সম্প্রতি নেদারল্যান্ডের দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত `বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের স্থায়িত্ব, স্বচ্ছতা ও পরিবর্ত ‘ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি বিগত বছরগুলোতে এই খাতের অগ্রগতি এবং কিভাবে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মোস্তাফিজ উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদনমূল্য ও আমদানীমূল্যের তারতম্যকে ‘প্রাইস প্যারাডক্স’ বলে অভিহিত করেন, যেখানে বাংলাদেশ বিগত ৯ বছরে মজুরি বৃদ্ধি করেছে ২৬৩%, অন্যদিকে আমেরিকা এবং ইউরোপে তৈরি পোশাকের আমদানীমূল্য কমেছে যথাক্রমে ৬.৬৩% এবং ৭.৩৩%।
সভায় ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিবিআই (উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমদানী প্রবৃদ্ধিতে সহায়তাকারী ডাচ প্রতিষ্ঠান), মডিন্ট (পোশাক এবং ফ্যাশন সামগ্রী উৎপাদনকারী, আমদানীকারক ডাচ ব্যবসায়ী সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন, ফ্যাশন হাউজ, পোশাক উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদির প্রায় ৪০জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত ৪.৪ মিলিয়ন শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং এই খাতে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য ও কিভাবে এর গুণগত মান আরও উন্নয়ন করা সম্ভব তা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ইউরোপ একটি বিশাল বাজার। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ফ্যাশন জগতে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখা এবং আরও বিস্তার লাভে বাংলাদেশের পোশাক খাত যে সকল সমস্যা মোকাবেলা করছে, যেমন উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রায়োগিক প্রটোকল, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, গবেষণা এবং উদ্ভাবনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বাংলাদেশের প্রাপ্য সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এ সভায় আলোচনা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নতিতে ডাচ ক্রেতা/ব্যবসায়ী এবং ফ্যাশন হাউজদের ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য এবং এই শিল্পের আরও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত বেলাল মন্তব্য করেন, ডাচ তথা ইউরোপীয় ক্রেতাদের কার্যকর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাংলাদেশের পোশাক খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ উৎকৃষ্ট উপায়ে সমাধানে ভূমিকা রাখবে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার প্রতি আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত বেলাল দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য ডাচ ব্যবসায়ীদের আহ্বানের জন্য সাবেক ডাচ মন্ত্রী লিলিয়ান প্লুমেনের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত বেলাল মডিন্টের গঠনমূলক এবং উদ্ভাবনাময়ী ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিভিন্ন ডাচ বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক, প্রযুক্তি বিনিময় এবং নতুন ধারণা, যেমন ব্লকচেইন, অটোমেশন ইত্যাদি তুলে ধরার মাধ্যমে মডিন্ট বিজিএমইএ-এর দক্ষতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসবে। বাংলাদেশ সরকার এই খাতের টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বেলাল এবং মোস্তাফিজ পোশাক খাতের ধারাবাহিক টেকসই উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ইত্যাদি নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং আশ্বাস প্রদান করেন যে, তৈরি পোশাক শিল্প ও বাংলাদেশ সরকার নিজ সক্ষমতায় এই শিল্পের টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।