শত শত বই থাকলেও ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার সালাম নগরে (লক্ষ্মণপুর) ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে নেই দর্শনার্থী।
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে, ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মচারী এবং সর্বস্তরের মানুষ লাইব্রেরিতে ভিড় করেন, কারণ স্থানীয় প্রশাসন বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করে।
সোমবার সকালে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘরে স্থানীয় প্রশাসন হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা উপলক্ষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আবদুস সালাম।
ফেনী জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে আবদুস সালামের পৈতৃক গ্রামের নাম পরিবর্তন করে সরকার ২০০৮ সালে সালামনগর রাখে। এটি আগে লক্ষ্মণপুর নামে পরিচিত ছিল।
একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রন্থাগার ও একটি শহীদ মিনারও নির্মিত হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের নায়ক আবদুস সালামের ভাগ্নে নুরে আলম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ সেখানে ভিড় করেন।
জাদুঘরের ভেতরে আবদুস সালামের একটি মাত্র ছবি রয়েছে বলে জানান তিনি।
আবদুস সালামের নাম ও ইতিহাসকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে আবদুস সালামের নামে একটি গেটওয়ে নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় প্রশাসনও তার নামানুসারে দাগনভূইয়া উপজেলা মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম অডিটোরিয়াম রাখে।
এছাড়া গ্রামে ভাষা শহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ নামে একটি বেসরকারি কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে।
লাইব্রেরি উদ্বোধনের সময় স্থানীয় প্রশাসন লাইব্রেরিতে অনেক বই সরবরাহ করলেও এরপর থেকে লাইব্রেরিতে নতুন কোনো বই আসেনি বলেও জানান তিনি। এছাড়া লাইব্রেরিতে কোনো সংবাদপত্র নেই।
একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হলেও পাঠকের অভাবে তারা সেখানে অলস সময় পার করছেন।
আবদুস সালামের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে মৃত্যুর ৬৫ বছর পর ২০১৭ সালে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা আন্দোলনের নায়কের কবর শনাক্ত করে সরকার।
আরও পড়ুন: ফেনীতে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদন!
সম্প্রতি লাইব্রেরি পরিদর্শনকালে ইউএনবির এই প্রতিবেদক দেখতে পান যে লাইব্রেরির শেলফে শত শত বই পাওয়া গেলেও দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো পাঠক পাওয়া যায়নি।
গ্রন্থাগারিক মো. লুৎফুর রহমান বাবুল বলেন, লাইব্রেরিতে সাড়ে তিন হাজার বই রয়েছে এবং সবগুলোই পুরনো। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন খোলা রাখা হলেও সেখানে কোনো পাঠক আসে না।
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্ম তাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে আবদুস সালাম সম্পর্কে জানতে পারে তবে তা সম্প্রসারণ করতে হবে। তিনি সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনের ওপর জোর দেন।
দাগনভূইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হলে এখানে যাত্রীবাহী শেড, সালাম গেট ও সাইনবোর্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন তিনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ভাষা শহীদ আবদুস সালামের গ্রামের সঙ্গে আগামী প্রজন্মকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্ধ হয়ে গেলো সব সিনেমা হল