পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিতে ইচ্ছুক কিন্তু কিছু বিদেশি সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই মুহূর্তে তাদের প্রত্যাবাসন সমর্থন করছে না।
‘তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) মনে করে যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
বুধবার(২ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মোমেন বলেন, ‘তারা মনে করেন প্রত্যাবাসন শুরু করতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করছেন এমন সব স্টেকহোল্ডারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বিদেশি সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের প্রত্যাবাসনে না করার জন্য পরামর্শ দেয়।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ফিরতে ইচ্ছুক এবং মিয়ানমার সরকারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাবে জরুরি সেবার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা সফরকারী এশীয় বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত ডেং সিজুন চেষ্টা করছেন। তিনি শুধুমাত্র রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে এসেছেন।
শিজুন ঢাকায় দুটি পৃথক বৈঠক করেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কণ্টকাকীর্ণ বিষয়সহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি তার দ্বিতীয় সফর এবং সোমবার ঢাকায় তিনি ড. মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন।
এবারও চীনের বিশেষ দূত বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমার সফর করেছেন।
বিশেষ দূতের বিদায়ের আগ পর্যন্ত সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরব থেকেছে বলে মনে হচ্ছে। সিজুনের অবস্থানের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা এমওএফএ নিজে কিছু শেয়ার করেননি।
মোমেন বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রত্যাবাসন। আমি সবসময় আশাবাদী যে মিয়ানমারে ফিরে গেলে তারা আরও ভালো জীবন পাবে।’
এপ্রিলের শুরুতে চীনের বিশেষ দূতের সঙ্গে তার বৈঠকের পর, মোমেন তার আশা পুনর্ব্যক্ত করেন যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করবে এবং স্বীকার করে যে তিনি সম্প্রতি চীনা পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে অনেকেই কাজ করছেন। ‘আমার বলা উচিত তারা (চীন) একটি খুব ভাল উদ্যোগ নিয়েছে এবং তারা সেই অনুযায়ী কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: আজরা জেয়া
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য অতীতে দু’বার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
মোমেন বলেন, চীনা পক্ষ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার সুযোগ করে দেয় এবং আশা প্রকাশ করে যে রোহিঙ্গারা তাদের ভূমিতে ফিরতে শুরু করবে।
দু’দিন আগে মিয়ানমারে রাজ্য প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং নে পি তাওতে এসএসি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত দেং সিজুনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার অনুসারে, তারা অকপটে মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতার অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এবং চীনের সহায়তা নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। এতে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অগ্রগতি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা এবং দেশের উন্নয়ন প্রস্তুতি, রাখাইন রাজ্য ছেড়ে আসা প্রবাসীদের গ্রহণ করা নিয়েও আলোচনা করেন উভয়পক্ষ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য ৩ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দেবে দ.কোরিয়া