চট্টগ্রামের পটিয়ায় থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে ২৩ জন নেতাকর্মীকে আহত করার প্রতিবাদে চলমান সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের এসপি-ওসিসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বুধবার (২ জুলাই) শিক্ষার্থীরা দিনভর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক অবরোধ, পটিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ এবং নগরীর খুলশী এলাকায় ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম।
আজ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা নগরীর খুলশী এলাকায় পুলিশের ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তারা ছাত্র জনতার উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে জুলাই দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি শেষে থানার সামনে শান্তিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ চালালে পটিয়া থানা চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত হন, যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
খুলশীতে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। তবে কর্মসূচির কারণে ডিআইজি কার্যালয় সংলগ্ন ব্যস্ততম সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, পটিয়ায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এতে কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগরীর সংগঠক রিয়াদ বলেন, ‘যেখানে জনগণ এক দুর্নীতিগ্রস্ত ছাত্রনেতাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে, সেখানে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর চড়াও হয়েছে। এটি প্রমাণ করে পুলিশ বাহিনী এখন রাজনৈতিক রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা দ্রুত পুলিশ সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্যায়ের বিচার চাইতে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি। কথা বলার জন্য কোনো মিছিল বা স্লোগান ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এসেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছি। ভবিষ্যতে যদি আমরা কোনো কঠোর কর্মসূচি শুরু করি, তার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে ডিআইজির উপরই বর্তাবে।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এনসিপি নেতারা পটিয়া থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অপসারণ, হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে একই সঙ্গে জেলার এসপি, থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের স্থায়ী প্রত্যাহারের দাবিতে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।