বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক পরিসংখ্যানের অসঙ্গতি তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘তাদের প্রতিবেদন ১১ শতাংশ খেলাপি ঋণ পাওয়া গেলেও প্রকৃত অঙ্কটি ২৫ শতাংশ।’
এ ছাড়াও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং টাকার মানে অবমূল্যায়ন হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য তিনি অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আইএমএফের পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ২০.৪৬৭ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
সভায় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কঠোর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ড. মনসুর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নীতিগত সুদের হার বাড়ানো, টাকা ছাপানো বন্ধ, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা প্রত্যাহার এবং বাজারভিত্তিক সুদ ও বিনিময় হার গ্রহণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
বাংলাদেশের প্রতি দাতব্য সংস্থা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এসময় ব্যাংকিং খাতের চলমান সমস্যাগুলো উল্লেখ করে পদ্ধতিগত এসব সমস্যাগুলোকে অবহেলা করায় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. মনসুর।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক লাভের জন্য আর্থিক খাতের অপচর্চা দূর করতে সংস্কার অপরিহার্য। খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ এ খাতের সমস্যাগুলো গোপন করে সমাধান করা যাবে না।’
সরকারের নেতৃত্বে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগের আহ্বান জানান এ অর্থনীতিবিদ।
আরও পড়ুন: খেলাপি ঋণ আদায়ে গতি আনতে 'এক্সিট পলিসি' চালু বাংলাদেশ ব্যাংকের
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। খেলাপি ঋণ বা জিডিপি সংক্রান্ত তথ্য গোপন বা কারসাজি করে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে না।’
১৯৯০-এর দশকে ভারতের আর্থিক সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারতের ব্যাপক সংস্কার তাদের আর্থিক খাতকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে এনেছে। বাংলাদেশেও এখন একই ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন।’