মানবাধিকার সংগঠন
অনলাইনে নারী হয়রানি রোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান মানবাধিকার সংগঠনগুলোর
অনলাইনে নারী ও মেয়েদের প্রতি যৌন হয়রানি রোধে ব্যাপক সচেতনতার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকারভিত্তিক সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
আগামীকাল রবিবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ইন্টারনেটে আপত্তিকর কনটেন্ট ফাঁস, চাঁদাবাজি, হ্যাকিং ও যৌন হয়রানির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মেয়ে ও নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানের অভাবে হয়রানির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার নিয়ে অত্যন্ত সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে হস্তান্তর করা: শাহরিয়ার
বক্তারা নারী ও মেয়েদের টার্গেট করে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইনগত সহায়তার জন্য বিভিন্ন সরকারি হেল্প ডেস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান শামীমা আখতারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তামান্না রহমান।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের ফেরদৌস আরা রুমি। জাতীয় কমিটির সদস্য করিম বক্স (সিরাজগঞ্জ), মঞ্জু আরা পারভীন (খুলনা), মো. এনামুল হক (জামলপুর), খন্দকার ফারুক আহমেদ (ময়মনসিংহ), সৈয়দা শামীমা সুলতানা (ঢাকা), মাহিন খান (মানিকগঞ্জ), মোস্তফা কামাল আকন্দ (আইআরডব্লিউডি-সচিবালয়) প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে হয়রানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তামান্না রহমান। বেসরকারি সংস্থা আইন ও শালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক গবেষণায় উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশেরও বেশি মেয়ে অনলাইনে পুরুষ বন্ধুদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হয়, ২৭ শতাংশ পরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক বা আত্মীয়দের কাছ থেকে এবং ১৮ শতাংশ অজানা প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হয়।
একটি বৈশ্বিক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫৮ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এবং অনেকে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগেন।
উপরন্তু, প্রতি তিনজন ভুক্তভোগী নারীর মধ্যে একজন নির্যাতনকারীর আইডিতে রিপোর্ট করেছেন। হয়রানির জন্য সবচেয়ে সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হলো ফেসবুক। ৩৯ শতাংশ মেয়ে সেখানে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এ ছাড়া ২৩ শতাংশ ইনস্টাগ্রামে, ১৪ শতাংশ হোয়াটসঅ্যাপে ও ৯ শতাংশ এক্সে (পুরোনো টুইটারে)।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চা করে যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলের পথ প্রশস্ত করেছে: হাস
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণার ভিত্তিতে ২২টি দেশের ১৪ হাজার কিশোর-কিশোরী, তরুণী ও নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
মঞ্জু আরা পারভীন বলেন, 'ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় আমাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
সৈয়দা শামীমা সুলতানা বলেন, 'ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি কারো সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। আমাদেরও ছবি তোলার জন্য নির্জন জায়গায় যাওয়া এড়ানো উচিত।’
ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, অনলাইন সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকারদের জন্য হেল্প ডেস্ক রয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন, হ্যালো সিটি অ্যাপ, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ এবং সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা জানাতে পারবেন।
শামীমা আক্তার অনলাইনে হয়রানি রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন। ভুয়া আইডি, হয়রানিমূলক পোস্ট, অডিও, ভিডিও ও অনুরূপ কনটেন্টের বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আয়োজকদের পক্ষে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হয়।
দিবসটি উপলেক্ষ শোভাযাত্রা, সেমিনার, কমিউনিটি ইভেন্ট, মেলা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়াসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা শান্তিপূর্ণ সমাজের ভিত্তি: গুতেরেস
সৌদি সীমান্তরক্ষীর গুলিতে শতাধিক ইথিওপিয়ান অভিবাসী নিহত: দাবি মানবাধিকার সংগঠনের
সৌদি আরবের সীমান্ত রক্ষীরা ইয়েমেন থেকে দেশে প্রবেশের চেষ্টা করা ইথিওপিয়ানদের উপর মর্টার নিক্ষেপ ও মেশিনগান দিয়ে গুলি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতাধিক নিরস্ত্র অভিবাসী নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সৈন্যদের হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং অভিবাসীদের প্রবেশের পথে মৃতদেহ ও সমাধিস্থলের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা 'হাজার হাজার' হতে পারে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদি আরবের দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উপর সেনাদের গুলি বর্ষণের বিষয়ে জাতিসংঘ এরই মধ্যে সৌদি আরবকে প্রশ্ন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৌদি সরকারের একজন কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন এবং অনির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর ভিত্তি করে করা’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি এই দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেননি। সীমান্তে অভিবাসীদের পাচার করে সপ্তাহে কয়েক হাজার ডলার উপার্জন করছে- ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ইথিওপিয়ান সৌদি আরবে বাস করছে। যাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ অনুমোদন ছাড়াই দেশটিতে প্রবেশ করেছে। ইথিওপিয়ার উত্তর টাইগ্রে অঞ্চলে দুই বছরের গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুব বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা সৌদি আরব, আদ্দিস আবাবার সঙ্গে আলোচনা করে হাজার হাজার ইথিওপিয়ানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৩৮ জন ইথিওপিয়ান অভিবাসী এবং তাদের চারজন আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল। তারা বলেছেন, সৌদি সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের উপর গুলি করেছে বা অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষদের উপর বিস্ফোরক ছুঁড়তে দেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রুপটি ২০২১ সালের ১২ মে এবং ২০২৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ৩৫০টিরও বেশি ভিডিও এবং ফটোগ্রাফ বিশ্লেষণ করেছে এবং অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে স্যাটেলাইট ধারণ করা কয়েকশ বর্গকিলোমিটার (মাইল) এলাকার চিত্রও পরীক্ষা করেছে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে মার্কিন কনস্যুলেটে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'শরণার্থী শিবির ও চিকিৎসা কেন্দ্রে মৃত ও আহত অভিবাসীদের দেখা গেছে। এ ছাড়া অভিবাসী শিবিরের কাছেই কবরস্থানগুলো কীভাবে বাড়ছে, সৌদি আরবের সীমান্ত নিরাপত্তা অবকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং সীমান্ত পারাপারের জন্য অভিবাসীরা বর্তমানে যেসব পথ ব্যবহার করছে তাও দেখা গেছে।’
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস -এর বিশ্লেষণ করা প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি থেকে ২৭ এপ্রিলের একটি স্যাটেলাইট ছবি সৌদি সীমান্তে ইয়েমেনের আল-রাকউয়ের কাছে অধিকার সংস্থাগুলোর চিহ্নিত করা একই তাঁবুর কাঠামো দেখায়। সীমান্তের ওপারে সৌদি আরবে দুই স্তরের বেড়া দেখা যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আল-থাবিতে অভিবাসী শিবির হিসেবে চিহ্নিত করা স্থানকে স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা চিত্রগুলোতেও দেখা যেতে পারে, যা গ্রুপের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। যে ক্যাম্পটি মূলত এপ্রিলের শুরুতে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের দুটি এলাকাতেই দেশটির হুথি বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি। জাতিসংঘ বলেছে, হুথি-নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন অফিস ‘পরিকল্পিতভাবে অভিবাসীদের সৌদি আরবে সরাসরি পাঠানোর জন্য পাচারকারীদের সহযোগিতা করে’ এবং সপ্তাহে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হুথিরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে রেখেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুথিদের রাজধানী থেকে উচ্ছেদ না করে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং হুথিদের মধ্যে লড়াই মূলত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ রিয়াদ যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজছে। এ ছাড়া যুদ্ধের বছরগুলোতে, হুথিরা এই পাহাড়ি অঞ্চলে সৌদি সীমান্ত জুড়ে একাধিক অনুপ্রবেশের দাবি করেছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরার সুযোগ দিতে সৌদির উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রদূতের অনুরোধ
ইথিওপিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা সৌদি আরব ও ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় নিজেদের আটক, নির্যাতিত এবং এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ইয়েমেন থেকে আসা অভিবাসীদের উপর সৌদি বাহিনী হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ বাড়ছে।
২০২২ সালের ৩ অক্টোবর জাতিসংঘের কাছ থেকে দেশটির কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলেছে, এর তদন্তকারীরা ‘সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আন্তঃসীমান্ত এলাকায় কামানের গুলি এবং ছোট অস্ত্রের গোলাগুলির অভিযোগ পেয়েছে। এতে ৪৩০ জনের মৃত্যু ও ৬৫০ জন অভিবাসী আহত হয়েছে।’
জাতিসংঘের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যদি কোনো অভিবাসী আটক হন তাহলে তাদের প্রায়শই লাইনে দাঁড় করিয়ে এবং পায়ের পাশ দিয়ে গুলি করে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এমনকি বুলেটটি কতদূর যাবে তা দেখার জন্য। এ ছাড়াও তারা হাতে বা পায়ে গুলি করতে পছন্দ করে কি না তাও জিজ্ঞাসা করা হয়।’ ‘এই ধরনের আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা পালানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য 'মৃতের ভান করেন' বলে জানিয়েছেন।’
সৌদি আরব সীমান্তে ‘পরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ ‘স্পষ্টভাবে খণ্ডন’ করে মার্চ মাসে জেনেভায় জাতিসংঘে দেশটির মিশনে একটি চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়াও চিঠিতে আরও বলেছে, জাতিসংঘ ‘সীমিত তথ্য’ সরবরাহ করেছে তাই এই ‘অভিযোগগুলো নিশ্চিত বা প্রমাণিত নয়।’
আরও পড়ুন: সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক 'ঠিক দিকেই এগোচ্ছে': ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শান্তিতে নোবেল পেলেন বেলারুশের আলেস বিলিয়াতস্কি ও রাশিয়া–ইউক্রেনের দুই মানবাধিকার সংগঠন
এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বেলারুশের কারাগারে বন্দি মানবাধিকারকর্মী আলেস বিলিয়াতস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।
শুক্রবার অসলোতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, বিচারকরা ‘প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের তিন অসামান্য চ্যাম্পিয়নদের’ সম্মান জানিয়েছেন।
অসলোতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বছরের বিজয়ীরা মানবিক মূল্যবোধ ও সামরিকবাদবিরোধী এবং আইনের নীতির পক্ষে তাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শান্তি ও জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, যা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
সংঘাতরোধ, কষ্ট লাঘব ও মানবাধিকার রক্ষায় যেসব দল ও ব্যক্তি নিয়োজিত থাকে তাদেরকে এই পুরস্কার দেয়া হয়।
গত বছরের বিজয়ীরা পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয়েছেন। রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতোভ ও ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা নিজেদের সংবাদ সংস্থাকে টিকে রাখতে লড়াই করছেন। এ লড়াই মূলত তাদের নীরব রাখতে সরকারি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে।
তারা গত বছর ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যা গণতন্ত্র ও স্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত’ রক্ষা করার জন্য তাদের প্রচেষ্টার জন্য সম্মানিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি আর্নাক্স
মানব বিবর্তনের ওপর গবেষণার জন্য এই বছরের চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সভান্তে প্যাবো। সোমবার সুইডেনের স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে নোবেল কমিটির সেক্রেটারি টমাস পার্লম্যান চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্সে অবদানের জন্য ফ্রান্সের অ্যালাইন অ্যাসপেক্ট, আমেরিকার জন এফ. ক্লজার এবং অস্ট্রিয়ার অ্যান্টন জেইলিঙ্গার নামের তিন বিজ্ঞানীকে এ বছরে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারি জেনারেল হ্যান্স এলেগ্রেন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
রসায়নে নোবেল পুরস্কার তিন বিজ্ঞানীকে সমান অংশে দেয়া হয়েছে। নোবেল প্রাপ্তরা হলেন- ক্যারোলিন আর. বার্টোজি, মর্টেন মেলডাল এবং কে. ব্যারি শার্পলেস।
ওষুধ প্রস্তুতে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন 'আলাদা হওয়া অনুগুলোকে একত্রিত করার' উপায় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তাদেরকে পুরস্কার দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
বুধবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল হ্যান্স এলেগ্রেন সুইডেনের স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে বিজয়ীদের ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেলেন ৩ বিজ্ঞানী
২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি আর্নাক্স। বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারি জেনারেল হ্যান্স এলেগ্রেন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
সোমবার অর্থনীতিতে ২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে নগদ ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯লাখ মার্কিন ডলার)। আগামী ১০ ডিসেম্বরে পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে। এ অর্থ পুরস্কারের প্রবর্তক সুইডিশ উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া একটি উইল থেকে অর্জিত। ১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেলে মারা যান।
আরও পড়ুন: ‘ আলাদা হওয়া অণুকে একত্রিত’ করার উপায় উদ্ভাবনের জন্য নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ না করতে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান
শ্রীলঙ্কায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর অবৈধ বলপ্রয়োগ বন্ধ করতে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়ার জন্য দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের শপথ নেয়ার একদিন পর শুক্রবার ভোরে কয়েক’শ সশস্ত্র সৈন্য প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে একটি বিক্ষোভ শিবিরে হামলা চালায়। এ সময় তারা বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করেন।
সরকারের এমন পদক্ষেপের কারণে নতুন সরকার আইনের শাসনের পরিবর্তে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করতে চায়-লঙ্কান জনগণের কাছে এমন বিপজ্জনক বার্তা যাবে বলে জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের মিত্র দিনেশ গুণবর্ধন
অভিযানে দুই সাংবাদিক ও দুই আইনজীবীর ওপরও সৈন্যরা হামলা করে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারী ও আইনজীবীসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচিত উঁচু স্বরে ও স্পষ্ট বার্তা পাঠানো যে তারা এমন প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারে না যেটি জনগণের অধিকার পদদলিত করে।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের দাবিতে শ্রীলঙ্কানরা কয়েক মাস ধরে রাজপথে বিক্ষোভ করছেন। এ সংকটের কারণে ২২ মিলিয়ন মানুষের এই দ্বীপ দেশে ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বিক্ষোভের মুখে গত সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন। তার পরিবার গত দুই দশকের অধিকাংশ সময় শ্রীলঙ্কা শাসন করেছে। তবে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে জনরোষের কারণে পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর আজ
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ‘রানা প্লাজা’ ধসের নয় বছর পূর্তি রবিবার। এই দিনটি স্মরণে মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
রবিবার সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নিহতের স্বরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও গার্মেন্টস এর মালিকদের ফাঁসির দাবি ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পরে বিভিন্ন সংগঠন রানা প্লাজার সামনে নানান দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
অবৈধভাবে নির্মাণ করা রানা প্লাজা ভবনটি ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। এই দুর্ঘনায় ভবনটিতে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যায়। প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
রানা প্লাজা মামলায় অগ্রগতি সামান্যই
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এবং বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আপিলের শুনানি শেষে ৩১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন
মামলার প্রধান আসামি রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা বর্তমানে কারাগারে এবং বাকি ৪০ জন জামিনে রয়েছেন।
লালমনিরহাটে ‘পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু’: মানবাধিকার সংগঠনের বিচার দাবি
লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্ত এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংগঠনটি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
শনিবার এমএসএফের পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,‘পুলিশ হেফাজতে অকথ্য অত্যাচারে ব্যক্তির মৃত্যু গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের হেফাজতে থাকা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। এমএসএফ সুষ্ঠু তদন্তের পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি করেছে।’
এর আগে লালমনিরহাটে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ হেফাজতে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
নিহত রবিউল ইসলাম খান (২৫) সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজিচওড়া গ্রামের দুলাল খানের ছেলে।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.রবিউল ইসলাম বলেন, জুয়া খেলার খবর পেয়ে পুলিশ সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাংলা বাজার এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করে। থানায় আসার পথে রবিউল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রংপুর হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতিকালে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, এসআই প্রত্যাহার
তবে রবিউলের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রবিউল জুয়া খেলেননি, তাই পুলিশ ভ্যানে উঠতে রাজি হচ্ছিল না। এ জন্য পুলিশ তাকে মারধর করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। রবিউল কীভাবে মারা গেছেন চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। তাই তাদের কাছে খোঁজ-খবর নিন। আমি এ বিষয় বলতে চাচ্ছি না।’
এদিকে রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতেই মহেন্দ্রনগর বাজারে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে অভিযুক্ত সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হালিমের শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশ ভ্যানে হামলা ও ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
পুলিশভ্যানে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, কনস্টেবল নিহত
শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাবকে নিষিদ্ধের দাবি ১২ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের
নির্যাতন, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-কে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন কর্মসূচি থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
গত বছরের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল জিন-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের কাছে এ দাবি জানিয়েছে চিঠি পাঠায় সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি প্রকাশ করে।
সংগঠনটি বলছে, ‘মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবের ব্যাপক নির্যাতনের (ঘটনা) নথিভুক্ত করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও এর সদস্যদের নির্যাতন, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে র্যাবের অভিযানে ‘জঙ্গি’ আটক
রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেসের যদি সদিচ্ছা থাকে যে তিনি শান্তিরক্ষীদের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করবেন তাহলে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো নির্যাতনের প্রমাণ-রেকর্ডযুক্ত কোনো সংস্থাকে মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকা নিশ্চিত করবেন।’
তবে দুই মাস আগে পাঠানো এ চিঠির বিষয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশন বিভাগ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এর আগে গেল বছরের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ‘অগ্রহণযোগ্য’: তথ্যমন্ত্রী
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তখন জানায়, মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচির অধীনে দেশটির ট্রেজারি বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এ ১২ সংগঠন হলো-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলেন্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।
আরও পড়ুন: র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাত ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন এবং ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের দুজন গ্রাহকের পক্ষে জনস্বার্থে রিটটি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার রিটটি দাখিল করেন।
আরও পড়ুন: ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ চেয়ে হাইকোর্টে রিট
রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার পল্লব। তিনি আরও জানান, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো ই-কমার্সভিত্তিক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কার্যকর নজরদারির অভাবের সুযোগে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্ট নামে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবিতে রিট করা হয়েছে।
রিটে উল্লেখ করা হয়, ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ প্রতিষ্ঠার মাত্র দু-এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন অফারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা মূলত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে এ অর্থ সংগ্রহ করে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এসব কোম্পানি বিপুল অর্থ ইতোমধ্যে বিদেশে পাচার করেছে।
আরও পড়ুন: ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে: ডিএমপি
ই-ওয়ালেট, গিফট কার্ডসহ আরও অন্যান্য অ-অনুমোদিত পদ্ধতিতে লেনদেন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ গ্রাহককে সর্বস্বান্ত করেছে। সরকারি দপ্তরগুলোর নাকের ডগায় এসব অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করেছে। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বছরের পর বছর নোটিশগ্রহীতাদের কার্যকর নজরদারির অভাবে এসব কোম্পানি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারি দপ্তরগুলোর তাদের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ব্যর্থতার ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ গ্রাহক যাদের বেশিরভাগই তরুণ আজ সর্বস্বান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সম্ভাবনা সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।
রিটে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে যাদের গাফিলতির কারণে লাখ লাখ গ্রাহক সর্বস্বান্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দুদকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত এসব কোম্পানির মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ বের করে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব কোম্পানিতে কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং গ্রাহকরা মোট কত টাকা দিয়েছে তা চিহ্নিত করা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে এবং তারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা কমিশনকে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ অনুযায়ী, ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ দায়িত্ব নেয়াসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি, অসম প্রতিযোগিতা রোধ, জনসচেতনতা তৈরি ইত্যাদি পদক্ষেপ নেয়া, জাতীয় ডিজিটাল বাণিজ্যনীতি, ২০১৮ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে হেল্প ডেস্ক অবিলম্বে চালু করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ই-কমার্স খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ জরুরি’
গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন এবং ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের দুজন গ্রাহকের পক্ষে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা, অর্থ আত্মসাত ও অর্থপাচারের বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জনস্বার্থে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পরও সরকারের তরফ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না নেয়ায় এই রিট করা হয়।
রোহিঙ্গাদের সাথে মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়েছে, দাতাদের স্বীকারের আহ্বান
রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় এক বিলিয়ন অর্থ জোগার করে দিচ্ছেন এমন দাতা দেশগুলোর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করা উচিত বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস।
স্বাস্থ্যসচিব ও মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও সহায়তাকারীকে সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা বাস্তবায়ন না করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।