নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক মুক্ত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জলদস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য তার জানা নেই।
আজ রবিবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টু রোডে প্রতিমন্ত্রী নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা-পয়সা কিংবা মুক্তিপণের সঙ্গে আমাদের কোনো ইনভলমেন্ট নেই। টাকা দিয়ে জাহাজ ছাড়িয়ে আনা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখাচ্ছেন, এ সব ছবির কোনো সত্যতা নেই। ছবিগুলো কোথা থেকে আসছে, কীভাবে আসছে- সেটি আমরা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এটা যতটুকু হয়েছে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ইউরোপিয়ান নেভাল, ভারতীয় নৌবাহিনী, সোমালিয়ান পুলিশ... আমি সোমালিয়া পান্টল্যান্ড পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইমের যে উইংগুলো রয়েছে, তারা আমাদেরকে খুবই সহায়তা করেছে।’
আরও পড়ুন: জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ
মুক্তিপণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি দীর্ঘদিন। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই। আমাদের আলাপ-আলোচনা এবং বিভিন্ন ধরনের চাপ আছে। সেই চাপগুলোও এখানে কাজে দিয়েছে।’
খালিদ মাহমুদ বলেন,‘জলদস্যুরা একেবারে সর্বশক্তিমান, ব্যাপারটা তো এমন নয়। তারা ভীষণ চাপের মধ্যে ছিল, সোমালিয়ান পুলিশের বিরাট একটা চাপ ছিল। জলদস্যুদের কারণে একটি দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, এটা তারা (সোমালিয়ান পুলিশ) উপলব্ধি করছে, সেই উপলব্ধি থেকে তারা খুবই সজাগ ছিল এবং জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য তারা খুবই তৎপর ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ ও নেগোসিয়েশনও আছে। তাদেরও (জলদস্যু) জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপার ছিল। চাপটাতো তাদের উপর সার্বক্ষণিকই ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা চরম পর্যায়ে গিয়েছিল, সেই কারণেই তারা সেখান (জাহাজ) থেকে নেমে গেছে। চাপ এত ছিল, তারা যখন জাহাজটা নিয়ন্ত্রণে নেয় সেখানে ২০ জন ছিল জলদস্যু, গতকালকে তারা যখন জাহাজ ছেড়ে যায় ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজে অবস্থান নিয়েছিল। মূল ভূখণ্ডে তাদের কী পরিমাণ চাপ ছিল, সেটা বুঝতে হবে। গতকালকে সবাই একসঙ্গে সেখান (জাহাজ) থেকে চলে গেছে। দুই নটিক্যাল মাইলের মধ্যে তাদের ঘিরে ফেলা হয়েছিল। অন্যান্য ফ্লিকগুলো (বিভিন্ন বাহিনী) অবস্থান করছিল যখন তারা চলে যায় সেই মুহূর্তে। তারা বুঝতে পেরেছিল আমাদের জীবন নিরাপদ না।’
আরও পড়ুন: ছিনতাই হওয়া জাহাজের ২৩ নাবিককে চলতি মাসেই উদ্ধার করা হবে: নৌ প্রতিমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সেই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে কথা বলে ফ্লিকগুলোকে একটু দূরে দিয়ে তাদের যেতে সহায়তা করেছে। আমি জানি না ভুল ভূখণ্ডে যাওয়ার পর জলদস্যুদের কি অবস্থা হয়েছে না হয়েছে।’
পুরো বিষয়কে বিশাল কর্মযজ্ঞ উল্লেখ করে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যতগুলো মেইল করেছি সেগুলো এক জায়গায় করলে বড় একটা বাস্কেট ভরে যাবে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের করসপন্ডেন্ট রাখতে হয়েছে। আমরা এত তৎপর এবং এত সিরিয়াস ছিলাম- এটা সবাই উপলব্ধি করেছে।’
ভবিষ্যতে যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর পদক্ষেপ নেবে বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ৩১ দিন পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশি নাবিকরা। গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ও নাকিবরা।
আরও পড়ুন: ঈদের আগে জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করা কঠিন: জাহাজের মালিকপক্ষ