কিন্তু গত ২৭ জুন সেটিও ভেঙে যায়। বর্তমানে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এতে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বিলপার গ্রামের দক্ষিণ পাশে ও রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ বাজারের নিকটবর্তী স্থানে এ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে এলাকাবাসী। গত শনিবার দুপুরে হঠাৎই সাঁকোটি ভেঙে যায়। ফলে সদর উপজেলার সাথে ২০টি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত ১০ বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়েই এই অঞ্চলের মানুষ চলাচল করে আসছেন।
সাঁকোটি দিয়ে দুটি ইউনিয়নের বিলপাড়, দ্বিপবন, বাবুনগর, পাঁচঘরি, দোহাল, পালেরচক, কোনাপাড়া, নোয়াপাড়া, শ্রীপুরসহ ২০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছেন।
সাঁকোটির পূর্ব পাশে আশুগঞ্জ বাজার ও আশুগঞ্জ স্কুলি অ্যান্ড কলেজ এবং আশুগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে খাজাঞ্চী নদীর ভোগান্তি লাঘবে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এলাকার মানুষ বাঁশ-কাঠ অর্থ ও স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন। প্রতি বছর এলাকাবাসীর অর্থায়নে সাঁকোটি মেরামত করা হয়।
এদিকে খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দু’পাড়ের কৃষক তাদের ফসল উৎপাদন, ফসল ঘরে ও হাটবাজারে নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। প্রতি বছর সরকার কোটি-কোটি টাকা গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণে বরাদ্দ দিলেও এই অঞ্চলে তা পোঁছায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এলাকার কোনো কোনো স্থানে রাস্তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। স্বাধীনের পর থেকে এই অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলেই চলে। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ওয়াদা দিলেও তা বাস্তবে মিলছে না। তাই এলাকাবাসী খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
বাবুনগর গ্রামের শংকর বিহারী দাশ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু সেটিও ভেঙে যায়।’দোহাল গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, ‘নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কথা তাদের মনে থাকে না।’
উপজেলার খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই দরকার। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।’
রামপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হয়েছে। দ্রুতই এর একটা ফল পাওয়া যাবে।’
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এলাকায় নতুন যোগদান করেছি। তবে এলাকাবাসী এই নদীর ওপরে সেতু নির্মাণের আবেদন করলে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেবো।’