অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) চিকিৎসাবিজ্ঞানের শতাব্দী ধরে অর্জিত অগ্রগতি ব্যাহত করার হুমকি দিচ্ছে তাই এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, এএমআরকে পরবর্তী মারাত্মক মহামারি এবং শীর্ষ ১০টি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এএমআর মোকাবিলায় ত্বরান্বিত প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সুসংহত পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ কথা বলেন জ্বালানি, সড়ক ও রেলওয়ে বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিনি আরও বলেন, এএমআর বিষয়ে খসড়া রাজনৈতিক ঘোষণাকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, এএমআর মানব স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন, প্রাণী স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এটি একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। এটি একাধিক এসডিজির জন্য ক্ষতিকর, যা একে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারে পরিণত করে।
ফাওজুল কবির আরও বলেন, ‘মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সম্মুখীন হচ্ছে বৈশ্বিক দক্ষিণ। এএমআরের কারণে বছরে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ মিলিয়ন হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এএমআর বিষয়ে জয়পুর ঘোষণায় সইকারী দেশ। এএমআর নিয়ে আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এএমআর নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা ডাব্লুএইচও গ্লাস প্ল্যাটফর্মে বিস্তৃত এএমআর নজরদারি ডেটা সরবরাহ করছি।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় এএমআর কনটেইনমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ২০২১-২০২৬ সালের এএমআর জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা (এনএসপি) এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন করেছে। মানব স্বাস্থ্য, প্রাণী স্বাস্থ্য এবং এএমসিতে (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কনজাম্পশন) লক্ষ্য রাখার জন্য জাতীয় এএমআর নজরদারি চলছে।
ফাওজুল কবির বলেন, দেশব্যাপী ব্যাপক অ্যাডভোকেসি, যোগাযোগ এবং সামাজিক সংহতি উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহারের জন্য আমরা বাংলাদেশ এএমআর রেসপন্স অ্যালায়েন্স (বিএআরএ) গঠন করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মডেল ফার্মেসি স্কিম চালু করেছে, ভালো উৎপাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ড্রাগ অ্যাক্টকে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি একটি জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক নীতি প্রণয়ন করেছে এবং জাতীয় এএমএস বাস্তবায়ন নির্দেশিকাগুলোর একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এএমআর মোকাবিলার জন্য একটি স্বাস্থ্য কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই এমন একটি বৈশ্বিক প্রক্রিয়া নিতে হবে যার মূল বিষয় থাকবে কম্যুনিকেশন, কো-অর্ডিন্যাশন, কোলাবোরেশন ও কোয়ালিশন।’
বাংলাদেশের জাতীয় ওয়ান হেলথ স্ট্র্যাটেজি এএমআরকে বহু সমস্যার উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ফাওজুল কবির বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক গতানুগতিকতা ভেঙে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংস্থা, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতে কাজ করতে হবে। এছাড়াও আর্থিক প্রবাহ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে, পাশাপাশি পরিবেশগত ক্ষতি কমানোর কৌশল তৈরি করতে হবে।’