শিল্প-ও-সংস্কৃতি
গ্যালারি অন হুইলস: ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রিকশা পেইন্টারদের কসমস ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা
ঢাকার রিকশা পেইন্টারদের একটি দলকে সম্মান জানিয়ে 'গ্যালারি অন হুইলস' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কসমস ফাউন্ডেশন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বারিধারার ব্যক্তিগত জাদুঘরে কসমস ফাউন্ডেশনের শিল্প শাখা গ্যালারি কসমসে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চলতি মাসের শুরুতে রিকশা ও রিকশা চিত্রগুলোকে ইউনেস্কো তার ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল আউসান জুনিয়র, কসমস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এবং কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু, সৈয়দ আহমেদ হোসেন, এস এ নূর আলী, মো. মনির হোসেন ও মোহাম্মদ সোলেমানসহ বিভিন্ন রিকশা চিত্রশিল্পী ও দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘ইউনেস্কোর ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি ঐতিহ্যের তালিকায় এই উল্লেখযোগ্য অন্তর্ভুক্তিকে সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য রিকশা চিত্রশিল্পীদের এবং কসমস ফাউন্ডেশনকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই বছর আমরা ঢাকায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী (স্বাধীনতা) কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে 'অ্যাডর্ন-এ-রিকশা'- শিরোনামের একটি অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। যা ছিল আমাদের দেশের আইকনিক বাহনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আমাদের সমৃদ্ধি ও ফিলিপিনো উৎসবের রং।’’
অনুষ্ঠানটি যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে এবং ফিলিপাইনের ‘আতি আতিহান’ উৎসবের মতো বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত লিও বলেন, এই অর্জন উদযাপনের জন্য বাংলাদেশেরও একটি রিকশা-থিমভিত্তিক বার্ষিক উৎসব হওয়া উচিত।
কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘যখন আমরা বড় হয়েছি, আমরা পেছনে প্রাণবন্ত ও অর্থবহ চিত্রকর্ম সম্বলিত রিকশা দেখেছি– এবং সবসময় উপলব্ধি করেছি যে এই কাজের উল্লেখযোগ্য শৈল্পিক মূল্য রয়েছে। আমি এনায়েতউল্লাহ খান ও কসমসকে অভিনন্দন জানাতে চাই এটি উপলব্ধি করার জন্য এবং আজ রাতে আমাদের সামনে এর গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য। এই শিল্প আমাদের জীবদ্দশায় বহুদূরে এগিয়ে যাবে। কারণ রিকশা ও রিকশাচিত্র যানবাহনের চেয়ে বেশি, ঢাকা ও এর জনগণের সঙ্গে এর এক ধরনের অনন্য ও চিরায়ত বন্ধন রয়েছে। এটি সেই সম্পর্কের সারমর্ম, যা সহজাতভাবে কখনই ফিকে হওয়ার নয়, ইউনেস্কো একেই স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আমরা আজ এখানে তা উদযাপন করছি।’’
আরও পড়ুন: ‘বিজয়’: বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম ও শিশু শিল্পীদের নিয়ে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আর্ট ইভেন্ট
‘বিজয়’: বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম ও শিশু শিল্পীদের নিয়ে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আর্ট ইভেন্ট
দেশের ৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে কসমস ফাউন্ডেশনের স্বনামধন্য শৈল্পিক শাখা গ্যালারি কসমস রাজধানীর কসমস সেন্টারের গ্যালারি কসমসে প্রখ্যাত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম এবং ভবিষ্যৎ চিত্রশিল্পীদের নিয়ে দিনব্যাপী এক মনোজ্ঞ আর্ট ইভেন্টের আয়োজন করে।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডিসেম্বরকে শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের যুদ্ধশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।
লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক শিল্পঈ সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। শুধু যে যুদ্ধ তা কিন্তু নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করতে অব্যাহত ছিল তাদের শৈল্পিক প্রচেষ্টা। তাদের মধ্যে একজন ষটের দশকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচিত বীরেন সোম।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস
মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গ্যালারি কসমস।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী বীরেন সোম।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য তুলে ধরতে প্রতিভাবান উদীয়মান চিত্রশিল্পীদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সংগ্রহশালা তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এসব শিল্পী।
আরও পড়ুন: একুশে পদক ২০২৩ বিজয়ী কনক চাঁপাকে গ্যালারি কসমসের সংবর্ধনা
গ্যালারি কসমসে শুরু হলো আর্টক্যাম্প ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’
ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী চায়না চিত্র ও ফটো প্রদর্শনী শুরু
চাইনিজ রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী চিত্র ও ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
ঢাকার চীনের দূতাবাস ও অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-চায়না অ্যালামনাই (অ্যাবকা) যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বাংলাদেশ-চীনের বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর নিসার হোসেন এবং সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াং হুই ও অ্যাবকার সাধারণ সম্পাদক ড. মো. সাহাবুল হক।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বিআরআই প্রকল্পের মধ্যেদিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের জনগণের মাঝে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন: মেলবোর্নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১৯ প্রতিষ্ঠান
নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ বিতর্ক: ক্ষমা চাইল পিপ্পা টিম
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত 'পিপ্পা' সিনেমায় ব্যবহৃত বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানটির বিকৃতি নিয়ে দুই বাংলায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর এবার ক্ষমা চেয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতারা।
সোমবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে প্রোডাকশন হাউস রায় কাপুর ফিল্মস কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহকপাট'গানটি এ আর রহমানের পরিবেশনের বিতর্কের বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ইশান খট্টর, মৃণাল ঠাকুর, প্রিয়াংশু পাইনুলি ও সোনি রাজদান প্রমুখ অভিনীত ছবিটি ১০ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধকে তুলে ধরা হয়েছে।
আরএসভিপি মুভিজ এবং রায় কাপুর ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিতে নজরুলের গান 'কারার ঐ লৌহকপাট' -এর রিমেক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: কারার ঐ লৌহকপাট বিতর্ক: কাজী নজরুল ইসলামের নাতনির প্রতিবাদ
অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানের রিমেক সংস্করণে অভিনয় করেছেন ভারতীয় গায়ক রাহুল দত্ত, তীর্থ ভট্টাচার্য, পীযূষ দাস, শ্রায়ী পাল, শালিনী মুখার্জি ও দিলাসা চৌধুরী।
গানটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ শ্রোতাদের পাশাপাশি নজরুল সংগীতশিল্পী ও ভক্তরা রিমেক নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ছবির নির্মাতারা বলেন, ‘আমরা শ্রোতাদের আবেগ বুঝতে পারছি। মূল রচনার প্রতি তাদের একটা অন্য আবেগ রয়েছে। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিকে ঘিরে নানা আলোচনা চলেছে চারিদিকে। পিপ্পা ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত সুরকাররা বলেছেন, গানটির উপস্থাপনাটি একটি আন্তরিক শৈল্পিক ব্যাখ্যা, যার পিছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না। এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের থেকে যাবতীয় স্বত্ব নিয়ে তবেই গানটির পর্যালোচনা করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রয়াত কল্যাণী কাজীর সই নিয়ে এবং অনির্বাণ কাজীকে সাক্ষী রেখে গানটির জন্য লাইসেন্স চুক্তির চিঠি উভয়ই নিয়েছি আমরা।’
নির্মাতারা বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল চুক্তিতে উল্লেখ করা শর্তাবলী মেনে চলার সময় গানের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এর পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘আমাদের মূল রচনা এবং প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত, রাজনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে যার অবদান অপরিসীম। এই অ্যালবামটি তৈরি করা হয়েছিল সেই নারী-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, যারা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য এবং তার স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের অনুভূতির কথা আমরা ভুলিনি।
এর আগে শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গানটির 'বিকৃতির' বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল,কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি মিষ্টি কাজী, নজরুল শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক, বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ, সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ‘কারার ঐ লৌহকপাট’: দুই বাংলায় তোপের মুখে এ আর রহমান
চুয়াডাঙ্গায় নামযজ্ঞের পঞ্চম দিনে মানুষের ঢল
চুয়াডাঙ্গায় তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের পঞ্চম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। জমে উঠেছে অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।
টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে মহানাম সংকীর্তন। প্রতি তিন ঘণ্টা অর্থাৎ এক প্রহর পরপর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি সম্প্রদায় পালাক্রমে অখণ্ড মহানামযজ্ঞের সংকীর্তন পরিবেশন করছে।
বার্ষিক এ উৎসবকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকাজুড়ে দেশি-বিদেশি গৃহস্থালি ও মনোহরি সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। পাশাপাশি নানা রকম মিষ্টির সঙ্গে তেলে ভাজা লোভনীয় সব খাবারও এখানে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভক্ত-অনুরাগী ও পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।
আয়োজকরা জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মহানাম সংকীর্তনের পঞ্চম দিনে সকাল থেকেই ঢল নামে মানুষের। দেশের অন্যতম বড় এই মহানামযজ্ঞ ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত
রাঙ্গামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত
দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাঙ্গামাটির বৌদ্ধ বিহার ও শাখা বন বিহারগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।
বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষুরা তিন মাসের বর্ষাবাসের শেষ দিনটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে উদযাপন করে।
প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। এরপর থেকে দীর্ঘ একমাস ধরে আয়োজন চলে প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উৎসবের।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে রাঙ্গামাটির বৃহত্তর রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রবারণা পুর্ণিমায় রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে পূর্ণার্থীর ঢল নামে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভোরে রাঙ্গামাটির রাজ বন বিহার প্রাঙ্গণে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের পিণ্ডদান ও প্রাতঃরাশ, মঙ্গল সূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশিল প্রার্থনা, মহাসংঘ দান, প্রদীপ পূজা, হাজার বাতি দান, ফানুস দানসহ বিভিন্ন দান অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রবারণা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমায় রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত রাখার দাবি বৌদ্ধ সমাজের
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বধর্ম প্রাণ দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ও শ্রদ্ধেয় ভন্তের প্রধান শিষ্য প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
এ সময় হাজার হাজার পূর্ণার্থী সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমাসহ অন্য নেতারা।
সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্যদিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা শেষ হবে।
উল্লেখ্য, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিনটি পালন করে আসছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
খাতা থেকে বাড়ির দেয়াল সবখানেই আঁকাআঁকি করতাম: কনক চাঁপা চাকমা
চলতি বছর শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা। পদকপ্রাপ্তি উপলক্ষে সম্প্রতি গ্যালারি কসমসের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তার আঁকা কয়েকটি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় গ্যালারি কসমসে। সেখানে ইউএনবিকে সাক্ষাৎকার দেন এই শিল্পী।
সাক্ষাৎকারটি ইউএনবির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
ইউএনবি: এর আগে দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু এবার মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় একুশে পদক পেয়েছেন। এই অনুভূতি কেমন?
কনক চাঁপা চাকমা: এটা বিশাল একটা ব্যাপার। এটার জন্য আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে দায়িত্ব আছে তা আরও বেড়ে গেছে।
ইউএনবি: কাপড়ে মায়ের করা নকশা দেখেই উদ্বুদ্ধ হওয়া। কিন্তু বুনন শিল্পে না গিয়ে রঙ-তুলি বেছে নেওয়ার পেছনে কি কোনো বিশেষ কারণ ছিল?
কনক চাঁপা চাকমা: মাকে দেখেছি ভেজিটেবল ডাই করতে। হলুদ, খয়ের, গাছের বাকল, গাছের পাতা থেকে রং করতেন। এগুলো আমার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। হয়তো ছোটবেলায় আমার মনের মধ্যে প্রথিত হয়েছিল এসব রং, ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা। সেই ভালো লাগার বহিপ্রকাশ দরকার। তারপর আমি ছবি আঁকা শুরু করলাম। হোম ওয়ার্কের খাতা থেকে বাড়ির দেয়াল সবখানেই আঁকাআঁকি করতাম। স্কুল জীবন শেষে বুঝতে পারলাম ভালোলাগা, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এটায় জায়গা। এরপর আমি বাবা-মাকে বলি আমি শিল্পী হব। এভাবেই পথ চলা শুরু।
আরও পড়ুন: একুশে পদক ২০২৩ বিজয়ী কনক চাঁপাকে গ্যালারি কসমসের সংবর্ধনা
একুশে পদক ২০২৩ বিজয়ী কনক চাঁপাকে গ্যালারি কসমসের সংবর্ধনা
২০২৩ সালের একুশে পদক বিজয়ী ও বিশিষ্ট শিল্পী কনক চাঁপা চাকমাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে বাংলাদেশের শিল্প ও শিল্পীদের সমর্থনকারী প্ল্যাটফর্ম গ্যালারি কসমস।
ঢাকার বারিধারার গার্ডেন গ্যালারিতে গ্যালারি কসমস আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গ্যালারি কসমসের পরিচালক তেহমিনা এনায়েতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক অঞ্জন চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী-শিক্ষাবিদ জামাল উদ্দিন আহমেদ, কসমস ফাউন্ডেশনের পরিচালক দিলশাদ রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
রাঙ্গামাটির দুর্গম পার্বত্য এলাকা তবলছড়িতে জন্ম নেওয়া কনক চাঁপা ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি মিড-আমেরিকা আর্টস অ্যালায়েন্স ফেলোশিপ লাভ করেন।
আরও পড়ুন: এসএম সুলতানের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলায় আয়োজন
ডিগ্রী শেষ করে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তার শৈল্পিক যাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং দেশের সমসাময়িক শিল্পপটের অন্যতম সফল শিল্পী হয়ে ওঠেন।
অনুষ্ঠানে গ্যালারি কসমসের পরিচালক তেহমিনা এনায়েত বলেন, ‘শিল্প আমাদের আবেগ, চিন্তাভাবনা, অনুপ্রেরণা ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। শিল্পের এই দর্শনগুলো কনক চাঁপা চাকমার কাজের মাধ্যমে আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে, যিনি আমার বোনের মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘কনক চাঁপাকে আজ বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার শিল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তার অনেক চিত্রকর্ম চাকমা সম্প্রদায়ের প্রাণবন্ত জীবনকে প্রতিফলিত করে।’
তেহমিনা বলেন, ‘আধা-বাস্তববাদী এবং বিমূর্ত শৈল্পিক শৈলীর সংমিশ্রণে, কনক তার সম্প্রদায়ের জীবনকে চিত্রিত করেছেন, বিশেষত নারীদের; এবং অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জয়ের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন- একজন শিল্পী এখনো একই সময়ে সামাজিকভাবে সচেতন ও ব্যাপকভাবে সফল হতে পারেন।’
আরও পড়ুন: শরৎ নাচে শুভ্র কাশে
কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব সাধুর হাট
বাউল সম্রাট মরমী সাধক লালন শাহের ১৩৩ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়া বাড়িতে তিন দিনের সাধুর হাট বসছে। অর্থাৎ, শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ও লালন মেলা।
এ উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির আখড়াবাড়ি বাউল-সাধু আর ভক্তদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে ১৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হয়ে একটানা ১৯ অক্টোবর (বৃহম্পতিবার) পর্যন্ত তিরোধান অনুষ্ঠান চলবে।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- এই অমর বাণীকে ধারণ করে সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে ইতোমধ্যেই আত্মার টানে দেশ-বিদেশের হাজারো সাধুগুরু ও ভক্ত দলে দলে এসে আসন পেতে বসেছেন লালন সাঁইজির আখড়ায়। মূল উৎসব শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। সাধু-ভক্তদের পদচারণায় জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে।
আখড়া বাড়িতে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে।
এদিকে, সোমবার বেলা ১২ টায় লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি এহেতেশাম রেজা।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সকল অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে লালন একাডেমি। এ ছাড়া এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ আয়োজনকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ায় মরা কালিগঙ্গা নদী তীরের লালন আখড়া বাড়িতে এখন সাজ-সাজ রব। আখড়াবাড়িতে রং করা, ধোয়া-মোছা এবং ভরাটকৃত কালী নদীর বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে আলোচনা সভা ও সংগীতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। দেশের প্রতন্ত অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা হরেক রকমের পণ্য নিয়ে মেলার পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই সাধু-গুরুদের ভিড় বেড়েছে। লালন একাডেমির নির্ধারিত স্থানে তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে দরদ ভরা গলায় গেয়ে চলেছেন লালনের গান। আবার কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদি বাউল ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব কথার আলোচনায়। এসেছেন দেশ বিদেশের নানা বয়সী দর্শনার্থীরাও।
আরও পড়ুন: কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব