ইউএনবি আয়োজিত ‘লাইট অ্যান্ড লেন্স’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সম্প্রতি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে ফিরে আসার জন্য সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন তিনি। ‘আমি ঘরোয়া মৌসুমের শুরুতে দুর্দান্ত শুরু অপেক্ষায় রয়েছি যাতে জাতীয় দলের নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি।’
আশরাফুল ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সময় ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার জন্য পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ক্রিকেটে ফিরে আসলেও এখনও জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। তিনি ২০২০ সালে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর হয়ে খেলার সুযোগ পেলেও হতাশাজনক নৈপুণ্য দেখান।
আরও পড়ুন: আশরাফুল শিগগিরই বড় ইনিংস খেলবে: সারোয়ার ইমরান
তবে টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ এ সেঞ্চুরিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও একবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চান। প্রায় দুই মাস ধরে কোনো ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন নেই। আগামী মার্চ থেকে ক্রিকেট বোর্ড এ আয়োজন শুরু করতে পারে। ‘তাই, এর আগে নিজেকে তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। শুরুতে আমি ফিটনেস প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করব এবং সেইসাথে আমার নৈপুণ্যের দিকে নজর দেব।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের একসময়কার পোস্টার বয় খ্যাত আশরাফুল বেশ কিছু ঐতিহাসিক রেকর্ডের মালিক। ‘দেশের হয়ে অনেক বড় বড় জয়ে আমি অবদান রেখেছি। ওই জয়গুলো নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। আমি এখনও জাতীয় দলে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছি। আমি জানি এটা অনেক কঠিন, তবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন: আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আশরাফুল
বাংলাদেশ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পরে টানা ৪৭ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি। সেই খরা কাটে ২০০৪ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে আশরাফুলের করা ৩২ বলে ৫১ রানে ভর করে জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচে মুখ্য ভূমিকা ছিল তার। ওই ম্যাচে দেশের হয়ে ১০০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি।
আশরাফুল তার ৬১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ছয়টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯০ রানের ইনিংস রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-২০১২-তে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তার খ্যাতি পড়তির দিকে যেতে শুরু করে। অপরাধ স্বীকার করে নিলেও পরবর্তীতে ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। পরে ২০১৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে আসলেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। ‘আমি আরও ৩-৪ বছর ক্রিকেট খেলতে চাই। এখন আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর দিচ্ছি। আমি যদি ঘরোয়া লিগগুলোতে ভালো করতে পারি তবে নির্বাচকরা আমাকে জাতীয় দলে খেলানোর কথা ভাবতে পারবেন।’
আরও পড়ুন: নিলামে উঠছে না আশরাফুলের ব্যাট
আশরাফুল বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে। টাইগাররা আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে পারলে টেস্টে একই ধরনের সাফল্য নিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
আশরাফুল বলেন, ‘একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্ষেত্রে আমরা একটি শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছি। কোভিড-১৯ মহামারিতে তিনটি ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতেছি আমরা। আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগ পয়েন্ট টেবিলের আমরা এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নিতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটেও আমরা একই অবস্থানে যেতে পারি। আমি মনে করি আরও বেশি বেশি টেস্ট খেলতে পারলে টেস্টেও আমরা একই কাজ করতে পারব।’
ক্যারিবীয় সাবেক পেসার ফ্র্যাঙ্কলিন রোজের ‘দুর্বল বাংলাদেশ দল’ হিসেবে করা কটূক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, টাইগাররা ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ এবং তার আগে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজসহ বেশ কয়েকটি ম্যাচে তাদের হারিয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে তার এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
আরও পড়ুন: দল না পাওয়া আশরাফুল বিপিএলের আগে আরেকটি টি২০ লিগ চান
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেও আমাদের কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গো-হারা হেরেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশ দল এতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তাদের বড় বড় তারকারা যোগ দিলেও সিরিজটি হারাবে তারা। এর আগে তারা তাদের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছিল সেইসময়ও আমরা তাদের হারিয়েছি।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই তিনটি জয় টাইগারদের বিশ্বকাপ সুপার লিগের ৩০ পয়েন্ট অর্জনে সহায্য করেছে। আশরাফুল বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে এই পয়েন্টগুলো বাংলাদেশের লিগের শীর্ষ সাতটি দলে থাকতে সহায়তা করবে যারা ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে।’
আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
খেলা থেকে অবসর নেয়ার পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘অল্প বয়সেই আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম এবং সারা জীবন জুড়েই আমি ক্রিকেট নিয়ে আছি। তাই, খেলোয়াড়ি জীবনের শেষেও আমার ক্রিকেটের সাথে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে।’