জীবনধারা
তীব্র শীতে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
তীব্র শীত গৃহপালিত পশুপাখির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পশুপাখিরাও পড়তে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে। যারা পশুপাখি পালনে আগ্রহী তাদের শীতকালে নিজের পাশাপাশি তাদের পোষা প্রাণীটির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চলুন, জেনে নেই, কীভাবে শীতকালীন অসুস্থতা থেকে পোষা প্রাণীদের মুক্ত রাখবেন।
পোষা প্রাণীর শীতকালীন সুরক্ষার উপায়
পোষা প্রাণীকে ঘরের ভেতরে রাখা
ঠান্ডা থেকে পোষা প্রাণীদের নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সারারাত ঘরের ভেতরে রাখা। কুকুর বা বিড়ালের রাতে বাইরে বের হবার প্রবণতা থাকে। তারা প্রায় সময়ই রাস্তার বেওয়ারিশ পশুগুলোর সংস্পর্শে যেয়ে নানা ধরনের জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে খুব বেশি সংবেদনশীল বিড়াল এবং কুকুরের ক্ষেত্রে হাইপোথার্মিয়ার ভয় থাকে।
তাই পোষা পশুপাখিদের রাতের পুরোটা সময় ঘরের ভেতরে রেখে দিনের কিছুটা সময় সঙ্গে নিয়ে বের হওয়া যেতে পারে শারীরিক অনুশীলনের জন্য। কেননা শীতের সময় দৌড়ঝাপ, খেলাধুলা, বা কিছু সময় হেঁটে বেড়ানো এদের শরীর গরম রাখতে পারে।
আরো পড়ুন: শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন
থাকার জায়গাগুলোকে উষ্ণ রাখা
ঘরে উপযুক্ত উষ্ণতা না পেলে পোষা প্রাণীরা স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ভেতর থাকতে চাইবে না। এছাড়া অনেক গৃহপালিত পশুপাখি আছে যারা বাড়ির বাইরেই রাখতে হয়। এদের থাকার জায়গাটিকে শুষ্ক রাখতে হবে এবং এমনভাবে মজবুত ঘেরযুক্ত করে দিতে হবে যাতে এরা ভালোভাবে বসতে এবং শুতে পারে।
তাদের শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্য ঘরটি যথেষ্ট ছোট হতে হবে। ঘরে মেঝে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচু হবে এবং ছাদ খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ঘরটি এমন স্থানে হতে হবে যেখানে বাতাসের ঝাপটা কম এবং সহজেই খাবার ও পানীয় পেতে পারে।
বাড়ির ঠান্ডা মেঝে থেকে পোষা প্রাণীদের বাঁচানোর জন্য গরম মাদুর বিছিয়ে দেওয়া ভালো উপায়। আর ঘুমানোর জায়গাটিতে দেওয়া যেতে পারে ছোট গরম বিছানা ও পশুদের জন্য নির্ধারিত কম্বল।
তবে খুব অল্প বয়স্ক অথবা অধিক বয়স্ক পশুগুলোর অতিরিক্ত গরম অনুভূত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। এদের জন্য হিটিং প্যাড বেশ কাজে দিতে পারে। এগুলো মূলত প্রাণীদের জয়েন্টের ব্যথা হওয়া থেকে দূরে রাখে।
আরো পড়ুন: মাঙ্কিপক্স: পোষা প্রাণী থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান
পোষা প্রাণীর শীতের পরিধেয়
পশুপাখিদের অধিকাংশেরই প্রকৃতি প্রদত্ত লোমের আবরণ থাকলেও এটি কখনই মনে করা ঠিক নয় যে, তাদের ঠান্ডাতে কোনো সমস্যাই হবে না। পাতলা লোমযুক্ত পূর্ণ বয়স্ক পশু এমনকি অধিক লোমশ পশুগুলোর মধ্যে যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা সঠিক সুরক্ষা ছাড়া বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে রাখা সুন্দর একটি সোয়েটার দিতে পারে এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোমশ ছোট আকৃতির পশুগুলোর বেলায় এই পরিধেয়ের দরকার পড়ে না।
ঠান্ডার মধ্যে শীত থেকে আপনার আদরের পোষ্যটির পা বাঁচাতে এক জোড়া বুটি হতে পারে দারুণ একটি উপায়। বুটিগুলো পশুর থাবাগুলোতে ময়লা জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখা
বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি পোষ্য প্রাণীটিকেও পরিষ্কার করা জরুরি।
ঠান্ডার সময় বাইরে ধূলো-ময়লা পায়ের আঙুলগুলোর মাঝে ঢুকে জ্বালা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো জিহ্বা দিয়ে চাটতে দেখা যায়। এখানে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক উপাদান থাকলে তা তাদের মুখে জ্বালা হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই ঘরে ঢুকেই প্রথমে একটি আর্দ্র তোয়ালে দিয়ে পোষা প্রাণীটির পা মুছতে হবে। এছাড়া কুয়াশায় পশম ভিজে দীর্ঘক্ষণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রেখে দিলে শুষ্ক ত্বকসহ পোষা প্রাণীটির অন্যান্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মৃদু শুকিয়ে পোষ্যটির শরীর মুছে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে বুটি আর সোয়েটার থাকলে ব্যবহার করা। তাহলে পোষা প্রাণীদের কান, নাক, পা ও লেজ কুয়াশায় ভিজে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আরো পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
শীতে পোষা প্রাণীর ত্বকের যত্ন
ঠান্ডার তীব্রতা থেকে পোষা প্রাণীদের ত্বক বাঁচাতে ঘন ঘন গোসল করানো যাবে না। অতিরিক্ত আর্দ্রতা প্রদানের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে খাদ্যে নারিকেল তেল ব্যবহার করা। শুধুমাত্র পোষ্য পশু-পাখিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিছু নিরাময় মলম আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো প্রয়োগ করতে হয় নাক ও পায়ের আঙুলের আশেপাশে লাল দাগযুক্ত জায়গাতে।
ত্বকের যত্নে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শীতের সময় পশুগুলোর পশম বাড়তে দেওয়া। এটি প্রাকৃতিকভাবেই তাদের শরীরে উষ্ণতার একটি অতিরিক্ত স্তরের সংযোজন করে। তবে নষ্ট বা মরা পশম ঝরাতে প্রাণীদের শরীরে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা নয়, রান্নার কাজে এবং খাদ্য ও পানীয়র পাত্র হিসেবে কাঁসা, পিতল ও তামার বাসন ব্যবহার সুস্থ জীবন ধারণের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
ধাতব বস্তুগুলোর প্রাচীন মান ও নান্দনিকতার বাইরেও সেগুলোর বিশেষ গুণ হচ্ছে সেগুলোর কাঙ্ক্ষিত তাপ পরিবাহিতা ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন টেকসই গড়নের নিচে লুকিয়ে থাকা কিছু বৈশিষ্ট্য, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই আঞ্জাম দিতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন জেনে নেয়া যাক, দৈনন্দিন রান্নার কাজে ও খাবার/পানি পরিবেশনে কাঁসা, পিতল ও তামার পাত্র ব্যবহার কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত।
কাঁসার পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
হজম ও বিপাকে কার্যকারিতা
কাঁসার ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য খাদ্যের অম্লতাকে প্রশমিত করে। ফলে পানি বা খাদ্যে থাকা পানির পিএইচের (পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন) স্তর উন্নত হয়। এই পিএইচ মূলত পানির দ্রবণে অম্ল বা ক্ষারের উপস্থিতি নির্ণয়ের মাপকাঠি। এভাবে রান্না করা খাবারটি বিশুদ্ধ হয়ে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
চর্বি কমানো
কাঁসা এমন একটি সংকর ধাতু যাতে যথেষ্ট পরিমাণে তামা থাকে, যেটি চর্বি ভেঙে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি রান্নায় অতিরিক্ত চর্বি ও তেলের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে খাবারের সর্বত্রে সমানভাবে তাপ বিতরণ করে।
ব্যথানাশক ক্ষমতা
কাঁসার ভেতরে থাকা তামা শরীরের সবখানে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। ফলে কালশিটে পড়া পেশি, ব্যথা হওয়া জয়েন্টগুলো এবং এমনকি আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও ভালো বোধ হয়।
শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
সারারাত ধরে কাঁসার পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা হলে পানিতে একাধিক পুষ্টি যোগ হয়। এই পানি পানের মাধ্যমে শরীরে শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক পুষ্টিগুলোর চাহিদা পূরণ হয়।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
কাঁসার পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
পুরনো কাঁসার পাত্রে সীসা বা আর্সেনিক থাকতে পারে, যা রান্নার সময় খাবারে প্রবেশ করতে পারে।
অক্সিডেশন এড়াতে কাঁসা পাত্রগুলো ব্যবহারের পরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিৎ। এর জন্য কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। অতঃপর তাতে অল্প ডিটারজেন্ট দিয়ে আলতোভাবে পাত্রটি পরিষ্কার করতে হবে।
পিতলের পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
দ্রুত ক্ষত নিরাময় ও কোষের বৃদ্ধি
পিতল এমন একটি সংকর ধাতু যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে দস্তার উপস্থিতি বিদ্যমান। দস্তা প্রদাহ কমাতে, দ্রুত ক্ষত নিরাময়, কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি নিরবচ্ছিন্ন বিপাকের ক্ষেত্রেও সহায়ক। তাই শরীরে দস্তার ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পাশাপাশি পিতলের তৈজসপত্রে রান্না করা বা খাবার খাওয়া শুরু করা যেতে পারে।
সংক্রমণ প্রতিরোধী
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের বিরুদ্ধে পিতল বেশ কার্যকর। অন্যান্য পাত্রের তুলনায় পিতলের পাত্রগুলো খাবারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য উষ্ণ রাখে। ফলে রান্না করা খাদ্য যে কোনো সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
হজমের জন্য ভালো
অম্লত্ব হ্রাস করার মাধ্যমে গ্যাসট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে। ফলে পাকস্থলি পরিষ্কার হয়ে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বাড়ে এবং অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।
পিতলের পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
নিয়মিত খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাত্রটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। নতুবা উল্টো সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাপ ধরে রাখা এবং বিশুদ্ধ রাখতে রান্না করা খাবার ঠিকভাবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
হালকা তাপে রান্না বা ফুটানো যে কোনো রান্নার জন্যই পিতল একটি আদর্শ ধাতু। তবে অতিরিক্ত ভাজার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা তেল গরম হওয়ার জন্য অধিক তাপের প্রয়োজন হয়, যা টিনের আস্তরণকে প্রভাবিত করতে পারে। পরবর্তীতে এতে সংরক্ষণকৃত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাটার মিল্ক, লাচ্ছি, জ্যাম, সস, আচার, দুধ, পনির ও দই জাতীয় খাবার এবং জ্যুস তামা বা পিতলের পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিৎ নয়।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
তামার পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী
খাবার পানি সরবরাহের পাইপ এবং গৃহস্থালির কলগুলো সাধারণত তামা দিয়ে তৈরি করা হয়। কারণ তামায় রয়েছে জীবাণু প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য। তামার পাত্রে জমা পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ই. কোলাই নির্মূল করতে পারে। এছাড়া সালমোনেলা, টাইফাস, শিগেলা এসপিপি, কলেরা, এন্টেরোভাইরাস এবং হেপাটাইটিস এ-এর মতো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও এটি বেশ কার্যকর।
থাইরয়েডের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে
থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতা নির্ভর করে শরীরে থাকা তামার পরিমাণের ওপর। তামার ঘাটতি থাকলে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। তামার পাত্রে পানি খাওয়া বা সংরক্ষণ করা এই ঝুঁকি দূর করতে পারে।
আর্থ্রাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে
কাঁসার মতো তামারও রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা উপশমের জন্য সহায়ক। বিশেষত এর প্লেকটিং বৈশিষ্ট্যটি শরীরের জয়েন্টের ব্যথা এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিস সৃষ্ট প্রদাহ দ্রুত সারাতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কফি
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধকারী
রক্তাল্পতা প্রতিরোধে তামার ওষুধি ক্ষমতা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তামার পাত্রে সংরক্ষিত পানি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হার্টে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর জন্য রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করার পাশাপাশি নালীর প্রাচীরে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে।
ক্ষত নিরাময়কারী
তামার পেপটাইড সেরা নিরাময় এজেন্টদের মধ্যে একটি। ক্ষত এবং ত্বকের ক্ষতির চিকিৎসার জন্য এমন অনেক চিকিৎসা পণ্য আছে যেগুলোর মূল উপাদান এই তামা পেপটাইড। এটি সাধারণত কোলাজ উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কোলাজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যত বেশি সক্রিয় হবে, শরীরের যে কোনো ক্ষত তত দ্রুত সেরে উঠবে।
ক্যান্সার কোষ ধ্বংস
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর আরও বড় একটি গুণ হচ্ছে- এগুলো যাবতীয় ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো মূলত মানবদেহে ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
ত্বক ও চোখের যত্ন
মেলানিন তৈরিতে তামার গুরুত্ব অপরিসীম। এই মেলানিন মানবদেহের ত্বক এবং চোখের উজ্জ্বল রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতি-বেগুনি (ইউভি) রশ্মি থেকেও রক্ষা করে ত্বক ও চোখকে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য সহায়ক
আরবিসি (রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্ত কণিকা) উৎপাদনের জন্য যথোপযুক্ত কাঁচামালের যোগান দেয় তামা। এটি আরবিসির উৎপাদন বাড়িয়ে টিস্যুর মেরামত এবং শর্করা হজম করতে সাহায্য করে। এই সুবিধাগুলোর প্রতিটিই প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের জন্য। তামা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় গর্ভের সন্তানের হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, কঙ্কাল এবং স্নায়ুতন্ত্র গঠনে।
তামার পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
তামার অ্যালার্জি থাকা খুব একটা দেখা যায় না। এরপরেও তামাতে যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের এই ধাতু থেকে দূরে থাকতে হবে। এই ধরনের তৈজসপত্র ব্যবহার বা তা থেকে পানি পান করলে ফুসকুড়ি বা চুলকানি হতে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেটের মধ্যে ঢাকার সেরা ১০টি বুফে রেস্টুরেন্ট
সাধারণত এই ধাতুর পাত্র থেকে বারবার পানি পান করলে তামার বিষাক্ততা ছড়াতে পারে। ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঝুঁকি থাকে বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়ার। শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তামার চাহিদা পূরনের জন্য দিনে দুইবার (সকাল এবং সন্ধ্যা) তামার বোতলে জমা পানি পান করাই যথেষ্ট।
পিতল ও কাঁসার মতো তামার ক্ষেত্রেও ব্যবহারের পর নিয়মিত পাত্র পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি। থালা সাবান বা লেবু এবং লবণ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী উপায়েই তৈজসপত্র পরিষ্কার করা যেতে পারে।
সংগ্রহ বা ক্রয়ের সময় কাঁসা, পিতল ও তামা প্রতিটির ক্ষেত্রেই ধাতুটি খাঁটি কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। পানি বোতলে ভরে সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে রাখা যাবে না।
শেষাংশ
বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ এই তত্ত্ব-উপাত্তগুলো উপযুক্তভাবে ন্যায্যাতা দান করে কাঁসা, পিতল ও তামার পাত্রের ব্যবহারকে। বর্তমান সময়ে রান্নার কাজে ব্যবহার্য সামগ্রীর যে কোনোটির তুলনায় এগুলো অধিক স্বাস্থ্যকর। নিদেনপক্ষে এখন যেখানে জীবাণুবাহী রোগগুলোর দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, সেখানে আধুনিক তৈজসপত্রগুলোর ওপর এই জীবাণু বিরোধী ধাতুগুলোর প্রাধান্য থাকবে।
তবে রান্নার কাজে ও খাবার/পানি পরিবেশনের জন্য কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ক্রয়ের পূর্বে ধাতুগুলোর বিশুদ্ধতা যাচাই করে নেওয়া অত্যাবশ্যক। অতঃপর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
বহু যুগের ঐতিহাসিক স্থাপনায় সমৃদ্ধ বাংলার জনপদ সাক্ষী হয়ে আছে নানান সময়ের স্থাপত্য শিল্পকর্মের। এমনকি নদীমাতৃক বাংলাদেশ সেই জীবাশ্মগুলোকে বুকে ধারণ করে এখনও শুনিয়ে যায় উত্থান-পতনের কাহিনী। তেমনি একটি পুরাকীর্তি ঈশা খাঁ’র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈশা খাঁ’র বীরত্বগাঁথা।
ষোল শতকের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এখন আর আগের মত জৌলুশ না থাকলেও ইতিহাস উৎসাহীদের কাছে এটি একটি প্রিয় পর্যটন স্থান। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ বিষয়ক নিবন্ধ। চলুন, জেনে নেয়া যাক- কিভাবে বারো ভূঁইয়াদের সময়কার এই স্থাপত্য নকশাকে খুব কাছ থেকে দেখবেন।
ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অবস্থান ও বিশেষত্ব
ঢাকা বিভাগের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কিশোরগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা করিমগঞ্জ। এই করিমগঞ্জের অন্তর্গত কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের নরসুন্দা নদী বিধৌত একটি গ্রাম জঙ্গলবাড়ি। এই গ্রামেরই মধ্যমণি বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম নেতা ঈশা খাঁ’র স্মৃতিবাহী জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। মসনদে-আলা-বীর ঈশা খাঁ এখানেই বানিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় রাজধানী।
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের ইতিহাস
ইংরেজদের ও মুঘলদের স্বৈরাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলার জমিদাররা গোপনে সাহায্য চেয়েছিলেন ঈশা খাঁ’র কাছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ৪০০ অশ্বারোহী, ২১টি নৌবিহার এবং গোলাবারুদ নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে হাজির হন ঈশা খাঁ।
অতঃপর ১৫৮৫ সালে তৎকালীন কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে তিনি দখল করে নেন জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। এই দুর্গ মূলত সেই কোচ রাজার আমলে তৈরি করা হয়নি। ধারণা করা হয়, এর গোড়াপত্তন হয়েছিলো প্রাক-মুসলিম যুগে।
আরও পড়ুন: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তবে দুর্গ দখলের পর ঈশা খাঁ দুর্গটির সংস্কার করার সময় এর ভেতরে আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন। এই দুর্গ থেকেই পরবর্তীতে তিনি ক্রমান্বয়ে সোনারগাঁও সহ ২২টি পরগণা দখল করেছিলেন।
১৫৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর পুত্র মুসা খান সোনারগাঁওয়ের মসনদের আসীন হন। মুসা খাঁ বারো-ভূঁইয়াদের পক্ষে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। অবশেষে ১৬১০-এর ১৬ জুলাই মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খানের কাছে তার পরাজয় হয়।
এ সময় ঈশা খাঁ’র বংশধররা সোনারগাঁও ত্যাগ করে আশ্রয় নিয়েছিলেন এই জঙ্গলবাড়ি দুর্গে।
বর্তমানে এই ঐতিহাসিক দুর্গ বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৫-এর ১২ জুন স্থানীয় প্রশাসন দুর্গের ভেতরের দরবার কক্ষটি সংস্কার করে স্থাপন করে জাদুঘর ও পাঠাগার। নতুন সংস্কারকৃত কক্ষটিকে 'ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার' নাম দিয়ে উন্মুক্ত করা হয় দর্শনার্থীদের জন্য।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
দীপাঞ্চল ভ্রমণ মানেই বিচ্ছিন্ন কোনো ভূখণ্ডে সাগর ও আকাশের দিগন্তরেখায় অর্ধচন্দ্র ডিঙি নৌকার মিলিয়ে যেতে দেখা। যেখানে ঢেউয়ের পিঠে চেপে যাযাবর পলিমাটি ঠিকানা খুঁজে পায় প্রাণবন্ত গ্রামগুলোর কাঁচা সৈকতে। বঙ্গোপসাগরের সংস্পর্শে থাকায় সবুজ বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরাও পরিচিত এমন দৃশ্যের সঙ্গে। তবে দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ হওয়ার বিশেষত্বটা মহেশখালীকে আলাদা করেছে আর সব উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে। শুধুই কি পাহাড়ের চূড়া থেকে পাখির চোখে দ্বীপ দর্শন! এখানে আছে দেশের অকৃত্রিম সব সৌন্দর্য্যের উপাদান।
চলুন, বাংলাদেশের এই ল্যান্ডমার্ক দর্শনীয় স্থান মহেশখালী দ্বীপে ভ্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মহেশখালীর ভৌগলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব
চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত প্রশাসনিকভাবে স্বীকৃত এক উপজেলা মহেশখালী। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা- এই চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
এর পূর্বে রয়েছে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর। উত্তরে চকরিয়া উপজেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও কক্সবাজার সদর উপজেলা।
মহেশখালীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মিষ্টি পানের সুখ্যাতি। সেই সঙ্গে চিংড়ি, লবণ ও মুক্তা চাষের জন্যও স্থানটি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিচিত।
১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মহেশখালী দ্বীপ। এর পাদদেশে প্রবাহিত চ্যানেল এবং পূর্ব প্রান্ত দিয়ে উত্তর দক্ষিণমুখী পাহাড় এখনও সেই সংযুক্তির চিহ্ন বয়ে চলেছে।
জনতা বাজার নামক জায়গাটিতে নতুন নির্মিত হওয়া মহেশখালী সেতু বর্তমানে মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে দ্বীপের সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বাতিঘরে ‘রাইজিং ইকোস’ শুরু
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উন্নয়ন ও দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে ‘বাতিঘর-স্মৃতিতে আলী যাকের’ শীর্ষক ১০ দিনব্যাপী ‘রাইজিং ইকোস’ শীর্ষক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর এশিয়াটিক সেন্টারের ছাদে এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। প্রদর্শনীতে মোট ৩১টি শিল্পকর্ম ও আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
আরও পড়ুন: এক্সে অডিও-ভিডিও কল করা যাবে অ্যান্ড্রয়েড থেকেও
এই প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী মৃত্তিকা গাইন তার ফটোগ্রাফিক লেন্সের মাধ্যমে জলবায়ুজনিত নদী ভাঙনের কারণে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে খুলনার দাকোপের কালাবগি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে অংশগ্রহণকারী আরেক শিল্পী হ্লুবাইশু চৌধুরী তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক দৃশ্যের বিকৃতির চিত্র তুলে ধরেছেন।
মঙ্গল দীপ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর কিউরেটর, শিক্ষাবিদ ও ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট শামসুল আলম হেলালের সমন্বয়ে ‘রাইজিং ইকোস’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ছবি মেলা ও ঢাকা আর্ট সামিটেও কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া বা হাতি মাথা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
প্রদর্শনীর আগে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে মঙ্গল দীপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন সারা যাকের, মঙ্গল দীপ ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ইরেশ যাকের, শামসুল আলম হেলাল, মৃত্তিকা গাইন, হ্লুবায়শু চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারা যাকের বলেন, ‘বাংলাদেশি হিসেবে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের জন্য কাজ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিবসা নদীর ভাঙন এবং কাপ্তাই বাঁধের জন্য কাপ্তাই লেক সৃষ্টি এর দুটি উদাহরণ।’
খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া বা হাতি মাথা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দর্শনীয় স্থানগুলোতে নান্দনিকতার পাশাপাশি থাকে মৌলিকতার ছোঁয়া। তার অকৃত্রিমতা অপরিবর্তিত রেখে কিছু মানবসৃষ্ট অবকাঠামোর সংযোজন জায়গাটির সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া, বা হাতি মাথা ঠিক এমনি একটি জায়গা, যার প্রাচীনতায় লেশমাত্র দাগ ফেলেনি মনুষ্য সৃষ্টকর্ম। উল্টো প্রকৃতির এই অপার বিস্ময়কে সাজিয়ে তুলেছে শৈল্পিক অলঙ্করণে। অদ্ভূত আকৃতির এই পাহাড় নিয়েই এবারের ভ্রমণকথা।
এমন মজার নামের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি চলুন জেনে নেয়া যাক- কোন কোন বিষয়গুলো জায়গাটির প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
হাতিমুড়া বা মায়ুং কপালের অবস্থান ও বিশেষত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম পাহাড় ঘেরা অন্যতম ইউনিয়ন পেরাছড়া। এই ইউনিয়নেরই সবচেয়ে দর্শনীয় পাহাড়টির নাম হাতি মাথা বা মায়ুং কপাল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০৮ ফুট উচু এই পাহাড় নানা জনগোষ্ঠীর মোট ১৫টি গ্রামকে সযত্নে আগলে রেখেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাঙ্গামুড়া, মাখন তাইসা পাড়া, বদলছড়া, হাজা পাড়া, কিনাপা পাড়া, কাপ্তালপাড়া, বাগড়া পাড়া, সাধুপাড়া, ও কেশব মহাজনপাড়া।
হাতি মাথার খাড়া পাহাড় বেয়ে পাহাড়ি জনগণের উঠানামার সুবিধার্থে ২০১৫ সালের ১৩ জুন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় ৩০৮ ফুট দীর্ঘ লোহার সিঁড়ি। এই সিঁড়ি পথ দিয়ে পাহাড় চূড়ায় যেতে ৩০০টি ধাপ পেরোতে হয়।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
মায়ুং কপাল বা হাতি মাথা নামের উৎপত্তি
অদ্ভূত আকৃতির এই পাহাড় প্রাকৃতিকভাবেই গঠন পেয়েছে হাতির মাথার মত আর এ কারণেই ‘হাতি মাথা’ বা 'হাতিমুড়া' নামকরণ। ‘মায়ুং কপাল’ নামের উৎপত্তি এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ত্রিপুরাদের কাছ থেকে। তারা ‘হাতি’ বোঝাতে ‘মায়ুং’ এবং ‘মাথা’ বোঝাতে ‘কপাল’ শব্দ ব্যবহার করে, আর এ দুয়ে মিলেই পাহাড়ের নাম হয়েছে হাতি মাথা।
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত এই পাহাড়টি। স্থানীয়দের অনেকে একে হাতি মুড়া বলে ডাকে। চাকমাদের কাছে এটি ‘এঁদো সিরে মোন’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
মায়ুং কপাল পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
পাহাড়ি বনের মাঝ দিয়ে নির্মিত সিঁড়ির নিচ থেকে উপরের দিকে সিঁড়ির প্রান্ত দেখা যায় না। দেখে মনে হয় যেন সিঁড়ির ধাপগুলো আকাশেরও উপরে উঠে গেছে। আর তাই সিঁড়ি নির্মাণের পর থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে পাহাড়ের দারুণ একটি নাম প্রচলিত হয়, আর সেটি হচ্ছে- ‘স্বর্গের সিঁড়ি’। এরকম নাম এবং সিঁড়ির অনিন্দ্য দৃশ্যের জন্যই গত কয়েক বছর ধরে পাহাড় ট্রেকারদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাতি মুড়া
হাতি মুড়া পৌঁছার দীর্ঘ ট্রেইলপথের একঘেয়েমিতা দূর করেছে খরস্রোতা চেঙ্গি নদী। নদীর ওপর দিয়ে পাড়াপাড়ের জন্য রয়েছে কাঠের সাঁকো। এর পরে বিস্তৃত সমতল ভূমির দু’পাশে কোথাও জুম ক্ষেত, কোথাও বা ধু ধু প্রান্তর। এমন মাঠ পেরোতেই দেখা মিলবে অদ্ভূত নামের এক পাহাড়ি গ্রামের। ‘বানতৈসা’ নামের এই গ্রামে ত্রিপুরাদের বসবাস।
বানতৈসার পর স্বর্গের সিঁড়ির আগ পর্যন্ত আর কোনও জনপদ নেই। তবে উঁচু-নিচু রাস্তা ধরে এগোনোর সময় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে চোখে পড়বে ছোট ছোট মাচাঘর। দীর্ঘ পায়ে হাঁটা পথে এখানকার কুয়া থেকে বরফ ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে নেয়া যায়।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
হাতিমাথা পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছতেই সামনে দেখা যাবে প্রায় ১২০ ডিগ্রি কোণ করে বেঁকে উপরের দিকে উঠে গেছে স্বর্গের সিঁড়ি। কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে এই সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় পৌঁছতে।
স্বর্গে নিয়ে না গেলেও এই সিঁড়ির শেষ প্রান্ত পর্যটকদের পৌঁছে দেয় নয়নাভিরাম সুন্দর এক গ্রামে। সেই চূড়া থেকে প্রায় পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাই দেখা যায়। মনে হয় যেন নেপাল বা ভুটানের কোনও পর্যটন স্পট।
শনিবার শিল্পকলায় ঢাকা পদাতিকের ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার নাট্যদল ‘ঢাকা পদাতিকের’ ৩৮তম প্রযোজনা ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’। যা হবে নাটকটির ২৯তম প্রদর্শনী।
বৃহস্পতিবার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী মাস্টার দা সূর্যসেনের প্রহসনমূলক বিচার ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে নাটকটি মঞ্চে আনে ঢাকা পদাতিক।
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ নাটকটি রচনা করেন ও নির্দেশনা দেন নাট্যজন মাসুম আজিজ। তার মৃত্যুর পর নির্দেশনার কাজটি করছেন অভিনেতা নাদের চৌধুরী।
এ বিষয়ে নাদের চৌধুরী বলেন, ‘‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ঐতিহাসিক একটি নাটক। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত মাসুম আজিজ ভাই। তবে পরবর্তীতে এই নাটকের কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজন সাপেক্ষে অলংকরণ করে আমি নতুন নির্দেশনার কাজটি করেছি।’
আরও পড়ুন: ‘রেজ অ্যান্ড হোপ’: দৃকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপিত
তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে শূন্যের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করা আর প্রকৃতির অপার বিস্ময়ের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া যেন একই সুরের ঐকতান। আর সেই সংগীত যেন অনুনাদে বাজতে থাকে শীতের শুরুতে। শীতে নেই অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়ার চিন্তা। বরং আকাশ আর পাহাড়ের মাঝে মেঘ আর কুয়াশার প্রতিযোগিতা অ্যাড্রেনালিন বাড়িয়ে দেয় মাঝপথে থেমে যাওয়া কোনো পর্বতারোহীর। ট্রেকার আর রোমাঞ্চপ্রেমীরা এই কারণেই শিশির মাখা ঋতুকে বেছে নেন তাদের দুর্গমপ্রিয় উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙানোর জন্য। দেশে ট্রেকিংয়ের জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্যের নাম তাজিংডং। বিপজ্জনক ঝিরিপথ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, দুর্গম চূড়াটির অভিমুখে রওনা হওয়ার পূর্বে পুরো যাত্রার ব্যাপারে সম্যক ধারণা নেয়া যাক।
তাজিংডংয়ের অবস্থান ও বিশেষত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ী অঞ্চল বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন রেমাক্রী পাংশা। এই ইউনিয়নের সাইচল নামের পর্বতসারির অংশ তাজিংডং। উপজেলা সদর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
প্রকৃত উচ্চতা ৭৮৯ মিটার (2,৫৮৯ ফুট) হলেও সরকারি হিসাব মতে ১ হাজার ২৮০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই প্রাকৃতিক বিস্ময়টি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর আগে দেশের চূড়াগুলোর মধ্যে উচ্চতার দিক থেকে শীর্ষস্থানে ছিল কেওক্রাডং।
অবশ্য বেসরকারি গবেষণায় এই খেতাবের দাবিদার সাকা হাফং চূড়া , যা এখনও সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
তাজিংডং নামের উৎপত্তি
তাজিংডং সংলগ্ন রেমাক্রী অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীদের ভাষায় খুব বড় কোনো কিছু বোঝাতে ‘তাজিং’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। আর ‘ডং’ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয় পাহাড়কে। এভাবে ‘তাজিং’ ও ‘ডং’ শব্দ দুটি একত্রিত করে বিরাটকায় কোনো পাহাড় বোঝাতে ‘তাজিংডং’ নামের প্রচলন ঘটে। সরকারিভাবে এটি বিজয় নামেও পরিচিত।
বিজয় বা তাজিংডং ভ্রমণের সেরা সময়
বর্ষাকালে অন্য সব পাহাড়ি পথের মতো তাজিংডংও পরিণত হয় মৃত্যুকূপে। এছাড়া শুধু শুষ্ক মৌসুমগুলোতেই চাঁন্দের গাড়ি করে পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছা যায়।
আর গরমের সময়গুলোতে এমন দুর্গম গিরিপথ বেয়ে ওঠা ঘর্মাক্ত কলেবরে কুলিয়ে ওঠা যায় না। তাই তাজিংডং আরোহণের সেরা সময় শীতের একদম শুরুর দিকে, যখন কুয়াশার চাদরে ঝিরিপথ অন্ধকার হয়ে যায় না। সেই সঙ্গে যদি পূর্ণিমা থাকে, তাহলে ভ্রমণ উচ্ছ্বাসের ষোলো আনাই পূরণ হয়।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
ঢাকা থেকে তাজিংডং পৌঁছার উপায়
ঢাকাবাসীদের জন্য বান্দরবান যাওয়ার সেরা উপায় হলো বাসরুট। কেননা, এই পথে একমাত্র বাসেই রয়েছে সরাসরি বান্দরবান সদর পর্যন্ত যাওয়ার উপায়। বাস গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান, মহাখালী, ফকিরাপুল বা যাত্রাবাড়ীর যে কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বান্দরবানের বাস পাওয়া যায়।
বাস কোম্পানি এবং এসি ও ননএসি ভেদে এগুলোতে ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
ট্রেনে ভ্রমণ করতে হলে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম, তারপর চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসে বান্দরবান। কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সারা দিন বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামের ট্রেন পাওয়া যায়। এগুলোতে শ্রেণীভেদে ভাড়া পড়তে পারে মাথাপিছু ২৮৫ থেকে ৭৮৮ টাকা।
যাতায়াতের সময় বাঁচিয়ে আরও কম সময়ে যেতে চাইলে রয়েছে উড়োজাহাজে করে যাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে চট্টগ্রামেই নামতে হবে। আর এখানে সময় লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। চট্টগ্রামগামী বিমানগুলোর টিকিট মূল্য পড়তে পারে জনপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১১ হাজার ১৭৫ টাকা পর্যন্ত। কমপক্ষে ১ মাস আগে থেকে টিকিট কাটলে খরচ আরও কমিয়ে আনা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
চট্টগ্রামে পৌঁছে এখানকার বিআরটিসি টার্মিনাল বা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় পাওয়া যাবে বান্দরবানের বাস।
বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরত্বে থানচি উপজেলার অবস্থান। বান্দরবান থেকে বাসে কিংবা রিজার্ভ জিপ বা চাঁন্দের গাড়িতে করে থানচি যাওয়া যায়। বান্দরবানের থানচি বাসস্ট্যান্ডে প্রতি ঘণ্টায় পাওয়া যাবে থানচির লোকাল বাস। জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় এগুলো থানচি পৌঁছে দেয় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায়। চাঁন্দের গাড়িতে ১২ থেকে ১৪ জনের গ্রুপের জন্য খরচ পড়তে পারে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। এই যাত্রাটা বেশ আনন্দের; তাছাড়া এভাবে যেতে সময়ও লাগে অনেক কম; প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
থানচি থেকেই শুরু হয় পায়ে হাটা যাত্রা। আগে অনেকে রুমা হয়ে তাজিংডং যেতো কিন্তু বর্তমানে রুমা থেকে শুধুমাত্র কেওক্রাডং পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। এছাড়া কোনোভাবে যেতে পারলেও জাদিপাই পর্যন্ত যাওয়া যাবে। তাই এখন তাজিংডং চূড়ায় ওঠার একমাত্র উপায় থানচি হয়ে যাওয়া। এ রুটে হেডম্যানপাড়া হয়ে শেরকরপাড়া দিয়ে তাজিংডং পৌঁছাতে হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটের জাফলং ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির গোড়াপত্তনের এক বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে গীতিকাব্য, লোকগীতি ও পালাগান। এই সৃজনশীলতা চর্চার এক মজবুত বুনিয়াদ গড়ে উঠেছিল অতীন্দ্রিয় বাউল সংগীতের মুক্তাঙ্গনে। বাংলা ভাষাভাষি বাউল সংগীতের মঞ্চে সর্বাধিক সমাদৃত নামটি হচ্ছে লালন শাহ। একাধারে ফকির সাধক, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক- এই শিল্পীর গানগুলো যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে মানুষকে। এখনো তার সৃষ্টিগুলোকে ঘিরে রচিত হয় গান, কবিতা, ও উপন্যাস; নির্মিত হয় নাটক ও চলচ্চিত্র। তার জীবনচরিতের অনুসারী ও ভক্তরা এখনো তার মাজার দর্শনে ছুটে যান কুষ্টিয়ায়। লোকজ সংস্কৃতির প্রবাদ পুরুষ ফকির লালন শাহের মাজার নিয়েই আজকের ভ্রমণকড়চা। চলুন, ঘুরে আসা যাক আধ্যাত্মিকতার এক অচীন দেশে।
লালন ফকিরের মাজারের অবস্থান
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে কুমারখালী উপজেলা। এই উপজেলার অন্তর্গত ছেউড়িয়া গ্রামেই অবস্থান জগদ্বিখ্যাত লালন ফকিরের মাজার।
আরও পড়ুন: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাউল সাধক লালনের আখড়ার ইতিহাস
এই ছেউড়িয়াতেই ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেন বাউল গুরু লালন। কিন্তু তারপরেও জায়গাটিকে ছেড়ে যাননি তার শিষ্যরা। বরং বছরের পর বছর ধরে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা, যা উৎপত্তি ঘটিয়েছিল এই মাজারের।
এই জায়গাটিতে সাধক লালন জীবন ও আধ্যাত্মিকতার দীক্ষা দিতেন তার গুনমুগ্ধ স্থানীয় লোকজন ও ভক্তদের। শিষ্যরা ভক্তি ভরে তাকে ‘সাঁই’ বলে ডাকতেন।
প্রতিবছর শীতের সময় এখানে মহোৎসবের আয়োজন করতেন লালন। এই উৎসবে হাজার হাজার ভক্তরা গুরুর সঙ্গে বাউল গান ও দেহতত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় শামিল হোতেন।
গুরুর প্রয়াণের পরেও থেমে যায়নি বৈঠক, বরং নিয়ম মেনে প্রতিবছরই এই সময় আয়োজন হয় উৎসবের। আর এভাবেই গড়ে ওঠে লালন অনুসারীদের আখড়া। তার শিষ্যদের মধ্যে শুধু দেশীয়রাই ছিল না। দেশের বাইরে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত বাউল ও ভক্তকুল সমবেত হতো এই আখড়ায়।
গুরুর পাশাপাশি তার প্রিয় শিষ্যদেরও সমাহিত করা হয়েছে এই মাজারে।
বর্তমান যে মাজারটি দেখা যায়, সেটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। উদ্বোধন করেছিলেন সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খান। তারও ৪ দশক পর ২০০৪ সালে মাজারটির আধুনিকায়ন করা হয়। পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মিত হয় অডিটোরিয়াম ও একাডেমি ভবন।
আরও পড়ুন:ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
কি কি দেখবেন লালনের আখড়ায়
আকর্ষণীয় অবকাঠামোগুলোর মধ্যে অডিটোরিয়াম ও একাডেমি ভবনটি ছাড়াও রয়েছে লালনের জাদুঘর, আবক্ষ ম্যুরাল এবং একতারার ভাস্কর্য। জাদুঘরে পরম যত্নে সংরক্ষিত রয়েছে লালনের ব্যবহৃত জলচকি, একটি দরজা, ভক্তদের ঘটি-বাটি ও বেশ কিছু ছবি। জাদুঘর ঘুরে দেখতে ২ টাকা প্রবেশমূল্য দিতে হবে।
লালন মেলা
লালনের মাজারের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার পরিবেশ, যা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে লালন মেলার সময়ে। প্রতি বছর দুইবার এই মেলাটি হয়- একবার, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিকে কেন্দ্র করে দোলযাত্রা উৎসবের সময়, যেটি মূলত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- লালন সাঁইজির প্রয়াণ দিবস তথা পহেলা কার্তিক বা ১৬ অক্টোবর উপলক্ষে।
এই দ্বিতীয়টি হচ্ছে সবচেয়ে বড় মেলা, যেটি ৩ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে গোটা আখড়াবাড়ী সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। প্রধান ফটক আর মূল মাজার ভরে যায় রঙিন আলোকসজ্জায়। সম্মুখে নির্মাণ করা হয় বিশাল তোরণ। মাজারের বাইরে কালী নদীর ভরাটকৃত অংশে লালন মঞ্চের সামনে টাঙানো হয় বিশাল সামিয়ানা।
আলোচনা মঞ্চের চারপাশে মাজারের প্রধান রাস্তা ছেয়ে যায় গ্রামীণমেলায়। এখানে বিক্রি হয় নানান ধরনের গৃহসামগ্রী, গেঞ্জি, কাঠের তৈরি সাংসারিক জিনিসপত্র এবং লালনের গানের সিডি। এছাড়াও পাঁপড় ভাজা, গরম জিলাপি, শন পাঁপড়ি, আখের রস ও খই-বাতাসাসহ বসে হরেক রকম খাবারের পসরা। উৎসবের প্রতিদিন সারা রাত ধরে চলে লালন গানের আসর।
এমন জাঁকজমক উৎসবে পুরো মাজার প্রাঙ্গণ পরিণত হয় দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের মিলনমেলায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার লালনের আখড়ায় যাওয়ার উপায়
রাজধানী ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে ২৪৮ কিলোমিটার স্থলপথ। পাড়ি দিতে হবে স্থলপথে ২৪৮ কিলোমিটার, যা অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। বাসে করে এই পথ অতিক্রম করতে হলে কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে উঠতে হবে কুষ্টিয়ার বাসে। এগুলো ৬ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে দিবে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে। এই যাত্রায় বাস ভাড়া পড়তে নন এসির জন্য জনপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসির ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশা করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছা যাবে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ছেউরিয়া।
এছাড়া কমলাপুর রেল জংশন থেকে ট্রেনে করেও যাওয়া যাবে। এখান থেকে কুষ্টিয়ার ট্রেনগুলো ছাড়ে সকাল সোয়া ৮ টা, সন্ধ্যা ৭ টা এবং রাত সোয়া ১১ টায়। আসন ভেদে এগুলোতে সিট ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৩৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৮২৮ টাকা।
কুষ্টিয়া শহরের আগেই পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পড়তে হবে। স্টেশনেই পাওয়া যাবে শহরে যাওয়ার বাস বা সিএনজি। তারপর অটোরিকশায় চড়ে সোজা লালন গ্রাম ছেউরিয়া।
আরও পড়ুন: সিলেটের জাফলং ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
কুষ্টিয়ায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
কুষ্টিয়ায় থাকার জন্য মোটামুটি ভালোমানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যাবে শাপলা চত্বর, মজমপুর গেট, চৌড়হাস মোড়, এন এস রোড, এবং বড় বাজার এলাকায়। এগুলোতে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে রাত্রি যাপনের জন্য। এছাড়া অনুমতি নিয়ে থাকা যেতে পারে শিলাইদহ ডাকবাংলোতে।
খাবারের হোটেলের জন্য কোর্ট স্টেশন এলাকার রেস্তোরাঁগুলো বেশ ভালো। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত পর্যটকরা এখানকার বিখ্যাত তিলের খাজা ও কুলফি মালাইয়ের স্বাদ নিতে একদমি ভোলেন না।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
আশেপাশের কিছু দর্শনীয় স্থান
কুষ্টিয়া শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য একটা ডে-ট্যুরই যথেষ্ট। তাই লালনের আখড়ার দর্শনার্থীরা আনন্দ পুষিয়ে নিতে ঘুরে দেখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা এবং গড়াই নদীর তীরে রেনউইকের বাধ।
এছাড়াও পরমাণু শক্তিকেন্দ্র ও ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মাঝে লালন শাহ সেতুর দৃশ্যটাও ভোলার নয়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় দৃষ্টিনন্দন ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’
পরিশিষ্ট
কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ভ্রমণ নিঃসন্দেহে এক ভিন্ন আমেজের অভিজ্ঞতা দিবে। শুধু তাই নয়, মানুষের যাপিত জীবন যে কতটা বিচিত্র হতে পারে তা লালন মেলায় না গেলে বোঝা যাবে না। আর এজন্য লালন আখড়ায় যেতে হবে কার্তিক মাসের শুরুতে অথবা ফাল্গুনের শেষার্ধে।
এক্ষেত্রে বাউল সাধক লালন শাহের আখড়া ঘুরে দেখার সময় অবশ্যই শ্রদ্ধার সঙ্গে সেখানকার পরিবেশের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা উচিৎ। অনেক বিদেশি পর্যটকদেরও তীর্থস্থান হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানটি অনায়াসেই প্রভাবিত করতে পারে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভ্রমণের সময় একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করা দেশীয় দর্শনার্থীদের জাতীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা: যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ
২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ভিসা ইন্টারভিউয়ের তারিখ পাওয়া থেকে শুরু করে সঠিক কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে ইন্টারভিউ পর্যন্ত যাওয়া রীতিমত খাঁড়া পাহাড় বেড়ে চূড়ায় উঠার মতো। ভিসা পাওয়ার এই ধকল সামলাতে যেয়ে মাঝপথে অনেকেই দেশের বাইরে ভ্রমণের ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে, এই সব ঝামেলা এক নিমেষেই উধাও হয়ে যায়, যখন সেই ভিসা করার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না।
আজকের নিবন্ধে জানা যাবে সেই সব দেশগুলোর ব্যাপারে যেগুলোতে প্রবেশের জন্য আগে থেকে কোনও রূপ ভিসা বিড়ম্বনা নিতে হবে না বাংলাদেশি নাগরিকদের। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং করেছে হেনলি পাসপোর্ট সূচক।
চলুন জেনে নিই, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিকরা কোন কোন দেশগুলো ভিসা ছাড়া, এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারবেন।
২০২৪ সালে বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
বিভিন্ন দেশের অভিবাসন ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কার্যনীতি হচ্ছে ভিসা-মুক্ত প্রবেশ। যেখানে বিদেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকের আগে থেকে কোনও রকম ভিসা-প্রাপ্তির প্রয়োজন পড়ে না। এই নিয়মে ভ্রমণরতদের ভিসা ফি দিয়ে কোনও রূপ আনুষ্ঠানিক ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ১০ দর্শনীয় স্থান: শীতের ছুটিতে সাধ্যের মধ্যে ভ্রমণ
ঘুরে বেড়ানো বা ব্যবসা; যে কোনও উদ্দেশ্যেই এই সুবিধা নেওয়া যায়। তবে এইভাবে গন্তব্যের দেশটিতে অবস্থান করার একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে, যা বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ২২টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন। এই দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ দেশের ভেতরে থেকে ভিসা প্রাপ্তির জন্য অগ্রীম আবেদন করতে হবে না। এমনকি বিমানবন্দর পেরিয়ে সেই দেশগুলোতে প্রবেশের সময়েও প্রয়োজন হবে না কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুমতির।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
চলুন, ভিসা ছাড়া গন্তব্যের দেশগুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
১. বাহামাস
২. বার্বাডোস
৩. ভুটান
৪. ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
৫. কুক দ্বীপপুঞ্জ
৬. ডমিনিকা
৭. ফিজি
৮. গ্রেনাডা
৯. হাইতি
১০. জ্যামাইকা
১১. কিরিবাতি
১২. লেসোথো
১৩. মাদাগাস্কার
১৪. মাইক্রোনেশিয়া
১৫. মন্টসেরাট
১৬. নিউয়ে
১৭. রুয়ান্ডা
১৮. সেন্ট কিটস ও নেভিস
১৯. সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস
২০. গাম্বিয়া
২১. ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
২২. ভানুয়াতু
আরও পড়ুন: ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
এখানে মাদাগাস্কার, রুয়ান্ডা, এবং ভানুয়াতু গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু রেখেছিল। আর ওশেনিয়া মহাদেশের দ্বীপদেশ কিরিবাতি এ বছরে এই তালিকায় নতুন সংযোজন।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময়- ৬ মাসের মেয়াদে ফ্রি ভিসায় থাকা যাবে বার্বাডোস, ডোমিনিকা, জ্যামাইকা, এবং মন্টসেরাট-এ। ফিজিতে ভ্রমণ করার জন্য বরাদ্দ রয়েছে সর্বোচ্চ ৪ মাস। ৯০ দিনের মেয়াদে অবস্থান করা যাবে কিরিবাতি, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং লেসোথো’তে, যেখানে বাহামা, গ্রেনাডা, এবং হাইতি’র ক্ষেত্রে বলা আছে ৩ মাসের কথা।
কুক আইল্যান্ড্স-এ ফ্রি ভিসার মেয়াদ ৩১ দিন, গাম্বিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, রুয়ান্ডা, ভানুয়াতু, ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড্সে ৩০ দিন, এবং সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স-এ ১ মাস। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে থাকার সুযোগ আছে ৩০ থেকে ৯০ দিন। আর মাদাগাস্কার-এ অবস্থানের সময়সীমা সবচেয়ে কম; মাত্র ১৫ দিন।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
২০২৪ সালে বাংলাদেশিরা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারবেন যেসব দেশে
এই অভিবাসন নীতিতে ভ্রমণকারীকে গন্তব্যের দেশে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ভিসা প্রদান করা হয়। এই ভিসা প্রদানের জায়গাটি হতে পারে সমুদ্র বন্দর, স্থল চেকপয়েন্ট অথবা বিমানবন্দর। এই প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির জন্য তাদেরকে যাত্রা শুরুর আগে নিজেদের দেশে থাকা অবস্থায় কোনও আবেদন করতে হয় না।
কোনও কোনও দেশে প্রবেশের সময় এই অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য ফি দিতে হয়। হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল নিয়ে ১৮টি দেশে প্রবেশ করতে পারবে। আর এই জন্য ভিসাপ্রাপ্তির সময় তাদেরকে কোনও ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে না। তাছাড়া এই ভাবে ভিসা গ্রহণ প্রক্রিয়াতে কোনও ঝামেলা পোহাতে হয় না।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
চলুন, এবার দেখে নেয়া যাক বিনামূল্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সরবরাহকারী দেশগুলো।
১. বলিভিয়া
২. বুরুন্ডি
৩. কম্বোডিয়া
৪. কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ
৫. কমোরো দ্বীপপুঞ্জ
৬. জিবুতি
৭. গিনি-বিসাউ
৮. মালদ্বীপ
৯. মৌরিতানিয়া
১০. মোজাম্বিক
১১. নেপাল
১২. সামোয়া
১৩. সেশেল্স
১৪. সিয়েরা লিওন
১৫. সোমালিয়া
১৬. তিমুর-লেস্তে
১৭. টোগো
১৮. টুভালু
আরও পড়ুন:
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তথা ৯০ দিন ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে- গিনি-বিসাউ, নেপাল, এবং বলিভিয়ায়। সামোয়া ও সেশেল্স-এ থাকা যাবে ৬০ দিন। কমোরো আইল্যান্ড্সে অবস্থানের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার মেয়াদ ৪৫ দিন। জিবুতি ও মৌরিতানিয়ায় থাকা যাবে ৩১ দিন । মালদ্বীপ, কেপ ভার্দে, সোমালিয়া, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিওন, তিমুর-লেস্তে, এবং কম্বোডিয়া বেড়ানোর জন্য পাওয়া যাবে ৩০ দিন, যেখানে বুরুন্ডি এবং টুভালু’র ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ১ মাসের কথা।
আফ্রিকার দেশ ‘টোগো’তে অবস্থানের জন্য পাওয়া যাবে মাত্র ১৫ দিন।
আরও পড়ুন: দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ: গাজীপুরে রোমাঞ্চকর ক্যাম্পিং
২০২৪ সালে যেসব দেশে যেতে বাংলাদেশিদের ইটিএ প্রয়োজন হবে
ইটিএ-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন, যেটি মূলত ইলেকট্রনিকভাবে তথা অনলাইনে একজন ভ্রমণকারীর পাসপোর্টের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকে। এক কথায় এটিও একটি ভিসা ফ্রি প্রবেশাধিকার। ডিজিটাল অনুমতিটি দেশের ভেতরে থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে নিবন্ধন করার মাধ্যমে নিয়ে নেয়া যায়।
এমনকি এর জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে নিজ দেশের অভিবাসন সেন্টারে উপস্থিত হওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যেই দেশে ইটিএ কার্যকর আছে সেই দেশের অভিবাসন বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেয়ে সহজেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
২০২৪-এ দুটি দেশে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইটিএ প্রয়োজন হবে:
১. শ্রীলঙ্কা
২. কেনিয়া
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
পূর্বে শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কা থাকলেও এ বছরই ইটিএ সেবা নিয়ে নতুন সংযোজন হলো কেনিয়া। এখন থেকে এই ডিজিটাল ছাড়পত্রের মাধ্যমে সমস্ত বিদেশি নাগরিক ৯০ দিনের জন্য কেনিয়াতে প্রবেশ করতে পারবে।
আর শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এই অনুমতির সময়সীমা প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের তারিখ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। এই সিঙ্গেল এন্ট্রির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার ডাবল এন্ট্রির জন্যও ইটিএ রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা ইটিএ ইস্যু করার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে দুইবার শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করতে পারবেন।
অনুমোদন একবার হয়ে যাওয়ার পর ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের সময় যে কোনো চেকপয়েন্ট অনায়াসেই অতিক্রম করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ভারতের মেডিকেল ভিসা: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা প্রসেসিং ফি
শেষাংশ
পর্যটন কিংবা ব্যবসা উভয় উদ্দেশ্যকে ঘিরে লাখ লাখ মানুষের থাকে হাজারও পরিকল্পনা। কিন্তু এর সবকিছুই গুড়েবালি করে দেয় সীমানা পেরনোর নিয়মনীতি। সেখানে এই ভিসামুক্ত ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিদের জন্য এক বিরাট নিষ্কৃতি। এ দিক থেকে ২০২৪ সাল বাংলাদেশিদের জন্য সৌভাগ্যের বছরও বটে।
হেনলি পাসপোর্ট সূচক মতে ভিসা ছাড়া, অন-অ্যারাইভাল এবং ইটিএ সব মিলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা মোট ৪২ টি দেশ ভ্রমণ করতে পারবে। তাই সময় এসেছে পাসপোর্ট দ্রুত রিনিউ করে নেওয়ার। কেননা এই সুযোগ লুফে নিতে হলে পাসপোর্টটি অবশ্যই নূন্যতম ছয় মাস মেয়াদী হতে হবে।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট