জীবনধারা
ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অনন্য সংস্কৃতি এবং রাফটিং ও হাইকিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই এমন ভ্রমণের সুযোগ মিলবে যথেষ্ট সাশ্রয়ী খরচে। স্বতন্ত্র স্থাপত্য শিল্পকর্মের সাক্ষী হতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিশ্বপরিব্রাজকরা ভীড় করেন এই দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে বাজেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দের দেশ ভুটান। সার্কভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই বৌদ্ধ রাজ্য ভ্রমণ বেশ সুবিধাজনক। চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে তাদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর দর্শন এক অভূতপূর্ব অনুভূতির সঞ্চার করে। চলুন, দেশটির সেরা পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি জেনে নেওয়া যাক।
ভুটানের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
থিম্পু
রাজধানী শহর থিম্পুতে হাঁটা দূরত্বেই দেখা যাবে থিম্পু নদী, মেমোরিয়াল চর্টেন, সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু জং, পার্লামেন্ট হাউস, লাইব্রেরি ও থিম্পু ডিজং। শহর থেকে একটু দূরেই রয়েছে বুদ্ধ দর্দেন্মা স্ট্যাচু, থিম্পু ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চর্টেন ও চিড়িয়াখানা, যেখানে সংরক্ষিত আছে ভুটানের জাতীয় পশু তাকিন।
পুনাখা
এখানে কম সময়ে অনেকগুলো পর্যটন এলাকা ঘোরার উপায় হচ্ছে সর্বপ্রথম দোচুলা পাস যাওয়া। অবশ্য পুরো দোচুলা পাস ঘুরতে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। তবে ফেরার পথে একে একে পড়বে পুনাখা জং, আর্ট স্কুল, ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ফোক হেরিটেজ যাদুঘর।
ভুটানের যে স্থানটি রাফটিংয়ের জন্য জগদ্বিখ্যাত, সেটি হচ্ছে এই পুনাখা। রাফটিংয়ের জন্য এই শহরে একটা দিন থাকা উচিত।
আরো পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
লাখাং মন্দির, তালো মনস্ট্রি ও পেলিরি মন্দির ঘুরে চলে যাওয়া যেতে পারে ফু ছু নদীতে। এখানে রাফটিংয়ের সময় চোখে পড়বে সাস্পেন্শন ব্রিজ। এছাড়া পুনাখার নান্দনিক ঐশ্বর্যের পরশ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে টর্সা ন্যাচারাল রিজার্ভার ও ন্যাশনাল পার্ক।
পারো
ভুটানের সর্বোচ্চ রাস্তা চেলে লা পাস অবস্থিত এই শহরে। মেঘমুক্ত দিনে এই রাস্তা থেকে চোখে পড়ে দূরের জলমহরি পর্বত। পারোর জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারস নেস্ট, রিনপুং জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, পারো মনস্ট্রি, পারো চু ও কিচু মনস্ট্রি। শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান তাং সাং। হিমালয়ের এই দর্শনীয় জায়গাটি দেখার জন্য পারোতে ন্যূনতম একটি দিন অবশ্যই থাকতে হবে।
ভুটান ভ্রমণের সেরা সময়
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাস ভুটান ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়। বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের সময়টা পারোতে ভুটানিদের নানান ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরিষ্কার আকাশসহ এ সময়ের অনুকূল আবহাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি রাফটিং ও হাকিংয়ের জন্যও উপযোগী। এছাড়া মার্চ থেকে মে মাসে পুনাখাতে পর্যটকদের বেশি ভীড় থাকে।
আরো পড়ুন: ভিয়েতনাম ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
৪৬৬ দিন আগে
দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর সঙ্গে মিশে আছে শত বছরের ঐতিহ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেশ-বিদেশি পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। একদিকে যেমন ভ্রমণের ক্ষুধা মিটে, অন্যদিকে পুরাতন সভ্যতার অবশিষ্টাংশের সান্নিধ্য দেয় অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর অনুভূতি। এমনি রেশ থেকে অভিজ্ঞতার সঞ্চার করতে পারে দিনাজপুরের রামসাগর ভ্রমণ। বিংশ শতাব্দীর শেষ সময়ে গড়ে তোলা এই দর্শনীয় স্থানটি স্থানীয়সহ দেশজুড়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। চলুন, স্থানটির বিশেষ আকর্ষণ, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচসহ যাবতীয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত জেনে নেওয়া যাক।
রামসাগর দীঘির ভৌগলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগ রংপুরের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে রামসাগরের অবস্থান। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে দেখা মিলবে এই দীঘিটির।
রামসাগর বাংলাদেশের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট দীঘি, তটভূমিসহ যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার এবং আয়তন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার। দীঘিটি গড়ে প্রায় ১০ মিটার গভীর। এর পাড় ১৩ দশমিক ৫ মিটার উঁচু।
আরো পড়ুন: তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
অনেক আগে দীঘির পশ্চিম পাড়ের মাঝখানে একটি ঘাট ছিল, যেটি বানানো হয়েছিল বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথরের স্ল্যাব দিয়ে। ঘাটটি ছিল ৪৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ ও প্রস্থে ১৮ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত। প্রতিটি পাড় ছিল ১০ দশমিক ৭৫ মিটার উঁচু। এই পাড়ের কিছু অবশিষ্টাংশ এখনও দৃশ্যমান রয়েছে।
রামসাগর দীঘির নামকরণের ইতিহাস
পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খনন করা হয় রামসাগর দীঘি। সে সময়ে দিনাজপুরের এই অঞ্চলটির রাজা ছিলেন রামনাথ আলীবর্দী খান। তার নামানুসারেই দীঘিটি রামসাগর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। দীঘিটি খননে কাজ করেছিল ১৫ লাখ শ্রমিক এবং খরচ হয়েছিল তৎকালীন সময়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
এই দীঘির নামকরণ নিয়ে নানা ধরনের লোককথা প্রচলিত রয়েছে। ১৭৫০ সালে এক প্রচণ্ড খরায় রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ পানির অভাব দেখা দেয়। এ সময় রাজ্যের রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নযোগে পুকুর খননের নির্দেশ পান। পানি সমস্যার এমন সমাধানের উপায় পেয়ে তিনি মাত্র ১৫ দিনে তিনি একটি পুকুর খনন করে ফেলেন। কিন্তু অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে খনন করা জায়গা থেকে কোনো পানি উঠছিল না। এতে করে রাজ্যে চরম হতাশা নেমে এলো। কিছু দিন বাদে রাজা আবার স্বপ্নাদেশে নতুন বার্তা পেলেন। আর সেটি ছিল যে, দীঘি পানিতে ভরে যাবে যদি তার একমাত্র ছেলেকে বলি দেওয়া হয়। অতঃপর রাজার নির্দেশে দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির তৈরি করা হয়। তারপর একদিন ভোরবেলা রাজার ছেলে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাক পরে হাতির পিঠে চড়ে সেই দীঘির উদ্দেশে যাত্রা করেন। দীঘির পাড়ে পৌঁছানোর পর যুবরাজ হাতি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান সেই মন্দিরে। আর সঙ্গে সঙ্গে দীঘির নিচ থেকে অঝোর ধারায় পানি বেরুতে থাকে। সবার বিস্ফারিত দৃষ্টির সামনে নিমেষেই যুবরাজ রামনাথসহ কানায় কানায় পানিতে ভরে যায় বিশাল দীঘি। সেই সঙ্গে রচিত হয় রাজপুত্র রামনাথের জীবন্ত জলজ সমাধি।
আরো পড়ুন: খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া বা হাতি মাথা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
আরেকটি লোককথায় শোনা যায় যে, রাজা আসলে স্বপ্নে স্পষ্টভাবে নিজের ছেলেকে বলি দেওয়ার বার্তা পাননি। বার্তাটি ছিল- দিঘিতে পানি পেতে হলে কারও প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক স্বেচ্ছায় দিঘিতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তীতে রাজা এই আত্মত্যাগী যুবকের নামে দীঘিটির নাম রাখেন রামসাগর।
১৯৬০ সালে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আসে রামসাগর দীঘি। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালে এই দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় সবুজ ছায়াঘেরা উদ্যান, যা স্থানটিকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এই রামসাগর উদ্যান জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়।
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের রামসাগর যাওয়ার উপায়
রামসাগর ঘুরে দেখার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যেতে হবে। বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, কলেজগেট ও উত্তরা থেকে সরাসরি দিনাজপুরগামী বাস পাওয়া যায়। আধঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা পর পর দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হয় গাড়িগুলো। এসি বা নন-এসি কোচভেদে বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
যারা ট্রেন যাত্রা করতে ইচ্ছুক, তাদের ঢাকার কমলাপুর থেকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট, রাত ৮টা ও সাড়ে ১১টার দিনাজপুরগামী ট্রেনগুলোতে উঠতে হবে। শ্রেণিভেদে ট্রেনগুলোতে টিকেট মূল্য হতে পারে ৫৭৫ থেকে ১ হাজার ৯৭৮ টাকা পর্যন্ত।
আকাশপথে যেতে হলে সৈয়দপুরগামী বিমানে উঠতে হবে। বিমানযোগে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ প্রায় ১ ঘণ্টা। পরিবহন কোম্পানি ও মানভেদে বিমান ভাড়া পড়তে পারে ৩ হাজার ৭৯৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। দিনাজপুরে প্লেন থেকে নেমে গাড়িতে করে দিনাজপুর পর্যন্ত যেতে হবে।
দিনাজপুর সদর থেকে পাওয়া যাবে রামসাগর যাওয়ার অটোরিকশা বা সিএনজি। এই যাত্রায় সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এছাড়া শহরের কাচারি ঘুন্টি মোড়ে ইজিবাইক পাওয়া যায়, যেগুলো জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় নিয়ে যায় রামসাগর মোড় পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
রামসাগর দীঘি ঘুরতে যেয়ে যা যা দেখতে পাবেন
.
রামসাগর দীঘি
পূর্ণিমা রাতে ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম রামসাগর দীঘি। দীঘির চারপাশে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত পায়ে চলা পথের দুই পাশে লাগানো হয়েছে মুছকন্দ, দেবদারু ও ঝাউ গাছ। পাড়ের কাছাকাছি অংশে আরও রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, হরীতকী, সেগুন, আমলকী, জারুল, কাঁঠালিচাঁপা, কাঞ্চন, নাগেশ্বর এবং বটসহ ১৫২ রকমের গাছ।
রামসাগর জাতীয় উদ্যান
দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা রামসাগর জাতীয় উদ্যানটিতে রয়েছে ৭টি পিকনিক স্পট। স্পটগুলোতে আছে- ক্যাফেটেরিয়া, বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি দিয়ে গড়া শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় দেখা যাবে হরিণ, অজগর সাপ, বানর, মুখপোড়া হনুমান ও ময়ূর।
উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি পাঠাগার, যেটি বানানো হয় ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। রামসাগরের উত্তর পার্শ্বের প্রাচীন মন্দিরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্বীকৃত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই উঁচু গোলাকার মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে তিনটি কক্ষ। পরিচর্যার অভাবে বর্তমানে ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি ঢাকা পড়েছে ঘন গাছগাছালিতে। দীঘির পশ্চিম দিকে রয়েছে সুদৃশ্য একটি দ্বিতল ডাকবাংলো।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
৪৬৮ দিন আগে
সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
বঙ্গোপসাগরের ফেনিল প্রান্তরে ‘ব’ আকৃতির দ্বীপের প্রাণকেন্দ্রে এক টুকরো বাংলাদেশের নাম সুন্দরবন। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি সারা বিশ্বের কাছে এর প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। যতই গভীরে যাওয়া যায়, বনটি তার রহস্য ঘেরা নান্দনিকতা ততই যেন মেলে ধরে। তেমনি এক অত্যাশ্চর্য এলাকা কটকা, যার আদিম প্রকৃতি ও রোমাঞ্চের অভূতপূর্ব সন্নিবেশ বিমোহিত করে পর্যটকদের। চলুন, সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত এলাকাটিতে ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
সুন্দরবনের কটকা সৈকতের ভৌগলিক অবস্থান
বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের একটি উপকূলবর্তী এলাকা কটকা। সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতটি সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণগুলোর একটি। মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর ঘেষা কটকা অভয়ারণ্য সুন্দরবন ইকো-ট্যুরিজমের প্রাণকেন্দ্র।
কটকার ইতিহাস
বিগত দশকে সুন্দরবনের ভূতাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে একটি গবেষণা করে জার্মানির ব্রেম্যান বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় এই কটকা অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায় বহু যুগ আগের লবণ তৈরির কয়েকটি চুল্লি ও পাত্র। এগুলোর মধ্যে একটির বয়স এক হাজার বছর, তিনটির ২৫০ থেকে ৩০০ বছর, এবং দুটির ৬০০ বছর।
আরও পড়ুন: ট্রেকিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে নিরাপদে থাকার উপায়
কটকায় আরও পাওয়া যায় টাইগার হিল নামের একটা ঢিবি। যেখানে ছিল পানি পরিশোধনের ছাঁকনি এবং বর্জিত পানি নিষ্কাশনের নালা। গবেষকদের মতে, এটি মূলত লবণ তৈরির উন্নত প্রযুক্তির নিদর্শন। ২৫০ থেকে এক হাজার বছর আগে এখান থেকে উৎপাদিত লবণ রপ্তানি করা হতো ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায়।
কটকার সমুদ্র সৈকত কটকাবাসীদের কাছে জামতলা সমুদ্র সৈকত নামেই অধিক পরিচিত।
ঢাকা থেকে সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায়
সুন্দরবনের গহীনে অবস্থিত হওয়ায় কটকা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। ঢাকা থেকে প্রথমে চলে যেতে হবে খুলনা বা বাগেরহাট জেলায়। খুলনা থেকে রুপসা অথবা বাগেরহাটের মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে সুন্দরবনগামী নৌযানগুলো কটকা নিয়ে যায়।
ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা বা সরাসরি বাগেরহাটগামী বাস পাওয়া যায়। এগুলো সাড়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বাসের কোম্পানি ও মানভেদে ভাড়া নিতে পারে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এসি কোচের টিকেটের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সেমি চেয়ার কোচ ননএসি বাসগুলো ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে সরাসরি মোংলায় পৌঁছে দেয়। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে বাসে করে খুলনা বা মোংলায় যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
যারা ট্রেনে যেতে চান, তাদেরকে কমলাপুর থেকে খুলনাগামী ট্রেনে উঠতে হবে। সিটের ধরণভেদে ভাড়া পড়তে পারে ৫০৫ থেকে ২ হাজার ১৬৮ টাকা।
দ্রুত যাতায়াতের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে আকাশপথ। এর জন্য প্রথমে বিমানে ঢাকা থেকে যশোর যেতে হবে। এখানে মানভেদে বিমান ভাড়া বাবদ খরচ হতে পারে ৪ হাজার ২১৮ থেকে ৪ হাজার ৯০৮ টাকা। অতঃপর এয়ারলাইন্সের বাসে যশোর থেকে খুলনা যাওয়া যাবে। তবে বিকল্প হিসেবে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি মোংলা পর্যন্ত যাওয়া যায়। আর ইন্টারসিটি বাসে গেলে যশোর থেকে প্রথমে খুলনা, তারপর বাস বদল করে আরেক বাসে খুলনা থেকে মোংলা যেতে হবে।
মোংলা বন্দর থেকে নেওয়া নৌযান কটকা খালের পশ্চিম পাড়ের জেটিতে নামিয়ে দেবে। জেটি থেকে উপরে উঠলেই দেখা যাবে বন কার্যালয়। সেখান থেকে খানিকটা পশ্চিম দিকে হেঁটে গেলেই পড়বে ইট বাঁধানো রাস্তা, যেটি সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে সমুদ্রে।
আরও পড়ুন: মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
সুন্দরবনের কটকা ভ্রমণে কি কি দেখবেন
পর্যটকদের জন্য কটকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কটকা অভয়ারণ্য। কেননা এখান থেকে নিরাপদেই দর্শন পাওয়া যায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এমনকি সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় পাখি হিসেবে পরিচিত মদনটাক দেখার জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে এই কটকা। এ ছাড়াও চোখে পড়বে চিত্রা হরিণের দল, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, বন মোরগ, এবং বন্য শুকর। শীতকালে অতিথি পাখির পাশাপাশি ভীড় করে নানান প্রজাতির পাখি। সেই সঙ্গে দেখা যাবে লোনা পানিতে কুমিরের রোমাঞ্চকর দৃশ্য।
এখানে বন বিভাগের অধীনে পরিচালিত একটি রেস্ট হাউস আছে। খুব কাছেই একটি কাঠের জেটি থাকায় লঞ্চ থেকে নেমে কিছু দূর হাঁটলেই রেষ্ট হাউসে প্রবেশ করা যায়। রেস্ট হাউসের আশেপাশে এঁকেবেকে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ছোট বড় খাল। এগুলোতে নৌকা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভেসে বেড়ানো যায়। এ সময় মাঝে মধ্যে শোনা যায় বাঘের গর্জন।
বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছনে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি একটি ট্রেইল রয়েছে। এর উত্তর পাশের খালে ভাটার সময় দেখা যায় সুন্দরী গাছের ঘন শ্বাসমূল। ট্রেইলটির উত্তরে কেওড়া বনের ভেতরে ঢোকার সময় সন্তর্পণে হাঁটতে হবে। কেননা খুব কাছেই দেখা পাওয়া যাবে অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণের।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ট্রেইলের পূর্ব দিকটায় রয়েছে ঘন বন আর মিঠা পানির পুকুর। এই পুকুরই এখানকার স্থানীয়দের পানির একমাত্র উৎস। ঘন বনের দক্ষিণে হেঁটে গেলে পরপর তিনটি টাইগার টিলা পড়বে। এই টিলাগুলো দেখে নিমেষেই শরীরে শিহরণ বয়ে যেতে পারে, কেননা এগুলোতে প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ থাকে।
কটকার আরও একটি জনপ্রিয় স্থান হচ্ছে এর ৪০ ফুট উঁচু চারতলা বিশিষ্ট ওয়াচ টাওয়ারটি। স্থানীয়দের কাছে এটি জামতলা ওয়াচ টাওয়ার নামে পরিচিত। এখান থেকে জীববৈচিত্র্যসহ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
এই টাওয়ারের পরে উত্তরে পথটি সোজা গিয়ে মিশেছে জামতলা সমুদ্র সৈকতে। সৈকতটি বেশ পরিচ্ছন্ন এবং নিরিবিলি। বেলাভূমি জুড়ে যতদূর চোখ যায় শুধুই কাঁকড়াদের আঁকিবুকি। পূর্ব দিকে সৈকতের শেষ প্রান্তরেখা যুক্ত হয়েছে কচিখালি এলাকায়।
আরও পড়ুন: ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
৪৬৯ দিন আগে
বন্যার্তদের সহায়তায় গ্যালারি কসমসে 'আর্ট ফর এইড: রিবিল্ডিং লাইভস' প্রদর্শনী শুরু
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় গ্যালারি কসমসে 'আর্ট ফর এইড: রিবিল্ডিং লাইভস' শীর্ষক একটি বিশেষ গ্রুপ আর্ট প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
বন্যার্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গ্যালারি কসমসে মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এই প্রদর্শনী থেকে প্রাপ্ত অর্থ বন্যার্তদের সহায়তায় দেওয়া হবে।
ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলার ৫৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এরপর থেকে বন্যার্তদের আর্থিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান।
৪৭১ দিন আগে
অফিসে কাজের ফাঁকে হালকা ক্ষুধা মেটাতে পুষ্টিকর শুকনো খাবার
খুব সকালে নাস্তার পর দীর্ঘক্ষণ না খাওয়া অবস্থায় থাকলে দুপুরের খাবারের আগেই মস্তিষ্ক পাকস্থলি থেকে ক্ষুধার সংকেত পেতে থাকে। একই ব্যাপার মধ্যাহ্ন ভোজ আর রাতের খাবারের মাঝের সময়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই উপোসের সময়টা যখন মানসিক বা শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য গ্রহণের তাড়না একটু বেড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কারণে প্রত্যেকেই হালকা ক্ষুধার পাশাপাশি কর্মস্পন্দন ফিরে পাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। তাই এই হালকা ভোজে এমন কিছু থাকা প্রয়োজন যা শুধু ক্ষুধাই মেটাবে না, সেই সঙ্গে নতুন উদ্যমে কাজে যোগ দেওয়ার শক্তিও যোগাবে। তাই চলুন, অফিসে কাজের ফাঁকে ক্ষুধা নিবারণের জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
অফিসে ব্যস্ততার ফাঁকে হালকা ক্ষুধা নিবারণের জন্য ১০টি স্বাস্থ্যকর খাবার
শুকনো ফল
প্রোটিন, ভিটামিন ই, রাইবোফ্ল্যাভিন, ট্রেস খনিজ ও স্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরপুর বাদাম সবচেয়ে জনপ্রিয় শুকনো ফলগুলোর একটি। নিয়মিত বাদাম খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সারাদিন ধরে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই উপযোগিতার নেপথ্যে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন এবং চর্বিগুলো। ক্যালরি কম হওয়ায় বেশি খাওয়াতেও স্থূলতার আশঙ্কা নেই।
সর্বাধিক প্রচলিত চীনাবাদাম অপেক্ষা কাজু, পেস্তা, আখরোট ও কাঠবাদামের গুণাগুণ আরও বেশি। এগুলোর রয়েছে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষমতা, যা হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। কেক, বিস্কুট, ফল বা অন্যান্য মিষ্টিজাত খাবারে স্বাদের আলাদা মাত্রা যোগ করতে ব্যবহৃত হয় বাদাম।
আরো পড়ুন: বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমাবেন যেভাবে
ভারী খাবারের বিকল্প হিসেবে সুপরিচিত শুকনো ফলটি হচ্ছে খেজুর। এতে আছে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি-৬, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং কপার। শরীরকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সতেজ রাখতে আকারের বিবেচনায় খেজুরের কোনো জুড়ি নেই। এই ছোট্ট ফলটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
বীজ
স্বাদের বিচারে খুব একটা এগিয়ে না থাকলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে এটি একটি সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। চিয়া, শন, তিল, সূর্যমুখী ও কুমড়ার বীজ শরীর গঠনের জন্য সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে রাখা হয়। এগুলো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, উদ্ভিদজাত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং সহজে হজমযোগ্য ফাইবার সমৃদ্ধ। এই পুষ্টিগুলো যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে কর্মোদ্দীপনা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট। অল্প পরিমাণে বেশি ক্যালরি থাকাতে স্বল্প আহারেই কয়েক ঘণ্টা ভরপেট অনুভূতি পাওয়া যায়।
অন্যান্য সুস্বাদু খাবার বা সালাদের সঙ্গে মেশানো হলে আরও মুখরোচক হয়ে ওঠে। তবে সেক্ষেত্রে ক্যালরির পরিমাণে সতর্ক থাকা দরকার।
আরো পড়ুন: স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার উপকারী
আপেল
কোলেস্টেরল কমানো নিয়ে যারা চিন্তায় থাকেন, তাদের ডেস্কে সর্বদা আপেল রাখা উচিত। এর বহিরাবরণে থাকে ফেনোলিক নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ, যা দেহের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা ও রক্ত প্রবাহকে সমুন্নত করতে সহায়তা করে। স্বাদ আরও বাড়াতে আপেলের সঙ্গে মাখন বা দই মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
গাজর
কাজ ও খাওয়া একসঙ্গে করতে চাইলে গাজর হতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত পছন্দ। এই সবজি বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার, ভিটামিন কে-১, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, চোখ, হৃদপিণ্ড, ত্বক ও হাড়ের স্বাস্থ্য বাড়ানোতে গাজরের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিদিন কাজের পাশাপাশি গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়লে কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ে আর ভয় থাকবে না।
ছোলা-মুড়ি
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে খুব কমই এমন রয়েছে, যেখানে একটির নাম বললে সঙ্গে সঙ্গেই অপরটির নাম চলে আসে। কেবল সহজলভ্যই নয়, স্বতন্ত্রভাবে দুটি খাবারেই রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টি।
ছোলাতে আছে ফলেট, খাদ্য আঁশ, আমিষ, ট্রিপ্ট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রন। এতে থাকা ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুরেটেড, যা রক্তের চর্বি কমাতে অংশ নেয়। এর পটাসিয়াম, ভিটামিন 'সি' এবং ভিটামিন বি-৬ পুষ্টি উপাদান হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এছাড়াও ছোলার রয়েছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য সারানোর ক্ষমতা। এছাড়া ছোলা বয়ঃসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ছোলায় থাকা ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমিয়ে দেয়। এতে থাকা পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে।
আরো পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
অন্যদিকে, মুড়ির পুষ্টিগুলো হলো নিয়াসিন, ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম, ফাইবার, আয়রন, থিয়ামিন ও রাইবোফ্ল্যাভিন। এতে সোডিয়াম ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকায় রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে না। তবে এই উপকার শতভাগ পেতে হলে মুড়িতে তেল ও লবণ মেশানো যাবে না। তবে ছোলা-মুড়ির সঙ্গে বাদাম ও শসা যোগ করা যেতে পারে। অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের মতো এটিও শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে।
ওটমিল বিস্কুট
ময়দা, চিনি, ডিম, তেল, চর্বি ও মাখনের সমন্বয়ে তৈরি এই বিস্কুটের প্রধান উপাদান ওটস। তবে কিশমিশ, চকলেট বা বাদামের সন্নিবেশে স্বাদ ও পরিবেশনে দারুণ মাত্রা যোগ হয়। কোনো কোনো ব্র্যান্ড কলা, বাদাম, মাখন ও ওমেগা -৩ সমৃদ্ধ শন ও চিয়া বীজের মতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও তৈরি করে থাকে।
ওটমিল কুকির ওট্স যেহেতু একটি সম্পূর্ণ শস্য, তাই এর মাধ্যমে ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। ফাইবারে গুণাগুণের মধ্যে রয়েছে হজমের উন্নতি ও ওজন কমানো।
কার্বোহাইড্রেট দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে, ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে কোনো কাজে সক্রিয় থাকা যায়।
আরো পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
অধিকাংশ বিস্কুটের মত এটিও প্রোটিন সরবরাহের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর পেশি গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানে ভরপুর।
পপ কর্ন
শুধুমাত্র অফিসেই নয়, কাজের যে কোনো বিনোদনের মূহূর্তে সেরা নাস্তা পপ কর্ন বা খৈ ভাজা। প্রধান কাঁচামাল ভূট্টা হওয়ায় ভূট্টার সব পুষ্টিই পাওয়া যায় এতে। অর্থাৎ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্কে পরিপূর্ণ।
পপ কর্ন রক্ত সঞ্চালন ও হজম উন্নত করতে এবং হৃদরোগ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকলেট
এই মিষ্টান্ন খাবারটি মূলত শুকনো ফলের ভান্ডার। তবে বেশি পরিমাণে থাকে বিভিন্ন ধরনের বাদাম। অধিকাংশ ডার্ক চকলেটের প্রতি দেড় আউন্সে থাকে ১৯০ ক্যালরি, ১২ গ্রাম ফ্যাট, ২৪ গ্রাম কার্ব, ৩ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, ২ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম, এবং ২০৩ গ্রাম পটাসিয়াম। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রদাহ, ডায়াবেটিস এবং জীবাণু প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
আরো পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
তবে কেনার সময় ডার্ক চকলেটের মোড়কে লিপিবদ্ধ উপাদানগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত। অনেক সময় এগুলোতে কৃত্রিম রাসায়নিক অ্যাল্কালি প্রসেসিং থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে সরিয়ে দেয়।
সিদ্ধ ডিম
স্বল্প পরিমাণে হলেও মানবদেহের প্রয়োজনীয় সবগুলো পুষ্টি একসঙ্গে পেতে হলে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে সিদ্ধ ডিম। ৫০ গ্রামের একটি বড় ডিমে ৬ গ্রামেরও বেশি প্রোটিন থাকে। চর্বিহীন এই প্রোটিন অনেক বেশি ক্যালোরি না দিয়েও দীর্ঘক্ষণ যাবৎ পাকস্থলি পরিপূর্ণ রাখবে, যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক। অন্যান্য পুষ্টিগুণগুলো হলো লোহা, ক্যালসিয়াম, কোলিন, ভিটামিন এ, বি-৬, বি-১২ এবং ডি।
এতে থাকা লুটেইন এবং জেক্সান্থিনে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সক্ষম।
চিড়া
স্বল্প আহারে অধিক স্বাস্থ্যগুণের অধিকারী হওয়ার জন্য অন্যতম সুষম খাদ্য চিড়া। প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ এই খাবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কেননা পাকস্থলি নিঃসৃত অ্যাঞ্জাইম ফাইবার শোষণ করতে ও ভেঙে ফেলতে পারে না।
আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
একদিকে ক্যালোরি, চর্বি ও চিনির পরিমাণ যথেষ্ট কম, অন্যদিকে খনিজ ও ভিটামিনের মাত্রা বেশি। এই কারণে চিড়া শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়িয়ে ওজন কমানোর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
শেষাংশ
অফিসের নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে এই শুকনো খাবারগুলো শুধু ক্ষুধাই মেটাবে না, পাশাপাশি পূরণ করবে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা। তন্মধ্যে ডেস্কে হাতের কাছেই রাখা যেতে পারে ওটমিল বিস্কুট, ডার্ক চকলেট, বাদাম, পপকর্ন ও কিছু ফলমূল। জনপ্রিয় সান্ধ্যকালীন খাবার ছোলা-মুড়িকে কর্মদিবসের কোনো কোনো দিনে সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে বদলে নেওয়া যায়। উপরন্তু, সুষম খাবার হিসেবে উৎকৃষ্ট সংযোজন হতে পারে গাজর, বীজ, বা চিড়া। সর্বোপরি, ফলমূল, গাজর, বাদাম, চিড়া, ছোলা বা বীজের মধ্যে থেকে পছন্দ মতো যেকোনো সন্নিবেশে সালাদ বানিয়েও তৈরি করা যায় মুখরোচক খাবার।
আরো পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
৪৭৮ দিন আগে
অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বৃষ্টির মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ায় মোল্ডসহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় অণুজীবের বংশবিস্তার ঘটে। ফলে স্যাঁতসেঁতে দূষিত বাতাস শ্বাসকষ্টজনিত স্বাস্থ্য জটিলতাগুলোকে আরও গুরুতর করে তোলে। এরমধ্যে যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে রোগটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে অ্যাজমা। মূলত এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই, তবে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চলুন, অ্যাজমা রোগের কারণ, লক্ষণ, ও প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অ্যাজমা কি
ফুসফুসে বাতাস চলাচলের জন্য নির্ধারিত শ্বাসনালীগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি। এটি কোনো সংক্রামক ব্যাধি নয়, তবে হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো বিশ্বের মারাত্মক ব্যাধিগুলোর একটি।
শ্বাসযন্ত্রের নিম্নদেশের শ্বাসনালীগুলো ব্রঙ্কি নামে পরিচিত। এগুলোর ছোট ছোট শাখাগুলোকে বলা হয় ব্রঙ্কিওল্স। হাঁপানির সময় বিশেষত এই ব্রঙ্কি এবং ব্রঙ্কিওল্সে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ঘটে, যার ফলে পার্শ্ববর্তী মসৃণ পেশীগুলো সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে সংকোচনের পুনরাবৃত্তির ফলে নালীগুলো ফুসফুসে বাতাস পরিবহনের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে অ্যাজমা।
অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণ
মূলত পরিবেশ, বংশগতি ও নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন তীব্রতার অ্যাজমা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই তীব্রতা রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা উভয়কেই প্রভাবিত করে। জিনগত প্রভাবের কারণে ১২ বছর বয়সের আগে হাঁপানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অপরদিকে, ১২ বছর বয়সের পরে এই ব্যাধি হওয়ার পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী থাকে পরিবেশগত প্রভাব।
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
পরিবেশগত কারণ
এখানে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ বা অ্যালার্জেন এবং বায়ু দূষণসহ অন্যান্য পরিবেশগত রাসায়নিক উপাদান। অ্যাজ্মাজেন নামে পরিচিত পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যামোনিয়া, ল্যাটেক্স, ফর্মাল্ডিহাইড, গ্লুটারাল্ডিহাইড ও অ্যানহাইড্রাইড্স। এছাড়াও রয়েছে কীটনাশক, ঝালাই ও ঢালাই থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, ধাতু বা কাঠের ধূলিকণা, যানবাহন মেরামতে ব্যবহৃত আইসোসায়ানেট স্প্রে, আঠা, রঞ্জক, ধাতব কাজ করা তরল, তেল, ও ছাঁচ।
কোনো ধূমপায়ীর ধোঁয়া তার আশেপাশে থাকা গর্ভবতী নারীর হাঁপানির কারণ হতে পারে। ট্র্যাফিক দূষণ বা উচ্চ ওজোন স্তর নিম্নমানের বাতাসের জন্য দায়ী। এমন পরিবেশে তীব্র অ্যাজমার ঝুঁকির মধ্যে থাকে এখানে বসবাসরত শিশুরা।
গৃহস্থালি বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব যৌগের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ঘরের শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েরই অ্যাজমা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফর্মাল্ডিহাইড, প্লাস্টিকের সিন্থেটিক পলিমার হিসেবে প্রস্তুতকৃত পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি।
সাধারণ গৃহস্থালি অ্যালার্জেনগুলো হলো ধুলিকণা, তেলাপোকা, পশুর পশম বা পাখির পালকের অংশ ও ছাঁচ। এছাড়া রেসপিরেটরি সিন্সিশিয়াল ভাইরাস এবং রাইনোভাইরাসের মতো শ্বাসযন্ত্রের কিছু সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ রয়েছে। এগুলো ছোট বাচ্চাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
বংশগতি-সংক্রান্ত কারণ
জিনগত বৈশিষ্ট্য জীবদ্দশায় যে কোনো সময় অ্যাজমার দিকে পরিচালিত করতে পারে। যমজ সন্তানদের একজনের এই রোগ হলে, অপরজনেরও এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ শতাংশ।
কিছু জিনগত বৈচিত্র্য শুধুমাত্র তখনই হাঁপানির কারণ হতে পারে, যখন সেগুলো নির্দিষ্ট পরিবেশগত অ্যালার্জেনের সান্নিধ্যে আসে। এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো এন্ডোটক্সিন ব্যাকটেরিয়া। এর সম্ভাব্য উৎস হলো তামাকের ধোঁয়া, কুকুর-বিড়াল, এবং গৃহপালিত পশুপাখির খামারসহ।
স্বাস্থ্যগত অবস্থা
অ্যাটোপিক এক্সিমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এবং অ্যাজমা- এই তিনের সমন্বিত ব্যাধিকে বলা হয় অ্যাটোপি। হাঁপানি হওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ঝুঁকির কারণ হলো অ্যাটোপিক রোগের ইতিহাস। যাদের এক্সিমা বা হে ফিভার আছে তাদের মধ্যে হাঁপানি অনেক বেশি হারে দেখা দেয়।
চর্বি জমা হওয়ার কারণে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় ফলে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
অ্যারিথমিয়া বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ ক্যাটাগরি বিটা ব্লকার। মূলত প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পরে দ্বিতীয় অ্যাটাক থেকে হার্টকে রক্ষা করতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রোপ্রানোলল সেবনকারী রোগীদের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া অন্যান্য হাঁপানি সৃষ্টিকারী ওষুধগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হলো অ্যাস্পিরিন। গর্ভাবস্থায় অ্যাসিড-প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহারের ফলে পরবর্তীতে শিশুর শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অ্যাজমা রোগের লক্ষণসমূহ
প্রাথমিক পর্যায়ে ঘন ঘন নিশ্বাস টানা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা এবং ঘন ঘন কাশি হয়। ব্রঙ্কি থেকে উৎপন্ন কাশিতে শ্লেষ্মা থাকতে পারে, যা বের করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শ্বেত রক্তকণিকার উচ্চমাত্রার কারণে হাঁপানির আক্রমণের প্রতিরোধ করার সময় পুঁজের সৃষ্টি হতে পারে। সংক্রমণের সময় প্রদাহের জায়গায় তৈরি হওয়া সাদা-হলুদ, হলুদ বা হলদে-বাদামী বর্ণের এই পুঁজকে ইওসিনোফিল্স বলা হয়।
সাধারণত রাতে এবং ভোরে ব্যায়াম করা বা ঠান্ডা বাতাসের প্রতিক্রিয়ায় লক্ষণগুলোর অতি মাত্রায় বিকাশ ঘটে।
অ্যাজমার ধারাবাহিকতায় গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ বা জিইআরডি, রাইনোসাইনুসাইটিস ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপ্নিয়ার মতো ব্যাধিগুলো দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ রোগীদের ক্যাভিটি দেখা যায়। এছাড়া এ সময় বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যেরও বিপর্যয় ঘটে।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
হাঁপানির রেশ ধরে পরবর্তীতে হৃদরোগ ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয়
অ্যাজমার কোনো প্রতিকার নেই, তাই এই ব্যাধির আক্রমণ এড়াতে এর কারণগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো থেকে যথাসম্ভব নিজেকে দূরে রাখার মাধ্যমেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতাসহ পরিবর্তন আনতে হবে নিয়মিত জীবনধারণে।
৪৮০ দিন আগে
বন্যার সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা থেকে সাবধান থাকতে করণীয়
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে বিপদের মাত্রাকে আরও ভয়াবহ রূপ দিতে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগস্থলগুলো। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে স্বাভাবিকভাবেই এসব বিষয় দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। আর এই অসতর্কতাই বুমেরাং হয়ে পড়ে ধ্বংযজ্ঞের সময়ে। উপরন্তু, পানি বিদ্যুৎ পরিবহনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হওয়ায় বন্যার সময়ে রীতিমতো মৃত্যুদূতে পরিণত হয় বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো। সেইসঙ্গে আশঙ্কা তৈরি হয় গ্যাসের লাইনগুলো ভেঙে যাওয়ার। নিদেনপক্ষে অল্প চিড় ধরলেও এই লোহার পাইপগুলো থেকে ঘটতে পারে ভয়ানক বিস্ফোরণ। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে যথা সম্ভব তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। চলুন, বন্যার সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপগুলো জেনে নেওয়া যাক।
বন্যার সময় গ্যাস ও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়
.
অবিলম্বে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা
বন্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রধান সংযোগগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। বিদ্যুতের ক্যাবল বা তার পানির সংস্পর্শে এসে শর্ট সার্কিট হতে পারে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত বন্যায় পানির চাপে গ্যাস পাইপ ভেঙে গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় শুধু একটি স্পার্ক-ই যথেষ্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। এই বিপদ থেকে বাঁচতে অবিলম্বে সব গ্যাস ভাল্ব ও পাওয়ার সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।
যারা এই সুইচ বা ভাল্বের সঙ্গে অপরিচিত তাদের জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে এসব উৎস থেকে অতি দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়া। এ সময় সঙ্গে কোনো বিদ্যুৎ বা তাপ পরিবাহী কোনো বস্তু রাখা যাবে না। সম্ভব হলে সহায়তার জন্য পেশাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বা উত্তপ্ত বস্তু থেকে দূরে থাকা
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ এবং উত্তপ্ত বস্তুর সান্নিধ্য এড়িয়ে চলতে হবে। পাওয়া অফ করার পরেও অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মধ্যে কিছু চার্জ জমা থাকে। সাধারণ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও পানির সংস্পর্শে সেগুলো হুমকির কারণ হতে পারে।
তাছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় অধিকাংশ যন্ত্রাংশেরই উত্তাপ কমে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময়েও ঘটতে পারে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। তাই সর্বাত্মকভাবে এসব সরঞ্জাম থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততই ভালো।
উচ্চ স্থলভাগে অবস্থান নেওয়া
কোমর থেকে গলা পর্যন্ত জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে উঁচু শুকনো জায়গা খুঁজে পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। এরপরেও নিমজ্জিত বা ভাসমান না থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থলভাগ খোঁজার চেষ্টা চালানো উচিত। কেননা স্থির পানি যত জায়গা জুড়ে বিস্তৃত থাকে বিদ্যুতের সংস্পর্শে তার পুরোটাই বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত জলাবদ্ধ জায়গায় পানির নিচে কোথায় কোনো বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত বস্তু আছে কি না তা বোঝা মুশকিল।
আরও পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
এছাড়াও একটু উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিলে বানের পানিতে ভেসে যাওয়া অথবা পানির নিচে ধারালো বা শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা থেকে বাঁচা যায়। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময় হওয়ার পরেও মনকে যথা সম্ভব শান্ত রেখে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নিজের আশেপাশটা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।
গ্যাস লিক খুঁজে বের করে দ্রুত মেরামত করা
বন্যার সময় তীব্র বেগে প্রবহমান পানির চাপে কিংবা ভারী কোনো জড় বস্তু ভেসে এসে গ্যাস পাইপগুলোতে লেগে চিড় ধরাতে পারে। প্রচণ্ড প্রতিকূল অবস্থায় পুরো পাইপ ভেঙে বা উপড়েও যেতে পারে। এমতাবস্থায় চিড়যুক্ত পাইপগুলো খুঁজে বের করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ পাওয়া গেলেও তার সদ্ব্যবহার করা উচিত।
অতঃপর খুঁজে পাওয়ার পর ত্রুটিপূর্ণ পাইপগুলো অবিলম্বে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সাহায্য নিতে হবে পেশাদারদের। কেননা এর উপর নির্ভর করছে আশেপাশের অনেকগুলো মানুষের জীবন। উন্মুক্ত গ্যাসে সৃষ্ট বিস্ফোরণ ছড়িয়ে যেতে পারে বিশাল জায়গা জুড়ে।
আরো পড়ুন: বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করার উপায়
ব্যাটারি-চালিত টর্চলাইট ব্যবহার করা
বন্যাকালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে দিনের আলো পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে রাতের মতো দিনেও পথ চলতে প্রয়োজন হয় কৃত্রিম আলোর। এই প্রয়োজন পূরণে মোমবাতি বা হারিকেন ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অজানা কোনো জায়গায় গ্যাস লিকের ফলে মারাত্মক ঝুঁকির তৈরি হতে পারে। এখানে উৎকৃষ্ট বিকল্প হচ্ছে ব্যাটারি-চালিত টর্চ বা ফ্ল্যাশলাইট, যেগুলোতে আগুন বা চল বিদ্যুৎ সংযোগ কোনোটারই দরকার হয় না।
পরিশিষ্ট
তাৎক্ষণিকভাবে এসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বন্যার সময় বিদ্যুৎ বা গ্যাস-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগগুলো বন্ধ করা গেলে শর্ট সার্কিট ও গ্যাস লিকের ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত থাকা যায়। বৈদ্যুতিক উপাদান থেকে দূরে থাকা এবং প্লাবিত অবস্থা থেকে যথেষ্ট উঁচু স্থলভাগে অবস্থান নিয়েও ঝুঁকির মাত্রা কমানো যায়। গ্যাস লিকগুলো সম্ভব হলে শিগগিরই খুঁজে বের করে বন্ধ করা উচিত। অন্যথায়, এমন স্থান থেকে দূরে থাকা এবং আকস্মিক বিস্ফোরণ এড়াতে মোমবাতির পরিবর্তে ব্যাটারি-চালিত ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুন: বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমাবেন যেভাবে
৪৮২ দিন আগে
বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমাবেন যেভাবে
ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির নিষ্পেষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। নিত্য আহারে প্রয়োজনীয় রান্নার জ্বালানিও এই পীড়নের বাইরে নয়। বিশেষ করে সিলিন্ডার গ্যাসের অস্থির বাজারের তাড়নায় প্রত্যহ ধকল সামলাতে হয় হিসাবি পরিবারগুলোকে। এই অনিশ্চয়তাকে মোকাবিলা করার জন্য চিরায়ত রন্ধন প্রক্রিয়া এবং চুলা ব্যবহারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। তাই চলুন, বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমানোর কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক-
সিলিন্ডার গ্যাস খরচ বাঁচিয়ে রান্না করার ১০টি ব্যবহারিক উপায়
চুলা ব্যবহারের পূর্বে নিয়মিত রান্নার পাত্র ও চুলা পরিষ্কার করা
রান্না বা সিদ্ধ করার পাত্রে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি বাষ্পীভবনের জন্য অতিরিক্ত গ্যাস গ্রহণ করে। একইভাবে পূর্ণ শক্তির তাপ পেতে চুলা ময়লা বিশেষ করে পানিমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। উজ্জ্বল নীল বর্ণ মানেই চুলা পূর্ণ শক্তিতে জ্বলছে।
আর, হলুদ বা কমলা শিখা আংশিক অথবা কম শক্তিতে জ্বলনের ইঙ্গিত করে। আর এই হলুদ বা কমলা রঙের শিখা সাধারণত অপরিষ্কার চুলাতেই দেখা যায়। আংশিক দহনের ফলে রান্নার সময় পাত্র গরম করতে আরও বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। তাই পরিপূর্ণ তাপশক্তি পাওয়ার জন্য চুলা ও এর উপর বসানো পাত্র দুটোই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: বর্ষা-বন্যায় বসতবাড়িতে সাপের উপদ্রব মোকাবিলা করবেন যেভাবে
চুলায় বসানোর আগে রান্নার যাবতীয় সামগ্রী প্রস্তুত করে নেওয়া
শাক-সবজিসহ রান্নার যাবতীয় কাঁচামাল ধোয়া, কাটা ও মেশানোর কাজ করতে হবে চুলা জ্বালানোর আগে। এমনকি অনেকে আগে থেকে পাত্র গরম করার উদ্দেশ্যে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার সামগ্রী প্রস্তুত করতে থাকেন। এই কাজটিও ঠিক নয়। বরং রান্না শুরুর আগেই সমস্ত কাঁচামাল প্রস্তুত করে চুলার কাছাকাছি রাখতে হবে।
চুলার ওপর পাত্র বসিয়ে তাতে তৈরি কাঁচামালগুলো চড়িয়ে সবশেষে চুলা জ্বালানো উচিত। এতে করে সর্বনিম্ন সম্ভাব্য সময়ের জন্য চুলার চালু রাখার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া আগে থেকে গরম পাত্রে প্রস্তুতকৃত কাঁচামাল চড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে তা পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চুলা চালু করার আগে রান্নার সামগ্রী প্রস্তুতের সময় সেগুলোর ছোট ছোট টুকরো করা উচিত। খাবারের ছোট টুকরাগুলো বড়গুলোর চেয়ে দ্রুত সিদ্ধ বা রান্না হয়। কারণ ছোট টুকরোগুলোর আয়তনের তুলনায় তাদের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বেশি থাকে, যার কারণে তাপ দ্রুত খাবারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এই পদ্ধতিটি মূলত শাকসবজি, মাংস এবং অন্যান্য শক্ত উপাদানগুলোর জন্য উপযোগী।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
রান্নার আগে হিমায়িত খাবার গলিয়ে নেওয়া
ফ্রিজে রাখা কোনো খাবার বের করার সঙ্গে সঙ্গে চুলায় চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কেননা এ ক্ষেত্রে খাবারটি রান্না করতে সাধারণত দুটি পর্যায়ে তাপের দরকার হয়। প্রথমে জমাট বাঁধা খাবারটিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসার জন্য এবং তারপর সেটাকে গরম করার জন্য। খাবারের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে অনেক খাবার গলাতে অনেক বেশি তাপের দরকার হতে পারে। ফলশ্রুতিতে, রান্নার সময়টি দীর্ঘায়িত হয় আর বাড়তে থাকে গ্যাসের খরচও।
তাই রান্নার জন্য নির্ধারিত খাবারটিকে আগে থেকে ফ্রিজ থেকে বের করে গলিয়ে নিতে হবে। এর ফলে খাবারটি আংশিক রান্না বা আধা সিদ্ধ হওয়ার ঝামেলা থাকে না। এমনকি অনেকে ঠান্ডা খাবার অনেকক্ষণ চুলায় রাখতে হবে ভেবে খাবার পুড়িয়ে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সেই বিড়ম্বনাও নেই। বরং এই প্রক্রিয়াতে খাবারের স্বাদ অটুট থাকে।
এমন রান্নার পাত্র ব্যবহার করা যা সম্পূর্ণভাবে চুলাকে ঢেকে ফেলে
পাত্রটিকে চুলায় এমনভাবে রাখা উচিত, যেন এটি আগুন বের হওয়ার পুরো জায়গাটিকে ঢেকে রাখে। পাত্রের পাশ ঘেঁষে আগুনের শিখা বের হওয়া মানে চুলাটি অনেক বেশি তাপশক্তি নিয়ে জ্বলছে। একই সঙ্গে এই শিখা অতিরিক্ত গ্যাস অপচয়ের বিষয়টিও নিশ্চিত করে।
এই অপচয় রোধের ক্ষেত্রে গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির পাত্রের পরিবর্তে সমতল পৃষ্ঠের পাত্র অনেক বেশি কার্যকর। সমতল পৃষ্ঠের পাত্রটি একদম চুলার বার্নারের সমান না হলে স্বাভাবিকভাবেই এই পাত্রের গা ঘেঁষেও শিখা বেরিয়ে আসতে পারে। এমতাবস্থায় আগুন পাত্রের নিচে থাকা পর্যন্ত চুলা কমিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায়, এই পাত্রও কোনো কাজে আসবে না।
আরো পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
আগুন পাত্রের সমতল পৃষ্ঠদেশের সর্বত্র ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে পাত্রের নিচে প্রতিটি অংশে সমান তাপ বিতরণ হয় বিধায় রান্না দ্রুততর হয়। অন্যদিকে, ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার তলদেশের পাত্রের সব জায়গায় সমানভাবে তাপ লাগতে পারে না। অসম অংশগুলোতে তাপ পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় রান্নার সময়ও দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
যতটা সম্ভব কম তাপে রান্না করা
রান্নাঘরে একসঙ্গে অনেক কাজ করার সময় অনেকেই চুলা একদম বাড়িয়ে দেন। এতে খাবার পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া উচ্চ তাপে রান্নার ফলে খাবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। সর্বোপরি, এতে গ্যাসের অনেক অপচয় হয়। তাই সব সময় যতটা সম্ভব কম আঁচে রান্নার চেষ্টা করা উচিত।
যেমন, পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর পরেও চুলা পুরোটা বাড়ানো থাকলে সেই পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। ফলে ফুটন্ত পানি পেতে আবার চুলায় পানি চড়াতে হবে। এতে অতিরিক্ত গ্যাস অপচয় হওয়ার পাশাপাশি চরম অবস্থায় পাত্রের পৃষ্ঠদেশ পাতলা হয়ে যেতে পারে। আর ঘন ঘন এমন ঘটনা ঘটলে পাত্র ফুটো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাপ সঞ্চয়ের একটি উপযোগী উপায় হচ্ছে চুলা বন্ধ করার পরে অবশিষ্ট তাপকে কাজে লাগানো।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
যেমন, ভাত বা পাস্তার মতো খাবারগুলো রান্নার সময় রান্না সম্পন্ন হওয়ার কয়েক মিনিট আগে চুলা বন্ধ করে দেওয়া যায়। অতঃপর অবশিষ্ট তাপে শেষ করা যায় বাকি রান্না। এই প্রক্রিয়া খাবারের মানের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
রান্নার সময় পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা
খাবার গরম করার সময় বদ্ধ পাত্রের ভেতর থেকে তাপ বাইরে যেতে পারে না। অন্যদিকে, পাত্রের ওপরে ঢাকনা দেওয়া না থাকলে, যথেষ্ট পরিমাণে তাপ বাতাসে চলে যায়। ফলে হারিয়ে যাওয়া তাপের ঘাটতি পূরণে চুলার অতিরিক্ত তাপের যোগান দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে পুরো রন্ধন প্রণালী সম্পন্ন হতে অনেকটা সময় লেগে যায়।
এছাড়াও রান্না চলাকালীন পাত্রে ঢাকনা থাকলে ভেতরের আর্দ্রতা অক্ষুণ্ন থাকে। ফলে খাবারের গুণগত মান ও স্বাদ নষ্ট হয় না।
পরিমিত পানি ব্যবহার
কি ধরনের খাবার রান্না করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ হিসাবি হওয়ার উচিত। কেননা পানি কম হলে যেমন রান্না পরিপূর্ণ হবে না, আবার উপাদানগুলো পানিতে ডুবে গেলে হারিয়ে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত স্বাদ। পাত্রে পরিমিত পরিমাণে পানি দেওয়ার মাধ্যমে কম সময়েই পছন্দসই তাপমাত্রায় পৌঁছানো যায়। আবার পাত্রে একদম কম পানি থাকলেও স্বল্প তাপেই খাবার সিদ্ধ বা রান্না হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে খাবারের প্রকৃতির দিকে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
আরো পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
একসাথে একাধিক খাবার তৈরি
আলাদা আলাদা করে ভিন্ন খাবার তৈরি করার বদলে একবারে পাঁচমিশালী করাটা অধিক সাশ্রয়ী উপায়। অবশ্যই এখানে যে খাবারগুলো একই ধরনের তাপমাত্রায় বা পদ্ধতিতে রান্না হওয়ার উপযোগী, সেগুলোকে নির্বাচন করা উচিত। এগুলোকে ওয়ান-পট মিল বা এক পাত্রের খাবারও বলা হয়ে থাকে।
চুলায় দেওয়ার আগে প্রস্তুতিতে বেশ সময় লাগলেও গ্যাসের খরচ বাঁচাতে এটি বেশ কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
এছাড়া একটি খাবার থেকে নিঃসৃত তাপকে অন্য একটি খাবার সিদ্ধ করতে কাজে লাগানো যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজন হবে বিশেষ পাত্রের, যেখানে উপর-নিচ করে দুটি ভিন্ন খাবার রাখার জায়গা থাকবে।
জ্বালানী-সঞ্চয়ী পাত্র ব্যবহার
ঢালাই লোহা বা তামার মতো পৃষ্ঠ সম্পন্ন পাত্রগুলো তাপকে সমানভাবে বিতরণ করতে পারে। এগুলো সাধারণ রান্নার পাত্রের চেয়ে বেশি সময় ধরে তাপ সঞ্চয় করে রাখতে পারে। ঢালাই লোহা দীর্ঘ সময় ধরে গরম থাকে, যা কম আঁচে রান্নার জন্য বেশ উপযোগী। এমনকি চুলা বন্ধ করে দেওয়ার পরেও অবশিষ্ট তাপ দিয়ে রান্না শেষ করা যায়।
আরো পড়ুন: ঘরে রান্নার কাজে নিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায়
আর তামা একটি উৎকৃষ্ট তাপ সঞ্চালনকারী পদার্থ বিধায় এটি দ্রুত উত্তপ্ত হতে পারে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই উপকরণগুলো রান্নার সময় কমিয়ে দেয় এবং কম গ্যাস খরচ করেই রান্নায় ভিন্নতা আনা যায়।
পাত্রের নিচে তাপ ধরে রাখার পাথর ব্যবহার
বেশ পুরনো হলেও ঐতিহ্যবাহী এই পদ্ধতিটি গ্যাস ব্যবহারকে সাশ্রয়ী করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর। পাথরের রয়েছে তাপীয় ভর, যার কারণে এগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপ শোষণ করতে পারে। এগুলোর মধ্য থেকে আংশিক মসৃণ ও প্রায় বৃত্তাকারগুলো সংগ্রহ করে বার্নারের ঠিক মাঝের গর্তে একটি বসানো যেতে পারে। অতঃপর চুলায় পাত্র বসিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলে পাথরটি ধীরে ধীরে উৎপাদিত তাপ শোষণ করতে থাকবে। গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাথরটি পাত্রের মধ্যে উষ্ণতা ছড়াতে শুরু করে। এর ফলে অল্প গ্যাসেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তাপশক্তি পাওয়া যায়।
শেষাংশ
বাসা-বাড়িতে রন্ধন প্রণালী ও চুলা ব্যবহারের এই উপায়গুলো সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকে অনেকাংশে সাশ্রয়ী করে তুলতে পারে। চুলায় রান্নার পাত্র বসানোর আগে পরিচ্ছন্নতা, হিমায়িত খাবার গলানো, এবং অল্প পানি ব্যবহারের মতো পূর্বপ্রস্তুতিগুলো স্বল্প সময়ে রান্নার সহায়ক হয়। ঢাকনা এবং সঠিক পাত্র ব্যবহার একদিকে যেমন রান্নাকালীন গ্যাস অপচয় রোধ করে, অন্যদিকে পাত্রের নিচে পাথর ব্যবহার উৎপাদিত তাপ ধরে রাখতে সহায়তা করে।
উপরন্তু, একসঙ্গে একাধিক খাবার রান্না করা গ্যাস সঞ্চয়ের কার্যকরী উপায়। সব মিলিয়ে লক্ষ্য হতে হবে- রান্নার সময়টাকে যথাসম্ভব কমিয়ে আনা এবং অল্প তাপে রান্না শেষ করা।
আরো পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
৪৮৫ দিন আগে
এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
২০২২ থেকে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এমপক্স। এটি ছিল আফ্রিকার বাইরে বিশ্বব্যাপী এমপক্স প্রাদুর্ভাবের প্রথম ঘটনা। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে এর বিস্তৃতি ঘটে কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিতে। এমনকি ইউরোপের দেশ সুইডেনেও ধরা পড়তে শুরু করে এমপক্স আক্রান্ত রোগী। সম্প্রতি এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এমপক্স আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয় পাকিস্তান। ফলে এমপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত কোনো এমপক্স রোগী ধরা না পড়লেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলুন, এমপক্স সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
এমপক্স সংক্রমণের কারণ
এই রোগের সৃষ্টি হয় অর্থোপক্স ভাইরাস এমপক্সের মাধ্যমে, যার পূর্ব নাম ‘মাঙ্কিপক্স ভাইরাস’। এই জুনোটিক ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে থাকে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে। ভেরিওলা ভাইরাস, (যেটি মূলত গুটিবসন্ত সৃষ্টি করে), কাউপক্স এবং ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাসের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভাইরাসটি ক্ল্যাড-১ এবং ক্ল্যাড-২ নামে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। ক্ল্যাড ২-এর রয়েছে আরও দুটি সাব-ক্যাটাগরি: ক্ল্যাড-২এ ও ক্ল্যাড-২বি।
এর সংক্রমণ শরীরের ত্বক বা শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরলের সরাসরি সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ঘটে থাকে। অপরদিকে, সংক্রমিত পশুর সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে পশু থেকে পশুতে ছড়িয়ে পড়ে। আর পশু থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটে আক্রান্ত পশুর কামড় অথবা আঁচড় বা পশু শিকার, চামড়া কাটা বা রান্নার মতো কার্যকলাপের সময়। এমপক্স ভাইরাস ত্বক, থুথু, লালা, নাকের পানি ও যৌনাঙ্গের শ্লৈষ্মিক পৃষ্ঠের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ কথা বলা, কাশি বা হাঁচির মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
এমপক্সের লক্ষণ
একদম শুরুতে জ্বর, পেশিতে ও গলায় ব্যথা থাকে। তারপর ধীরে ধীরে চুলকানি বা তীব্র ব্যথাসহ ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ক্লান্তি যোগ হয়। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে উপসর্গের এতটা বিস্তৃতি নাও থাকতে পারে। আপাতদৃষ্টে ফুসকুড়িগুলোর কারণে সাধারণ হাম বা চিকেনপক্স মনে হতে পারে। কিন্তু লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া বিশেষত অন্যান্য পক্স থেকে এমপক্স কে আলাদা করে।
অধিকাংশ লক্ষণ সংক্রমণের ৪ থেকে ১১ দিন পরে দৃষ্টিগোচর হওয়া শুরু হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথম দিনেই গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
অনেক ছোট ছোট ক্ষতের সমন্বয়ে গঠিত হয় ফুসকুড়িগুলো, যা হাতের উভয় পৃষ্ঠ, মুখ, গলা, যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। শুরুটা হয় ছোট ছোট সমান দাগ দিয়ে। অতঃপর ফুলেফেঁপে ওঠার আগ মুহূর্তে ভেতরে তরল পুঁজে পূর্ণ হয়ে যায়। পরে তা ফেটে গিয়ে প্রায় ১০ দিন চামড়ায় থেকে যায়। বিরল ক্ষেত্রে ক্ষতগুলোতে ইনফেকশন হয়ে চামড়ায় নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা সেরে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
গোটা শরীর জুড়ে এই ক্ষতগুলো যে শুধু একসঙ্গে অনেকগুলো দেখা দেয় তা নয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধু একটি ঘা থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এমনকি কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। লক্ষণগুলো সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার রোগীদের ক্ষেত্রে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
চরম পর্যায়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, সেপসিস, এনসেফালাইটিস ও দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যায়। দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগ আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস সংক্রমণ মৃত সন্তান প্রসব বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
এমপক্স প্রতিরোধের উপায়
এই রোগের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, তবে গুটিবসন্তের টিকা অনেকাংশে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা জুড়ে শুধু একটি টিকা অনুমোদিত হয়েছে। এর নাম এমভিএ-বিএন, যার পূর্ণ রূপ মডিফাইড ভ্যাক্সিনিয়া আঙ্কারা-বাভ্যারিয়ান নর্ডিক। ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়েছে অর্থোপক্সভাইরাসের সম গোত্রভুক্ত ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস থেকে। এটি সাধারণত ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি মাত্রায় দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনে আরও ৩টি ভ্যাকসিন রয়েছে। এগুলো হলো- জাপানের এলসি-১৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার এসিএএম-২০০০ এবং রাশিয়ার অর্থোপক্সভ্যাক।
তবে বর্তমানে ডব্লিউএইচও অনুসারে, এখনও বিশ্বব্যাপী গণ টিকাদান কর্মসূচির সময় আসেনি। যারা ঝুঁকিতে আছেন বা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, শুধু তাদের এসব টিকা দেওয়া যেতে পারে।
তাছাড়া এগুলোর সবই মূলত প্রস্তুত করা হয়েছিল গুটিবসন্ত ও অর্থোপক্স গোত্রের অন্যান্য ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে। একক ভাবে এমপক্সের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি এখনও গবেষণাধীন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন বিএনটি-১৬৬ বিশেষভাবে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। এটি নিয়ে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এখানে উল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯-এর জন্য বানানো ভ্যাকসিনের মতো এটিও একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন।
আরো পড়ুন: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
উপরুন্ত, সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের অনুপস্থিতিতে এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ বা বিস্তার রোধ করতে ঘরোয়াভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো-
- ফুসকুড়ি আছে এমন লোকেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
- সংক্রামিত প্রাণী ও তার ব্যবহৃত কিংবা তার সংস্পর্শে থাকা কাপড়, চাদর, কম্বল বা অন্যান্য উপকরণগুলো থেকে দূরে থাকা।
- সরাসরি এমপক্স আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা অবস্থানে রাখা।
- সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগের পরে সাবান ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। বিশেষ করে খাওয়ার আগে বা মুখ স্পর্শ করার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে। সাবান ও পানি পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অর্থোপক্স ভাইরাস বহন করতে পারে এমন সব গৃহস্থালি বা পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলা।
আরো পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
এমপক্স রোগের চিকিৎসা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের প্রভাব ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। এর মধ্যে রোগের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে রক্ষা পেতে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এমপক্সের গুরুতর অবস্থায় বেশ ভালো কাজ দেওয়ায় প্রতিষেধক হিসেবে টেকোভিরিমাট ও সিডোফোভির প্রেস্ক্রাইব করা হয়। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনিয়া ইমিউন গ্লোবুলিন দেওয়া হতে পারে। মূলত গুটিবসন্তের মতো অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য সবার থেকে আলাদা রাখা উচিত। এ সময় তাকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও ভালো খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে।
এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মধ্যে রয়েছে শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্কসহ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা। এদের যথা শিগগিরই হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
এমপক্স নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই একটি উন্মুক্ত ক্ষত থেকে টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয়। এটি পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষার (জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টিং) জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। এছাড়া রোগীর সর্বশেষ রোগ প্রতিরোধ অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য তার রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।
শেষাংশ
সাধারণ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এমপক্স-এর লক্ষণগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের জন্য এর জটিলতাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই দেশে প্রাদুর্ভাবে পরিণত হওয়ার আগেই মাঙ্কি পক্সের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে জেনে থাকা জরুরি। সক্রমণ এড়াতে যে ব্যক্তি, প্রাণী ও বস্তুর এমপক্স আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সে সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন এখনও গবেষণাধীন থাকায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। সম্মিলিতভাবে সতর্ক থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যাবে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি।
আরো পড়ুন: মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি
৪৮৮ দিন আগে
মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি
বিশ্বজুড়ে মাঙ্কি পক্স নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই এটি নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বুধবার (১৪ আগস্ট) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আজ জরুরি কমিটির বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এই অবস্থা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ওপর উদ্বেগের পরিস্থিতি (পিএইচইআইসি) সৃষ্টি করেছে। আমি সেই পরামর্শ গ্রহণ করে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।’
টেড্রোস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী পিএইচইআইসি হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা। এটি এমন একটি বিষয় যাতে আমাদের সবার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আফ্রিকায় এবং এই মহাদেশের বাইরেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই উদ্বেগজনক।’
ডব্লিউএইচওর তথ্যানুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত মাঙ্কি পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে, ১৪ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে এখন পর্যন্ত ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মাঙ্কি পক্সের চলমান প্রাদুর্ভাবকে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (আফ্রিকা সিডিসি)। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা এল।
আরও পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
৪৯২ দিন আগে