এছাড়া, চীন বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায় বলেও জানান তিনি।
ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি বাংলাদেশে খুব নির্ঝঞ্ঝাট সাধারণ নির্বাচন হবে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।’
স্পষ্টতই স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত জুয়ো বলেন, বাংলাদেশি জনগণের পছন্দকে চীন সম্মান জানাবে।
‘আমি আরও আশা করি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হবে,’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে অনেক সুযোগের আবির্ভাব হয়েছে এবং যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেগুলো অনুসন্ধান করা যায়।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জুয়ো বলেন, এই ঐতিহাসিক সফরের মাধ্যমে দুই নেতা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট শি- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উপনীত করেছেন।
‘এটা বৃহত্তর সহযোগিতার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে...উভয় দেশ তাদের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে,’ যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যকার মূল বিষয়- অর্থনীতি ও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ- ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।
নতুন দায়িত্ব নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসা রাষ্ট্রদূত জুয়ো বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের পর থেকে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার পাশাপাশি মানুষের সাথে মানুষের (সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যকার) সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বহুল আলোচিত এক অঞ্চল ও এক পথ প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি ২০১৩ সালে বিষয়টি সামনে আনেন এবং তা সারা বিশ্ব থেকেই খুব ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
‘উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা এখন খুব ভালো অবস্থানে রয়েছি,’ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট শি’র রাষ্ট্রীয় সফরের মাধ্যমে যে সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে তার পুরোটা কাজে লাগানো এবং দুদেশের জনগণের জন্য আরও ফল বয়ে আনার প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার ক্ষেত্রে মানুষের সাথে মানুষের বিনিময় ও সংযোগ এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
রাষ্ট্রদূত দুই দেশের গণমাধ্যমের মধ্যে গভীর সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে।
‘আমি গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্বে জোর দিতে চাই। যখন আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অন্য অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেই তখন আমি বিশ্বাস করি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধনে ঐতিহ্যবাহী ও নতুন গণমাধ্যম উভয়ে সাহায্য করতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
শিক্ষা খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত জুয়ো বলেন, চীন শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে চায়।
‘প্রতি বছর তিন হাজারের অধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে শিক্ষাগ্রহণ করতে যায়। আমি বিশ্বাস করি এটি আমাদের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি আশা করি এই ক্ষেত্রে আমরা একসাথে সহযোগিতা বাড়াতে পারি,’ যোগ করেন তিনি।
ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পিএইচডি থাকা রাষ্ট্রদূত জুয়ো তরুণ ও নারীদের সংযুক্ত করে যোগাযোগ বিষয়েও উন্নতি প্রত্যাশা করেন।
তিনি জানান, চীন ১৫০ জন বাংলাদেশি তরুণকে ১৫ দিনের যুব ক্যাম্পে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং এই কর্মসূচি খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘আমি আশা করি আমাদের নারী সদস্যদের মাঝে আরও যোগাযোগ হবে,’ বলেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও পর্যটন খাতে বৃহত্তর সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত দুদেশের মধ্যকার বাস্তব অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির জন্য আলোচনার কার্যকর ভিত্তি গড়ে তোলার প্রতি জোর দেন।
রাষ্ট্রদূত জুয়ো বলেন, বাংলাদেশ খুবই সমৃদ্ধিশালী দেশ যা বেশকিছু বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী ও লেখকের জন্ম দিয়েছে। তিনি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিশীল কাজও স্মরণ করেন।
‘‘তিনি (রবীন্দ্রনাথ) চীনেও খুব বিখ্যাত ব্যক্তি। আমি এখানে আসার আগে তার বিখ্যাত কবিতা ‘আমার সোনার বাংলা’ পড়েছি। এই সাহিত্যকর্মটি আমাকে বাংলাদেশকে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে,’’ যোগ করেন ঝ্যাং জুয়ো।