তিনি ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব হয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্রে সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্ব বা এমনকি সার্বিকভাবে ‘নেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি’ (ইন্টারনেট জবাবদিহি) বিষয়ে গুরুতর বিতর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, ‘ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত ছড়াতে ইন্টারনেটের উত্থান সাহায্য করছে এবং ফেসবুক, টুইটার ও গুগলের মতো কোম্পানিগুলোর এ সয়লাবের জন্য দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো ভুয়া সংবাদ নিয়ে সংগ্রাম করছে। এছাড়া, তারা সমস্যাটি মোকাবিলায় পদক্ষেপও নিয়েছে।’
তার মতে, গত এক দশকে জনপরিসরে আমূল পরিবর্তন এসেছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ‘মৃত সংবাদের ছাই থেকে উঠে আসা ভুয়া সংবাদ এখন মানুষকে অনেক উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’
পরিবর্তনশীল গণমাধ্যম জগতের সাথে মানিয়ে নেয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা এবং পারস্পরিক বিনিময় ও অংশীদারিত্ব প্রসারের লক্ষ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান সংবাদ সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিরা ৭ নভেম্বর থেকে সিউলের কেন্দ্রীয় সিউলের লোট্টে হোটেলে চার দিনব্যাপী ওএএনএ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের আয়োজনে এবং আজারবাইজানের বার্তা সংস্থা আজারটেকের সভাপতিত্বে এ সাধারণ অধিবেশনে ২৮ দেশের ৩২টি সংবাদ সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা মিলিত হন। আঞ্চলিক সংবাদ বিনিময়কে উৎসাহিত করতে ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওএএনএ প্রতি তিন বছর পরপর সাধারণ অধিবেশন আয়োজন করে। ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশসহ (ইউএনবি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৫ দেশের মোট ৪৩টি সংবাদ সংস্থা এ সংগঠনের সদস্য।
সদস্য হিসেবে আরও আছে চীনের সিনহুয়া, জাপানের কিউডো ও রাশিয়ার তাসের মতো সংবাদ সংস্থা। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিও সদস্য, তবে তারা এ বছরের সম্মেলনে যোগ দেয়নি।
‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছাড়া আমরা কীভাবে টিকে থাকব সেই সম্ভাবনার সম্মুখীন এখন সমাজ, যদিও প্রাণবন্ত সংবাদপত্র ও মেধাবী সাংবাদিকের কোনো অভাব নেই,’ উল্লেখ করে এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের রক্ষকদের যে প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে বিপর্যস্ত করে রেখেছে তা হলো সমাজ ভুয়া- প্রায়ই মনগড়া- তথ্যগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে, যা ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম জুড়ে সয়লাব হয়ে আছে এবং প্রায় সবখানে রাজনৈতিক বিতর্ককে দূষিত করছে?’
বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ফলে অনলাইন মাধ্যম দ্রুত বেড়ে উঠেছে এবং এগুলো এখন প্রচলিত সংবাদপত্র টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি প্রাণবন্ত। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য সাংবাদিকতার কথা বললে, বাংলাদেশেও পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
ভুয়া সংবাদ রুখে দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ‘ইন্টারনেট ন্যায়পাল’ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছি, যা টেক কমিউনিটির জন্য একটি সুসংহত ও কার্যকর জবাবদিহির মান উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরতে পারবে।’
অধিবেশনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ওএএনএ সদস্য সংস্থাগুলোর প্রধানরা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সাথে তার বাসভবনে এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় যোগ দেন। এ সময় মুন ওএএনএ প্রতিনিধিদের কোরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ায় অব্যাহত নজর রাখা ও সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান।