উচ্চাকাঙ্ক্ষী বন্যপ্রাণী গবেষকদের ক্ষমতায়নের দিকে মনোনিবেশ করে শীর্ষ স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টিগ্রেটেড টাইগার হ্যাবিট্যাট কনজারভেশন প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কর্মশালা শুরু হয়েছে।

রবিবার রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারের পদ্মা সম্মেলন কক্ষে কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়।

কর্মশালার লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীদেরকে সফল বন্যপ্রাণী গবেষণা প্রকল্পের পরিকল্পনা, নকশা এবং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করা, যার মধ্যে গবেষণা নকশার নীতি, ক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহের কৌশল, ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার মতো বিষয়গুলোর একটি পরিসীমা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কর্মশালাটি অংশগ্রহণকারীদের জিপিএস ট্র্যাকিং, রিমোট সেন্সিং এবং ক্যামেরা ফাঁদসহ বন্যপ্রাণী গবেষণায় ব্যবহৃত সর্বশেষ সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

রবিবার সকালে, একটি উদ্বোধনী বক্তব্য সেশনের মাধ্যমে কর্মশালার আনুষ্ঠানিক সূচনার পর কোর্স মডিউলের পরিচিতি হয়। বাংলাদেশ বন বিভাগের বন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেলের ইমরান আহমেদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

ওয়াইল্ডটিমের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বটি পরিচালনা করেন সিইও এবং ওয়াইল্ডটিমের মুখপাত্র ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এতে আরও যোগ দেন ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ক্যারেন ব্লুম, এবং জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সমন্বিত বাঘের বাসস্থান সংরক্ষণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম কাউন্সিলের সদস্য এলকে হেলস্টার্ন।

ইমরান আহমেদ উদ্বোধনী পর্বে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধারাবাহিকভাবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে এবং সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য বেশ কিছু কার্যকর প্রবিধান বাস্তবায়ন করছে। আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়াইল্ডটিমের সঙ্গে কাজ করছি এবং আমি আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী গবেষকদের প্রতি এই কর্মশালার উদ্যোগের প্রশংসা করি।’

এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, ‘ওয়াইল্ডটিম বেশ কয়েক বছর ধরে সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছে এবং আমরা আমাদের শিক্ষামন্ত্রীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছি যাতে আমাদের পাঠ্যসূচিতে সংরক্ষণের বিষয়টিকে একটি বিষয় হিসেবে প্রবর্তন করা যায়, সংরক্ষণের মূল্য নিয়ে বড় আকারের কথোপকথন শুরু করা যায়। তাই কল্পনা করুন, যদি আমরা এটিকে আমাদের অফিসিয়াল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে আমি মনে করি এটি একটি চমৎকার সম্ভাবনা হবে। আমি আশা করি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এটি তুলে ধরতে সক্ষম হব।’

এনায়েতউল্লাহ খান আরও বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ জীববিজ্ঞান কেন্দ্র (ডব্লিউসিবিসি) প্রতিষ্ঠা করেছি এবং আমি মনে করি জুনের মধ্যে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। আমি আশা করি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সবাইকে এই জায়গাটি দেখার জন্য উৎসাহিত করব। আমি খুব সম্প্রতি সেখানে ছিলাম। আমি একটি বন জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে খুব উত্তেজিত ছিলাম, যা আমাদের বাচ্চাদের জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে জানতে এবং শিখতে একটি চমৎকার জায়গা হবে।’

ওয়াইল্ডটিম ওয়ার্কশপটি বাংলাদেশ বন বিভাগ, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত।

কর্মশালার প্রথম দিনে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। যা আগ্রহী গবেষকদের অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ জনসংখ্যা এবং নির্দেশিকা প্রদান করে। ভারতের হরিয়ানার যমুনানগরের এমএলএন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. রাজীব কালসি দিনের প্রথমার্ধে 'পরিবেশগত অধ্যয়নের জন্য নমুনা পদ্ধতির ভূমিকা' এবং 'প্রজাতির সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যের পরিচিতি' শীর্ষক দু’টি সেশন পরিচালনা করেন।

উদ্বোধনী দিনের সেশনের দ্বিতীয় অংশটি পরিচালনা করেন ভারতের বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের সুরক্ষিত এলাকা এবং প্রজাতি পুনরুদ্ধার বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ড. কমলিকা ভট্টাচার্য। তিনি 'অকুপেন্সি স্টাডিজের ভূমিকা' এবং 'বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যামেরা ফাঁদের ব্যবহার' বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন।

ড. রাজীব কালসি ইউএনবিকে বলেছেন,  ‘এই প্রথম ভারত এবং বাংলাদেশের গবেষকরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উন্নতির জন্য কী করা উচিত সে সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা, জ্ঞান এবং অনুশীলনের উদ্যোগগুলো একত্রিত এবং ভাগ করে নিচ্ছেন এবং আমরা ওয়াইল্ডটিমের আতিথেয়তা এবং আমাদের উৎসাহী অংশগ্রহণে আনন্দিত তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী গবেষক।’

দুই দিনের কর্মশালায় গবেষণার নকশা, ফিল্ড ডেটা সংগ্রহের কৌশল, ডেটা বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট লেখার নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় কভার করার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা জিপিএস ট্র্যাকিং, রিমোট সেন্সিং এবং ক্যামেরা ফাঁদসহ বন্যপ্রাণী গবেষণায় ব্যবহৃত সর্বশেষ সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখবে।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এই এক্সক্লুসিভ ওয়ার্কশপের মিডিয়া পার্টনার, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মোট ছয়টি সেশন আয়োজনের পর আগামীকাল শেষ হবে।