যদের দিতে পারে প্রশান্ত। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য রোগ রয়েছে তারা উপকরণগুলো কিছুটা বদলে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: অফিসে কাজের ফাঁকে হালকা ক্ষুধা মেটাতে পুষ্টিকর শুকনো খাবার
৩০৫ দিন আগে
নারী ফুটবল দলসহ একুশে পদক-২০২৫ পাচ্ছেন ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি
খেলাধুলা ক্যাটাগরিতে নারী ফুটবল দলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এবার ১৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ‘একুশে পদক-২০২৫’র জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এই তালিকায় রয়েছেন— শিল্পকলা(চলচ্চিত্র) ক্যাটাগরিতে আজিজুর রহমান (মরনোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) ফেরদৌস আরা, শিল্পকলায় (আলোকচিত্র) নাসির আলী মামুন, শিল্পকলায়(চিত্রকলা) রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লা(মরনোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহীদুল আলম, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান, সমাজ সেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ(মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির(মো.শহীদুল হক) (মরণোত্তর) এবং গবেষণায় মঈদুল হাসান।
এছাড়া খেলাধুলা ক্যাটাগরিতে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ সাফল্যের জন্য এবার পদকটির জন্য মনোনীত করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে।
আরও পড়ুন: একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুজেয় শ্যাম আর নেই
৩১২ দিন আগে
ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাতায়াত, খরচ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য
সমুদ্র আর বালুকাবেলায় নির্জনতার মায়াবী আহ্বান উপেক্ষা করা যেকোনো ভ্রমণপিপাসুর জন্যই কঠিন। এমন অসীম নৈস্বর্গের সঙ্গে যদি যুক্ত হয় হাজার বছরের পুরনো প্রবাল, তবে সেই হাতছানি যেন মুহুর্মুহু স্পন্দনে পরিণত হয়। বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের বিন্দু ছেঁড়া দ্বীপ নিয়ে এমনটা বলা হলে, তা মোটেই অতিরঞ্জিত হবে না। সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা এই এক টুকরো স্বর্গে ঢেউয়ের শব্দে শোনা যায় নিরবতার ঐকতান। চলুন, জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার উপায় এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ছেঁড়া দ্বীপের অবস্থান
বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রায় ৩ কিলোমিটার বিস্তৃত ছোট্ট এই দ্বীপপুঞ্জ সেন্টমার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রশাসনিকভাবে এর অবস্থান চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারের অন্তর্গত টেকনাফ উপজেলায়; ইউনিয়নের নাম সেন্টমার্টিন। এখানে রয়েছে ১০০ থেকে ৫ বর্গমিটারের ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপ।
ছেঁড়া দ্বীপের নামকরণ ও ইতিহাস
স্থানীয়দের কাছে এর নাম ‘ছেঁড়াদিয়া’; কেউ কেউ বলেন ‘সিরাদিয়া’, যেটি এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মূল সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কিছুটা ‘ছেঁড়া’ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এমন নামকরণ।
২০০০ সালের শেষের দিকে দ্বীপটির অস্তিত্ব প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। নব্বইয়ের দশকে এখানে পাওয়া গিয়েছিল ৬৬ প্রজাতির প্রবাল ও জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব, যার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ১০টি প্রজাতি।
আরো পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
ঢাকা থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার উপায়
প্রথমেই যাত্রা করতে হবে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে টেকনাফ; তারপর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন হয়ে ছেঁড়া দ্বীপ।
সরাসরি টেকনাফ পৌঁছার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাসে যাতায়াত। রাজধানীর সায়েদাবাদ, কলাবাগান, ফকিরাপুলে টেকনাফের বাস পাওয়া যায়। ভাড়া মাথাপিছু ৯০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা।
কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এ যাত্রায় খরচ হবে সর্বনিম্ন জনপ্রতি ৬৯৫ থেকে সিটের ধরণভেদে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। বিকল্প হিসেবে বিমানে করেও কক্সবাজার পর্যন্ত যাওয়া যেতে পারে। বিমান ভাড়া সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা; ধরণভেদে টিকেট সর্বোচ্চ ১১ হাজার টাকা পর্যন্তও রয়েছে।
টেকনাফে পৌঁছে প্রথম কাজ হচ্ছে সি-ট্রাক বা জাহাজের টিকেট কাটা। টেকনাফের জাহাজঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে সেন্টমার্টিনের জাহাজ ছাড়ে। ফিরতি ট্রিপ রওনা হয় বিকাল ৩টা থেকে সাড়ের ৩টা নাগাদ। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই রুটিনটি অবশ্যই যথাযথভাবে মেনে চলা জরুরি। যাওয়া-আসাসহ এ যাত্রায় ভাড়া পড়ে জনপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।
আরো পড়ুন: বিশ্বের সেরা ১০ মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত
সেন্টমার্টিনের জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার জন্য রয়েছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পিডবোট। ট্রলারে গেলে জনপ্রতি ভাড়া পড়ে ২৫০ টাকা করে। রিজার্ভ করে নিলে ট্রলারের আকার ভেদে খরচ পড়তে পারে প্রায় ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। স্পিডবোটে যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে ৩ হাজার টাকা।
তবে ভাটার সময় পানি নেমে গেলে মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল ভাড়া নিয়েও রওনা হওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে অনন্য অভিজ্ঞতা নিতে অনেকে পায়ে হেঁটেও ছেঁড়া দ্বীপ চলে যান। এভাবে হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাইসাইকেল কিংবা মোটরসাইকেলগুলো ছেঁড়া দ্বীপে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ সংলগ্ন পয়েন্টে নির্ধারিত ফি দিয়ে সাইকেল রাখতে হয়। তারপর সেখান থেকে শুরু হয় পায়ে হাঁটা পথ।
ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে কি কি দেখবেন
প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা এই জনবসতিহীন দ্বীপের প্রধান বাসিন্দা শামুক, ঝিনুক ও কাকড়া। স্বচ্ছ পানির নিচে কদাচিৎ চোখে পড়ে রঙিন মাছ। একদিকে লোনা জলে সিক্ত প্রবালের বিস্তীর্ণ সৈকত, অন্যদিকে ঝোপঝাড় ও উঁচু পাম গাছের সমারোহ। এর সঙ্গে সারি সারি নারকেল গাছ আকাশ রঙা পানির পটভূমিতে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করে। সামুদ্রিক হাওয়ায় বিস্ময়কর নীলিমা আর সূর্যাস্তের রঙিন মিতালী যেকোনো ভ্রমণচারির হৃদয়কে মোহাবিষ্ট করে ফেলতে যথেষ্ট।
আরো পড়ুন:
পূর্ণিমার রাতে অনেক রোমাঞ্চ সন্ধানীরা এখানে চলে আসে ক্যাম্পিং করতে। ছোট ছোট প্রবালদ্বীপগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় পায়ে হেঁটেই পুরো দ্বীপাঞ্চলটি ঘুরে দেখা যায়। এই আদিম পরিবেশকে অবিস্মরণীয় রাখতে ছবি তোলার লোভ কেউই সামলাতে পারেন না। নিদেনপক্ষে, এটি দেশের সবথেকে আকর্ষণীয় ছবি তোলার স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশেষ করে দ্বীপের দক্ষিণ পাশের জলরাশি অনেকটা স্বচ্ছ; আর তাই অনেক বেশি আকাশ রঙের। সমুদ্রের ঢেউ এদিকটায় বেশ শান্ত; তবে ছন্দময়।
ছেঁড়া দ্বীপসহ সেন্টমার্টিনের আশপাশের দ্বীপাঞ্চলে কেওড়া গাছের ঘনত্ব চোখে পড়ার মতো। এই গাছগুলো শুধু দ্বীপের সৌন্দর্য্যই বাড়ায় না, বরং ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় প্রাকৃতিক দূর্গে রূপ নেয়।
আরো পড়ুন: ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকার ১০টি ঐতিহাসিক মন্দির
৩১৯ দিন আগে
লন্ডন কি ২০২৫ এ আপনার পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য?
সারা বছর ধরে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণপিপাসুদের রিভিউ ও রেটিংয়ের ভিত্তিতে জনপ্রিয় সব ঘুরে বেড়ানোর শহর এবং রেস্তোরাঁর তালিকা প্রকাশ করে ট্রিপ অ্যাডভাইজার। এ বছর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিনোদন ও পর্যটনসহ সামগ্রিক বিচারে ভ্রমণের সেরা গন্তব্যের খেতাব পেয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন। এই অর্জন বছরের পরবর্তী দিনগুলিতে লন্ডনের অত্যাশ্চর্যগুলো আলাদা করে আকর্ষণ করবে বিশ্ব পরিব্রাজকদের। যে মাপকাঠিগুলোর ভিত্তিতে ইউরোপের প্রসিদ্ধ মহানগরীটি এমন গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, চলুন, তার বিস্তারিত পর্যালোচনা করা যাক।
২০২৫ সালে লন্ডনের বিশ্বসেরা ভ্রমণ গন্তব্য হওয়ার নেপথ্যে
.
সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সুদৃশ্য স্থাপনা
লন্ডনের প্রতিটি ইমারতের গাঁথুনিতে মিশে আছে শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসের নির্যাস, যা অর্বাচীন দর্শনার্থীদের শিহরিত করে শহরের প্রাণকেন্দ্র বিচরণের সময়। রোমান শাসনের প্রতিধ্বনি থেকে শুরু করে রাজকীয় বংশের মহিমার ঐতিহাসিক উপকরণগুলো এই নির্যাসকে রীতিমত অমৃত সুধায় রূপ দেয়। সংমিশ্রণে উদ্ভাসিত হয় শক্তি ও স্থায়িত্বের প্রতীক টাওয়ার অফ লন্ডন, রাজ্যাভিষেক ও রাজকীয় বিবাহের মঞ্চ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে এবং ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সিংহাসন বাকিংহাম প্রাসাদ।
টাওয়ার ব্রিজ, বিগ বেন ও হাউস অফ পার্লামেন্টের অভিজাত স্থাপত্যশৈলী রাঙিয়ে তোলে লন্ডনের আকাশকে। শহরের সহস্র অতীতের চিহ্ন ধরে রাখা এই বহুতল ভবনগুলো খোরাক যোগায় বিস্ময়ের, একই সঙ্গে ফ্রেমবন্দি করার জন্য কিছু অবিস্মরণীয় মুহূর্তের।
আরো পড়ুন: শীতকালে নিরাপদে মোটরসাইকেল চালকদের প্রয়োজনীয় সেফটি গিয়ার ও পোশাক
বিশ্বমানের যাদুঘর ও গ্যালারী
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসঙ্গে লন্ডনকে বলা যেতে পারে সর্বকালের বিশ্বকোষ। কেবল দর্শনের জন্যই নয়, এখানকার যাদুঘর ও গ্যালারীগুলো প্রাচীন নিদর্শন নিয়ে গবেষণার জন্যও যথেষ্ট রসদ যোগায়। তন্মধ্যে প্রাচীন নিদর্শনগুলোর বিস্ময়কর সংগ্রহশালা ব্রিটিশ মিউজিয়াম। সঙ্গে রহস্যময় প্রকৃতির অভিজ্ঞতা দিতে রয়েছে ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম।
ভিক্টোরিয়া, অ্যালবার্ট মিউজিয়াম ও টেট মডার্নে ফ্যাশন থেকে আসবাবপত্র পর্যন্ত সবকিছুতেই মেলে কারুশিল্পের ছোঁয়া। যুগযুগ ধরে এগুলোতে সংরক্ষিত নিদর্শনের সমাহার কেবল অমূল্যই নয়, খুব কাছ থেকে এক নজর দর্শনও অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার সঞ্চার করে।
বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং প্রাণবন্ত নগর উপকণ্ঠ
ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের বৃহৎ এই নগরীতে পা রাখা মাত্রই যেকোনো আগন্তুক সর্বপ্রথম যে বিষয়টি অনুভব করেন, তা হলো এর স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। ক্যামডেন, শোরডিচ, নটিং হিল ও চায়নাটাউনের মতো শহুরে উপকণ্ঠগুলোর প্রত্যেকটি যেন এক টুকরো লন্ডন।
গভীর দৃষ্টিতে অচিরেই ধরা পড়ে শোরডিচের রাস্তায় ইট-কাঠ ও গলা ইস্পাতের সৃজনশীলতা ও নটিং হিলের পটে আঁকা ভিক্টোরিয়ান টাউনহাউস। নিভৃত নগরীর বেরসিক মানুষটিও ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে যান ক্যামডেনের বাজার ও চায়নাটাউনের খাবার পাড়ার বৈঠকখানায় শামিল হতে।
আরো পড়ুন: ফিলিপাইনের ভিগান ভ্রমণ গাইড : ঘুরে আসুন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
নাট্যমঞ্চ ও বিনোদন
যুদ্ধটা যখন নাট্যমঞ্চ নিয়ে, তখন নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে লন্ডনের ওয়েস্ট ইন্ড। এখানে সাক্ষী হওয়া যায় কিংবদন্তি দ্য ফ্যান্টম অফ দ্য অপেরা-র। ঐতিহাসিক গ্লোব থিয়েটারে গিয়ে উপভোগ করা যায় শেক্সপিয়রের জগদ্বিখ্যাত কাজগুলো।
এখানে সঙ্গীত উৎসাহীদের জন্য রয়েছে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলের গ্র্যান্ড অ্যাকোস্টিক ক্লাসিক্যাল ও ২ অ্যারিনার স্ফুলিঙ্গ দ্বীপ্ত কনসার্ট সন্ধ্যা। সঙ্গীতপ্রেমীরা যাই হোক না কেন, গীতি আর বাদ্যের ঐকতান নিমেষেই ঝড় তোলে আনমনে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যেকোনো শ্রোতার মনের মুকুরে।
মনোরম পার্ক
শহুরের ব্যস্ততা আর জনাকীর্ণতাকে বহু যতনে আগলে রেখেছে সবুজ উদ্যানগুলো। নিঃসীম যান্ত্রিকতার মোড়কে যেন এক প্রাণোচ্ছল অভয়ারণ্য। হাইড পার্ক, রিজেন্টস পার্ক এবং হ্যাম্পস্টেড হিথ যেন তা-ই সগৌরবে ঘোষণা করে। সব বয়সের লোকের জন্য এখানে রয়েছে পিকনিক থেকে শুরু করে খেলাধুলার জায়গা। যারা একটু নিরিবিলিতে থাকতে চান তাদের জন্য রয়েছে হল্যান্ড পার্কের কিয়োটো গার্ডেন ও ব্রকওয়েল পার্কের বিস্তীর্ণ তৃণভূমি।
এই সবুজায়নের মাঝে শহরের বাসযোগ্যতা, গতিশীলতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। ক্লান্তিকর দিনের শেষে তাই ঘরে ফেরা লোকটির মনের মতো অবকাশ খুঁজে পেতে তেমন বেগ পেতে হয় না।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান,শপিংমল ও জনপ্রিয় খাবার
শপিংমল ও খাবারের দোকান
বাহারি পোশাকের সাজে ইউরোপীয় বিপণীকে কাছে থেকে দেখতে হলে অবশ্যই যেতে হবে লন্ডনে। তন্মধ্যে বিলাসবহুল পণ্যের খোঁজে ঢুঁ মারা যায় বন্ড স্ট্রিট, হ্যারডস ও বেস্পোক-এ। বাজেট-বান্ধব পণ্য পাওয়া যাবে পোর্টোবেলো রোড এবং ক্যামডেন মার্কেটে, যেগুলো কেনাকাটা ছাড়া ঘুরে বেড়ানোর জন্যও উপযোগী। ওয়েস্টফিল্ড স্ট্রাটফোর্ড সিটি ও ব্রেন্ট ক্রস শপিং সেন্টারে দারুণ মেলবন্ধন ঘটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর সঙ্গে উচ্চ ফ্যাশন ও ব্র্যান্ডের সামগ্রীর।
একই সঙ্গে বিচিত্র ইউরোপকে স্বাদের মাধ্যমে পরখ করে দেখার জন্য ভোজনরসিকদের শ্রেষ্ঠ জায়গাও এই লন্ডন। মিশেলিন-তারকার স্থাপনা থেকে শুরু করে বোরো মার্কেটের দোকানগুলোর খাবার প্রত্যেক শহরবাসীর হৃদয়কে জয় করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। ফিশ অ্যান্ড চিপস বা সানডে রোস্টের মতো ব্রিটিশ ভোজগুলো বিশ্বমানের শেফদের রন্ধনশৈলীকে প্রতিনিধিত্ব করে।
স্বাচ্ছন্দ্যময় পথঘাট
গহীন লোকারণ্য হলেও ভিড়গুলোর চলাফেরায় আরামদায়ক বেশভূষা অচিরেই টের পাওয়া যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে শহরের সহজলভ্য সরকারি যাতায়াত ব্যবস্থা। টিউব অথবা লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে শহরের প্রতিটি গন্তব্যে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। বাস এবং ওভারগ্রাউন্ড ট্রেনগুলো অতিরিক্ত সংযোগের মাধ্যমে ভ্রমণকে আরও নির্বিঘ্ন এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে।
কর্মব্যস্ততার বাইরে অবকাশ যাপন ও পায়চারির জন্য নিবেদিত রাস্তাগুলোতে মেলে সুপরিকল্পিত নগরায়নে পরিচয়। ফলে যাত্রা একক বা সম্মিলিত যাই হোক না কেন, শহরের সুশৃঙ্খল পরিবহন নেটওয়ার্ক ভ্রমণের শতভাগ সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আরো পড়ুন: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ভ্রমণ গাইড
রাজকীয় ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা
এখানকার রাজসিক বহুতল দর্শনীয় ভবনগুলো অকপটে প্রকাশ করে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঐতিহাসিক চাকচিক্য। গার্ড পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের সময় বাকিংহাম প্যালেসের জাঁকজমক ভাব রীতিমত চোখ কপালে তোলার মতো। সুপরিচিত রাজকীয় মুখগুলোর প্রাক্তন বাসভবন দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন কেনসিংটন প্রাসাদে। সময় পরিভ্রমণে অতীতে নিয়ে যাওয়ার হাতছানি দেয় হ্যাম্পটন কোর্ট প্যালেস টিউডর।
এগুলো ভ্রমণের সময় সুদৃশ্য দেয়ালের জড় আভরণে সুপ্ত অভিজাত গল্পগাঁথাগুলো অনুগত শ্রোতায় পরিণত করে পর্যটকদের। ফলশ্রুতিতে প্রায়ই চোখে পড়ে সদ্য আসা কোনো দর্শনার্থী কোনো ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতির সামনে মোহাবিষ্ট হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
উদ্ভাবন ও আধুনিকতা
মহাকালের বির্বতনের এক উন্মুক্ত প্রতিচ্ছবি এই লন্ডন। শতাব্দী পুরনো ইতিহাস অঙ্গে ধারণ করে এখনও অগ্রগতির ধারা বজায় রেখেছে মহানগরীটি। দ্যা শার্ড, দ্যা ঘের্কিন এবং দ্যা লন্ডন আই-এর মতো আধুনিক কাঠামো তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এগুলোর স্থাপত্যশৈলী প্রাচীনতা থেকে নগরের অধুনা যুগের পথে বিবর্তিত যাত্রাকে অভিহিত করে।
তাই প্রযুক্তি উৎসাহীদেরকেও এতটুকু হতাশ করে না আধুনিক লন্ডন। বিশ্ব-মানের প্রযুক্তি ইভেন্ট ও প্রদর্শনী হোস্ট করার জন্য এই শহরের রয়েছে আলাদা বিশ্বখ্যাতি। এই উদ্দেশ্যে প্রতি বছরই শত শত মেধাবীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় পশ্চিমা ইউরোপের এই প্রাণকেন্দ্রটি।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডের পাতায়া ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
সমগ্র ইউরোপের অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার
দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের টেম্স নদীর অবস্থিত এই বিস্তৃত অঞ্চল পৃথিবীর আন্তঃসংযুক্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। হিথ্রো ও গ্যাটউইকসহ একাধিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর ইউরোস্টার রেল লিংকের মাধ্যমে অনায়াসেই প্রবেশ করা যায় ইউরোপে। সঙ্গত কারণে অনেক আগে থেকেই যাত্রাপথটা ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনুকূল হয়েই তৈরি হয়েছে। তাই বিশ্ব পরিব্রাজকদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।
সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ জীবনধারণের সব রকম অত্যাধুনিক সুবিধা থাকায় আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় উভয় পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য শহরটি একটি উৎকৃষ্ট গন্তব্য।
প্রতিটি মৌসুমের উৎসবমুখরতা
লন্ডন ভ্রমণের জন্য আসলে কোনো মৌসুমই অফ-পিক টাইম হিসেবে প্রতীয়মান হয় না। গ্রীষ্মের খরতাপ, কনকনে শীত, শুভ্র মেঘের শরৎ, আর নতুন পাতার বসন্ত সব সময়ই এখানে থাকে মন্ত্রমুগ্ধতা। বছরব্যাপী পুরো মৌসুম জুড়ে ক্রিসমাস মার্কেট যান্ত্রিক শহরকে রূপান্তরিত করে যাদুর নগরে। এছাড়াও বছরজুড়ে মিউজিক ফেস্ট ও ফুড ফেস্টসহ বর্ণীল উৎসবগুলো প্রকৃতির রঙের মতোই গোটা শহরকে রাঙাতে থাকে ভিন্ন রঙে।
শেষাংশ
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত সমন্বয়ে লন্ডন ট্রিপ অ্যাডভাইজার ২০২৫-এর শীর্ষ ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিশ্বখ্যাত বিগ বেন ও বাকিংহাম প্যালেস থেকে শুরু করে দ্য শার্ড-এর মতো সমসাময়িক বিস্ময় যেন শতবর্ষজীবী নগরের বিবর্তনের গল্প বলে। এলাকার পথঘাট, ভোজন, কেনাকাটা ও বিনোদনের নিরন্তর মূর্ছনায় প্রাণবন্ত আধুনিক অবকাঠামোগুলো। সার্বজনীন সংস্কৃতি ও প্রশান্ত সবুজ উদ্যান যেন উজ্জীবনের পূণ্যভূমি। ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগসূত্রগুলো কেবল নতুন ভূখণ্ডের নয়, নতুন অভিজ্ঞতারও দিগন্ত উন্মোচন। সর্বপরি, বছরব্যাপী ভিন্ন মৌসুমে বিচিত্র উৎসবের নিবেদন ফেরার সময় আরও একবার ঘুরে যাওয়ার সাধ জাগাবে পর্যটকের মনে।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা
৩২৭ দিন আগে
'পাওয়ার অব পেইন অ্যান্ড প্যাথোস ২': নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে প্রীতি আলীর একক প্রদর্শনী চলছে
ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ড দূতাবাসে প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী প্রীতি আলীর ‘পাওয়ার অফ পেইন অ্যান্ড প্যাথোস ২’ শিরোনামে মাসব্যাপী একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান-২ এর নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের গ্যালারিত রেসিডেন্সে এই প্রদর্শনীর চলছে।
১৭ জানুয়ারি উদ্বোধন করা এ প্রদর্শনীতে প্রীতি আলীর ৪০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কার্সটেন্স, বাংলাদেশি-স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম এবং ওয়াইল্ডটিমের সিইও ড. আনোয়ারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিনিধি।
১৯৮৬ সালে জন্ম নেওয়া প্রীতি আলী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিমূর্ত অভিব্যক্তির শৈলীতে ছবি আঁকেন। তার শিল্পকর্মে মানুষের আবেগ ও অনুভূতির নানা প্রকাশ ফুটে উঠেছে, প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করে ভালো-মন্দের মধ্যে জীবনের অর্থ অন্বেষণ করা হয়।
বিশুদ্ধ বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদের একনিষ্ঠ অনুসারী প্রীতি আলী উল্লেখ করেছেন, তার চিত্রকর্মগুলো মানুষের স্নেহ, পরমানন্দ, যন্ত্রণা এবং বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন আবেগপ্রবণ চিত্রশিল্পী, তিনি তার আত্মার অন্তঃস্থল থেকে যা অনুভব করেন তা আঁকেন।
তাঁর চিত্রকলাকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, যেখানে রহস্যবাদের ছোঁয়া পাওয়া যায়; কেউ কেউ সম্প্রীতি, বিষণ্ণতা বা হতাশার স্বাদ পেতে পারেন। তাঁর চিত্রকর্মে নিঃসঙ্গ আত্মার বিলাপ, অন্তর্নিহিত দুঃখ বা নগ্নতার অনুভূতি অনুভব করা যায়।
প্রীতির ফর্মের কমবেশি, ছড়ানোর ধরন এবং কগনিজ্যান্ট ব্রাশ স্ট্রোক একই সঙ্গে প্রাকৃতিক এবং কল্পিত একটি ভাষা তৈরি করে। তার প্রাণবন্ত রঙ, ছন্দময় রেখা এবং বিমূর্ত ফর্মের ব্যবহার ক্যানভাসে একটি তীব্র সংবেদনশীল এবং নিমগ্ন স্থান তৈরি করে।
২০১৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে তার প্রথম একক প্রদর্শনী 'পাওয়ার অব পেইন অ্যান্ড প্যাথোস' অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন একক ও দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের গ্যালারি রেসিডেন্স, বাড়ি ৮, ৭ম তলা, রোড ৮৭-এ প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশান-২ এর গ্যালারি রেসিডেন্সে প্রদর্শনী চলবে।
প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখতে দর্শনার্থীরা [email protected] মাধ্যমে শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আরও তথ্য www.pritiali.art এ পাওয়া যায়।
৩৩০ দিন আগে
২০২৫ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা
বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভিসা প্রাপ্তির বিষয়টি একটি চিরাচরিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশের মাটিতে পা রাখার এই অনুমতির শিথিলতা বিভিন্ন সময়ে কমবেশি হয়ে থাকে। বিশ্ব রাজনীতি ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সৃষ্ট এই অবস্থার প্রধান শিকার হন মূলত বিদেশে যাওয়া নাগরিকরাই।
ভিসা প্রক্রিয়ার নানা জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও অনেক ভ্রমণকারীকে ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে ভিসামুক্ত গন্তব্যগুলো যেকোনো দেশের জন্যই এক বিরাট সুখবর। প্রতিবারের মতো এই বছরও পাসপোর্টের মানের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রমের তালিকা প্রকাশ করেছে হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স। এই তালিকায় উঠে এসেছে- একটি দেশের পাসপোর্টের জন্য কতগুলো দেশের ভিসা-শিথিলতা রয়েছে।
তন্মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা কোন দেশগুলোতে ভিসা ছাড়া, অন-আরাইভাল ভিসা ও ই-ভিসাতে যেতে পারবে- চলুন জেনে নেওয়া যাক।
২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত দেশগুলো
পরিপূর্ণভাবে ভিসা-মুক্ত অভিবাসন নীতিতে দেশ ত্যাগ বা বিদেশে প্রবেশকালে কোন ধরনের কাগুজে বা ডিজিটাল অনুমতিপত্র দেখানোর শর্ত থাকে না। ফলশ্রুতিতে দেশি বা বিদেশি মুদ্রায় ভিসা ফি দেওয়ারও কোনো অনুষঙ্গ নেই। এই কার্যনীতির একমাত্র নথি হিসেবে কাজ করে পাসপোর্টটি।
তবে এই সুবিধা নিয়ে গন্তব্যের দেশটিতে অবস্থান করার জন্য থাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা, যার বিস্তৃতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ার ল্যাংকাউই দ্বীপ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় এবং যাবতীয় খরচ
২০২৪-এ হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুসারে পৃথিবীর ২২টি দেশ বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকা নাগরিকদের সম্পূর্ণ ভিসা-অব্যহতি সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু এবার এই সংখ্যাটি কমে দাড়িয়েছে ২১।
চলুন, বাংলাদেশের জন্য এই ভিসামুক্ত গন্তব্যের দেশগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
১. বাহামাস
২. বার্বাডোস
৩. ভুটান
৪. ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
৫. কুক দ্বীপপুঞ্জ
৬. ডমিনিকা
৭. ফিজি
৮. গ্রেনাডা
৯. হাইতি
১০. জ্যামাইকা
১১. কিরিবাতি
১২. মাদাগাস্কার
১৩. মাইক্রোনেশিয়া
১৪. মন্টসেরাট
১৫. নিউ
১৬. রুয়ান্ডা
১৭. সেন্ট কিট্স এবং নেভিস
১৮. সেন্ট ভিন্সেন্ট এবং গ্রেনাডাইন্স
১৯. দ্যা গাম্বিয়া
২০. ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
২১. ভানুয়াতু
আরো পড়ুন: ভিয়েতনামের হা লং বে দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ: ঘুরে আসুন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
২০২৪-এর সূচকের পূর্ণাঙ্গ ভিসামুক্ত ক্যাটাগরি থেকে যে দেশটি এবার বাদ পড়েছে সেটি হচ্ছে লেসোথো। দেশটিতে যেতে হলে বাংলাদেশিদের এখন থেকে দেশ ত্যাগের পূর্বেই যথাযথ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ক্যাটাগরির বাকি ২১টি দেশের প্রত্যেকটিই অপরিবর্তিত রয়েছে, কোনোটির সঙ্গেই নতুন কোনো দেশের প্রতিস্থাপন হয়নি।
২০২৫ সালে অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
এই অভিবাসন নীতি অনুসারে বিদেশ গমনকারী গন্তব্যের দেশে প্রবেশের আগ মুহুর্তে ভিসা হাতে পান। বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, কিংবা স্থলবন্দর; যেকোনো চেকপয়েন্টে এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হয়। এ ধরনের অনুমতি নিয়ে বিদেশে প্রবেশ এবং সেখানে থাকার জন্য সুনির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এই সময়সীমা একেক দেশে একেক রকম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও কোনো কোনো দেশে এই ভিসার জন্য ফি রাখা হয়।
২০২৫-এর হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স মতে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ১৬টি দেশে এই ভিসা-নীতি অনুসরণ করা হবে। দেশগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
১. বলিভিয়া
২. বুরুন্ডি
৩. কম্বোডিয়া
৪. কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ
৫. কমোরো দ্বীপপুঞ্জ
৬. জিবুতি
৭. গিনি-বিসাউ
৮. মালদ্বীপ
৯. মৌরিতানিয়া
১০. মোজাম্বিক
১১. নেপাল
১২. সামোয়া
১৩. সিয়েরা লিওন
১৪. সোমালিয়া
১৫. তিমুর-লেস্তে
১৬. টুভালু
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান,শপিংমল ও জনপ্রিয় খাবার
আগের বছর এই সংখ্যাটি ছিল ১৮। এবার এই ক্যাটাগরি থেকে বাদ পড়েছে সেশেলস এবং টোগো। সেশেলস এখন থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ইটিএ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, আর টোগো’তে থাকছে ই-ভিসা নীতি।
২০২৫ সালে যেসব দেশে যেতে বাংলাদেশিদের ইটিএ প্রয়োজন হবে
ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন বা ইটিএ হচ্ছে ভ্রমণের ডিজিটাল ছাড়পত্র, যা সরাসরি পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই অনুমতি ভ্রমণের আগে নিতে হয়, তবে প্রক্রিয়াটির জন্য দূতাবাসে সশরীরে না যেয়ে অনলাইন থেকেই করে নেওয়া যায়। ইটিএ প্রদানকারী প্রত্যেকটি দেশের অভিবাসন ওয়েবসাইটে এই ইলেক্ট্রনিক পরিষেবাটি রয়েছে।
২০২৫-এ ৩টি দেশে ভ্রমণকালে এই ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
দেশগুলো হলো:
১. শ্রীলঙ্কা
২. কেনিয়া
৩. সেশেলস
বিগত বছরের অন-অ্যারাইভাল তালিকায় থাকা সেশেলস এ বছর যুক্ত হয়েছে ইটিএ ক্যাটাগরিতে।
আরো পড়ুন: ফিলিপাইনের ভিগান ভ্রমণ গাইড : ঘুরে আসুন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
হেনলি ইন্ডেক্স অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভিসা-অব্যহতি, অন-অ্যারাইভাল ও ইটিএ- এই তিন ভিসা-নীতিকে এক সঙ্গে ভিসামুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নিরীখে চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা সর্বমোট ৪০ যা গত বছরে ছিল ৪২।
এই পরিবর্তনের কারণে হেনলি ইন্ডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭ থেকে নেমে এসেছে ১০০তে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছিল। তারপর থেকে একটানা তিন বছর ক্রমশ উন্নয়নের পর আবারও নিম্নগামী হলো বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান।
২০২৫ সালে যে দেশগুলো বাংলাদেশিদের ই-ভিসার সুবিধা দিচ্ছে
ইটিএ এবং ইলেক্ট্রনিক বা ই-ভিসা উভয়ের সঙ্গেই অনলাইন পদ্ধতির সম্পৃক্ততা থাকলেও দুয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ই-ভিসা মূলত পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দীর্ঘ দিনের জন্য বিদেশ গমনের নিমিত্তে করা হয়ে থাকে। অপরদিকে, ইটিএ-এর মূল উদ্দেশ্য থাকে পর্যটন বা ট্রাঞ্জিট; তথা স্বল্প সময়ের জন্য গন্তব্যের দেশটিতে থাকা।
ডিজিটাল পদ্ধতির পরেও ই-ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াতে প্রায় ক্ষেত্রে সহায়ক নথির প্রয়োজনীয়তা থাকায় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। অন্যদিকে, ইটিএ-এর জন্য খুব বেশি নথির বাধ্যবাধকতা নেই, যার কারণে প্রক্রিয়া বেশ দ্রুত এবং সহজ হয়।
আরো পড়ুন: লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানাবিধ সুবিধা
এ বছর যে দেশগুলোতে যেতে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের ই-ভিসা করতে হবে, সেগুলো হলোঃ
১. আলবেনিয়া
২. অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা
৩. আজারবাইজান
৪. বাহরাইন
৫. বেনিন
৬. বতসোয়ানা
৭. ক্যামেরুন
৮. কলম্বিয়া
৯. নিরক্ষীয় গিনি
১০. গিনি
১১. ইথিওপিয়া
১২. গ্যাবন
১৩. জর্জিয়া
১৪. কাজাখস্তান
১৫. কিরগিজস্তান
১৬. মালয়েশিয়া
১৭. মলদোভা
১৮. মায়ানমার
১৯. ওমান
২০. পাকিস্তান
২১. কাতার
২২. সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে
২৩. সুরিনাম
২৪. সিরিয়া
২৫. তাজিকিস্তান
২৬. তানজানিয়া
২৭. থাইল্যান্ড
২৮. টোগো
২৯. তুর্কি
৩০. উগান্ডা
৩১. উজবেকিস্তান
৩২. ভিয়েতনাম
৩৩. জাম্বিয়া
৩৪. জিম্বাবুয়ে
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শেষাংশ
২০২৪-এর তালিকা থেকে লেসোথো বাদ যাওয়ায় ২০২৫-এ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য সম্পূর্ণভাবে ভিসামুক্ত দেশগুলোর সংখ্যা ২২ থেকে কমে ২১ হয়েছে। বর্তমানে ইটিএ পদ্ধতি অবলম্বন করা সেশেলস বিগত বছর ছিল অন-অ্যারাইভাল তালিকায়। একই তালিকাভূক্ত টোগো এবার থেকে অনুসরণ করছে ই-ভিসা পদ্ধতি। তাই ১৮ থেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা দেওয়া দেশের সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ১৬। একই কারণে গতবারের ২টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩টি দেশে রয়েছে ইটিএ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ২০২৫-এ মোট ৪০টি দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারবেন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা। উপরন্তু, বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার সুবাদে এই বছরে মোট ৩৪টি দেশ থেকে ই-ভিসার সুবিধা থাকছে।
৩৩৬ দিন আগে