স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে অপরিকল্পিত নিলামের মাধ্যমে চিরস্থায়ী ইজারার ব্যবস্থা করে প্রকৃতি ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আন্তদেশীয় ভূমির পাথর নিলামে দেয়া হলে সীমান্তে বসবাসকারী আদিবাসী, বাঙালিসহ অসহায় মানুষদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এছাড়া সীমান্তে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
এদিকে, আন্তদেশীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ভূমি নিলামে দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার করার আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সীমান্তে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই ভারত থেকে বর্ষা মৌসুমে নালা দিয়ে বালু ও পাথর ভেসে আসছে। এতে কিছু মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। অন্যদিকে সীমান্তে বসবাসকারী অসহায় মানুষজন ঢলে আসা বালু-পাথর নেট দিয়ে সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তাদের বাধ্য করে অল্প দামে এগুলো কিনে নেয় স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, গত ৮ জুন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বালু-পাথর মহাল ইজারা, খাশ কালেকশন প্রদান বন্ধসহ পাথর কোয়ারিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ আন্তর্জাতিক সীমানারেখার বালু-পাথরকে স্তুপিকৃত পাথর দেখিয়ে সেগুলো উন্মুক্ত নিলামদানের অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠান। ওই চিঠির আলোকে জেলা প্রশাসক অনুমতি না দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের পরামর্শে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার পত্র দেন।
গত ২২ জুলাই চিঠি দেয়ার এক দিনের মধ্যেই খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক উন্মুক্ত নিলামে এগুলো বিক্রির জন্য তাদের দুজন প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে চিঠি দেন। অভিযোগ রয়েছে, এই কাজগুলো দ্রুততার সাথে করিয়ে নেয় একটি সিন্ডিকেট।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, ‘উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় নিলাম স্থগিত করা হয়েছে। আমি যা করেছি ঠিক করেছি। আমি ইউএনও। কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক আমি বুঝি।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের নিলামের প্রস্তাবটি আমি বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে পাঠাই। খনিজ সম্পদ ব্যুরো বালু-পাথর উন্মুক্ত নিলামের দ্রুত অনুমোদন দিয়ে নিলামের জন্য তাদের দুজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করে। তবে আজ কী হয়েছে আমার জানা নেই।’
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ডিও লেটার প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বালু-পাথর অপসারণের জন্য বলেছি। এগুলো নিলাম বা বিক্রির কথা বলিনি। প্রশাসন বা খনিজ সম্পদ ব্যুরো কেন এমন বিতর্কিত নিলামের উদ্যোগ নিল সেটা তারাই জানে।’