দেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভোর থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে ঈদের জামাতে অংশ নিতে।
শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদের ১৯৭তম জামাত। চারস্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এই মাঠে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করেন বড়বাজার মার্কাজ মসজিদের খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান খান।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবারের ঈদ জামাতে লাখো মুসল্লি জামাত আদায় করেছেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে তিনবার বন্দুকের গুলি ফুটিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। জামাতের পর খুতবা পাঠ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়।
ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি ট্রেন ছেড়ে আসে ময়মনসিংহ থেকে ও অপরটি ছেড়ে আসে ভৈরব থেকে। তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া সব কিছু বহন ও শহরে যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় মুষলধারে বৃষ্টিতে মুসল্লিরা ভোগান্তিতে পড়েন। তাদের সহায়তার জন্য মাঠে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম দায়িত্ব পালন করে।
পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নামাজের সময় দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে ছিল সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়েছে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা।
উল্লেখ্য, মসনদ-ঈ-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খানের উত্তরসূরী দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে ৪.৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহকে ওয়াকফ দেন।১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ময়দানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেই জামাতে 'শোয়া লাখ' মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তখন 'শোয়া লাখিয়া' নামে পরিচিতি পায় এই ময়দান। পরে, শোয়া লাখিয়া থেকে 'শোলাকিয়া' নামকরণ করা হয়।