বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল ও কসমস গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ জামিল খান সম্প্রতি তার বাসভবনে ব্যারোনেস নুয়ালা ও’লোন ও বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলিকে (ভারতের দিল্লি ভিত্তিক) সম্মানসূচক একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছেন।

ব্যারোনেস নুয়ালা ও’লোন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম পুলিশ ওম্বাডসম্যান ছিলেন। তিনি পুলিশ সংস্কার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।

নৈশভোজে শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি বলেন, ‘আপনাদের সুন্দর বাসভবনটি যেন একটি আর্ট গ্যালারি, এখানে এসে আমরা সবসময়ই উষ্ণ অভ্যর্থনা পাই।’

আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাইকেল মিলার (ইইউ রাষ্ট্রদূত) ও সারা কুক  (যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার) এই উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের নতুন সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চলছে, যাতে শান্তি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, এখানেও এই মিলনমেলার সত্যিই অনন্য।’

ব্যারোনেস নুয়ালা ও’লোন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সহনশীলতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,

‘আমি গত জুলাই ও আগস্টে অস্থিরতা দেখেছিলাম এবং ভেবেছিলাম কী হতে পারে—দেশটি কি ভেঙে পড়বে? কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলকভাবে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা দেখিয়েছে।’

তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নেতৃত্ব ও কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘দুই দিন ও এক রাতের সফর খুব বেশি নয়, তবে আমি খুবই শক্তিশালী ইমপ্রেসন নিয়ে লন্ডন ও আয়ারল্যান্ডে ফিরে যাচ্ছি।’

মাসুদ জামিল খান বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি আমাকে ফোন করে ব্যারোনেস ও’লোনকে বাংলাদেশে আনার প্রস্তাব দেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম—এটি চমৎকার ও সময়োপযোগী ধারণা, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে।’

তিনি আরও জানান, এরপর দুই–তিন মাসের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।

‘প্রথম বৈঠক হয় প্রধান উপদেষ্টা ও আইজিপির সঙ্গে, পরে একটি রাউন্ডটেবিল আলোচনা এবং আজ সকালে ডিজিএফআই-এর সঙ্গে একটি জনসভা ও আলাপ। দুই দিনব্যাপী সফরটি ছিল ব্যস্ত, তবে অত্যন্ত সফল।’

উত্তর আয়ারল্যান্ডে পুলিশের ওম্বাডসম্যান পদটি সৃষ্টি হয় ১৯৯৮ সালের গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্টের অংশ হিসেবে, যা সংঘাতের অবসান ঘটায়। ২০০০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই পদে থেকে ব্যারোনেস ও’লোন পুলিশ সদস্যদের অপরাধমূলক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।

তার দক্ষতা ও নিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশে পুলিশ সংস্কার ও নজরদারি সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।

মাসুদ জামিল খান বলেন, ‘গত দুই দিনে যেভাবে তিনি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি মানুষের মধ্যে এমন এক জাদুকরী গুণ, এমন উষ্ণতা ও সান্নিধ্য রাখেন, যা মানুষকে সঙ্গে সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করায় এবং সহজে মনের কথা প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আমি নিজ চোখে এটি দেখেছি, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাকে পাওয়া আমাদের জন্য এটি একটি সৌভাগ্যের বিষয় এবং আমি আশা করি এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা থাকবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারসহ বহু কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিক ও অতিথি উপস্থিত ছিলেন।