প্রাণী অধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার মধ্যেই ভারতের উচ্চ আদালত জাল্লিকাট্টু (ষাঁড়-মানুষের লড়াই) খেলাকে অব্যাহত রাখার অনুমতি দেওয়ার রায় দিয়েছেন। এটি দেশটির দক্ষিণ রাজ্য তামিলনাড়ুতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে উদযাপিত হয়।
বৃহস্পতিবার এই রায় দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকেরা।
এসময় পাঁচজন বিচারক বলেছেন যে রাজ্য সরকার পশুদের ব্যথা ও কষ্ট কমাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে, দেশে খেলাধুলা এবং অন্যান্য ষাঁড়ের দৌড় অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো আদালতে আবেদন করেছিল যে জাল্লিকাট্টু একটি রক্তের খেলা ও বিপজ্জনক। জনাকীর্ণ এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ষাঁড়গুলো প্রায়ই তাদের আরোহী ও পথচারীদের আক্রমণ করে।
শতাব্দী পুরনো এই খেলাটি তামিলনাড়ুতে জানুয়ারি মাসে চার দিনের পোঙ্গল ফসলের উৎসবের সময় অত্যন্ত জনপ্রিয়, যেখানে শত শত ষাঁড় একটি উন্মুক্ত আনন্দ উৎসবে প্রতিযোগিতা করে।
ড্রামের বাজনা ও জনতার উল্লাসের মধ্যে একজন মানুষ একটি বড় ষাঁড়ের পিঠের উপর লাফিয়ে ওঠে এবং ষাঁড়টির কুঁজে শক্তভাবে ঝুলে থাকে।
যদি সে ৩০ সেকেন্ড বা তিনটি লাফ বা ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) দূরত্ব যাওয়া পর্যন্ত ষাঁড়টির কাধে টিকে থাকতে পারে, তবে তার রান্নার হাঁড়ি, কাপড়, সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ির মতো পুরস্কার জেতেন।
পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস (পিটা) -এর ভারতীয় মুখপাত্র পূরবী জোশিপুরা বলেছেন, আদালতের এই রায় ‘আমাদের দেশকে বিশ্বের চোখে আরও পশ্চাৎপদ হিসেবে দেখাবে।’
পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস, একটি বিশ্বব্যাপী প্রাণী অধিকার সংস্থা। এটি ভারতের শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করে দেশে এ ধরনের খেলাধুলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
জোশিপুরা বলেন, মানুষ ও পশু মারা যাওয়া ও আহত হওয়া সত্ত্বেও আদালত এ রায় দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১০৪ জন পুরুষ ও শিশু এবং ৩৩টি ষাঁড় মারা গেছে। আরও মৃত্যু ঠেকাতে অন্যান্য দেশগুলো এই ধরনের খেলা নিষিদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে।’
এর আগে ২০১৪ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে জাল্লিকাট্টু প্রাণীদের অধিকার এবং নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করেছে।
দুই বছর আগে ফেডারেল সরকার জাল্লিকাট্টু ও গরুর গাড়ি দৌড় অব্যাহত রাখার অনুমতি দেয়। প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো তখন এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়।
পরে, তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারও একটি আইন প্রণয়ন করে জানায় যে তারা প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা জালিকাট্টুকে চালিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার, শীর্ষ আদালত ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের পদক্ষেপকেই বহাল রেখেছে।