খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না থাকায় ভোট উৎসব মুখর না হলেও কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি রয়েছে।
প্রাথীরা মনে করছেন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। আবার কেউ কেউ তার মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আছেন তারা মনে করছেন খুলনার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রাথী জয়লাভ করবেন। তাই তারা ভোট দিতে যেতে ইচ্ছুক নয়। এবারই প্রথম খুলনা সিটির সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। আছে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী ও কেন্দ্রীয়ভাবে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা।
নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা
কেসিসি নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের জন্য মাঠে নেমেছেন মোট ১৮০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
কেসিসি নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন, নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন। এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
সিটিতে ভোটার সংখ্যা
খুলনা সিটির ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন।
মেয়র পদে লড়ছেন যারা
কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক (দেয়াল ঘড়ি)।
মেয়র প্রার্থীরা যেখানে ভোট দিলেন
সোমবার সকাল ৯টায় নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের সাউথ সেন্ট্রাল রোডে পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল সকাল ১০টায় নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের বানিয়াখামার এলাকার দারুল কোরআন বহুমুখী মাদরাসা কেন্দ্রে, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে, সকাল ৯টায় মতিয়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, আর সকাল ১০টায় আলিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক। এছাড়া সাধারণ ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
আরও পড়ুন: খুলনা সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে: সিইসি
সাধারণ ওয়ার্ডে দুই নারী প্রার্থী
কেসিসি নির্বাচনে দুই নারী সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিনা শেখ আয়শা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদা বেগম। মোট ছয় জন নারী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ মুহূর্তে চার জন তা প্রত্যাহার করে নেন।
নির্বাচনকে ঘিরে ৫ স্তরের নিরাপত্তা
ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ১১ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১৬টি টিম, পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারে ৪৯টি টিম। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও নগরীর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ জন সদস্য। নির্বাচনী মাঠে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৫ হাজার ৭৬০ জন কর্মকর্তা। পর্যবেক্ষক থাকবেন বেসরকারি দুটি সংস্থার ২০ জন ও নির্বাচন কমিশনের ১০ জন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁঞা বলেন, কেসিসি নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনা সিটি নির্বাচন: ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে বসানো হচ্ছে ২ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা
র্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর বলেন, শহরের প্রবেশ ও বাহিরের পথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাবের চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আমাদের গোয়েন্দারা বিভিন্ন স্থানে তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও আশেপাশে যাতায়াত পথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছে। আমাদের ১৬টি পেট্রোল নির্বাচন চলাকালীন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় মোবাইল পেট্রোলিং এবং স্ট্যাটিক পজিশনিং এর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেকোন বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন জানান, নির্বাচনে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে খুলনা সিটি নির্বাচনের ভোট শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে।
ভোটের মাঠে নির্বাহী এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট
কেসিসির নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১৬১টি
এবারের নির্বাচনে ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ১৬১ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ভোটার সংখ্যা, প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র, প্রভাব বিস্তার, যাতায়াতসহ বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ পুলিশ ও ১৭ আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রে থাকবেন ৭ পুলিশ ও ১৫ আনসার সদস্য।