শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘হাইব্রিড’ এশিয়া কাপের জন্য ১৭-সদস্যের জাতীয় দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘোষিত দলের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া।
মাহমুদুল্লাহ কি আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন— এশিয়া কাপ থেকে তার বাদ পড়া এই প্রশ্নটিই সামনে নিয়ে এসেছে।
তাকে কেনো বাদ দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোথায় কোন খেলায় অংশগ্রহণ করবে তা বিবেচনায় রেখে দল গঠন করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচকের এই মন্তব্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকে মাহমুদুল্লাহকে সরাসরি বাদ পড়ার ঘোষণা নেই, একই সঙ্গে এই মন্তব্য তার দলে থাকার কোনো নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না।
ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহর সুযোগ কতটুকু, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মিনহাজুল বলেন, ‘আমরা আপাতত এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণা করেছি। বিশ্বকাপের দল নিয়ে পরে ভাবা যাবে।’ জাতীয় দলে মাহমুদুল্লাহর ভবিষ্যৎ কেমন তার ইঙ্গিত এই মন্তব্যেই পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করেছেন তামিম ইকবাল
দেশের মাটিতে এ বছর অনুষ্ঠিত হওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মাহমুদুল্লাহকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর আর জাতীয় দলে তিনি কোনো সুযোগ পাননি। এই পরিস্থিতি মাহমুদুল্লাহর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন তৈরি করছে।
শনিবার মিরপুরে দল ঘোষণার সময় মিনহাজুল বলেন, ‘দল চূড়ান্ত করার আগে আমরা টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়কের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’
এ দিকে নানামাত্রিক নাটকীয়তার পর গত শুক্রবার সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইনজুরিজনিত অনিশ্চয়তার কারণে তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর তিনি দায়িত্ব নিলেন।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেই সাকিব মাহমুদুল্লাহকে তার দলে অন্তর্ভুক্ত না করার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় মাহমুদুল্লাহর স্থান নেই।
উদ্ভুত পরিস্থিতি নিশ্চিত করছে যে মাহমুদুল্লাহ লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং নির্ভরতার যে স্বাক্ষর রেখে আসছিলেন, তার ওপর নির্ভর করে আবার জাতীয় দলে তার জায়গা পাওয়ার আশা শেষ হয়ে গেছে।
অথচ তিনি লোয়ার অর্ডারে অসংখ্যবার উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। লোয়ার অর্ডারে যারা মাহমুদুল্লাহর জায়গায় ব্যাটিং করেছেন, তারা কখনোই তার মতো পারফর্ম করতে পারেননি। ফলে মাহমুদুল্লাহর বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার দাবি অত্যন্ত জোরালো ছিল।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ ক্রিকেট স্কোয়াড ঘোষণা করল বিসিবি, বাদ পড়লেন মাহমুদউল্লাহ
ক্যারিয়ারের ২১৮ ওয়ানডের মধ্যে ৮১ ম্যাচে তিনি ৭ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। এই পজিশনে তার ব্যাট থেকে ৩৪ দশমিক ৭১ গড়ে এসেছে ১ হাজার ৫৯৭ রান— এই পজিশনে আর কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের এতটা ভালো করার রেকর্ড নেই। ৬ নম্বরেও তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান। এই পজিশনে ৭৩ ম্যাচে ৩৩ দশমিক ৬৬ গড়ে তিনি করেছেন ১ হাজার ৭১৭ রান। এই রেকর্ড বিবেচনায় নিলেও তিনি ছিলেন ৬ নম্বরের যোগ্যতম ব্যক্তি।
লেট-অর্ডারে মাহমুদুল্লাহর যে ব্যাটিং রেকর্ড, গত ৫ বছরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান তা অতিক্রম করা দূরে থাক, কাছেও যেতে পারেননি। এতসবের পরও মাহমুদুল্লাহকে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা একই সঙ্গে বিশ্বকাপেও তার উপস্থিতিকে অনিশ্চিত করে দিয়েছে।
মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত একজন ক্রিকেটারকে বাংলাদেশ দল থেকে এইভাবে বাদ দেওয়া কি ঠিক হলো— এই প্রশ্নের উত্তরটা আপাতত তোলা থাকুক সময়ের হাতে।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব