বৈদেশিক-সম্পর্ক
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার আম উপহার
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য উপহার হিসেবে ৩০০ কেজি হাড়িভাঙ্গা আম পাঠিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকাল সোয়া ৫টার দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ৬০টি কার্টনে করে আমগুলো পাঠানো হয়।
প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার ত্রিপুরা রাজ্য সরকার এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য মৌসুমি ফল উপহার হিসেবে পাঠিয়ে থাকে। এর জবাবে ত্রিপুরা সরকার বাংলাদেশে উপহার হিসেবে তাদের সুস্বাদু ‘কুইন’ জাতের আনারস পাঠায়।
চলতি বছরের আম উপহার প্রক্রিয়াটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদারকি করা হয় এবং একজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আখাউড়ায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে আমের চালানটি হস্তান্তর করা হয়।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন আগরতলার জন্য আম পাঠানো হয়েছে। চালান ছাড়ের আগে সব শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছে।
আম-আনারসের এই মৌসুমি উপহার বিনিময় ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা হিসেবে সীমিত সময়ের জন্য ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে।
১৫৮ দিন আগে
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগে ‘নতুন সহযোগিতা’ প্রত্যাশা চীন ও কানাডার
চীন ও কানাডা বাণিজ্য বৈচিত্র্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের কাছে ‘ব্যাপক সহযোগিতা’ প্রত্যাশা করেছে। একই সঙ্গে দেশগুলো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠককালে চীন ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একথা জানান।
শুক্রবার (১১ জুলাই) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৩২তম এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে বৈঠককালে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার উদ্যোগে চীনের পূর্ণ সমর্থনের কথঅ জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া চিকিৎসা পর্যটন এবং পানি ব্যবস্থাপনার মতো অনেক অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে চীনের সাম্প্রতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের কথা স্মরণ করে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে টেক্সটাইল, জ্বালানি, হালকা প্রকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পড়ুন: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ অব্যাহত থাকবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে চীনের দেওয়া রাজনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি ও তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এই বিষয়ে চীনের সমর্থন কামনা করেন।
জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান তৌহিদ হোসেন।
পরে বিকালে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে এটি বাড়ানোর বিষয় প্রাধান্য পায়।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কানাডার সমর্থন দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পড়ুন: সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ঢাকা–ইসলামাবাদের সঙ্গে কাজ করছে বেইজিং: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
১৫৮ দিন আগে
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে: উপ-প্রেস সচিব
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার শুল্ক বিষয়ক বৈঠকের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। আলোচনায় উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় দুপক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলোচনা চলবে শুক্রবারও।
আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, আলোচনা অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ সময় উঠে আসে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শুরু হচ্ছে আজ
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
ঢাকায় অবস্থান করেও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিকম বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সিনিয়র প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
১৫৮ দিন আগে
নেতৃত্ব যার কাছেই থাকুক, দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি চায় চীন
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব যার কাছেই থাকুক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন ও জনজীবনের মানোন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে চীন।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা জরুরি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে কাজ করবে। পাশাপাশি, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত আলোচনার টেবিলে আনার আহ্বান জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই উদ্যোগ চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আস্থা ও আগ্রহ আরও বাড়াবে। বাংলাদেশি বন্ধুদের বলছি— চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।’
সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবণতা ছিল—প্রতিশ্রুতি দেই, বাস্তবায়ন করি না। তবে সরকার এখন সেই সংস্কৃতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। আশাকরি, আপনি (রাষ্ট্রদূত) বড় পরিবর্তন দেখবেন।’
বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ী সংগঠন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) আয়োজিত ‘চীন–বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে। এ সময়, শিল্প ও খাতভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিডা চেয়ারম্যান ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিভাগ ও দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সেমিনারে অংশ নেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের নেতার কৌশলগত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে 'সুবর্ণ জয়ন্তী' সামনে রেখে উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন, শিল্প ও সরবরাহ চেইন একীভূতকরণ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
সেমিনারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সড়ক ও সেতু, বন্দর, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, বাণিজ্য ও সেবা, রেলপথ ও বেসামরিক বিমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পানি ও পরিবেশ খাতভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বাজার বিশ্লেষণ, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ঢাকা–ইসলামাবাদের সঙ্গে কাজ করছে বেইজিং: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলো আরও সমৃদ্ধ হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্থনীতি স্থিতিশীল ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ক্রমশ উন্নত হচ্ছে—ফলে দক্ষিণ এশিয়ার একটি নতুন বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ।’
রাষ্ট্রদূত জানান, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী। তাদের দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা ও পর্যালোচনার আলোকে প্রকাশিত ১০টি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার উপকৃত হবে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ৩.৭ গুণ বেড়েছে। গত আগস্ট থেকে প্রায় ২০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। এসব চুক্তির সম্ভাব্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।
চট্টগ্রাম চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
বাহেরচর দ্বীপে চীনের ‘অ্যাগ্রিভোলটাইক্স ইকোনমিক জোন’ সংক্রান্ত দলিল সই হয়েছে। পাশাপাশি, মোংলা বন্দর এলাকায় চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়ে চলেছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন কেবল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই নয়, ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেও সমর্থন করে এবং বাংলাদেশ নিয়ে তাদের রয়েছে পূর্ণ আস্থা।
১৫৯ দিন আগে
সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ঢাকা–ইসলামাবাদের সঙ্গে কাজ করছে বেইজিং: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ‘কনক্রিট সহযোগিতার’ উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে চীন এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ও যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
‘আমরা এরইমধ্যে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, পানিসম্পদসহ ১২টি ক্ষেত্রে কনক্রিট সহযোগিতা চিহ্নিত করেছি। এ নিয়ে কিছু ফলোআপ হবে এবং আমরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে এ ঐকমত্য বাস্তবায়নে কাজ করছি,’ বলেন তিনি।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীতে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, সম্প্রতি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তিন দেশের—বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের—জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি উদ্যোগের অংশ।
‘আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রয়েছি। বহু বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি এটিকে তিন দেশের সাধারণ স্বার্থে একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখি,’ বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সহযোগিতার মূলনীতি হলো উন্মুক্ত থাকা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং পারস্পরিক উপকার নিশ্চিত করা। ‘আমাদের সহযোগিতা পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়া। এটি কোনো তৃতীয় দেশকে লক্ষ্য করে নয়। এটিই আমাদের বার্তা, বলেন এই কূটনীতিক।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শুরু হচ্ছে আজ
বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ী সংগঠন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) আয়োজিত ‘চীন–বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনারে এই বক্তব্য দেন তিনি।
সেমিনারে ‘সিইএবি ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধিরা এবং দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান অবকাঠামো, সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, সামুদ্রিক বিষয়, তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গভীরতর সহযোগিতার জন্য একাধিক খাত চিহ্নিত করে।
চীন–দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো’র ৯ম আসর এবং চীন–দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা বৈঠকের ৬ষ্ঠ আসরের ফাঁকে গত ১৯ জুন কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি ‘অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়।
২৬ জুন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো নতুন জোট গঠনের বিষয় নেই এবং এটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিরুদ্ধে কিছু নয়।
‘আমরা কোনো জোট গঠন করছি না। এটি ছিল সরকারি পর্যায়ের একটি বৈঠক, রাজনৈতিক পর্যায়ে নয়… এখানে কোনো জোট গঠনের উপাদান ছিল না,’ গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি।
বৈঠকটি ভারতের বিপক্ষে কোনো কৌশল ছিল কি না— এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা হোসেন বলেন, ‘এটি অবশ্যই কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে নয়। আমি আপনাদের তা নিশ্চিত করে বলতে পারি।’
১৫৯ দিন আগে
একজন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তকে রক্ষা করতে পারবে না ভারত: শফিকুল আলম
ভারত যেন বিবেক ও নৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে—এ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে বিশ্বাসযোগ্যভাবে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে আর রক্ষা করার সুযোগ ভারতের নেই।
বুধবার (৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ভারতের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বিবেক ও নৈতিক স্পষ্টতা নিয়ে কাজ করে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের যে আইনগত অনুরোধ জানিয়ে আসছে, তা মেনে নিতে ভারত অস্বীকার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থান আর গ্রহণযোগ্য নয়। আঞ্চলিক বন্ধুত্ব, কৌশলগত হিসাব কিংবা কোনো রাজনৈতিক উত্তরাধিকার—কোনো কিছুই বেসামরিক নাগরিকদের পরিকল্পিত হত্যার অজুহাত হতে পারে না।’
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে প্রেস সচিব বলেন, ‘যখন বিবিসির মতো একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ উদ্ঘাটনে তাদের পূর্ণ তদন্ত সক্ষমতা কাজে লাগায়, তখন বিশ্বকে তা আমলে নিতেই হয়।’
তিনি জানান, বিবিসির ইনভেস্টিগেশন ইউনিট বিবিসি আই এরইমধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত অনুসন্ধানে যে অডিও প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, তা ২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভ দমন অভিযানে শেখ হাসিনার ভূমিকার ‘চূড়ান্ত সত্য’ প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে—এটি এক বিষয়; কিন্তু বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, সম্পদসমৃদ্ধ এবং ফরেনসিক দক্ষতায় পারদর্শী বিবিসির মতো একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যখন স্বাধীনভাবে তদন্ত করে এসব অভিযোগ অকাট্যভাবে তুলে ধরে, তখন তা ভিন্ন মাত্রা পায়।’
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং, যা বিশ্বমানের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা যাচাই করেছেন, তা প্রমাণ করে যে এ সহিংসতা ছিল না তাৎক্ষণিক বা দুর্ঘটনাবশত। এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, অনুমোদিত হত্যাকাণ্ড।’
তিনি বলেন, ‘এখন আর প্রমাণ শুধু গল্পনির্ভর বা পক্ষপাতদুষ্ট নয়। এটি ফরেনসিক, যাচাইযোগ্য এবং উপেক্ষা করার মতো নয়।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘যুক্তরাজ্য—যাদের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এসব বর্বরতা উন্মোচন করেছে—বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমরা চাই, ভারত এই মুহূর্তটির গুরুত্ব অনুধাবন করুক এবং ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাক।’
‘বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার দাবি করে, আর ভুক্তভোগীরা প্রত্যাশা করে বিচারিক সমাপ্তি। বিশ্বকে এখন দেখাতে হবে, কোনো নেতা—তিনি যতই ক্ষমতাশালী হোন না কেন—আইনের ঊর্ধ্বে নন,’ বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
১৫৯ দিন আগে
ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শুরু হচ্ছে আজ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক দ্বিতীয় দফার আলোচনা আজ বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার ভিত্তিতে আরও অগ্রগতি অর্জনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২৭ জুনের প্রথম দফার আলোচনায় অর্জিত অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে দ্রুত একটি চুক্তি সম্পন্ন করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস (ইউএসটিআর) আয়োজিত এ আলোচনা ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন, যিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত থেকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।
এছাড়া বাণিজ্য সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে এরইমধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন। শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ফলপ্রসূ আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।
গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেন মার্কিন পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শুল্ক হার সংশোধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভারসাম্য স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব দেশ আমেরিকার রপ্তানি ও শ্রম বাজারে বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।
১৫৯ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে কি ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারাচ্ছে বাংলাদেশ?
এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারিয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বড় শুল্কের বোঝা পড়বে দেশের পোশাকখাতের ওপর, যেখানে এ খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ৯০ দিন সময় পেলেও কেন সুবিধা করতে পারল না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির বলেন, ‘এতদিন আমরা উইন-উইন অবস্থান নিয়ে ভেবেছিলাম, সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। ৯০ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয়নি। যদিও আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তবে বাংলাদেশকে যা করার এক সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে।’
ভিয়েতনাম বড় অঙ্কের শুল্ক কমিয়ে এনেছে। এখন যদি ভারত-পাকিস্তান আলোচনার টেবিলে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হয় এবং বাংলাদেশ যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর
শুল্ক কমানো প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চিঠির জবাব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্যঘাটতি তৈরি হয়েছে তা থেকে সরে আসতে হবে। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যেকোনো ধরনের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
উচ্চ শুল্কহার এড়াতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে তার ওপরও উচ্চ শুল্কহার আরোপ হবে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, তার তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যদি বাংলাদেশ এই শুল্কের জবাবে আরও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাধা দূর করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেও এত স্বল্প সময়ে শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিশেষ করে শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয় বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘এলপিজি, সয়াবিন ও তুলা নিয়ে বাংলাদেশ যেসব সুবিধার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে তা দেশটির কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় পোশাক কোম্পানিগুলো আগাম পোশাক মজুদ করে রেখেছে। এতে করে সামনে পোশাকের অর্ডার কমে যাবে। সমাধানে আসতে হাতে যা সময় আছে তা একেবারেই কম। এতে করে নতুন সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের জন্য লাভজনক শুল্ক চুক্তির আশায় ঢাকা: শফিকুল আলম
তবে শুল্ক কমে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দিতে আজই ঢাকা ছাড়ছেন বাণিজ্য সচিব। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের (ইএসটিআর) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল শুল্ক প্রসঙ্গে আবারও আলোচনা হবে।
‘ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে’ শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭.৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ওই সময়ের মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ।
এ সময়ে বাংলাদেশের ওভেন পোশাকের ২৫.৯৩ শতাংশ, নিট পোশাকের ১১.৭১ শতাংশ ও হোম টেক্সটাইলের ১৬.১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা পোশাক খাতে আসবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান গতকাল (মঙ্গলবার) বলেন, ‘আগামীকালের (বুধবার) মিটিংয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। মিটিং ফলপ্রসূ হলে শুল্ক কমে আসার বড় সম্ভাবনা আছে।’
শামীম জানান, যদিও ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক ২৭ শতাংশ, তবে ট্রাম্প ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর আলাদা ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করতে পারেন। যদি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতায় পৌঁছায় তাহলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। কিন্তু চীন আর ভারতের ওপর উচ্চ শুল্কহার বহাল থাকলে, বিশেষ করে চীনের ওপর শুল্কারোপ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের এখনো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলের আশা অর্থ উপদেষ্টার
১ আগস্টের পর শুল্ক বিষয়ে আর কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র রাখবে কিনা সোমবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। তবে আলোচনার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
১৫৯ দিন আগে
এলডিসি উত্তরণের আগে অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ: রাষ্ট্রদূত মিলার
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের পথে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সহযোগিতা ও সহনশীলতা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকায় সহায়তা ঘোষণা করার সময় ইইউ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা মানে হলো সম্মান, মর্যাদা ও সহনশীলতা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা মানুষকে জীবনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনসাধারণের আস্থা পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে।’
বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশ সরকারকে ২ কোটি ৩৫ লাখ ইউরো দিয়েছে। এই অনুদান দেশের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দেয়, এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করে।
যদিও পোশাক খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চাকরি হারানোসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ইইউ দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশের উন্নত সামাজিক সুরক্ষা খাতের অংশীদার, যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইইউ সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ইউরো অনুদান দিয়েছে, যার মধ্যে ২ কোটি ইউরো এসেছে জার্মানি থেকে। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত দেড় কোটি ইউরো প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই অর্থায়নের মাধ্যমে সরকার ‘গভর্নমেন্ট-টু-পারসন’ (জিটুপি) ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে ৯০ শতাংশের বেশি নগদ ভাতা সরাসরি উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে দিয়েছে।
পড়ুন: গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশা প্রকাশ করেছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত: খসরু
একক নিবন্ধনব্যবস্থা (সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি) চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সংযুক্ত করা হয়েছে—যা স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, পুনরাবৃত্তি কমানো ও সঠিকভাবে লক্ষ্য অর্জনকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
‘ইম্পলয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম‘ বা কর্মস্থল দুর্ঘটনা পেনশন স্কিম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে, যা কর্মক্ষেত্র বা যাতায়াতকালে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের আজীবন পেনশন দিচ্ছে। এ স্কিমটি এখন এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনসহ আরও বিভিন্ন খাতে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো একটি কারখানার ১ হাজার ২০০-এর বেশি বেকার শ্রমিক সরকারের বেকারত্ব সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারকে ২০২৬ সালের পর নতুন করে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।
ইইউ জানিয়েছে, সংশোধিত কৌশলটিতে উন্নত লক্ষ্যমাত্রা, নগর ও জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও দক্ষ ব্যবস্থাপনা, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা উচিত।
এছাড়াও, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করতে বাস্তব পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইইউ।
১৬০ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের জন্য লাভজনক শুল্ক চুক্তির আশায় ঢাকা: শফিকুল আলম
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি এমন শুল্ক চুক্তির প্রত্যাশা করছে যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি পাঠানোর পর তিনি এমন কথা বলেন।
‘ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি শুল্ক চুক্তির প্রত্যাশায় রয়েছে, যা আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে, বলেন তিনি। ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও এই দলে রয়েছেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘সোমবার বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি চিঠি পেয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।’
‘বাংলাদেশ দল এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফা আলোচনা করেছে,’ বলেন প্রেস সচিব। তিনি জানান, ৯ জুলাইয়ের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন শেখ বশিরউদ্দিন।
ট্রাম্প তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘আমরা আপনাদের বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আগামী বহু বছর একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আপনি যদি আপনার এখনো বন্ধ থাকা বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুলে দিতে চান, এবং আপনার শুল্ক, অশুল্ক নীতিমালা ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তুলে দেন, তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প বলেন, এই শুল্কহার বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করবে।
‘আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা হতাশ হবেন না,’ অধ্যাপক ইউনূসকে লেখা চিঠিতে বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
চিঠিতে তিনি জানান, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের যেকোনো পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে, যা সব খাতভিত্তিক শুল্কহার থেকে আলাদা হবে।
শুল্ক এড়াতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পাঠানো পণ্যের ওপর উচ্চতর শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।
‘একটি জিনিস পরিষ্কার হতে হবে, ৩৫ শতাংশ শুল্কহারটি আমাদের দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনি জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি বা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা দ্রুত, পেশাদার ও নিয়মিত পদ্ধতিতে সব অনুমোদন দিতে সম্ভাব্য সবকিছু করব—অর্থাৎ, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই,’ বলেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলের আশা অর্থ উপদেষ্টার
১৬০ দিন আগে