অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে (ডিসিসিআই) এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো কারখানায় পরিদর্শনে যাই, তখন দেখি সেখানে একটি বৈধ গ্যাস লাইন, তবে মূলটিকে বাদ দিয়ে আরও তিনটি অবৈধ সংযোগ রয়েছে।’
এসময় টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনুগ্রহ করে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করুন। আপনার অবৈধ সংযোগ আসলে অন্যান্য শিল্পকে তাদের গ্যাস ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ওই শিল্পের তালিকা প্রকাশ করতে চাই না। অনেক বড় এবং নেতৃস্থানীয় শিল্পের নাম আছে, তারা খুবই প্রভাবশালী।’
ডিসিসিআই এর সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সমীর সাত্তার ‘স্টেকহোল্ডার ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্রাটেজি: টুয়ার্ডস এ প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শিরোনামে একটি সেমিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সামিট পাওয়ারের পরিচালক ফয়সাল করিম খান, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী এবং ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উপস্থাপনা করে নসরুল বলেন, সরকার ৪ বছরের মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে চার বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন: নসরুল
তিনি বলেন, ‘এটি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানিতে। এই স্থল-ভিত্তিক টার্মিনালটি নির্মিত হলে যে কোনো ঝড়ের সময় টার্মিনালটিকে গভীর সাগরে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।’
দ্বিতীয়ত, ১৮ মিটার পানির গভীরতায় বড় জাহাজ বন্দরে আসতে পারবে যা পরিবহন খরচ কমবে।
সেমিনারে সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানে অধিকতর গ্যাসের সন্ধান নিয়ে প্রতিমন্ত্রী ও অধ্যাপক বদরুল ইমামের মধ্যে বিতর্ক দেখা যায়।
নসরুল বলেন, দেশে গ্যাস নেই নাকি দেশে আর কোনো গ্যাস আছে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
এই মন্তব্যের জবাবে অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাসের প্রাপ্যতা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই, কারণ ইউএসজিএসসহ অনেক আন্তর্জাতিক গবেষণা গোষ্ঠী তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তথ্য প্রমাণ করেছে যে দেশে এখনও ৩২ থেকে ৪২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ রয়েছে।
ড. ইমাম বলেন, ‘সম্প্রতি ভোলায় গ্যাসের সন্ধান দেশে আরও গ্যাসের উপস্থিতি প্রমাণ করে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের পরিকল্পিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চল ছাড়া সরকার কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে দেবে না।
তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতকে জ্বালানি ব্যবসায় আসার অনুমতি দেবে, যাতে যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের পছন্দমতো আলোচ্য হারে গ্যাস আমদানি এবং যেকোনো শিল্পে সরবরাহ করতে পারে।
তিনি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম নির্ধারণের সরকারের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বিধানের বর্তমান প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এটি নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি অবশ্য বলেন, আগামী বাজেটের আগে গ্যাস বা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
এফআইসিসিআই সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সবুর খান বলেন, অবৈধ গ্যাস গ্রাহকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকার আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করবে: নসরুল