বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিসিপিসিএল) কর্মকর্তাদের মতে, কয়লা সংকটের কারণে শিগগিহরই ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত পায়রা পাওয়ার প্লান্টের আরেকটি ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত করা হচ্ছে।
প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট রয়েছে, যার প্রতিটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট এবং দুটির প্রথম ইউনিট ইতোমধ্যে কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিসিপিসিএলের প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন বাকি ইউনিটটি ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারে’।
বিসিপিসিএল, চায়না ফার্ম চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) যৌথ উদ্যোগে পায়রা পাওয়ার প্লান্টের মালিক ও অপারেটর।
প্ল্যান্ট ম্যানেজার জানান, প্ল্যান্টে বর্তমানে একটি ইউনিট চলছে, যার ৬৬০ মেগাওয়াট রয়েছে এবং আরেকটি ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিট গত সপ্তাহে বন্ধ হয়ে গেছে।
মওলা বলেন, কয়লা আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থপ্রয়োজন হওয়ায় মূলত এই সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বকেয়া পরিমাণ এখন ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত বকেয়া কয়লা সরবরাহকারীকে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার অনুমতি পেয়েছি।’
তিনি বলেন, এটি কয়লা আমদানি পুনরায় শুরু করার ব্যবস্থা করতে সহায়তা করবে।
বিসিপিসিএলের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, তবে এখনও কয়লা সরবরাহ পেতে প্রায় এক মাস সময় লাগবে এবং আমরা আশা করি ২৮ শে জুনের আগে আমরা নাও পেতে পারি।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টকে পুরোদমে চালু করতে প্রতি মাসে ৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করতে হবে।
তারা বলেন, বিসিপিসিএল সাধারণত কয়লা আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলে। কিন্তু সম্প্রতি ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার জন্য আফসোস করেছে সোনালী ব্যাংক।
সমস্যার কথা স্বীকার করে বিসিপিসিএলের কর্মকর্তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যেই বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগে অবহিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২১ মার্চ পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যখন তিনি দেশের শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজ ঘোষণা করেন।
এই মাইলফলক অর্জন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
বিসিপিসিএল ৯৮২ দশমিক ৭৭ একর জমিতে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে।
চীনের রপ্তানি-আমদানি ব্যাংক প্রকল্পটির জন্য ১ দমমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বের ত্রয়োদশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্ল্যান্টের জন্য ব্যবহৃত আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির লক্ষ্য সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবেশ রক্ষা করা।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে পরীক্ষা চালানোর পর, পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
২০২০ সালের অক্টোবরে, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে ৬৬০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। এটির একটি ৭৬ দশমিক ৩০ একর ডাম্পিং জোন রয়েছে, যেখানে ২৫ বছরের মূল্যের উপ-পণ্য রাখা যেতে পারে।
কারখানাটি বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছে। এর নিজস্ব জেটি রয়েছে যার পরিবাহক বেল্ট একই সময়ে চারটি জাহাজ থেকে প্রতি ঘন্টায় ৩ হাজার ২০০ টন কয়লা আনলোড করতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।