বৈদেশিক-সম্পর্ক
জি-২০ আলোচনায় বাংলাদেশের অবদানের জন্য ব্রাজিলের কৃতজ্ঞতা: সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেছেন, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংযোগ রয়েছে এবং কেবল পুনরুজ্জীবিত বহুপাক্ষিকতা, সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই তা মোকাবিলা করা সম্ভব।’
সোমবার ব্রাজিলের জি-২০ সভাপতিত্বের অগ্রাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ' ব্রাজিল বিশ্বাস করে গ্রুপটির এমন একটি জাতিগত সংস্থা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা উচিত যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মূল বৈষম্যগুলো মোকাবিলা করেই নিজের উদ্দেশ্যগুলোতে সফল হবে।’
এ সময় জি-২০ আলোচনায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক শাসন কাঠামো অভিযোজন ও বিকশিত করার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘জি-২০ জোটটি নিজেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের ঠিক পরপরই তৈরি হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি মূল্যবান কাঠামো হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক শাসন কাঠামো নিয়ে গুরুতর আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে জি-২০ এর নিজস্ব অবদান রাখার সময় এসেছে।’
ভিয়েরা আরও বলেন, বিশ্বে বর্তমানে যেসব সমস্যার সমাধান সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করার জন্য জি-২০ বিশ্বের অন্যতম সেরা প্ল্যাটফর্ম বলা যায়। জি-২০ বহুপাক্ষিক শাসনের প্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত সংস্কারের জন্য যে সমর্থন দরকার, তা অর্জনে একটি অমূল্য হাতিয়ার হতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে ৫২ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন।
ব্রাজিলের মন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখিয়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি, ঢাকায় আমার উপস্থিতি তারই সাক্ষ্য দেয়।’
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের কাছ থেকে জি-২০-র সভাপতির দায়িত্ব পায় ব্রাজিল।
প্রেসিডেন্ট লুলার নেতৃত্বে ব্রাজিল ২০২২ সাল থেকে ৪টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তৃতীয় দেশ (ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ব্রাজিল এবং আগামী বছর দক্ষিণ আফ্রিকা) হিসেবে এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বৈষম্য বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের দিক থেকে সবক্ষেত্রে জি-২০ এর এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে ব্রাজিল।
জি-২০ জোটের সভাপতি হিসেবে ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং টেকসই গ্রহ নির্মাণ’ নীতির অধীনে রাষ্ট্রপতি লুলা তিনটি বিষয়ে সাধারণ অগ্রাধিকার দিয়েছেন- (১) সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই; (২) শক্তি রূপান্তর এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের প্রচার এবং (৩) বৈশ্বিক শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার।
সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাগুলো দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন ভিয়েরা।
তিনি বলেন, ‘ক্রমাগত ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য; বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতিসহ সশস্ত্র সংঘাত; জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক বিপর্যয়; বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও ঋণের দুর্বলতা; খাদ্য ও জ্বালানির দামে উচ্চ অস্থিরতা এবং জলবায়ু সংকট তাদের মধ্যে অন্যতম।’
ভিয়েরা আরও বলেন, ‘যদিও এই সংকটগুলো আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে তবে সমানভাবে প্রভাবিত করে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোই তাদের ফল ভোগ করে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও, দরিদ্রতম ব্যক্তিরাই সবসময় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
ব্রাজিল বিশ্বাস করে যে জি-২০ হলো এমন একটি ফোরাম যা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সম্মিলিত সমাধানকে উৎসাহিত করতে বিশেষভাবে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের জনসংখ্যা এবং জিডিপিতে সম্মিলিত অংশ রাখার পাশাপাশি এর বৈচিত্র্যময় সদস্যপদের কারণে এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বব্যাপী এজেন্ডা গঠনে গ্রুপটির অনন্য এবং প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য, ব্রাজিল বিশ্বাস করে, জি-২০কে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করতে হবে।
ব্রাজিল বিশ্বাস করে, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (ইউএনএফসিসিসি) এবং এর প্যারিস চুক্তির অধীনে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে জি-২০ এর অর্থনীতি-বিস্তৃত প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা এবং আর্থিক খাতের নতুন করে জড়িত হওয়া উচিত।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) নিশ্চিত করেছে যে বিশ্ব একটি জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ভিয়েরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে মানবজাতির হাতে কেবল এই দশকের শেষ পর্যন্ত সময় রয়েছে। এটি এমন একটি পরিণাম যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, বাস্তুতন্ত্র ও অবকাঠামোর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির।
তিনি বলেন, যেভাবে অর্থনীতির কাঠামো এবং আর্থিক ক্ষেত্রগুলো একত্রিত ও পরিচালিত সেক্ষেত্রে গভীর ও ব্যাপক রূপান্তর ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক হুমকির পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে লড়াই করতে হবে মানব সমাজকে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী তিন-চতুর্থাংশ গ্রিনহাউস গ্যাসের (জিএইচজি) নির্গমনের জন্য দায়ী এমন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে অংশীদারিত্ব, উচ্চ স্তরের সমন্বয় এবং নতুন নীতি ঐকমত্যের জন্য অনুঘটক হতে পারে জি-২০ জোট।
এর আগে আজ তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ব্রাজিল ও প্রেসিডেন্ট লুলার প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে জেনে আমি আনন্দিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট লুলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি ও অগ্রাধিকার, বিশেষ করে উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ-যুক্তরাষ্ট্রের গেটি ইমেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংক্রান্ত ফুটেজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিজ্যুয়াল মিডিয়া সংস্থা গেটি ইমেজের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত ৫ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে গেটি ইমেজ অফিসে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং গেটি ইমেজের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া প্যাসিফিক টিভি অ্যান্ড সেলস ডিরেক্টর অ্যারান বার্চেনো সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি জরুরি: নসরুল হামিদ
এ সময় ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গেটি ইমেজেরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ করে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদটি প্রচার হয়। এছাড়াও, মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ছবি ও সংবাদ প্রকাশ করে। এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে গেটি ইমেজ, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভকে এসব অমূল্য দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে সহযোগিতা করবে।
এর ফলে, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার সক্ষমতা অর্জন করবে।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানালেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কিউবার রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন বাংলাদেশের ২ চিকিৎসা বিজ্ঞানী
কিউবার রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও জাপানের ঔতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যান্ড লোকাল ইনফেকশাস ডিজিজেজ-এর ভিজিটিং রিসার্চার ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর।
এ বছরের ১ এপ্রিল কিউবায় রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত তারা।
কিউবার ভারাদেরো শহরে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেদেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাদের হাতে ‘কার্লোস জে. ফিনলে অর্ডার’ তুলে দেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী এডওয়ার্ডো মার্টিনেজ ডায়েজ।
‘কার্লোস জে. ফিনলে অর্ডার’ বিজ্ঞানে গবেষণায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক। এর আগে কিউবার রাষ্ট্রপতি এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করেন।
ইয়েলো ফিভারের আবিস্কারক ও নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত প্রথম কিউবান নাগরিক কার্লোস জে. ফিনলের নামে কিউবান সরকার এই পদকটি প্রবর্তন করেছেন।
বিজ্ঞানে অবদানের জন্য কিউবার সরকার প্রতি বছর দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের ‘কার্লোস জে. ফিনলে অর্ডার’-এ সন্মানিত করে থাকেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জর্জ পি. স্মিথও পদক লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউনেস্কো পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: মহিবুল হাসান
পদক প্রাপ্তির পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল বলেন, ‘চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীর দ্বৈতসত্তা বজায় রাখাটা এদেশে বিশেষ করে খুবই চ্যালেন্জিং। কিউবার সরকারের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। কারণ এ ধরনের স্বীকৃতি সমস্ত কষ্টকে ভুলিয়ে দিয়ে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যোগায়।’
উল্লেখ্য, ‘ন্যাসভ্যাক’ নামক হেপাটাইটিস বি’র একটি নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস ২০১৯ সালে অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল ও ডা. আকবরকে কিউবান ও জাপানি কো-রিসার্চারদের সঙ্গে একাডেমি অব সাইন্সেসের সর্বোচ্চ পদক ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ দেয়। এ ছাড়াও অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল ২০২১ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেসর সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বাস গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন।
‘ন্যাসভ্যাক’ ছাড়াও অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যন্সার চিকিৎসায় স্টেম সেল এবং হার্বাল মেডিসিন নিয়ে গবেষনা করছেন।
আরও পড়ুন: 'ট্রি অব পিস' পুরস্কার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার
জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রবিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান এ সম্ভাবনার কথা জানান।
এর আগে দুই দেশের পক্ষে সামগ্রিক সহযোগিতা বিষয়ে 'টেকনিক্যাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট' সই করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম, ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, বাংলাদেশে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্ডো দিয়াস ফারসে এবং উভয় দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানালেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। আমাদের মধ্যে খুব সফল আলোচনা হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক ব্রাজিলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কর মওকুফ ও অন্য পোশাক রপ্তানিতে কর হ্রাসের অনুরোধ জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে বাংলাদেশে স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চলে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনসহ নানামুখী বিনিয়োগে এবং আইটি পার্কগুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এমনকি পশ্চিমা এইড-ওয়ার্কারদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে ইসরাইলের তোয়াক্কা না করার সংকট নিয়েও কথা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফরের সম্ভাবনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা, এন্টার্কটিকা কাউন্সিলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের কাজ ও গবেষণার সুযোগ দান এবং ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশকে ব্রাজিলের সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরা তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হবে।
এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্রাজিল থেকে পশু আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শুল্কজনিত সুবিধা দিতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
যৌথ সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরসঙ্গীসহ তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রদত্ত ইফতার ও নৈশভোজে যোগ দেন।
এ দিন সকালে ঢাকায় অবতরণের পর দুপুরে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর মন্ত্রী ভিয়েরা গাজীপুরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শন ও বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জি২০ এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে ব্রাজিলের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোর ওপর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার রাতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সম্মানে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এফবিসিসিআই আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে যোগদান শেষে রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানালেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কোসার-বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উভয় পক্ষ একমত প্রকাশ করেন।তারা মনে করেন, এই চুক্তির প্রচেষ্টা বাংলাদেশ, ব্রাজিল ও অন্যান্য মার্কোসার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যবসার সুযোগ বাড়াবে এবং বেসরকারি খাতের যোগাযোগ জোরদার করবে, যা সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন বাড়াতে অবদান রাখবে।
বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব হয় মার্কোসার-বাংলাদেশ পিটিএ নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কোসার বা সাউদার্ন কমন মার্কেট মূলত আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে নিয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্লক। এর আগে সহযোগী সদস্য থাকা বলিভিয়া ২০২৩ সালে পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মাউরো ভিয়েরা ও হাছান মাহমুদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক মৌলিক চুক্তি সইকে স্বাগত জানান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্রাজিল থেকে এই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সফর।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দৈত্যের দল বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বৈঠকে বাংলাদেশ-ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উদ্যোগ এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
কৃষি, পশুসম্পদ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি রূপান্তর এবং কারিগরি সহযোগিতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বিনিময় বাড়ানোর গুরুত্বের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুই দেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সই হতে যাওয়া ক্রীড়া সহযোগিতাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের আলোচনা সম্পন্ন হওয়ায় মন্ত্রীরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান।
প্রস্তাবিত সমঝোতাপত্রটি দীর্ঘ সময় ধরে লালিত জনসাধারণের মধ্যকার স্থায়ী বন্ধনের প্রতিফলন।
বাংলাদেশসহ ব্রিকসের জন্য গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কথা স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান।
গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে ব্রিকসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে বলে আশ্বাস দেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক জোরদার করতে রবিবার সকালে ঢাকায় আসেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাউরো ভিয়েরাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি রবিবার বিকেলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুও ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেন হাছান মাহমুদ।
আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মাউরো ভিয়েরা গাজীপুরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ফ্যাসিলিটিজ এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শন করবেন।
সোমবার বিকেলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে জি-২০তে ব্রাজিলের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে একটি বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল ৩টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিল ব্রাজিল সরকার।
ব্রাজিল উভয় দেশের উন্নয়ন, সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন এবং দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক অব্যাহত রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাজিল-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট লুলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন।
গত বছর বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
সোমবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
তাকে বিদায় জানাতে ঢাকা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দ্বিপক্ষীয়) ড. নজরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ
নাবিকদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারের করতে আজ রবিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রভাবশালী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২ দিনের সরকারি সফরে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আজ বিকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাউরো ভিয়েরাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
আরও পড়ুন: ৭ ও ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ৪ সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা
হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ব্রাজিলের এই মন্ত্রী।
আজ বিকাল পৌনে ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ২ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের পর ২ দেশের মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ফলাফল নিয়ে যৌথভাবে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুও ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন: আশা করি পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রবিবার সন্ধ্যায় হাছান মাহমুদ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১০টায় শুরু হবে বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মাউরো ভিয়েরা গাজীপুরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শন করবেন।
সোমবার বিকালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে জি-২০-তে ব্রাজিলের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে তার একটি বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে। বিকাল ৩টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
ব্রাজিল বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানি করতে আগ্রহী, যার দাম পড়বে প্রায় ৫০০ টাকা প্রতি কেজি।
ব্রাজিলের রপ্তানি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১২৬টি দেশে গরুর মাংস বিক্রি করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। চীন ও হংকং ব্রাজিলের গরুর মাংস রপ্তানির জন্য শীর্ষ দুটি গন্তব্য হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনে ইন্দোনেশিয়া ও আইওএমের সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
নাবিকদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সোমালিয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ আব্দুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে আলোচনা ও চাপসহ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যারা অপহরণ (হাইজ্যাক) করেছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নাবিকরা ভালো আছে। তাদের খাবার-দাবারেরও কোনো অসুবিধা নেই। তারা কেবিনে আছেন। আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে, আমরা আশা করছি শিগগিরই তাদের মুক্ত করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: আশা করি পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
দস্যুদের ওপর চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেই জাহাজের আশেপাশে বিদেশি জাহাজও প্রস্তুত আছে। আলোচনার পাশাপাশি অপহরণকারী (হাইজ্যাকারদের) ওপর নানামুখী চাপও রয়েছে। দিনক্ষণ বলা সম্ভবপর নয়, তবে এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
নাবিকদের ছুটির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাহাজে যারা চাকরি করেন ঈদের আগে পরে হিসেব করে তাদের ছুটি হয় না। তারা যান ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য। এই জাহাজ যদি অপহরণ (হাইজ্যাক) নাও হতো, ঈদের আগে জাহাজ ছেড়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল না।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দৈত্যের দল বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন করুন: জাতিসংঘে মিয়ানমারকে বাংলাদেশ
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এরই মাঝে রাখাইন রাজ্যে পুনরায় শুরু হওয়া সশস্ত্র সংঘাত উক্ত এলাকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আয়োজিত এক উন্মুক্ত বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন জাতিসংঘের রাজনৈতিক এবং শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের পরিচালক লিসা ডাউটন।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও সভায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ‘রাখাইনে সাম্প্রতিককালে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনে ইন্দোনেশিয়া ও আইওএমের সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি প্রত্যাবাসন ইস্যুতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সই করা দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাডাও, রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে সফলভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ এবং আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ এর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা জরুরি। যা মূলত মিয়ানমারের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিহিত।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাগুলোর সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া
রাষ্ট্রদূত মুহিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের উপস্থিতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা, এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ বাস্তবায়নের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং রাখাইনে সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময়ে গৃহিত চুক্তি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দেন।
পাশাপাশি তিনি মিয়ানমারের অন্য সব জাতিগোষ্ঠির মতো রোহিঙ্গারাও যেন সমাজে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে লক্ষ্যে উপযুক্ত এবং টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যথাযথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার কথা উল্লেখ করে মুহিত রাখাইন পরিস্থিতির প্রতি নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি পূর্নাঙ্গ ও টেকসই সমাধানে দ্রুত ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।
সভায় বক্তব্য প্রদানকারী অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে সম্প্রতি সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে রাখাইন সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য; সব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ ও আসিয়ানের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।
১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলদেশ যে মানবিক নেতৃত্বের নিদর্শন রেখে যাচ্ছে বক্তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্র সচিবের
'ইন্ডিয়া আউট' ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশের সঙ্গে 'দৃঢ় ও গভীর' সম্পর্কের কথা জানাল ভারত
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে শক্তিশালী ও গভীর করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে দৃঢ় ও বহুমুখী বলে বর্ণনা করেছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল 'ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন' সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে এই বিবৃতি দিয়েছেন।
অর্থনীতি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন, যোগাযোগ ও জনগণের মধ্যে বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের বিস্তৃত পরিসর উল্লেখ করে ভারত-বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের অনেক ক্ষেত্র তুলে ধরেন জয়সওয়াল।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্য বর্জনে বিএনপি দেশের অর্জন ধ্বংস করতে চায়: কাদের
তিনি বলেন, 'আপনারা যেকোনো মানবিক প্রচেষ্টার নাম বলুন, তা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
অংশীদারিত্বের গতিশীলতার উপর আরও জোর দিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘এতেই বোঝা যায় যে অংশীদারিত্ব কতটা প্রাণবন্ত এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত ও চীন যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
আশা করি পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যারা নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে বলে প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গাজায় ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন ব্রিটিশ নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করি পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ফিলিস্তিনিদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে গাজায় নিষ্পাপ শিশু ও নারীসহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।
ড. হাছান বলেন, ‘এমনকি ত্রাণকর্মীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এটা কল্পনার বাইরের ঘটনা। আমরা আশা করছি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। তারা জাতিসংঘের প্রস্তাবটিও বিবেচনায় নিচ্ছে না।
দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের মাধ্যমে গাজার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাতজন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা শোক করছেন।
নিহতদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ, একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন পোল্যান্ড, একজন মার্কিন-কানাডিয়ান ও একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক রয়েছেন। নিহতদের কেউ কেউ যুদ্ধ, ভূমিকম্প ও দাবানলের পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সব আন্তর্জাতিক ফোরাম ও এর বাইরে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি এবং বেসামরিক জীবন ও অবকাঠামো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার জানিয়ে মাহমুদ আব্বাসকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
ন্যায়বিচার, শান্তি ও সম্প্রীতি সমুন্নত রাখা ইসলাম ও সব ধর্মের মূল শিক্ষা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এটিকে সব সংঘাত ও দুর্ভোগের প্রতিষেধক বলে বিবেচনা করেন।
তিনি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের লাগামহীন গণহত্যায় শিশু, নারী ও পুরুষসহ নিরীহ মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য ফিলিস্তিনের সরকার ও ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯ মার্চ আপনার দূত এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আমাকে লেখা আপনার চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করছি। গাজায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি জানি এবং এ নিয়ে আপনার গভীর উদ্বেগকে সমর্থন করছি।’
চিঠিতে বলা হয়, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে অবমাননা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির লঙ্ঘন।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে পরিকল্পনাটি এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কোনো বাস্তব পথ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এর লক্ষ্য গাজায় ফিলিস্তিনিদের বৈধ জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা এবং ভূমির ওপর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ চিরস্থায়ী করা।’
আরও পড়ুন:৭ ও ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ৪ সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা
এমন প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘গাজার যেকোনো অংশ দখলে ইসরায়েলের যেকোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করছি আমরা।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীদের তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা হবে না, গাজার ভূখণ্ড হ্রাস করা হবে না, ইউএনআরডব্লিউএ'র ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের ক্ষমতার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে না এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হবে না।
তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি সামরিক উপায়ে এই সংঘাতের সমাধান নয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের আদেশের ভিত্তিতে চলমান সংকট সমাধানে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময় এসেছে, যা কেবল ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের পাশাপাশি বসবাসের মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রের সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দখলদারিত্ব ও গণহত্যার শিকার একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই দখলকৃত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা অনুভব করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সুতরাং, আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করছি এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পক্ষে সমর্থন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আপনার বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
আরও পড়ুন: নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত ও চীন যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী