জ্যৈষ্ঠের টানা কয়েকদিনের তীব্র গরম ও দিনে ও রাতে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের জনজীবন।
বুধবার দুপুরে তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি নিতে রিকশাচালকেরা গাছের নিচে গাড়ি রেখে বিশ্রাম করতে দেখা গেছে।
এদিকে, গরম থেকে বাঁচতে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে যাদের বাইরে যেতে হতে হচ্ছে তাদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে গরমে।
সবচেয়ে কঠিন অবস্থা পার করছেন দিনমজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, রাতে লোডশেডিং হওয়ায় মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। মাত্রাতিরিক্ত গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা-বাড়িতে দৈনন্দিন কাজ করতেও বেগ পেতে হচ্ছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।
জাহানারা নামে এক নারী বলেন, বাড়ির প্রধান ব্যক্তি সারাদিন কাজ করে ফিরে খেতে বসেছে। এখন বিদ্যুৎ নেই। তাই হাত পাখা দিয়েই তাকে বাতাস করছি। কখন বিদ্যুৎ আসবে তার ঠিকঠিকানাও নেই। সেই সঙ্গে যে তাপ পড়ছে, তাতে টেকা দুষ্কর হয়ে গেছে।
শহরের বাসিন্দা মৌসুমী আক্তার বলছেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে পারে না, গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়, গরমে ঘরে কেউ ঘুমাতে পারে না।
আরও পড়ুন: চলমান তাপপ্রবাহ ৫-৬ দিন অব্যাহত থাকতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
বন্দরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই ঘণ্টা থাকে না। নামাজের সময়টুকুতেও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। রাতে বিদ্যুৎ গেলে সকালে আসে। এতে করে ঘুমটাও ঠিকমতো হচ্ছে না।
তামিম হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যার পর পরই কারেন্ট চলে যায়। এরপর রাত ৯টা বা ১০টার দিকে আসে। ঘণ্টাখানেক থাকার পর আবারও চলে যায়। লেখাপড়া করতেই পারছি না। তাছাড়া গরমে খুব কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পূর্ব (এনওসিএস) নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন ফকিরকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (সদর দপ্তর) প্রকৌশলী মো. মাশফিকুল হাসান বলেন, নারায়ণগঞ্জে খুব গরম পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৯০ মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আমাদের গ্রাহক রয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার।
তিনি আরও বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না হওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। তবে আগামী ২৫ জুন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটি চালু হলে তখন লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমে আসবে।
রাত ১২টার পরে লোডশেডিং করার বিষয়ে তিনি আরও জানান, পাওয়ার গ্রিড থেকে যখন যতটুকু আমাদের ঘাটতির কথা বলা হয়, তখন ততটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। সেটা রাত ১২টা কিংবা ১টা হোক না কেন। মূলত দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোনোসময় বলে কথা নয় ঘাটতি বলেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীসহ দেশের ৫ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে: আবহাওয়া অধিদপ্তর