ক্রিকেটার হিসেবে দুই দশকেরও বেশি সময় এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক হিসেবে প্রায় এক দশক কাটানোর পর বিসিবির নতুন সভাপতি হয়ে ফিরেছেন ফারুক আহমেদ।
দায়িত্ব পেয়েই ফারুক গণমাধ্যমে বলেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে বোর্ডের মধ্যে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা, যা গত এক দশক ধরে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে জর্জরিত।
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে বিসিবিতেও। বিসিবি সভাপতির পথ থেকে নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগের পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বিসিবির জরুরি সভায় দায়িত্ব পান ফারুক।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে ধৈর্য্য ধরে সাংবাদিকদের একের পর এক পশ্নে উত্তর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: পাপনের পদত্যাগ, বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ
সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি হিসেবে নিজের নিয়োগ এবং ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে নিজের অতীতের কথা তুলে ধরে ফারুক বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বিত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।’
আমাদের দেশের ক্রিকেটে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তা অর্জনে যথাসাধ্য চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
‘বাংলাদেশের মতো সম্ভাবনাময় একটা দেশের যতটা করার দরকার ছিল, আমরা ততটা পারিনি। আমাদের সাফল্য একদম কম নেই। তবে সুনির্দিষ্টি কিছু জায়গায় আমাদের আরও উন্নতি করার দরকার ছিল, আমরা পারিনি। আমাদের দায়িত্ব হবে, এই সিস্টেমটাকে পুনর্গঠন করা।’
আগের বোর্ডের অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক কাজ করা যায় না, অনেক বাইরের চাপ থাকে। আশা করব যে, এবার আমি সভাপতি থাকার অবস্থায়, যতটুকু সম্ভব, এটা সুন্দর সিস্টেম দাঁড় করাতে চাই।’
‘একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমি পদত্যাগ করেছিলাম। আমার কাছে তাই এটিই সবচেয়ে বড় প্রাধান্য পাবে যে, সিস্টেম তৈরি করতে চাই।’
নতুন বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই যারা ক্রিকেট ভালোবাসে এবং ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে চায়, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ১৮ কোটি মানুষের দেশে, আমাদের খেলোয়াড়, দর্শক, আপনারা (সংবাদমাধ্যম), সবাই এত বেশি খেলাপাগল ও ক্রিকেটপাগল, সেখানে অনেক উপাদান ঢুকে যায় এবং ক্রিকেট বোর্ড অনেক গ্ল্যামরাস হয়ে যায়। সবাই এটার অংশ পেতে চায়। আমি চাইব, আমাদের প্রথম প্রাধান্য হবে ক্রিকেটের উন্নতি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশ এমন দুর্নীতি হয়েছে, এটা আমরা সবাই জানি। আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষ। প্রতিটি সংস্থায় যে দুর্নীতির কথা শুনেছি, ক্রিকেট বোর্ড এটির বাইরে নয়। যদি এরকম কিছু থাকে, অবশ্যই আমরা খোঁজ নেব। দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। কেউ যদি এটা বলে, আমি বিশ্বাস করব না। তবে একটা সিস্টেম চালু করতে হবে, যেখানে এসব (দুর্নীতি) আমরা কমাতে পারব।’
‘আমার মেয়াদ কতদিন হবে, এটা জানি না। তবে আপনাদেরকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমার সময়কাল যতদিন থাকবে, ততদিন সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এই জিনিসগুলোর খেয়াল রাখা।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে সরে আমিরাতে গেল নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হবে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করা। আমি মুখে অনেক কিছু বললাম, অনেক স্বপ্ন দেখালাম, কিন্তু দেখতে গিয়ে যদি দেখেন যে, কথার কাছাকাছি কিছু আমি করতে পারিনি, তাহলে তো হবে না। এজন্য কথা কমিয়ে দিয়ে, ক্রিকেটের জন্য যে জায়গাগুলি গুরুত্বপূর্ণ, ওই জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’
ক্রিকেটে যথেষ্ট কৌশলগত দক্ষতা না থাকলেও দল নির্বাচনে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতেন। তবে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফারুক।
অবশ্য দল নির্বাচন নিয়ে মাঝেমধ্যে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন বলেও এসময় ইঙ্গিত দেন তিনি।
সভাপতি বলেন, ‘আমি নির্বাচকদের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেব।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি রিশাদ হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেটের দীর্ঘ ফরম্যাটে তিনি উপযুক্ত হবেন। তবে আমি আমার প্রস্তাব নির্বাচকদের স্পষ্ট করে বলব না।’
এর আগে, টাইগারদের প্রধান কোচ হিসেবে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ফারুক। সভাপতি হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আগের মতামত পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
হাথুরুসিংহের ভবিষ্যতের ব্যাপারে ফারুক বলেন, ‘চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তিটা কী, সেটা আমি ঠিক জানি না। আমি আগের জায়গাতেই আছি। আমি যা বলেছি, সেটা থেকে সরে যাইনি। এখন আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জিনিস দেখতে হবে।’
‘তবে আমিই একমাত্র ডিসিশন মেকার হওয়া উচিত নয়। হয়তো আমার ওপর দায়িত্বটা বেশি। কারণ, আমি সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু অন্যদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।’