স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে রিয়াল মাদ্রিদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। এবার দলটির কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা দিয়ে ম্যাচের রেফারি হেসুস হিল মানসানোকে কাঠগড়ায় তুলেছেন সাবেক স্প্যানিশ রেফারি ও বর্তমানে ফুটবল বিশ্লেষক মাতেউ লাহোস।
রবিবার রাতের ম্যাচটিতে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের যে পারফরম্যান্স ছিল, তাতে হিল মানসানোকে আরও কঠোর হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন লাহোস। এ নিয়ে মুভিস্টার প্লাসের একটি অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি করায় হিল মানসানোর সমালোচনা করেন তিনি।
লাহোসের দৃষ্টিতে, দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে অনায়াসে (এদুয়ার্দো) কামাভিঙ্গাকে মাঠছাড়া করতে পারতেন হিল মানসানো। সামান্য কারণে (বার্সেলোনা গোলরক্ষক) ভয়চিয়েখ স্টান্সনিকে লালকার্ড দেখালেও ভিনিসয়ুসের সম্ভাব্য লালকার্ডের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন রেফারি।
ভিনিসিয়ুসের ঘটনাটি দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও যখন মাঠের মধ্য থেকে আবেদন ওঠে, তখন রেফারি চাইলে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন বলে মনে করেন লাহোস।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, আপনাকে (সিদ্ধান্ত নিতে) সহযোগিতা করতে ভিএআরের মতো প্রযুক্তি রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি সিদ্ধান্ত নিতেই দেরি করছেন এবং ঘটনাগুলো আপনি সঠিকভাবে ধারণা করতেই পারছেন না—এটি উদ্বেগের বিষয়।’
‘সুপার কাপের ফাইনালে আট সদস্যের যে দল ছিল, রেফারিংয়ে তাদের (মোট) অভিজ্ঞতা ২০০ বছরের বেশি। আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না।’
আরও পড়ুন: রিয়ালকে ৫ গোল দিয়ে সুপার কাপ জিতল ১০ জনের বার্সেলোনা
স্টান্সনির লালকার্ডের সিদ্ধান্তটি কতটুকু বিবেচনাপ্রসুত ছিল, তা নিয়ে সংশয়ে এই ফুটবল বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার।
‘ওই মুহূর্তে (কিলিয়ান) এমবাপ্পের পড়ে যাওয়াটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আপনি গোল করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, সেখানে তো কোনোভাবেই পড়ে যেতে পারেন না। এটা তো (স্প্যানিশ) ফুটবলের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান।’
ম্যাচের একপর্যায়ে বার্সা ডিফেন্ডার জুল কুন্দের গোড়ালিতে পেছন থেকে বুট দিয়ে পাড়া মারেন ভিনিসিয়ুস। লা লিগার আইন অনুসারে সেটি হলুদ কার্ড পাওয়ার মতো শাস্তি হলেও আগেই একটি হলুদ কার্ড দেখা ভিনিকে দ্বিতীয়বার শাস্তি দেননি রেফারি। অথচ, আইনটি মানলে ২৪ বছর বয়সী এই ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডকে তখন মাঠ ছাড়তে হয়।
এ বিষয়ে লাহোস বলেন, ‘(একটি কার্ড দেখার পর) আপনি কোনোভাবেই নিজেকে ওই অবস্থায় ফেলতে পারেন না। অবশ্য ভিডিও দেখলে বোঝা যায়, ভিনিসিয়ুস বলের দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে ওই কাণ্ড ঘটান। এটি নিয়ে আপনি (রেফারি) হয়তো একটু দ্বিধায় পড়তে পারেন, কিন্তু কামাভিঙ্গার ঘটনাটি ছিল একেবারেই রেফারিংয়ের অ-আ-ক-খ। এটি কোনোভাবেই (হলুদ কার্ডের শাস্তির বাইরে) হতে পারে না।’
আরও পড়ুন: ধ্রুপদী ফুটবলের রাতে গৌরবময় সময়ে ফেরার ইঙ্গিত বার্সেলোনার
উল্লেখ্য, প্রথমার্ধে গাভিকে ডি-বক্সের মধ্যে ফাউল করে বার্সাকে পেনাল্টি দেন কামাভিঙ্গা, সঙ্গে হলুদ কার্ডও দেখেন তিনি। এরপর হলুদ কার্ডের শাস্তি মাথায় নিয়েও গোল করতে এগিয়ে যেতে থাকা লামিন ইয়ামালকে পেছন থেকে টেনে ধরে ফাউল করেন এই ফরাসি মিডফিল্ডার। এ সময় বার্সেলোনার খেলেয়াড়রা কামাভিঙ্গাকে দ্বিতীয় হলুদকার্ড দেখানোর আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি রেফারি হিল মানসানো। এমনকি, ভিএআরের সাহায্যও নেননি তিনি।
এসব নিয়ে হিল মানসানোর দক্ষতার ওপর প্রশ্নবোধক চিহ্ন টেনে লাহোস বলেন, ‘এক-দুই বছর রেফারিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা একটি ছেলে বা মেয়ে যুবা ফুটবলের ম্যাচগুলোতে দায়িত্ব পালন করে থাকে; কিন্তু এখানে, এল ক্লাসিকোর মতো একটি ম্যাচে রেফারিদের ২০০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে এ ধরনের ভুল একেবারেই কাম্য নয়।’