সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে ঝুঁকিতে বোরো ফসল, আতঙ্কে কৃষক
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাওর এলাকার কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যে তারা এই বছর বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কি না। ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সামনের দিনগুলোতে এখানে আরও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। সাধারণত, হাওর এলাকার কৃষকরা ৭-১০ দিনের মধ্যে ফসল কাটা শুরু করবেন। তবে হাওরে অকালবন্যার পানি নামতে না নামতেই আরেকটি ঢল আসার আশঙ্কা ফসলের সম্পূর্ণ ক্ষতি করতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং অন্যান্য বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তরপূর্বাঞ্চল, তদসংলগ্ন ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটার কয়েকটি পয়েন্টের পানি বিপদসীমানা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফের আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসে আতঙ্কে দিন-রাত কাটাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।
গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার নজরখালীর বাঁধ ভেঙে টাংগুয়ার হাওর, এরালিয়াকোনা, গুন্নাকুড়ি হাওরের প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। অবশিষ্ট বাঁধ গুলো পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। বিভিন্ন বাঁধে ধস ও ফাটল দিখা দিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক তাহিরপুর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত ও সংস্কার করতে এবছর ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) দ্বারা ৫৩ কিলোমিটার ডুবন্ত ফসল রক্ষা বাঁধ ও ১০টি ক্লোজার মেরামত করা হয়। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর এসব বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু ও শেষ না হওয়ায় বাঁধ গুলো মজবুত হয়নি। ফলে বাঁধ দুর্বল থাকায় পাউবো’র ৬৮টি বাঁধেই ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হাওরপারের কৃষকরা। আর বাঁধের ধসে পড়া ও ফাটলের স্থানে বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন স্থানীয় কৃষকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে মাঘ মাসের শেষের দিকে স্থানীয়রা তাহিরপুর উপজেলার মহালিয়া হাওরের ময়নাখালি বিল সেচে মাছ ধরায় বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে ময়নাখালি বাঁধটি।
বাঁধ ভেঙে কৃষকের ক্ষতি হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) নামে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা গরিব কৃষকদের নাম ব্যবহার করে প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করে লাভবান হয়েছেন, এমন অভিযোগ এখন হাওরাঞ্চলের সর্বত্রই।
পড়ুন: হাওরে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
হাওরে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন জমা দিবে কমিটি।
সোমবার সচিবালয়ে হাওরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ থাকলে তা মওকুফের বিষয়েও সরকার চিন্তা করছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। একদিনে ১৩০ মিলিমিটার এবং মোট ১২শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদী ভাঙন হয়ে যায়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যেই বসবাস করতে হবে।
তিনি বলেন, হাওরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করি আগামী বছরে সেই সমস্যা হবে না।
সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হল- ওই গ্রামের দীপক দাসের মেয়ে বৃন্দা দাস (৭), প্রদীপ দাসের ছেলে প্রমিত দাস (৫) ও দীপু দাসের ছেলে রক্তিম দাস (৫)।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে বাড়ির আঙিনায় বৃন্দা, প্রমিত ও রক্তিম খেলাধুলা করছিল। খেলা শেষে সামনের ডোবায় সাঁতার কাটতে গিয়ে ডোবার পানিতে তলিয়ে যায় তারা। এ সময় অন্যান্য শিশুদের চিৎকার শুনে স্বজনরা এসে ওই তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করেন।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: গোয়াইনঘাটে পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু
খুলনায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
সিটি অব লন্ডনের কাউন্সিলম্যান হলেন সুনামগঞ্জের শাহনান বখত
যুক্তরাজ্যের সিটি অব লন্ডন করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শাহনান বখত (৩৯)। তিনি সিলেটের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শাহাগীর বখত ফারুকের ছেলে। ২৪ মার্চ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে শাহনান বখতের বাবা শাহাগীর বখত সাংবাদিকদের জানান, ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিটি অব লন্ডন করপোরেশনের নীতিনির্ধারক হিসেবে কাজ করেন কাউন্সিলম্যানরা। শাহনান বখত দ্বিতীয় বাঙালি, যিনি করপোরেশনের এই পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন। ৪ বছর আগে আরেকজন বাঙালি এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শাহনান বখতের ওয়ার্ড হচ্ছে ব্রড স্ট্রিট। তিনি সেখানকার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের একজন ভাইস চেয়ারম্যান। যুক্তরাজ্যে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শাহনান বখতের পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরপিননগর এলাকায়।
আরও পড়ুন: লন্ডনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহনানের বাবা শাহাগীর বখত সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্যে যান। যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়ন নিয়ে তিনি দুইবার পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছেন। তিনি ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্সের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা। লন্ডন সিটি করপোরেশন থেকে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় শাহাগীর বখত, তার স্ত্রী শেরিনা বেগম, ছেলে শাহনান বখত ও জেইন বখত ‘ফ্রিম্যান অব দ্য সিটি অব লন্ডন খেতাব’ পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জে তাদের পরিবারটি ‘বখত পরিবার’ হিসেবে পরিচিত। শাহনান বখতের চাচা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন বখত মুহিত। তার আরও দুই চাচা প্রয়াত মনোয়ার বখত নেক ও আয়ুব বখত জগলুল সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আরেক চাচা নাদের বখত সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র।
মেয়র নাদের বখত সাংবাদিকদের বলেন, ‘শাহনান বখতের এই অর্জনে পারিবারিকভাবে আমরা অবশ্যই গর্বিত। পাশাপাশি একজন বাঙালি হিসেবে এটি সবার জন্য গর্বের। নিশ্চয়ই সে তার অবস্থান থেকে বাংলাদেশের সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।’
আরও পড়ুন: লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে তথ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
ভ্যালি সিটি: পূণ্যভূমি সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
সুনামগঞ্জে দু’দিনব্যাপী শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব শুরু
মানুষ যদি হতে চাও কর মানুষের ভজন, স্বাধীন বাংলা স্বাধীন হবে, সুখে রবে বাংলা মায়ের সন্তান, কোন মেস্তোরি নাও বানাইল কেমন দেখা যায়, কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি, জ্ঞানী-গুণী সবাই বলেন মুক্তি আসে মানবতায়-এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের কালনী নদী ঘেষা উজান ধল গ্রামে বাউল সম্রাটের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী লোক উৎসব।
মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে বুধবার সারারাত পর্যন্ত চলবে এই লোক উৎসব। দেশ-বিদেশের বাউল প্রেমী শাহ আব্দুল করিমের ভক্তদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে উজান ধল গ্রামটি। গ্রামের মাঠের চতুর্দিকে শতাধিক দোকানী বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে বসেছে মেলা। শিশুদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে দোলনা ও হরেক রকমের পণ্যসামগ্রী। রাতে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
মেলার নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে দু’দিন ব্যাপী গ্রামের মাঠে প্রতিবছরের মতো এবারও লোক উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি ও আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালালের সভাপতিত্বে এবং আপেল মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এই দু’দিনব্যাপী লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ, দিরাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী,তাড়ল ইউপি চেয়ারম্যান মো.আলী আহমদ, কুলজ্ঞ ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন, বিশ্বনাথ উপজেলা আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি মো.আব্দুল হাই, বাউল শিল্পী আব্দুর রহমান, বাউল সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাইয়ের উজান ধল গ্রামের এক গরীব বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন করিম। তিনি তার জীবদ্দশায় দুই হাজারের মতো গান রচনা করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাখাল রাজা হয়ে তার দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে তিনি অজোপাড়া গায়ের গোচারণ ভূমিতে বসে বসে অসংখ্য কালজয়ী গান রচনা করেছেন। ক্রমান্বয়ে তার গান বর্হিবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।পরবর্তীতে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই বাউল সম্রাট।
এ ব্যাপারে শাহ আব্দুল করিমের ছেলে নূর জালাল জানান, অন্য বছরগুলোতে কোনো কোনো প্রতিস্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করলেও এবার কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে আমার বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে আমাদের গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সাধ্যমতো এবারো লোক উৎসব করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি পৃষ্টপোষকতা পেলে আমার বাবার গানগুলো বর্হিবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এখানে একটি সঙ্গীতালয় স্থাপন করা জরুরি। সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপন করা গেলে নতুন প্রজন্মের অনেক নতুন শিল্পী তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ ব্যাপারে তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আহমদ বলেন, এই হাওরপাড়ের মানুষ শাহ আব্দুল করিমের মাধ্যমেই আমাদের সুনামগঞ্জ তথা দিরাইবাসীকে লোকজন চিনেন। দেশের বিভিন্ন জায়গাতে গেলে দিরাই পরিচয় দিলেই বলেন ও তাহলে আপনারা তো করিমের এলাকার লোকজন। আব্দুল করিম আমাদের অনুপ্রেরণা। তাই করিমের গান সংরক্ষণ করা গেলে যেমন নতুন অনেক শিল্পী তৈরি হবে, তেমনি করিম আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন।
চেয়ারম্যান মো. আলী আহমদ ধলবাজার থেকে শাহ আব্দুল করিমের গ্রামের বাড়ি উজান ধল পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান সরকারের কাছে।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী জানান, সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম একজন রাখাল রাজা ছিলেন। তিনি অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাউল গানে উৎসাহিত হন। বিশ্বমণ্ডলে একজন খ্যাতিমান গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেই তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
আগামীতে শাহ আব্দুল করিমের এই জন্মবার্ষিকীতে সরকারের পৃষ্টপোষকতায় একটি সঙ্গীতালয় স্থাপনে সহযোগিতার দাবি তার ভক্তদের।
সুনামগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যা: তিন আসামি ৮ দিনের রিমান্ডে
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ছয় টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার দুপুরে জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, মুদি দোকানদার অনজিৎ গোপ ও অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত গোপের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ আব্দুর রহিম এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড প্রার্থনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান।
রিমান্ড শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেক আসামির আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তিন আসামির দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের সুনামগঞ্জ আদালত পরিদর্শক মো. বদরুল আলম তালুকদার।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর তিন আসামিকে সিআইডি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
মৃত জোৎস্না জগন্নাথপুর থানার নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী। তিনি ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।
সিআইডি জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওষুধ কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সঙ্গে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক গোপন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোৎস্নার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। তখন জোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে সে তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলে। ওইদিন বিকেলে জোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এদিকে রাত গভীর হলে জোৎস্নার বাসায় যাওয়ার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে জোৎস্নাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেয় জিতেশ। এতে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত গোপকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। এরপর রাত গভীর হলে আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তখন জিতেশ ও তার দুই সহযোগী এনার্জি ড্রিংকস পান করে জোৎস্নাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর খন্ডিত লাশ উদ্ধার
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না তার পরিবারকে জানাবে বলে জানান। তখন জিতেশ ও তার সহযোগীরা জোৎস্নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে জোৎস্না দুই হাত, দুই পা ও বুক-পেটসহ ছয় টুকরা করে। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টন দিয়ে খন্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে তারা ফার্মেসি তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই লাশের খণ্ডিত অংশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় ও লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেনি।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামিদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। গত শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনজিৎ ও অসীত গোপকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক
সুনামগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর খন্ডিত লাশ উদ্ধার
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ শহরের এক ফার্মেসীর দোকান থেকে ওই নারীর খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে।
নিহত শাহনাজ পারভীন জোৎস্না (৩৫) উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরুক মিয়ার স্ত্রী।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সুত্র জানায়, গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ফার্মেসীতে যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এদিকে নিহতের ছোট ভাই তাঁর বোন বাসায় ফিরেনি জানতে পেরে ওই ফার্মেসীতে যান সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে। তখন ফার্মেসী বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফার্মেসীর মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে সে জানায়, তাঁর বোন ঔষধ না পেয়ে চলে গেছেন। নিহতের ব্যবহৃত মোবাইলফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করতে থাকেন। পরে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: মাগুরায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগযোগ করেও শাহনাজের সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জগন্নাথপুর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ তালাবদ্ধ অভি ফার্মেসীর তালা ভেঙে দোকানে অভিযান চালায়। এসময় বিছানার চাঁদর দিয়ে মুড়ানো অবস্থায় ওই নারীর খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপ ও তাঁর পরিবার পলাতক রয়েছেন।
নিহতের ছোট ভাই হেলাল মিয়া বলেন, তিনি এই নৃশংস হত্যার বিচার চান। হেলাল জানান, তাঁর বোন জামাই দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। বোনের পরিবারের সঙ্গে তিনি শহরে বসবাস করেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে খাল থেকে কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
সুনামগঞ্জে ট্রাক্টর-অটোরিকশা মুখোমুখি সংর্ঘষে নিহত ২
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ট্রাক্টর ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। রবিবার সকালে ঢাকা-সুনামগঞ্জ সড়কে উপজেলার আলীগঞ্জ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ওমরপুর গ্রামের অটোরিকশার চালক শুভ (২৫) ও রসুলপুর গ্রামের আমির হোসেন (৫৫)।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরের বাসচাপায় ভ্যানচালকসহ নিহত ২
জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়েদ উল্লাহ জানান, রবিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার আলীগঞ্জ এলাকার ঢাকা-সুনামগঞ্জ সড়কে রানীগঞ্জগামী একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে ট্রাক্টরের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশার চালকসহ দু’জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এসআই জানান, ট্রাক্টরের চালককে আটকের জন্য অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভটভটি উল্টে চালক নিহত
সুনামগঞ্জে মাদক জব্দ, ‘ভুয়া পুলিশ’ আটক
সুনামগঞ্জের একটি আবাসিক এলাকা থেকে আব্দুল জব্বার নামে এক ভুয়া পুলিশকে আটক করা হয়েছে। এই সময় তার কাছ থেকে ৩৬ পিস ইয়াবা, ১৫০ গ্রাম গাঁজা, পুলিশের জ্যাকেট ও নেমপ্লেট উদ্ধারের দাবি করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার দুপুরে পৌর শহরের জামতলা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক শিপলু পাবেল (২৮) সুনামগঞ্জ সদর থানার আরপিনগর গ্রামের মৃত সরাব মিয়ার ছেলে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে তানিয়া হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
জানা গেছে, র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিঞ্চন আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকরামুল আহাদের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল তাকে আটক করে।
র্যাব-৯ মেজর মাহফুজুর রহমান জানান, শিপলু পাবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে সুনামগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি ভুয়া পুলিশ হয়ে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার: র্যাব
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: ছাতকে যুবক গ্রেপ্তার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত ও হাইকোর্ট নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযেগে সুনামগঞ্জের ছাতকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার লুৎফুর রহমান শাওন ছাতক পৌরসভার গণক্ষাই গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি, মানিকগঞ্জে নারী গ্রেপ্তার
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাতক থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল শেখ শুক্রবার রাতে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেন।
মামলার এজাহার সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাইকোর্টের ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন শাওন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ ও পেইজ পরিচালনা করে গুজব প্রচার করেন।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান গ্রেপ্তারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: শেরপুরে শিক্ষার্থী আটক