মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অন্যতম মেগাপ্রকল্প মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের কাজ আরও ছয় মাস বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। কিছু অংশের কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ অবস্থায় পিছিয়ে গেলো খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলাচল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরু থেকেই প্রকল্পটি নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ে। এ কারণে সময় বেশি লেগেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটি শেষ করতে আরও সময় লাগবে।
তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও অর্থ বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর দাবি আইপিডি’র
খুলনা-মোংলা রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেটি প্ল্যানিং কমিশনে রয়েছে। এরপর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন হওয়ার পর খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের বাকি কাজ শুরু হবে। আশা করা যায়, এ বছরের জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হবে।
এরপর জুলাই-আগস্ট থেকে এ অঞ্চলের মানুষের কাঙ্ক্ষিত ট্রেন রেললাইনে চলাচল করবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইনের বর্তমান ৯৭ ভাগ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বাকি রয়েছে মাত্র ১০ কিলোমিটার রেললাইন ও পূর্ত বিভাগের ট্রাক নির্মাণ প্যাকেজের (ডব্লিউ ডি-১) কিছু কাজ।
তবে রেললাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুলনার রূপসা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে তিন বছর মেয়াদে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কয়েকবার নকশা পরিবর্তন হওয়ায় এর মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
বর্তমানে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি।
খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ হোসেন মাসুম জানান, প্রকল্পের প্রধান কাজ ছিল ৭৭৬ দশমিক ৬৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ২১ দশমিক ১১ কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি রেলওয়ে স্টেশন তৈরি, ৩১টি ছোট-বড় সেতু নির্মাণ, ১১২টি কালভার্ট, রূপসা নদীর ওপর ৭১৬ দশমিক ৮০ মিটার সেতু নির্মাণ, রূপসা সেতুর দুই প্রান্তে ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) নির্মাণ, ২০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণ করা।
আরও পড়ুন: নিউ ইয়ার উদযাপনের ফানুস বৈদ্যুতিক তারে, ২ ঘণ্টা পর মেট্রোরেলে চালু
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী এবং সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পের আওতায় দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্বিগুণ প্রসার ঘটবে।
এছাড়া খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মিত হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনাসহ সারা দেশের রেল সংযোগ হবে। একই সঙ্গে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে মোংলা থেকে মালামালবাহী ট্রেন খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ঢাকায় যাবে। এতে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
তাই শিগগিরই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে নামল দ. কোরিয়া থেকে আসা রেলকোচের মিটারগেজ চালান