প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন জানিয়েছেন কাতারে কর্মী পাঠাতে আগামীকাল (২২ এপ্রিল) সমঝোতা স্মারক সই হবে।
শিগগিরই জর্ডান, মরিশাশ, মাল্টা, ব্রুনেই ও কুয়েতেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে যাবে বলে জানান তিনি।
রবিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব তথ্য জানান সচিব।
সভায় আরও ছিলেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, অভিবাসন একটি জটিল ইস্যু। এটা একক দেশের ওপর নির্ভর করে না। অনেক জটিলতা থাকলেও সেগুলো সুরাহা করে কাজ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘কাতারের সঙ্গে আগামীকালই আমাদের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। জর্ডানের সঙ্গে যে কোনো সময় এমওইউ সই হতে পারে বলে দুপক্ষই একমত হয়েছি। মরিশাশের সঙ্গেও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে, মাল্টার সঙ্গেও কার্যক্রম চলছে। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।’
রাশিয়াতেও কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, ‘এরইমধ্যে সীমিত আকারে রাশিয়াতে দক্ষকর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে রাশিয়া আমাদের জন্য একটি ভালো বাজার হবে।’
তিনি আরও জানান, ব্রুনেইয়ের শ্রমবাজার অনেক দিন বন্ধ থাকার পর আবার কর্মী পাঠানো শুরু করে ভালো চাহিদা পাওয়া গেছে। মরিশাশেও কর্মী পাঠানো শুরু হবে বলে জানান সচিব।
কুয়েতে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলেও নার্স পাঠানোর কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গেছে জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, ‘তারা আমাদের নার্সের চাহিদা পাঠিয়েছে। আমরাও প্রয়োজনীয় উপাত্ত পাঠিয়েছি, যারা নার্সিংয়ে গ্র্যাজুয়েট কিংবা ডিপ্লোমা করা আছেন, তাদের মধ্যে যারা যারা আগ্রহী, সরকারিভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সহযোগিতায় তাদের তথ্য আমরা পাঠিয়েছি। আশা করছি, কুয়েতে আমরা নার্স পাঠাতো পারব।’
রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। এটা শুধু আমাদের মন্ত্রণালয়ই না, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থবিভাগ সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করছি রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে।’
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে রুহুল আমিন জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ মের মধ্যে আগের কোটা অনুসারে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া সরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘আগের ব্যবস্থাটা তারা পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য কাজ করবে। আমাদের তরফ থেকে মন্ত্রী মহোদয় সবসময় যোগাযোগ রেখেছেন। মালয়েশিয়ার দূতাবাসের মাধ্যমে এরইমধ্যে তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। কারণ তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা বোঝা দরকার, সে অনুসারে আমাদের কাজ করতে হবে।’
রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া যে কোটা নিয়ে কাজ করছে, এরপর তাদের পরবর্তী যে কোটা তৈরি হবে, সেখানে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা নিয়মিত দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা মে মাসের মধ্যেই মালয়েশীয় সরকারের সঙ্গে বসতে চাই।’
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মীদের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আমি মনে করি, সেখানে দুটি গ্রুপ আছে। একটা চাহিদার বিপরীতে যাচ্ছে, আরেকটা হচ্ছে, যারা ভিজিট ভিসায় গিয়েছেন কিংবা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেখানে অবস্থান করছেন।’
প্রবাসীকল্যাণ সচিব আরও বলেন, ‘সর্বশেষ যে প্রতিবেদন নিয়েছি, সেখানে যারা চাহিদার বিপরীতে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কাজ হয়েছে। এটা সেখানে কাজে যাওয়া মোট কর্মীর মাত্র এক শতাংশ হবে। ভিজিট ভিসায় যারা গেছেন, তাদের হিসেবে নিলে সংখ্যাটা একটু বড় হবে। তবে চাহিদার বিপরীতে যে লোকগুলো মালয়েশিয়ায় গেছেন, তাদের মধ্যে যাদের কাজ নেই, আশা করছি, ৩১ মের পরেই তাদের পুনর্বণ্টন করা হবে।’