সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ছয় টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার দুপুরে জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, মুদি দোকানদার অনজিৎ গোপ ও অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত গোপের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ আব্দুর রহিম এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড প্রার্থনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান।
রিমান্ড শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেক আসামির আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তিন আসামির দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের সুনামগঞ্জ আদালত পরিদর্শক মো. বদরুল আলম তালুকদার।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর তিন আসামিকে সিআইডি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
মৃত জোৎস্না জগন্নাথপুর থানার নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী। তিনি ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।
সিআইডি জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওষুধ কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সঙ্গে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক গোপন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোৎস্নার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। তখন জোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে সে তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলে। ওইদিন বিকেলে জোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এদিকে রাত গভীর হলে জোৎস্নার বাসায় যাওয়ার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে জোৎস্নাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেয় জিতেশ। এতে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত গোপকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। এরপর রাত গভীর হলে আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তখন জিতেশ ও তার দুই সহযোগী এনার্জি ড্রিংকস পান করে জোৎস্নাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর খন্ডিত লাশ উদ্ধার
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না তার পরিবারকে জানাবে বলে জানান। তখন জিতেশ ও তার সহযোগীরা জোৎস্নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে জোৎস্না দুই হাত, দুই পা ও বুক-পেটসহ ছয় টুকরা করে। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টন দিয়ে খন্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে তারা ফার্মেসি তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই লাশের খণ্ডিত অংশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় ও লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেনি।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামিদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। গত শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনজিৎ ও অসীত গোপকে গ্রেপ্তার করা হয়।