মাসব্যাপী বইপ্রেমী ও প্রকাশকদের বার্ষিক অনুষ্ঠান অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিকালে সরাসরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করে দেশের বৃহত্তম বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
একাডেমি প্রাঙ্গণ ও এর পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘পড় বই, গড়ো দেশ-বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ (বই পড়ুন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে দেশ গড়ুন) প্রতিপাদ্য নিয়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বইমেলা কর্মদিবসে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলায় দর্শনার্থীরা সকাল ৮টায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটার পর সকল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এবারের বইমেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে, গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭৭৬টি স্টল ছিল।
এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে ৪৮৯টি স্টল এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা যেকোনো কোণ থেকে পুরো মেলার মাঠ দেখতে পারেন।
বাংলা একাডেমির বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেটটি মূল প্রবেশদ্বার। এছাড়াও, শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্র (টিএসসি), দোয়েল চত্বর এবং ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) এর কাছাকাছি আরও তিনটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রয়েছে।
৩০০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো মেলা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এর প্রাপকদের মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ (বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২) বিতরণ করেন।
তিনি ১১টি বিভাগে ১৫ জন প্রাপকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রত্যেক পুরস্কারপ্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থের চেক, একটি ক্রেস্ট এবং একটি সনদপত্র গ্রহণ করেন।
কবিতার জন্য ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, উপন্যাসের জন্য তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণার জন্য মাসুদুজ্জামান এবং অনুবাদে আলম খোরশেদ পুরস্কার পেয়েছেন।
অন্যান্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- নাটকের জন্য মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, কিশোর সাহিত্যের জন্য ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার জন্য মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণার জন্য সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কল্পকাহিনী/পরিবেশ বিজ্ঞানের জন্য মোকাররম হোসেন, জীবনী ও ভ্রমণকাহিনীর জন্য ইকতিয়ার চৌধুরী এবং লোককথার জন্য অধ্যাপক আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল জলিল।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামগ্রিক অবদানে সৃজনশীলতা ও প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উর্দু ভাষার পরিবর্তে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: বই মেলায় এসেছে গল্পগ্রন্থ ‘কালু মিয়ার পিএইচডি’
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর মেলার ঐতিহ্যবাহী তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলা ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল এবং তারপর ১৯৭৮ সালে একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বছর মেলার আয়োজনের দায়িত্ব নেয়।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা এবং বাংলাদেশ বই প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।
আরও পড়ুন: বই মেলার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ক্লাউড সার্ভিস দিচ্ছে হুয়াওয়ে